কলকাতার ঝলমলে আকাশ, যা রাতের বেলায় লেজার লাইটের জালে জড়িয়ে যায়, সেই শহরেই থাকতেন ডাক্তার অবন্তী সেন। এশিয়া জুড়ে তিনি নিউরোসায়েন্সের ক্ষেত্রে এক বিশিষ্ট নাম। তাঁর গবেষণাগুলো মানব মস্তিষ্কের গহীন খাঁজগুলোকে উন্মোচন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আজ তাঁর ল্যাবরেটরির পরিবেশটা একটু অন্যরকম। সবকিছুই নিঃশব্দ, চাপা উত্তেজনায় ভরা। কারণ, আজ তিনি এমন একটা পরীক্ষা চালাতে যাচ্ছেন, যা বিশ্ব বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক নতুন মাইলস্টোন স্থাপন করতে পারে।
অবন্তী সেন গত কয়েক বছর ধরে মস্তিষ্কের স্মৃতি ধারণ ও পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বিপ্লবাত্মক এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। ‘নিউরাল ইমপ্লান্ট’ নামের এই যন্ত্রটি মানব মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে স্মৃতির ডিজিটাল কপি তৈরি করতে এবং পরবর্তীতে সেই কপিকে আবার মস্তিষ্কে ফেরত পাঠিয়ে স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম। আজ প্রথমবারের মতো এই প্রযুক্তি মানুষের উপর পরীক্ষা করা হবে।
অবন্তী সেনের সামনে শুয়ে আছেন শান্তনু মজুমদার, তাঁর পঁচাষোর্ধ্ব বয়সী এক রোগী। গাড়ি দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন। সেই সময় থেকেই তাঁর অতীতের স্মৃতি সম্পূর্ণ হারিয়ে গেছে। শান্তনুর স্ত্রী, সোনালী, চোখের কোনে জল আঁকড়ে ধরে আশায় আঁকলা হয়ে অবগতন করছেন।
অবন্তী সেন শান্তনুর মাথায় নিউরাল ইমপ্লান্ট ঢুকিয়ে দেন। চারপাশে যন্ত্রের বিড়বিড় শব্দ, স্ক্রিনে লাল, নীল রেখা দৌড়োচ্ছে। কয়েক মিনিট পর, যন্ত্রের শব্দ থামে। অবন্তী সেন গভীর নিঃশ্বাস ফেলে সোনালীর দিকে তাকান।
“আমি চেষ্টা করেছি। কিন্তু…” তিনি থামলেন। সোনালীর মুখ ক্রমশঃ ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
“কিন্তু কি?” কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন সোনালী।
অবন্তী সেন দৃঢ়স্বরে বললেন, “নিউরাল ইমপ্লান্ট কোনো স্মৃতি খুঁজে পায়নি। শান্তনুর মস্তিষ্কে সম্পূর্ণ খালি।”
এই কথা শুনে সোনালী অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। চারপাশে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু অবন্তী সেন থমকে থাকলেন না। তাঁর মনে হাজারো প্রশ্নের ঝড় উঠে গেল। সহকর্মীরা সোনালীকে সামলাতে ব্যস্ত থাকতে অবন্তী সেন তাঁর ল্যাবরেটরির নিরবচ্ছায়ায় নিজের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। শান্তনুর মস্তিষ্কের এই অবস্থা তাঁর কাছে অবিশ্বাস্য লাগছিল। নিউরাল ইমপ্লান্ট যন্ত্রটি ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। বারবার ডাটা পরীক্ষা করে তিনি নিশ্চিত হলেন, যন্ত্রটি ঠিকমতো কাজ করছিল। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
ঘন্টার পর ঘন্টা কাটছিল। অবশেষে অবন্তী সেনের নজর পড়ল শান্তনুর এক্স-রে রিপোর্টের উপর। গাড়ি দুর্ঘটনায় শান্তনুর মস্তিষ্কের যে অংশে আঘাত লেগেছিল, সেই অংশটি হিপোক্যাম্পাস এর সঙ্গে সম্পর্কিত। হিপোক্যাম্পাস মস্তিষ্কের সেই গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে স্মৃতিগুলি গুছিয়ে রাখা হয়। এই অংশে আঘাত লাগার ফলে স্মৃতি হারিয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু, নিউরাল ইমপ্লান্টের সাহায্যেও কোনো স্মৃতি না পাওয়া – এটাই ছিল বিস্ময়কর।
হঠাৎ অবন্তী সেনের মনে একটা চমক লাগল। হিপোক্যাম্পাস স্মৃতি গুছিয়ে রাখে ঠিকই, কিন্তু স্মৃতি তৈরি করে না। স্মৃতি তৈরি হয় নিউরোন বা স্নায়ুকোষের মধ্যে সংযোগের ফলে। গাড়ি দুর্ঘটনায় কি শুধু হিপোক্যাম্পাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি? নিউরাল নেটওয়ার্ক – যে জটিল জালের মধ্যে স্মৃতি বিদ্যুৎ impulses আকারে দৌড়োয়, সেই জালটাও কি বিলীন হয়ে গেছে?
অবন্তী সেন উত্তেজনায় লাফিয়ে উঠলেন। যদি এটাই সঠিক হয়, তাহলে তাঁর নিউরাল ইমপ্লান্টের প্রযুক্তি পরিবর্তন করতে হবে। স্মৃতির ডিজিটাল কপি খোঁজার চেষ্টা না করে, বরং নষ্ট হয়ে যাওয়া নিউরাল নেটওয়ার্ককে পুনঃনির্মাণ করতে হবে। এটা অনেক কঠিন কাজ, কিন্তু অসম্ভব নয়। অবন্তী সেন জানতেন, এটাই হচ্ছে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ।
পরের কয়েকটা দিন অবন্তী সেন নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করলেন। তিনি নিজের নিউরাল ইমপ্লান্টের প্রযুক্তিকে নতুন করে ঢালাই করলেন। এবারের লক্ষ্য ছিল মস্তিষ্কে কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা, যা ধীরে ধীরে শান্তনুর নিজস্ব স্মৃতি তৈরি করতে সাহায্য করবে।
এই নতুন পদ্ধতি কাজে লাগানো হল শান্তনুর উপর। প্রথম দিকে কোনো ফল না দেখলেও অবন্তী সেন হাল ছাড়লেন না। মাসের পর মাস কেটে গেল। একদিন সকালে ল্যাবরেটরিতে ঢুকে অবন্তী সেন চমকে উঠলেন। শান্তনু, চোখ বন্ধ করে, বিছানায় বসেছিলেন। তাঁর মুখে মৃদু এক হাসি। অবন্তী সেন সাবধানে তাঁর কাছে গেলেন।
“শান্তনু? আপনি ঠিক আছেন?”
শান্তনু চোখ খুললেন। অবাক অবন্তী সেনের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনি কে?”
অবন্তী সেনের বুকটা কেমন করে উঠল। স্মৃতি না ফিরলেও চেতনা ফিরেছে, এটাই বা কম কি! “আমি ডাক্তার সেন।” তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, “আপনি ঠিক আছেন, শান্তনু? মাথা ঘোমটাচ্ছে না?”
শান্তনু মাথা নাড়লেন। “না, কিন্তু… আমার মনে কোনো কিছুই নেই।” তাঁর চোখে এক চিন্তিত ভাব ফুটে উঠল।
অবন্তী সেন তাঁকে সান্ত্বনা দিলেন, সবকিছুই ধীরে ধীরে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এরপরের কয়েকটা সপ্তাহ অবন্তী সেন নিয়মিত শান্তনুর সঙ্গে কথা বলতেন। শান্তনু ছেলেবেলার কিছু অস্পষ্ট স্মৃতি ফিরে পেয়েছিলেন, কিন্তু বড়ো হয়ে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো – স্ত্রী, পরিবার, বন্ধু – এসব কিছুই ছিল তাঁর কাছে অচেনা।
এই সময়ের মধ্যে অবন্তী সেনের গবেষণায়ও বিরাট অগ্রগতি হল। তিনি নিজের নিউরাল ইমপ্লান্টের সঙ্গে এমন একটা প্রযুক্তি যোগ করলেন, যা বাইরের জগতের সঙ্গে শান্তনুর মস্তিষ্কের সংযোগ স্থাপন করতে পারে। অর্থাৎ, শান্তনু চোখে যা দেখবেন, কানে যা শুনবেন, সেই সবই তাঁর নিউরাল নেটওয়ার্কে নতুন সংযোগ তৈরি করবে। ধীরে ধীরে, এই নতুন অভিজ্ঞতাগুলিই তাঁর নতুন স্মৃতি হিসেবে গড়ে উঠবে।
এই নতুন থেরাপির ফলাফল ছিল চমকপ্রদ। শান্তনু যখন সোনালীর সঙ্গে দেখা করলেন, তখন তাঁর চোখে এক অস্বাভাবিক চমক দেখা গেল। সোনালী তাঁকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকলেন। শান্তনু কিছু বুঝতে না পারলেও, বুকে এক অসহনীয় ব্যথা অনুভব করলেন। এরপরের কয়েক মাসে, সোনালী এবং শান্তনুর সঙ্গে নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ, পরিচিত জায়গাগুলোতে ঘুরিয়ে বেড়ানো – এই সবকিছুই ধীরে ধীরে শান্তনুর মনের খাঁটি পূরণ করতে শুরু করল।
একদিন, সন্ধ্যার আলোয় দাঁড়িয়ে শহরের ঝলমলে আকাশ দেখছিলেন শান্তনু। হঠাৎ তাঁর মনে একটা দৃশ্য ভেসে উঠল – সোনালী, হাসিমুখে, তারার দিকে তাকিয়ে দিয়ে বলছেন, “…আকাশের তারাগুলো গুনে ক্লান্ত হয়ে গেছি, কিন্তু তোমার চোখের তারার গভীরতা এখনও গুনতে পারিনি।”
শান্তনু চমকে উঠলেন। এই স্মৃতিটা কোথা থেকে এল? তিনি সোনালীর দিকে তাকালেন। সোনালী বरामদায় দাঁড়িয়েছিলেন, তার চোখে অবাক চাহনি। শান্তনু ধীরে ধীরে সোনালীর কাছে এগিয়ে গেলেন।
“সোনালী,” তিনি সতর্ক গলায় বললেন, “আমার মনে হচ্ছে… আমি কিছুটা স্মৃতি ফিরে পাচ্ছি।”
সোনালীর মুখখানি আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তিনি শান্তনুকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিসিয়ে বললেন, “আমি জানতাম, একদিন তুমি সব ফিরে পাবে।”
এরপরের দিনগুলো ছিল আশা আর স্মৃতির মিশ্রণ। টুকটাক করে, অতীতের স্মৃতি শান্তনুর মনে ফিরতে শুরু করল। কখনও কোনো গানের সুর, কখনও বা ছেলেবেলার বাড়ির গন্ধ – এই সবকিছুই তাঁকে অতীতের জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি সোনালীর সঙ্গে কাটানো সুখের মুহূর্তগুলো, ঝগড়া, হাসি-কান্না – সবকিছুই ধীরে ধীরে ফিরে আসছিল।
কিন্তু একটি প্রশ্ন সবসময়ই শান্তনুকে উটকন দিত। গাড়ি দুর্ঘটনার আগের কিছু ঘটনা, বিশেষ করে কেন দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল, সে সম্পর্কে কোনো স্মৃতিই ফিরছিল না। এই রহস্য উদঘাটনের জন্য অবন্তী সেন তাঁকে আরও কিছু পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে বললেন।
একদিন, পরীক্ষার সময় হঠাৎ শান্তনুর মাথায় তীব্র যন্ত্রণা শুরু হল। যন্ত্রের স্ক্রিনে লাল আলো জ্বলে উঠল। অবন্তী সেন সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্র বন্ধ করে দিলেন। শান্তনু চিৎকার করে উঠলেন, “আমি সব মনে পড়েছি! দুর্ঘটনাটা…”
কিন্তু শান্তনুর কথা শেষ হল না। তাঁর চোখ দুটি বড়ো হয়ে গেল, শ্বাস বন্ধ হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শান্তনুর নিথর দেহটা ল্যাবরেটরির মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল।
অবন্তী সেন চিৎকার করে সাহায্য চাইলেন। কিন্তু তাঁর মুখে শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল – নিউরাল ইমপ্লান্টের এই নতুন প্রযুক্তি কি আশীর্বাদ, নাকি অভিশাপ? শান্তনুর স্মৃতি ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় কি তিনি আরও বড় কোনো বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই অবন্তী সেনকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হলো আরও গভীর গবেষণার জগতে।
শান্তনুর আকস্মিক মৃত্যু অবন্তী সেনকে গভীর শোকে ডুবিয়ে দিল। তিনি নিজের গবেষণার সাফল্যে আনন্দিত হওয়ার আগেই যেন সবকিছু ধসে গেল। কিন্তু একজন বিজ্ঞানী হিসেবে দম নেওয়ার সময় ছিল না। তাঁকে বুঝতে হল শান্তনুর মৃত্যুর কারণ এবং নিজের গবেষণায় কোথায় ভুল হয়েছে।
অবন্তী সেন শান্তনুর নিউরাল ইমপ্লান্টের ডাটা পুনঃবার পরীক্ষা করতে শুরু করলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন, দুর্ঘটনার কিছু মুহূর্ত আগের রেকর্ডকৃত স্মৃতিগুলো অস্বাভাবিকভাবে উত্তেজিত ছিল। শান্তনুর মস্তিষ্ক যেন কোনো অজানা বিপদের আশঙ্কায় নিজেকে প্রস্তুত করছিল। আর ঠিক পরেই সবকিছু থেমে গিয়েছিল।
এই আবিষ্কার অবন্তী সেনকে চিন্তায় ফেলে দিল। তিনি সন্দেহ করতে শুরু করলেন, দুর্ঘটনাটা আসলে দুর্ঘটনা ছিলই না। কিছু একটা শক্তি, হয়তো কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) বা অন্য কোনো অজানা শক্তি, শান্তনুর মস্তিষ্কে হস্তক্ষেপ করেছিল। এই হস্তক্ষেপের ফলেই নিউরাল ইমপ্লান্টের সঙ্গে সামঞ্জস্য না হওয়ায় শান্তনুর মৃত্যু হয়েছে।
কিন্তু কেন? কেউ শান্তনুর সঙ্গে কেন এমন কাজ করবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অবন্তী সেন জানতে চাইলেন শান্তনুর অতীত। তিনি সোনালীর সঙ্গে কথা বললেন, শান্তনুর পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। কিন্তু তেমন কোনো সূত্রই তিনি পেলেন না। শান্তনুর জীবন ছিল সাধারণ, কোনো গোপনীয়তা বা রহস্য ছিল না।
এইবার অবন্তী সেন মিডিয়ার সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি একটি সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন এবং নিজের গবেষণা, শান্তনুর চিকিৎসা এবং মৃত্যুর রহস্য – সবকিছুই জনসম্মুখে তুলে ধরলেন।
সংবাদ সম্মেলনটি তোলপাড় সৃষ্টি করল। মানুষ্য মস্তিষ্কের গোপনীয়তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হুমকি, এসব নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গেল। অনেক বিজ্ঞানী এবং গোয়েন্দা সংস্থা অবন্তী সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করল। তারাও বিশ্বাস করতে শুরু করল যে, শান্তনুর মৃত্যুর পেছনে হয়তো কোনো বড় রহস্য লুকিয়ে আছে।
এরপর, আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় একটি বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করা হল। অবন্তী সেন এই দলের প্রধান গবেষক হিসেবে নিযুক্ত হলেন। তিনি নিজের নিউরাল ইমপ্লান্টের টেকনোলজিকে আরও উন্নত করলেন।
অবন্তী সেন নিজের নিউরাল ইমপ্লান্টের টেকনোলজিকে এমনভাবে পরিবর্ধন করলেন, যাতে মৃত মানুষের মস্তিষ্কের অবশিষ্ট তথ্যও উদ্ধার করা যায়। এই নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে তিনি শান্তনুর মস্তিষ্ক পরীক্ষা করলেন। অবশেষে, সেই চেষ্টা সফল হল। শান্তনুর মৃত্যুর মুহূর্তের কিছু ক্ষণিকের স্মৃতি উদ্ধার করা গেল।
স্মৃতির টুকরো ছিল ভগ্ন, কিন্তু তা ছিল যথেষ্ট। শান্তনু দেখতে পেলেন একটি উজ্জ্বল আলো, তারপর একটি যান। সেই যানটি দেখতে পৃথিবীর কোনো যানের মতো নয়। এরপরই একটা ধাক্কা, আর তারপর অন্ধকার।
অবন্তী সেন এই তথ্য বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারলেন, শান্তনুর গাড়ির দুর্ঘটনা আসলে একটি ছদ্মবেশ ছিল। কোনো একটা এলিয়েন (Alien) যান শান্তনুর গাড়িকে আকাশ থেকে ধাক্কা দিয়েছিল। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অবন্তী সেন গোয়েন্দা দলের সাহায্য নিলেন।
দীর্ঘ গবেষণার পর, তারা জানতে পারলেন, পৃথিবী এখন আর নিঃসঙ্গ গ্রহ নেই। একটা উন্নত এলিয়েন সভ্যতা আমাদের গোপনে পর্যবেক্ষণ করছে। শান্তনুর মস্তিষ্কে তারা সম্ভবত কোনো বিশেষ ক্ষমতা আবিষ্কার করেছিল, তাই তাকে অপহরণ করার চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু অপহরণ ব্যর্থ হওয়ায় তারা দুর্ঘটনা সাজিয়ে শান্তনুকে নিষ্কাশন করেছিল।
এই আবিষ্কার বিশ্বে চাঞ্চল সৃষ্টি করল। মানুষ জানতে পারল, তারা আর একা নেই। অবন্তী সেন এক রাতে তার ল্যাবরেটরিতে বসে চিন্তা করছিলেন। মানব মস্তিষ্কের গহীনতা উন্মোচন করার চেষ্টা করতে গিয়ে তিনি এমন এক সত্যের সন্ধান পেয়েছেন, যা মানব সভ্যতার ইতিহাসকে বদলে দেবে।
কিন্তু এই আবিষ্কার কি শুভ, নাকি অশুভ? এলিয়েনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা কি সঠিক সিদ্ধান্ত হবে? এই প্রশ্নগুলো নিয়ে অবন্তী সেন জানতেন, মানবজাতিকে এখন নতুন এক যুগের সম্মুখীন হতে হবে। এই যুগে বিজ্ঞানের পাশাপাশি দরকার হবে কূটনীতি ও বিবেচনা – এই দুই শক্তির।
আকাশের তারাগুলোর দিকে তাকিয়ে অবন্তী সেন নিঃশ্বাস ফেললেন। এই বিশাল মহাবিশ্বের কোথাও কি আর মানুষ একা থাকতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই হয়তো মানবজাতিকে এগিয়ে যেতে হবে, অজানার দিকে।