কলকাতার এক নিঃসঙ্গ বিকেল। হাওড়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে সুধা, শাড়ির আঁচল বাতাসে কাঁপে। চোখ দু’টো বারবার ছাতার ফাঁক দিয়ে প্ল্যাটফর্ম ৯-এর দিকে। শেষ ট্রেনটা আজও ফিরিয়ে আনবে তাকে?
দুই বছর আগে ঠিক এই স্টেশনেই চিঠি দিয়ে বলেছিল ঋতম— “অপেক্ষা করিস, সুধা... একদিন ফিরব।” কিন্তু সময়? সময় তো কেবল ট্রেন ছাড়ে… ফেরে না কেউ। তবু সুধা ফিরিয়ে রাখেনি হৃদয়ের গেট পাস।
ঘড়িতে রাত ন’টা। কুয়াশা জমে প্ল্যাটফর্মটা ঢেকে যায় ধীরে ধীরে। একটা দূরের বাঁশির শব্দ... সুধার বুকের ভেতর হঠাৎ কাঁপুনি। এই তো... সেই ১২ নম্বর ট্রেনটা… ফিরছে কি?
লোক নেমে যাচ্ছে। সুধার চোখ খুঁজে ফেরে মুখটা— ওই চুল, ওই চোখ... হঠাৎ, কেউ একটা থামে। মুখে দাড়ি, চোখে ক্লান্তি। তবু সেই হাসি! “তুই...?” “আমি,” — বলে ঋতম, একফালি চিঠি বাড়িয়ে দেয়।
চিঠিতে লেখা— “চাইলেই ফিরে আসা যায় না, সুধা। কিন্তু তোকে ভুলতে পারিনি একদিনও। তোর চোখ দুটো প্রতিদিন ফিরিয়ে রেখেছিল।” সুধা চুপ। চোখে জল... আর ঠোঁটে একরাশ রাগ ও শান্তি একসঙ্গে।
“তুই অনেক দেরি করলি,” কাঁপা গলায় বলে সুধা। “তুই যে থেকেছিস… সেটা জানতাম না,” ঋতমের কণ্ঠে অনুতাপ আর প্রেমের মিশেল। বৃষ্টির ফোঁটা নামতে শুরু করে, যেন পুরনো সব প্রশ্ন মুছে দিতে চায়।
পিছনে আবার বাঁশি বাজে। “এইবার ট্রেন ছাড়বে,” বলে গার্ড। ঋতম হাত বাড়ায়— “এবার যাব, একসঙ্গে?” সুধা কিছু বলে না, শুধু হাতটা ধীরে এগিয়ে দেয়… শেষ ট্রেনটা এবার কাউকে ফেলে যায় না।