কলকাতার বুকে, ঠিক হুগলি নদীর কিনারে, ঐতিহ্যবাহী ভাঙাবাড়ির ঘন্টাধ্বনি রাতের নীল শান্তিতে মিশে যাচ্ছিল। অবনী, একজন স্বনামধন্য লেখক, বারান্দায় বসে কলকাতার ঝাপসা আলো দেখছিলেন। কিন্তু তার মন ছিল অশান্ত। কয়েকদিন আগে তার সহকারী, শ্যামল, হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। শ্যামল কেবল সহকারীই ছিলেন না, ছোটবেলার বন্ধুও। তাই অবনীর মন খুবই খারাপ ছিল।
এমন সময়, কলিং বেল বেজে উঠলো। অবনী দরজা খুলতেই চোখে পড়ল একটি সুন্দরী মেয়ে। চোখ দুটি রাতের আকাশের মতো কালো, চুলে গাঁথনি করা ফুল।
“কে আপনি?” অবনী জিজ্ঞাসা করলেন।
“আমি ঐশী,” মেয়েটি নিচু গলায় বলল, “আপনার সাথে জরুরি কথা আছে।”
অবনী একটু সন্দেহ করলেও ঐশীকে ঘরে আসতে দিল। ঘরে ঢুকে একটা চেয়ারে বসে ঐশী এক নিঃশ্বাসে বলতে শুরু করল, “আমি শ্যামলের বোন। আর আমি জানি কেন সে নিখোঁজ হয়েছে।”
অবনী চমকে গেল। এতদিন ঐশীর অস্তিত্বই তিনি জানত না। ঐশী তাকে এক অদ্ভুত গল্প শোনাল। শ্যামল আসলে কোনো সাধারণ মানুষ ছিলেন না। তিনি ছিলেন ‘মধুমতির রক্ষক’ – মধুমতি নদীর তীরে অবস্থিত এক গুপ্ত রাজ্যের পাহারাদার। সেই রাজ্যে বাস করত অতিমানব ক্ষমতাসম্পন্ন জাতি, যারা বহুকাল ধরে মানুষের চোখ থেকে নিজেদের গোপন রেখে আসছিল। শ্যামল, এই দুই দুনিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন। কিন্তু কয়েকদিন আগে, মধুমতির রাজ্যে একটি অশুভ শক্তি আবির্ভূত হয়েছে। এই শক্তি সেই রাজ্যের অধিবাসীদের ক্ষমতা হরণ করছে। শ্যামল, এই বিপদ জানাতেই অবনীর কাছে এসেছিলেন। কিন্তু সেই রাতেই, তিনি নিজেই নিখোঁজ হয়ে গেলেন।
অবনী অবাক হয়ে শুনছিল। তার লেখা কাহিনীর পাতাগুলোয় এসব অতিলৌকিক ঘটনা থাকলে হয়তো পাঠকরা তা বিশ্বাস করতো না। কিন্তু ঐশীর চোখের আন্তরিকতা এবং শ্যামলের হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া – সবকিছুই যেন ঐশীর কথার সত্যতা বলে দিচ্ছিল।
“আপনাকেই শ্যামলকে উদ্ধার করতে হবে,” ঐশী আকুল গলায় বলল, “আপনিই এ একমাত্র মানুষ, যিনি শ্যামলের দু’দুনিয়ার কথা জানেন।”
অবনী ভাবছিলেন, এতদিনের লেখা কাহিনীগুলো কি আসলেই কি সত্যি ছিল? ঐশীর কথা শোনার পর থেকেই অবনীর মনে কেমন এক অবাস্তব বোধ জাগছিল। তিনি ঐশীকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কিভাবে মধুমতির রাজ্যে যাব?”
ঐশী একটা ছোট্ট বাক্স তার ব্যাগ থেকে বের করল। বাক্সটা খুলতেই, এর মধ্যে থেকে উজ্জ্বল আলো বেরিয়ে পড়ল। “এই পাথরটি আপনাকে মধুমতির তীরে নিয়ে যাবে,” ঐশী বললেন, “কিন্তু মনে রাখবেন, সেখানকার সময়ের সাথে আমাদের এই জগতের সময়ের মিল নেই। আপনি যতক্ষণ সেখানে থাকবেন, এখানে বহু সময় কেটে যেতে পারে।”
অবনী পাথরটি হাতে নিল। পাথরটা ঠান্ডা ছিল, কিন্তু এক অদ্ভুত শক্তি তাকে আকর্ষণ করছিল। ঐশী তাকে আরো কিছু জানাল – কিভাবে মধুমতির রক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, কিভাবে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। সব শোনা শেষে অবনী জানালেন, “আমি যাব। কিন্তু ফিরবো তো?”
ঐশী তার চোখের কোণে এক ফোঁটা জল দেখিয়ে বলল, “আমার বিশ্বাস আছে, আপনি ফিরবেন। শ্যামলকে ফিরিয়ে আনবেন।”
অবনী আর দেরি করল না। ঐশীকে বিদায় জানিয়ে সে নদীর ধারে দাঁড়িয়ে, তিনি হাতে পাথর নিয়ে মন্ত্র জপতে শুরু করল। মনে মনে শ্যামলের কথা ভাবছিল। হঠাৎ, পাথরটা ঈশানের মতো উজ্জ্বল আলো ছড়িয়ে দিল। অবনী চোখ বন্ধ করল। তার পরেই মনে হলো, সে ঝরে পড়ছে।
চোখ খুলতেই অবনী দেখল, সে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এ নদী সে চেনে না। জলটা অদ্ভুতভাবে স্বচ্ছ, আর তার ওপরে ভাসছে অসংখ্য জোনাকি পোকা। চারপাশে গভীর অরণ্য। গাছের ডালে অদ্ভুত রঙের পাখি ডাকছে। সবকিছুই অবাস্তব, কিন্তু মনমুদ্ধকর।
এমন সময়, একটা গভীর গর্জন শব্দ হলো। অবনী চমকে তাকাল। দেখল, দূরে নদীর বুক চিড়ে একটা বিশাল সরীসৃপ উঠে আসছে। তার চোখ দুটি লাল আগুনের মতো জ্বলজ্বল করছে। অবনী বুঝতে পারল, এটিই সেই অশুভ শক্তি।
কী করা উচিত, বুঝে উঠতে পারছিল না অবনী। ঠিক সেই সময়, গাছের আড়াল থেকে একটা দল বেরিয়ে এল। তাদের গায়ে নীল রঙের পোশাক। চোখে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা।
তাদের দলপতি, একজন বয়স্ক লোক জিজ্ঞাসা করল; “আপনি অবনী?”
“হ্যা,” অবনী কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো।
“আমি এসেছি শ্যামলকে…”
কথাটা শেষ না হতেই দলপতি হাত বাড়িয়ে থামিয়ে দিলেন। “শ্যামল বিপদে। কিন্তু এখন সময় নেই। ওই সরীসৃপটিকে আটকাতে হবে, নাহলে সব শেষ।”
অবনী একবার ভাবল না। লেখক হিসেবে অবশ্যই লিখেছে এসব যুদ্ধ-বিগ্রহের কথা, কিন্তু বাস্তবে? তবুও, শ্যামলকে বাঁচাতে তাকে কিছু না কিছু করতে হবে। অবনী দলপতির দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি কিভাবে সাহায্য করতে পারি?”
দলপতি একটু হাসলেন, “সাহসই আছেন।” তারপর তিনি অবনীকে একটা অদ্ভুত ধাতুর তৈরি তলোয়ার দিলেন। “এই তলোয়ারে একটা বিশেষ শক্তি আছে, অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে পারে।”
অবনী তলোয়ারটা হাতে নিল। এটা অদ্ভুতভাবে ঠিক তার হাতের মাপের। তিনি গভীর শ্বাস নিয়ে দলপতির পাশে দাঁড়াল। অন্য রক্ষকরাও অস্ত্র বের করল।
যুদ্ধটা ভয়ঙ্কর লাগলো। সরীসৃপটির শরীরটা ছিল কাঠের মতো শক্ত। রক্ষকদের তলোয়ার লাগলেও কোনো ক্ষতি হচ্ছিল না। অবনীও সাহস করে এগিয়ে গেল। তিনি মনে মনে ঐশীর কথাগুলো বলতে লাগল। হঠাৎ, তলোয়ারটা এক অদ্ভুত আলোয় জ্বলজ্বল করতে লাগলো। অবনী সরীসৃপের একটা পা’য় জোরে আঘাত করল। এবারে কাজ হলো। সরীসৃপটা চমকে উঠলো। তার চোখের আগুন নিভে গেল।
কিন্তু খুশি হওয়ার আগেই, নদীর গভীর থেকে আরো কয়েকটা ছোট সরীসৃপ বেরিয়ে এলো। পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠলো। রক্ষকরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন। অবনী বুঝতে পারল, শুধু তলোয়ার দিয়ে জেতা যাবে না।
এমন সময়, অবনীর মনে একটা চমক লাগলো। তার লেখা কাহিনীগুলোয়, মধুমতির রক্ষকরা প্রকৃতির শক্তিকে ডেকে যুদ্ধ করতেন। অবনী চোখ বন্ধ করে মনে মনে নদীকে ডাকতে শুরু করল। অবনী নদীর স্রোতের গতিধারা অনুভব করার চেষ্টা করল।
হঠাৎ, অবনীর মনে হলো, নদী তার ডাক শুনতে পেয়েছে। নদীর জল উত্তাল হয়ে উঠলো। ঢেউ গিয়ে আছড়ে পড়ল সরীসৃপের গায়ে। সরীসৃপগুলো চিৎকার করে পালিয়ে যেতে লাগলো।
যুদ্ধ শেষ হলো। রক্ষকরা ক্লান্ত হলেও তাদের চোখে অবনীকে দেখে অবাক হওয়ার ভাব। দলপতি অবনীর কাছে এসে বললেন, “আপনি কে জানি না, কিন্তু আপনি আজ আমাদের রক্ষা করেছেন।”
অবনী হাসল, “আমি লেখক। কিন্তু লেখা ছাড়াও, হয়তো কিছু কিছু সত্যি আছে এই পৃথিবীতে।”
দলপতি মাথা নাড়লেন। “আপনি ঠিক বলেছেন। এখন চলুন, আপনাকে শ্যামলের কাছে নিয়ে যাই।”
অবনী তাদের সঙ্গে হাঁটতে শুরু করলেন। পথে, তিনি মধুমতির রাজ্যের আরো অনেক কিছু দেখলেন।
চলার পথে অবনী মধুমতির রাজ্যের নান্দনিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হলেন। ঝর্ণাধারা, ঔষধি গাছের জঙ্গল, আকাশে উড়ন্ত রঙিন পাখি – সবকিছুই যেন কোনো কল্পনার জগতের মতো। কিন্তু এই সৌন্দর্যের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল এক গভীর বিষণ্নতা। কিছু কিছু গ্রামের বাড়ি পরিত্যক্ত, রাস্তাঘাট জনশূন্য। অবনী দলপতিকে জিজ্ঞাসা করল, “এখানে কি হয়েছে?”
দলপতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “অশুভ শক্তিটি রাজ্যের অনেক জায়গায় আক্রমণ চালিয়েছে। তারা আমাদের শক্তি হরণ করার চেষ্টা করছে।”
অবনী বুঝতে পারল, পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা একটা গুহার সামনে এসে পৌঁছল। দলপতি জানাল, এটাই শ্যামলকে বন্দী করে রাখা জায়গা। গুহার মুখে দু’জন রক্ষক দাঁড়িয়ে ছিলেন।
“শ্যামল ঠিক আছে?” অবনী উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞাসা করল।
“কথা বলতে পারছে না,” একজন রক্ষক বললেন, “কিন্তু জীবিত আছে।”
দলপতি অবনীকে একটা বিশেষ ভেষজ নির্যাস দিয়ে বললেন, “এটা শ্যামলকে মাখান। তার শক্তি ফিরে আসবে।”
অবনী গুহার মধ্যে ঢুকল। ভেতরটা অন্ধকার। হঠাৎ, একটা দুর্বল কণ্ঠ শোনা গেল, “অবনী?”
শ্যামলকে একটা পাথরে বেঁধে রাখা হয়েছিল। অবনী তা খুলে দিয়ে ভেষজ নির্যাস মাখাল। কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্যামলের চোখ খুললো।
“অবনী? তুমি এখানে?” শ্যামল কষ্টে কথা বলল।
“শ্যামল, ঠিক আছ?” অবনী উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞাসা করল।
“এখন ঠিক আছি,” শ্যামল বলল, “কিন্তু অশুভ শক্তির উৎস খুঁজে বের করতে হবে। সেই না হলে, মধুমতির রাজ্য রক্ষা পাবে না।”
অবনী শ্যামলকে ঐশীর কথা, নদীর সঙ্গে যোগাযোগের অভিজ্ঞতা সব জানাল। শ্যামল মুখে হাসি ফুটলো, “তাহলে তুমিই আমাদের রক্ষাকর্তা। আমার লেখাগুলো সত্যি হয়ে উঠলো!”
দু’জন বন্ধু কিছুক্ষণ হাসল। তারপর, তারা গুহার বাইরে এসে দলপতির সঙ্গে পরিকল্পনা করতে লাগল। অবনী ঐশীকে লেখা কাহিনীগুলোর বইয়ের সাহায্য নিয়ে অশুভ শক্তির উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করল। শ্যামল আর দলপতি রাজ্যের অন্যান্য রক্ষকদের নিয়ে রক্ষার ব্যবস্থা করলেন।
দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানের পর, অবনী একটা প্রাচীন গ্রন্থে জানতে পারল, অশুভ শক্তির উৎস মধুমতির রাজ্যেরই কাছাকাছি অবস্থিত একটি বিস্মৃত মন্দির। সেই মন্দিরে বন্দী ছিল এক শক্তিশালী দানব, যাকে রাজ্যের পূর্বপুরুষরা বন্দী করে রেখেছিল। কিন্তু সম্প্রতি কোনো এক অজানা কারণে, মন্দিরের শক্তি ক্ষীণ হয়ে গেছে, ফলে দানবটি ধীরে ধীরে মুক্ত হচ্ছে এবং তার কুপ্রভাব মধুমতির রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।
এই খবর শুনে সবাই চিন্তায় পড়ে গেল। দানবটি মুক্ত হলে, মধুমতির রাজ্য তো বটেই, মানব জগতেরও বিপদ আশঙ্কা। অবনী তখন তার লেখাগুলোতে পড়া কিছু মন্ত্র মনে করল। সেই মন্ত্রগুলো দানবকে দমিয়ে রাখতে ব্যবহৃত হতো। তিনি দলপতির সঙ্গে পরামর্শ করে ঐ মন্ত্র জপ করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
যাত্রার আগে ঐশীর দেওয়া পাথরটা অবনীর হাতে ছিল। তিনি শ্যামলকে বললেন, “যদি কিছু ভুল হয়, তাহলে এই পাথরটা দিয়ে ফিরে যেতে হবে।” শ্যামল একটু ইতস্তত বোধ করলেও, অবনীর কথা মেনে নিল।
অবশেষে, দলপতি, অবনী, শ্যামল আর কয়েকজন রক্ষক মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। পথটা ছিল কঠিন আর বিপজ্জনক। অবনী লেখক হিসেবে এসব কল্পনা করেছেন ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে এই যাত্রা ভয়ঙ্কর লাগছিল। তারপরও, অবনী সাহস হারাল না।
অবশেষে তারা মন্দিরে পৌঁছল। মন্দিরটা ধ্বংসাগ্রস্ত, চারপাশে জঙ্গল গজিয়ে উঠেছে। ভিতরে ঢুকে তারা এক বিশাল মূর্তির সামনে দাঁড়াল। মূর্তির চোখ দুটি লাল আগুনের মতো জ্বলজ্বল করছিল। তারাই হচ্ছে সেই বন্দী দানব।
অবনী গভীর শ্বাস নিয়ে মন্ত্র জপ শুরু করলেন। শ্যামল আর রক্ষকরাও তার সঙ্গে জপ করতে লাগল। মন্দিরের ভিতর কম্পাঙ্ক শুরু হলো। ধীরে ধীরে মূর্তির চোখের আলো কমে যেতে লাগলো। দানবের ক্ষমতা দুর্বল হচ্ছিল।
কিন্তু ঠিক সেই সময়, মন্দিরের দেওয়াল ফাঁটি ফেটে একটা দুর্বৃত্ত চেহারার লোক ঢুকল। সে অবনীদের দিকে তাকিয়ে হাসল, “ভাবছিলে দানবকে দমিয়ে দিতে পারবে? ভুল করলে!”
লোকটি জানাল সে এক কালো জাদুবিদ্যাবিশারদ। সেই দানবকে মুক্ত করার চেষ্টা করছিল, যাতে সে তার সাহায্যে মানব জগত দখল করতে পারে।
অবনী বুঝতে পারলেন, তাদের আরো একটা যুদ্ধ করতে হবে। লড়াইটা কঠিন হলো। রক্ষকরা জাদুবিদ্যাবিশারদকে আটকাতে ব্যস্ত থাকলেন, আর শ্যামল দানবের মুক্তির গতি কমাতে মন্ত্র জপ করতে লাগলেন। অবনীকে নিজের কোনো অস্ত্র ছিল না, তাই সে কৌশলে জাদুবিশারদকে ফাঁকি দিতে চেষ্টা করল। হঠাৎ, তার চোখে পড়ল মন্দিরের দেওয়ালে খোদাই করা কিছু প্রতীক। সেই প্রতীকগুলো তার লেখাগুলোর একটা গল্পে দেখেছিল, যেখানে মন্দিরের রক্ষাকবচ সম্পর্কে বলা ছিল।
অবনী মনে মনে প্রার্থনা করলেন যেন তার মনে রাখা ঠিক থাকে। তিনি দেওয়ালের প্রতীকগুলো অনুসারে কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় হাত দিলেন। মন্দিরের কাঠামো কেঁপে উঠল। দেওয়ালের একটা অংশ সরে গিয়ে সেখান থেকে উজ্জ্বল আলো বের হলো। আলোয় ঢাকা পড়তেই জাদুবিশারদ চিৎকার করে উঠল। সে পেছনে সরে যেতে চাইল, কিন্তু আলোয় সে যেন জড়িয়ে গেল। তারপর আলো নিভে গেল, আর জাদুবিশারদও নিখোঁজ হয়ে গেল।
অবনী বুঝতে পারল, রক্ষাকবচটি জাদুবিশারদকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে। এখন শুধু দানবটিকে দমাতে হবে। শ্যামল আর রক্ষকরা মন্ত্র জপ চালিয়ে গেল। অবনীও তাদের সঙ্গে জপ করতে শুরু করল। তার লেখাগুলোর কথা, গল্পের নায়কদের সাহস – সবকিছুই মনে এলো। অবনী যেন গল্পেরই একটা অংশ হয়ে গেল।
শেষ পর্যন্ত, তাদের চেষ্টা সফল হলো। দানবের মূর্তিটা ধীরে ধীরে ক্ষয়ে গেল। মন্দিরের কম্পাঙ্ক থামল। একটা গভীর শান্তি নেমে এলো। মধুমতির রাজ্য রক্ষা পেয়েছিল।
কয়েকদিন পর, ঐশীর পাথরের সাহায্যে অবনী মানব জগতে ফিরে এল। শ্যামল তাকে বিদায় জানালো। অবনী জানতেন, হয়তো আর কখনোই সে মধুমতির রাজ্যে ফিরতে পারবে না। তবে, এই অভিজ্ঞতা তাকে চিরকাল বদলে দিয়েছে।
লেখক অবনী আর আগের মতো লেখে না। এখন তার লেখায় শুধু কল্পনা নেই, সত্যিও মিশে আছে। আর তার লেখাগুলোয় এখন মধুমতির রাজ্যের রক্ষকদের সাহস, প্রকৃতির শক্তি, এবং সর্বোপরি, মানব সাহসের গল্প লেখা থাকে।