অজিত মিত্র, একজন অসফল লেখক, তার নামের একজন খ্যাতিমান লেখকের সাথে দেখা করেন। ঈর্ষায় অন্ধ হয়ে, সে তার জীবন চুরি করার চেষ্টা করে। কিন্তু তার কি ভাগ্য সঙ্গ দেবে? - রহস্য রোমাঞ্চে ভরা এক বাংলা গল্প!

অধরা জীবন

অজিত মিত্র, একজন অসফল লেখক, তার নামের একজন খ্যাতিমান লেখকের সাথে দেখা করেন। ঈর্ষায় অন্ধ হয়ে, সে তার জীবন চুরি করার চেষ্টা করে। কিন্তু তার কি ভাগ্য সঙ্গ দেবে? - রহস্য রোমাঞ্চে ভরা এক বাংলা গল্প!

আমাদের WA চ্যানেল জয়েন করুন

এই মাসের সেরা ভুতের ছোট গল্প, পড়ুন ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন – ঝড়ের রাত

প্রথম পর্ব: সন্ধ্যার অসফলতা

কলকাতার রাস্তাগুলো সন্ধ্যার মলিন আলোয় ভেসে যাচ্ছিল। কোলাহল তো ছিলই, তবে এখন যেন সে কোলাহল আর কিছুই ছিল না, এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা শহরের বুক চেপে বসেছিল। একটানা চলতে থাকা গাড়ির শব্দ আর মানুষের গুঞ্জনে এক ধরনের আলাদা নীরবতা ছিল। বাতাসে শীতলতা, যেন সে বাতাসই কলকাতার রাস্তাগুলো থেকে কোনো ব্যথা বা ক্ষোভ মুছে দিতে চাইছে। শহরের ধূসর আলো আর ঊর্ধ্বাকাশে হালকা মেঘের আবির্ভাব যেন এক গভীর বিষণ্ণতার চিহ্ন।

অজিত মিত্র হাঁটছিলেন একা। অজিত একজন লেখক, তবে আজকাল তাঁর লেখার মধ্যে যেন কোনো প্রাণ নেই। তার মনের মধ্যে এক অসহ্য ব্যথা বাসা বেঁধে ছিল, এবং সেই ব্যথা যেন আরো প্রবল হয়ে উঠছিল। সে ব্যথার উৎস ছিল তাঁর দীর্ঘদিনের পরাজয়, তাঁর অসম্পূর্ণ স্বপ্ন। তিনি মনে মনে ভাবছিলেন, “এখনও যদি আমি কিছু না লিখি, তাহলে আমি কি কখনোই সফল হতে পারব?” এ এক অব্যক্ত প্রশ্ন, যা তাকে আঘাত করছিল।

প্রথম দিকে লেখালেখি ছিল তাঁর কাছে একটা জাদু, একটি মাধুর্য। তিনি স্বপ্ন দেখতেন একদিন তাঁর নাম বিশ্ব সাহিত্য জগতে খোদাই হবে, তাঁর লেখা মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে। তিনি তাঁর প্রিয় লেখকদের মতো হতে চেয়েছিলেন, তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন। তবে সময়ের সঙ্গে, বছর খানেকের মধ্যে, সে স্বপ্ন অন্ধকারে ঢাকা পড়েছিল। প্রত্যেকবার নতুন একটি উপন্যাস লিখে প্রকাশকদের কাছে পাঠানো, প্রত্যেকবার তারা ফিরিয়ে দিয়েছে। প্রতিবারই তাঁদের একই মন্তব্য— “আপনি অনেক লিখছেন, কিন্তু এই লেখাগুলোর কোনো বাণিজ্যিক দিক নেই। বাজারে চলবে না।”

এখন অজিত ভাবতে শুরু করলেন, এর মানে কী? কি তাঁর লেখা কিছুটা দুর্বোধ্য? তার লেখার মধ্যে কি এমন কিছু ছিল, যা পাঠকদের কাছে পৌঁছাতে পারে না? একে একে তার সমস্ত স্বপ্ন ম্লান হয়ে গিয়েছিল। বছর শেষে লেখকের আত্মবিশ্বাস ভেঙে পড়েছিল, এবং তিনি এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছিলেন, যেখানে প্রতিটি লেখার পর মনে হতো, “এটা আর কাকে পড়তে হবে?” জীবনে কোন লক্ষ্য ছিল না, শুধু দিনরাত লেখালেখি আর প্রত্যাখ্যানের চক্রে ঘুরছিলেন।

তার এই অবস্থা এক অন্ধকার প্রকৃতির, যেখানে নিজের পরিচিত পৃথিবীটি অচেনা হয়ে গেছে। লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার অদম্য তাড়না এখন এক নিঃস্বতার মধ্যে পরিণত হয়েছিল। তবে, আজকের সন্ধ্যা যেন তার জন্য নতুন কিছু নিয়ে আসবে—এটা সে জানতো না, তবে তাঁর হৃৎস্পন্দন বুঝতে পারছিল, কিছু একটা বদল হতে যাচ্ছে।

অজিত মিত্র, যিনি একসময় সফল লেখক হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু জীবনের কঠিন বাস্তবতায় বারবার ব্যর্থতার চিহ্ন দেখিয়েছিলেন, সন্ধ্যাবেলা একেবারে ক্লান্ত, অবসন্ন মন নিয়ে শহরের একটি পুরোনো বইয়ের দোকানে ঢুকে পড়লেন। দোকানটি ছিল একেবারে ম্লান, অস্পষ্ট আলোর নিচে। দেয়ালের কোণে জমে থাকা ধুলো এবং বইয়ের পাতা থেকে উড়ে আসা পুরনো মলিন গন্ধ তার মনকে আরও বিষণ্ণ করে তুলছিল। সারা দিন ধরে অজিত যেসব দুঃস্বপ্নে তলিয়ে গিয়েছিলেন, তার সবগুলো যেন সেখানে, ওই পুরোনো বইয়ের দোকানের গাঢ় অন্ধকার পরিবেশে আরও ঘনীভূত হচ্ছিল।

বইয়ের দোকানটি ছিল একটি পুরনো ভবনে, যে ভবনটি যেন সময়ে থমকে দাঁড়িয়ে ছিল। রোদ, বৃষ্টি, সময়ের সবই যেন এখানে এসে একটা দম বন্ধ ঘরের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিল। অজিত মিত্র দোকানের ভেতর ঢুকতেই গাঢ় অন্ধকার আলোতে কিছু বইয়ের স্তুপ চোখে পড়ল। তীব্র ক্লান্তি আর হতাশায় ভরা মন নিয়ে তিনি একের পর এক বইয়ের পাতায় চোখ বুলিয়ে চলছিলেন, যেন কিছুটা প্রশান্তি পেতে চাচ্ছেন। তখনই, তার চোখে পড়ল একটি বই। বইটির কাভার ছিল অনেকটা ফিকে হয়ে যাওয়া, তবে নামটা পরিষ্কার ছিল— “অজিত মিত্র”। নিজের নাম দেখে তাঁর চোখে বিস্ময়ের চিহ্ন ফুটে উঠল। 

অজিত এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলেন। এই নাম, এই লেখক—তার নিজের নামের মতো একই। তিনি জানতেন না কোনো “অজিত মিত্র” নামক লেখককে, কিন্তু কেন এমনটা ছিল? বইটির দিকে আরও একবার গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখলেন। লেখকের পরিচয় ছিল পরিচিত, কিন্তু অজিত নিজে কখনোই এমন কোনো বই লিখেননি, যা এই বইয়ের সঙ্গে মিলে। কৌতূহল আর বিস্ময়ের মিশ্রণে তিনি বইটি হাতে নিলেন। দোকানের মালিক খুব একটা নজর দিচ্ছিল না, তিনি নিজের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। অজিত নিরবেই বইটির দাম দিলেন এবং দ্রুত দোকানটি ছেড়ে চলে আসলেন। 

বইটি তার হাতে ছিল, কিন্তু মনে যেন এক অজানা প্রশ্ন উঁকি দিয়ে চলছিল—এই বইটি কি তার নিজের গল্প? কীভাবে এই বইয়ের লেখকও “অজিত মিত্র”? এবং এই বইয়ের মধ্যে কি কিছু গোপন রহস্য লুকিয়ে আছে, যা তার জীবনের বাস্তবতার সঙ্গে মিলবে? তিনি জানতেন না কেন, তবে কিছু একটা তাঁকে ভিতরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, যেন এই বইয়ের পাতায় কিছু এমন তথ্য লুকোনো ছিল, যা তাঁর জীবনের হারানো অংশটুকু ফিরিয়ে আনতে পারে।

বাড়ি ফিরে অজিত বইটি খুলে পড়তে শুরু করলেন। প্রতিটি পাতা উল্টানোর সাথে সাথে তাঁর ভিতর এক অদ্ভুত শীতলতা ছড়িয়ে পড়ছিল। তিনি ভাবতে শুরু করলেন, কীভাবে এই বইয়ের লেখক এত স্পষ্টভাবে তাঁর জীবনকে তুলে ধরতে পেরেছেন। উপন্যাসের নায়ক, অজিত মিত্র, ছিল এক হতাশ লেখক, যিনি ঠিক যেমনটা নিজেকে অনুভব করতেন। তাঁর ছোটবেলার স্বপ্ন, জীবনের প্রথম প্রেমে হতাশা, সমাজের নির্দিষ্ট সীমায় আটকে পড়া— একে একে সব কিছু বইয়ের ভেতর উঠে আসছিল। প্রতিটি ঘটনাই যেন অজিতের নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি ছিল। তার লেখালেখির শুরু, তীব্র কল্পনা, তার আক্ষেপ, প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলা— সবকিছুই যেন এক জাদুকরীভাবে তাঁর জীবনের সাথে মিলে যাচ্ছিল।

অজিত অবাক হয়ে পড়লেন। তিনি জানতেন না, কীভাবে এই বইয়ের লেখক এত সব ঘটনা, এমনকি তাঁর অন্ধকার দিকগুলোও, এত নিখুঁতভাবে জানলেন। কোনো চিন্তা ছাঁদার সুযোগ না পেয়ে তিনি বইয়ের পাতায় চোখ বুলিয়ে যেতে লাগলেন। উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র, প্রতিটি দৃশ্য যেন তাঁর নিজের জীবনেরই প্রতিলিপি ছিল। তাঁর বুকের মধ্যে অজানা এক তীব্র কৌতূহল জেগে উঠল, একটি প্রশ্ন মাথায় ঘুরছিল— এই অজিত মিত্র কে? কীভাবে সে তাঁর জীবনের এত কিছু জানল?

বইয়ের শেষ পাতায় একটি ঠিকানা ছিল, লেখা ছিল— “দার্জিলিং”। অজিতের মনে হলো, কিছু একটা অদ্ভুত রহস্য লুকিয়ে আছে। সে ঠিকানা আর লেখকের পরিচয় জানার জন্য, এবং এই অজিত মিত্রের সাথে কোনো সম্পর্ক খুঁজে বের করার জন্য কেমন যেন এক তীব্র আগ্রহ সৃষ্টি হলো। তাঁর মধ্যে এক ধরনের তাড়না তৈরি হলো, যেন কিছু একটা তার সামনে অপেক্ষা করছে, কিছু এমন কিছু যা তাঁকে তাঁর জীবনের সঠিক পথ দেখাবে।

কৌতূহলের জোরে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, পরদিনই দার্জিলিং যাত্রা করবেন। বুকের মধ্যে একধরণের অস্থিরতা অনুভব করছিলেন। কিছু একটা ভিন্ন, কিছু একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে চলেছে, যা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। বইটি বন্ধ করেও তাঁর চিন্তা থামছিল না। প্রতিটি মুহূর্ত যেন সেই বইয়ের লেখক, “অজিত মিত্র”, এবং তার জীবনের অদ্ভুত মিলের প্রতি নতুন নতুন প্রশ্ন তৈরী করছিল। অজিত জানতেন, তিনি যা জানার জন্য বেরিয়েছেন, তা হয়তো কোনো সাধারণ উত্তর হবে না। তবে কিছু একটা খুঁজে বের করার জন্য তাকে দার্জিলিং যেতে হবেই।

এমনভাবে, এক অদ্ভুত অনুভূতির মধ্যে অজিত প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। তার মধ্যে একটা আশা ছিল, কিন্তু সঙ্গে ছিল এক অনিশ্চিত ভয়ও। দার্জিলিং তার জন্য যেন এক নতুন দিগন্তের পথে যাত্রা।

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - রোমাঞ্চকর সন্ধ্যে: "রোমাঞ্চকর সন্ধ্যে" একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে দুই প্রাক্তন বন্ধু, অভিজিৎ ও পল্লবী, আবার একে অপরকে খুঁজে পায় এবং ভালোবাসার চিরন্তন প্রতিশ্রুতি দেয়। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

দ্বিতীয় পর্ব: দার্জিলিংয়ের অজিত মিত্র

দার্জিলিং পৌঁছানোর পর অজিত মিত্র ঠিকানায় গিয়ে পৌঁছালেন। গাছপালায় ঘেরা এক নিরিবিলি জায়গায়, এক পুরোনো বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালেন তিনি। বাড়িটি দেখতে খুবই প্রাচীন, দরজার উপরে বহু বছরের পুরোনো একটি নামফলক ঝুলছে— “অজিত মিত্র”। অজিত মিত্রের বুকের ভেতর একটা তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লো। তিনি গভীর শ্বাস নিয়ে দরজার রিংটি টানলেন। কিছুক্ষণ পর, এক পুরুষ ব্যক্তির পায়ের শব্দ শোনা গেল, আর তার পরই দরজাটি খোলল।

অজিত প্রথমে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি দেখতে একেবারে তাঁর মতোই। লোকটির চোখ, মুখাবয়ব, হাসি— সবকিছু একে অপরের মতো। তার শরীরের গড়ন, মাথার চুলের স্টাইল, এমনকি তার পরিধেয় পোশাকও যেন অজিত মিত্রের মতোই ছিল। যেন, তিনি নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে আছেন। এক মুহূর্তে তার মনে হলো, হয়তো তিনি কোনো প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, তবে সেটি ছিল বাস্তব।

অজিত হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন, কিছু বলতে পারলেন না। তার মাথায় একে একে হাজারো প্রশ্ন এসে জড়ো হলো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কে?”

লোকটি একটু হাসলেন, এক ধরনের মধুর হাসি। তারপর শান্তভাবে বললেন, “আমি অজিত মিত্র।”

এ কথার সাথে সাথে অজিত মিত্রের সমস্ত শরীর যেন এক ঝটকায় অবশ হয়ে গেল। তার মনে হলো, কোথাও ভুল হচ্ছে। কিভাবে সম্ভব! একে অপরের মত দেখতে মানুষ? কীভাবে সম্ভব এমন এক অদ্ভুত মিল? তার নিজস্ব নামের অধিকারী এই ব্যক্তি কীভাবে তার মতই দেখতে পারেন?

লোকটি বুঝতে পারলেন অজিতের বিভ্রান্তি। তিনি একটু ধীরে ধীরে বললেন, “আপনি যা ভাবছেন তা ঠিক। আমি জানি, আপনি আমাকে খুঁজতে এসেছেন। তবে বিশ্বাস করুন, আমাদের জীবনের এক অদ্ভুত সম্পর্ক রয়েছে।”

অজিতের মাথায় চক্কর দিতে লাগলো। “কিভাবে সম্ভব? আপনি আমাকে চিনেন কীভাবে?” তিনি বিস্ময়ে প্রশ্ন করলেন।

লোকটি গভীর শ্বাস নিয়ে বললেন, “আমি জানি, আপনি কী ভাবছেন। কিন্তু আমারও কিছু কথা রয়েছে আপনাদের জন্য। আসুন, ভিতরে বসে কথা বলি।”

অজিত নড়তে পারেন না, তিনি অবিশ্বাসে একদৃষ্টিতে ওই ব্যক্তির মুখের দিকে তাকালেন। তার নিজেকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টাটা আরও গভীর হয়ে উঠলো। সমস্ত শরীর কাঁপছিল, মনে হচ্ছিল যেন বাস্তবতার সব সীমানা একে একে মিলিয়ে যাচ্ছে। তিনি নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলেন, “এটি কী আসলে এক অদ্ভুত স্বপ্ন, নাকি সত্যিই কিছু ঘটছে, যা আমি বুঝতে পারছি না?”

লোকটি তাকে আবার ডাকলেন, “আসুন, কথা বলি।”

অজিত ধীরে ধীরে পা বাড়ালেন, আর মনে মনে এক ধরনের অদ্ভুত উত্তেজনা আর ভয় নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেন।

দার্জিলিংয়ের অজিত মিত্র অজিতের সামনে বসে তার জীবন সম্পর্কে অদ্ভুত এক তত্ত্ব শেয়ার করলেন। তার কথা শুনে অজিত এক মুহূর্তে অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন। লোকটি সোজা চোখে তাকিয়ে বললেন, “আমরা এক আত্মার দুই রূপ। আমাদের আত্মা বিভক্ত হয়ে গিয়ে একই নাম ধারণ করেছে, কিন্তু আমাদের জীবন আলাদা। তুমি আমাকে একজন সফল লেখক হিসেবে দেখতে পাচ্ছ, কিন্তু আমি জানি— আমি সফল হতে পারি না, কারণ আমার সংগ্রাম ছিল না। আমার জীবনে কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই।”

অজিত বিস্ময়ে তার কথা শুনলেন। জীবনে যে গভীরতা আর সংগ্রামের অভাব তাকে তেমন একটা ভাবতে বাধ্য করেছিল, সেই কথা আজ সেই লোকটি স্বীকার করছেন। দার্জিলিংয়ের অজিত মিত্রের চোখে এক ধরনের তীব্র বিষণ্ণতা ছিল, যেন তিনি নিজের অক্ষমতার প্রতি এক গভীর কষ্ট অনুভব করছিলেন। তিনি বললেন, “তুমি যেমন আমাকে দেখছো, সফল, প্রশংসিত— আমি আসলে তেমন কিছু নই। আমার লেখালেখি, আমার সাহিত্যিক স্বীকৃতি— সবই ছিল মেকি। আমার জীবন ছিল এক সোনালী খাঁচায় বন্দী। আমি যা লিখেছি, তা ছিল এক ধরনের দিগন্তহীন মহাকাশে ভেসে থাকা ভাবনা, যা কখনো বাস্তবতা বা অভিজ্ঞতার আলো পায়নি। আমার সংগ্রাম ছিল না, আমার ভিতরে কোনো যন্ত্রণা ছিল না।”

অজিত স্তব্ধ হয়ে গেলেন। তার সামনে যে ব্যক্তি বসে আছে, সেই ব্যক্তি কি আসলেই তাঁর মতো একজন? তাঁর নিজের জীবন যেন আজ সম্পূর্ণ উল্টে গিয়েছিল। দার্জিলিংয়ের অজিত মিত্রের কথা শুনে সে বুঝতে পারছিল, সফলতা শুধুমাত্র বাইরের প্রশংসা বা সমাদর দিয়ে বিচার করা যায় না। এই জীবন, এই লেখক হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় জিনিস ছিল অভিজ্ঞতা— জীবন সংগ্রাম, ব্যর্থতা, যন্ত্রণার মধ্যে কাটানো সময়। একমাত্র তখনই একজন লেখক তার লেখায় প্রকৃত অর্থ খুঁজে পায়।

অজিত আরও জানতে চাইল, “তাহলে, তুমি এই এত বড় সফলতার মধ্যে থেকেও কেন এত বিষণ্ণ? তুমি কি কখনো চেষ্টা করনি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু লিখতে?”

দার্জিলিংয়ের অজিত মাথা নেড়ে বললেন, “যখন জীবনেই কোনো বাস্তবতা থাকে না, তখন লেখাতেও তেমন কোনো প্রাণ থাকে না। তুমি জানো, কীভাবে আমি জানি যে তোমার মত হয়ে উঠতে চাই? কারণ তুমি সেই জীবন দেখেছো— সংগ্রামের জীবন, যেখানে ব্যর্থতা ও শূন্যতা ছিল। তুমি যতবার হেরে গিয়েছো, ততবার তুমি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঠ শিখেছো। আমি জানি, তোমার পক্ষে সফলতা কিছু তিক্ত সত্যের পরিণতি।”

অজিত মিত্র ততক্ষণে পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি অনুভব করতে লাগলেন, এই কথাগুলোর মধ্যে কতটুকু সত্যতা ছিল। বাস্তবিক অর্থে, তার জীবনে তো কোনো আসল সংগ্রাম ছিল না, ছিল শুধু চেষ্টার পর চেষ্টার পরিণতি, কিন্তু কখনো প্রকৃত অভিজ্ঞতা থেকে লেখা হয়নি। দার্জিলিংয়ের অজিতের চোখে সেই গভীর শূন্যতা তিনি এখন নিজের মধ্যেও দেখতে পেলেন।

“তুমি জানো, একদিন আমি তোমার মতো হতে চেয়েছিলাম,” দার্জিলিংয়ের অজিত মিত্র আরও একটি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললেন, “কিন্তু এখন আমি জানি, আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাই আমাকে আমাকে লেখক হিসেবে তৈরি করতে পারে। তুমি যদি শুধু সফলতা চাও, তবে তুমি কখনোই কোনো সত্যিকারের লেখক হতে পারবে না। লেখক হতে হলে, নিজের জীবনকে গভীরভাবে বুঝতে হবে, এবং তার সমস্ত কষ্ট, ব্যর্থতা, সংগ্রাম—সব কিছুই লেখার মধ্যে আসতে হবে।”

অজিত শূন্য দৃষ্টিতে তার কথাগুলি শোনার পর ভাবতে লাগলেন, নিজের জীবনে এত কিছু একত্রিত না করেই কি তিনি সত্যিই লেখক হতে পারবেন?

কলকাতার অজিত তখন আরো ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ অনুভব করছিলেন। তার জীবনের সমস্ত ব্যর্থতা, হতাশা, সংগ্রামের পরেও কিছুই অর্জন করতে পারেননি—আর এখন, দার্জিলিংয়ের অজিত মিত্রের সামনে বসে, তার জীবনের সব কিছু যেন আরও বেশি অসহ্য হয়ে উঠছিল। তিনি ভাবছিলেন, “এই সফল জীবন কীভাবে আমি পেতে পারি? কেন আমি এভাবে শুধু অব্যর্থ হই?” মনে হচ্ছিল, দার্জিলিংয়ের অজিত মিত্র যেন তার সকল স্বপ্নকে অন্ধকারে ধাক্কা দিয়েছিল, আর তার সামনে নিজের ব্যর্থতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।

হঠাৎ করেই, কলকাতার অজিতের মনে এক অদ্ভুত চিন্তা উদয় হল। তিনি এক পা এগিয়ে দার্জিলিংয়ের অজিত মিত্রের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনার জীবন আমি নেব, আর আপনি আমার জীবন নিন।” এই কথাগুলো শোনার পর দার্জিলিংয়ের অজিত মিত্র একেবারে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি চোখ বড় করে কলকাতার অজিতের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এটা অসম্ভব, তুমি জানো না, এর ফল কী হতে পারে।” কিন্তু কলকাতার অজিত মিত্রের চোখে তখন এক তীব্র লড়াইয়ের আগুন জ্বলছিল। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, আর কিছু না হোক, অন্তত এই জীবনের ব্যর্থতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য, সে চেষ্টা করে দেখবে।

কলকাতার অজিত তার কথায় কোনোক্রমে মনোযোগ না দিয়ে বললেন, “আমার কাছে সময় নেই আর, আমি আর কিছু হারাতে পারি না। আমি যদি তোমার জীবন পেতে পারি, তাহলে আমি অন্তত সফল হব—আমি সেই লেখক হব, যেই লেখক আমি হতে চেয়েছিলাম।” তিনি ভীষণভাবে নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন, এমনকি দার্জিলিংয়ের অজিত মিত্রের সতর্কবাণীও তার হৃদয়ে কোনোরকম সাড়া ফেলছিল না।

দার্জিলিংয়ের অজিত মিত্র দাঁড়িয়ে গিয়ে তাঁর হাত দুটি ধীরে ধীরে সামনে রাখলেন, যেন কলকাতার অজিতকে কিছু বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাঁর কণ্ঠরোধ হয়ে যাচ্ছিল। তিনি কিছু বলার আগেই কলকাতার অজিত আবার তাঁকে বাধা দিলেন, “এখন কোনো কথার প্রয়োজন নেই, শুধু আমি যা বলেছি, তা গ্রহণ করুন।”

দার্জিলিংয়ের অজিত মিত্রের মনে হচ্ছিল, একটা অদ্ভুত অন্ধকারের মধ্যে তিনি চলে যাচ্ছেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন, যদি তারা একে অপরের জীবন পাল্টে নিতো, তবে সেটি কি তাদের জন্য সত্যিই শুভ হতো? তবে, কলকাতার অজিতের দৃষ্টি ছিল একেবারে দৃঢ়। সে জানতো, জীবনের কোনো এক মুহূর্তে কিছু নতুন পথ খুলে যেতে পারে, যদি সে শুধু তার বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে থাকে।

দার্জিলিংয়ের অজিত মিত্র হতাশ চোখে তাকালেন। কিছু একটা বলতে চাইলেন, কিন্তু কোনো শব্দ তাঁর মুখ দিয়ে বেরোল না। চুপচাপ তিনি কলকাতার অজিতের দিকে তাকিয়ে রইলেন, কিছু একে অপরকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন—কিন্তু তাঁরা দুজনেই জানতেন, এই পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। একটি অসম্ভব সিদ্ধান্তের দিকে তারা এগিয়ে যাচ্ছিল, যা হয়তো তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হতে চলেছিল, কিংবা সবকিছু নতুনভাবে শুরু হতে চলেছিল।

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - প্রতিফলিত প্রেম: প্রতিফলিত প্রেম: একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ভালোবাসা, বিশ্বাস, এবং জীবনের নতুন শুরু একসাথে মিশে যায়। আকাশ এবং অনিকার হৃদয়ের সংযোগের হৃদয়স্পর্শী গল্প। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

তৃতীয় পর্ব: জীবন বদলানোর উপক্রম

এক রাতে, যখন দার্জিলিংয়ের অজিত গভীর ঘুমে ছিলেন, কলকাতার অজিত মিত্র তার পরিকল্পনা অনুযায়ী চুপচাপ ঘরের পাশে থাকা টেবিল থেকে ঔষধের বোতলটি তুলে নেন। তিনি ধীরে ধীরে কিছু ঔষধ মেশান দার্জিলিংয়ের অজিত মিত্রের পানীয়তে, যাতে সে গভীর ঘুমে চলে যায়। তারপর, ঘরের আলো নিভিয়ে তিনি তার কার্যক্রম শেষ করেন, তার চোখে এক অদ্ভুত আলো ছিল—যেন তিনি জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে চলেছেন।

পরদিন সকালে, দার্জিলিংয়ের অজিত মিত্র চোখ খুলে দেখলেন, সবকিছু বদলে গেছে। তার চারপাশে পরিচিত পরিবেশের বদলে এক অচেনা পৃথিবী! তার বিলাসবহুল জীবন নেই, সমস্ত কিছু যেন তার হাতের বাইরে চলে গেছে। ঘরটি ছিল ছোট, তার সমস্ত সাফল্য, প্রাচুর্য—সবই উধাও। তিনি এখন কলকাতার অজিত মিত্রের ছোট ফ্ল্যাটে আছেন, একটি নির্জন ও কিছুমাত্র অস্বস্তিকর পরিবেশে। তার চোখে এক ধূসর অন্ধকার নেমে আসে, মনে হয় যেন তার সমস্ত জীবন একটি অবাস্তব স্বপ্নের মতো ছিন্ন হয়ে গেছে।

দার্জিলিংয়ের অজিত হতাশ হয়ে মাথা চুলকে বসে পড়লেন। তিনি অনুভব করলেন, সংগ্রামের অভিজ্ঞতা ছাড়া জীবনে কোনো গভীরতা আসে না। তিনি যদি তার জীবনের সাফল্য না দেখে থাকতেন, তবে তাকে কীভাবে বুঝতে হতো যে সুখ আসলে কষ্টের মধ্যেই থাকে? তাঁর জীবনটিকে এত সহজ করে ফেলতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারলেন, সবকিছুই অস্থায়ী, আর যা কিছু সত্যিকারের ছিল—সেটা ছিল সংগ্রাম, চেষ্টা এবং মনের গভীরতার সঙ্গে সম্পর্কিত। তার বিলাসবহুল জীবন, যা কখনোই পুরোপুরি তাকে সুখী করতে পারেনি, আজ একটি বৃত্তের মতো তার সামনে ফিরে এসেছে।

অন্যদিকে, কলকাতার অজিত মিত্র এখন দার্জিলিংয়ের বিলাসবহুল জীবনে প্রবাহিত হয়ে সফল জীবনটাকে অনুভব করছিলেন। নানা বড় বড় গয়নাগাটি, অভিজ্ঞানী দৃষ্টিকোণ, অসীম আরাম—সবকিছু ছিল তার কাছে। প্রথমদিকে সে ভাবল, এই জগৎটাই তো তার কাংক্ষিত। কিন্তু দিন যেতে যেতে, তার মনে একটি অস্থিরতা শুরু হল। সকল কিছু থাকা সত্ত্বেও তার মনে কোনো প্রশান্তি নেই। সাফল্য, পরিপূর্ণতা, আর বিলাসিতা তার সামনে, কিন্তু তিনি এখনও অভ্যস্ত হতে পারছিলেন না।

তিনি উপলব্ধি করলেন যে, সুখ আসলে সংগ্রামের মধ্যে থাকে। তার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা ও সংগ্রাম ছাড়া কিছুই যেন অর্থহীন হয়ে পড়ে। কলকাতার অজিত মিত্র ভাবলেন, “আমি কি ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম? এই জীবনে কি কোনটিই আমার আসল? আমার অভ্যস্ত জীবন, আমার যন্ত্রণাগুলি, সেই সবার মাঝে কেন আমি হারিয়ে গেলাম?” তার মনে সন্দেহ জাগতে লাগল। যখন সে সবকিছু পেয়ে গেল, তখনই তার অস্থিরতা বেড়ে গেল—এটি কি আসল সুখ?

দার্জিলিংয়ের অজিত মিত্র আর কলকাতার অজিত মিত্র একে অপরের জীবন নিয়ে যে পরিবর্তন এনেছে, তা তাদের জন্য এক গভীর পাঠে পরিণত হয়েছিল। এখন, তারা দুজনেই সেই একই প্রশ্নে আবদ্ধ—সুখ কোথায়?

দার্জিলিংয়ের অজিত যখন কলকাতার উপন্যাসগুলো পড়তে শুরু করলেন, তখন তার মধ্যে একটি অদ্ভুত অনুভূতি জাগ্রত হল। বইগুলোতে যে সংগ্রামের আভাস ছিল, যে জীবনকে গভীরভাবে বোধ করার সঙ্গতি ছিল—তা তাকে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিল। প্রতিটি পাতা উল্টানোর সময় সে যেন নিজেকে কোথাও হারিয়ে যাচ্ছিল। সেই সংগ্রাম, অস্থিরতা, দুঃখ, ত্যাগ—এগুলো তাকে নিজের জীবনের স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু এসব বইয়ে এমন কিছু ছিল, যা দার্জিলিংয়ের অজিতের লেখায় কখনো ছিল না। এখানে কোনও আবেগের খেলা ছিল না, ছিল না শুধুমাত্র প্রশান্তির তৃপ্তি। এসব লেখায় জীবনকে যথার্থভাবে বোধ করার আর্তি ছিল, যেখানে ব্যক্তির ভিতরের আত্মবিশ্বাস ও চেষ্টার সম্মিলন ছিল। সবকিছু যেন অজিতের জীবনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছিল, সে ভাবল, “এটাই তো সত্যিকার জীবনের পাঠ!”

একদিন, যখন কলকাতার অজিত বাড়ি ফিরে এলেন, তিনি তাঁর লেখার টেবিলের কাছে গিয়ে দেখলেন একটি খাতা খোলা রয়েছে। এটি তার নিজের খাতা ছিল, কিন্তু অদ্ভুতভাবে তাতে কোনো লেখা ছিল না, শুধু একটি নাম—“অধরা জীবন।” সেই নামের মধ্যে এক অজ্ঞাত আকর্ষণ ছিল, যা তাকে আরো পড়তে প্রলুব্ধ করল। কলকাতার অজিত ধীরে ধীরে খাতা খুললেন এবং পড়তে শুরু করলেন। শুরুতেই মনে হয়েছিল, এটি একটি অস্বাভাবিক গল্প, তবে কিছু সময় পরেই তিনি বুঝতে পারলেন যে এটি কোনও কল্পনা নয়, এটি ছিল তার এবং দার্জিলিংয়ের অজিতের জীবনের কাহিনী—একজন সফল, কিন্তু অসন্তুষ্ট লেখক, আরেকজন অসফল, কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ব্যক্তি।

পাঠ করতে করতে কলকাতার অজিত অনুভব করলেন, এই লেখার প্রতিটি শব্দ যেন তারই জীবন থেকে নেওয়া। কিছু কিছু জায়গায় তার নিজের প্রতিচ্ছবি দেখছিলেন তিনি, আর কিছু কিছু জায়গায় যেন দার্জিলিংয়ের অজিতের যন্ত্রণা, সংগ্রাম আর অভিজ্ঞতার অন্ধকার ছায়া। দুই জীবনের মধ্যে অদৃশ্যভাবে এক গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। কলকাতার অজিত বইটি পড়তে পড়তে ভাবলেন, “এটা কীভাবে সম্ভব? আমি যে জীবন চেয়েছিলাম, তা কি কখনোই আমার ছিল না? আমি কি আসলে জীবনের গভীরতা অনুভব করতে পেরেছি?”

অতীতের সমস্ত সিদ্ধান্ত ও স্বপ্নের প্রতি এক গভীর হতাশা ও বোধে তিনি নিজেকে আবদ্ধ অনুভব করলেন। দার্জিলিংয়ের অজিতের সংগ্রাম, তার অভ্যন্তরীণ লড়াই—এসবই ছিল সঠিক পথ, যেখানে কেবল ব্যক্তির অভিজ্ঞতা ও পরিশ্রমই তাকে জীবনের প্রকৃত অর্থ দেয়। কলকাতার অজিত মৃদু হেসে বললেন, “আমি ভুল করেছি। আমি সবসময় সফলতা, প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধি চেয়েছি, কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছিলাম, সুখ আসলে সংগ্রামের মধ্যেই থাকে।”

শেষে কলকাতার অজিত বুঝতে পারলেন, যে জীবন তিনি চেয়েছিলেন, তা আসলে তার জন্য ঠিক ছিল না। জীবনকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে গেলে তার প্রয়োজন ছিল দার্জিলিংয়ের অজিতের মতই এক বাস্তব অভিজ্ঞতা। কিন্তু এখন, সময় চলে গেছে, এবং তিনি এই ভুলের পেছনে ছুটতে থাকলেন।

কলকাতার অজিত আর দার্জিলিংয়ের অজিত এখন একে অপরকে গভীরভাবে বুঝতে শুরু করেছিলেন। তারা জানতেন, তাদের মধ্যে যে বিভক্তি ছিল, তা শুধুমাত্র বাহ্যিক সফলতার পার্থক্য ছিল, কিন্তু আসলে তাদের অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম, দুঃখ এবং আনন্দ এক ছিল। একটি নতুন উপলব্ধি তাদের মনে গেঁথে গিয়েছিল—জীবন যখন নিজের মতো না চলে, তখনই তা সার্থক হতে পারে। তাঁদের উভয়ের জীবন ছিল একটি অসমাপ্ত গল্প, আর সেই গল্পই একে অপরকে সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করেছিল।

কলকাতার অজিত সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি দার্জিলিং ফিরে যাবেন এবং তার জীবনের এই অসম্পূর্ণ অংশটি মীমাংসা করবেন। তিনি জানতেন, শুধুমাত্র একসঙ্গে কাজ করলে তারা একটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস তৈরি করতে পারবেন, যা পৃথিবীর প্রতিটি কোণে পৌঁছাবে। দার্জিলিং ফিরে গিয়ে, তিনি দার্জিলিংয়ের অজিতের কাছে গিয়ে তার কাছে ক্ষমা চাইলেন। তাঁর কথায় ছিল, “আমি ভুল করেছি, আমি সবসময় শুধু সফল হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, তুমি যে সংগ্রামটুকু করেছিলে, সেটাই ছিল আসল। তুমি যে জীবন বেছে নিয়েছিলে, সেটাই ছিল সত্যিকারের জীবন।”

দার্জিলিংয়ের অজিত মৃদু হেসে বললেন, “এটা শুধু তোমার ভুল ছিল না, আমারও ছিল। আমরা দুজনই আলাদা পথ বেছে নিয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের গল্প ছিল এক। তুমি যখন বলেছিলে, তোমার জীবন আমি নেব, আর আমি তোমার জীবন নেব—তা আসলে দুই জীবনের মিলনের প্রথম পদক্ষেপ ছিল।”

তাদের মধ্যে একটা গভীর সম্পর্ক তৈরি হল, যেন দুজন একে অপরের অর্ধেক হয়ে গিয়েছিলেন। তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, একসঙ্গে উপন্যাসটি সম্পূর্ণ করবেন। কলকাতার অজিতের চিন্তাভাবনা আর দার্জিলিংয়ের অজিতের অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণেই তারা একটি অমর কাহিনী রচনা করতে লাগলেন। সেই উপন্যাসে ছিল জীবন, সংগ্রাম, আশা, ভরসা, ব্যর্থতা আর সফলতার মিশ্রণ—এমন একটি কাহিনী, যা পাঠকদেরকে প্রবলভাবে অনুভব করতে বাধ্য করবে।

উপন্যাসটি সম্পন্ন হওয়ার পর, তারা তা প্রকাশ করলেন। বিশ্ব সাহিত্যে আলোড়ন সৃষ্টি হল। পাঠকরা তাদের গল্পের গভীরতা এবং মানবিক দিকগুলি অত্যন্ত প্রশংসা করলেন। এই উপন্যাসটি প্রমাণ করল, সফলতা আসলে কোথাও বাহ্যিকভাবে মাপা যায় না; এটি আসে নিজের গল্প লেখার মধ্য দিয়ে, যেখানে ব্যর্থতা এবং সফলতা একে অপরের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলতে থাকে।

এখন দুজনেই জানতেন, তাদের জীবনের পুরো ছবি এখন সম্পূর্ণ। তারা বুঝতে পারলেন, সফলতা আসলে সংগ্রামের মধ্যে থাকে, আর সেই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজের সত্যিকারের গল্প লেখা সম্ভব হয়। তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল এক অদ্ভুত জাগরণ, যা তাদের দুজনের জীবনকেই নতুন রূপে পরিণত করেছিল।

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

আমরা কারা

নতুন বাংলা ছোট গল্প

আষাঢ়ের সন্ধ্যে

"আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়।

"আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: আষাঢ়ের সন্ধ্যে

শীতের রাজ্যের জাদু

"শীতের রাজ্যের জাদু: একটি মজাদার ছোটদের গল্প, যেখানে রাজা শীতল রূপকথার গল্পের মাধ্যমে শিশুদের জন্য শীতের রাজ্যে গরমের অনুভূতি এনে দেন।"

"শীতের রাজ্যের জাদু: একটি মজাদার ছোটদের গল্প, যেখানে রাজা শীতল রূপকথার গল্পের মাধ্যমে শিশুদের জন্য শীতের রাজ্যে গরমের অনুভূতি এনে দেন।"

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: শীতের রাজ্যের জাদু

স্নেহের আশ্রয়

"স্নেহের আশ্রয়" একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ভালোবাসা ও যত্নের শক্তি দুটি বিপন্ন শিশুর জীবন বদলে দেয়। এটি অতীতের স্মৃতি ও মানবতার এক হৃদয়স্পর্শী উপাখ্যান।

"স্নেহের আশ্রয়" একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ভালোবাসা ও যত্নের শক্তি দুটি বিপন্ন শিশুর জীবন বদলে দেয়। এটি অতীতের স্মৃতি ও মানবতার এক হৃদয়স্পর্শী উপাখ্যান।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: স্নেহের আশ্রয়

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!