নিশ্চিন্দিপুরের চায়ের ক্যাফেতে লেখক আকাশের জীবনে ঢেউ খেলে আসে ঐশী। তার স্বাধীনচেতা মন ও ঈশানের মতো চোখ আকাশের লেখায় জাগিয়ে দেয় নতুন স্রোত। এটি একটি মন ছুঁয়ে যাওয়া বাংলা গল্প, ভালোবাসা, বিচ্ছেদ ও স্মৃতির মিষ্ট-মধুর গল্প।

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » লেখা হয়নি সবচেয়ে সুন্দর গল্পটা

লেখা হয়নি সবচেয়ে সুন্দর গল্পটা

নিশ্চিন্দিপুরের চায়ের ক্যাফেতে লেখক আকাশের জীবনে ঢেউ খেলে আসে ঐশী। তার স্বাধীনচেতা মন ও ঈশানের মতো চোখ আকাশের লেখায় জাগিয়ে দেয় নতুন স্রোত। এটি একটি মন ছুঁয়ে যাওয়া বাংলা গল্প, ভালোবাসা, বিচ্ছেদ ও স্মৃতির মিষ্ট-মধুর গল্প।

আমাদের WA চ্যানেল জয়েন করুন

এই মাসের সেরা ভুতের ছোট গল্প, পড়ুন ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন – ঝড়ের রাত

অধ্যায় ১: পরিচিতি

কলকাতা শহর থেকে একটু দূরে নিশ্চিন্দিপুর। একটি ছোট্ট শহরতলি, যা শহুরে কোলাহল থেকে মুক্ত, কিন্তু তাতেও যেন এক অন্যরকম ব্যস্ততা। নিশ্চিন্দিপুরের দু-পাশে গাছে ঢাকা রাস্তা, শেষ প্রান্তে একটি পুরানো বটগাছ। সেই বটগাছের তলায় ছোট্ট একটি চায়ের ক্যাফে, যার নাম ‘আধুনিক কবি’। এই ক্যাফে যেন শুধু চা-কফি খাওয়ার জায়গা নয়, বরং মানুষের অনুভূতিগুলোকে বুননের জন্য এক জায়গা।

এই ক্যাফের এক কোণায় বসে আকাশ তার নতুন উপন্যাসের প্লট নিয়ে ব্যস্ত। আকাশ একজন রোমান্টিক উপন্যাস লেখক। তার লেখা বই পাঠকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়, কিন্তু বাস্তব জীবনে সে যেন এক নিঃসঙ্গ চরিত্র। টেবিলের উপর তার খাতা, কফির কাপ, আর গভীর চিন্তার মধ্যে ডুবে থাকা আকাশ যেন নিজেকে পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছিল।

ঠিক তখনই, দরজার ঘণ্টি বেজে উঠল। আকাশ তার খাতায় চোখ রাখার মধ্যেই টের পেল, কেউ তার পাশে এসে বসেছে। এক ঝলক তাকাতেই দেখলো, উজ্জ্বল রোদে ঝলমলে একটি মুখ। চুলে গাঁথা একটি গোলাপ, কপালে ছোট্ট একটি লাল টিপ। সাদা-নীল চুড়িদার পরা মেয়েটির চোখে যেন এক অদ্ভুত আকর্ষণ। আকাশের খাতার দিকে চোখ রেখেই সে বলল, “আপনার লেখা পড়তে পারি?”

এমন প্রশ্নে প্রথমে আকাশ একটু থমকে গেল। “আমার লেখা? এই খাতা তো কেউ পড়ে না,” বলে খাতা সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু মেয়েটি নাছোড়বান্দা। “একটু পড়তেই দাও না! আমি বুঝতে পারি, আপনি নিশ্চয়ই ভালো লেখেন।”

আকাশ রাগ করতে চেয়েও পারল না। ঐশীর চোখে-মুখে ছিল এমন এক নিঃশব্দ মুগ্ধতা, যা তাকে নিরস্ত করে দিল। “আচ্ছা, পড়ো,” আকাশ বলল।

খাতা খুলে প্রথম কয়েকটি লাইন পড়ে ঐশী বলে উঠল, “আপনার লেখায় যে গভীরতা আছে, তা শুধু গল্প নয়, যেন জীবনের কথা বলে।”

আকাশের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। অনেকদিন পর কেউ তার লেখাকে এমন করে অনুভব করল। “তুমি কি সবসময় এমন অচেনা লোকের পাশে বসে তাদের লেখা পড়ো?” আকাশ মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল।

“না,” ঐশী বলল, “কিন্তু আপনার মতো মানুষের সঙ্গে দেখা হওয়া খুবই বিরল। আর, আমি ভেবেছিলাম, আপনি রেগে যাবেন। তবে আপনি তো বেশ ভালোই মনের মানুষ।”

“রাগ করিনি, তবে তুমি একটু অন্যরকম,” আকাশ বলল।

“অন্যরকম হওয়াটাই তো মজার,” ঐশী হেসে বলল।

এই প্রথমবার, আকাশ তার নিঃসঙ্গ জীবনে কিছুটা উষ্ণতার অনুভব করল। ঐশীর সেই প্রাণবন্ত হাসি আর সরল আচরণ আকাশকে মুগ্ধ করেছিল।

সেদিনই শুরু হল এক অদ্ভুত সম্পর্কের সূচনা। প্রথমে কেবল কথা, তারপর ধীরে ধীরে গল্প। লেখা নিয়ে আলোচনা থেকে শুরু করে জীবনের ছোটখাটো ঘটনা – সবই যেন তাদের মধ্যে এক বিশেষ সেতু গড়ে তুলল।

একদিন চায়ের কাপ হাতে ঐশী বলল, “তোমার লেখায় যে প্রেমের গল্পগুলো থাকে, সেগুলো কি কখনো বাস্তবে অনুভব করেছ?”

আকাশ একটু চুপ থেকে বলল, “না। আমার প্রেম শুধু গল্পেই। বাস্তব জীবনে আমি… আমি তেমন কোনো অনুভূতিই পাইনি।”

“তাহলে বুঝতে পারছি, তোমার গল্পগুলো শুধু কল্পনা নয়, তোমার নিজের অনুভূতির খোঁজ।” ঐশী গভীরভাবে তাকাল আকাশের দিকে।

এই কথোপকথনের মাঝেই সূর্য ডুবে গেল। ক্যাফের বাইরের আলো একটু একটু করে কমে আসছিল। আকাশ আর ঐশী সেই সন্ধ্যার আকাশের নিচে বসে রইল, একে অপরের গল্প শোনাতে শোনাতে। তাদের মধ্যে যে রসায়ন তৈরি হচ্ছিল, তা হয়তো তখনই স্পষ্ট ছিল না, কিন্তু সেই মুহূর্তগুলোই এক নতুন গল্পের ভিত্তি তৈরি করেছিল।

এইভাবে, দুজনের বন্ধুত্বের সূচনা হল। ঐশীর ঝড়ের মতো আগমনে আকাশের জীবনে যেন এক নতুন রং ছড়িয়ে পড়ল। ‘আধুনিক কবি’ ক্যাফে শুধু আর চা-কফির জায়গা রইল না, বরং সেখানে গড়ে উঠল ভালোবাসার নতুন গল্প।

বাংলা ছোট গল্প - মধুমতির রহস্য: লেখক অবনী যখন তার বন্ধু শ্যামলকে খুঁজতে বের হন, তখন তিনি নিজেকে এক রহস্যময় রাজ্য, মধুমতির, বিপজ্জনক জগতে ফেলে দেন। এই বাংলা গল্পটিতে অবনীকে রক্ষাকর্তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে, প্রাচীন শক্তিকে উন্মোচন করতে এবং কল্পনার সীমানা পেরিয়ে যেতে দেখুন। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় ২: আমাদের ভালবাসার গল্প

একদিন ক্যাফের চেনা টেবিলে বসে আকাশ তার নতুন উপন্যাসের কিছু পৃষ্ঠা নিয়ে কাজ করছিল। সামনের কফির কাপটা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল, কারণ তার মন ডুবে ছিল কাগজের শব্দগুলোর গভীরে। ঐশী পাশের চেয়ারে এসে বসতেই আকাশ এক চমকানো দৃষ্টিতে তাকালো। তার চোখে ছিল একরাশ আনন্দ এবং অপ্রত্যাশিত বিস্ময়।

ঐশী হাসিমুখে বললো, “তোমার লেখা অনেক ভালো লাগছে। কিন্তু জানো, আকাশ, তোমার সবচেয়ে সুন্দর গল্পটা এখনো লেখা হয়নি।”

আকাশ থমকে গেল। খাতা বন্ধ করে বললো, “সর্বশ্রেষ্ঠ গল্প? সেটা আবার কী?”

ঐশী মৃদু হাসল। তারপর এক মুহূর্তের জন্য আকাশের হাত ধরলো। তার চোখে এক অদ্ভুত মায়া, যেন সেখানে পুরো পৃথিবীর ভালোবাসা লুকিয়ে আছে।

“আমাদের গল্প। দুইজন অচেনা মানুষের প্রেমের গল্প। এক কাপ চা আর একটুকরো কেক দিয়ে শুরু হয়েছিল। সেই গল্প যে শুধুই কল্পনা নয়, বরং সত্য আর সৌন্দর্যের সীমায় পৌঁছে যায়,” ঐশী এক নিঃশ্বাসে বললো।

আকাশ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল। ঐশীর কথাগুলো যেন সরাসরি তার মনের গভীর কোণে গিয়ে আঘাত করলো। বহুদিন ধরে সে নিজের জীবনের দিকে ফিরে তাকায়নি। এতদিন তার জীবনের কেন্দ্রে ছিল কেবল তার লেখালেখি, খ্যাতি আর অর্থ। কিন্তু ঐশীর সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত যেন তাকে তার হারানো সত্যের কাছে ফিরিয়ে আনছিল।

“তুমি কি জানো, ঐশী? এতদিন ভাবতাম, আমার লেখা গল্পগুলোই আমার জীবনের সেরা কাজ। কিন্তু তুমি বললে, সেই সেরা গল্পটা এখনো লেখা হয়নি,” আকাশ গম্ভীর স্বরে বলল।

“তোমার প্রতিটা গল্পে যে আবেগ আর গভীরতা আছে, তা তো তোমার নিজেরই জীবন থেকে আসা। আমি চাই, তুমি সেই গল্পটা লেখো যা শুধু তোমার নয়, আমাদের দুজনের। এমন গল্প যা জীবনের সরলতাকে উদযাপন করে,” ঐশী তার চোখে চোখ রেখে বলল।

ক্যাফের জানালা দিয়ে রোদের নরম আলো পড়ছিল তাদের মুখে। বাইরে বাতাসে গাছের পাতা দুলছিল, আর ভিতরে সেই আলো-ছায়ার খেলায় যেন সময় থেমে গিয়েছিল। ঐশী আর আকাশের সেই মুহূর্তটি যেন কোনো ছবির মতো স্থির হয়ে গেল।

“তুমি কি জানো, তোমার সঙ্গে এই কয়েকদিনে আমি কতটা বদলেছি? আগে আমার জীবনটা ছিল নিঃসঙ্গ আর শুকনো। এখন প্রতিদিন নতুন মনে হয়। প্রতিটি সকাল যেন তোমার উপস্থিতির প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসে। তুমি আমাকে নতুন চোখে জীবনকে দেখতে শিখিয়েছ,” আকাশ ধীরে ধীরে বলল।

“তোমার জীবনের গল্প লিখতে আমি সাহায্য করব, আকাশ,” ঐশী বলল। “তোমার লেখায় শুধু কল্পনার রঙ নয়, বাস্তবের অনুভূতি যোগ করো। জীবনের সেই সব ছোট মুহূর্তগুলোকে উদযাপন করো যা আমাদের এক করে বেঁধে রেখেছে।”

আকাশ এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল। তার মনে হল, এই মেয়েটিই তার জীবনের সেই অনুপ্রেরণা, যা এতদিন ধরে সে খুঁজে চলেছিল। ঐশীর কথা শুনে তার চোখের কোণ ভিজে উঠল।

“আমার লেখাগুলো হয়তো হাজার হাজার মানুষের মন ছুঁয়েছে, কিন্তু তুমি আজ আমাকে নতুন এক গল্প শিখিয়ে দিলে। এতদিন যেটা খুঁজে বেড়িয়েছি, সেটা তো আমার সামনেই ছিল,” আকাশ বলল।

ঐশী হেসে বলল, “তাহলে শুরু করো, আকাশ। আমাদের গল্পটা লিখে ফেলো। কিন্তু মনে রেখো, আমাদের গল্প কাগজে আটকে থাকবে না। এটা আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে জ্বলে উঠবে।”

সেদিন থেকে আকাশ নতুন উদ্যমে লিখতে শুরু করল। কিন্তু প্রতিবার ঐশীর কথা আর তাদের মুহূর্তগুলোর কথা মনে পড়লেই তার কলম থেমে যেত। কাগজে লেখা শব্দগুলোর চেয়ে ঐশীর সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত যেন অনেক বেশি জীবন্ত ছিল।

ক্যাফের সেই চেনা পরিবেশে তাদের গল্পের সূচনা হলেও, আকাশ বুঝতে পারল, এই গল্পের গভীরতা কেবল তাদের কথোপকথনেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি তাদের হাসি, শেয়ার করা নীরবতা, আর চায়ের ধোঁয়ায় লুকিয়ে থাকা ভালোবাসার ছোঁয়া।

তাদের গল্প নতুনভাবে লিখতে শুরু করল আকাশ, যেখানে প্রতিটি বাক্য জীবনের সরলতাকে উদযাপন করে। আর সেই গল্পের প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন শুধু ঐশী নয়, বরং জীবনের প্রতি তার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে।

অধ্যায় ৩: হারিয়ে যাওয়া

নিশ্চিন্দিপুরের আকাশে তখন রোদের মিষ্টি আলো। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে যাচ্ছিল, পাখির ডাক আর হালকা বাতাসে গাছের পাতা দুলছিল। ক্যাফেতে চেনা টেবিলে আকাশ বসে ছিল। সামনে তার খাতা খোলা, কলমটা আঙুলে ঘুরছে, কিন্তু কাগজে কোনো শব্দ আঁকা হয়নি। তার চোখের দৃষ্টি হারিয়ে গিয়েছিল দূরে।

এমন সময় ঐশী এসে চুপচাপ তার সামনে বসলো। আকাশের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “কি হয়েছে, আকাশ? কিছুই তো লিখতে পারছো না?”

আকাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “লিখতে পারছি না, ঐশী। তোমার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোকে শব্দে বাঁধতে গেলেই মনে হয়, সব অর্থ হারিয়ে যায়। যেন এই অনুভূতিগুলো কোনো শব্দে ধরা যায় না।”

ঐশী মৃদু হেসে বলল, “আকাশ, প্রেম শব্দে লেখা যায় না, এটা বোঝা যায়। ভালোবাসা তো এক অলিখিত ভাষা। এটি শব্দের সীমানার বাইরে। প্রেম প্রকাশ পায় আমাদের কাজের মাধ্যমে, আমাদের ছোট ছোট অভিব্যক্তিতে। তুমি যেটা লিখতে পারছো না, সেটা হৃদয়ের গভীরে রেখে দাও। ওটাই তো আসল প্রেম।”

এই কথা বলে ঐশী আকাশের হাত ধরে বলল, “চলো বাইরে যাই। এত লেখালেখির চিন্তা করো না। আজ শুধু আমাকে সময় দাও।”

আকাশ কিছু না বলে ঐশীর সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে এল। নিশ্চিন্দিপুরের সরু রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে তারা শহরের কোলাহল থেকে দূরে এক বড় গাছতলায় এসে বসল। চারদিকে নিস্তব্ধতা, শুধু পাখির ডাক আর বাতাসের মৃদু শব্দ। ঐশী খোলা চুলে হালকা বাতাসের ছোঁয়া পেয়ে হাসছিল।

“জানো, আকাশ, আমি কোনোদিন এক জায়গায় থাকতে পারি না। পাখির মতো উড়ে বেড়াতে ভালোবাসি,” ঐশী হঠাৎ করেই বলে উঠল।

আকাশ এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল, “তুমি জানো, ঐশী, তোমার এই স্বভাবটা আমাকে একদিকে আকর্ষণ করে, অন্যদিকে ভয়ও দেখায়। আমি তোমাকে হারাতে চাই না। কিন্তু আমি জানি, তুমি যাযাবর। বাঁধা তোমার পছন্দ নয়।”

ঐশী মৃদু হাসল। “ভালোবাসা কি বাঁধার জন্য? ভালোবাসা তো মুক্তি। যদি সত্যিকারের ভালোবাসো, তাহলে আমাকে যেতে দেবে। তুমি আমাকে পাখি হতে দিয়েছ, আকাশ। সেটাই তো সবচেয়ে বড় ভালোবাসা।”

এই বলে সে আকাশের হাত ধরল। তারপর কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে বলল, “তুমি জানো, আকাশ? তুমি আমাকে না বুঝলেও, তোমার গল্পে আমি থেকে যাবো। তোমার প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি বাক্যে। তুমি লিখবে, আর সেই লেখায় আমি থাকবো।”

আকাশ কিছু বলল না। তার মনে হল, ঐশী সত্যি পাখি। তাকে বেঁধে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু এই মুহূর্তগুলোর জন্য সে কৃতজ্ঞ।

তারা কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকল। হঠাৎ ঐশী আকাশের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল, “তুমি খুব সুন্দর করে কথা বলো, আকাশ। কিন্তু তোমার চোখে এত কথা থাকে, যা মুখে বলো না। একবার বলো তো, তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো?”

আকাশের মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠল। “ঐশী, ভালোবাসা কি বলার জন্য? ভালোবাসা অনুভব করার জন্য। প্রতিদিন তোমার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোই আমার ভালোবাসার প্রমাণ। তোমার হাসি, তোমার কথা, তোমার ছোঁয়া—এগুলোই আমার সবকিছু।”

ঐশী হেসে বলল, “তাহলে আমাকে ছেড়ে দিতে ভয় কিসের?”

“ভয় নেই,” আকাশ বলল। “কিন্তু একটাই অনুরোধ, ঐশী। যেখানে থাকো, আমাকে ভুলে যেও না। আমার গল্পে, আমার জীবনে তুমি সবসময় থাকবে।”

ঐশী কিছু না বলে আকাশের গালের কাছে এসে একটা নরম চুমু দিল। তারপর ফিসফিস করে বলল, “তুমি কখনো একা হবে না, আকাশ। আমার হৃদয়ে তুমি থাকবে।”

তারপর ঐশী উঠে দাঁড়ালো। একবার শেষবারের মতো আকাশের দিকে তাকালো। তার চোখে অদ্ভুত এক মায়া ছিল। আর তারপর সে রাস্তা ধরে চলে গেল, ঠিক যেমন একটা পাখি আকাশে উড়ে যায়।

আকাশ চুপচাপ গাছতলায় বসে রইল। তার খাতা আর কলম তখনও তার সামনে। কিন্তু এবার সে জানে, ঐশীর মতো গল্প শুধু হৃদয়ে লেখা যায়। শব্দে নয়।

বাংলা ছোট গল্প - ছিন্নপত্রের সুর: সোনার অপহরণের রহস্য ও তার বাড়ি ফেরার কাহিনী। আহির ও বাসু কিভাবে সোনাকে খুঁজে বের করলো, তার গানের প্রতিভা উঠে এলো, জানুন এই মর্মস্পর্শী গল্পটিতে। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় ৪: একাকী জীবন

নিঃশব্দ সন্ধ্যাবেলা, আকাশ তার পুরোনো চেনা চেয়ারে বসে আছে। টেবিলের উপর ছড়ানো কাগজপত্র, পাশে আধখাওয়া চা। জানালার বাইরে নিশ্চিন্দিপুরের ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসা দিনের আলো যেন আকাশের মনে জমে থাকা অস্পষ্ট স্মৃতির মতো।

ঐশীর চলে যাওয়ার পর দিনগুলো এক এক করে কাটছিল। কিন্তু আকাশের মনে সময় যেন থমকে গিয়েছিল। ঐশীর সেই শেষ হাসি, চোখের ইশারা, আর তার স্বাধীনতার কথা — সবকিছুই বারবার ফিরে আসছিল তার স্মৃতিতে। সে আর লেখার চেষ্টা করেনি। মনে হচ্ছিল, ঐশীর কথা ঠিকই ছিল, “ভালোবাসা লেখা যায় না, বোঝা যায়।”

কিন্তু কিছুই যেন তাকে পুরোপুরি থামাতে পারেনি। একদিন টেবিলের কোণায় পড়ে থাকা ঐশীর গাঁথা গোলাপ ফুলটা নজরে এলো। ফুলটা শুকিয়ে গেছে, কিন্তু রং হারায়নি। আকাশের মনে হলো, ফুলটা যেন ঐশীর মতোই; চিরন্তন, সময়ের ঊর্ধ্বে। আলতো করে ফুলটা হাতে তুলে নিয়ে সে গভীর ভাবে তাকালো। ঐশীর শেষ কথা তার মনে পড়ল, “আমাদের গল্প এখনো শেষ হয়নি।”

এই কথাগুলো আকাশের মনে যেন এক নতুন আলো জ্বালিয়ে দিল। সে বুঝলো, ঐশী ঠিকই বলেছিল। তাদের গল্প সত্যিই শেষ হয়নি। তার মধ্যে একটি অদম্য ইচ্ছে জেগে উঠল। সে ঠিক করল, ঐশীর মতো সে ঝড়ের মতো লিখবে।

লেখার টেবিলে বসে আকাশ কলম হাতে তুলে নিল। জানালার বাইরে পূর্ণিমার আলো পড়ছে। টেবিলের চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠে মিশে যাচ্ছে বাতাসে। তার চারপাশের পরিবেশ যেন তাকে উৎসাহ দিচ্ছে।

সে লিখতে শুরু করলো। প্রথমে লিখল ঐশীর চোখের কথা — সেই গভীর চোখ যা তার মনের গভীরতা বোঝাত। তারপর লিখল ঐশীর হাসি — সেই হাসি, যা তার একাকিত্ব মুছে দিত। আর লিখল ঐশীর স্বাধীনচেতা মনের কথা — যেখানে ভালোবাসা মানে বাঁধন নয়, বরং বন্ধন।

প্রতিটি শব্দে সে যেন ঐশীকে আবার ফিরে পাচ্ছিল। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, আকাশ কেবল লিখে গেল। সে ভুলে গেল ক্ষুধা, তৃষ্ণা। তার কলমের প্রতিটি শব্দে ফুটে উঠল ভালোবাসার গভীরতা আর বিচ্ছেদের বেদনা।

একদিন, উপন্যাসটি শেষ হলো। আকাশ গভীর নিঃশ্বাস ফেলল। তার মনে হলো, ঐশীর সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত সে কাগজে বন্দি করতে পেরেছে। কিন্তু তার হৃদয় জানে, সেই মুহূর্তগুলো কখনো বন্দি থাকে না।

কয়েক মাস পরে, আকাশের উপন্যাস প্রকাশিত হলো। “ঐশীর শেষ ইশারা” নামের এই বইটি ঝড়ের মতো জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। পাঠকরা মুগ্ধ হয়ে পড়লো আকাশের লেখা প্রেমের গল্পে।

প্রকাশনার একটি অনুষ্ঠানে, আকাশ মঞ্চে দাঁড়িয়ে দর্শকদের দিকে তাকালো। এক মুহূর্তের জন্য তার মনে হলো, ভিড়ের মাঝে ঐশী দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তক্ষুনি সে জানলো, এটা তার কল্পনা। তবুও তার ঠোঁটে হাসি ফুটল। মনে মনে সে ঐশীকে বললো, “তোমার কথা রেখেছি, ঐশী। আমাদের গল্প সত্যি, আর এটি কখনো শেষ হবে না।”

বছর দুয়েক কেটে গেছে। আকাশের বই এখনো পাঠকের হাতে হাতে ঘুরছে। বিভিন্ন শহরে তার সাহিত্যিক সন্ধ্যা, বইমেলায় আড্ডা — সর্বত্রই একটি প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে। “ঐশী কি সত্যি? নাকি কেবল কল্পনা?”

আকাশ প্রতিবার মৃদু হেসে জবাব দেয়, “ঐশী আমার জীবনের এক অংশ। হয়তো সে বাস্তব, হয়তো কল্পনা। তবে তার গল্প সত্যি। ভালোবাসার গল্প কখনো মিথ্যে হয় না।”

তবুও, আকাশ জানে, তাদের গল্প এখানেই শেষ নয়। হয়তো কোনো একদিন, কোনো এক সময়, কোনো এক জায়গায় ঐশীর সঙ্গে আবার তার দেখা হবে। আর সে দিন, তাদের গল্পের নতুন অধ্যায় শুরু হবে।

বাংলা ছোট গল্প - অগ্নিপথের সন্ধানে: নিজের ভালোবাসাকে খুঁজে ফিরতে এক নারীর দুর্গম পথচলা! রাজনৈতিক অশান্তি, রহস্যে ঘেরা নিখোঁজ হওয়া - এই বাংলা গল্পটিতে অদিতির অবিশ্বাস্য যাত্রা। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় ৫: হারিয়ে যাওয়া গল্পটি

দার্জিলিংয়ের সাহিত্য উৎসবের হাওয়া গা ছুঁয়ে গেল আকাশের। পাহাড়ের ঠাণ্ডা হাওয়া, মেঘে ঢাকা রাস্তা, চা-বাগানের সুবাস – সবকিছু মিলে যেন এক অদ্ভুত আবহ। শহরের ব্যস্ত বাজার, কাঠের বেঞ্চে বসে থাকা পর্যটকের দল, আর দূর থেকে ভেসে আসা লামার ঘণ্টার সুর – এই পরিবেশে যেন মনের ভেতর জমে থাকা সব আবেগ প্রকাশ পেতে চায়। আকাশ বারবার ঐশীর কথা মনে করতে লাগলো। কী এক অদ্ভুত টান অনুভব করছিল সে। মনে হচ্ছিল, যেন কোনো এক অনুচ্চারিত অপেক্ষায় রয়েছে।

বিকেলের দিকে সাহিত্য উৎসবের মঞ্চে আকাশের উপস্থিতি ছিল। কথার পর কথা বলে গেলেন তিনি – তার লেখা, তার অনুভূতি, আর সেই গল্পের পেছনের অনুপ্রেরণা। “ঐশী” নামটা বারবার তার ঠোঁটে এসে থেমে যাচ্ছিল। পাঠকদের সঙ্গে কথোপকথনের মাঝেই তার চোখে পড়ল রাস্তার ধারে ছোট্ট চায়ের দোকান। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির মাথায় গাঁথা গোলাপ ফুলটা যেন হঠাৎ তার মনকে এলোমেলো করে দিল।

চোখ ঘুরিয়ে আরেকবার দেখলেন আকাশ। হৃদয়ে যেন ঝড় উঠল। এ কি সত্যিই ঐশী? পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলেন। কাছে গিয়ে দেখলেন, মেয়েটি অন্য কেউ। চেহারা আলাদা, কিন্তু চোখের দৃষ্টি – সেই একই স্বাধীনচেতা ঝলক। আকাশ বিভ্রান্ত হয়ে গেল।

মেয়েটি হেসে বললো, “আপনিই কি আকাশ, ঐশীর গল্প লেখা সেই লেখক?”

আকাশের মনে যেন দমকা হাওয়ার মতো শব্দ বেজে উঠলো। “হ্যাঁ। কিন্তু আপনি কি ঐশীকে চেনেন?”

মেয়েটি হালকা হাসলো। “আমি ঐশী নই, কিন্তু আমি তার বোন। দিদি আমাকে বলেছিল, যদি কোনোদিন আপনার সঙ্গে দেখা হয়, তাহলে এই চিঠিটা আপনাকে দিয়ে যেতে।”

মেয়েটি ব্যাগ থেকে এক হলুদ খাম বের করলো। তার হাতের কম্পন দেখে মনে হলো, এই চিঠিটার মূল্য অনেক গভীর। আকাশ হাত বাড়িয়ে চিঠিটা নিল। কয়েক মুহূর্ত কোনো কথা বললো না, শুধু সেই হলুদ খামের দিকে তাকিয়ে রইলো।

বসে পড়লেন আকাশ। পাহাড়ের কোলে ছোট্ট কাঠের বেঞ্চে, চারপাশে স্নিগ্ধ বাতাস আর সূর্যাস্তের আভা। খাম খুললেন। ভেতরে সাদা পাতায় অক্ষরে লেখা ছিল ঐশীর হৃদয়ের কথা।

আমার প্রিয় আকাশ,
তুমি হয়তো ভাবছো, কেন এমনভাবে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার জানার ছিল এই পৃথিবী। আমি উড়ে বেড়াতে চেয়েছিলাম, এক পাখির মতো। তোমার ভালোবাসা আমাকে সেই ডানা দিয়েছিল, সেই সাহস দিয়েছিল। আমরা হয়তো আর কখনো দেখা করবো না। কিন্তু আমি তোমার কাছে থাকবো, তোমার প্রতিটি লেখায়, প্রতিটি স্মৃতিতে।

তুমি জানো, আমাদের গল্পের কোনো শেষ নেই। আমি বিশ্বাস করি, ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না। এটি এক রূপান্তরের পথ – আমাদের জীবন থেকে তোমার লেখায়, তোমার লেখার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে। তুমি লিখে যাও, আকাশ। আমাকে মনে রেখো, কিন্তু আমাকে ছেড়ে দাও। ভালোবাসার শক্তি দিয়ে তুমি নতুন গল্প সৃষ্টি করো।

তোমার ঐশী।

চিঠি পড়ে আকাশের চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। সে জানত, ঐশীর সঙ্গে হয়তো আর কখনো দেখা হবে না। কিন্তু তার প্রতি ঐশীর ভালোবাসা, বিশ্বাস – এগুলোই তার জীবনের নতুন আলোর পথ দেখাবে।

চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি বলল, “দিদি জানতো, আপনি তাকে ছেড়ে দিন, কিন্তু তাকে ভুলবেন না। আপনি নিজের গল্পের মধ্যে তাকে অমর করে তুলেছেন।”

আকাশ আবারও দার্জিলিংয়ের আকাশের দিকে তাকালো। সূর্যাস্তের লাল আলো পাহাড়ে পড়ে এক অপার্থিব পরিবেশ তৈরি করেছিল। মনে মনে বললেন, “ঐশী, তুমি হয়তো এই পাহাড়ের কোনো এক মেঘে মিশে আছো। আমি তোমাকে লিখে যাব, প্রতিটি শব্দে তোমার ছোঁয়া থাকবে।”

এরপর চায়ের দোকানের ছোট্ট টেবিলে বসে আকাশ তার নতুন উপন্যাসের খাতা খুললেন। কলম হাতে নিয়ে লিখলেন, “একটি ছোট্ট পাহাড়ি শহর। চারপাশে চা বাগানের সবুজে মোড়া পথ। সেই পথের ধারে দাঁড়িয়ে ছিল একটি মেয়ের স্বপ্নময় চোখ – যা বলছিল স্বাধীনতার কথা, ভালোবাসার কথা।”

পাহাড়ের গায়ে তখন সন্ধ্যার আলো। চায়ের ধোঁয়া ভেসে যাচ্ছিল আকাশের দিকে। কিন্তু তার কলম থামছিল না। ঐশী তার গল্পে বেঁচে থাকলো – চিরকাল।

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

আমরা কারা

নতুন বাংলা ছোট গল্প

আষাঢ়ের সন্ধ্যে

"আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়।

"আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: আষাঢ়ের সন্ধ্যে

শীতের রাজ্যের জাদু

"শীতের রাজ্যের জাদু: একটি মজাদার ছোটদের গল্প, যেখানে রাজা শীতল রূপকথার গল্পের মাধ্যমে শিশুদের জন্য শীতের রাজ্যে গরমের অনুভূতি এনে দেন।"

"শীতের রাজ্যের জাদু: একটি মজাদার ছোটদের গল্প, যেখানে রাজা শীতল রূপকথার গল্পের মাধ্যমে শিশুদের জন্য শীতের রাজ্যে গরমের অনুভূতি এনে দেন।"

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: শীতের রাজ্যের জাদু

স্নেহের আশ্রয়

"স্নেহের আশ্রয়" একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ভালোবাসা ও যত্নের শক্তি দুটি বিপন্ন শিশুর জীবন বদলে দেয়। এটি অতীতের স্মৃতি ও মানবতার এক হৃদয়স্পর্শী উপাখ্যান।

"স্নেহের আশ্রয়" একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ভালোবাসা ও যত্নের শক্তি দুটি বিপন্ন শিশুর জীবন বদলে দেয়। এটি অতীতের স্মৃতি ও মানবতার এক হৃদয়স্পর্শী উপাখ্যান।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: স্নেহের আশ্রয়

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!