কবিতা ও রঙের মেলবন্ধনে গড়া এক অসাধারণ প্রেমের গল্প। রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প-এর এই অধ্যায়ে অনুভূতি, শিল্প ও ভালোবাসার এক নতুন রূপের সন্ধান পাবেন। মনমুগ্ধকর অডিও স্টোরির সহযোগে প্রেমের শিল্পকর্মে হারিয়ে যান।

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » কবিতা আর রঙের মিলন

কবিতা আর রঙের মিলন

কবিতা ও রঙের মেলবন্ধনে গড়া এক অসাধারণ প্রেমের গল্প। রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প-এর এই অধ্যায়ে অনুভূতি, শিল্প ও ভালোবাসার এক নতুন রূপের সন্ধান পাবেন। মনমুগ্ধকর অডিও স্টোরির সহযোগে প্রেমের শিল্পকর্মে হারিয়ে যান।

আমাদের WA চ্যানেল জয়েন করুন

এই মাসের সেরা রোমান্টিক ছোট গল্প, পড়ুন ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন – পুনঃবিচ্ছেদ

রচনা - সুরজিৎ রায়     ||     গল্প পাঠে  - বিশ্বজিৎ বিশ্বাস এবং সুপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়     ||     আবহ, শব্দগ্রহন ও সম্পাদনা - বিশ্বজিৎ বিশ্বাস     ||     ষ্টুডিও - কাহানি ষ্টুডিও'জ

প্রথম অধ্যায়: আর্ট পার্টির সাক্ষাৎ

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

কলকাতার এক নরম গোধূলি সন্ধ্যা। শহরের অভিজাত এলাকা পার্ক স্ট্রিটের একটি সুসজ্জিত আর্ট গ্যালারিতে আজ শিল্প প্রদর্শনী। আলোর ঝলকানিতে ভরা গ্যালারিটি নানা ধরনের চিত্রকর্মে সজ্জিত, প্রতিটি ছবি যেন একেকটি গল্প বলে। এখানে উপস্থিত ছিলেন শহরের শিল্পপ্রেমী ও গুণী ব্যক্তিরা, কিন্তু তাঁদের মধ্যে অনন্যা সেন ছিল একেবারে অনন্য।

অনন্যা একজন প্রতিভাবান কবি। তার কবিতায় জীবনের গভীরতা, সুখ-দুঃখ, আর অনুভূতির রঙ মিশে থাকে। আজ সে এসেছে এই প্রদর্শনীতে একটু ভিন্ন রকমের অনুপ্রেরণা খুঁজতে। তার লেখায় চিত্রকলার মায়াবী প্রভাব ছিল, তাই শিল্পকর্মের প্রতি টান ছিল তার অনেক দিনের।  

গ্যালারির ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সে হঠাৎ থমকে দাঁড়াল। একটি চিত্র তাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো টেনে নিল। ছবিটিতে গোধূলির আলোয় একটি নদী, নদীর উপর ভাসমান নৌকা আর তার ওপরে রঙিন আকাশের ছোঁয়া। প্রতিটি রঙ এমনভাবে মিশে গেছে যে দেখে মনে হয়, নদী যেন বেঁচে উঠেছে। ছবির নিচে লেখা ছিল একটি নাম—রাজীব দত্ত

ছবির সামনে দাঁড়িয়ে সে হারিয়ে গেল নিজের কল্পনার জগতে। নদীর নিঃশব্দ বয়ে চলা যেন জীবনের এক গভীর গল্প বলছিল। ছবির রঙে মিশে ছিল কষ্ট, আশা, আর একধরনের অদ্ভুত শান্তি।  

“ছবিটা পছন্দ হয়েছে?”  

একটি কোমল, গভীর কণ্ঠস্বর তার ধ্যান ভেঙে দিল।  

অনন্যা ঘুরে দেখল, তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে একজন শান্ত প্রকৃতির মানুষ। তার চোখে ছিল এক গভীরতা, যা একঝলকেই মনে হয়, সে একজন জটিল অথচ নির্লিপ্ত আত্মা।  

“অসাধারণ! যেন রংগুলো একটা না বলা গল্প বলে যাচ্ছে,” অনন্যা তার মুগ্ধতা গোপন করতে পারল না।  

রাজীব মৃদু হাসল। “শিল্পের সৌন্দর্য এখানেই, নিজের গল্প খুঁজে নেওয়ার সুযোগ দেয়।”  

অনন্যার মনে হলো, এই কথাটি যেন তার মনের গভীর কোনো উপলব্ধিকে ছুঁয়ে গেল।  

“আপনার কাজ সত্যিই অনন্য।”  

“ধন্যবাদ,” রাজীব বিনয়ী স্বরে বললেন। “তবে এটা কেবল আমার কল্পনার প্রতিফলন।” তারপর রাজীব প্রশ্ন করল, “আপনিও শিল্পের সাথে যুক্ত?”  

“আমি কবিতা লিখি,” অনন্যা একটু লজ্জা পেলেও উত্তর দিল। “আমার লেখায় মাঝে মাঝে রঙের মায়া খুঁজে পাই।”  

“তাহলে আমরা দুই শিল্পী, কিন্তু দুই ভিন্ন জগতে।” রাজীবের ঠোঁটে আবারও সেই মৃদু হাসি।  

তাদের কথোপকথন শুরু হয়, আর যেন থামতেই চায় না। রাজীবের শান্ত, নির্লিপ্ত স্বভাব এবং অনন্যার আবেগময় ব্যক্তিত্ব মিলে এমন একটি যোগাযোগ তৈরি করল, যা এক সন্ধ্যাতেই এক গভীর বন্ধনের রূপ নিল।  

অনন্যা দেখল, রাজীব খুব বেশি কথা বলে না, কিন্তু তার প্রতিটি বাক্যে যেন লুকিয়ে থাকে গভীর অর্থ। আর রাজীবের কাছে অনন্যার খোলামেলা, আবেগপ্রবণ প্রকৃতি ছিল এক অন্যরকম আকর্ষণ।  

সেই সন্ধ্যার শেষে, যখন প্রদর্শনী শেষ হয়ে যায়, অনন্যা অনুভব করে এক অদ্ভুত টান। রাজীবের এই নির্লিপ্ত সৌন্দর্য আর গভীরতা যেন তার মনের এক ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে শুরু করেছে। কিন্তু সে নিজের অনুভূতিকে প্রকাশ করার সাহস পায় না।  

রাজীব, নিজের মতো করেই, সেই মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখে। তার জন্য এটি ছিল এক অদ্ভুত সন্ধ্যা, যখন প্রথমবারের মতো তার ছবির দর্শক কেবল মুগ্ধ হননি, তার অন্তর্দৃষ্টিকে বুঝতেও চেষ্টা করেছিল।

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - পুরনো বাড়ির নতুন স্বপ্ন: এই রোমান্টিক বাংলা গল্পে, স্নেহা বিদেশ থেকে ফিরে এসে কলকাতায় নিজেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করে। দুর্গাপূজার সময় অভিজিতের সাথে দেখা তার জীবনে নতুন আশার আলো জাগিয়ে তোলে। শহরের প্রতি ভালোবাসা এবং অভিজিতের সঙ্গ তাকে তার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। সম্পুর্ন বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

দ্বিতীয় অধ্যায়: অনুভবের শুরু

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

কলকাতার সেই শিল্প প্রদর্শনীর সন্ধ্যার পর থেকে অনন্যার জীবনে যেন এক অদ্ভুত পরিবর্তন এসেছে। একসময় যেসব বিষয় সহজ মনে হতো, সেসব এখন যেন কেমন জানি এলোমেলো হয়ে গেছে। প্রতিদিনের জীবনের ছোটখাটো ঘটনাগুলোতেও রাজীবের কথা মনে পড়ে।  

একটি মেঘলা বিকেলে, বাড়ির জানালার পাশে বসে চা খেতে খেতে অনন্যা নিজের কবিতার খাতাটি খুলে বসে। কবিতার প্রতিটি শব্দে যেন রাজীবের উপস্থিতি। তাঁর ছবির সেই নদীর গল্প, গোধূলির রং, আর রাজীবের শান্ত দৃষ্টির গভীরতা সবকিছুই তার কলমে যেন নিজের জায়গা করে নিয়েছে।  

তবু তার মনে একটি প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খায়। রাজীব কি তার কথা একবারের জন্যও ভাবছে? নাকি সেই সন্ধ্যাটি কেবল তার কাছেই বিশেষ ছিল?  

“রাজীব…”

নিজের অজান্তেই নামটা তার ঠোঁটে আসে। সে জানালার বাইরে তাকায়, মেঘের ফাঁক দিয়ে একটুখানি রোদ উঁকি দিচ্ছে। সেই মুহূর্তে তার মনে হলো, রাজীবের ছবির সেই আলো যেন এই রোদের মতোই—সৌম্য, কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে।  

অনন্যা নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করল। “তুমি একজন কবি, অনন্যা। একটা ছবির রঙে আর একজন শিল্পীর সৌন্দর্যে এতটা মুগ্ধ হওয়া কি অস্বাভাবিক নয়?” কিন্তু এই যুক্তি বেশিক্ষণ টেকে না। কারণ মনের গভীর থেকে অন্য একটা কণ্ঠ ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে, “এটা মুগ্ধতা নয়, এটা ভালোবাসা। তুমি রাজীবকে ভালোবেসে ফেলেছ।” 

পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ, অনন্যা চেষ্টা করে রাজীবকে ভুলে যেতে। নিজের লেখায় মনোনিবেশ করার চেষ্টা করে। কিন্তু যতই চেষ্টা করে, রাজীবের উপস্থিতি যেন তাঁর চিন্তার প্রতিটি কোণ ঘিরে ধরে। 

রাতে বিছানায় শুয়ে থাকার সময় তাঁর মনের ভাবনা আরও প্রখর হয়ে ওঠে। তাঁর চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই সন্ধ্যার দৃশ্য। রাজীবের সেই মৃদু হাসি, তাঁর গভীর চোখ, আর তাঁর ছবির রং, যা জীবন আর স্বপ্নের গল্প বলে।  

“আমি কি রাজীবকে বলব? নাকি এটা শুধুই আমার একতরফা অনুভূতি?”

এই প্রশ্নই তাঁর রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। সে জানে, রাজীবের জীবন এবং তার নিজের জীবন সম্পূর্ণ ভিন্ন। একজন চিত্রশিল্পী, যাঁর নির্জনতায় শান্তি। আর একজন কবি, যার শব্দে অগণিত আবেগ। তবে কি এই দুটো জগৎ কখনো মিশতে পারে?  

একদিন দুপুরে, কাজ থেকে ফিরে অনন্যা তার বইয়ের আলমারি গোছাতে বসে। হঠাৎ করেই একটি পুরোনো ডায়েরি তার হাত পড়ে। ডায়েরির একটি পাতা খুলতেই চোখে পড়ে একটি লাইন, যা সে অনেক বছর আগে লিখেছিল:  

“প্রকৃত ভালোবাসা এমন একটি অনুভূতি, যা দুজন মানুষের মধ্যে দূরত্ব থাকলেও একে অপরের মনের গভীরে জায়গা করে নেয়।”

এই লাইন পড়ে অনন্যার মনে হয়, তার এই টান কি প্রকৃত ভালোবাসা? নাকি এটা শুধুই এক আবেগ, যা সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে যাবে?  

সন্ধ্যায় চায়ের কাপ হাতে নিয়ে সে নিজের সঙ্গে কথা বলে, “রাজীব, তোমার সেই ছবির রং আমার জীবনকে নতুন করে রাঙিয়ে দিয়েছে। তুমি জানো না, কিন্তু তোমার নির্জন দৃষ্টির গভীরতা আমার একাকীত্বকে মুছে দিয়েছে। আমি জানি না, তুমি আমাকে কখনো ভেবেছ কিনা, কিন্তু আমি তো তোমার ছবি আর তোমার কথা ভুলতে পারছি না।” 

এত কথা ভাবার পরেও অনন্যা বুঝতে পারে না, সে কী করবে। রাজীবের প্রতি তার এই অনুভূতি প্রকাশ করবে? নাকি এটিকে নিজের ভেতরে গোপন রেখে নিজের জীবন চালিয়ে যাবে?  

এরপরের দিনগুলোতেও রাজীবের অনুপস্থিতি তাকে তাড়া করে। কলকাতার ব্যস্ত রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সে কল্পনা করে, যদি রাজীব এখন সামনে এসে দাঁড়াতেন, কী বলত সে?  

“রাজীব, তুমি কি জানো, তোমার ছবিগুলো শুধু চোখে দেখা নয়, অনুভব করার মতো? তোমার সেই ছবির নদীটা যেন আমার মনের নদী হয়ে গেছে। গোধূলির সেই রং আমার জীবনের খালি ক্যানভাসকে নতুন করে সাজিয়েছে।”

নিজের এই কথাগুলো মনে মনে ভাবতে ভাবতে অনন্যা উপলব্ধি করে, সে রাজীবকে মিস করছে। প্রতিদিনের এই অনুভূতি তাকে যেন আরও গভীরভাবে তার প্রতি টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে রাজীবের সঙ্গে যোগাযোগ করার সাহস পারছে না।  

রাতে যখন তার কবিতার খাতার পাতা ভরে ওঠে শব্দে, তখন সেই শব্দগুলোও রাজীবের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে। সে লিখে ফেলে—  

তোমার চোখের গভীরতায়

“তোমার চোখের গভীরতায় ডুব দিলাম আজ,  

অন্ধকারে আলো জ্বলে—এক মহাকাব্যের সাজ।  

তোমার দৃষ্টির নীলে লুকানো এক সাগর,  

যেখানে ঢেউয়ের প্রতিটি ছোঁয়া জাগায় হৃদয়ের ঝড়।  

তোমার চোখ কি শুধু চোখ, নাকি এক রহস্যময় গল্প?  

যেখানে প্রতিটি পলকের মাঝে লেখা ভালবাসার রূপকথা, অসীম অনুভব।  

আমি সেখানে হারাই বারবার,  

যেন হারিয়ে যাওয়া মানে তোমাতে বাঁচা।  

তোমার রঙের গল্পে রোজ দেখি আমি রঙধনু,  

তোমার হাসির সাথে মিশে যায় আমার জীবনের গান।  

তুমি যে শুধু একজন, নও; তুমি এক ছন্দ,  

তোমার উপস্থিতি যেন বদলে দেয় আমার প্রতিটি প্রহর, প্রতিটি বন্ধ।  

তুমি কি জানো, তোমার একটুখানি স্পর্শে  

কেমন করে জমে থাকা কষ্ট গলে যায় বরফে?  

তোমার কথার মাঝে যে মাধুর্য, তা শুধু শব্দ নয়,  

একটি বেঁচে থাকার প্রতিশ্রুতি, যেন ঝর্ণার কলকল।  

জানি না, এই টান কতটা সত্যি,  

তবে তুমিই আমার পৃথিবীর কেন্দ্র, আমার অস্তিত্বের মন্ত্র।  

তোমার অভাব যেন নিঃশ্বাসের মতো গভীর,  

তোমার ছোঁয়া ছাড়া সবকিছু মনে হয় ম্লান, যেন তেপান্তরের প্রান্ত।  

তুমি যদি জানতে, কেমন করে তোমার ছায়া  

আমার একাকীত্বের সঙ্গী হয়ে রোজ রাত পেরোয়,  

তাহলে বুঝতে তুমি, ভালবাসা এক পবিত্র আগুন,  

যার আলোয় জ্বলে আমার সমস্ত ভ্রমণ।  

তোমার চুলের ঘ্রাণে মিশে আছে বসন্তের পরশ,  

তোমার কণ্ঠের সুরে পাই শঙ্খনাদের স্পর্শ।  

তোমার কাছে আসতে চাই, ছুঁতে চাই তোমার হৃদয়ের গান,  

তুমি যে আমার কবিতা, আমার অসমাপ্ত উপাখ্যান।  

তুমি, হে প্রিয়, এক অসীম ভ্রমণ,  

যেখানে শুরু আছে, কিন্তু শেষ নেই।  

তোমার ভালোবাসায় বাঁধা পড়ে গেছি আমি,  

তুমি যে আমার প্রাণ, আমার স্বপ্ন, আমার জীবনের প্রতীকী মনি।”

কবিতার এই লাইনগুলো পড়ে অনন্যা বুঝতে পারে, তার এই অনুভূতিগুলো শুধু আবেগ নয়, এটি ভালোবাসার গভীরতম রূপ। তবে কি সে কখনো রাজীবকে তার মনের কথা জানাতে পারবে?

তৃতীয় অধ্যায়: সন্দেহের ছায়া

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

তিন মাস পর, কলকাতার একাডেমি অফ ফাইন আর্টস গ্যালারিতে নতুন চিত্র প্রদর্শনীতে আমন্ত্রণ পেয়ে অনন্যা প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অনেকদিন পর রাজীবকে আবার দেখার সম্ভাবনা তাকে উচ্ছ্বসিত করছিল, যদিও সে নিজের অনুভূতি স্বীকার করতে পারেনি। প্রদর্শনীতে পৌঁছে তার চোখ প্রতিটি ছবির ফাঁকে ফাঁকে খুঁজতে থাকে রাজীবকে।

এক সময়, একটি কোণে তাকে দেখতে পেল। রাজীব সেখানে দাঁড়িয়ে একজন মহিলার সঙ্গে কথা বলছেন। অনন্যা এগিয়ে গেল, এবং রাজীবের চোখে হাসি ফুটে উঠল।  

“অনন্যা! আপনাকে দেখে আমার ভালো লাগছে, আমি ভাবতে পারিনি আমাদের আবার দেখা হবে!” রাজীব তার শান্ত অথচ উষ্ণ কণ্ঠে বলল।  

“আমারও ভালো লাগছে,” অনন্যা হালকা হাসল, কিন্তু তার চোখ মহিলার দিকে চলে গেল। রাজীবের পাশে থাকা সেই মহিলার উপস্থিতি যেন তার আনন্দকে কিছুটা ম্লান করে দিল।  

রাজীব বলল, “প্রিয়া, আমার সেক্রেটারি।”  

“আপনার সঙ্গে আলাপ করতে পেরে ভালো লাগছে,” প্রিয়া অনন্যার দিকে এক প্রশস্ত হাসি ছুঁড়ে দিল।  

অনন্যা বিনীতভাবে মাথা নাড়ল, কিন্তু তার মনে এক অদ্ভুত অস্বস্তি কাজ করতে লাগল। প্রিয়া কেন রাজীবের সঙ্গে? শুধু কি সেক্রেটারি, নাকি আরও কিছু? তাঁদের কথোপকথনের আন্তরিকতা দেখে অনন্যার মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে লাগল।

গ্যালারি থেকে বাড়ি ফেরার পথে, অনন্যার মন অস্থির হয়ে উঠল। ট্যাক্সির জানালার বাইরে তাকিয়ে সে নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগল। “কেন এমন হলো? রাজীবের জীবনে কি আমি একদমই বিশেষ কেউ নই? তবে কেন সেই সন্ধ্যাটা এতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল?”

এই প্রশ্নগুলো তাকে যেন আরও বেশি কুরে কুরে খেতে লাগল। বাড়িতে ফিরে সে চুপচাপ নিজের ঘরে ঢুকে পড়ল। তার কবিতার খাতাটি খুলল, কিন্তু কলম চলল না। প্রতিটি শব্দ যেন তার মনের অস্থিরতার কাছে পরাজিত হচ্ছিল।  

“প্রিয়া যদি সেক্রেটারি হয়, তবে কেন তাঁদের সম্পর্ক এত বন্ধুত্বপূর্ণ মনে হলো? শুধু কি অফিসিয়াল সম্পর্ক? নাকি…. এর বাইরে কিছু আছে?”

সে নিজেই নিজের কাছে উত্তর খুঁজতে লাগল। কিন্তু কোনো পরিষ্কার উত্তর আসছিল না। তার মনে ঈর্ষার একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি দানা বাঁধছিল।  

পরবর্তী কয়েকদিন অনন্যা স্বাভাবিক থাকতে চাইলেও পারল না। সে নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করল, “তুমি তো রাজীবের জীবনের একটা অংশ নও। তার ব্যক্তিগত জীবনে কী চলছে, সেটা নিয়ে ভাবার অধিকার তোমার নেই।”

কিন্তু তার মনের অন্য একটি কণ্ঠ তাকে বারবার বলছিল, “তুমি যদি তাঁর জীবনের অংশ না হও, তবে কেন তিনি সেদিন তোমার সঙ্গে এতটা কথা বললেন? কেন তাঁর ছবিগুলো তোমার মনের এতটা জায়গা দখল করে নিল?”

এরই মধ্যে সে একটি কফিশপে বসে কফি খাচ্ছিল, আর প্রিয়ার কথা ভাবছিল। প্রিয়ার পোশাক, তার কথাবার্তা, আর রাজীবের সঙ্গে তার সহজ সম্পর্ক—সবকিছুই তাঁর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।  

“তুমি কি ওর মতো সপ্রতিভ? তুমি কি রাজীবের জীবনে প্রিয়ার জায়গাটা নিতে পারবে? হয়তো ওরা একে অপরকে ভালোবাসে। যদি তাই হয়, তবে আমার অনুভূতিগুলো কি শুধু আমার একতরফা কল্পনা?”  

এই প্রশ্নগুলো অনন্যার মনে তীব্র দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করল।  

রাতে বিছানায় শুয়ে থাকার সময় অনন্যা নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করল। “রাজীব আমার কাছে একজন শিল্পী। আমি তার ছবিগুলো ভালোবেসেছি। এর বেশি কিছু নয়। নিজের অনুভূতিগুলোকে মিথ্যে অর্থ দেওয়া বন্ধ করো।”

কিন্তু যতই চেষ্টা করে, মনের গভীর থেকে একটা কণ্ঠ তাকে থামিয়ে দেয়। “তুমি মিথ্যে বলছ। তুমি শুধু শিল্পী রাজীবকে নয়, মানুষ রাজীবকেও ভালোবেসে ফেলেছ।”

পরবর্তী কয়েকদিন অনন্যা নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করল। কিন্তু রাজীব আর প্রিয়ার সেই মুহূর্তটি তার মন থেকে কিছুতেই সরছিল না। প্রিয়ার হাসি, তার চোখে আত্মবিশ্বাস—সবকিছুই যেন তাকে আরও বেশি কুরে কুরে খাচ্ছিল।  

“আমি কেন ঈর্ষান্বিত হচ্ছি? প্রিয়া তাঁর সেক্রেটারি, এটুকুই তো জানি। আমি কেন ধরে নিচ্ছি যে তাঁদের মধ্যে অন্য কিছু আছে?”

নিজেকে এই প্রশ্ন করলেও, মনের গভীরে তার একটাই চিন্তা ছিল—রাজীব কি সত্যিই প্রিয়াকে ভালোবাসে? আর যদি তাই হয়, তবে তার নিজের ভালোবাসার অনুভূতি কি অর্থহীন হয়ে যাবে?  

অনন্যার জীবনে রাজীব যেন এক ধাঁধার মতো রয়ে গেল। তার মনে হয়েছিল, সে যতই তার চিত্র আর কথার মাধ্যমে রাজীবকে বুঝতে চায়, ততই সে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে।  

একদিন সকালে, নিজের ডায়েরি খুলে অনন্যা লিখতে বসে। তার কলম থেকে বেরিয়ে আসে একটি প্রশ্ন, যা তাঁর মনের গভীরে জমাট বেঁধে ছিল:  

“আমি কি কখনো তার কাছে আমার মনের কথা জানাতে পারব? নাকি আমার ভালোবাসা শুধু আমার ভেতরেই থেকে যাবে, কোনো উত্তর ছাড়াই?”  

ডায়েরির সেই পাতাটি বন্ধ করে সে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল, অনন্যা। তিনি জানতেন, তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তার ভালোবাসার এই ধোঁয়াশা তাকে কোথায় নিয়ে যাবে, সেটা শুধুই সময়ই বলতে পারে।

চতুর্থ অধ্যায়: একাকিত্বের রাতে

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

কয়েক মাস কেটে গেছে। বেঙ্গল আর্টস এন্ড কালচারাল সোসাইটি একটি ব্যতিক্রমী শিল্প সভার আয়োজন করেছে, যেখানে চিত্রকলা ও কবিতার সমন্বয়ে একটি প্রদর্শনী হবে। এই সভায় শহরের নামী পেন্টিং আর্টিস্ট ও কবিদের জুটি তৈরি করা হয়েছে, যারা একে অপরের কাজকে পরিপূর্ণ করবে। চমকপ্রদভাবে, অনন্যা ও রাজীব এক জুটি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।  

অনন্যা খবরটি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। “এ কি শুধুই কাকতালীয়, নাকি ভাগ্যের অন্য কোনো খেলা?” সে ভাবতে থাকে। রাজীবও বেশ খুশি। তার চোখে যে উজ্জ্বলতা দেখা গেল, তাতে অনন্যার হৃদয় যেন আরও দ্রুত স্পন্দিত হলো।  

তাদের সবার জন্য শহরের একটি পাঁচতারা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিনভর তাদের কাজ নিয়ে আলোচনা চলল। রাজীব অনন্যার কবিতার অনুভূতিগুলোকে গভীরভাবে বুঝতে চাইল, আর অনন্যা রাজীবের ছবির রঙ ও রেখার নৈপুণ্য দেখে মুগ্ধ হল। ওরা একে অপরকে “আপনি” বলা থেকে “তুমি” -তে চলে এলো।

কিন্তু রাতের গভীরে, সবাই যখন ঘুমে মগ্ন, অনন্যার চোখে ঘুম আসছিল না। তার মনের মধ্যে একটা অস্থিরতা কাজ করছিল। “রাজীবের সঙ্গে এতটা সময় কাটানোর পর কেন এতটা অস্থির লাগছে? তার প্রতি টান কি দিন দিন আরও গভীর হয়ে যাচ্ছে?”

হোটেলের রুম থেকে বেরিয়ে অনন্যা হঠাৎ করেই বাগানের দিকে হাঁটতে বেরোল। শান্ত পরিবেশ, দূর থেকে ফোয়ারা থেকে ভেসে আসা মৃদু জলের শব্দ, আর আলো-আঁধারিতে ঘেরা হোটেলের বাগান। সেই নির্জন রাতে সে দূর থেকে দেখল রাজীব একটি বেঞ্চে বসে আছে। তার মুখে এক অদ্ভুত বিষণ্নতার ছাপ, যা এতদিন অনন্যা খেয়াল করেননি।  

সাহস সঞ্চয় করে সে তার দিকে এগিয়ে গেল। সে মৃদু কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল, “ঘুম আসছে না?”

রাজীব চমকে ওঠে, কিন্তু সামনে অনন্যাকে দেখে তার মুখে একরাশ প্রশান্তির ঝিলিক ফুটে ওঠে। তারপর শান্তভাবে বলল, “না! কিছু রাত আছে যা শুধু একাকিত্বকেই মনে করিয়ে দেয়।”

অনন্যা তার পাশে বসে পড়ল। সে হালকা হাসি দিয়ে বলল, “তাহলে আমি তোমার নিঃসঙ্গতাকে ভাগ করে নিতে পারি?”

রাজীবের ঠোঁটেও একটুকরো হাসি ফুটে উঠল। “তোমার মতো মানুষ পাশে থাকলে কেউ নিঃসঙ্গ থাকতে পারে?”

কথার একপর্যায়ে রাজীব তার জীবনের বিষণ্নতার গল্প বলা শুরু করল, “তুমি জানো, অনন্যা, শিল্পী হওয়া মানে শুধু নিজের সৃষ্টি নিয়ে ব্যস্ত থাকা নয়। এর মানে কখনো কখনো একা একা রঙের সঙ্গে কথা বলা। আমার জীবনে কেউ ছিল না, এখনো নেই। যতটা সহজে মানুষ আমার ছবির মধ্যে গল্প খুঁজে পায়, ততটাই কঠিন আমার নিজের জীবনের গল্প।”  

অনন্যা তার দিকে চেয়ে রইল। এই গভীর মানুষটি, যাঁর কাজ এত জীবন্ত, তার জীবন যে এতটা নিঃসঙ্গ হতে পারে, তা সে ভাবতেও পারেনি।  

রাজীব একটু থেমে আবার বলল, “আমার বাবা-মা চেয়েছিলেন আমি ডাক্তার হই। কিন্তু আমি তখনই বুঝেছিলাম, আমার ডাক্তার হওয়া সম্ভব নয়। রং আমার শ্বাস, ক্যানভাস আমার পৃথিবী। কিন্তু এই শিল্পকে বেছে নিয়ে আমি একা হয়ে গেছি। বন্ধু-বান্ধবরা কেউ আর পাশে নেই। শুধু এই রঙিন ক্যানভাসের পৃথিবীটাই আমার একমাত্র সঙ্গী।”  

অনন্যা হঠাৎ বলে ফেলল, “তাহলে আমি তোমার সঙ্গী হতে পারি? হয়তো একজন কবি আর একজন চিত্রশিল্পী একসঙ্গে একটা গল্প বুনতে পারে, যেখানে একাকিত্ব থাকবে না।”  

রাজীব মৃদু হাসল। “তুমি জানো, অনন্যা, তোমার মতো মানুষ আসলে শিল্পেরই আরেকটা রূপ। তোমার কবিতার মতোই তুমি গভীর, অথচ সহজ। আমার জীবনে কখনো তোমার মত এমন কেউ আসেনি, যার সঙ্গে আমি এতটা স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারি। মনে হয়, আমি তোমার সঙ্গেই আমার একাকিত্বের গল্প ভাগ করে নিতে পারি। তোমার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।”

অনন্যা হেসে বলল, “তাহলে তো আমরা সত্যিই একে অপরের জন্যই সৃষ্টি।”

তাদের কথোপকথনে রাত গভীর হয়ে এল। বাগানের শান্ত বাতাস তাদের মধ্যে এক অদ্ভুত সম্পর্ক তৈরি করছিল। রাজীব বলল, “তুমি কি জানো, অনন্যা, আমি আমার ছবিগুলোতে যা বলতে চাই, তা তোমার কবিতা বলে দেয়? তোমার কবিতাগুলো পড়লে আমার মনে হয়, হয়তো আমাদের কাজ একে অপরকে পূর্ণ করবে।”  

এই কথাগুলো শুনে অনন্যার মন যেন ভেসে উঠল। রাজীবের এই নিঃসঙ্গতা তাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেল। তার মনে হলো, সে শুধু রাজীবের ক্যানভাসের রং নয়, তার জীবনের শূন্যতাকেও পূর্ণ করতে চায়।

সেই রাতে তাদের কথোপকথন যখন শেষ হলো, তখন তারা দুজনেই অনুভব করল, তাদের সম্পর্কের মধ্যে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। অনন্যার মনে হলো, এই রাতের কথা সে কোনোদিন ভুলতে পারবে না। রাজীবের কথাগুলো তার হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলে গেল।  

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - অব্যক্ত সুর: এই রোমান্টিক বাংলা গল্পে রিয়া ও আয়ানের প্রেমের গল্প, যেখানে গান ও আঁকার সুর তাদের জীবনকে এক অপূর্ব মাত্রা দেয়। সম্পুর্ন বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

পঞ্চম অধ্যায়: সাহসী প্রস্তাব

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

পরদিন সকালে অনন্যা বারবার মনে করার চেষ্টা করছিল যে সে কীভাবে রাজীবকে ডিনারের প্রস্তাব দেবে। তার হৃদয় উত্তেজনা ও সংশয়ের দ্বন্দ্বে কাঁপছিল। তবে নিজের সাহস জোগাড় করে, দুপুরে রাজীবকে বলেই ফেলল,

“রাজীব, তুমি আজ রাতের ডিনারে আমার সঙ্গী হবে? তোমার সাথে আজ একটু বিশেষভাবে সময়  কাটাতে চাই।”

রাজীব তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল, “অবশ্যই। তোমার সঙ্গে সময় কাটানো আমারও ভালো লাগে।”  

রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে অনন্যার উত্তেজনা আরও বেড়ে গেল। সে হোটেলের ছাদে একটি নিরিবিলি জায়গায় স্পেশাল রোমান্টিক ডিনারের ব্যবস্থা করেছিল। চারদিকে ছোট ছোট ফেয়ারি লাইটের আলোকছটা, টেবিলের উপর রাখা একজোড়া জ্বলন্ত মোমবাতি, আর মাঝখানে একটি ছোট ফুলদানি—যেখানে রাখা ছিল তাজা লাল গোলাপ। পরিবেশটা যেন এক রূপকথার মতো ছিল।  

রাজীব যখন সেখানে পৌঁছাল, তার চোখে বিস্ময়ের ঝিলিক। রাজীব বলে উঠল, “এটা তুমি করেছ, অনন্যা? এটা তো একেবারে জাদুকরী পরিবেশ!”

অনন্যা মৃদু হাসল, “তোমার মতো একজন শিল্পীর জন্য এমন কিছু করার চেষ্টা করেছি যা হয়তো তোমার হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।”

তারা দুজনে বসে ডিনার শুরু করল। হালকা সঙ্গীত বাজছিল, আর তাদের কথোপকথন ধীরে ধীরে গভীর হতে শুরু করল।  

ডিনারের মাঝপথে, অনন্যা বুঝতে পারল যে আর সময় নষ্ট করার উপায় নেই। তার হৃদয় দ্রুত স্পন্দিত হচ্ছিল, কিন্তু সাহস সঞ্চয় করে মোমবাতির আলোর দিকে তাকিয়ে সে বলতে শুরু করল,  

“রাজীব, আমি কিছু কথা বলতে চাই।” 

রাজীব তার দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকাল, “বলো, অনন্যা। আমি শুনছি।”  

অনন্যা একটু থেমে বলল,

“রাজীব, তোমার সঙ্গে কাজ করার প্রতিটি মুহূর্ত যেন আমার জীবনের নতুন এক অধ্যায় খুলে দিয়েছে। তোমার কাজের প্রতি নিষ্ঠা, তোমার শিল্পের সূক্ষ্মতা, আর তোমার জীবনের নীরবতায় লুকিয়ে থাকা গভীরতা—সবকিছু যেন এক অজানা মায়ার জাল বুনেছে আমার চারপাশে। কিন্তু সত্যি বলতে, এই মুগ্ধতার বাইরেও আরও কিছু আছে, যা আমাকে তোমার দিকে প্রতিনিয়ত টেনে নিয়ে যায়।  

আমি তোমাকে ভালোবেসেছি, রাজীব। শুধু তোমার কাজ বা প্রতিভার জন্য নয়, বরং সেই নির্লিপ্ত মনের জন্য, যেখানে লুকিয়ে আছে অসীম অনুভূতি আর অনুচ্চারিত গল্প। আমি তোমার নিঃসঙ্গ জীবনের খালি ক্যানভাসে রঙ যোগ করতে চাই, যেখানে প্রতিটি রঙ হবে আমাদের ভালোবাসার ছোঁয়া।  

আমার এই অনুভূতি গভীর এবং সত্যি। আমি তোমার পাশে থাকতে চাই, তোমার সুখ-দুঃখের সঙ্গী হতে চাই। তুমি কি আমাকে এই সুযোগ দেবে, রাজীব?”

রাজীব কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তার চোখে বিস্ময় ফুটে উঠল। কিন্তু সেই বিস্ময় ধীরে ধীরে একরাশ উজ্জ্বল আনন্দে পরিণত হলো।  

রাজীব মৃদু হেসে বলল,  

“অনন্যা, তোমার কথাগুলো শুনে আমার হৃদয় যেন এক অদ্ভুত আনন্দে ভরে উঠছে। আমি জানি না কীভাবে তোমাকে আমার অনুভূতিগুলো বোঝাব। এতদিন ধরে আমার জীবনে যে শূন্যতা ছিল, যে অতৃপ্তি ছিল, আজ বুঝলাম তার কারণ তুমি। তোমার কবিতা, তোমার চোখের উজ্জ্বলতা, আর তোমার সঙ্গ আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে অর্থপূর্ণ করে তুলেছে।  

তুমি কি জানো, আজকের এই রাতটা আমার জন্য কতটা বিশেষ? আমি নিশ্চিত, এই মুহূর্তটা আমার জীবনের সেরা স্মৃতিগুলোর একটি হয়ে থাকবে। তুমি আমার জীবনের সেই রঙ, যা আমি এতদিন ধরে খুঁজে বেড়িয়েছি।  

তুমি আমাকে তোমার জীবনের অংশ হতে দিয়েছ, আর এটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, তোমার জীবনের প্রতিটি দিনকে ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে তুলব।”  

অনন্যার চোখ আনন্দে ভিজে এল। সে রাজীবের দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি জানো, আমি মনে করি আমাদের কবিতা আর চিত্রশিল্পের সম্পর্ক যেমন, তেমনই আমাদের জীবনের সম্পর্কও হতে পারে। আমরা একে অপরকে পরিপূর্ণ করতে পারি।”

রাজীব তার হাত বাড়িয়ে অনন্যার হাত ধরে বলল, “তুমি যদি আমার পাশে থাকো, আমি জানি, আমার জীবনের রঙ আরও উজ্জ্বল হবে।”

মোমবাতির আলোয় তাদের হাত দুটি একসঙ্গে জড়িয়ে রইল। সেই রাতে তারা দুজনে হৃদয়ের সমস্ত অনুভূতি একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নিল। অনন্যার মনে হলো, এই রাতটাই তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর রাত। আর রাজীবের মনে হলো, এই রাতটাই তার জীবনের সেই অভাব পূরণের শুরু।  

ষষ্ঠ অধ্যায়: প্রেমের রাত্রি

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

রাত গভীর হয়েছে। শহরের ব্যস্ততা থেমে গেছে, আর পাঁচতারা হোটেলের জানালার ওপারে চাঁদের নরম আলো রাজীব আর অনন্যার মধ্যে এক অব্যক্ত আবেশ ছড়িয়ে দিচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে ডিনারের টেবিলে তাদের কথোপকথনের প্রতিটি শব্দ যেন হৃদয়ে এক একটি গোপন সুর ছুঁয়ে গেছে। রাজীবের চোখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি, আর অনন্যার মুখে এক লাজুক হাসি—যেন প্রেম তাদের চারপাশে এক মোহময় নীল পরিবেশ তৈরি করেছে।  

রাজীব ধীরে ধীরে অনন্যার দিকে এগিয়ে এল। ওর চোখে চোখ রেখে বলল, “অনন্যা, তোমার উপস্থিতি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর উপহার।” অনন্যার চোখ ছলছল করে উঠল। রাজীব ওর কোমরে হাত রেখে আলতো করে নিজের কাছে টেনে নিল। দু’জনের নিঃশ্বাস যেন এক হয়ে গেছে। চুপচাপ ঘরের বাতাসে শুধু তাদের হৃদয়ের ধুকপুকানি শোনা যাচ্ছে।  

রাজীব আলতো করে অনন্যার ঠোঁটে প্রথম চুমু খেল। সেই মুহূর্তে অনন্যার সমস্ত দ্বিধা, সমস্ত লাজুকতা যেন হারিয়ে গেল। ও রাজীবকে জড়িয়ে ধরে আরও গভীর ভাবে চুমু খেল। তাদের এই মুহূর্তের মধ্যে সময় থেমে গেছে বলে মনে হয়। চাঁদের আলো জানালা দিয়ে এসে তাদের ভালবাসাকে যেন আরও রাঙিয়ে তুলছে।  

অনন্যা রাজীবের বুকে মুখ রেখে ধীরে ধীরে বলল, “রাজীব, আমি জানি না আমার এই অনুভূতিগুলো কীভাবে বোঝাব। তবে আমি এটুকু জানি, তোমার সঙ্গেই আমি আমার পুরো জীবন কাটাতে চাই।”  

রাজীব ওকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, “অনন্যা, তুমি আমার জীবনের প্রতিটা দিনকে পূর্ণ করেছ। তুমি না থাকলে আমি অসম্পূর্ণ।”  

ঘরের ভেতরে প্রেমের এক নীল আভা ছড়িয়ে পড়ল। চাঁদ আর তারার সাক্ষী হয়ে সেই রাতটা তাদের ভালবাসার নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।

কিছুক্ষণ পর অনন্যা একটু লজ্জায় পড়ে গেল। সে নিজেকে রাজীবের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, “তোমার ক্যানভাসের গল্প শোনা হল, এবার তোমার শিল্প-সত্তা আমি আমার নিজের চোখে দেখতে চাই।” রাজীব হেসে বলল, “ঠিক আছে। কিন্তু আজকে তুমি আমার ক্যানভাস হবে।” অনন্যা একটু অবাক হয়ে বলল, “মানে ঠিক বুঝতে পারলাম না।” 

রাজীব ধীরে ধীরে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বলল, “অনন্যা, আজ তোমার শরীর আমার ক্যানভাস হবে। আমি তোমার ওপর রং দিয়ে আমার মনের কথা বলব।” অনন্যা একটু অবাক হয়ে হেসে বলল, “তোমার এই শিল্প-ভাবনাটা সত্যি অদ্ভুত!”

রাজীবের কথায় মুগ্ধ হয়ে অনন্যা চেয়ারের ওপর উল্টো দিকে মুখ করে বসল। ওর লং স্কার্ট আর টপের মধ্যে একটা স্নিগ্ধতা ছিল, কিন্তু সেই মুহূর্তে তার শরীরের লজ্জা মিশে গিয়েছিল এক গভীর ভালবাসার আবরণে। রাজীব তার টপ খুলে ফেলতেই অনন্যা একটু লজ্জা পেল। সে চোখ বন্ধ করে ফেলল, যেন এই মুহূর্তটা তার হৃদয়ে আরও গভীর ভাবে জায়গা করে নেয়।

রাজীব তার রঙের সেট বের করল। নিজের আঙুলকে তুলির মতো ব্যবহার করে সে অনন্যার পিঠে রং মাখাতে শুরু করল। প্রতিটি স্ট্রোক যেন তার মনের গোপন ভালবাসার প্রকাশ। প্রতিটি রঙের টানে সে ফুটিয়ে তুলছিল সেই অনুভূতি, যা ভাষায় বলা যায় না। অনন্যা চোখ বন্ধ করে সেই শিল্পের প্রেমকে অনুভব করছিল। ওর মনে হচ্ছিল, রাজীবের প্রতিটি স্পর্শ যেন এক নতুন কবিতার জন্ম দিচ্ছে।

আঁকতে আঁকতে প্রায় দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। রাজীব কখনো থেমে অনন্যার পিঠের রং দেখে মুগ্ধ হচ্ছিল, আবার কখনো তার চোখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি।

অনন্যা জানালার দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে একটা কবিতা বলতে শুরু করল,

“তোমার তুলির আঁচড়ে
আমার শরীর যেন এক নতুন ক্যানভাস।
তোমার প্রতিটি রঙ, প্রতিটি রেখা
আমার হৃদয়ে জাগিয়ে তোলে সৃষ্টির উন্মাদনা।
তোমার আঙুলের স্পর্শে আমি ভুলে যাই
কোনটা বাস্তব, কোনটা কল্পনা,
শুধু টের পাই, তুমি আর আমি
একটাই গল্পের দুই পৃষ্ঠা।

তোমার প্যালেটের রঙগুলো,
যেন আমার আবেগের সমুদ্র।
নীল, লাল, সাদা—
সব রঙের মাঝেই আমি খুঁজে পাই
আমার ভালবাসার গভীরতম অর্থ।
তুমি যখন রঙের মিশেলে
আমার জীবনের ছবি আঁকো,
তখন মনে হয়,
আমার সমস্ত শূন্যতা পূর্ণ হয়েছে।

তোমার ভালোবাসা, আমার রং,
তোমার স্পর্শ, আমার সুর।
তোমার তুলির প্রতিটি আঁচড়ে
আমার হৃদয় নতুন ভাবে বেঁচে ওঠে।
তুমি ছাড়া আমার ক্যানভাসে
কোনো গল্প নেই, কোনো রঙ নেই।
তুমি আছো বলেই,
আমার কবিতা আর ছবি
এক হয়ে যায়—
তোমার তুলির আঁচড়ে
আমার জীবন হয়ে ওঠে সম্পূর্ণ।

রাজীব তার কবিতা শুনে থেমে গেল। তার চোখে জল এসে গেল—এটা ছিল ভালবাসার গভীরতম মূহূর্ত। সে অনন্যার পিঠের ওপর আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল, “তুমি আমার শিল্পের অনুপ্রেরণা, আর আমার জীবনের কাব্য।”

তারা দু’জনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল। সেই মুহূর্তটা যেন সময়ের বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। রাজীব অনন্যার পিঠের ওপর একটা হার্ট সেফ ও একটি লাল গোলাপের ফুল আঁকছিল, যা তার গভীর অনুভূতির প্রতিচ্ছবি। অনন্যার চোখে ছিল মাধুর্য, যেন কোনো কবিতার বাণী, আর রাজীবের হাতের প্রতিটি নীরব আঁচড়ে যেন এক নতুন পৃথিবী সৃষ্টি হচ্ছিল। তার ক্যানভাসে রঙের প্রতিটি স্পর্শে ছিল প্রেমের সুর, আর অনন্যার মধ্যে ছিল সেই সুরের প্রতিধ্বনি।

এই মুহূর্তটি যেন তাদের দুজনের জন্য স্থির হয়ে গিয়েছিল, এক সুন্দর অভ্যন্তরীণ পৃথিবীতে আবদ্ধ। রাজীব খুব ধীরে, যেন তার শব্দগুলো মন দিয়ে আঁকতে চাচ্ছিল, বলল, “তুমি কি জানো, অনন্যা? আমার জীবন অনেকদিন ধরে ফাঁকা ছিল। মনে হত, কিছু একটা অভাব রয়েছে। কিন্তু তুমি আমার জীবনে আসার পর, সেই শূন্যতা পূর্ণ হয়েছে।”

অনন্যা তার চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপ থেকে তার মনের কথা বলল, “আমিও তাই মনে করি। তোমার ছবি আমার কবিতার প্রতিচ্ছবি। তোমার রং, তোমার তুলির আঙুল—সবকিছু যেন আমার কথাগুলোর প্রতিস্বর।”

সে মৃদু হেসে যোগ করল, “আমি চাই, আমাদের এই মুহূর্তগুলো যেন কখনও ফুরিয়ে না যায়। যেন তোমার শিল্প এবং আমার কবিতা কখনও শেষ না হয়।”

রাজীব শোনার পর অনন্যার দিকে তাকিয়ে তার হাতে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল, যেন এই মুহূর্তটাকে আরো গভীর করে অনুভব করতে চাইছিল। এই মুহূর্ত, এই অনুভূতি, যেন তাদের এক অভূতপূর্ব সংযোগের সাক্ষী। তাদের মধ্যে কথার বদলে চোখের ভাষায় যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তা একমাত্র তাঁরা দু’জনই বুঝতে পারছিল।

রাজীব এক মুহূর্ত থেমে বলল, “তুমি জানো, আমাদের এই মুহূর্তগুলো আমার কাছে একটি অমুল্য রত্নের মতো। তুমি যখন আমার ক্যানভাসে রঙের ছোঁয়া পাও, তখন মনে হয়, আমি শুধু শিল্পী নই—আমি একজন প্রেমিক, আমি একজন কবি। তুমি আমার জীবনের মেলবন্ধন, আমার শিল্পের রঙ।”

অনন্যা তার কথাগুলোর মাঝে আবার হারিয়ে গিয়ে বলল, “আমিও চাই এই মুহূর্ত যেন চিরকাল স্থায়ী হয়ে থাকে। আমাদের গল্প, আমাদের সুর, আমাদের শিল্প—একত্রে এক অপূর্ব মেলবন্ধন হয়ে থাকে।”

সে কথা শেষ হওয়ার আগেই চাঁদের আলো আরও প্রখর হয়ে উঠল, আর হালকা বাতাস যেন তাদের চারপাশে এক মিষ্টি গুঞ্জন তৈরি করল। তাদের হৃদয়, কবিতা, শিল্প—সবকিছু যেন এক চিরন্তন প্রেমের ক্যানভাস হয়ে উঠেছিল। সেদিন রাতে, সময় ও স্থান যেন হারিয়ে গিয়ে প্রকৃতিও তাদের জন্য শিল্প হয়ে উঠেছিল। দু’জনের মিলে গড়া সেই গল্প ছিল প্রেমের এক অমর রূপ, যা শুধুমাত্র তারা দু’জনেই অনুভব করতে পারছিল।

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - স্বর্গের চুম্বন: সূর্য, একজন সাধারণ মানুষ, জাদুঘরে ঘুরতে ঘুরতে এক অদ্ভুত মূর্তির স্পর্শে স্বর্গে চলে যান। সেখানে রিয়া নামের এক রহস্যময়ী নারীর সাথে দেখা হয় তার। রিয়া সূর্যকে দেখায় স্বর্গের অপার সৌন্দর্য, চিরকালের প্রেমের স্বপ্ন। কিন্তু কিছুদিন পর সূর্য বুঝতে পারে, স্বর্গের একঘেয়ে জীবন তার জন্য নয়। সে ফিরে চায় তার পৃথিবীতে, তার পরিবার, বন্ধুদের কাছে। রিয়া কি সূর্যকে ফিরে যেতে দেবে? জানতে হলে পড়ুন এই রোমান্টিক গল্প “স্বর্গের চুম্বন”। সম্পুর্ন বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

সপ্তম অধ্যায়: জীবনের ক্যানভাস

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

আজকের দিনটি তাদের জন্য বিশেষ। এটি ছিল শিল্প প্রদর্শনীর শেষ দিন। এটি সেই দিন যখন তাদের জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটতে চলেছে—যখন তাদের সম্পর্ক শুধু দুজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং পুরো পৃথিবী তাদের ভালোবাসার গল্পে মুগ্ধ হবে।

রাজীবের ছবি এবং অনন্যার কবিতা একসঙ্গে সবার সামনে উপস্থাপিত হতে চলেছে। প্রদর্শনীটি ছিল এক সম্মেলন, যেখানে বিশ্বের নানা কোণ থেকে শিল্পী, কবি এবং সৃজনশীলতার প্রতি আগ্রহী মানুষরা উপস্থিত হয়েছিল। আজকের দিনটি ছিল বিচারক মণ্ডলী এবং অতিথিদের উপস্থিতিতে রাজীব এবং অনন্যার জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

অনন্যা এবং রাজীব একে অপরের হাত ধরেই একাডেমি অফ ফাইন আর্টস এক্সিবিশন হলের দিকে চলল। রাজীব অনুভব করছিল যে, এই মুহূর্ত শুধু তাদের দু’জনের জন্য নয়, এটি তাদের সৃষ্টিশীলতার পরিপূর্ণতা এবং এক নতুন যুগের সূচনা।

প্রদর্শনী শুরুর আগে রাজীব বলল, “অনন্যা, আজকের দিনটা আমাদের জন্য এক নতুন গল্পের সূচনা। আমাদের ভালোবাসা আজ পৃথিবীর সামনে তুলে ধরা হবে। তোমার কবিতা আর আমার ছবি, এটা এক সুরের মতো মিলে যাবে।”

অনন্যা তার হাতটি চেপে ধরে বলল, “রাজীব, আমি জানি, আমাদের এই প্রেম শুধু একটি সম্পর্ক নয়, এটি আমাদের সৃষ্টির শক্তি। তুমি যদি আমার কবিতার প্রতিচ্ছবি হতে পার, তাহলে আমি তোমার ছবির ভাষা হয়ে উঠব।”

রাজীব তার কানের পাশে হালকা হাসি দিয়ে বলল, “তুমি জানো, অনন্যা, আজ থেকে আমরা একে অপরকে আমাদের সৃষ্টির ভাষায় পূর্ণ করে দেব। তোমার কবিতা আর আমার ছবি মিলে এক নতুন রঙ সৃষ্টি করবে। আমি জানি, আমাদের প্রেমের ক্যানভাস কখনো ফুরাবে না।”

প্রদর্শনী শুরু হল। রাজীবের ছবিগুলি এক এক করে দর্শকদের সামনে উপস্থাপিত হচ্ছিল। প্রতিটি ছবি যেন তার অন্তর্গত অনুভূতিগুলির গভীরতা এবং প্রেমের অদৃশ্য আবেগ তুলে ধরছিল। তেমনি, অনন্যার কবিতা একের পর এক পাঠ করা হচ্ছিল, প্রতিটি শব্দ যেন রাজীবের ছবির রঙে বোনা হয়ে উঠছিল। তারা একে অপরকে ছাড়াই তৈরি করেছে এক দারুণ মেলবন্ধন।

বিচারক মণ্ডলী যখন রাজীব এবং অনন্যার কাজটি পর্যালোচনা করছিল, তখন এক বিচারক মন্তব্য করল, “এটি শুধু শিল্প নয়, এটি একটি প্রাণ। এই জুটি এক অসাধারণ সমন্বয় ঘটিয়েছে—একটি চিরন্তন সৃষ্টি।”

অনন্যা আর রাজীব একে অপরকে মুগ্ধ হয়ে দেখছিল। রাজীব বলল, “আমি জানি, আমাদের কাজ একে অপরকে পূর্ণ করে। তোমার কবিতায় আমার ছবি যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে, আর আমার ছবির রঙ তোমার কবিতাকে এক নতুন অর্থ দেয়।”

অনন্যা তার চোখে জল জমিয়ে বলল, “রাজীব, আমি কখনো ভাবিনি যে শিল্প এবং কবিতার মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক এত শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আমাদের ভালোবাসা এখন পৃথিবীর সামনে এক নতুন ক্যানভাসে রূপ নিয়েছে।”

বিচারকরা তাদের প্রশংসা করতে লাগল। এক বিচারক মন্তব্য করল, “রাজীব আর অনন্যার সৃষ্টিশীলতা যেন দুটি আলাদা সত্ত্বাকে একে অপরের মধ্যে একত্রিত করে দিয়েছে। এটা প্রমাণ করে যে প্রকৃত ভালোবাসা হলো দুই আত্মার মিলন, যেখানে সৃষ্টির প্রতি সম্মান এবং ভালোবাসা থাকে।”

যখন প্রদর্শনী শেষ হল, রাজীব এবং অনন্যা একে অপরকে জড়িয়ে ধরল। রাজীব বলল, “এটা আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত। আজ আমরা পৃথিবীকে দেখালাম যে, সত্যিকারের প্রেম কেবল দু’জন মানুষের মধ্যে নয়, বরং তা একটি জীবন্ত শিল্পকর্ম হয়ে ওঠে।”

অনন্যা হাসি দিয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমাদের ভালোবাসা এখন চিরকালীন একটি শিল্প হয়ে রয়ে যাবে। তুমি জানো, রাজীব, আমি তোমার সৃষ্টির জন্যই বেঁচে আছি। আর তুমি আমার কবিতার প্রতিচ্ছবি, আমার হৃদয়ের অনুভূতির সবচেয়ে সুন্দর রূপ।”

রাজীব তার কাঁধে হাত রেখে বলল, “তুমি ছাড়া আমি কিছুই নই, অনন্যা। তুমি আমার প্রেম, তুমি আমার সৃষ্টি। তুমি আমাকে সম্পূর্ণ করেছ, এবং আমরা একে অপরকে পূর্ণ করেছি।”

সেই রাতে, রাজীব এবং অনন্যার জীবনে শিল্প এবং কবিতার মাধ্যমে এক নতুন অধ্যায় শুরু হল। তারা জানত, তাদের সম্পর্ক কেবল দু’জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটি বিশ্বের সামনে একটি চিরন্তন শিল্পকর্ম হয়ে উঠবে, যা ভালোবাসার প্রকৃত শক্তি ও সৃষ্টির গভীরতা বোঝাবে।

এটি ছিল তাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত, যেখানে প্রেম, সৃষ্টিশীলতা এবং একে অপরের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ছিল। তাদের প্রেমের ক্যানভাস অক্ষয় হয়ে উঠল, যেখানে প্রতিটি দিন নতুন রঙে পূর্ণ, প্রতিটি মুহূর্তে তারা একে অপরকে পূর্ণতা দিয়ে গেল।

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

আমরা কারা

নতুন বাংলা ছোট গল্প

শেষ পত্র

স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে হারিয়ে যাওয়া এক প্রেমের গল্প! পড়ুন এবং অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন এক হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প সাথে, যেখানে এক বিবাহিত পুরুষ স্বপ্নে দেখা নীহারিকার প্রেমে অমোঘ টানে জড়িয়ে পড়ে।

স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে হারিয়ে যাওয়া এক প্রেমের গল্প! পড়ুন এবং অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন এক হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প সাথে, যেখানে এক বিবাহিত পুরুষ স্বপ্নে দেখা নীহারিকার প্রেমে অমোঘ টানে জড়িয়ে পড়ে।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: শেষ পত্র

কালের কোটর

পূর্বজন্মের পাপ কি এই জীবনে পিছু ছাড়ে না? বাড়ির ছাদের চিলেকোঠায় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় ছোট্ট রিংগো। তার বাবা পাগলের মতো খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করে এক রহস্যময় কঠোর—যা সময়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা এক ভয়ংকর সত্য বহন করছে। চোখের সামনে ঘটে যেতে থাকে অস্বাভাবিক সব ঘটনা—প্রাচীন ছায়ামূর্তি আর এক বিভীষিকাময় অতীতের স্মৃতি, যা আসলে তার নিজের! সে বুঝতে পারে, এই সবকিছু জড়িয়ে আছে তার পূর্বজন্মের এক অভিশাপের সাথে। সে কি পারবে এই অতৃপ্ত অতীত থেকে মুক্তি পেতে? নাকি সময়ের নিষ্ঠুর শিকল টেনে নিয়ে যাবে তাকে এক ভয়ংকর পরিণতির দিকে?

পূর্বজন্মের পাপ কি এই জীবনে পিছু ছাড়ে না? বাড়ির ছাদের চিলেকোঠায় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় ছোট্ট রিংগো। তার বাবা পাগলের মতো খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করে এক রহস্যময় কঠোর—যা সময়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা এক ভয়ংকর সত্য বহন করছে। চোখের সামনে ঘটে যেতে থাকে অস্বাভাবিক সব ঘটনা—প্রাচীন ছায়ামূর্তি আর এক বিভীষিকাময় অতীতের স্মৃতি, যা আসলে তার নিজের!…

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: কালের কোটর

দানব মামার বন্ধু

"দানব মামার বন্ধু" একটি মজার ছোটদের গল্প, যেখানে মুন্না ও এক দানবের অদ্ভুত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। রূপকথার গল্পের আবহে দানব মামা তার ভালো ব্যবহার দিয়ে গ্রামবাসীর মন জয় করে।

"দানব মামার বন্ধু" একটি মজার ছোটদের গল্প, যেখানে মুন্না ও এক দানবের অদ্ভুত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। রূপকথার গল্পের আবহে দানব মামা তার ভালো ব্যবহার দিয়ে গ্রামবাসীর মন জয় করে।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: দানব মামার বন্ধু

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!