রাতের অন্ধকারে ঘুমের দেশে ভাসছিলাম, ঠিক সেই সময় জোরে জোরে টান লাগলো। চোখ খুলে তাকাতেই দেখি, আমি বাথরুমের কমোডে বসে আছি। কিন্তু পরিস্থিতিটা অদ্ভুত। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার, মনে হয় না কোনো আলো জ্বালানো আছে। শুধু কমোডের চারপাশেই একটা কুয়াশার মতো জিনিস ঘুরছে, যেন গোটা বাথরুমটাকে গিলে ফেলতে চাইছে। এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা থেকে কি রেহাই পেতে পারবে? ভুতের গল্প পড়তে ভালোবাসেন? তাহলে আজই পড়ুন এই রোমাঞ্চকর বাংলা ভুতের গল্প।

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » জীবন্ত মুখোশ

জীবন্ত মুখোশ

রাতের অন্ধকারে ঘুমের দেশে ভাসছিলাম, ঠিক সেই সময় জোরে জোরে টান লাগলো। চোখ খুলে তাকাতেই দেখি, আমি বাথরুমের কমোডে বসে আছি। কিন্তু পরিস্থিতিটা অদ্ভুত। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার, মনে হয় না কোনো আলো জ্বালানো আছে। শুধু কমোডের চারপাশেই একটা কুয়াশার মতো জিনিস ঘুরছে, যেন গোটা বাথরুমটাকে গিলে ফেলতে চাইছে। এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা থেকে কি রেহাই পেতে…

রাতের অন্ধকারে ঘুমের দেশে ভাসছিলাম, ঠিক সেই সময় জোরে জোরে টান লাগলো। চোখ খুলে তাকাতেই দেখি, আমি বাথরুমের কমোডে বসে আছি। কিন্তু পরিস্থিতিটা অদ্ভুত। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার, মনে হয় না কোনো আলো জ্বালানো আছে। শুধু কমোডের চারপাশেই একটা কুয়াশার মতো একটা জিনিস ঘুরছে, যেন গোটা বাথরুমটাকে গিলে ফেলতে চাইছে। সেই কুয়াশাটা একঘেয়ে সাদা না, ধীরে ধীরে রং বদলাচ্ছে। এক মুহূর্ত সবুজ, আবার পর মুহূর্তে রক্ত লাল, ঠিক যেন কোনো রঙের খেলা।

কিছুক্ষণ চেয়ে থাকার পর, বুঝতে পারলাম এই কুয়াশাটাই আমার চেতনা ধরে রেখেছে। যতই কুয়াশা ঘন হচ্ছে, ততই আমার চিন্তাভাবনা স্পষ্ট হচ্ছে। আমি উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু পা দুটো যেন মেঝের সাথে আঠা দিয়ে আটকে আছে। ঘাবড়ে গিয়ে চিৎকার করতে গেলাম, কিন্তু শব্দ বেরোল না। ঠিক সেই সময় শুনলাম একটা মৃদু গুনগুন শব্দ। কান খাঁড় করে শুনলাম, শব্দটা যেন আসছে ওপরের দিক থেকে।

মাথা তুলে উপরে তাকিয়ে দেখি, বাথরুমের সিলিংটা আর নেই। তার জায়গায় এক বিশাল, অসীম নীল আকাশ। তারার ঝলমলে আলোয় সে ছেয়ে গেছে। কিন্তু এই আকাশে যে জিনিসটা চোখে পড়ল, তাতেই শিরশিরিয়ে উঠলো গা – আকাশে ঝুলছে অসংখ্য মানুষের মুখোশ। প্রত্যেকটা মুখোশ আলাদা, কেউবা হাসিমাখা, কেউবা কান্না করছে, কেউবা আবার চিৎকার করছে যেন। মুখোশগুলো ঝুলছে নিঃশব্দে, আর সেই গুনগুন শব্দটা আসছে তাদের থেকেই।

আমি যতটা উঠতে চেষ্টা করছিলাম, ততটাই যেন কমোডে আটকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ, একটা মুখোশ আমার দিকে ঝুঁকে পড়ল। সেটা ছিলো এক বৃদ্ধার মুখোশ, তার চোখ দুটো গভীর গর্তের মতো, আর মুখ ছিলো অস্বাভাবিকভাবে ফাঁকা। আমি চেঁচাতে চাইলাম কিন্তু শব্দ বেরোল না। মুখোশটা আরো কাছে এলো, যেন আমার মুখের সাথে লাগবে ঠিক তখনই একটা ধাক্কা লাগলো। চোখ খুললাম, ঘুম ভাঙলো। আমি স্বপ্ন দেখছিলাম।

বাথরুমের আলো জ্বালা আছে, সব স্বাভাবিক লাগছে। কিন্তু স্বপ্নের ভয়টা এখনো কাটেনি। ধীরে ধীরে শ্বাস নিলাম। জানি না কেন, মনে হচ্ছিল ঘটনাটা সত্যি ঘটেছিল।

পরেরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো। স্নান সেরে বাইরে এলাম। খাবার টেবিলে দাদু বসে ছিলেন। তিনি ছোটবেলায় একজন বিখ্যাত চিত্রকার ছিলেন। দাদুকে দেখে স্বপ্নের কথা মনে পড়ল। দাদুর ঘরে ঢোকার আগে একটু থমকে গেলাম। তার ঘরটা ছিল একপ্রকার গ্যালারি। দেওয়াল জুড়ে ঝুলছিল তার আঁকা অসংখ্য ছবি। প্রত্যেকটা ছবিতেই একটা করে মুখ ফুটে উঠেছিল, যেন জীবন্ত মানুষ। তবে, কোনো মুখোশের মতো নিথর না, প্রত্যেকটাতেই ছিল জীবন্ত মানুষের চোখের দৃষ্টি, মুখের ভাব।

দরজা খুলে ঢুকে দেখি, দাদু জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছেন। হাতে একটা নতুন ছবি ধরা। ছবিটা আঁকা অসমাপ্ত, তবে মাঝখানে একটা বৃদ্ধার মুখ ফুটে উঠেছে। সেই মুখটা দেখে আমার রক্ত জমে গেল। ছবির বুড়োটির চোখ দুটো ছিল গভীর গর্তের মতো, ঠিক স্বপ্নে দেখা মুখোশের মতো। আর মুখটা ছিল অস্বাভাবিকভাবে ফাঁকা।

“কী হলো রে, এমন চেয়ে আছিস কেন?” দাদু আমার চেহারা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন।

আমি স্বপ্নের কথাটা গুলিস্ত করলাম। দাদু শুনে চুপ করে গেলেন। তারপর এক লম্বা শ্বাস নিয়ে বললেন, “এই ছবিতে যে বুড়ো মানুষটাকে আঁকছি, সে আমার শিক্ষক ছিলেন। খুব মেধাবী শিল্পী ছিলেন, তবে একটু অদ্ভুত মানুষ।”

“অদ্ভুত মানে?” জিজ্ঞাসা করলাম আমি।

“তিনি বিশ্বাস করতেন, শিল্পের মধ্যে মৃতের আত্মা আটকা পড়ে থাকে। মানে, একটা শিল্প যতই বাস্তবসম্মত হয়, ততই তার মধ্যে মডেলের কিছুটা জীবনশক্তি ঢুকে যায়।” দাদু বলতে বলতে থেমে গেলেন, তার চোখ ছিল দূরে হারিয়ে যাওয়া কোনো স্মৃতিতে নিবদ্ধ।

“তবে তো…” শুরু করতেই দাদু আমার কথা কেটে দিলেন।

“তবে তো এই ছবিগুলো… হ্যাঁ, ঠিক ধরেছিস।” দাদু একটু থেমে বললেন, “আমি শিক্ষকের এই তত্ত্ব নিয়ে খেলা করছিলাম। তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর ব্যবহৃত রং, তুলি সবকিছু নিয়ে এই ছবিগুলো আঁকা শুরু করি।”

কথাটা শুনে আমার শিরশিরিয়ে উঠলো। স্বপ্নে দেখা মুখোশগুলো, দাদুর এই অদ্ভুত তত্ত্ব, সবকিছু মিশে গিয়ে একটা অজানা ভয় জাগল মনে।

“কিন্তু দাদু, এটা ঠিক হচ্ছে না, না হয় ছবিগুলো নষ্ট করে দাও।”

দাদু হাসলেন, একটা তীক্ষ্ণ, অদ্ভুত হাসি। “না, রেখে দেব। মৃতের সাথে খেলা করছি ঠিকই, কিন্তু দেখা যাক, শেষ কে জেতে।”

দাদুর কথাটা শুনে আমার গা শিউরে উঠলো। কিছু বলতে পারলাম না। দাদুর ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম, কিন্তু মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথার মধ্যে – শেষ কে জেতে? দাদুর কথায় একটা অশনীয় চ্যালেঞ্জের গন্ধ পাচ্ছিলাম। রাতে ঘুম আসতে চাইল না। বারবার মনে হচ্ছিল, স্বপ্নে দেখা মুখোশগুলো আর দাদুর ছবির বুড়ো মানুষটা যেন এক হয়ে যাচ্ছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে সোজা দাদুর ঘরে গেলাম।

দেখি, দাদু নেই। ছবির কাছে একটা খাতা পড়ে আছে। খাতাটা খুলে পড়তেই চোখ কপালে উঠল। সেটা ছিল দাদুর ডায়েরি। আর ডায়েরিতে লেখা ছিল, “আজকে ছবিতে বুড়োর চোখ দুটো আঁকলাম। আজ রাতে তিনি আমার স্বপ্নে এলেন।”

আমার গা শিউরে উঠল। দাদুর ডায়েরি পড়তে থাকলাম। প্রতিদিনের লেখা ছিল। প্রতিদিনই লেখা ছিল কোন অংশটা আঁকা হল, এবং সেই রাতে কি স্বপ্ন দেখলেন দাদু। কখনো দেখতেন ছবির মানুষটিকে, কখনো দেখতেন অসংখ্য মুখোশ।

লেখা শেষ হয়েছিল গতকাল রাতে। লেখা ছিল, “ছবিটা প্রায় শেষ। আজ রাতে হয়তো শেষ লড়িটা দেওয়া যাবে। কিন্তু একটা অদ্ভুত টান অনুভব করছি। যেন ছবিটা আমাকে টানছে নিজের দিকে।”

ডায়েরিটা বন্ধ করে ফেললাম। মনে হচ্ছিল আমার মাথার ভিতরে ঘড়ি ঘড়ি করে গতি বাড়িয়েছে। দাদু কোথায় গেলেন? ছবির কাছে গিয়ে দেখি, ছবিটা আগের দিনের থেকে আলাদা লাগছে। বুড়ো মানুষটার চোখ দুটো এখন আর গর্তের মতো নেই, বরং জ্বলজ্বল করছে, যেন জীবন্ত মানুষের চোখ। আর মুখটাও আর ফাঁকা নেই, একটা হাসি ফুটে আছে।

কিন্তু সেই হাসিটা কোনো সুখের হাসি না, বরং এক অশনীয় বিজয়ের হাসি। হঠাৎ, ছবির কাছ থেকে একটা ঠান্ডা বাতাস বেরোল। বাতাসটা আমার গায়ে লাগতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।

চোখ খুললাম, চারপাশে অন্ধকার। বুঝতে পারলাম, আবার বাথরুমের কমোডে বসে আছি। কিন্তু এবার কেউ চিৎকার করছে না, কোনো গুনগুন শব্দও নেই। শুধু একটা গভীর নিঃশ্বাসের শব্দ আসছে আমার পাশ থেকে।

মাথা ঘুরিয়ে দেখি, দাদু আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু দাদুর চেহারাটা আর আগের মতো নেই। ঠিক যেন ছবির বুড়ো মানুষটা জীবন্ত হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে একই রকম অশনীয় হাসি দিলেন। তার চোখ দুটো ঝলমল করছিল।

“শেষ কে জেতে, বুঝলি?” একটা গলার শব্দ এলো দাদুর মুখ থেকে। কিন্তু সেটা ছিল দাদুর গলা না, আরো একটা অচেন গলা।

“বুঝতে পারছি না দাদু,” আমি থরথর করে বললাম। “কী হচ্ছে এসব?”

“হচ্ছে?” দাদুর মুখ থেকে ভেসে আসা অচেনা গলাটা বলল। “হচ্ছে এই যে, তুই হেরে গেছিস।”

“হেরে গেছি?” আমার মাথা ঘুরতে লাগলো। “কীভাবে?”

“তুই ভেবেছিলি তুই আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবি।” দাদু – না, সেই অচেনা জিনিসটা – আমার দিকে এগিয়ে এলো। “তুই ভেবেছিলি তুই আমার শিল্পের মাধ্যমে আমাকে আটকাতে পারবি। কিন্তু তুই ভুল।”

“কিন্তু…” আমি কথা শেষ করতে পারলাম না। অচেনা জিনিসটার হাত আমার কাঁধে এসে পড়ল। তার হাতের স্পর্শ বরফের মতো ঠান্ডা ছিল।

“তুই আমার শেষ ছবির অংশ।” অচেনা জিনিসটা বলল। “এখন তুই আমার সাথে চল।”

আমি চিৎকার করতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু কোনো শব্দ বেরোল না। অচেনা জিনিসটার হাতের চাপে আমার শরীর ভেঙে পড়তে লাগলো।

“না!” আমি চিৎকার করলাম। “আমাকে ছেড়ে দাও!”

কিন্তু আমার চিৎকার অন্ধকারে হারিয়ে গেল। অচেনা জিনিসটা আমাকে টেনে নিয়ে গেল তার অন্ধকার জগতের দিকে।

পরের দিন সকালে, আমার বাড়ির লোকজন আমাকে বাথরুমের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখলো। আমি জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম। ঘুম থেকে উঠে আমি সবকিছু মনে করতে পারলাম। দাদুর ছবি, অচেনা জিনিসটা, তার ঠান্ডা হাতের স্পর্শ…

আমি জানি, আমি কিছু ভয়ানক জিনিসের সাক্ষী হয়েছি। কিন্তু কেউ আমার কথা বিশ্বাস করবে না। আমি এখন একা। দাদু কোথায়, তা আমি জানি না। হয়তো সেই অচেনা জিনিসটা তাকে গিলে ফেলেছে। আমি ভয় পাচ্ছি। আমি জানি না, কীভাবে আমি এই ভয় থেকে মুক্তি পাব।

এই ঘটনার পর আমার জীবন বদলে গেল। আমি সবসময় ভয়ের মধ্যে থাকতাম। মনে হতো, সেই অচেনা জিনিসটা আমার পেছনে পেছনে ঘুরছে। একদিন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি আর এই ভয়ের মধ্যে থাকতে পারব না। আমাকে কিছু করতে হবে। আমি দাদুর ঘরে গেলাম। তার ছবিগুলো সব অদৃশ্য হয়ে গেছে। শুধু একটা খালি ক্যানভাস ঝুলছে দেয়ালে। আমি ক্যানভাসটার সামনে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করলাম। আমি মনে মনে সেই অচেনা জিনিসটাকে ডাকলাম।

“আমি তোমাকে ভয় পাই না,” আমি বললাম। “তুমি যদি আমার সামনে আসো, আমি তোমার সাথে লড়াই করব।”

কিছুক্ষণ কিছুই হলো না। তারপর, আমার পেছনে একটা শীতল বাতাস বইল। চোখ খুলে পেছনে তাকিয়ে কিছুই দেখতে পেলাম না। কিন্তু আমার গা শিউরে উঠলো। সেই শীতল বাতাসটা আমাকে জানিয়ে দিল, আমার চ্যালেঞ্জ সে গ্রহণ করেছে।

নিঃশ্বাস চেপে ধরে রেখে এগিয়ে গেলাম। ক্যানভাসটা ছুঁয়ে দেখলাম, এটা আর খালি ছিল না। একটা অস্পষ্ট ছবি আঁকা ছিল, যেন কোনো আঁধার ঘরে দূর থেকে দেখা যাচ্ছে। ছবির মাঝখানে দুটো ঝলমলে লাল চোখ জ্বলজ্বল করছিল।

হঠাৎ, ছবির কাছ থেকে একটা গভীর গর্জন শব্দ এলো। শব্দটা আমার মাথার ভিতরে প্রতিধ্বনিত হলো। আমি ভয়ে পিছিয়ে এলাম, কিন্তু আমার মনে জেদ জাগল। আমার দাদুর ছবিগুলো কোথায় গেল, এবং কিভাবে এই অন্ধকার জিনিসটাকে পরাজিত করা যায় – সেই সম্পর্কে কোনো সূত্র খুঁজে বের করতে হবে।

পুরো বাড়ি খুঁজলাম। দাদুর রেখে যাওয়া নোট, অসমাপ্ত ছবি, রং, তুলি – সবকিছু খুঁজলাম। শেষে, দাদুর ঘরের একটা আলমারিতে একটা পুরোনো খাতা পেলাম। খাতাটা খুলে দেখি, সেটা দাদুর গবেষণা নোট।

নোটে লেখা ছিল, কিছু কিছু শিল্পী বিশ্বাস করতেন, শিল্পের মাধ্যমে আত্মাকে আবদ্ধ করা যায়, কিন্তু সেটা ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। আ আরো লেখা ছিল, কিছু বিশেষ রং মিশ্রণ ও প্রতীক ব্যবহার করে আবদ্ধ আত্মাকে মুক্ত করা যায়। একটা আশার আলো জ্বলে উঠলো মনে। হয়তো দাদু এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই নিজেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ করতে পারেননি।

নোটে দেওয়া পদ্ধতি অনুযায়ী, বিশেষ রং মিশ্রণ করে তুলি ধরলাম। ক্যানভাসের উপর আঁকা অস্পষ্ট ছবির দিকে তাকিয়ে, দাদুর মুক্তির জন্য একটা প্রতীক আঁকতে শুরু করলাম।

হাত কাঁপছিল, কিন্তু থামালাম না। আঁকার সময় মনে মনে দাদুকে ডাকছিলাম।

কিছুক্ষণ পর, ক্যানভাসে আঁকা লাল চোখ দুটো আরো জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠলো। বাড়ির আলো নিভে গেল, ঘরে অন্ধকার নেমে এলো। একটা শীতল বাতাস বইল, তারপর একটা চিৎকার শব্দ। কিন্তু সেটা আমার চেনা দাদুর চিৎকার না, আরো একটা অচেনা গর্জন।

কয়েক সেকেন্ড পর, আলো ফিরে এলো। ক্যানভাসের উপর আঁকা ছবিটা আর অস্পষ্ট ছিল না। এটা এখন দাদুর প্রতিকৃতি। কিন্তু দাদুর চোখ দুটো বন্ধ ছিল, যেন শান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন।

আমি দাদুর কাছে ছুটে গেলাম। তিনি কি জীবিত?  শ্বাস নিতে চেষ্টা করলাম কিন্তু দাদুর শরীরে কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। মুখটা শান্ত ছিল, কিন্তু ঠান্ডা। হতাশা গেঁথে ধরলো। দাদুকে বাঁচানো গেল না, কিন্তু অন্তত সে আর সেই অন্ধকার জিনিসটার কব্জায় নেই।

কিছুক্ষণ নিথর চোখে দাদুর দিকে তাকিয়ে থাকার পর, মনে হলো আমার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। শরীর জুড়িয়ে একটা শীতল স্পর্শ অনুভব করলাম।

ধীরে ধীরে পেছনে ফিরে তাকালাম। কিন্তু কেউ ছিল না। বাড়িতে আর একা থাকতে পারছিলাম না। আমার মা ও বোনকে সব খুলে বলা দরকার। কিন্তু তারা বিশ্বাস করবে?

না, হয়তো করবে না। কিন্তু চেষ্টা করে দেখতে হবে। দাদুর ছবিগুলো কোথায় গেল, সেটাও খুঁজে বের করতে হবে। হয়তো সেগুলোর মধ্যে কোনো সূত্র লুকিয়ে আছে।

দাদুর মৃত্যুর শোকের পাশাপাশি, আমার ভেতরে জেগে উঠলো এক অদ্ভুত দৃঢ়তা। দাদুর গবেষণা পূর্ণ করতে হবে। শিল্পের মধ্যে আবদ্ধ আত্মাদের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে মানুষকে সাবধান করতে হবে।

এটা হয়তো সহজ হবে না। কিন্তু আমি একা নেই। দাদুর শেষ ছবিতে আমি তাঁকে মুক্তি দিয়েছি, এখন আমি দায়িত্ব নিয়েছি, এই ধরনের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা আর কারো সাথে না ঘটে।

এই অদ্ভুত অভিজ্ঞতা আমার জীবন বদলে দিয়েছে। এখন আমি জানি, কিছু কিছু শিল্প শুধু চোখকে মুগ্ধ করে না, তার মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে অন্ধকারের শক্তি। আর সেই শক্তির সাথে লড়াই করার দায়িত্ব এখন আমার।

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

About The Author

নতুন বাংলা ছোট গল্প

জীবনপথের সন্ধানে

মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প: সঞ্জয়ের আত্ম-উদ্বোধন এবং নতুন জীবন শুরু করার যাত্রা। অনুপ্রেরণা এবং বিশ্বাসের মাধ্যমে জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার একটি সাফল্যমণ্ডিত গল্প।

মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প: সঞ্জয়ের আত্ম-উদ্বোধন এবং নতুন জীবন শুরু করার যাত্রা। অনুপ্রেরণা এবং বিশ্বাসের মাধ্যমে জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার একটি সাফল্যমণ্ডিত গল্প।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: জীবনপথের সন্ধানে

নিঃশব্দ মুক্তি

"নিঃশব্দ মুক্তি" একটি বাংলা ছোট গল্প যেখানে থালিয়া, একজন নির্যাতিত স্ত্রী, ফুটবল আসক্ত স্বামী মার্কের অত্যাচারের শৃঙ্খল ভেঙে নিজের ও মেয়ে গাব্বির জন্য নতুন জীবনের সন্ধান করে। গল্পটি সমাজের অন্ধকার বাস্তবতা ও সাহসিকতার মাধ্যমে নারীর মুক্তির পথে যাত্রাকে তুলে ধরে।

"নিঃশব্দ মুক্তি" একটি বাংলা ছোট গল্প যেখানে থালিয়া, একজন নির্যাতিত স্ত্রী, ফুটবল আসক্ত স্বামী মার্কের অত্যাচারের শৃঙ্খল ভেঙে নিজের ও মেয়ে গাব্বির জন্য নতুন জীবনের সন্ধান করে। গল্পটি সমাজের অন্ধকার বাস্তবতা ও সাহসিকতার মাধ্যমে নারীর মুক্তির পথে যাত্রাকে তুলে ধরে।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: নিঃশব্দ মুক্তি

মুক্তির পথে প্রেম

১৯৪৩ সালের ভারতীয় মুক্তির আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত এই ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য গল্পে বিজয় ও সুফিয়ার প্রেম এবং সংগ্রামের কাহিনী উঠে এসেছে। বাংলা ছোট গল্পের এই অধ্যায়ে, সাহসী অভিযান ও বিপদের মধ্যে ভালোবাসা ও দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক হয়ে ওঠে তাদের জীবন।

১৯৪৩ সালের ভারতীয় মুক্তির আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত এই ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য গল্পে বিজয় ও সুফিয়ার প্রেম এবং সংগ্রামের কাহিনী উঠে এসেছে। বাংলা ছোট গল্পের এই অধ্যায়ে, সাহসী অভিযান ও বিপদের মধ্যে ভালোবাসা ও দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক হয়ে ওঠে তাদের জীবন।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: মুক্তির পথে প্রেম

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!