কলকাতার বুকে, লেবুতলা লেনের এক কোণে কুটিপাড়া লাইব্রেরি। এর মধ্যে হাজার হাজার গল্পের বই, আর কানে আসা না-যাওয়া রহস্য। এক দুপুরে, আমি, স্বপন, এই লাইব্রেরিতে ঢুকলাম। আশেপাশে কোনো শব্দ নেই, শুধু পুরনো কাঠের আলমারির একটা দীর্ঘশ্বাস শোনা যায়। হঠাৎ, চোখ আটকে গেল একটা বইয়ের উপর। কালো চামড়ার বাঁধন, ধুলোয় ঢাকা, আর লেখাগুলো অজানা কোনো ভাষায়। কৌতূহলে হাত বাড়িয়ে নিলাম। কিন্তু, বইটা খুলতেই, ভেতর থেকে যেন একটা শ্বাসরোধের আওয়াজ! আমরা চমকে উঠলাম। বইটা যেন কাঁপছে, নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমার গা শিউরে উঠলো। কিন্তু, জানি না কেন, একটা অদ্ভুত অনুভূতি জাগল মনে। বইটাকে জোর করলাম না, আলগোছে খুললাম।
পাতাগুলো ফাঁকা! কোনো লেখা নেই, শুধু অসংখ্য কালো রেখা, যেন কোনো অজানা ভাষার অক্ষরগুলি। কিন্তু, সেই রেখাগুলো যেন নাচছে, কথা বলতে চাইছে। বুকে একটা অস্বস্তি বাসা বাঁধল। বইটা আবার বন্ধ করে দিলাম, মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, প্রধান লাইব্রেরিয়ানকে জানাব। কিন্তু, ঠিক সেই সময়, চারপাশটা বদলে গেল। আলো কমে গেল, আর নিস্তব্ধতা ভাঙল অদ্ভুত ফিসফিসানিতে। বইয়ের আশেপাশের বইগুলো কেঁপে উঠল, যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। আমি পালিয়ে যেতে চাইলাম, কিন্তু পা দুটো যেন জমে গেল।
কী হচ্ছে? এই লাইব্রেরিটা, এই বইটা, সবকিছুই যেন একটা রহস্যের জালে জড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু, সেই সঙ্গে একটা অসম্ভব কৌতূহলও জাগছে মনে। এই বইয়ের ভেতরে কী আছে? কী গল্প লুকিয়ে আছে এই কালো রেখাগুলোর মধ্যে?
কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে গেলাম প্রধান লাইব্রেরিয়ানের কাছে। তাকে সব খুলে বলা দরকার। হয়তো, তিনিই এই রহস্যের সমাধান করতে পারবেন। প্রধান লাইব্রেরিয়ান, মিঃ সেন, একজন বয়স্ক লোক। চোখে জ্ঞানের আলো, মুখে বিনয়ের হাসি। বইটা হাতে নিয়ে, আমার কথা শুনে তিনি একটু ভাবলেন। তারপর বললেন, “এই বইটা সত্যিই অদ্ভুত। অনেক বছর ধরে এটা আমাদের লাইব্রেরিতে আছে। কিন্তু, কেউ এর ভেতরের রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কিন্তু, এই কালো রেখাগুলো কী?”
মিঃ সেন বললেন, “এটা আমরাও জানি না। হয়তো কোনো অজানা ভাষার লিপি, অথবা হয়তো কোনো গোপন কোড।”
আমি হতাশ হয়ে বললাম, “তাহলে কি এই রহস্য কখনোই সমাধান হবে না?”
মিঃ সেন হেসে বললেন, “কে জানে? হয়তো তুমিই একদিন এই রহস্যের সমাধান করতে পারবে।”
তিনি আমাকে সেই বইটা হাতে দিলেন। সাবধানে বইটা খুললাম। আবার সেই কালো রেখাগুলো, যেন নাচছে, কথা বলতে চাইছে। কিন্তু, বুঝতে পারছি না কি বলছে। হঠাৎ, আমার চোখে পড়ল বইয়ের এক কোণায় একটা ছোট্ট চিহ্ন। যেন কোনো প্রতীক। আগে কখনো লক্ষ্য করিনি।
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - অজানা ছবির রহস্য : এই বাংলা ছোট গল্পটিতে রহস্য, রোমাঞ্চ ও পরিচয়ের খোঁজ মিশে আছে। একটি হোর্ডিংয়ের ছবি সোহিনী ও অর্জুনকে অতীতের সাথে মুখোমুখি করে দেয়। রহস্যের জাল আরও জটিল হলে, তারা তাদের আসল পরিবারের খোঁজ পায়।
এখানে ক্লিক করে সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়ুন
“এটা কী?” আমি মিঃ সেনকে জিজ্ঞেস করলাম।
মিঃ সেন চিহ্নটা দেখে বললেন, “এটা একটা প্রাচীন প্রতীক। বোঝা যায় এই বইটা কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের।”
আমার মনে হলো একটা নতুন সূত্র পেয়েছি। এই প্রতীকের মাধ্যমে হয়তো বইয়ের ভাষা বুঝতে পারব। কিন্তু, কীভাবে?
মিঃ সেন বললেন, “এই প্রতীক সম্পর্কে আরও জানতে তোমাকে গবেষণা করতে হবে। ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, ভাষাশাস্ত্র – এই সব বিষয়ে জ্ঞান থাকলে হয়তো উন্মোচন হবে রহস্যের সমাধান।”
আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, এই রহস্যের সমাধান করবই। এই অজানা ভাষার গল্প বের করে আনব। হয়তো এই গল্প কোনো হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের সাক্ষ্য, অথবা হয়তো কোনো অজানা জ্ঞানের ভাণ্ডার।
কৌতূহল আর জ্ঞানের আকাঙ্ক্ষায় ভরপুর মনে নতুন যাত্রা শুরু হলো। কোথায় নিয়ে যাবে এই রহস্যের পথ, কে জানে?
আরেকবার লাব্রেরিটা ঘুরে দেখলাম, সব ঠিক আছে, যেমনটা ঢুকেছিলাম। তবু মনে একটা অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। আর কোনো সময় নষ্ট না করে, মি: সেনের অনুমতি নিয়ে বইটা হাতে নিয়ে বাড়ির দিকে ছুটলাম।
বাড়ি ফিরে বইটা খুলে দেখার সাহস হল না আমার। রাতের অন্ধকারে সেই ফিসফিসানির শব্দ, সেই জ্বলজ্বল চোখ – সবকিছুই যেন চোখের সামনে ভাসছে। কিন্তু, পরের দিন সকালে একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম। বইয়ের একটা পাতায় একটা নতুন আঁকা ছবি। আগের মতো অদ্ভুত প্রতীক ছিল না, বরং অস্পষ্ট একটা মানুষের ছবি। ছবিটা যেন আমাকেই দেখাচ্ছে, হাতে সেই অদ্ভুত বইটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি লাইব্রেরির অন্ধকারে।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - হৃদয়ের সন্ধানে : একদিন এক পাত্র পাত্রী সন্ধানের অফিস-এ একজনের অদ্ভুদ রিকোয়েস্ট আসে। অভিজিৎ ও রূপসা সেই অদ্ভুদ রহস্যের উন্মোচনের জন্য রিয়ার সাথে দেখা করে, জ্যানেট পারে আকাশ ও রিয়ার অতীতের ভালোবাসার গল্প। রিয়া কি আকাশকে খুঁজে পাবে?
জানতে হলে পড়ুন রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, "হৃদয়ের সন্ধানে"।
এই ছবি দেখে আরও বেশি কৌতূহল জাগল মনে। কী চায় এই বইটা? আমাকে কী দেখাতে চাইছে? সাহস করে পুরো বইটা খুলে ফেললাম। কিন্তু, আগের মতো ফাঁকা পাতা নেই। প্রতিটা পাতায় নতুন নতুন আঁকা ছবি। সেই ছবিগুলোর মধ্যে দিয়ে একটা গল্প ফুটে উঠছে, মেদিনীপুরের এক জমিদার বাড়ির গল্প, সেই জমিদার বাড়ির গল্প, সেই রাজাদের লোভ আর ক্ষমতাসুলভ উচ্চাকাঙ্ক্ষার গল্প। ছবিগুলো দেখিয়েছিল, কীভাবে নির্মম জমিদার নিজেদের ধন আর সম্পদ বাড়ানোর লালসায় গ্রামের মানুষকে শোষণ করত, জমি কেড়ে নিত। এক ছবিতে দেখা গেল, এক গরিব কৃষককে জমিদারের লোকজন জোর করে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। আরেক ছবিতে, এক নিরীহ গৃহবধূকে জমিদারের জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য কিভাবে নির্মমভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
ছবির গল্প এগিয়ে গেল। জমিদারদের এই অত্যাচার আর সহ্য করতে না পেরে গ্রামের মানুষ একজোট হল। তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করল জমিদারদের বিরুদ্ধে। রাতের অন্ধকারে জমিদার-এর বাড়ি আক্রমণ করল। ছবিতে দেখা গেল, জমিদার কীভাবে হতভম্ব হয়ে পালিয়ে যেতে চাইছে, কিন্তু পারছে না। শেষের দিকের একটা ছবিতে জমিদার-কে ধরে ফেলা হয়েছে, তাদের চোখে ফুটে উঠেছে ভয় আর আতঙ্ক।
কিন্তু, শেষের পাতায় ছিল একটা অসমাপ্ত ছবি। শুধু জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ আর আগুনের ঝলকানি। বাকিটা অস্পষ্ট, যেন কেউ আঁকা শেষ করতে পারেনি। এই অসমাপ্ত ছবিটা আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগাল। জমিদারদের শাস্তি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু গ্রামের মানুষের জীবনে কী পরিবর্তন এল? তাদের দুঃখ’এর দিন কি শেষ হয়ে গেল?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে লাগলাম। ঐতিহাসিক নথিপত্র দেখতে লাগলাম, একদিন মেদিনীপুরে গিয়ে অবশেষে ওই জমিদার বাড়ি খুঁজে পেলাম। জমিদার বাড়ির আশেপাশের গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বললাম। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারলাম একটা তথ্য। জমিদারদের শাসন শেষ হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু গ্রামের মানুষের জীবনে সেইরকম কোনো পরিবর্তন আসেনি। ধনী-গরিবের বৈষম্য -এর সীমানা পার করে উঠতে পারেনি গ্রামের মানুষ।
এই তথ্য জানার পর বুঝলাম, এই বইটা শুধু একটা গল্প দেখায়নি। একটা সত্যিকারের ঘটনার সাক্ষী করেছে সে। আর সেই ঘটনার অসমাপ্তির ছায়া পড়েছে বর্তমানেও। রাতে বইটা হাতে নিয়ে চিন্তা করতে থাকলাম। এই বইয়ের রহস্য কী? কে আঁকল এই ছবিগুলো? আর আমার সঙ্গে কী যোগাযোগ করতে চাইছে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে লেবুতলার লাইব্রেরিতে ফিরে যেতে হবে, জানি। কিন্তু, সেই জায়গায় পা রাখার সাহস হচ্ছে না। তবু মনে মনে একটা আশা জাগে। হয়তো লাইব্রেরিতে ফিরে গেলে, বইয়ের রহস্যের সমাধান পেতে পারব। হয়তো জানতে পারব, গ্রামের মানুষেরা কীভাবে তাদের অধিকার ফিরে পাবে। দিন কয়েক কাটল অস্থিরতার মধ্যে। রাতে ঘুম আসত না, সেই অসমাপ্ত ছবি আর ফিসফিসানির শব্দ বারবার কানে ভাসত। বইটাও আমার ঘুমের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু, কৌতূহল আর জানার লোভ দিন দিন বাড়ছিল। জমিদার-এর অত্যাচারের গল্প জানলাম ঠিকই, কিন্তু গ্রামের মানুষেরা কীভাবে তাদের অধিকার ফিরিয়ে নিল, সেটা জানা না থাকলে গল্পটা অসমাপ্তই থেকে যাবে।
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, বইয়ের শেষ পাতায় ছবিটা পুরোপুরি আঁকা। এবার আর ধ্বংসাবশেষ আর আগুনের ঝলকানি নেই। ছবিতে দেখা যায়, জমিদার বাড়িটা ভেঙে, সেই জায়গায় একটা স্কুল গড়ে উঠেছে। ছেলেমেয়েরা সেখানে পড়াশোনা করছে। একটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রও চোখে পড়ল। আর গ্রামের মানুষেরা আগের মতো হতাশ আর নিঃস্ব নয়, তাদের চোখে একটা আশার আলো জ্বলজ্বল করছে।
এই ছবিটা দেখে বুঝলাম, জমিদারদের শাসন শেষ হওয়ার পর গ্রামের মানুষেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের জীবন গড়ে তুলল। শিক্ষা আর স্বাস্থ্যের মধ্য দিয়ে তারা এগিয়ে চলল। হয়তো এখনো পুরোপুরি সমস্যা মিটে যায়নি, কিন্তু পরিবর্তনটা স্পষ্ট।
বইটা হাতে নিয়ে বুকে একটা শান্তি অনুভব করলাম। যেন একটা দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেলাম। এই বইটা শুধু একটা গল্প দেখায়নি, একটা ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে কাজ করেছে। আর সেই সঙ্গে একটা আশা জাগিয়েছে – যে ঐক্য আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মানুষ নিজের ভাগ্য নিজের হাতে তৈরী করে নিতে পারে।
কিন্তু, একটা প্রশ্ন এখনো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কে আঁকল এই ছবিগুলো? এই বইটা লাইব্রেরিতে কীভাবে এল? মনে মনে জানি, লাইব্রেরিতে ফিরে যেতে হবে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে। কিন্তু, আবার সেই ভয়। ঠিক সেই সময়, জানালার কাচে একটা কাক দেখলাম। আমার দিকে চেয়ে একটা ‘কা-কা’ করে ডাকল। যেন বলছে, ফিরে যেতে। হয়তো ঠিকই বলছে। সাহস করে লাইব্রেরিতে ফিরে যেতে হবে। হয়তো সেখানেই পাব এই রহস্যের সমাধান।
নিজের ভয়ের সঙ্গে লড়াই করে একদিন সকালে বেরিয়ে পড়লাম। আগের মতো জীর্নশীর্ণ সিঁড়ি বেয়ে লাইব্রেরিতে ঢুকতে গিয়ে গায়ে কাঁটা দাঁড়িয়ে গেল। দরজাটা খোলা! কেউ কি ঢুকেছে? সাবধানে ভেতরে ঢুকলাম।
ধুলোর আস্তরণ একই রকম, কিন্তু আগের মতো নিবিড় নিস্তব্ধতা নেই। একটা মৃদু সুর ভেসে আসছে কোণ থেকে। কৌতূহল জাগল। সুরের দিকে এগিয়ে গেলাম। দেখি, মি: সেন জানালার ধারে বসে আছে। হাতে একটা বাঁশি নিয়ে নিজের মনে বাজিয়ে চলেছে। তিনিই এই সুরের উৎস।
বাংলা ছোট গল্প - শান্তি ও শঙ্কর -এর বন্ধুত্বের গল্প : এই বাংলা গল্পটি শান্তি ও শঙ্করের বন্ধুত্বের হৃদয়স্পর্শী কাহিনী। নিঃসঙ্গ শান্তির জীবনে আসে কুকুরছানা শঙ্কর। এদের মজার খেলা, দুঃসাহসিক কাণ্ডকারখানা আর শেষে প্রতিযোগিতায় জয় - জেনে নিন তাদের অসাধারণ বন্ধুত্বের গল্প।
আস্তে আস্তে তাঁর কাছে এগিয়ে গেলাম। আমাকে দেখে তিনি অবাক হলেন না। বরং হাসিমুখে বললেন, “এসো, বসো।” তাঁর পাশে বসে পড়লাম। বাঁশি বাজানো থামিয়ে দিলেন তিনি।
“কী খবর? এতদিন পরে এলে কেন?” জিজ্ঞাসা করলেন মি: সেন।
“আসলে,” একটু ইতস্তত করে বললাম, “আপনার লাইব্রেরি থেকে একটা বই…”
কথাটা শেষ না হতেই তিনি মাঝখানে ঢুকে বললেন, “জানি, জানি। সেই অদ্ভুত বইটা।”
তিনি একটু থেমে বললেন, “জমিদার বাড়িতে প্রজাদের বিদ্রোহের গল্প প্রচলিত আছে। হয়তো সেই গল্পই কোনো এক সময়ে কেউ ঐ বইয়ের ছবি আঁকার মাধ্যমে লিখে রেখেছিল।”
“কিন্তু, সেই ছবিগুলো কীভাবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করল?” জানতে চাইলাম।
“সেটা জানা কঠিন। হয়তো সেই গল্প শোনানোর জন্যই আপনার হাতে এসেছে বইটা।” লাইব্রেরিয়ানের কথাটা চিন্তায় ফেলে দিল।
“কিন্তু, শেষের ছবিটা?”
“আহ, সেটা…” লাইব্রেরিয়ান হাসলেন, “সেটা হয়তো আপনার কল্পনার ফসল। আপনি জমিদারদের অত্যাচারের গল্প পড়লেন, তারপর গ্রামের মানুষেরা কীভাবে নিজেদের জীবন গড়ে তুলতে পারে, সেটা আপনি কল্পনা করলেন।”
আমি চুপ করে থাকলাম। লাইব্রেরিয়ানের কথাটা কিছুটা যুক্তিযুক্ত ঠেকল। কিন্তু, বইয়ের ফিসফিসানি আর আলোর খেলাটা কীভাবে ব্যাখ্যা করব?
“এইসব রহস্যেরই তো মজা,” লাইব্রেরিয়ান চোখ দুটো মিটিয়ে বললেন, “কখনো কখনো বাস্তব আর কল্পনা এত জড়িয়ে যায় যে, কোনটা কোনোটা বোঝা যায় না।”
তিনি আবার বাঁশি বাজাতে শুরু করলেন। সুরটা মৃদু আর মধুর। হয়তো ঠিকই বলেছেন মি: সেন।
লাইব্রেরিয়ানের কথা আমার মনে গেঁথে গেল। বাস্তব আর কল্পনা, ঠিক কোনটা, সেটা নিয়ে মানসিক লড়াইটা চলতে থাকল। হাতে থাকা বইটা দেখলাম। আগের মতো আর কোনো অদ্ভুত আলো বা ফিসফিসানি নেই। শুধু অসংখ্য ছবি, জমিদারদের অত্যাচার থেকে শুরু করে গ্রামের মানুষের জেগে ওঠা পর্যন্ত গল্প বর্ণনা করে।
লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে আসার সময় মনে হলো, হয়তো বইটা শুধু একটা অলৌকিক ঘটনা নয়। হয়তো এটা ইতিহাসের এক টুকরো, যা হয়তো কোনো লিখিত নথিতে ধরা পড়েনি। কিন্তু, এই অদ্ভুত ছবির মাধ্যমে সেই গল্প বলে গেছে কেউ একজন।
বছরের পর বছর কেটে গেল। জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষের জায়গায় স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে উঠল, ঠিক যেমন দেখেছিলাম বইয়ের শেষের ছবিতে। হয়তো সেটা কল্পনা ছিল, কিন্তু সেই কল্পনাটাই গ্রামের মানুষের স্বপ্নকে জাগিয়ে দিয়েছিল। আর সেই স্বপ্ন পূরণের লড়াইয়েই তারা জিতেছে।
এখনো মাঝে মাঝে ঐ জমিদার বাড়িতে যাই। সেই অদ্ভুত বইটা এখনো সেখানকার লাইব্রেরিতে সযত্নে রাখা আছে। বইয়ের ছবিগুলোর গল্প, লাইব্রেরিয়ানের শেখানো বাঁশির সুর – সবকিছু মিলে জমিদারদের অত্যাচারের অন্ধকার ইতিহাস আর তার বিরুদ্ধে গ্রামের মানুষের জেগে ওঠার আলোকিত গল্প বলে চলেছে।