কোলকাতা থেকে একটু দূরে একটি ছোট, কুয়াশাচ্ছন্ন শহর, নাম পর্ণশ্রী। সেখানে বাস করতেন অতুল নামের একজন পিছু হঠানো লেখক। তাঁর বাড়ি ছিল একটি পুরনো, জীর্ণ ঘর, যার প্রতিটি কোণায় এক একরকমের বিষাদ ছিল। অতুল ছিল রহস্য কাহিনীর জন্য পরিচিত। তিনি ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি করতেন এবং তাঁর লেখাগুলি পাঠকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর জীবন থেকে সব রঙ যেন উবে গেছে। লেখার প্রতি অনাগ্রহ, লেখার ব্লক এবং একাকীত্বের অনুভূতি তাঁকে গ্রাস করেছিল।
একদিন সন্ধ্যায়, অতুল উপলব্ধি করলেন যে, তাঁকে কিছু নতুন ধারণার প্রয়োজন। তাই তিনি তাঁর বাড়ির গুদামে যেতে সিদ্ধান্ত নিলেন। গুদামটি ছিল দীর্ঘদিন অযত্নে পড়ে থাকা। সেখানে প্রাচীন জিনিসপত্র, পুরনো বই আর আবর্জনা মিশে ছিল। অতুল মনে মনে ভাবছিলেন, হয়তো সেখানে কিছু খুঁজে পাবেন যা তাঁর লেখার জন্য অনুপ্রেরণা দিতে পারে।
গুদামের দরজা খুলতেই একটি মিষ্টি গন্ধ বের হলো। পোকামাকড় এবং ধুলোর তলে চাপা পড়া পুরনো বাক্সগুলির মাঝে একটিতে আকৃষ্ট হয়ে পড়লেন তিনি। বাক্সটি খুলতেই দেখা গেল, সেখানে পুরনো চিঠি এবং ছবির স্তূপ। প্রতিটি চিঠির লেখা ছিল হাতের লেখা, এবং ছবিগুলি এমন কিছু স্মৃতি ধারণ করছিল যা অতুলের জীবনেও স্থান পায়নি।
ছবিগুলোর মধ্যে একটি ছবি বিশেষভাবে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করল। একটি ফ্যাকাশে, পুরনো ছবিতে একটি নারীর মুখ। তাঁর চোখে ছিল দুঃখ এবং আকাঙ্ক্ষার ছায়া। অতুলের মনে হলো, এই মহিলা যেন কিছু বলার চেষ্টা করছেন। কে এই মহিলা? কেন তাঁর চোখে এতো যন্ত্রণা?
এই প্রশ্নগুলি মাথায় ঘুরতে ঘুরতে অতুল অনুভব করলেন যে, তিনি যেন একটি রহস্যের মাঝে পা রাখলেন। ছবি দেখে কৌতূহলী হয়ে তিনি ভাবলেন, “আমার উচিত এই রহস্য উন্মোচন করা।”
পরদিন সকালে অতুল শহরের পুরনো লাইব্রেরিতে গিয়ে তাঁর খোঁজ শুরু করলেন। সেখানে তিনি দমকলের একটি পুরনো প্রতিবেদনের খোঁজ পেলেন, যেখানে এভেলিন নামের এক মহিলার সম্পর্কে উল্লেখ ছিল। এটি ছিল একাধিক বছর আগে, যখন এভেলিন হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়। শহরের লোকেরা তখন বলেনি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এভেলিনের অদৃশ্য হওয়া নিয়ে অনেক গোপন কথা রয়েছে।
এই রিপোর্টে আরেকটি উল্লেখ ছিল—এভেলিনের এক প্রতিবেশী, রামু নামের একজন লোক, যিনি তখন শহরের সবচেয়ে ভীতিজনক চরিত্র ছিলেন। অতুলের মনেই ভাবনা জাগল, রামু কি এভেলিনের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার সঙ্গে জড়িত?
লেখক অতুল আরও জানতে চাইলেন, “কিভাবে এই রহস্য উন্মোচন করতে পারি?” তিনি শহরের পুরনো মানুষদের সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলেন। তারা এভেলিনের কাহিনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে প্রস্তুত ছিলেন না, কিন্তু তাঁদের মুখের অস্পষ্ট ভঙ্গি এবং অস্বস্তি তাকে আরও উদ্বিগ্ন করেছিল।
একদিন শহরের একজন বৃদ্ধা, মায়া চক্রবর্তী, তাঁকে বললেন, “এভেলিনের সম্পর্কে শুনলে সাবধান থাক। শহরের অন্ধকার জগতের সঙ্গে সে জড়িত ছিল।” অতুলের মনে হলো, এখানে কিছু গভীর এবং ভয়ঙ্কর সত্য লুকিয়ে আছে।
এভাবে তদন্ত চলতে থাকলো। অতুল দেখলেন, বাড়ির চারপাশে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে। মাঝে মাঝে অদ্ভুত শব্দ, যেন কেউ তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। দিন দিন তিনি একাকিত্বের মধ্যে আরও গভীর হয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি যেখানেই যাচ্ছিলেন, মনে হচ্ছিল যেন এভেলিনের আত্মা তাঁকে অনুসরণ করছে।
এক রাতে, অতুল যখন তাঁর লেখার টেবিলের কাছে বসে একটি গল্প লিখতে চেষ্টা করছিলেন, তখন আকস্মিকভাবে একটি মেসেজ তাঁর ফোনে এল। নম্বরটি অজানা, কিন্তু মেসেজে লেখা ছিল, “আমি তোমার পাশে আছি।” অতুল হতবাক হয়ে গেলেন। কে এই ব্যক্তি? কেন সে তাঁর সাথে যোগাযোগ করছে?
এই ঘটনা অতুলকে ভীত করে তুলল, কিন্তু সেই সাথে তাঁর রহস্যের প্রতি আরও কৌতূহলী করে তুলল। তিনি অনুভব করলেন, যেন এভেলিনের আত্মা তাঁকে কিছু বলার চেষ্টা করছে।
এবং পরের দিন, অতুল সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি শহরের ইতিহাস এবং এভেলিনের অদৃশ্য হওয়ার কারণ সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানার চেষ্টা করবেন। তিনি আবারও রামু এবং শহরের অন্যান্য পুরনো মানুষের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন।
এই অধ্যায়ের শেষে, অতুল বুঝতে পারলেন যে, এই রহস্যের উন্মোচন কেবল তাঁর লেখার জন্য নয়, বরং তাঁর নিজের অস্তিত্বের জন্যও জরুরি। তিনি এক নতুন যাত্রায় পা রাখতে চলেছেন, যেখানে তাঁকে মৃগয়া করতে হবে সত্য এবং সাহস নিয়ে।
ছোটদের রূপকথার গল্প - কুকিজের খুশি: "কুকিজের খুশি" – ছোটদের রূপকথার গল্প যেখানে ছোট্ট লীলা তার হৃদয় দিয়ে কুকিজ বানিয়ে অনাথ শিশুদের মুখে হাসি ফোটায়। ছোটদের গল্প যা ভালোবাসা ও আনন্দ ছড়িয়ে দেয় প্রতিটি পৃষ্ঠায়। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
এভেলিনের সন্ধানে
অতুলের মাথায় ঘুরছিল অসংখ্য প্রশ্ন। ছবি এবং সংবাদপত্রের রিপোর্টগুলোতে বর্ণিত এভেলিনের জীবন যেন একটি অন্ধকারে ঢেকে যাওয়া ইতিহাস। তিনি জানতেন, এই রহস্যের পেছনে কিছু গুরুতর সত্য লুকিয়ে আছে। গত রাতে মেসেজ আসার পর থেকে অতুলের মনে হয়েছে, তাঁর লক্ষ্য কেবল লেখার জন্য নয়, বরং একটি অদৃশ্য হয়ে যাওয়া মহিলার সত্যিকারের কাহিনী খুঁজে বের করা।
তিনি শহরের পুরনো লাইব্রেরিতে ফিরে গেলেন, যেখানে প্রাচীন দলিলপত্র এবং ইতিহাসের বইগুলো সাজিয়ে রাখা ছিল। সেখানে একটি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণকারী বই তার চোখে পড়ল—”পর্ণশ্রীর গোপন ইতিহাস”। বইটির পাতা উল্টাতে গিয়ে অতুল আবিষ্কার করলেন, সেখানে এভেলিনের নামের উল্লেখ ছিল। তিনি দ্রুত পড়া শুরু করলেন, এবং অজানা তথ্যগুলো তাঁর কৌতূহলকে আরও বাড়িয়ে দিল।
বইয়ে লেখা ছিল যে, এভেলিন এক সময়ের সেরা শিল্পী ছিলেন। তিনি চিত্রকলায় এবং সংগীতে পারদর্শী ছিলেন। তবে এক রাতে, তিনি অদৃশ্য হয়ে যান। এমনকি তাঁর প্রিয়তমা বন্ধু রামু এবং শহরের অন্যান্য শিল্পীও তাঁর বিরুদ্ধে কিছু জানতেন না। অতুল অনুভব করলেন, এভেলিনের অদৃশ্য হওয়ার ঘটনায় কিছু গভীর কারণ ছিল, যা শহরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিল।
“কেন তারা এভেলিনের ব্যাপারে এত ভয় পায়?” অতুল নিজেকে জিজ্ঞেস করলেন। কি ছিল সে রাতের ঘটনা? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, এভেলিনের প্রাক্তন বন্ধু এবং সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন।
এরপর তিনি রামুর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। রামু এখন শহরের এক কোণে একটি পুরনো দোকান চালান, যেখানে নানা প্রাচীন জিনিস বিক্রি হয়। অতুল জানতেন, রামু শহরের বহু গোপনীয়তার পেছনে রয়েছেন। তিনি দোকানে পৌঁছানোর পর রামুর দিকে তাকালেন। রামুর মুখে অসুস্থতার ছাপ ছিল।
“রামু, তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই,” অতুল বললেন, “এভেলিনের ব্যাপারে কিছু জানতে চাই।”
রামু মুখ ফিরিয়ে নিলেন, “এভেলিনের নাম কেন নিলে? সে নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। তুই কি জানিস, তাতে কী ক্ষতি হবে?”
“কিন্তু রামু, আমি জানতে চাই, সে কোথায় গেছে? কেন অদৃশ্য হয়ে গেল?” অতুল হতাশা নিয়ে বললেন।
রামু একটু নীরব হয়ে রইলেন। তারপর বললেন, “শুন, অতুল। এভেলিন ছিল একজন অসাধারণ শিল্পী। কিন্তু সে যখন শিল্পী হিসেবে সমৃদ্ধি লাভ করতে শুরু করল, তখন তার জীবনে কিছু ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটতে লাগল। শহরের কিছু অন্ধকার দিকের সঙ্গে তার যোগ ছিল।”
“অন্ধকার দিক? তুমি কি বুঝাতে চাইছ?” অতুল দ্রুত জানতে চাইলেন।
“শুন, এক রাতে, সে একটি খুব বিশেষ প্রদর্শনীর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু সেই রাতেই কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। কিছু লোক তাকে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর সে আর কখনো ফিরে আসেনি। সবাই ভয় পায়। তার পরে যেই রাতে সে অদৃশ্য হয়ে যায়, তার পরে শহরে অদ্ভুত কিছু ঘটতে থাকে। কেউ সাহস করে সে রাতের কথা বলতে চায় না,” রামু বললেন।
অতুলের মনে কৌতূহল জন্মাল। “অতীতের এই ঘটনা কি শহরের ইতিহাসের কোনো অংশ?” তিনি ভাবলেন। “কীভাবে আমি এভেলিনের সন্ধানে এগিয়ে যাব?”
“তুমি যদি সত্যিই জানার জন্য আগ্রহী হও, তাহলে তোর উচিত শহরের পুরনো বাড়িগুলোতে যেতে। সেখানে হয়তো কিছু প্রমাণ পাওয়া যাবে,” রামু বললেন।
অতুল বুঝলেন, এই জায়গায় অতি প্রাচীন কিছু ঘটনার কথা রয়েছে। তিনি তাঁর পরবর্তী পরিকল্পনা তৈরি করতে শুরু করলেন।
পরের দিন সকালে অতুল শহরের পুরনো বাড়িগুলোতে গিয়ে দেখতে শুরু করলেন। শহরের প্রান্তে কিছু abandoned বাড়ি ছিল। অতুল এক একটি বাড়ির সামনে দাঁড়ালেন। এটি ছিল এভেলিনের বাড়ি। বাড়ির গেট খুলতেই এক ভয়ঙ্কর অনুভূতি তাঁর মনে ভর করে।
বাড়ির ভেতরে ঢুকে তিনি দেখলেন, সবকিছু যেন সময় থেমে গেছে। ধুলোময় দেওয়াল, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পুরনো ফার্নিচার—সবকিছু অদ্ভুতভাবে চুপ করে ছিল। বাড়ির একটি কোণে পুরনো একটি পিয়ানো ছিল, যেটি দীর্ঘদিনের অবহেলায় পড়ে ছিল। অতুল পিয়ানোর কাছে গিয়ে হাতের আঙুল দিয়ে কয়েকটি চাবি চাপলেন। সুরের অঙ্গুরী, কিন্তু তার সুরে দুঃখের ছোঁয়া।
এভাবে অতুল বাড়ির প্রতিটি ঘর ঘুরে দেখতে লাগলেন। কিন্তু কোথাও এভেলিনের সম্পর্কে কিছু খুঁজে পেলেন না। হতাশ হয়ে বাড়ির এক কোণে বসে পড়লেন। সেখানে একটি পুরনো আলমারি ছিল, যা বেশ কয়েকটি ডাস্টের স্তরে ঢাকা ছিল। অতুল আলমারিটি খোলার চেষ্টা করলেন।
আলমারির মধ্যে অনেক পুরনো বই এবং কাগজপত্র ছিল। সেগুলোতে এভেলিনের আঁকা ছবি, চিঠি এবং কিছু চিত্রকর্মের টুকরো ছিল। তিনি একটি চিঠি খুলে দেখলেন। চিঠিটি ছিল এভেলিনের হাতে লেখা, কিন্তু তা অসম্পূর্ণ ছিল।
“প্রিয়…” এইভাবে শুরু হয়েছিল চিঠিটি। অতুল আরও গভীরভাবে পড়তে লাগলেন। চিঠির মধ্য দিয়ে এভেলিনের আবেগ প্রকাশ পাচ্ছিল। তিনি তাঁর জীবনের সংগ্রাম, শিল্পের জন্য প্রেম এবং শহরের প্রতিটি মানুষের প্রতি তাঁর দুর্বলতা তুলে ধরেছিলেন।
এটি পড়ার পর অতুলের মনে হলো, এভেলিনের জীবনে কিছু ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল। তিনি জানতেন, এভেলিনের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার রহস্য খুঁজতে তাঁকে শহরের অতীতের গভীরে প্রবেশ করতে হবে।
বিকেলের দিকে অতুলের মনে একটি সিদ্ধান্ত গড়ে উঠল। তিনি শহরের আরেকটি পুরনো বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেন। এই বাড়ি সম্পর্কে শোনা যায়, এখানে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল, এবং অনেকে বলতেন যে, সেখানে এভেলিনের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু গোপনীয়তা আছে।
অতুল সেখানকার লোকজনের কাছে জানতে চান। কি ঘটেছিল সেই বাড়িতে? কেন তা জনশূন্য হয়ে গেছে? সেই বাড়ির কোথাও কি ছিল এভেলিনের প্রভাব? এগুলোই ছিল অতুলের অনুসন্ধানের পরবর্তী লক্ষ্য।
অদ্ভুত ঘটনাবলি
অতুল একটি নতুন রহস্যের সন্ধানে এগিয়ে চলেছেন। তাঁর মাথায় এখনও রামুর কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল। এভেলিনের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ঘটনা যেন একটি অন্ধকারের যাত্রা শুরু করেছে, যা তাকে গভীরতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পুরনো বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে, তিনি শহরের অন্যান্য অংশে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেন, যেখানে অনেক পুরনো বাড়ি ছিল এবং সেখানেও হয়তো এভেলিনের ইতিহাসের কিছু চিহ্ন লুকিয়ে আছে।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের আঁধার বাড়তে লাগল। অতুল শহরের এক অন্ধকার কোণে একটি পুরনো বাড়ির সামনে দাঁড়ালেন। বাড়িটি কয়েক দশক ধরে abandoned ছিল, এবং এর চারপাশে এক eerie পরিবেশ বিরাজমান। বাড়ির জানালাগুলি ভাঙা, আর দরজা খোলা ছিল। অতুলের মনে ভয় তৈরি হচ্ছিল, কিন্তু সেই ভয় তাকে পিছনে টানতে পারেনি। কারণ, তিনি জানতেন, এভেলিনের রহস্য উদঘাটন করতে হলে এই বাড়িতে প্রবেশ করতে হবে।
বাড়ির ভেতরে ঢুকে তিনি টর্চের আলো জ্বালালেন। চারপাশে ধুলোময় একটি নিঃস্তব্ধতা ছিল। দেওয়ালের পেইন্টিংয়ের অংশগুলি ছিঁড়ে গেছে, আর কিছু অন্ধকার কোণ থেকে অনামিকার ছায়া যেন তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিল। অতুল কিছু অদ্ভুত অনুভব করতে লাগলেন। কখনও কখনও তাঁর মনে হচ্ছিল, যেন কেউ তাঁর প্রতি নজর রাখছে। সে অনুভূতি তাঁকে আতঙ্কিত করছিল।
তিনি বাড়ির বিভিন্ন ঘর পরিদর্শন করতে লাগলেন। একটি ঘরে প্রবেশ করতেই তিনি দেখতে পেলেন একটি পুরনো টেবিল, যার উপর রাখা ছিল অগণিত পুরনো বই। বইগুলোর মধ্য থেকে একটি বই বের করে তিনি পড়তে লাগলেন। বইয়ের পাতায় এভেলিনের আঁকা কিছু ছবি এবং তার লেখা কিছু কবিতা ছিল। লেখাগুলোতে গভীর আবেগ এবং যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট ছিল। তিনি বুঝতে পারলেন, এভেলিনের জীবন কতটা দুর্বিষহ ছিল।
বইটি পড়ার সময় হঠাৎ করেই ঘরটি অন্ধকারে ডুবে গেল। টর্চের আলো নিভে গেল এবং চারপাশে এক eerie নিস্তব্ধতা সৃষ্টি হল। অতুলের মনে অস্বস্তি সৃষ্টি হলো। তিনি একটু ভয় পেলেও, সাহস নিয়ে আবার টর্চের আলো জ্বালালেন। কিন্তু কি দেখলেন! ঘরের এক কোণে একটি ছায়া। সেই ছায়াটি যেন হালকা নড়াচড়া করছিল। অতুলের হৃদয় দ্রুত ধড়ফড় করতে লাগল।
“কে আছো?” তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিন্তু কোন উত্তর এল না। তারপর থেকে ছায়াটি এক ঝলক এসে তার সামনে হাজির হয়ে গেল। অতুলের পা যেন অজান্তেই পিছিয়ে গেল।
“এভেলিন!” সে উচ্চারণ করতেই তার মনে হলো যেন কিছুর প্রতিধ্বনি হচ্ছে। ঘরটি কাঁপতে লাগল, আর অতুল বুঝতে পারলেন, এই সব কিছু কেবল একটি ভয়াবহ কল্পনা নয়।
অতুল দ্রুত বাড়ির বাইরে চলে আসতে উদ্যত হলেন। কিন্তু তাঁর পা যেন স্থির হয়ে গেল। বাড়ির দরজা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেল, যেন কেউ তাকে আটকে রাখতে চাইছে। অতুলের মনে হতাশা ও ভয় উভয়ই তৈরি হচ্ছিল। “আমি এখানে কেন এলাম?” তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন।
ঠিক তখনই তাঁর ফোনে একটি মেসেজ আসল। মেসেজটি ছিল একটি অচেনা নম্বর থেকে। “এভেলিনের গল্প জানলে, তুমি আরও গভীরে প্রবেশ করবে। প্রস্তুত হও।” অতুলের হৃদয় দ্রুত পিট পিট করতে লাগল। তিনি মেসেজটি পড়ার পর আরও বেশি বিচলিত বোধ করলেন। এভাবে তাঁর অন্ধকারের মধ্যে আরও অন্ধকারের পথের দিকে এগিয়ে যেতে হতে পারে।
তিনি আবার বাড়ির দিকে ফিরে গেলেন। কিন্তু এবার তিনি কেবল এভেলিনের সত্যকে খুঁজতে চাইছিলেন। তিনি জানতেন, এই রহস্যের গভীরে প্রবেশ করার জন্য তাঁকে আরও সাহসী হতে হবে।
তিন দিন কেটে গেল। অতুল শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখলেন, কিন্তু এভেলিনের সম্পর্কে তেমন কিছু খুঁজে পেলেন না। তিনি আবার পুরনো লাইব্রেরিতে ফিরে গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি একটি পুরনো সাময়িকী খুঁজে পেলেন, যার শিরোনাম ছিল “পুরনো কলকাতা।” সাময়িকীটি পড়তে গিয়ে তিনি জানতে পারলেন, এভেলিন সম্পর্কে কিছু খোঁজ পেয়েছেন একমাত্র একজন ব্যক্তি, যিনি তখনকার সময়ের একজন শিল্পী ছিলেন।
“মৃন্ময়ী। সে তখন খুবই জনপ্রিয় ছিল,” অতুল চিন্তা করলেন। “এবং সে হয়তো এভেলিনের সঙ্গে কাজ করেছে।”
ততক্ষণে তিনি ঠিক করেছিলেন, তিনি মৃন্ময়ীর সঙ্গে কথা বলবেন। অতুলের মনে উজ্জ্বল আশা জেগে উঠল। তিনি শহরের এক প্রান্তে মৃন্ময়ীর স্টুডিওতে গেলেন। মৃন্ময়ী একটি গ্যালারির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
“হ্যালো, মৃন্ময়ী। আমি অতুল, একটি লেখক। আমি এভেলিনের সম্পর্কে জানতে চাই।”
মৃন্ময়ী অতুলকে দেখে অবাক হলেন। “এভেলিনের কথা তোমার কেন মনে পড়ল?”
“কারণ, আমি জানতে চাই, সে কোথায় গেছে। সে একজন অসাধারণ শিল্পী ছিল।” অতুল বললেন।
মৃন্ময়ী একটু নীরব হলেন, তার চোখে কিছু স্মৃতি গুলিয়ে উঠল। “এভেলিন… সে ছিল এক চমৎকার শিল্পী। কিন্তু তার জীবন অনেক কষ্টে ভরা ছিল। সে সত্যিই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কেন, তা আমি জানি না। অনেকেই গুজব ছড়িয়েছিল যে, সে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, সে হয়তো আত্মগোপন করেছে।”
“অতিথি!” হঠাৎ করে গ্যালারির বাইরে থেকে একটি আওয়াজ এল। মৃন্ময়ী ভয় পেয়ে গেলেন। “কিন্তু কিছু বলতে চান?”
তারা দুজনেই বাইরে তাকালেন। সেখানে একজন পুরনো মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি তাঁর মুখের ভাঁজে এবং চোখে গভীর অভিজ্ঞতার ছাপ নিয়ে আসলেন।
“তুমি কি এভেলিনের কথা বলছ?” তিনি অতুলের দিকে তাকিয়ে বললেন।
অতুল মুগ্ধ হয়ে গেলেন। “হ্যাঁ, আপনি তাকে চেনেন?”
“আমি জানি, সে কোথায় গেছে,” পুরনো মানুষটি বললেন। “কিন্তু সেই সত্য জানার জন্য, তোমাদের কিছু মূল্য চুকাতে হবে। ভয় পাও না, কারণ, সত্য খুঁজতে গেলে ভয় পেতে হয়। একবার আমি নিজেও এভাবে খুঁজেছিলাম।”
মৃন্ময়ী বিস্মিত হয়ে বললেন, “আপনি কে?”
“আমি বলবো না। তুমি আমাকে ডেকে এসো, আমি তোমাদের সাহায্য করবো। কিন্তু প্রথমে, তোমাদের এভেলিনের জন্য কিছু করতে হবে। তাকে মুক্তি দিতে হবে, সে স্বাধীনতা চায়।”
অতুলের মনে অসংখ্য প্রশ্ন জমে গেল। “কিভাবে?” তিনি জানতে চাইলেন।
“তোমাদের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। কিন্তু এই বাড়ির রহস্যের মধ্যে আরো অনেক কিছু লুকিয়ে আছে। সত্য জানতে হলে, তোমাদের এই বাড়ির অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে,” পুরনো মানুষটি বললেন।
এই অন্ধকারে থেকে বেরিয়ে আসার জন্য অতুলকে সাহস করতে হবে। সে কি পারে? অতুলের মধ্যে আশা এবং আতঙ্ক উভয়ই অনুভূতি ছড়িয়ে পড়তে লাগল।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - ভালবাসার পুনর্জন্ম: "ভালবাসার পুনর্জন্ম" একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে মায়া ও ঋষির সম্পর্ক নতুন করে গড়ে ওঠে, এবং দেব নতুন জীবনের পথে পা বাড়ান। অনুভূতি ও ক্ষমতার কাহিনী। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
শহরের রহস্য
দৃঢ় সংকল্প নিয়ে শঙ্খ খাঁটা হাতে নিয়ে শহরের দিকে হাঁটতে লাগলেন রাজীব। তিনি জানতেন, এভেলিনের রহস্যময় গায়েব হয়ে যাওয়া শুধু একটি ব্যক্তিগত ঘটনা নয়, বরং এতে জড়িত রয়েছে শহরের অতীতের এক গোপন কাহিনী। এখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মিসেস দাসের সাহায্যে এই রহস্যের আরও গভীরে প্রবেশ করবেন।
মিসেস দাসের বাড়ির সামনে পৌঁছাতেই রাজীবের মনে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হল। বাড়িটি ছিল পুরোনো, তার চৌকাঠে ফুটে উঠেছিল সময়ের কালি। বাড়ির অভ্যন্তরে ঢুকতেই রাজীবের দৃষ্টি আকৃষ্ট হল সেখানকার প্রাচীন ছবির দিকে, যেগুলি তার প্রিয় নায়িকার ছবি মনে করিয়ে দিচ্ছিল। তিনি জানতেন, এভেলিনের জীবনকাহিনী এখন তার কাছে চাবিকাঠি হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
মিসেস দাসের ঘরটি অন্ধকারে ঢাকা ছিল, তবে একটি ছোট্ট বাতি জ্বালানো ছিল, যা খুব কষ্টে এক ফালি আলো ছড়াচ্ছিল। মিসেস দাস একটি চেয়ারে বসে ছিলেন, তাঁর চোখে একটি বিচিত্র কষ্ট। রাজীব তাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “মিসেস দাস, আমি এভেলিনের ব্যাপারে কিছু জানতে এসেছি।”
মিসেস দাস ধীরে ধীরে মাথা নাড়লেন। “এভেলিন… হ্যাঁ, আমি জানি। কিন্তু… আমি কিছু বলতে চাইলে মনে হয়, এটি আরেকটি বিপদের সূচনা করবে।”
রাজীবের মনে সন্দেহ তৈরি হলো। “আপনি যদি কিছু জানেন, দয়া করে আমাকে বলুন। আমি সত্যিই সাহায্য করতে চাই।”
মিসেস দাস কিছু সময় চুপ রইলেন। তারপর বললেন, “এভেলিনের গায়েব হওয়া একটি রহস্য, যা শহরের ইতিহাসের গোপন কাহিনীর সঙ্গে জড়িত। বহু বছর আগে, এই শহরে একটি কাহিনী ঘটেছিল। একটি যুবতী, সুরভী নামে, mysteriously গায়েব হয়ে গিয়েছিল।”
রাজীবের আগ্রহ বাড়তে লাগল। “সুরভী? কী হয়েছিল তার?”
“সুরভী ছিল এক অদ্ভুত মেয়ে। সে মাঝে মাঝে অদ্ভুত আওয়াজ শুনত, সারা রাত কান্নার শব্দ শুনত। শহরের মানুষ তার এই কান্না শুনে ভীত হয়ে যেত। কিন্তু একদিন সে হঠাৎ করে গায়েব হয়ে যায়। কেউ কিছু জানে না, কোথায় গেছে সে। তারপর থেকে শহরে শোনা যায় অদ্ভুত গল্প।”
রাজীবের মনে হচ্ছিল, এভেলিন এবং সুরভীর ঘটনায় কিছু গভীর সম্পর্ক থাকতে পারে। “আপনার কি জানা আছে, সুরভী কোথায় ছিল?”
মিসেস দাস আবার চুপ হয়ে গেলেন, যেন তাকে কিছু বলতে ভয় পাচ্ছেন। “না, আমি জানি না। তবে, অনেকেই বলে যে, সুরভী কোথাও কোথাও গিয়ে আবার ফিরে এসেছে।”
এটি শুনে রাজীবের মধ্যে আগুন জ্বলে উঠল। তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, এভেলিনের জীবনের কাহিনী এই শহরের এক অদৃশ্য রহস্যের সঙ্গে জড়িত। “মিসেস দাস, আপনি কি জানেন, সুরভীর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল কি এভেলিনের?”
“এটি অনেক পুরোনো গল্প,” তিনি বললেন, “কিন্তু শহরে এমন কিছু স্থান রয়েছে, যেখানে যাওয়া খুব বিপজ্জনক। মানুষ বলে, সেখানে এখনও সুরভীর আত্মা ঘুরে বেড়ায়। কেউ যদি সেখানে যায়, তবে তাদের জন্য খারাপ কিছু ঘটবে।”
রাজীবের মনে হল, এটাই তার পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে। তিনি মিসেস দাসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। বাইরের বাতাসে ঝড়ো ভাব ছিল, যেন প্রকৃতি নিজেই কিছু বলছে। রাজীবের মনে হচ্ছিল, সময় এখন খুব কম, তাকে দ্রুত কিছু করতে হবে।
সে সন্ধ্যা বেলায় শহরের পুরনো অংশে চলে গেল। সেখানে পুরোনো ভবন এবং গলির করিডর ছিল, যা সেই অদ্ভুত কান্নার আওয়াজ নিয়ে ঘেরা ছিল। রাজীব হঠাৎই একটি পুরোনো ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল, যেখানে সুরভী গায়েব হয়ে গিয়েছিল। বাড়িটির চেহারা খুব ভাঙা এবং পুরোনো ছিল, কিন্তু সে জানত, এখানেই তার সন্ধান চালাতে হবে।
অন্ধকারে প্রবেশ করতে রাজীবের হৃদয় দুরু দুরু করছিল। বাড়িটির ভিতর ঢুকতেই, তিনি খেয়াল করলেন, কোথাও থেকে অস্পষ্ট কান্নার আওয়াজ আসছে। প্রথমে তিনি ভাবলেন, এটি কেবল তার মনের ভ্রম। কিন্তু আওয়াজটি আরও জোরালো হতে লাগল।
“এভেলিন, তুমি কোথায়?” রাজীব মুর্ছনায় ডাক দিলেন। আওয়াজ শুনে তার মনে হচ্ছিল, কেউ যেন তার পাশে আছে। তাঁর মনে ভয় ও আশঙ্কা উভয়ই ঘুরপাক খাচ্ছিল।
হঠাৎ করেই, বাড়ির অন্ধকার কোণ থেকে একটি ছায়া বেরিয়ে এল। রাজীব তার হৃদয়ে কাঁপুনি অনুভব করল। “কে তুমি?” সে বলল।
ছায়াটি হেসে বলল, “তুমি কি আমার অনুসন্ধান করছ?” এটি একটি মহিলার কণ্ঠস্বর ছিল, কিন্তু তা খুব অদ্ভুত মনে হচ্ছিল। রাজীব চেষ্টা করল আড়াল থেকে বেরিয়ে আসার জন্য।
“আমি সুরভী,” ছায়াটি বলল। “তুমি আমার গল্পের অনুসন্ধান করছ, কিন্তু তুমি কি জানো যে সত্যের সন্ধানে যেতে হলে অনেক কিছু অর্পণ করতে হবে?”
রাজীবের হৃদয় থমকে গেল। সে বুঝতে পারছিল না, কীভাবে উত্তর দেবে। “কী অর্পণ করতে হবে?”
“তোমার ভয়,” সে বলল। “ভয় না করে এগিয়ে আসো। সত্য তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
রাজীবের মনে এল, তিনি এই ভয়াবহতার সম্মুখীন হতে পারলে কিভাবে এভেলিনকে উদ্ধার করবেন। সুরভীর সঙ্গী হয়ে, রাজীব নিশ্চিত ছিল যে তার মধ্যে শক্তি জমা হয়েছে। “আমি ভয় পেতে চাই না,” রাজীব বলল। “আমি সত্য খুঁজে বের করতে চাই।”
হঠাৎ, ছায়াটি অদৃশ্য হয়ে গেল। রাজীবের মনে হল, কিছু এক্সপ্রেস করতে হবে। তিনি বাইরে বেরিয়ে এসে পুরো শহরের দিকে তাকালেন। “এটি আরেকটি কৌতূহলজনক দিক,” সে ভাবল। “শহরের ইতিহাসে এক গোপনীয়তা ছড়িয়ে রয়েছে।”
এখন রাজীব জানতেন যে, সুরভীর গল্প এবং এভেলিনের গায়েব হওয়ার ঘটনা একসূত্রে বাঁধা। এটি খুঁজে বের করার জন্য তাকে এগিয়ে যেতে হবে। তার হৃদয়ে এক নতুন উদ্দীপনা জন্ম নিল।
এবার, রাজীবের কাছে নতুন একটি চিন্তা আসল—স্থানীয় লাইব্রেরিতে যেতে হবে, সেখানে হয়তো কিছু ঐতিহাসিক নথি পাওয়া যাবে, যা তাকে সাহায্য করবে। মিসেস দাসের কথাগুলি তার মনে গুনগুন করছিল। সে দ্রুত লাইব্রেরির দিকে রওনা দিল, কারণ সময়ের মূল্য বোঝা এখন তার কাছে জরুরি।
যেমন তিনি লাইব্রেরির দরজায় পৌঁছালেন, হৃদয়ের তালে নতুন রহস্যের অপেক্ষা ছিল। কি ঘটতে চলেছে, তা জানতে তার অনুসন্ধান অব্যাহত থাকবে। কীভাবে তিনি এভেলিনের সত্য এবং সুরভীর অদৃশ্য ঘটনার সাথে সম্পর্কিত রহস্যের উত্তর পেতে পারবেন?
অস্পষ্ট বার্তা
ঝড়ো রাতে, কলকাতার আকাশ কালো মেঘে আচ্ছাদিত ছিল। বৃষ্টির শব্দ শোনার সাথে সাথে রাজীব নিজের গোপন কাহিনীগুলো গুছিয়ে তুলতে বসেছিল। সে কাগজে কিছু লিখছিল, ভাবছিল কিভাবে সুরভী ও এভেলিনের ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক বের করা যাবে। হঠাৎ তার ফোনের স্ক্রীনে একটি অদ্ভুত নম্বর থেকে একটি মেসেজ আসল। রাজীব মেসেজটি খুলে দেখলো, লেখা ছিল: “তুমি জানো না, কিন্তু আমি তোমার পাশে আছি।”
এই অদ্ভুত বার্তা পড়ে রাজীবের মনে অস্বস্তি তৈরি হলো। কে এই রহস্যময় ব্যক্তি? কেন সে তাকে এই বার্তা পাঠালো? অন্ধকারে, চারপাশের গুমোট বাতাস যেন আরও ঘন হয়ে আসছিল। রাজীব নিজেকে সতর্ক করে বলল, “এটি কেবল একটি মজা হতে পারে।” কিন্তু তার মনে কি এক অজানা ভয় কাজ করছিল।
হঠাৎ, বাড়ির দেওয়ালগুলোতে যেন একটি নাড়া দেওয়া শুরু হলো। রাজীবের হৃদয় দ্রুততালে ঠুকে উঠল। মনে হলো, এভেলিনের আত্মা কিছু বলতে চাইছে। কি বলবে সে? সে কি সত্যিই এখানেই আছে? রাজীব সেদিকে খেয়াল রাখতে লাগল। ঘরের পরিবেশ অদ্ভুতভাবে পাল্টাতে শুরু করল। বাতির আলো ঘনিয়ে এসে যেন তার পাশে একটি ছায়া তৈরি করছিল।
রাজীব চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভাবছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সে কি করবে? মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করে, সে ভাবল—এই ঘটনা সম্পর্কে আরো জানতে হবে। সে দ্রুত ফোনের নম্বরটি সংরক্ষণ করল। এরপর বাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে, বৃষ্টির সঙ্গে একটি চিন্তা নিয়ে ভাবতে লাগল—এই শহরের কাহিনী ও ইতিহাসে কি এমন কিছু আছে যা তাকে নির্দেশ দেবে?
দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজীব বাইরে বেরিয়ে পড়ল। ঝড়ের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে, সে অনুভব করল, কিছু একটা পরিবর্তন হতে চলেছে। এই শহরের গলির মধ্যে, যে রহস্যগুলি লুকিয়ে আছে, সেগুলোর সমাধান খুঁজতে হবে। তাকে লাইব্রেরিতে ফিরে যেতে হবে। সেখানে সুরভী ও এভেলিনের গল্পের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বের করতে হবে।
লাইব্রেরির দরজায় ঢুকে পড়তেই, রাজীবের মনে হল, এখানে সময় থমকে গেছে। পুরনো বইগুলোর গন্ধ এবং শেলের পৃষ্ঠাগুলি ভিজে ছিল, যেন এই বইগুলির মধ্যে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে। তিনি লাইব্রেরির রেফারেন্স সেকশনে গেলেন, যেখানে শহরের পুরনো নথিপত্র এবং ইতিহাসের অনেক কিছু পাওয়া যেত।
তিনি বইয়ের তাক থেকে কিছু বই তুলতে লাগলেন। একটি বইয়ের ওপর লেখা ছিল, “কলকাতার ভূতের কাহিনী।” বইটি খুলতেই, সুরভী সম্পর্কে কিছু লেখা চোখে পড়ল। লেখক সুরভীর গায়েব হওয়ার সময়ের ঘটনাগুলির বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
“এটি অদ্ভুত,” রাজীব ভাবল। “এভেলিনের গায়েব হওয়ার সময়ের সঙ্গে সুরভীর ঘটনার মধ্যে কি কোনো সম্পর্ক আছে?”
বইটি পড়তে পড়তে রাজীব দেখতে পেল, সুরভী গায়েব হওয়ার সময় একজন তরুণ কবি তার প্রেমে পড়েছিল। কিন্তু পরে, সে কিছু অদ্ভুত আচরণ করতে শুরু করে এবং এক রাতে সে হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে যায়। এই ঘটনার পর শহরজুড়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। রাজীবের মনে হতে লাগল, এই কবি কি এভেলিনের কোনও সম্পর্ক ছিল?
এখন, রাজীবকে সেই কবির নাম খুঁজে বের করতে হবে। সে তার ফোনে আবার ঐ অদ্ভুত নম্বরটি খুঁজে বের করল এবং একটি ছোট তদন্ত শুরু করল। রাজীব শহরের পুরনো সংবাদপত্রগুলোও পড়তে শুরু করল, সেখানে সুরভী ও ঐ কবির কাহিনী সম্পর্কে আরো তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
এরপর, রাজীব লাইব্রেরির দ্বিতীয় তলায় গেল, যেখানে কিছু পুরনো ম্যাগাজিন ছিল। সেখানে একটি পত্রিকায় সুরভী ও তার কবি প্রেমিকের একটি ছবি দেখল। ছবির নিচে লেখা ছিল “তরুণ কবি রূপকেন্দ্র, যিনি শেষবারের মতো সুরভীর সাথে দেখা করেছিলেন।” রাজীব চমকে উঠল। রূপকেন্দ্রের নাম শুনে তার মনে পড়ে গেল, এই শহরের সবচেয়ে পুরনো একটি বস্তিতে কবির কবিতা নিয়েই কিছু রহস্য ছিল।
“আমার এখানে যাওয়া উচিত,” রাজীব মনে মনে বলল। “আমি জানতে চাই, এই রূপকেন্দ্র এখন কোথায় আছে।”
রাজীব দ্রুত বেরিয়ে পড়ল লাইব্রেরি থেকে। বৃষ্টি এখনও চলছিল, কিন্তু রাজীবের মনে যেন আগুন জ্বলছিল। সে রূপকেন্দ্রের গলির পথে এগিয়ে যেতে লাগল। পৌছানোর পর, দেখল সেই পুরনো বাড়িটি। বাড়ির সামনে কিছু তরুণ-তরুণী বসে আড্ডা দিচ্ছিল।
“তুমি কি এখানে রূপকেন্দ্রকে খুঁজছ?” একজন যুবক রাজীবকে জিজ্ঞেস করল।
“হ্যাঁ, আমি রূপকেন্দ্রের খোঁজে এসেছি। সে কি এখানে থাকে?” রাজীব প্রশ্ন করল।
“সে বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে থাকে না। শুনেছি, সে শহরের বাইরে চলে গেছে, কিন্তু গুজব আছে যে, মাঝে মাঝে সে এখানে আসে। তবে, যদি তুমি সত্যিই তার সন্ধানে থাকো, তাহলে তুমি কি জানো, তাকে শেষবার কোথায় দেখা হয়েছিল?” যুবকটি বলল।
“সুরভী,” রাজীব অল্প স্বরে বলল। যুবকটির চোখ চমকে উঠল। “তুমি কি জানো সুরভী সম্পর্কে?”
“হ্যাঁ, সুরভী আমাদের শহরের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে ছিল। কিন্তু সে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পর থেকে, শহরবাসীরা তার নাম শুনলেই ভয় পায়। তুমি সুরভীর কাহিনী জানো?” যুবকটি আগ্রহী হয়ে বলল।
রাজীব সিদ্ধান্ত নিল, তাকে যুবকের কাছে পুরো কাহিনী বলতে হবে। “হ্যাঁ, আমি জানি। আমি এখনো জানি না, সুরভী কোথায় গিয়েছিল, কিন্তু আমি জানতে চাই।”
যুবকটি রাজীবকে তার চেনা কিছু স্থান দেখাতে আগ্রহী হয়ে উঠল। “তুমি যদি সুরভীর গল্প জানো, তাহলে রূপকেন্দ্রকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করো। সে হয়তো তোমাকে সাহায্য করবে।”
রাজীব যুবকের সঙ্গে সঙ্গী হয়ে সেই পুরনো গলির মধ্যে প্রবেশ করল। গলি দিয়ে যাওয়ার সময় রাজীবের মনে হল, কিছু একটা গাঢ় রহস্য অপেক্ষা করছে। সুরভী ও এভেলিনের কাহিনীকে একত্রিত করার জন্য এই যুবক যে তথ্য দিতে পারে, সেটাই তার জন্য মূল।
“তুমি কি জানো, রূপকেন্দ্র কোথায় যেতে পারে?” রাজীব জিজ্ঞেস করল।
“আসলে, সে শহরের বাহিরে একটি কবিতার সম্মেলনে গিয়েছে, কিন্তু মাঝে মাঝে সে আসে।” যুবকটি বলল। “তবে, আমি তোমাকে একটি জায়গার কথা বলি, যেখানে সে গিয়ে কবিতা পড়তে পছন্দ করে।”
রাজীবের হৃদয় আবার জেগে উঠল। “সেখানে যেতে হলে আমাকে কী করতে হবে?”
“তুমি সরাসরি সেখানে যাও। সুরভীর কাহিনী জানলে, হয়তো তোমার হাতে কিছু কাগজপত্রও থাকবে, যা তোমার তদন্তের জন্য কাজে লাগবে,” যুবকটি বলল।
রাজীব যুবকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বেরিয়ে পড়ল। এ বার সে এক নতুন দিশা পেয়েছে—রূপকেন্দ্রের সন্ধানে, সেই যুবকের পথনির্দেশে। এখন তার সামনে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হচ্ছিল, এবং সেই সন্ধানে সামনে আরো অনেক কাহিনী বাকি ছিল।
কিন্তু তার মনে এক চাঞ্চল্যকর প্রশ্ন রয়ে গিয়েছিল: “কি হবে যদি রূপকেন্দ্র এবং সুরভীর গায়েব হওয়ার ঘটনাগুলোর মধ্যে কিছু গোপন রহস্য লুকিয়ে থাকে?”
ছোটদের রূপকথার গল্প - বন্ধুর বীরত্ব: "বন্ধুর বীরত্ব" একটি হৃদয়গ্রাহী ছোটদের গল্প, যেখানে চিকু ও মীরা একসাথে বিপদ মোকাবিলা করে। এই রূপকথার গল্প বন্ধুত্বের শক্তি ও সাহসিকতা তুলে ধরে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
সত্যের মুখোমুখি
আকাশে মেঘের গর্জন ধ্বনিত হচ্ছিল, যেন প্রকৃতি নিজেই থমাসের অস্থির মনকে প্রতিফলিত করছে। গত কয়েকদিনে যেসব অদ্ভুত ঘটনা ঘটছিল, তাতে থমাসের চিন্তা-ভাবনায় এক অস্বস্তির ঢেউ বয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, সে এভেলিনের নিখোঁজ হওয়ার রহস্যের সন্ধানে আরও গভীর হবে। তার হাতে গোনা কয়েকটি সূত্র ছিল, কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, তা পুরোপুরি অপ্রতুল মনে হচ্ছিল।
অন্ধকার রাত, একাকিত্বের অনুভূতি ও অস্পষ্ট বার্তাগুলি থমাসের মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। সে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, যখন তার নজর পড়ল টেবিলের কোণে রাখা পুরনো এক বইয়ের ওপর। বইটির নাম ছিল “ভয়ঙ্কর সত্য”। থমাসের মনে হল, হয়তো সেখানে কিছু তথ্য থাকতে পারে যা তাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বইটি খুলতেই প্রাচীন পাতাগুলি এক ঝলক দেখাল। কিছু পাতা উল্টাতে গিয়ে একটি নোটিং পড়তে পারল সে। সেখানে লেখা ছিল, “অন্ধকারের মায়া, শুধু মুখোশ পরা নয়; সত্যের দিকে যেও, তোমার সন্ধান সেখানে।” নোটটির লেখক কে, সে জানত না, কিন্তু তার মধ্যে একটি অদ্ভুত আবেদন ছিল। এর মানে কী? কি সত্যই জানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে?
তারপর সে ভাবল, এভেলিনের গতির সঙ্গে এই নোটের সম্পর্ক থাকতে পারে। সে চাইল, আরও কিছু তথ্য জানতে। সেই মুহূর্তে, তার ফোন বেজে উঠল। স্ক্রীনে একটি নতুন মেসেজ। সেই একই অদ্ভুত নম্বর থেকে। “আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি, থমাস। সত্যের জন্য প্রস্তুত হও।”
ঠান্ডা শিহরণ তার মেরুদণ্ড বরাবর চলে গেল। কে এই অজ্ঞাত ব্যক্তি? এবং তাদের উদ্দেশ্য কী? সে জানল যে সময় নিঃশব্দে চলে যাচ্ছে, তাকে তাড়াতাড়ি কিছু করতে হবে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে, থমাস শহরের একটি পুরনো পাঠাগারে গিয়ে এভেলিনের ইতিহাসের সন্ধানে তন্ন তন্ন করতে লাগল। সেখানে, সে জানতে পারল এভেলিনের একটি পুরনো বন্ধু, লুক। সে একজন শিল্পী এবং তার আঁকা ছবির মধ্যে সুরক্ষিত কিছু গোপন বার্তা ছিল। লুকের তথ্য অনুসারে, এভেলিন সম্ভবত একটি গোপন দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল, যারা শহরের আধিপত্য ও বিপদসংকুল গোপনীয়তার সন্ধানে কাজ করছিল।
“কিন্তু কেন?” থমাস জিজ্ঞাসা করল। “এভেলিনের কি এমন কিছু ছিল যা তারা পেতে চেয়েছিল?”
“এভেলিন জানত কিছু। যা তারা চায় না,” লুক উত্তর দিল। “সে এই গোপন দলে ছিল এবং তারা তাকে খুঁজছিল। কারণ সে সব কিছু প্রকাশ করতে পারে।”
থমাসের মনে একটি জ্বলন্ত প্রশ্ন ছিল: “এভেলিনের বিরুদ্ধে এত অপরাধের পেছনে কি কারণ ছিল?” শহরের গোপনীয়তায় এত বড় একটি ভূমিকায় এভেলিনের ভূমিকা ছিল? সে জানত, তাকে এখন সত্যের সন্ধানে আরও গভীরভাবে যেতে হবে।
একটা চিন্তা মাথায় আসে। থমাস ইন্টারনেটে সেই দলের খোঁজ করতে শুরু করে। তার মধ্যে কয়েকটি পুরনো খবরের প্রতিবেদন পায়। সেখানে লেখা ছিল, “অবৈধ কার্যকলাপের জন্য অভিযুক্ত গোপন সংগঠন, যারা শহরের শিল্পীদের ও সমাজের নেতাদের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখছে।” থমাস বুঝতে পারে, এভেলিন যে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল, সেই সংগঠনটি অনেক শক্তিশালী।
সন্ধ্যাবেলা থমাস তার বাড়িতে ফিরে আসে। সে অনুভব করল, দেয়ালগুলি যেন তার গোপন কথাগুলো শুনছে। অন্ধকারে বসে, সে একটি পুরনো ছবির দিকে তাকাল, যা এভেলিনের। ছবির পিছনে কিছু লেখা ছিল। থমাস গোপনে সেটা পড়ে, “এটা আমার শেষ বার্তা। তাদেরকে বিশ্বাস করো না।”
এখন তাকে খুব সাবধানে কাজ করতে হবে। সময় ফুরিয়ে আসছে। এভেলিনের কাহিনীতে এমন একটি সত্য রয়েছে যা এতদিন চেপে রাখা হয়েছে। এটাই ছিল তাদের অস্তিত্বের সন্ধানে।
এরপর, সে ভাবলো লুকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। লুক কি জানে এই গোপন সংগঠনের সম্পর্কে? তার সাহায্য নিয়ে সে হয়তো সত্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। তবে লুকের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে তার মনে কিছুটা সন্দেহ ছিল। কি জানি, লুকেরও কি সেই গোপন দলে কোনো যোগসূত্র থাকতে পারে?
এবং সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রস্তুত হলে, সে লুকের সাথে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক করে। লুক কি তাকে সত্য জানাবে, নাকি আরও বেশি জটিলতা সৃষ্টি করবে? থমাসের মধ্যে এক অনির্দিষ্ট উদ্বেগ তৈরি হয়।
রাত বাড়তে থাকে। থমাস তখন হঠাৎ একটি ফোন কল পায়। অপর প্রান্তে লুকের কণ্ঠস্বর। “আমাকে বিশ্বাস করো, থমাস। তুমি যা জানতে চাও, তা জানিয়ে দেব। তবে আগে তুমি আমার সঙ্গে আসতে হবে। সেটা অত্যন্ত বিপজ্জনক।”
“কেন?” থমাস প্রশ্ন করল।
“কারণ, তারা জানে তুমি খুঁজছ।” লুক বলল। “এখনই সময়!”
আকাশের বিদ্যুৎ চমকানো শুরু হলো। যেন একটি সংকেত। থমাসের মনে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য চাপ অনুভব হল। সে জানে, এখন তাকে সত্যের মুখোমুখি হতে হবে। এভেলিনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার পেছনের কারণ জানার জন্য তাকে সাহসী হতে হবে।
সে প্রস্তুতি নেয়। কারণ, সত্য কখনো সহজ নয়।
“দূরদর্শিতা আর সাহস নিয়ে চল,” সে নিজের মনে বলল। “এখনই সময়।”
এইভাবে, থমাসের সন্ধান শুরু হয় সত্যের দিকে, যেখানে তাকে বিপদের মুখোমুখি হতে হবে এবং তার বন্ধুকে উদ্ধারের জন্য একটি পথ খুঁজতে হবে।
এবং ঠিক তখনই, রাতের অন্ধকারে, একটি রহস্যময় ছায়া থমাসের পেছনে নেমে আসে, যেন তাকে চিহ্নিত করতে এসেছে। থমাস ঘুরে দেখে, আর তখনই সে বুঝতে পারে—এটা ছিল অন্ধকারের গোপন শক্তি, যা এভেলিনের প্রাক্তন গোপন সংগঠনের একটি শাখা।
মুক্তি ও শান্তি
বিকেল বেলা। কোলকাতার আকাশে অন্ধকারের ছায়া বাড়তে শুরু করেছে। থমাস তার পুরনো বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে। আজকের দিনটি তার জন্য বিশেষ। গত কয়েক সপ্তাহের সকল চড়াই-উতরাইয়ের পর, সে জানে আজকের রাতের ঘটনাগুলি তার জীবনে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে।
লুকের সঙ্গে কথা বলার পর, থমাস বুঝতে পেরেছে, এভেলিনের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে যে রহস্য আছে, তা শুধু তার ব্যক্তিগত জীবনের জন্যই নয়, বরং শহরের অনেক মানুষের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। শহরের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা গোপন সংগঠনটি শুধু একটি গোপনীয়তা নয়; বরং তাদের কার্যকলাপ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করেছে।
এভেলিনের আত্মা মুক্ত করতে হবে তাকে। থমাসের মনে হয়েছে, এই কাজটি শুধু তার জন্য নয়, বরং শহরের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই সে স্থির করল, আজ রাতেই সে সেই অন্ধকারের মুখোমুখি হবে।
এখন তার পরিকল্পনা ছিল, গোপন সংগঠনের সদস্যদের খুঁজে বের করা এবং তাদেরকে এভেলিনের আত্মার শান্তি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করা। থমাস একটি পুরনো সুতোর মাধ্যমে সেই সংগঠনের গোপন তথ্য পেতে সক্ষম হয়েছে। লুকের সাথে দেখা করে সে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছে।
“যেকোনো মুহূর্তে তারা আমাদের খুঁজে পেতে পারে,” লুক বলল। “তুমি যদি তাদের মুখোমুখি হও, তবে প্রস্তুত থাকতে হবে।”
“আমি জানি, কিন্তু আমি এভেলিনের জন্য যুদ্ধ করতে চাই,” থমাস দৃঢ়তার সঙ্গে বলল। “তার আত্মাকে মুক্তি দিতে হবে।”
সন্ধ্যা বাড়তে থাকল। থমাস আর লুক শহরের একটি পুরনো গুদামে এসে পৌঁছাল। গুদামটি পুরনো ও তীক্ষ্ণ ছায়ায় আবৃত ছিল। লুক গুদামের দরজার দিকে এগিয়ে যেতে গেল, কিন্তু থমাস একদম পেছনে দাঁড়িয়ে রইল।
“এটা খুব বিপজ্জনক হতে পারে,” থমাস বলল।
“কিন্তু আমাদের কিছু করতে হবে,” লুক বলল। “এটি আমাদের শেষ সুযোগ।”
এখন তারা ভিতরে প্রবেশ করল। গুদামের ভিতরে অন্ধকার ছিল, কিন্তু একটি ক্ষীণ আলো দেখা যাচ্ছিল। থমাস জানত, এই অন্ধকারের মধ্যে গোপন সংগঠনটি তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।
হঠাৎ করেই, একটি গম্ভীর কণ্ঠস্বর তাদের সামনে এল। “তুমি কি এখানে এসেছে, থমাস? আমাদের সম্পর্কে জানার জন্য?” এটি ছিল কৌশলগত নেতা, যাকে থমাসের সঙ্গে দেখা করার জন্য লুক তার কাছে নিয়ে এসেছিল।
“আমি এখানে তোমাদেরকে থামানোর জন্য এসেছি,” থমাস সাহসের সঙ্গে বলল।
“তুমি জানো না তুমি কী করছ,” নেতা হেসে বলল। “এভেলিন আমাদের থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। সে জানত, আমাদের গোপনীয়তা প্রকাশ করলে কী হতে পারে। কিন্তু তুমি? তুমি কিছুই জানো না।”
থমাসের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সে যে সত্য খুঁজছিল, সেটি এতটা ভয়ঙ্কর হবে, তা সে কখনও ভাবেনি। “এভেলিনের আত্মাকে মুক্তি দাও,” থমাস চিৎকার করে বলল। “সে যা জানতে পেরেছে, তা আমাদের শহরের মানুষের জন্য বিপদ হতে পারে।”
“এবং তুমি কি মনে কর, আমরা তাকে মেরে ফেলেছি?” নেতা বলল। “না, সে আমাদের গোপন কার্যক্রমের একটি অংশ ছিল। এখন তুমি কি করতে পারবে?”
এই কথায় থমাসের মাথায় ঝড় উঠে গেল। “আমি জানি, আমি তোমাদের মোকাবিলা করতে পারি। সত্য প্রমাণিত হবে।”
নেতা হেসে বলল, “তুমি ভুল করছ, থমাস। তুমি আসলে কিছুই পরিবর্তন করতে পারবে না।”
হঠাৎ, গুদামের ভিতরে অন্যরা উপস্থিত হলো। তারা কিছুটা ভীতির মধ্যে দিয়ে চলে আসছিল। থমাস অনুভব করল, সময় খুব কম।
“আমি যদি তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করি, তবে এভেলিনের আত্মার মুক্তি পাবে,” থমাসের কণ্ঠস্বর যেন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠল।
“তুমি কি একা লড়াই করতে পারবে?” নেতা প্রশ্ন করল।
“আমি একা নই,” থমাস বলল। সে তার বন্ধুদের, লুকের দিকে তাকাল। লুক তার পাশে এসে দাঁড়াল, তার পেছনে শহরের আরও কিছু মানুষ। “আমরা সবাই তোমাদের বিরুদ্ধে। তোমাদের অন্ধকারের শেষ দেখতে হবে।”
এখন পুরো গুদামটি উত্তেজনায় ভরে উঠল। থমাসের সাহসিকতা দেখে সবাই এগিয়ে আসছে।
“আমরা একসঙ্গে লড়ব,” লুক বলল। “এটি আমাদের শহরের জন্য যুদ্ধ।”
গোপন সংগঠনটি তাদের বিরুদ্ধে উঠতে চাইল, কিন্তু থমাস এবং তার সঙ্গীরা তাদের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। তাদের সংখ্যা ছিল অনেক। তারা জানত, এভেলিনের আত্মা তাদের জন্য একটি উদ্দেশ্য।
হঠাৎ করে একটি চমক। নেতা জানিয়ে দিল, “তোমরা যদি আমাদের বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে কিছু পাও, তবে এভেলিনের আত্মা মুক্তি পাবে না। সে ছিল আমাদের।”
“সে ছিল তোমাদের নয়,” থমাস বলল। “সে ছিল আমাদের। এবং তার আত্মাকে মুক্তি দিতে হবে।”
এখন গুদামের ভিতরে উত্তেজনা বাড়তে লাগল। থমাস এবং তার বন্ধুদের লড়াই শুরু হলো। শহরের মানুষের শক্তি ও সাহসিকতা একত্রিত হয়ে গেল। তারা জানত, তাদের জন্য এটি শুধু একটি যুদ্ধ নয়; বরং এটি ছিল সত্যের জন্য একটি যাত্রা।
শেষ পর্যন্ত, লুক এবং থমাসের নেতৃত্বে, তারা গোপন সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল। অনেক রক্তপাত, অনেক কান্না, কিন্তু তারা থেমে গেল না।
লড়াইয়ের শেষে, থমাস হঠাৎ একটি কণ্ঠ শুনতে পেল, এটি ছিল এভেলিনের। “তুমি আমার জন্য লড়ছ, থমাস,” সে বলল। “ধন্যবাদ। আমি মুক্তি পাব।”
এই মুহূর্তে, থমাস জানল, সে এভেলিনের আত্মাকে মুক্তি দিয়েছে। সে নিশ্চিত ছিল, এভেলিনের কাহিনী এখন তার জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠেছে।
আকাশের আলোতে প্রথম প্রভাতের রশ্মি ফুটে উঠল। থমাসের মনে শান্তির অনুভূতি এল। সে আর একা নেই। এভেলিনের আত্মা শান্তি পেয়েছে, আর সে নতুন জীবনের দিকে পা বাড়াচ্ছে।
এখন থমাস তার লেখার জন্য নতুন প্রেরণা পেয়েছে। শহরের অন্ধকারের মাঝে তিনি একজন নতুন লেখক হিসেবে আবির্ভূত হতে চলেছেন।
“এভেলিনের গল্প বলে যাব,” থমাস মনে মনে ভাবল। “এখন থেকে আমি নতুন জীবন শুরু করব। সাহসী, শক্তিশালী এবং সত্যের পথে।”
এভাবেই, থমাসের জীবন নতুন করে শুরু হলো, এভেলিনের কাহিনী নিয়ে। তার গল্পের মধ্যে তার নিজেরও মুক্তি পাওয়া ছিল।
এবং সেখানেই শেষ হলো থমাসের যাত্রা, যা শুরু হয়েছিল এক অন্ধকারের মধ্যে, কিন্তু শেষ হলো আলোর মধ্যে। এভেলিনের গল্প, শহরের মানুষের গল্প, এবং সত্যের প্রতীক হয়ে রইলো।