পর্ব ১. অশান্তির ছায়া
যশোরের এক রৌদ্রজ্বালা দুপুর। ১৮৭৫ সালের সেই আগুন গরম দিনে নিশীথের বাড়ির উঠোনে একটা অস্থিরতা বিরাজ করছিল। বাইরে ধুলোঝড় উঠেছে, টিনের চালে ঠুং-ঠুং আওয়াজ হচ্ছে। নিশীথের মা, গৌরীদি, চিন্তিত চোখে ছেলের দিকে তাকালেন। নিশীথ, তার উনিশ বছরের ছেলে, উঠোনে পায়চারা করছিল। তার কপালে চিন্তার রেখা, চোখে অস্থিরতা।
“কী হলো নিশীথ? এতো অস্থির কেন?” গৌরীদি জিজ্ঞাসা করলেন।
“আজ রাতে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে পারব না মা,” নিশীথ উত্তর দিল। “মতিলালদার খবর দিয়ে গেছে, আজ রাতে আমাদের একটা গোপন সভা আছে।”
মতিলাল দাস, নিশীথের বন্ধু আর গুরু। তিনি ছিলেন স্থানীয় সন্ন্যাসী বিদ্রোহের নেতা। ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে গোপনে বিদ্রোহ গড়ে তোলার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। নিশীথ ছোটবেলা থেকেই মতিলালদার অনুসারী। তিনিও ব্রিটিশদের জুলুমের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
“আবার গোপন সভা? এই ঝড়ের মধ্যে? ঝুঁকি নেও না নিশীথ,” গৌরীদি উদ্বেগের সঙ্গে বললেন।
নিশীথ মায়ের কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা দিলেন, “চিন্তা করো না মা। সাবধানে থাকব।”
কিন্তু গৌরীদির মনটা ভারাক্রান্তই রয়ে গেল। ব্রিটিশদের নিষ্ঠুরতা সে জানে। গত কয়েক বছরে অনেক বিদ্রোহী ধরা পড়েছে, কেউ কারাগারে, কেউ মৃত্যুদণ্ডে। নিজের ছেলের এই ঝুঁকি নেওয়া দেখে তার বুক কেমন অস্থির হয়ে ওঠে।
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - অজানা ছবির রহস্য: এই বাংলা গল্পটিতে রহস্য, রোমাঞ্চ ও পরিচয়ের খোঁজ মিশে আছে। একটি হোর্ডিংয়ের ছবি সোহিনী ও অর্জুনকে অতীতের সাথে মুখোমুখি করে দেয়। রহস্যের জাল আরও জটিল হলে, তারা তাদের আসল পরিবারের খোঁজ পায়। এখানে ক্লিক করে সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়ুন।
পর্ব ২. বিদ্রোহের স্বপ্ন
রাতের আঁধার নেমে এলো। ঝড় থামলে গেছে, কিন্তু আকাশটা মেঘে ঢাকা। নিশীথ মতিলালদার নির্দেশ অনুযায়ী যশোরের একটি জঙ্গলের প্রান্তে পৌঁছল। সেখানে, এক বড় গাছের তলায় কয়েকজন লোকজন জড়ো হয়েছিল। মতিলালদা ছাড়াও, নিশীথ আর কাউকে চিনত না।
“নিশীথ, এসো,” মতিলালদা তাকে ডাকলেন। “আজকের সভা গুরুত্বপূর্ণ।”
নিশীথ কাছে গিয়ে বসল। মতিলালদা বলতে শুরু করলেন, “বন্ধুরা, ব্রিটিশদের অত্যাচার আর সহ্য করা যাচ্ছে না। আমাদের ফসল লুট করে, আমাদের ছেলেদের ধরে নিয়ে যায় সেনাবাহিনীতে। কবে শেষ হবে ব্রিটিশের এই নির্মম শাসন?”
নিশীথ মতিলালদার কথা মন দিয়ে শুনছিল। সবার মুখেই একই রকম ক্ষোভ আর অগ্নি জ্বলজ্বল করছিল। একজন বয়স্ক লোক, যাকে নিশীথ চেনে না, উঠে দাঁড়ালেন।
“মতিলালদা ঠিক কথাই বলছেন। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। কিন্তু কীভাবে? ব্রিটিশদের সৈন্য, অস্ত্র, আমাদের তো কিছুই নেই।”
অন্যরাও বিপ্লবীরা উনার কথার সমর্থন করলো। মতিলালদা হাত দিয়ে ইশারা করে সবাইকে থামালেন।
“নিশীথ,” মতিলালদা ডাকলেন, “এই যে নতুন ছেলেটা, সে কয়েকদিন আগে শহরে একটা ব্রিটিশ অফিসারের সঙ্গে দেখা করেছে। সে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছে।”
নিশীথ সবার দিকে তাকাল। সবার চোখে প্রশ্ন। সে গলা খুলল, “কথাটা ঠিক। সেদিন আমার কাজের প্রয়োজনে ওই অফিসারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। কথায় কথায় জানতে পারি, তাদের নতুন কিছু অস্ত্র এসেছে। আর তারা শীঘ্রই এই জঙ্গলে একটা অভিযান চালাবে, বিপ্লবীদের খোঁজে।”
নিশীথের কথা শুনে সভাঘরে চাপ-চাপ উত্তেজনায় গমগমে উঠলো। মতিলালদা চিন্তাভাবনা করে বললেন, “এই তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সাবধান থাকতে হবে। কিন্তু আবার, এই অস্ত্রের খবরটা আমাদের একটা সুযোগও বটে।”
একটি তরুণ ছেলে উৎসাহিত স্বরে বলল, “হ্যাঁ, ঠিক কথা। আমরা কি আগে থেকেই ওদের আক্রমণের জায়গাটা জেনে তাদের ওপর আক্রমণ চালাতে পারি না?”
মতিলালদা মাথা নাড়লেন, “না, এটা ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের এখনও পর্যাপ্ত শক্তি নেই। কিন্তু আমরা তাদের অভিযানের খবরটা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিতে পারি। যাতে লোকজন আগে থেকে সাবধান থাকে।”
নিশীথের মনে হল এটা একটা ভালো পরিকল্পনা। সে মতিলালদার কথা সমর্থন করল। সভা আরও কিছুক্ষণ চলল। পরিকল্পনা ঠিকঠাক ঠিক করা হল। এরপর সবাই সাবধানে সভাস্থল থেকে চলে গেল।
ভুতের বাংলা ছোট গল্প - ছবির কান্না: এক ভুতুড়ে লাইব্রেরি, অদ্ভুত বই, আর জমিদারদের অত্যাচারের গল্প - এই রহস্যময় বাংলা ভুতের গল্পে জানুন কিভাবে এই ঐতিহাসিক সত্য উন্মোচন হয়। এখানে ক্লিক করে সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়ুন।
পর্ব ৩. ঝড়ের আগে
পরের কয়েকদিন নিশীথ আর তার সহযোগীরা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিল ব্রিটিশদের অভিযানের খবর। লোকজন সতর্ক হয়ে গেল। জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া বিদ্রোহীরাও খবর পেয়ে সাবধান হল।
অবশেষে, সেই নির্ধারিত দিন এলো। ব্রিটিশ সৈন্যরা জঙ্গলে ঢুকে পড়ল বিদ্রোহীদের খোঁজে। কিন্তু তারা কোথাও কিছু পেল না। গ্রামে গিয়েও তাদের খালি হাতে ফিরতে হল। লোকজন সব তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল, বাড়িতে কোনো ছেলেমানুষ ছিল না। ব্রিটিশ অফিসাররা খালি হাতে ফিরে গেল।
এইঘটনার পর রেগে আগুন হয়ে গেলেন ব্রিটিশ অফিসার। তিনি সৈন্যদের নির্দেশ দিলেন গ্রামে লুটপাট চালাতে। নিশীথ আর তার সহযোগীরা দূর থেকে এসব দেখছিল। চরম উত্তেজনায় ও রাগে নিশীথের রক্ত গরম হয়ে উঠল। সে মতিলালদার দিকে তাকাল। কিন্তু মতিলালদা শান্ত ছিলেন।
“এখনো সময় হয়নি, নিশীথ,” মতিলালদা কানে কানে বললেন, “আমাদের পরিকল্পনা মতো চলতে হবে।”
নিশীথ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু ঠিক সেই সময় জঙ্গলের গভীর থেকে মৃদু সুরের একটা গান ভেসে এলো। গানের সুর শুনে ব্রিটিশ সৈন্যরা থমকে গেল। গানটা আরও জোরে আওয়াজ হতে লাগলো। হঠাৎ, জঙ্গলের বিভিন্ন কোণ থেকে তীর এসে ব্রিটিশ সৈন্যদের আহত করতে লাগলো। সৈন্যরা বিপদের মধ্যে পড়ে গেল।
গোলমাল শুরু হয়ে গেল। ব্রিটিশ অফিসার চিৎকার করে আদেশ দিতে লাগলেন। কিন্তু বিদ্রোহীরা এবার আর লুকিয়ে থাকল না। তারা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে ব্রিটিশ সৈন্যদের আক্রমণ করতে শুরু করল। নিশীথ মতিলালদার সঙ্গে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
কল্পবিজ্ঞান-এর বাংলা ছোট গল্প - শব্দ তুফান: এই কল্পবিজ্ঞান গল্পে, ভাষাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়, এবং 'মন্ত্রময়ী' নামক নিষিদ্ধ ভাষার মাধ্যমে মরকত অন্ধকারের রহস্য উন্মোচন করে অরিন্দম তার বোন ঐশীকে উদ্ধার করে। সম্পূর্ণ বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংক'টি ক্লিক করুন।
লড়াইটা বেশ কিছুক্ষণ চলল। বিদ্রোহীরা জঙ্গলের সুবিধা নিয়ে লড়ছিল। অন্যদিকে, ব্রিটিশ সৈন্যরা খোলা মাঠে পড়ে গিয়েছিল বিপদে। ধীরে ধীরে ব্রিটিশ সৈন্যদের পিছু হটতে বাধ্য হল। অবশেষে, তারা হতভম্ব হয়ে পালিয়ে গেল।
লড়াই শেষ হল। বিদ্রোহীরা জয়গানে মুখরিত হয়ে উঠল। নিশীথের বুক ভরে উঠলো গর্ব আর আনন্দে। এই ছিল তাদের প্রথম জয়। এটা তাদের স্বাধীনতার লড়াইয়ে একটা নতুন সূচনা।
কিন্তু মতিলালদা হাসছিলেন না। তিনি চিন্তিত চোখে নিশীথের দিকে তাকালেন।
“নিশীথ,” তিনি গম্ভীর স্বরে বললেন, “এই জয় আমাদের সতর্ক করে দেয়। ব্রিটিশরা এটা মেনে নেবে না। তারা আরও বড় আক্রমণের পরিকল্পনা করবে। আমাদের আরও সাবধানে থাকতে হবে।”
নিশীথ মতিলালদার কথা মনে রাখল। সে জানতো, লড়াইটা এখনও শেষ হয়নি। এটা ছিল শুধু একটা ছোট জয়। সামনে আরও দীর্ঘ লড়াই অপেক্ষা করছে তাদের। কিন্তু আজকের জয় তাদের মনে জাগিয়ে দিয়েছে আশা, স্বাধীনতার স্বপ্ন। আর এই আশা নিয়েই তারা এগিয়ে চলবে, যতদিন না এই দেশ সত্যিকারের মুক্ত হয়।