বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
কলকাতার এক পুরনো বাড়ির ছোট্ট বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিল সোহম রায়। দূর থেকে ট্রামের ঘণ্টার শব্দ আর পাড়ার ছেলেদের ক্রিকেট খেলার আওয়াজ ভেসে আসছিল। ২৭ বছর বয়সী সোহম, প্রতিদিনের মত অফিস থেকে ফিরে চুপচাপ বসেছিল। তার মুখে স্পষ্ট হতাশার ছাপ।
একজন কর্পোরেট কর্মী হিসেবে সে জীবনের রুটিনে আটকে গিয়েছিল। সকাল থেকে রাত অবধি একঘেয়ে কাজ। “এভাবে কি জীবন কাটবে?”—প্রায় প্রতিদিনই এই প্রশ্ন তার মনের মধ্যে ঘুরপাক খেত।
তবে, তার মনের গভীরে একটি স্বপ্ন ছিল। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। এমন কিছু করার যা শুধু তাকে নয়, অনেক মানুষকে উপকৃত করবে।
সেদিন রাতেই, শোয়ার ঘরের টেবিলে বসে একটি খসড়া লিখতে শুরু করে সোহম। তার মাথায় একটা দুর্দান্ত আইডিয়া এসেছে।
“একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করলে কেমন হয়? যেখানে মানুষের জিনতত্ত্ব, জীবনধারা আর পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিকল্পনা দেওয়া যাবে?”
সোহম নিজেই উত্তেজিত হয়ে উঠল। কম্পিউটারের স্ক্রিনে তার পরিকল্পনার খুঁটিনাটি টাইপ করতে করতে মনে হল, “এই আইডিয়াটা যদি সফল হয়, তাহলে শুধু জীবন পাল্টাবে না, মানুষের সুস্থ থাকার ধারণাটাই বদলে যাবে।”
কিন্তু তার মনের উত্তেজনা কিছুক্ষণের মধ্যেই মিইয়ে গেল। “বিনিয়োগ কোথা থেকে আসবে?”
পরের কয়েকদিন ধরে সে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিতে শুরু করল। বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত অনেকের সাথে কথা বলল। কিন্তু কেউ সেভাবে উৎসাহ দেখাল না।
সোহমের মা: “তুই আবার নতুন কি শুরু করতে চাস? চাকরিটাই তো ভালো আছে।”
সোহম: “মা, চাকরিটা ভালো হতে পারে, কিন্তু এটা আমার স্বপ্ন নয়। আমি কিছু করতে চাই।”
তার মা শুধু একবার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
একদিন, লিঙ্কডইনে স্ক্রোল করতে করতে সোহমের চোখে পড়ল অঞ্জলি শর্মার প্রোফাইল। দিল্লির এক বিনিয়োগ সংস্থার ফান্ড ম্যানেজার। তার অভিজ্ঞতা, প্রোফাইলের সারাংশ—সবকিছুই অভিভূত করল সোহমকে।
এক মুহূর্ত ভাবল, “ওনাকে যদি আমার পরিকল্পনাটা শেয়ার করি, তাহলে কেমন হয়?”
সোহম মেসেজ লিখল:
সোহম: “হাই অঞ্জলি ম্যাডাম, আমি সোহম রায়, কলকাতা থেকে। আপনার প্রোফাইল দেখে মুগ্ধ হয়েছি। আমি একটি স্টার্টআপ আইডিয়া নিয়ে কাজ করছি এবং আপনার মত একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ চাই। আশা করি, সময় পেলে একটু কথা বলার সুযোগ দেবেন।”
মেসেজটি পাঠানোর পরে সোহম একটু চিন্তিত হয়ে পড়ল। “এটা কি ঠিক করলাম? ও যদি পাত্তা না দেয়?”
কিন্তু পরের দিনই উত্তর এল।
অঞ্জলি: “হ্যালো সোহম, ধন্যবাদ আপনার মেসেজের জন্য। আপনার আইডিয়া শুনতে আগ্রহী। আগামী সপ্তাহে একটি জুম কলে কথা বলা যেতে পারে।”
সোহমের মন আনন্দে ভরে উঠল।
জুম কলে প্রথমবার দেখা হল অঞ্জলির সাথে। তার ব্যক্তিত্ব ছিল নিখুঁত, আত্মবিশ্বাসী এবং দৃঢ়। কিন্তু তার হাসি যেন সবকিছুকে সহজ করে দিত।
অঞ্জলি: “তাহলে সোহম, আপনার প্ল্যাটফর্মের ধারণাটা আমাকে বোঝান।”
সোহম: “আমার আইডিয়াটা মূলত স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তিকে একত্রিত করে ব্যক্তিগতকৃত সমাধান দেওয়ার জন্য। আমরা জিনতত্ত্ব, জীবনধারা, এবং পরিবেশের তথ্য সংগ্রহ করব এবং কাস্টমাইজড পরিকল্পনা তৈরি করব।”
অঞ্জলি মন দিয়ে শুনলেন। তার মুখে মুগ্ধতার ছাপ স্পষ্ট।
অঞ্জলি: “এটা সত্যিই অভিনব। কিন্তু আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনার মডেল কাজ করবে। বিনিয়োগ আনতে গেলে আপনাকে ডেটা এবং প্রাথমিক গবেষণা দেখাতে হবে।”
সোহম: “সেটা আমি বুঝতে পারছি। আমি এই কাজটা শুরু করার জন্য আপনার গাইডেন্স চাই।”
তাদের পেশাগত আলোচনার মধ্য দিয়ে সম্পর্ক আরও গভীর হতে লাগল। একে অপরের সম্পর্কে জানতে জানতে তারা ধীরে ধীরে বন্ধুত্বের জায়গায় পৌঁছে গেল।
একদিন, অঞ্জলি ফোন করে বলল,
অঞ্জলি: “সোহম, আমি আমাদের সংস্থার বোর্ড মিটিংয়ে আপনার প্রজেক্টের প্রস্তাব রেখেছি। সবাই আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে বিনিয়োগের আগে আপনাকে কিছু প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে হবে।”
সোহম: “অবশ্যই! কারন আপনার সাহায্য আমার জন্য অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ।”
অঞ্জলি হাসল। “আপনার কাজ আর স্বপ্ন দেখে মনে হচ্ছে, আপনি সত্যিই একদিন অনেক বড় কিছু করবেন।”
সোহম সেই হাসিতে কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে রইল।
অঞ্জলির সহযোগিতায় সোহমের স্বপ্ন ধীরে ধীরে বাস্তবের পথে এগোতে থাকে। তবে, তাদের সম্পর্ক এখন শুধু পেশাদারিত্বের গণ্ডিতে আটকে ছিল না। ওরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা সহজ করার জন্য নিজেদেরকে “আপনি” করে সম্বোধন করার বদলে “তুমি” করে কথা বলতে লাগল।
একদিন, একটি দীর্ঘ আলোচনার শেষে সোহম চুপচাপ বলল,
সোহম: “অঞ্জলি, তোমার সাহায্য ছাড়া আমি এতদূর আসতেই পারতাম না।”
অঞ্জলি: “আমাদের পথ তো এখনও অনেক বাকি, সোহম।”
কিন্তু সোহমের মনে অন্য কিছু কথা ভেসে আসছিল। এই গভীর বন্ধুত্বের আড়ালে, সে বুঝতে পারছিল যে সে অঞ্জলির প্রতি ভালোবাসা অনুভব করছে।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - কবিতা আর রঙের মিলন: কবিতা ও রঙের মেলবন্ধনে গড়া এক অসাধারণ প্রেমের গল্প। "রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প"-এর এই অধ্যায়ে অনুভূতি, শিল্প ও ভালোবাসার এক নতুন রূপের সন্ধান পাবেন। প্রেমের শিল্পকর্মে হারিয়ে যান। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
একসাথে কাজ করার গল্প
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
অঞ্জলি শর্মা তার বিনিয়োগ কোম্পানির নীতি অনুযায়ী সোহমের স্টার্টআপে তহবিল ব্যবস্থাপনা এবং পর্যবেক্ষণ পরিচালকের দায়িত্ব নিল। এই সিদ্ধান্ত সোহমের কাছে যেমন এক বড় সুবিধা, তেমনই তাদের পেশাদার সম্পর্কের দিক থেকেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
অফিসে নতুন সদস্যদের জন্য একটি মিটিং আয়োজন করা হয়। সেখানে অঞ্জলি সবার সামনে তার দায়িত্ব ও লক্ষ্য ব্যাখ্যা করল।
অঞ্জলি: “তোমাদের কোম্পানির তহবিলের সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং পর্যবেক্ষণই আমার প্রধান কাজ। আমি আশা করি, আমরা সবাই মিলে এই কোম্পানিকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারব।”
সোহম একটু হাসল। “তুমি থাকলে, আমাদের পথ অনেক সহজ হবে।”
অঞ্জলি তার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার আত্মবিশ্বাসটাই সবচেয়ে বড় জিনিস, সোহম। এটাই তোমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
পরের কয়েক মাসে, তাদের একসঙ্গে কাজের মুহূর্তগুলো তাদের সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেল। প্রতিদিন সকালে তারা একসঙ্গে দিনের কাজের পরিকল্পনা করত। নতুন বিনিয়োগকারীদের সাথে মিটিং থেকে শুরু করে কোম্পানির পণ্যের উন্নয়ন, সব কিছুতেই অঞ্জলি তার অভিজ্ঞতা দিয়ে সোহমকে সাহায্য করত।
একদিন সন্ধ্যায়, কাজ শেষ করে অফিস থেকে বেরোনোর সময় অঞ্জলি বলল, “সোহম, তুমি জানো, তোমার পরিকল্পনার প্রতিটি অংশ কতটা স্বচ্ছ এবং বাস্তবসম্মত। আমি সত্যিই তোমার কাজ দেখে মুগ্ধ।”
সোহম বলল, “তোমার সাহায্য ছাড়া এটা সম্ভব হতো না, অঞ্জলি। আমি সত্যিই ভাগ্যবান যে তুমি আমার জীবনে এসেছ।”
অঞ্জলি একটু হেসে বলল, “এটা শুধু তোমার স্বপ্ন নয়, আমিও এখন এর অংশ।”
সোহমের মুখে সেই হাসির প্রতিফলন পড়ল। কিন্তু তার হৃদয়ে অন্য এক অনুভূতি জাগছিল। সে অনুভব করছিল যে তার জীবনের সব খালি জায়গা যেন ধীরে ধীরে পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
একদিন, লাঞ্চ ব্রেকে তাদের একান্তে কথা বলার সুযোগ হলো।
অঞ্জলি: “তুমি কি জানো, সোহম? আমি যখন দিল্লি থেকে এখানে এলাম, তখনও ভাবিনি যে এমন কোনো প্রজেক্টের অংশ হবো যা এতটা মানবকল্যাণমূলক।”
সোহম: “তাহলে কি সেটা আমার আইডিয়া, না আমার কাজ, যেটা তোমাকে এখানে থাকতে উৎসাহিত করছে?”
অঞ্জলি একটু হেসে বলল, “দুটোই। তবে আরও একটা কারণ আছে।”
সোহম: “কী কারণ?”
অঞ্জলি: “তোমার অনুপ্রেরণার ক্ষমতা। তুমি যেভাবে স্বপ্ন দেখে কাজ করো, সেটা সত্যিই অসাধারণ।”
সোহম কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তার হৃদয়ের গতি যেন বেড়ে গিয়েছিল।
কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝেই তারা নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের কথা শেয়ার করত। অঞ্জলি বলেছিলেন তার দিল্লির ব্যস্ত জীবন, তার পরিবার, তার স্বপ্নের কথা।
অঞ্জলি: “আমার বাবাও একসময় উদ্যোক্তা হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন কখনো পূরণ হয়নি। তাই আমি চাই, যারা এমন স্বপ্ন দেখে, তাদের পাশে দাঁড়াতে।”
সোহম: “তুমি শুধু পাশে দাঁড়াও না, তুমি স্বপ্নটাকে বাস্তবে রূপ দাও।”
এই কথাগুলো একে অপরের প্রতি তাদের ভালোবাসার বীজ বপন করছিল, যদিও তারা নিজেরাই সেটা ঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি।
একদিন, কাজের শেষে, তারা অফিসের ছাদে বসে চা খাচ্ছিল। কলকাতার বাতাসে ছিল হালকা শীতের ছোঁয়া।
অঞ্জলি: “তোমার স্টার্টআপ এখন অনেক ভালো করছে, সোহম। কিন্তু তুমি কি জানো, এটা শুধু ব্যবসার জন্য নয়, মানুষের জীবনে সত্যিই একটা বড় পরিবর্তন আনবে।”
সোহম: “তোমার মতো কেউ থাকলে, কোনো স্বপ্নই অসম্ভব নয়।”
অঞ্জলি একটু অবাক হয়ে তার দিকে তাকালেন। তার চোখে ছিল এক অদ্ভুত দৃষ্টি।
অঞ্জলি: “তুমি সত্যিই আমাকে খুব বিশেষভাবে দেখতে শেখাচ্ছ, সোহম।”
সোহম অনুভব করল, তার মনের কথা বলার সময় এসেছে। কিন্তু সে সাহস করতে পারল না।
তাদের সম্পর্ক পেশাগত সীমা ছাড়িয়ে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতায় পরিণত হচ্ছিল। তারা একে অপরের প্রতি ক্রমশ নির্ভরশীল হয়ে উঠছিল। সোহম বুঝতে পারছিল, অঞ্জলির প্রতি তার ভালোবাসা শুধু একটি অনুভূতি নয়, বরং তার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।
একদিন, অফিসের কাজ শেষ করার পরে, সোহম তার মনের কথা বলার জন্য প্রস্তুত হলো। কিন্তু সেই মুহূর্তে অঞ্জলি বলল, “সোহম, আমি চাই, তুমি তোমার স্বপ্নের পথে আরও এগিয়ে যাও। আমি সবসময় তোমার পাশে আছি।”
এই কথাগুলো সোহমকে আরও উৎসাহিত করল। সে জানত, অঞ্জলি শুধু একজন বিনিয়োগকারী নয়; সে এমন একজন ব্যক্তি, যার কারণে তার জীবনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।
রঞ্জনার প্রবেশ
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
সোহমের স্টার্টআপ ক্রমেই সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। তবে, এক বছরের মাথায় তাদের নতুন তহবিলের প্রয়োজন দেখা দিল। সোহম জানত, এই মুহূর্তে আরও অর্থায়ন ছাড়া তার প্রকল্প থমকে যেতে পারে। নতুন বিনিয়োগকারীর সন্ধান শুরু করতেই পরিচয় হলো রঞ্জনা বিশ্বাসের সাথে।
রঞ্জনা বিশ্বাস—মাত্র ২৫ বছর বয়সেই তিনি তার বাবার কোম্পানি, “আরএস ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড,” সাফল্যের সাথে পরিচালনা করছেন। বাবার মৃত্যুর পর থেকে তিনি তার ব্যবসাকে আরও উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। রঞ্জনা ছিলেন আত্মবিশ্বাসী, কৌশলী, এবং অসম্ভব রকমের প্রভাবশালী।
একদিন সকালে, সোহম এবং রঞ্জনার প্রথম মিটিং হলো একটি বিলাসবহুল রেস্টুরেন্টে।
রঞ্জনা: “আপনার প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে আমি বেশ আগ্রহী, মিস্টার রায়। মানুষের স্বাস্থ্য এবং জিনতত্ত্ব নিয়ে কাজ করার এমন আইডিয়া সত্যিই প্রশংসনীয়।”
সোহম: “ধন্যবাদ, মিস বিশ্বাস। তবে এই ধারণা বাস্তবে রূপ দিতে হলে আমাদের আরও বড় মাপের সহায়তা প্রয়োজন। আমি নিশ্চিত, আপনার সংস্থার সাথে কাজ করতে পারলে আমরা একসাথে বড় কিছু করতে পারব।”
রঞ্জনা মুচকি হেসে বললেন, “আমার মনে হয়, আমাদের আরও কিছু মিটিং দরকার এই বিষয়ে। আপনি কবে আবার সময় দিতে পারবেন?”
সোহম একটু ইতস্তত করলেও বুঝতে পারল, রঞ্জনার মতো একজন বিনিয়োগকারী তার কোম্পানির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সে সময় বের করে পরের সপ্তাহেই আরেকটি মিটিং ঠিক করল।
এই মিটিংয়ের খবর যখন অঞ্জলি শুনল, তখন তার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল।
অঞ্জলি: “কে এই রঞ্জনা? আর তার সাথে এত ঘন ঘন মিটিংয়ের দরকার কী?”
সোহম: “অঞ্জলি, এটা শুধুই ব্যবসায়িক সম্পর্ক। রঞ্জনা আমাদের কোম্পানির জন্য বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তুমি তো জানো, আমাদের এই মুহূর্তে তহবিল কতটা জরুরি।”
অঞ্জলি: “আমি বুঝি, কিন্তু তুমি কি নিশ্চিত যে এটা শুধুই ব্যবসার জন্য? তার মনোভাব কিন্তু অন্যরকম মনে হচ্ছে।”
অঞ্জলির কথা শুনে সোহম হতবাক হল। সে বলল, “তুমি কী বলতে চাইছ? আমি আমার স্বপ্নের জন্য কাজ করছি। এটাকে ব্যক্তিগত কিছু মনে করো না, প্লিজ।” অঞ্জলি চুপ হয়ে গেল, কিন্তু তার মনে সন্দেহ ক্রমশ বাড়ছিল।
পরের কয়েক সপ্তাহে, রঞ্জনার সাথে সোহমের মিটিং চলতে লাগল। তারা একসঙ্গে কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে গভীর আলোচনা করত। রঞ্জনার আত্মবিশ্বাসী আচরণ এবং সোহমের প্রতি তার বিশেষ মনোযোগ অঞ্জলিকে আরও চিন্তিত করে তুলল।
একদিন অফিসে, সোহম এবং অঞ্জলির মধ্যে কথা কাটাকাটি হলো।
অঞ্জলি: “তুমি বুঝতে পারছো না, সোহম? রঞ্জনা শুধু বিনিয়োগ করার জন্য এখানে নেই। সে তোমার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়তে চায়।”
সোহম: “তুমি এটা কীভাবে বলতে পারো? এটা কেবল তোমার ধারণা। আমাদের স্বপ্নের জন্য আমি যা করছি, তাতে কেন তুমি বাধা দিচ্ছ?”
অঞ্জলি: “কারণ আমি তোমাকে হারাতে চাই না। আমি… আমি তোমার উপর ভরসা করি, কিন্তু রঞ্জনার প্রতি আমার ভরসা নেই।”
সোহম এই কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে রইল। সে বুঝতে পারছিল, তাদের সম্পর্কের মধ্যে একটি অদ্ভুত দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।
রঞ্জনাও তার মনের কথা চাপা রাখতে পারছিলেন না। একদিন মিটিং শেষে, তিনি সরাসরি সোহমকে বললেন, “সোহম, আমি তোমার কাজের ভীষণ ভক্ত। কিন্তু আমি চাই, আমরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানি।”
সোহম: “আপনার কথার অর্থ কী, রঞ্জনা?”
রঞ্জনা: “আমি বলতে চাইছি, শুধু ব্যবসা নয়, ব্যক্তিগতভাবেও আমরা যদি কাছাকাছি আসি, তাহলে আমাদের কাজ আরও মসৃণ হবে।”
সোহম অস্বস্তিতে পড়ল। তারপর বলল, “আমার জন্য কাজই প্রথম। আমি এই মুহূর্তে অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে চাই না।” রঞ্জনা একটু হতাশ হলেও হাল ছাড়লেন না। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সোহমের মন পেতে সময় লাগবে।
অঞ্জলি যখন জানতে পারল, রঞ্জনা সোহমের প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখাচ্ছেন, তখন তার ক্রোধ আর হতাশা মিলেমিশে গেল।
অঞ্জলি: “তুমি কি সত্যিই বুঝতে পারছো না, সোহম? সে শুধু বিনিয়োগকারী নয়। তার উদ্দেশ্য স্পষ্ট।” সোহম: “তাহলে কী করব আমি? আমাদের কোম্পানির ভবিষ্যৎ কি আমি শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে নষ্ট হতে দেব?”
অঞ্জলি হতাশ হয়ে বলল, “তুমি যদি আমাকে সত্যিই মূল্য দাও, তবে বুঝতে চেষ্টা করো। আমি শুধু তোমার পেশাগত সঙ্গী নই, আমি…” সে বাক্যটি শেষ করতে পারল না।
সন্দেহের বীজ
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
সোহম, অঞ্জলি এবং রঞ্জনার সম্পর্ক যেন এক অদৃশ্য সূতোয় বাঁধা। তবে সেই সূতোয় জট পড়তে শুরু করেছিল। রঞ্জনার উপস্থিতি সোহম এবং অঞ্জলির সম্পর্কের মধ্যে অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলছিল।
অঞ্জলি আর নিজেকে সামলাতে পারছিল না। এক সন্ধ্যায় অফিসে কাজ শেষ হওয়ার পর সোহমের কাছে সরাসরি প্রশ্ন করল, “তুমি কি বুঝতে পারছো না, সোহম? রঞ্জনা তোমার প্রতি ব্যক্তিগত আকর্ষণ দেখাচ্ছে। এটা কি তুমি সত্যিই লক্ষ্য করোনি?”
সোহম এক গভীর শ্বাস ফেলে বলল, “অঞ্জলি, তুমি কেন এমন ভাবছো? এটা শুধুই পেশাগত সম্পর্ক। রঞ্জনা আমাদের প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। এতে সন্দেহের কী আছে?”
অঞ্জলি: “তোমার চোখে এটা শুধু পেশাগত সম্পর্ক হতে পারে, কিন্তু রঞ্জনার দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই আলাদা। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।”
সোহম একটু বিরক্ত হয়ে বলল, “তুমি কি আমার উপর আর ভরসা রাখতে পারছ না? আমি তো কখনও তোমার প্রতি অবিশ্বাস দেখাইনি।” অঞ্জলি হতাশ গলায় বলল, “বিশ্বাস আর বাস্তবতা দুটো আলাদা বিষয়, সোহম। আমি শুধু চাই, তুমি বুঝতে পারো রঞ্জনার উদ্দেশ্য কী।”
এদিকে, রঞ্জনা তার নিজের অনুভূতিগুলোর সঙ্গে লড়াই করছিলেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন, সোহমের প্রতি তার মুগ্ধতা ক্রমশ ভালোবাসায় পরিণত হচ্ছে।
একদিন, সোহমের সাথে একটি মিটিংয়ের পর, রঞ্জনা সরাসরি বললেন, “সোহম, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। আমি তোমার কাজের প্রতি ভীষণ অনুরক্ত। কিন্তু তার থেকেও বেশি, আমি… তোমাকে ভীষণ পছন্দ করি।”
সোহম হতভম্ব হয়ে গেল।
সোহম: “রঞ্জনা, আমি… আমি এমন কিছু ভাবিনি। তুমি জানো, আমি শুধুই আমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত।”
রঞ্জনা হাসি চাপার চেষ্টা করেও বললেন, “আমি জানি, তুমি এখন হয়তো ভাবতে পারছো না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, সময় সবকিছু বদলে দিতে পারে।”
অঞ্জলি যখন এই কথা জানতে পারল, তখন তার ক্রোধের সীমা রইল না। সে বুঝতে পারছিল, রঞ্জনা কেবল সোহমের ব্যবসায়িক সঙ্গী হিসেবে সন্তুষ্ট নন।
রঞ্জনা নিজের পরিকল্পনা আরও স্পষ্ট করতে এগিয়ে গেলেন। তিনি তার কোম্পানির আর্থিক শক্তি ব্যবহার করে অঞ্জলির বিনিয়োগ কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য একটি প্রস্তাব তৈরি করলেন।
এক মিটিংয়ে, রঞ্জনা বললেন,
রঞ্জনা: “মিস শর্মা, আমি আপনার কোম্পানির শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিচ্ছি। এতে আপনার জন্যও লাভ এবং আমার জন্যও।”
অঞ্জলি রাগ চেপে বলল, “আপনার প্রস্তাব আমি আপাতত বিবেচনা করব। তবে মনে রাখবেন, আমি সোহমের স্বপ্নের অংশ। এই সম্পর্ক শুধু ব্যবসায়িক নয়।
রঞ্জনা মুচকি হেসে বললেন, “ব্যবসা আর ব্যক্তিগত জীবন মাঝে মাঝে মিশে যায়, মিস শর্মা। সময়ই বলে দেবে কে কোথায় থাকবে।”
এই পরিস্থিতির মধ্যে সোহম ক্রমশ অস্বস্তিতে পড়ছিল। সে বুঝতে পারছিল, রঞ্জনার প্রতি অঞ্জলির সন্দেহ অমূলক নয়। তবে রঞ্জনার প্রভাব এবং কোম্পানির জন্য তার অবদানও অস্বীকার করা সম্ভব ছিল না।
এক রাতে, সোহম নিজেকে প্রশ্ন করল, “আমি কী করছি? আমার স্বপ্ন কি অঞ্জলির সঙ্গে আমার সম্পর্কের চেয়ে বড়? রঞ্জনার প্রতি কি আমার কোনো অনুভূতি জন্মাচ্ছে?”
তবে সে জানত, যে সিদ্ধান্তই নেবে, সেটি তার ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনকে চিরতরে বদলে দেবে।
একদিন, একটি মিটিংয়ে সোহম, অঞ্জলি এবং রঞ্জনা আবার সরাসরি একে অপরের মুখোমুখি হল।
অঞ্জলি: “সোহমের স্বপ্ন নিয়ে কাজ করা আমার প্রথম দিন থেকেই শুরু। আমি কখনও এই সম্পর্ককে শুধু ব্যবসায়িকভাবে দেখিনি।”
রঞ্জনা: “আমি এটা বুঝি, কিন্তু সোহমের স্বপ্নকে বড় করতে হলে আরও বড় পদক্ষেপ নিতে হবে। আর আমি সেই সুযোগ দিতে চাই।”
সোহম বলল, “দুজনেই থামো। আমার জন্য তোমাদের মধ্যে কোনো লড়াই হোক, এটা আমি চাই না।”
অঞ্জলি সোহমের দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি বুঝতে পারছো না, সোহম? এই লড়াই শুধু তোমার স্বপ্নের জন্য নয়, তোমার জন্য।”
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - পুরনো বাড়ির নতুন স্বপ্ন: এই রোমান্টিক বাংলা গল্পে, স্নেহা বিদেশ থেকে ফিরে এসে কলকাতায় নিজেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করে। দুর্গাপূজার সময় অভিজিতের সাথে দেখা তার জীবনে নতুন আশার আলো জাগিয়ে তোলে। শহরের প্রতি ভালোবাসা এবং অভিজিতের সঙ্গ তাকে তার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
দ্বিধার দোলাচল
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
সোহমের জীবন যেন এক অসম্ভব সমীকরণের মতো জটিল হয়ে উঠেছিল। একদিকে ছিল অঞ্জলির সততা, তার প্রতি অবিচল ভালোবাসা, এবং সোহমের স্বপ্ন গড়তে তার অবদান। অন্যদিকে, রঞ্জনার প্রভাবশালী উপস্থিতি, সাহসী ব্যক্তিত্ব এবং অপ্রকাশিত ভালোবাসার প্রকাশ।
এক সন্ধ্যায়, অফিসের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে, সোহম ভাবতে শুরু করল। শহরের আলোর মেলা তার চোখে পড়লেও মনের অন্ধকার তাকে আচ্ছন্ন করেছিল। সে মনে মনে বলল,
“আমার জীবনের লক্ষ্য শুধুই এই স্টার্টআপ নয়। আমি কি আমার হৃদয়কে অগ্রাহ্য করে চলতে পারি? যদি অঞ্জলি আমার পাশে থাকে, তাহলে কি আমার স্বপ্ন পূরণ করা সহজ হবে না?”
সে বুঝতে পারল, রঞ্জনার প্রতি তার সম্মান থাকা সত্ত্বেও, অঞ্জলির প্রতি তার ভালোবাসা গভীর এবং প্রকৃত।
সোহম দ্রুতই একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাল। সে রঞ্জনার শেয়ার কিনে নিয়ে তাকে কোম্পানি থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করল। কিন্তু এটি সহজ ছিল না। রঞ্জনার মতো শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক চ্যালেঞ্জ ছিল।
একদিন রাতে, সে অঞ্জলিকে ফোন করল।
সোহম: “অঞ্জলি, আমি ভাবছি রঞ্জনাকে কোম্পানি থেকে সরিয়ে দেব। আমি নতুন বিনিয়োগকারীর খোঁজ শুরু করেছি।”
অঞ্জলি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “তুমি কি নিশ্চিত, সোহম? এটা একটা বড় পদক্ষেপ। কিন্তু যদি তুমি মনে করো, এটাই সঠিক, তাহলে আমি তোমার পাশে আছি।”
অঞ্জলির কণ্ঠে ভরসা ছিল, যা সোহমের মনোবল আরও বাড়িয়ে দিল।
যখন রঞ্জনা জানতে পারলেন যে সোহম নতুন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন, তখন তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন। তিনি সোহমের অফিসে এসে বললেন, “তুমি কি আমার প্রতি এতটাই নির্দয় যে আমার অবদান ভুলে গেলে? আমি তো তোমার স্বপ্নে বিনিয়োগ করেছি, সোহম।”
সোহম শান্ত গলায় বলল, “তোমার অবদান আমি কখনও ভুলব না, রঞ্জনা। কিন্তু এই কোম্পানিকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের আলাদা পথে চলতে হবে। আমি চাই না, আমাদের ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলো ব্যবসায়ের উপর প্রভাব ফেলুক।”
রঞ্জনা তিক্ত হেসে বললেন, “তুমি হয়তো আমাকে কোম্পানি থেকে সরিয়ে দিতে পারো, কিন্তু আমার হৃদয়ে তোমার জায়গা মুছতে পারবে না।”
রঞ্জনার শেয়ার কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর, সোহম যেন এক নতুন স্বস্তির অনুভূতি পেল। সে অঞ্জলিকে অফিসে ডেকে পাঠাল।
সোহম: “অঞ্জলি, আমি যা করেছি তা শুধু আমাদের সম্পর্কের জন্য নয়, বরং আমার স্বপ্নকে সঠিক পথে রাখার জন্য। আমি চাই, তুমি আমার পাশে থাকো।”
অঞ্জলির চোখে জল চলে এল। সে বলল, “তোমার স্বপ্নের প্রতি তোমার ভালোবাসা এবং আমার প্রতি তোমার বিশ্বাস, দুটোই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমি সবসময় তোমার পাশে থাকব, সোহম।”
সোহম এবং অঞ্জলি একসঙ্গে তাদের স্টার্টআপকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকল। তাদের সম্পর্ক এখন আগের চেয়ে আরও দৃঢ়। যদিও রঞ্জনা তাদের জীবনে ঝড় তুলেছিলেন, সেই ঝড় তাদের বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করে দিয়েছে।
অফিসে একদিন, অঞ্জলি বলল, “সোহম, আমি কখনও ভাবিনি যে তুমি এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।” সোহম মৃদু হাসি দিয়ে বলল, “হৃদয়ের কথা শুনতে সাহস লাগে, অঞ্জলি। আর তোমার সঙ্গে থাকলে আমি সেই সাহস পাই।”
সত্যিকারের প্রেমের প্রকাশ
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
রঞ্জনার জীবনে থেকে সরে যাওয়া যেন সোহম এবং অঞ্জলির জন্য নতুন সূর্যের উদয় নিয়ে এল। স্টার্টআপের কাজ ঠিকঠাক চলছে, কিন্তু সোহমের মন যেন এক অদ্ভুত আবেগে ভরে ছিল। সে অনুভব করল, যতবার সে সফলতার দিকে এক পা বাড়িয়েছে, ততবার তার পাশে অঞ্জলিকে পেয়েছে।
এক সন্ধ্যায়, কাজ শেষ করে সোহম অঞ্জলিকে বলল, “আজ একটু সময় হবে? আমি তোমার সঙ্গে কোথাও যেতে চাই।” অঞ্জলি চমকে বলল, “কোথায়?” সোহম মুচকি হেসে বলল, “তুমি এলে বুঝবে।”
তারা কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে এসে দাঁড়াল। সন্ধ্যার আলো আর নরম বাতাস পরিবেশকে যেন আরও রোম্যান্টিক করে তুলেছিল।
অঞ্জলি: “তুমি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এলে, সোহম?”
সোহম গভীর চোখে তাকিয়ে বলল, “অঞ্জলি, এই জায়গাটা আমার কাছে বিশেষ। ছোটবেলায় আমি এখানেই আসতাম। আজও আমি কিছু বলতে চাই, যা অনেকদিন ধরে বলতে পারিনি।”
অঞ্জলি তার চোখে মায়াময় দৃষ্টি নিয়ে বলল, “কি বলতে চাও, সোহম?”
সোহম ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে অঞ্জলির হাত ধরল। তার গলার স্বর থরথর করছিল। “অঞ্জলি, তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমার সব স্বপ্ন, সব সাফল্য—সবকিছু তোমার জন্যই সম্ভব হয়েছে। তুমি শুধু আমার ব্যবসায়িক অংশীদার নও; তুমি আমার হৃদয়ের সঙ্গী। আমি তোমাকে ভালোবাসি, অঞ্জলি।”
অঞ্জলি চমকে গেল। তার হৃদয় যেন এক মুহূর্তে দমবন্ধ হয়ে এল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে বলল, “সোহম, এটা খুব আকস্মিক… আমি জানি না কী বলব।”
সোহম কিছুটা ব্যাকুল হয়ে বলল, “আমি জানি, এটা তোমার জন্য সহজ নয়। কিন্তু আমি চাই তুমি জানো, তুমি ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ। আমি তোমাকে নিয়ে সবকিছু গড়তে চাই, অঞ্জলি। শুধু কাজ নয়, আমাদের জীবনও।”
অঞ্জলি কিছুক্ষণ দূরে তাকিয়ে রইল। তার মনের মধ্যে এক অদ্ভুত দ্বিধা কাজ করছিল। সে জানত, সোহমের প্রতি তার ভালোবাসা ধীরে ধীরে গভীর হয়েছে। কিন্তু তার পেশাদার জীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে এই মেলবন্ধন তাকে কিছুটা সংশয়ে ফেলছিল।
সে নরম স্বরে বলল, “সোহম, আমি তোমার অনুভূতিকে সম্মান করি। কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি, আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক যদি আমাদের কাজের উপর প্রভাব ফেলে?”
সোহম এক পা এগিয়ে এসে বলল, “আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, অঞ্জলি। আমাদের কাজ এবং সম্পর্ক আলাদা থাকবে। কিন্তু আমার হৃদয়ের কথা আমি লুকিয়ে রাখতে পারলাম না। যদি তুমি মনে করো, আমি এই সম্পর্কের যোগ্য, তবে আমাকে তোমার পাশে থাকার সুযোগ দাও।”
অঞ্জলি তার চোখে জল নিয়ে বলল, “তোমার আন্তরিকতায় আমি কখনও সন্দেহ করিনি, সোহম। তোমার সাহস আমাকে অভিভূত করেছে। আমিও তোমাকে ভালোবাসি, কিন্তু সেটা বোঝার জন্য আমার সময় লেগেছে।”
তাদের কথোপকথনের মাঝে হালকা বৃষ্টি শুরু হলো। ভিক্টোরিয়ার আলো এবং বৃষ্টির ফোঁটায় পরিবেশ যেন আরও মায়াময় হয়ে উঠল। সোহম তার ছাতাটি অঞ্জলির দিকে বাড়িয়ে দিল।
সোহম: “তোমার জন্য এটা ধরে রাখছি।”
অঞ্জলি: “তোমার জন্য কে ধরবে?”
সোহম হাসল, “তুমি থাকলে আর কিছু চাই না।” তারা ছাতার নিচে একসঙ্গে হাঁটতে শুরু করল। মনে হচ্ছিল, তাদের সম্পর্কের সমস্ত বাধা এখন পেরিয়ে গেছে।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - অব্যক্ত সুর: এই রোমান্টিক বাংলা গল্পে রিয়া ও আয়ানের প্রেমের গল্প, যেখানে গান ও আঁকার সুর তাদের জীবনকে এক অপূর্ব মাত্রা দেয়। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
সুখের সমাপ্তি
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
সোহম এবং অঞ্জলির সম্পর্ক এক নতুন অধ্যায়ে পা রাখল। রঞ্জনার বিদায় এবং তাদের হৃদয়ের স্পষ্টতা তাদের জীবনে এক নতুন আলোর সূচনা করেছিল। স্টার্টআপ ক্রমাগত সাফল্যের দিকে এগোচ্ছিল, কিন্তু এবার শুধু ব্যবসায়িক সাফল্যের উপর নির্ভর ছিল না তাদের জীবন।
এক রবিবার সকাল। দক্ষিণের ঠান্ডা হাওয়া জানলা দিয়ে ঢুকে পড়েছে। সোহম চা বানাচ্ছে, আর ডাইনিং টেবিলে বসে থাকা অঞ্জলি কিছু কাজের নোট লিখছে। তাদের এই সাধারণ সকাল যেন অসাধারণ হয়ে উঠেছে একে অপরের উপস্থিতিতে।
সোহম (চায়ের কাপ হাতে): “এই, তোমার চা। জানো, আমি ভাবতাম, চা বানানোর সময় শুধু স্টার্টআপ আইডিয়া মাথায় আসে। কিন্তু এখন মনে হয়, তোমাকে খুশি করার জন্য চা বানানোও একটা সেরা আইডিয়া।”
অঞ্জলি (হেসে): “তুমি তো এখন পুরো রোমান্টিক ডায়ালগ দিতে শিখে গেছো। কিন্তু এটা কাজে দেবে না। আজ বিকেলের প্ল্যান তোমাকেই ঠিক করতে হবে।”
সোহম: “ঠিক আছে। আজ আমাদের একটা ছোট্ট সেলিব্রেশন হবে। এই যে তুমি আমার জীবনে, সেটা সেলিব্রেট করতে হবে না?”
অঞ্জলি (তার দিকে মিষ্টি হাসি ছুঁড়ে): “সেলিব্রেট করতে গেলে তো চিরকাল লেগে যাবে।”
বিকেলে তারা শহরের বাইরে একটি ছোট্ট ক্যাফেতে গেল। রাস্তায় গাড়িতে করে যাওয়ার সময়, অঞ্জলি সোহমকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার মনে পড়ে, কিভাবে আমরা প্রথমে শুধু বিনিয়োগ আর ব্যবসার কথা বলতাম?”
সোহম (হাসতে হাসতে): “হ্যাঁ, তখন আমি ভাবতাম, তুমি খুব কঠোর এবং প্রফেশনাল। কিন্তু এখন জানি, সেই কঠোরতার আড়ালে এক অদ্ভুত কোমলতা লুকিয়ে ছিল।”
অঞ্জলি: “আর আমি ভাবতাম, তুমি শুধুই স্বপ্নবাজ। কিন্তু এখন বুঝি, সেই স্বপ্নের পেছনে কতটা শ্রম লুকিয়ে ছিল।”
ক্যাফের টেবিলে বসে তারা একে অপরের সঙ্গে নিজেদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ভাগ করে নিতে শুরু করল।
সোহম: “আমি চাই, আমাদের এই প্ল্যাটফর্ম আরও বড় হোক। আরও অনেক মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনুক। কিন্তু আমি চাই, এই যাত্রায় তুমি সবসময় পাশে থাকো।”
অঞ্জলি (তার হাত ধরে): “আমি তো সবসময়ই আছি। তোমার স্বপ্ন আমারও স্বপ্ন। আমরা একসঙ্গে সবটা করব।”
সন্ধ্যায়, তারা ফিরে এল একটি বিশেষ জায়গায়—ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। সেই জায়গা, যেখানে সোহম তার ভালোবাসার কথা প্রথমবার প্রকাশ করেছিল। আজ সেখানে এক ভিন্ন পরিবেশ। মোমবাতির আলো, নরম সঙ্গীত, আর তাদের দু’জনের মধ্যকার গভীর ভালোবাসা।
সোহম: “অঞ্জলি, তোমার সঙ্গে এই যাত্রা শুরু করে আমি বুঝেছি, ভালোবাসা শুধু একটা অনুভূতি নয়; এটা একটা জীবনধারা। তুমি আমাকে দেখিয়েছো, কিভাবে ভালোবাসা জীবনকে বদলে দিতে পারে। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমি সবসময় তোমার পাশে থাকব।”
অঞ্জলি (চোখে জল নিয়ে): “তুমি আমার জীবনের সেই মানুষ, যার জন্য আমি সবকিছু ছেড়ে নতুন করে শুরু করতে পারি। আমি তোমাকে ভালোবাসি, সোহম।”
সোহম তার হাতে একটি ছোট্ট বাক্স তুলে দিল। ভেতরে একটি নীল রঙের আংটি।
সোহম (মুচকি হেসে): “এই আংটি শুধু আমাদের ভালোবাসার প্রতীক নয়, আমাদের একসঙ্গে থাকার প্রতিজ্ঞারও প্রতীক।”
অঞ্জলি আংটিটি হাতে পড়ল, আর তার চোখে আনন্দের জল ঝরতে লাগল।
পরবর্তী কয়েক মাসে, তাদের স্টার্টআপ আরও সফল হয়। সোহম এবং অঞ্জলি শুধু ব্যবসায়িক অংশীদার নয়, একে অপরের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। তারা বুঝতে পারে, তাদের ভালোবাসা শুধু তাদের ব্যক্তিগত জীবনের নয়, তাদের স্বপ্নেরও ভিত্তি।
একদিন সন্ধ্যায়, বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে অঞ্জলি বলল, “তুমি কি জানো, সোহম? আমি কখনও ভাবিনি, ভালোবাসা এতটা শক্তিশালী হতে পারে।”
সোহম (তার দিকে তাকিয়ে): “তুমি আমায় দেখিয়েছো, স্বপ্নের চেয়েও বড় কিছু আছে—ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসা দিয়েই আমরা সবকিছু পারব।”