শ্রীমতি সোনালিনী ঠাকুর, কলকাতার অভিজাত সমাজের একটি উজ্জ্বল তারকা। সুন্দরী, শিক্ষিতা, এবং সাবলীল ব্যক্তিত্বের অধিকারিণী। তিনি বসন্তলাল মজুমদারের প্রেমে পড়েন, যিনি আইনজীবী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। বসন্তলাল দৃঢ়চেতা ও আত্মবিশ্বাসী, কিন্তু তাঁর অতীত জীবন সম্পর্কে সোনালিনীর কিছুই জানা নেই। তিনি শুধু জানেন যে তিনি আলিপুর জেলে কিছুদিন কাটিয়েছেন, কিন্তু কেন, সেটা তিনি জানতে চাননি। তাদের সম্পর্ক গভীর হয়, এবং তারা বিয়ের পরিকল্পনাও করছেন।
এক রাতে, সোনালিনী একটি চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ারে বসন্তলালের সঙ্গে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ, তিনি জনতার ঢেউয়ে তাঁর চোখ থেকে বসন্তলালকে হারিয়ে ফেলেন। মঞ্চের কাছে তিনি একটি পরিচিত মুখ দেখতে পান – মিস: ঝুলন সেন, একজন অভিনেত্রী যার খ্যাতি তার অভিনয়ের চেয়ে বিতর্কিত জীবনের জন্য বেশি। সোনালিনী তাঁকে বসন্তলালের সাথে দেখে অবাক হয়ে যান। দু’জনের মধ্যে হাসিমুখে গভীর কথোপকথন শুনে সোনালিনীর হৃদয় কেঁপে উঠল।
পরের দিন সকালে, সোনালিনী বসন্তলালের কাছে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। বসন্তলাল অস্বীকার করলেন যে তিনি ঝুলনকে চেনেন, কিন্তু সোনালিনী তার কথা বিশ্বাস করতে পারলেন না। তিনি বসন্তলালের সম্পর্কে সন্দেহ করতে শুরু করলেন এবং তার অতীত জীবন সম্পর্কে তথ্য খুঁজতে বের হলেন। তিনি একজন গোয়েন্দাকে নিয়োগ করলেন, যিনি আবিষ্কার করলেন যে বসন্তলাল আসলে একজন বিপ্লবী ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন এবং আলিপুর জেলে বন্দী হয়েছিলেন।
কল্পবিজ্ঞান-এর বাংলা ছোট গল্প - কোয়ান্টাম সময় সেতু : কল্পবিজ্ঞান গল্প: তিনজন বন্ধু সময় ভ্রমণ করে ১৭৫৭ সালে যান এবং কালো গর্তের যুদ্ধের সাক্ষী হন। ব্রিটিশ ও বাঙালি বাহিনীর সংঘর্ষের মাঝে তারা ইতিহাস, সাহস ও বীরত্বের গল্প খুঁজে পান। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
এই তথ্য সোনালিনীকে মর্মাহত করে। তিনি বসন্তলালের দেশপ্রেমকে সম্মান করলেন, কিন্তু তার মনের মধ্যে জ্বালাও ছিল। কেন তিনি তাকে কিছুই বললেন না? তিনি তার প্রেমের প্রতি সৎ ছিলেন না? আর ঝুলন সেনের সাথে তার সম্পর্ক কী ছিল?
এদিকে, বসন্তলাল একটি গোপন বিপ্লবী দলে জড়িয়ে পড়েন, যারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে একটি বড় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। সোনালিনী এসবের কিছুই জানেন না, কিন্তু তিনি টুকটাক আঁচ করতে শুরু করেন যে বসন্তলাল কিছু গোপনীয়তা লুকিয়ে রাখছে।
উদ্বেগে আর সন্দেহে কাড়াকাড়ি খেয়ে সোনালিনী গোয়েন্দাকে আবার ডেকে পাঠালেন। এবার গোয়েন্দা জানালেন, ঝুলন সেন আসলে বিপ্লবী দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি বিদ্রোহীদের গোপন বার্তা আদান-প্রদান এবং অর্থ সংগ্রহের কাজে সাহায্য করতেন। বসন্তলালের সাথে তার দেখা হওয়াটা সম্ভবত বিপ্লবী কার্যকলাপেরই অংশ।
এই খবরে সোনালিনীর মন আরও অস্থির হয়ে উঠল। একদিকে তিনি বসন্তলালের দেশপ্রেমে গর্ববোধ করলেন, কিন্তু অন্যদিকে বিপ্লবী কার্যকলাপের ঝুঁকি নিয়ে তাঁর উদ্বেগও বেড়ে গেল। তিনি বসন্তলালকে সতর্ক করতে চাইলেন, কিন্তু কীভাবে? তিনি যদি ব্রিটিশ পুলিশকে জানান, তাহলে বসন্তলালের জীবন বিপদে পড়বে।
একদিন সন্ধ্যায়, বসন্তলাল বাড়ি ফিরলেন উত্তেজিত মুখে। তিনি সোনালিনীকে জানালেন যে বিপ্লবীরা গভর্নরের বাড়িতে একটি বড় হামলার পরিকল্পনা করছেন। এই হামলা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ হিসেবে কাজ করবে। সোনালিনী শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। তিনি জানতেন এমন হামলায় অনেক রক্তপাত হবে, নিরপরাধ মানুষেরও প্রাণ যাবে।
রাতে বিছানায় শুয়ে থাকতে সোনালিনীর মনে ঝড় চলছিল। তিনি বসন্তলালকে ভালোবাসতেন, কিন্তু নিরপরাধ মানুষের রক্তপাতও চাইলেন না। সারা রাত জেগে কাটিয়ে সকালে একটা সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি বসন্তলালকে হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে সতর্ক করবেন, কিন্তু বিপ্লবীদের ধরিয়ে দেবেন না।
সোনালিনী বসন্তলালকে বসিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর, সাবধানে বিপ্লবীদের গোপন পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়ে দিলেন। তিনি এটাও জানালেন যে তিনি কীভাবে এই তথ্য পেলেন, সেটা তিনি বলতে পারবেন না। বসন্তলাল ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন। তিনি সোনালিনীকে দেশদ্রোহী বলে অভিযুক্ত করলেন। উভয়ের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বাধল।
কিন্তু সোনালিনী দৃঢ় ছিলেন। তিনি বসন্তলালকে বোঝালেন যে তিনি তাঁকে ভালোবাসেন, কিন্তু নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু চান না। তিনি তাঁকে হামলা না করার অনুরোধ জানালেন। বসন্তলাল স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। তিনি সোনালিনীর কথা চিন্তা করতে লাগলেন। একদিকে বিপ্লবের আদর্শ, অন্যদিকে প্রেমের মানুষের ভালোবাসা। তিনি এক রাতের মধ্যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না।
ভুতের বাংলা ছোট গল্প - ফুলঝাড়ির নিশির ডাক : ভুতের গল্প: এক ভৌতিক গ্রামের রহস্যময় ঘটনা, হারিয়ে যাওয়া মেয়ে, অপূর্ণ ইচ্ছা, এবং শেষ পর্যন্ত ক্ষমা ও শান্তির গল্প। বাংলা গল্প। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
এদিকে, নিজের কাজের ফলাফল নিয়ে সোনালিনীর মন অশান্তিতে ভরে গেল। তিনি বসন্তলালকে সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু তিনি কি ঠিক করেছেন, না ভুল? বিপ্লবীদের পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটানোর ফলে ব্রিটিশ শাসন কি আরও দৃঢ় হবে?
দিন কয়েক কেটে গেল। বসন্তলাল স্বাভাবিক আচরণ করছিলেন, কিন্তু সোনালিনী টের পাচ্ছিলেন তাঁর মনের অশান্তিকে। একদিন, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বসন্তলাল জানালেন, হামলার পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। তিনি আর বিস্তারিত কিছু বললেন না। সোনালিনী স্বস্তি পেলেও, বসন্তলালের চোখের মলিন দৃষ্টি তাঁর মনে প্রশ্নের জন্ম দিল।
এর কয়েকদিন পর, এক সকালে পুলিশ সোনালিনীর বাড়িতে হানা দিল। তারা বসন্তলালকে গ্রেফতার করতে এসেছিল। অভিযোগ ছিল, তিনি গভর্নরের বাড়িতে হামলা চালানোর পরিকল্পনায় জড়িত। সোনালিনী স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। বসন্তলাল তো বলেছিল, হামলা বাতিল! তাহলে পুলিশ কীভাবে জানল?
পুলিশের কাছ থেকে জানা গেল, একজন গোপন বিদ্রোহী পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং বিপ্লবীদের পরিকল্পনা ফাঁস করে দিয়েছে। সোনালিনী বুঝতে পারলেন, তাঁর সতর্কতা ফলপ্রসূ না হলেও, পরিস্থিতি অন্যভাবে মোড় নিয়েছে।
বসন্তলালকে জেলে নিয়ে যাওয়া হল। সোনালিনী হতাশায় ভেঙে পড়লেন। তিনি কিছুই করতে পারলেন না। তিনি বসন্তলালকে ভালোবাসতেন, কিন্তু তিনি কি তাঁকে বিপদ থেকে বাঁচাতে চেয়ে বিপ্লবের আদর্শের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন? নাকি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা ঠিক ছিল, কিন্তু নিরপরাধ মানুষের জীবন নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া উচিত হয়নি?
এই প্রশ্নগুলো সোনালিনীকে কামড়ে ধরে রাখল। দিনের পর দিন কেটে গেল। বসন্তলালের বিচার চলছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতি থাকা অনেকেই বসন্তলালের পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন। কিন্তু পুলিশের সাক্ষীর সামনে তাঁর অবস্থা খারাপ।
একদিন সোনালিনীর কাছে একজন অপরিচিত মহিলা এলেন। তিনি নিজেকে ঝুলন সেন বলে পরিচয় দিলেন। ঝুলন জানালেন, তিনি জানেন সোনালিনী বসন্তলালকে সতর্ক করেছিলেন। তিনি সোনালিনীকে জানালেন, বিপ্লবী দলের ভিতরে একজন বিশ্বাসঘাতক ছিল, সেই হচ্ছে পুলিশের গোয়েন্দা। সেই বিশ্বাসঘাতকের কারণেই বসন্তলাল গ্রেফতার হয়েছেন।
ঝুলনের কথা শুনে সোনালিনী চমকে গেলেন। তিনি জানতেন না বিপ্লবী দলের মধ্যেই একজন বিশ্বাসঘাতক ছিল। ঝুলন আরও জানালেন, সেই বিশ্বাসঘাতকে কে ধরতে তারা একটি পরিকল্পনা করছেন। তাদের দরকার সোনালিনীর সাহায্য।
সোনালিনী দ্বিধায় পড়ে গেলেন। তিনি জানতেন এ রাস্তা বিপদে পূর্ণ। কিন্তু বসন্তলালকে মুক্ত করার একমাত্র উপায় হিসেবে এটাই বোধ হচ্ছিল। কিছুক্ষণ ভাবনার পর সোনালিনী ঝুলনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন।
ঝুলনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সোনালিনীকে ব্রিটিশদের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে সামাজিক মেলামেশায় জড়াতে হবে। সেই কর্মকর্তা আসলে বিপ্লবী দলের সন্দেহভাজন বিশ্বাসঘাতক। সোনালিনীর অভিজাত পরিচয় এবং মিষ্টি আলাপের মাধ্যমে তাকে গোপন তথ্য বের করতে হবে।
সোনালিনী এই কাজটি করতে রাজি হলেন, কিন্তু তিনি শর্ত দিলেন। যদি ঝুলনদের পরিকল্পনা সফল হয় এবং বিশ্বাসঘাতক ধরা পড়ে, তাহলে তারা বসন্তলালের মামলার সাক্ষী হিসেবে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করবে না। এতে ব্রিটিশরা তাদের বিপ্লবী কার্যকলাপের সন্ধান পাবে না।
ঝুলন সোনালিনীর শর্তে রাজি হলেন। এরপর সোনালিনী নিজের সামাজিক মর্যাদা কাজে লাগিয়ে সেই ব্রিটিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ পেতে সক্ষম হলেন। মধুর কথায় তিনি তাকে ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচার এবং বিপ্লবীদের আদর্শ সম্পর্কে কথা বলতে লাগলেন। কর্মকর্তা অস্বস্তিবোধ করলেও, সোনালিনীর সৌন্দর্য ও মিষ্টি কথায় মুগ্ধ হয়ে পড়লেন।
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - কলিকাতার অন্ধকার গলি : এই বাংলা গল্পটি অনুসন্ধানী সাংবাদিক অনন্যা সেনের রোমাঞ্চকর অভিযানের কথা বর্ণনা করে। কলকাতার জমিদার বাড়িতে লুকিয়ে থাকা অপরাধ চক্র "অতীতের রক্ষক"দের রহস্য উদঘাটন করতে লড়াই করেন তিনি। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
কথার ফাঁকে সোনালিনী বিপ্লবীদের গোপন তথ্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলেন। ধীরে ধীরে কর্মকর্তা কথা খুলে ফেলতে শুরু করলেন। তিনি ঝুলন সেন সম্পর্কে কিছু তথ্য জানানোর ভুল করলেন। সোনালিনী বুঝতে পারলেন, এটাই তাদের খুঁজছিলেন। এই তথ্য ঝুলনদের কাছে পৌঁছে দিলে তারা সহজেই বিশ্বাসঘাতক ধরতে পারবেন।
কয়েকদিন পর, ঝুলন সোনালিনীকে জানালেন, তাদের পরিকল্পনা সফল হয়েছে। তারা বিশ্বাসঘাতকে ধরে ফেলেছে। এবার তারা আদালতে সাক্ষী হিসেবে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে পারবেন। সোনালিনী মনের মধ্যে একটা শান্তি অনুভব করলেন।
বসন্তলালের মামলায় শেষ পর্যন্ত ঝুলন সহ বিপ্লবী দলের কয়েকজন সদস্য সাক্ষী হিসেবে হাজির হলেন। তারা জানালেন যে, গভর্নর’এর বাড়িতে হামলার পরিকল্পনা ছিল, তবে তা শুধু ব্রিটিশ শাসনের প্রতিবাদ জানাতে, কোনো নিরপরাধ মানুষের জীবন নেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল না। আদালত এই সাক্ষ্য বিবেচনা করল এবং বসন্তলালকে মুক্তি দেওয়া হল।
বসন্তলাল জেলে থেকে ছাড়া পেয়ে সোনালিনীর সামনে দাঁড়ালেন। দু’জনের চোখেই ছিল অশ্রু। সোনালিনী নিজের মনের দ্বন্দ্বের কথা, ঝুলনের সঙ্গে দেখা এবং গোয়েন্দা ধরার পরিকল্পনা সবকিছুই বসন্তলালকে জানালেন। বসন্তলাল সোনালিনীর সাহস এবং কৌশলে মুগ্ধ হলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, সোনালিনী তাঁকে ভালোবাসেন বলেই এত কিছু করেছেন।
এই ঘটনার পর থেকে সোনালিনী এবং বসন্তলালের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হল। তারা বিবাহ করলেন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে একসঙ্গে কাজ করতে শুরু করলেন। সোনালিনী আর অভিজাত মহিলাদের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানে সময় কাটাতেন না। তিনি গোপনে বিপ্লবীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতেন, বার্তা আদান-প্রদান করতেন। অন্যদিকে, বসন্তলাল বিদ্রোহীদের নেতা হিসেবে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠলেন।
কয়েক বছর পর, ভারত স্বাধীনতা সোনালিনী এবং বসন্তলালের মতো অগণিত মানুষের ত্যাগের ফল স্বরূপ, দেশ ব্রিটিশ শাসনের অবশেষ থেকে মুক্তি পেল। স্বাধীনতা লাভের পর, সোনালিনী এবং বসন্তলাল শান্তির জীবনযাপন করতে চাইলেন। কিন্তু তাদের মনের এক কোণে সবসময়ই থাকল সেই অশান্ত 1930-এর দশক, যেখানে প্রেম, দেশপ্রেম, বিপ্লব, এবং ষড়যন্ত্র একাকার হয়ে গিয়েছিল তাদের জীবনে।