এই বাংলা গল্পটি কলকাতায় একটি রোমান্সের ছোট গল্প। আহনা, একজন আর্কিটেক, রিয়ান, একজন সুরকার - দুই বিপরীত মেরুতে থাকা মানুষের প্রেমের গল্প। ভুল বোঝাবুঝির পরে কি তাদের প্রেম টিকে থাকবে?

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » ভালোবাসার সুরের স্হাপত্য

ভালোবাসার সুরের স্হাপত্য

এই বাংলা গল্পটি কলকাতায় একটি রোমান্সের ছোট গল্প। আহনা, একজন আর্কিটেক, রিয়ান, একজন সুরকার - দুই বিপরীত মেরুতে থাকা মানুষের প্রেমের গল্প। ভুল বোঝাবুঝির পরে কি তাদের প্রেম টিকে থাকবে?

আহনা, একজন প্রতিষ্টিত এবং সুদক্ষা আর্কিটেক, শহরের ধমনির স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে তার কাঠামোগুলো গড়ে তোলে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত এক শিল্প প্রদর্শনীতে তার সঙ্গে হঠাৎই দেখা হয় রিয়ানের। রিয়ান, একজন মুক্তধারা সুরকার, যার গানে ঝঙ্কার দেয় বিদ্রোহের সুর, জীবনের অবাধ গতি। দু’জনের জীবনযাপন একেবারে আলাদা, তবু সৃষ্টিধর্মী মনের টানে দু’জনের দৃষ্টি মিলিত হল। আহনার নিটোল রেখাঙ্কনে, রিয়ানের গানের স্বরে যেন এক অপূর্ব সুরের সন্ধান।

একটি কমিউনিটি প্রকল্পে একসাথে কাজ করার সুযোগ পেলেন তারা। প্রাচীন ঐতিহ্যের ছোঁয়া লাগানো, নতুন প্রজন্মের স্বপ্নের নিদান দেওয়ার মতো এই প্রকল্পটি জাগিয়ে দিল আহনার হারিয়ে যাওয়া সঙ্গীতপ্রীতি। রবিবারের বিকেলে, ছাদে বসে রিয়ানের গিটারের সুরে গুন-গুন করে গান গাইতে গিয়ে সে যেন নিজেকেই আবিষ্কার করলো নতুন করে। অন্যদিকে, রিয়ান মুগ্ধ হলো আহনার স্থাপত্যিক কাঠামোর নকশায়।

দিন যত গড়াতে থাকলো, ততই গভীর হলো তাদের বন্ধন। কিন্তু প্রেমের পথ কখনোই সমুদ্রের মতো স্তিমিত থাকে না। আহনার ভয় ছিল নিয়ন্ত্রণ হারানোর, আর রিয়ানের ছিল প্রতিশ্রুতির বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার। এই দু’টি ভীতির টানে তৈরি হলো অবিশ্বাসের দেয়াল, অভিমানের গড়ন। একে অপরের মনের কথা ঠিক করে বুঝতে না পারার কারণে তৈরি হলো নানা রকম ভুল বোঝাবুঝি। একদিন, রিয়ানের একটা বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে গিয়ে, অন্য এক মেয়ের সাথে দেখে ফেলে আহনা রিয়ানকে। মনে ঝড় উঠলো, কিন্তু রিয়ানের কাছে পাওয়া গেল না তার কোনো ব্যাখ্যা।

অবশেষে, একদিন ঝড়ের রাতে, ঝমঝমিয়ে ঝরে পড়া বৃষ্টির মধ্যে দুজনে দু’জনের মুখোমুখি বসে। আহনা তার মনের কথা কাঁদতে কাঁদতে সব খুলে বলল। রিয়ানও বুঝিয়ে বলল সবই যে ভুল বোঝাবুঝি। সেই মেয়েটি তার বোনের বান্ধবী, আর সেদিন তার সাথে কথা বলছিল মাত্র। দু’জনের মধ্যে দীর্ঘদিনের অভিমানের দেয়াল ভেঙে পড়লো সেই রাতেই।

এই ঘটনা তাদের সম্পর্কের একটা টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ালো। দু’জনেই বুঝল, সত্যিকারের প্রেমে দুর্বলতা থেকে তাদের মধ্যে ভুল বঝাবুঝি তৈরী হয়েছিল। সেই রাতের পর, সবকিছু যেন নতুন করে সাজিয়ে নিল আহনা আর রিয়ান। খোলামেলা কথাবার্তা, গভীর আলোচনা, আর একে অপরের ভালোবাসার প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস – এই তিনটে জিনিসই তাদের সম্পর্ককে আরও মজবুত করল। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সংলগ্ন এলাকায় কমিউনিটি প্রকল্পটির কাজ এগিয়ে চলছিল। আহনার নকশায় ফুটে উঠছিল প্রাচীন বাড়ির সৌন্দর্যের সাথে মিশে থাকা আধুনিকতার ছোঁয়া। রিয়ান ঐতিহ্যবাহী ঠাকুরবাড়ির প্রেক্ষাপটে লিখলেন এক মনোমুগ্ধকর গান। সেই গানের সুরে গুন-গুন করে গাওয়ার সময় আহনার চোখে দেখা গেল অপার আনন্দ।

একদিন বিকেলে, কাজের ফাঁকে ছাদে বসে তারা দু’জনেই ভাবছিলেন ভবিষ্যতের কথা। রিয়ান হঠাৎ করেই গিটার হাতে নিয়ে গান ধরল,

“এই শহরের মুখে হাসি, এই শহরের চোখে জল, তোমার সাথে হারিয়ে যেতে চাই, এই শহরের গলি…” 

গান শেষ করে রিয়ান আহনার দিকে চেয়ে বলল, “আহনা, আমি তোমাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে চাই।”

আহনার চোখে জল এসে গেল। সে জানত রিয়ান প্রতিশ্রুতির বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় না, কিন্তু তার জন্যেই সে এই পথ বেছে নিয়েছে। আহনা রিয়ানের হাত ধরে বলল, “আমি জানি তুমি প্রতিশ্রুতি দিতে চাও না, কিন্তু তোমার সাথেই আমি সারা জীবন কাটাতে চাই। আমরা দু’জনেই একে অপরের প্রতিশ্রুতি হব।” রিয়ান আহনাকে জড়িয়ে ধরল। সেই মুহূর্তে কলকাতার আকাশে ঝলমলে তারার সাক্ষী থাকতে, রিয়ান আর আহনার প্রেমের গান ঢাকা পড়লো শহরের রাতের কোলাহলে। কিন্তু তাদের ভালোবাসার গল্প এখানেই শেষ হলো না।

একেঅপরের সাথে তারা এগিয়ে চলল। প্রতিদিনের কাজের ফাঁকে, ছুটির দিনে, তারা দু’জনেই একে অপরের জন্য সময় বের করত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থানের সংলগ্ন এলাকার প্রকল্পটি শেষ হলে, আহনার খ্যাতি আরও বেড়ে গেল। রিয়ানের গানটিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করল। এই সাফল্যের মধ্যেও তাদের সম্পর্কের বন্ধন ছিল অটুট।

এক বছর পর, পুজোর আলোয় ঝলমলে কলকাতায়, আহনা আর রিয়ানের বিয়ে হলো। ছোট, ঘনিষ্ঠ আয়োজন। কাছের আত্মীয়স্বজন আর বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের পর, রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরে রচিত এক গান গেয়ে শোনালেন রিয়ান। গানের কথাগুলো লিখেছিলেন আহনা নিজেই। তাদের দু’জনের সৃজনশীলতার মেলবন্ধন শ্রোতাদের মুগ্ধ করে ফেলল।

বছরের পর বছর কেটে গেল। আহনা আর রিয়ান দু’জনেই নিজের ক্ষেত্রে সফল হলেন। তবে তাদের জীবনের সবচেয়ে বড়ো পাওয়া ছিল তাদের সম্পর্ক। দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা ব্যক্তিত্ব, দু’টি ভিন্ন ধারার সৃজনশীল মন, মিলেমিশে একে অপরকে খুঁজে পেল, একে অপরকে পূর্ণ করল। তাদের ভালোবাসার গল্প বলে দেয়, ভালোবাসা হলো নিজের মতো থাকতে পারা, সাথে সাথে একে অপরকে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করা। আর সেই বোঝাপড়ার ভিত্তিমূলেই গড়ে ওঠে সুখের সংসার

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

About The Author

নতুন বাংলা ছোট গল্প

আত্মার মুক্তি

এক ভুতের গল্পে সোহিনী আত্মার মুক্তির সন্ধানে অন্ধকার শক্তির সাথে লড়াই করে। এই বাংলা ছোট গল্পটি ভয়ের ছায়া এবং সাহসিকতার একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।

এক ভুতের গল্পে সোহিনী আত্মার মুক্তির সন্ধানে অন্ধকার শক্তির সাথে লড়াই করে। এই বাংলা ছোট গল্পটি ভয়ের ছায়া এবং সাহসিকতার একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: আত্মার মুক্তি

অমীমাংসিত রহস্য

অমীমাংসিত রহস্য নিয়ে এক অনন্য বাংলা ছোট গল্প, যেখানে অতীতের গোপন সত্য উন্মোচনে শ্রেয়ার যাত্রা রহস্য ও রোমাঞ্চে ভরা। রহস্য রোমাঞ্চ প্রেমীদের জন্য আদর্শ পাঠ।

অমীমাংসিত রহস্য নিয়ে এক অনন্য বাংলা ছোট গল্প, যেখানে অতীতের গোপন সত্য উন্মোচনে শ্রেয়ার যাত্রা রহস্য ও রোমাঞ্চে ভরা। রহস্য রোমাঞ্চ প্রেমীদের জন্য আদর্শ পাঠ।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: অমীমাংসিত রহস্য

অনুভূতির ঢেউ

"অনুভূতির ঢেউ" একটি হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে নন্দিনী ও জয়ন্তের স্বপ্ন, সম্পর্ক এবং দূরত্বের মধ্যে গড়ে ওঠা ভালোবাসা সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় তাদের জীবন।

"অনুভূতির ঢেউ" একটি হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে নন্দিনী ও জয়ন্তের স্বপ্ন, সম্পর্ক এবং দূরত্বের মধ্যে গড়ে ওঠা ভালোবাসা সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় তাদের জীবন।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: অনুভূতির ঢেউ

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!