রচনা - সুরজিৎ রায় || গল্পপাঠে - নভনীল চক্রবর্ত্তী
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
জীবন বেঁচে থাকার জন্য। জীবন কখনো কখনো দুহাত উন্মুক্ত করে অপ্রত্যাশিত বিস্ময়কে স্বাগত জানায় সেটা আমাদের কাছে অধরা। সেই রাতে একজন সুন্দরী, স্বর্ণকেশী, সু-তনয়া আমার হৃদয়ের বাগানে প্রজাপতি হয়ে খেলা করছিলো, আজ সেই গল্প আপনাদের শোনাবো।
আষাঢ়ের প্রারাম্ভয়ের এক সন্ধ্যা আমি শহরতলীর বৃষ্টিমাখা পথে হাটছিলাম, সূর্য সবেমাত্র তখন অস্ত গেছে। আলো-আঁধারির খেলা তখনও আকাশে চলছে। আমি আনমনা হয়ে পথ-আকাশের দিকে তাকিয়ে শিলাজিৎ মজুমদার এর “ঝিন্টি” গানতা গুনগুনিয়ে হাঁটছি। এমন সময় পাস দিয়ে একদল ছেলে পাস দিয়ে হৈ হুল্লোড় করতে করতে চলে গেলো, ওদের পোশাক এবং গায়ে কাদা মাখা দেখে বোঝা যায়; ফুটবল খেলে ফিরছে ওরা। ওরা চলে যাওয়ার পরে আমার দৃষ্টি পড়লো সামনে থেকে আসা এক মেয়ের ওপর। আবছা আলোতে ঠিক মুখটা দেখা যাচ্ছিলো না।
আমাদের মধ্যে যখন দূরত্ব কমতে থাকলো, তখন দেখলাম সেই নিসর্গীয় অপরূপাকে। পরনে তার হালকা নীল রঙের শাড়ি, গোধূলির রক্তিম লাল আলোর ছটা তার বৃষ্টি ভেজা আলোকেশকে অপরূপাকে করে তুলেছে স্বর্ণকেশী। আমাদের মধ্যে ক্রমশই দূরত্ব কমছিল; তার রূপের লাবণ্যে আমি যেন নিজেকেই হারিয়ে ফেলছিলাম। হৃদয়ে এক অন্য অনুভূতি, যেন আমি আমার নিজের থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছি, এক জায়গা থেকে নিজেকে সারাতে পারছি না। ওর অপরূপ সুন্দর মুখ; সে যেন এক স্বর্গের অপ্সরা; বৃষ্টি ভেজা তার চোখের পাতা। অপরূপা সিন্ধ নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে হালকা জিজ্ঞাসার সুরে জিজ্ঞেস করলো, “রাহুল তুমি এতদিন কোথায় ছিলে?”
স্বভাবতই আমি খুব অবাক হলাম। আমি বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলাম “তুমি আমাকে চেনো কিভাবে?” ও আমার দিকে তাকিয়ে বললো আমি মোনালিসা, তোমার সাথে একই স্কুল-এ পড়াতাম। মনে পড়লো স্কুল এর পুরোনো কথা; মোনালিসা নাম একজন মেয়ে আমাদের স্কুলে ক্লাস নাইন-এ ভর্তি হয়েছিল, ওর বাবা শিলিগুড়িতে সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিল, অবসরের পর আমাদের শহরে এসেছে। ছিপছিপে শরীর, গায়ের রং ফর্সা দেখতে অতটা আকর্ষণীয় না হলেও, আমার কিন্তু না জানি কেন প্রথম থেকেই ভালোই লাগতো।
ছোটদের রূপকথার গল্প - শীতের রাজ্যের জাদু: শীতের রাজ্যের জাদু: একটি মজাদার ছোটদের গল্প, যেখানে রাজা শীতল রূপকথার গল্পের মাধ্যমে শিশুদের জন্য শীতের রাজ্যে গরমের অনুভূতি এনে দেন। সম্পুর্ন বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
আজ সেই মোনালিসা আমার সামনে দাঁড়িয়ে; এক নতুন রূপে নতুন ভাবে। এক মুহূর্তের মধ্যে জীবনটা যেন ১০ বছর পিছিয়ে গেলো। জিজ্ঞেস করলাম, “কেমন আছো?”। ও বললো কোথাও একটা বসে কথা বলি!
আমি বললাম চলো সময়ের একটা রেস্তোরায় বসে কথা বলি, ও মুহুর্তে কি যেন একটা ভেবে বললো “না ওখানে না; অন্য কোথাও।” আমি যে খুব একটা অবাক হলাম না এটা বললে ভুল হবে। আমি একটু থতমত খেয়েই বললাম তাহলে আমার ফ্লাট-এ চলো; যদি তোমার কোনো অল্পত্তি না থাকে।
আজ বাড়িতে কেউ ছিল না। বাবা-মার্ আমি এক মাত্র সন্তান। কাল বাবা ও মা একটা কাজে দিল্লী গেছে। বাড়িতে আমি একা।
ও শুনেই বললো, হ্যা আমার কোনো অসুবিধা নেই। ওর চোখটা যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে; ও যেন আমার এই উত্তরের আশা করছিলো। আমার অনেক কথা বলার আছে, আমি আজ রাতটা তোমার সাথে থাকতে চাই। ওই কয়েকটা মুহূর্ত যেন আমার জীবনে বিষ্ময়ে ভরে উঠেছিল। আমি শুধু “ওকে” বলে সম্মতি জানালাম। আমি বললাম “এখন থেকে আমার বাড়ি ১৫-২০ মিনিট হাঁটার রাস্তা। একটা রিক্সা ডেকে নেই”। ও বললো না তার দরকার নেই আজ হেঁটেই চলো।
তখন সময় সন্ধ্যে ৭ টা মতো হবে, রাস্তায় তেমন কেউ নেই, বৃষ্টি তখনও পারছে কিন্তু আগের থেকে অনেকটা কম। আমরা একে ওপরের অবলা প্রশ্নে এতটাই নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছিলাম যে, আমরা কখন যে অর্ধেকের বেশি ভিজে গেছি সেটাই বুঝতে পারিনি। আমরা পাশাপাশি হাত ধরে হাটছিলাম: কারোর মুখে কোনো কথা ছিলনা। মাঝে মাঝে একে অপরকে প্রশ্ন ভরা দৃষ্টি নিয়ে দেখছিলাম। এখন আমরা ফ্লাট এ পৌছে গেছি। আমি ওকে বললাম, “তোমার জামা কাপড় তো ভেজা, তুমি একটু বইটি কারো আমি দেখছি তোমাকে কি দেওয়া যায় আপাতত পাড়ার জনা। “ও শুধু মাথা নেড়ে হ্যা জানালো।
আমি একটা রাত্রি কালীন পাজামা নিয়ে এসে ওকে দিয়ে, বার্থরুম এর দিয়ে ইশারা করে বললাম, ‘যায় চেঞ্জ করে এসো। আমি ও অন্য একটা বার্থরুম চলে গেলাম চেঞ্জ করতে। প্রায় ১০-১৫ মিনিট পরে আমি আমাদের ড্রয়িং রুম এ এসে দেখি ও সোফায় বসে আছে আর মোবাইল এ কিছু একটা করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কফি খাবে?’ ও আবার ও মাথা নেড়ে হ্যা বললো। আমি দুটো কফি মগ নিয়ে কিছুক্ষণ পরে ড্রয়িং রুম এ এসে তাকে একটা মগ ধরিয়ে দিয়ে, জিজ্ঞেস করলাম “বল?”
অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - স্নেহের আশ্রয়: "স্নেহের আশ্রয়" একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ভালোবাসা ও যত্নের শক্তি দুটি বিপন্ন শিশুর জীবন বদলে দেয়। এটি অতীতের স্মৃতি ও মানবতার এক হৃদয়স্পর্শী উপাখ্যান। সম্পুর্ন বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
সে মগ এ দুতিন বার চুমুক দেওয়ার পর ও আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমাদের মাধ্যমিক পরীক্ষার পর আমি আমার বাবা মায়ের সাথে দিল্লী তে চলে যাই। বাবা ওখানে একটা বেসরকারি অফিস এ চাকরি পেয়েছিল, এক্স-সার্ভিস ম্যান হিসাবে। আমি যখন উচ্চমাধ্যমিক পাস করে দিল্লী ইউনিভার্সিটি তে বি কম নিয়ে ভর্তি হই, তখন আমাদের ক্লাস এ রাকেশ নামে একজনের সাথে আলাপ হয়। ও তোমার হুবহু কপি ছিল, শুধু দেখতে আলাদা ছিল। কিন্তু কথা বলার, পোশাক পরিচ্ছদের ধরণ পুরো তোমার মতো। আমি জানিনা কেন রাকেশ শুধু আমাকে তোমার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলো। তোমার মনে পরে ক্লাস টেনের সেই স্বরস্বতী পুজোর দিন, সেদিন তুমি আমাকে একটা গোলাপ ফুল দিয়ে বলেছিলে, ‘গোলাপটা তোমার থেকে সুন্দর নয়। আমি জানিনা তুমি আমাকে ভালোবাসতে কিনা। কিন্তু আমরা মেয়েরা ছেলেদের থেকে যেন একটু আগেই বড় হয়ে উঠি। যেদিন থেকে তোমায় দেখেছিলাম সেদিন থেকে তোমার চোখে আমার জন্য একটা আবেগ দেখতাম। কিন্তু না তুমি না আমি কোনো দিন একে ওপরকে বলে উঠতে পারিনি। হয়তো নিজেদের মনের কথা বোঝানোর জন্য আমাদের বয়স খুবই কম ছিল। আজ ১০ বছর পরে তোমাকে সামনে পেয়ে এই কথাটা বলতে পেরে আমি যেন নিজেকে পরিপূর্ণ করতে পেরেছি।’
আমি চুপচাপ ওর কথাগুলি শুনছিলাম। ওকে ভালোতো আমিও বাসতাম। কিন্তু ও বললো না বয়সের জন্য বলে হয়ে ওঠা হয়নি। হয়তো আমরা আমাদের আবেগকে সামলানোর জন্য অনেক আগেই বড় হয়ে উঠেছিলাম। ও আবার বলতে শুরু করলো,
“তারপর একদিন আমি রাকেশকে জিজ্ঞেস করেই বসলাম যে, তার বাড়ি কোথায়? ও বললো হরিয়ানা তে। এর পর থেকে আমি ওকে আর সেই ভাবে কিছু জিজ্ঞেস করিনি শুধু তোমাকে ওর মধ্যে খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। আমার গ্রাডুয়েশন এর পর আমি একটা এন জি ও তে কাজ শুরু করলাম। বাবা প্রথমের দিকে আপত্তি জানালেও পরে সেই ভাবে কিছু বলেনি। হয়তো একমাত্র মেয়ের মন রাখতে চেয়েছিলো।
কলেজ ছাড়ার পর না জানি কেন প্রতিটা মুহুত্তে তোমার কথা মনে পড়তো। তুমি কেমন আছো? কোথায় আছো? তোমার বিয়ে হয়ে গেছে কিনা? এইসব প্রশ্ন আমাকে পাগল করে তুলেছিল। জীবনে সব ছিল তবুও না জানি কেন খুব একাকিত্ব বোধ করতাম।
একদিন ফেইসবুক গ্রুল করতে গিয়ে দেখি আমাদের সঙ্গে সুজয় বলে যে পড়তো তার প্রোফাইল। আমি তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই ২-৩ দিন পরে সে একসেপ্ট করে।’
তখন রাত্রি প্রায় ৯টা। কাজের মাসি রুটি তরকারি বানিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো আগেই। আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, “চলো ডিনার টা সেরে নিই’।
ও বললো ‘রান্না?”
আমি বললাম ‘রান্না হয়ে আছে, শুধু খাওয়ার গরম করতে হবে, মাসি রান্না করে দিয়ে গেছে।।
“চলো আমি তোমাকে একটু হেল্প করে দি’ ও বললো।
আমরা রান্না ঘরে গিয়ে আমি মাইক্রোওভেন এ রুটি গুলো গরম করছিলাম সে তরকারি টা গরম
করছিলো।
তারপর ডাইনিং টেবিল এ একে ওপরের দিকে মুখ করে বসে খাওয়া শুরু করলাম। আমি একটা রুটি তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, ‘তার পর বল, সুজয়ের কাছ থেকে আমার খবর নিলে?’
ও বললো ‘হ্যা, সুজয় বললো, রাহুল এখন বাড়িতেই থাকে, কাকুকে ব্যবসার কাজে সাহায্য করে।”
সন্ধে থেকে এতক্ষন কথা বার্তার মধ্যে আমি ওর বাবা মার্ কথা জিজ্ঞেস করতে ভুলেই গেছিলাম। একটা হালকা অপরাধ বোধ করছিলাম, যাই হোক আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কাকু কাকিমা কেমন আছেন? আমার এই কথাটা শুনে ওর হাত থেকে রুটির টুকরো টা পড়ে গেলো, সে কাঁদতে শুরু করলো। আমি খুব অপ্রস্তুত হয়ে গ্লাস এ জল নিয়ে ওর কাছে গিয়ে গিয়ে বললাম “কি হলো? কাঁদছো কেন? সব ঠিক আছে তো?” আমার দুটো হাত ধরে ওটাতেই মাথা দিয়ে কাঁদতে লাগলো। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে ও বলতে শুরু করলো,
“গত বছর যখন কোভিড শুরু হলো তাকান আমার বাবা মা আমেরিকা তে মাসির ছেলের বিয়ে ছিল। আমার এন জি ও তে কিছু জরুরি কাজ ছিল সেই জন্য আমি যেতে পারিনি। ভারতে তখন লক ডাউন লাগা শুরু হয়েছে বিদেশ থেকে সবাই ফিরে আসছিলো আমার বাবা মা ও ফিরে এসেছিলো ওই সময়। সরকারি নিয়ম মতো ১৪ দিন কোয়ারান্টিনে ও ছিল। কোয়ারান্টিনে থেকে ফেরার ২-৩ দিন পর্ বাবা একদিন অফিস থেকে জ্বর শরীরে বাড়িতে ফিরলো। ওই রাতে তো কাউকে কিছু জানানো হয়নি। পরের দিন সকালে অ্যাম্বুলেন্স এসে আমার তিনজন কে কোভিড টেস্ট এর জন্য হাসপাতাল এ নিয়ে যায়। বাবা ও মা দুজনের রিপোর্ট পসিটিভ আসে আমার নেগেটিভ। আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বাবার একজন অফিস কলিস আমাদের সোসায়াটি তে থাকতো ওর সাথে আমি বাড়ি ফিরি।
চারিদিকে তখন মৃত্যুর মিছিল, হাহাকার, হাসপাতাল এ বেড নেই, অক্সিজেন নেই মেডিসিন নেই। আমি এখন ও অনুভব করতে পারি তখনকার আমার মনের অবস্থা।
বাবা মার সাথে মোবাইল এ কথা বলা যাচ্ছিলো না। আমি হাসপাতাল এ ও যেতে পারছিলাম না। ৪-৫ দিন পর হাসপাতাল থেকে খবর আসে বাবা মা দুজনে শ্বাস কষ্টে মারা গেছে। সেই সময় আমার মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছিল। শেষ দেখাটাও দেখতে পাইনি। দূর থেকে একজন আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলেছিলো ওই তোমার বাবা মা।”
কথাটা শেষ করতে না করতেই সে আবার কান্না শুরু করে দিল। আমি কোনো ভাবে তাকে বুঝিয়ে বললাম “রাত হয়েছে, তুমি পাশের ঘরে গিয়ে রেস্ট কর, আর হ্যা দরজা টা দিয়ে দিও। বাবার কিছু ফাইল এর কাজ আছে ওগুলো শেষ করে আমি ঘুমোতে যাবো। এক কথাটা বলে আমি আমাদের পেস্ট রুম টা দেখিয়ে দিলাম। সেও র কিছু না বলে হাত মুখ ধুয়ে রুম এ চলে গেলো। আমি ড্রয়িং রুম এ এসে এক গ্লাস ওয়াইন নিয়ে টিভি-টা অন করলাম। ল্যাপটপ টা সোফায় রাখা ছিল সেটাকে কোলে তুলে নিলাম।
সেই রাতটা ছিল আমার কাছে বিস্ময়ের, হয়তো তার ও.একই অবস্থা ছিল। আমরা যেন একে অপরকে চেনার চেষ্টা করছিলাম। আমি পাগল হয়ে উঠার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে সে কেমন অনুভব করছিল; তবে আমাদের মধ্যে যে অনুভূতির জটিলতা উচ্চ পর্যায়ে পৌছচ্ছিলো।
সেটা বুঝতে পারছিলাম। আমি সেই মুহুর্তে দুটি ধরণের ভয়ের সাথে লড়াই করছিলাম- দূরে চলে যাওয়ার ভয় এবং সম্পূর্ণ নতুন জীবন পুনরায় শুরু করার সুযোগ অস্বীকার করার ভয়। কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর আমি টিভি এর চ্যানেল তা পাল্টে দিলাম। সে যে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তা আমাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। আমাদের মধ্যে যেন একটা লুকোচুরি খেলা চলছিল। সে কি আমাকে উত্তেজিত করছে? আমি মনে মনে ভাবলাম। আমি এখন ঘুমাতে পারিনি! আমার প্রতিপক্ষ শুধু সুন্দরই ছিল না, তার আবেগঘন চোখের ভাষায় এতটাই দক্ষতা ছিল, তার লক্ষাগুলিকে আমাকে প্রলুব্ধ করে তুলছিলো। আমাদের শরীরের ভাষা যেন একে ওপর কে প্রশ্ন করছিলো “কে আগে?”
প্রায় ৩০ মিনিট পেরিয়ে গেছে। আমার ও কাজ প্রায় শেষ। ওয়াইন এর গ্লাস টা হাতে তুলতে যাবো এমন সময় দেখি মোনালিসা সামনে দাঁড়িয়ে। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আমার জন্য একটা বানাও।’ রান্না ঘর থেকে একটা ওয়াইন এর গ্লাস নিয়ে এসে ওর জানো একটা বানালাম। এখন ও আমার পশে বসে আছে, দুজনে চীয়ার্স করার পর, ও আমার দিকে তাকিয়ে বললো ‘রাহুল তুমি কি এখন কাউকে ভালোবাস? মানে তোমার জীবনে কেউ আছে?’
এখন আর ওর চোখের সিন্ধাটা নেই, একটা নীলাভ আভা ওর চাউনিতে। চোখের আর মুখের ভাষা যেন একে ওপরকে মিথ্যে না বলতে বলছে। ও কি চায় আমার কাছ থেকে। সত্যি বলতে আমার জীবনে সেই রকম কেউ ছিল না, শুধু কয়েকজন কলেজের মেয়ে বন্ধু দের সাথে যোগাযোগ ছিল। আমি বললাম, “না।”
এই নারী আমার চোখের ওপর থেকে কৌতুকের পর্দাতা সরিয়ে দিয়েছে; যা আমাকে আবার নতুন করে এই শহরের প্রেমে পড়তে বাধ্য করে। মানসিক ভ্রমণ নিঃসন্দেহে রোমান্টিক, তবে বাড়ির প্রতিটি কোপে অপেক্ষা করা রোম্যান্সের দৃষ্টিশক্তি হারানো এত সহজ সেটা আগে কোনোদিন বুঝতে পারিনি। রাস্তার একসাথে হাঁটা বা সোফায় বসে একসাথে ওয়াইন শেয়ার করা; তার সুন্দর নীল চোখ প্রতিটি দৃশ্যকে উত্তেজনা এবং বিস্ময়ের সাথে স্বাগত জানায়, এমনকি হালকা লজ্জার আড়ালে লুকিয়ে থাকা আমার প্রতি তার আবেগ দৃশ্যমান ছিল, সে নেশাগ্রস্ত ছিল। আমরা একটি ১০ বাই ১৫ এর ঘরে একটা সোফায় বসে ত্রিশ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে একে অপরের পারস্পারিক উষ্ণতা পরীক্ষা করছি। রাত তখন ১২ তার বেশি। আমার হাতে ধরা গ্রাস তাকে সরিয়ে আমার কানের কাছে এসে বললো, ‘গোলাপ তো সুন্দর ই হয়, তুমি আছো তাই আজ আমি গোলাপের থেকেও সুন্দর, প্রস্ফুটিত, নেশাতুর। “ও যেন নির্দ্বিধায় নিজেকে আমার কাছে বিলিয়ে দিতে চায়। এটাকি ওর ভালোবাসা নাকি নেশাগ্রস্থ এক নারী শরীরের চাহিদা।
বাংলা ছোট গল্প - পিতা-পুত্র সংবাদ: এক হৃদয়স্পর্শী বাংলা ছোট গল্প, "পিতা - পুত্র সংবাদ," যেখানে বাবা-ছেলের গভীর সংলাপে উঠে আসে দায়িত্ব, ভালোবাসা ও নতুন জীবনের পথে এগিয়ে চলার এক অনুপ্রেরণামূলক কাহিনি। সম্পুর্ন বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
ওর ক্রমাগত চিন্তাভাবনা ও শারীরিক ভাষা আমার চেতনাকে আচ্ছন্ন করছে। আমি যেন নিজের সাথে সংগ্রাম করে যাচ্ছি। ও আমি মনে মনে তাকে একটি কিস করার কথা ভাবছিলাম, হয়তো এটাই উপযুক্ত সময়। যাইহোক, আমি একটা ভয় মিশ্রিত আবেগের সাথে ওর গালে একটা কিস করলাম। আমি ভেঙ্গে পড়িনি, সত্যি বলতে কি, তার পাশে বসে থাকাটাই আমাকে সন্তুষ্ট করার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি হয়তো সেটাই চেয়েছিল। ও ওর বাম হাত টা আমার কাঁধের কাছে শক্ত করে রেখে আমার মুখটাকে ওর ঠোঁটের কাছে নিয়ে এক নেশাতুর কিস দিল। আমার শিরা উপশিরায় যেন হাজার আপ্নেওপিরির বিস্ফোরণ। এই রকম পরিস্তিতির জন্য আমি খুবই প্রস্তুত ছিলাম। শুধুমাত্র এই কারণেই নয় যে আমি একজন আত্মবিশ্বাসী এবং পুরোনো সঙ্গীর সঙ্গ পেয়েছি, কারণটা এটাই ছিল যে এই দুঃ সাহসিক কাজের জন্য আমাদের দুজনের শরীর ও মন ১০ বছর ধরে ক্ষুধার্ত ছিল। আমরা দুজনে একে ওপরকে জড়িয়ে ধরলাম। জীবনে এই অনুভূতি কখনো আসেনি। ধীরে ধীরে সে আমার মুখের ওপর থেকে মুখটা সরিয়ে একটা সন্তুষ্টির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘রাহুল আই লাভ ইউ মোর দেন ময় লাইফ, মোর দেন এনিথিং ইন ঢিস উনিভার্সা। নেশায় আচ্ছন্ন শরীরটা আমার বুকের ওপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পারলো।
আমি মিনিট দশ ওই ভাবে বসে ছিলাম। তারপর তাকে কোলে তুলে বেডরুম নিয়ে শুইয়ে দিলাম। রুম থেকে বেরোনোর আগে ওর কপালে একটা কিস করে আলোটা নিভিয়ে দিয়ে বেরিয়ে এলাম। রুম এর দরজাটা আলতো করে চাপিয়ে দিয়ে আমি আমার রুম এ ঘুমোতে চলে গেলাম। তখন রাত ১:১৫।
পরের দিন সকালে ওরি ডাকে ঘুমটা ভাঙলো, হাতে কফি মগ নিয়ে, ‘গুড মর্নিং, ব্রেকফাস্ট রেডি। ফ্রেয়াস হয়ে নাও আমাকে বেরোতে হবে। আমি আমার ঘুম ধরানো স্বরে জিজ্ঞেস করলাম ‘কোথায় ?’। ‘আগে কফি খেয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও, ব্রেকফাস্ট করতে করতে বলছি”
ব্রেকফাস্ট এর টেবিল এ ও বললো ‘আমি এখন দিল্লী ফিরবো, আমার একটা ক্লায়েন্ট মিটিং আছে “। বলে ওর ব্যাগ থেকে একটা ভিসিটিং কার্ড বের করে আমায় দেয়, কার্ড এ লেখা আর এম সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড, মোনালিসা মজুমদার, এম ডি আর নিচে মোবাইল নম্বর টা লেখা আছে। “আমি চাই তুমি খুব তাড়াতাড়ি কাকু কাকিমার সাথে আমাদের বিয়ের বিষয়ে কথা বল” আমি আর তোমাকে ছেড়ে থাকতে চাইনা। বলেই ব্রেকফাস্ট টা শেষ করে উঠে পড়লো। বললো নিচে ট্যাক্সি চলে এসেছে, খুব তাড়াতাড়ি আবার দেখা হবে। গুড বাই। শেষ আলিঙ্গন ও চুম্বনটা ছিল খুব স্বভাবিক শান্ত।
সেদিন আমার সাথে যা ঘটছে তা সত্ত্বেও আমাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, এমন কিছু ছিল যা আমাকে আমার হৃদয়ের সমুদ্রে যাত্রা করতে বাধা দিচ্ছিল। বারবার একটি পাল্টা চিন্তা আমার বিবেকের দরজায় কড়া নাড়বে এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করবে যে সবকিছু যেভাবে ঘটছে সেভাবে চলতে দেওয়া পুরোপুরি ঠিক ছিল কিনা। মাঝে মাঝে আমি আমার অতীত স্মরণ করতাম এবং কিছু অজানা প্রশ্নের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করতাম। বেশিরভাগ সময় আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে আমি কি করছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই আমি নিশ্চিত ছিলাম যে আমি নিজের প্রতি এবং অন্যদের প্রতি সৎ ছিলাম।