১৭ বছর পর কলকাতায় ফিরে এলো অনন্যা। ঐতিহ্যবাহী কলকাতার বুকে এক অন্ধকার গলির মধ্যে হাঁটছিল সে। হঠাৎ একটা পুরোনো বাড়ির দাঁড়িয়ে থাকা একজন মহিলা কে দেখে খুব অবাক হল সে। সন্ধ্যের হালকা আলোয় সেই মুখ তার চেনা! তার মা, মিরা দাস! এককালের বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী, আজ রাস্তার ধারে অভাগীর মত দাঁড়িয়ে আছে।
অনন্যা দাসের বুকটা এলোমেলো হয়ে গেল। ছোটবেলায় মা’র নাচের ঝমকানি, তালের তাড়া – সবকিছুই মুছে গিয়েছিল সেই দিন, যখন বাবা নিখোঁজ হয়েছিলেন। বাবা কবি সূর্য মিত্র, তার লেখা অমর হয়ে থাকলেও, নিজের পরিবারকে তিনি ছেড়ে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন, সেই রহস্যই অজানা থেকে গেল। আজ, এই অবস্থায় মাকে দেখে অনন্যার মনে জাগল নতুন প্রশ্নের ঝড়।
মা’কে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরল অনন্যা। মিথ্যা অভিমানের দেওয়াল ভেঙে পড়ল সেই রাতে। কান্নাজড়িত কথায় জানা গেল, সূর্যের নিখোঁজ হওয়ার পরে কীভাবে সংসারের চাপে ভেঙে পড়েছিল মিরা, কীভাবে নাচ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু, সবচেয়ে বড় রহস্যটা ছিল একটা হারিয়ে যাওয়া খাতা। সূর্যের লেখা, কোনো অপ্রকাশিত কবিতা কিংবা গল্প থাকতে পারে সেখানে। কিন্তু, সেই খাতা কোথায়?
পরের দিন, সকালে অনন্যা বের হল তার বাবা; সূর্যের বন্ধুদের খোঁজে। কবিদের আড্ডাখানা, পুরনো বইয়ের দোকান – সব জায়গায় খোঁজ নিল। শেষে পুরনো এক বইয়ের দোকানদার সুধীরবাবু-র সাথে দেখা হল তার। সুধীরবাবু, স্মরণ করলেন সূর্যকে। তিনি জানালেন, নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন আগে সূর্য তাঁর কাছে এসেছিলেন। অস্থির ছিলেন বেশ, আর খুব গোপনীয় কিছু লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, কী ছিল সেটা, সুধীরবাবু জানতেন না। একটা খাতার কথাও মনে পড়ল তাঁর। কিন্তু, কোথায় রেখেছেন, সেটাও অস্পষ্ট।
একটা সূত্র ধরা পড়ল। কিন্তু, সেই সূত্র ধরে কোথায় যেতে হবে, তা বুঝতে পারছিল না অনন্যা। এই সময় পাশে এল শ্রাবণ সেন, অনন্যার বন্ধু ও সাংবাদিক। সূর্যের লেখার খোঁজে শুরু হল তাঁদের যৌথ তদন্ত। কলকাতার পুরোনো এলাকা, ছাদ থেকে ছাদ, গলি থেকে গলি – সব জায়গায় খুঁজল তারা।
একদিন, এক পুরোনো বাড়ির ভগ্নাবশে একটা বাক্স পাওয়া গেল। তার মধ্যে, মৃদু করে ঢাকা থাকা একটা খাতা। সূর্যের লেখা, সন্দেহ নেই। কিন্তু, খাতাটা খুলতে গিয়ে হাত কাঁপছিল অনন্যার। শ্রাবণ সাহায্য করল। পুরোনো কাগজের সরসরানি ভেদ করে তারা পড়তে শুরু করল। কিন্তু, লেখাগুলো ছিল ধাঁধা। কোনো কবিতা ছিল না, গল্পও ছিল না। ছিল বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার বর্ণনা, অদ্ভুত কিছু চিহ্ন, আর কিছু অপূর্ণ মানচিত্র।
এই লেখা কি সূর্যের কোনো গোপন উপন্যাসের খসড়া? না কি আর কিছু? একটা অজান্তা ভয় জাগল অনন্যার মনে। তার বাবা কি পাগল হয়ে গিয়েছিল? নাকি এই লেখার মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাঁর নিখোঁজ হওয়ার রহস্য?
শ্রাবণ খাতাটা নিয়ে ফিরল তার অফিসে। সেখানে, সে একজন প্রবীণ নিতত্ত্ববিদ-এর সঙ্গে দেখা করলেন। নির্মলবাবু নামের সেই বিশেষজ্ঞ দেখলেন খাতাটা আর চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি জানালেন, এই চিহ্নগুলো কোনো সাধারণ চিহ্ন নয়। এগুলো কোনো একটি প্রাচীন গোষ্ঠীর গোপন ভাষা হতে পারে। আর মানচিত্রগুলো দেখে মনে হচ্ছে, কোনো একটা গুপ্তধন খুঁজে বের করার নির্দেশিকা এটা।
এই খবরে চমকে উঠল অনন্যা। বাবার লেখা কি কোনো গুপ্তধনের খোঁজ দেওয়া মানচিত্র? কিন্তু, বাবা কেন এমন কাজ করবে? আর এই গোপন ভাষা বাবা শিখল কোথায়? প্রশ্নের জালে জড়িয়ে গেল অনন্যার মন।
এদিকে, নির্মালবাবু খাতার চিহ্নগুলো নিয়ে গবেষণায় মন দিলেন। কয়েকদিন পর, তিনি আবার শ্রাবণ ও অনন্যার সঙ্গে দেখা করলেন। নির্মালবাবু জানালেন, চিহ্নগুলোর কিছুটা অর্থ উদ্ধার করতে পেরেছেন তিনি। তাঁর মতে, এই মানচিত্র কলকাতারই কোনো গোপন মন্দিরের দিকে নির্দেশ করছে। সেই মন্দিরের ভিতরেই লুকিয়ে থাকতে পারে সেই গুপ্তধন।
অনন্যার মনে জাগল আরো একটা প্রশ্ন। তার বাবা, সূর্য কি এই গুপ্তধনের খোঁজে কোনো মন্দিরে গিয়েছিলেন? আর সেখানেই কি তাঁর সাথে কোনো কিছু ঘটেছিল? নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শ্রাবণের সঙ্গে বের হল অনন্যা। নির্মালবাবুর দেওয়া চিহ্নগুলোর মানে বুঝে, তারা কলকাতার এক গলির গহ্বরে ঢুকল। পুরোনো, ধ্বংসপ্রাপ্ত এক মন্দিরের সামনে এসে দাঁড়াল।
মন্দিরের দরজা ভাঙা। সাবধানে ভিতরে ঢুকলেন অনন্যা ও শ্রাবণ। ভেতরটা অন্ধকার, ধুলোয় ঢাকা। কয়েকটা মশাল জ্বালিয়ে এগিয়ে চলল তারা। দেওয়ালে আঁকা ছবিগুলো মুছে যাচ্ছে, মূর্তিগুলো ভগ্ন। হঠাৎ, শ্রাবণের চিৎকার! চমকে উঠে অনন্যা তার দিকে ছুটল। শ্রাবণের হাতে ছিল একটা পাথরের টুকরো, যার উপরে সূর্যের লেখা খাতায় দেখা চিহ্নগুলোর মধ্যে একটি খোদাই করা ছিল। মনে হচ্ছে, এটাই ছিল কোনো গোপন দরজা খোলার চাবি। দেওয়ালের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় সেই চিহ্ন লাগিয়ে চাপ দিতেই, দেওয়ালের এক অংশ সরে গেল।
অন্ধকার এক গহ্বরের মুখ খুলে গেল তাদের সামনে। দ্বিধায় পড়ল অনন্যা ও শ্রাবণ। এই অজানা গহ্বরে ঢোকা কি ঠিক হবে? কিন্তু, সূর্যের রহস্য উন্মোচনের এত কাছে এসে ফিরে আসাও যেন মন মানে না। অবশেষে সাহস নিয়ে তারা গুহায় প্রবেশ করল।
গুহাটা খুব একটা বড় না। দেওয়ালে মশাল জ্বালিয়ে এগিয়ে চলল তারা। কিছুদূর যাওয়ার পর, একটা ছেড়া পুরনো কাপড়ের আড়ালে একটা মূর্তি দেখতে পেল। কাছে গিয়ে কাপড় সরিয়ে ফেলতেই স্তম্ভিত হয়ে গেল তারা। সেই মূর্তি, সোনার তৈরি!
কিন্তু, সোনার মূর্তির চেয়েও চমকে লাগল অন্য একটা জিনিস। মূর্তির পায়ের কাছে, মাটিতে পড়ে ছিল সূর্যের সেই হারিয়ে যাওয়া আরেকটা খাতা। কিন্তু, খাতার কাগজগুলো ছিল লাল কালিতে রঞ্জিত। আর খাতার প্রথম পাতায়, লাল কালিতে লেখা ছিল মাত্র একটি বাক্য:
“সত্যি সন্ধানের দাম, চুকাবে রক্তের দাম।”
চোখের সামনে এই বিচিত্র দৃশ্য – সোনার মূর্তি, রক্তাক্ত খাতা – সব মিলিয়ে এক অস্বাভাবিক ভীতি জড়িয়ে ধরেছিল তাকে। কিন্তু, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রাবণ ততটা ভয় পায়নি। সাংবাদিক হিসেবে এমন অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে তার। সে সাবধানে সোনার মূর্তির দিকে এগিয়ে গেল। মূর্তির হাতে একটি ছোট্ট কাগজের-রোল দেখতে পেল। খুলে দেখলেন, ভেজা পাতায় লেখা একটা চিঠি।
শ্রাবণ চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করল। চিঠিতে লেখা ছিল, এই মন্দিরের রক্ষক ছিলেন সূর্য মিত্র। তিনি এই মন্দিরের গোপন সম্পদ রক্ষার দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু, লোভী কিছু লোক এই সম্পদ হাতাত করার চেষ্টা করে। সূর্য তাঁদের বাধা দিতে গেলে তাঁকে খুন করে ফেলে। এই চিঠিতে, সূর্য নিজের খুনের কাহিনী লিখে রেখেছেন। সাথে ঐ গোষ্ঠীর নেতার নামও উল্লেখ করেছেন।
চিঠিটা পড়ে অনন্যা ও শ্রাবণের চোখ চড়কগাছ হয়ে গেল। সূর্যের নিখোঁজ হওয়ার রহস্য এবার সম্পূর্ণ স্পষ্ট হল। কিন্তু, এখন নতুন সমস্যা। এই চিঠি নিয়ে পুলিশের কাছে গেলেও, রক্তাক্ত খাতা আর সেই লাল কালিতে লেখা বাণীটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে শুরু করল শ্রাবণ। তিনি নির্মালবাবুর সঙ্গে আবার দেখা করার সিদ্ধান্ত নিল। নির্মালবাবু প্রাচীন গ্রন্থাবলী ও গোপন ভাষা বিশেষজ্ঞ। নির্মালবাবুর কাছে পৌঁছতেই তাঁকে সব ঘটনা বিস্তারিত জানালেন অনন্যা ও শ্রাবণ। সোনার মূর্তি, গোপন গহ্বর, সূর্যের লেখা চিঠি – সব শোনার পর নির্মালবাবুর চোখ দু’টি চকচক করে উঠল। একজন নিতত্ত্ববিদ হিসেবে এমন আবিষ্কারের সুযোগ তাঁর জীবনে কয়েকবারই এসেছে। কিন্তু, রক্তাক্ত খাতা আর লাল কালিতে লেখা বাণীটা তাঁকে কিছুটা দ্বিধায় ফেলল।
নির্মালবাবু খাতাটা পরীক্ষা করে জানালেন, লাল কালিটা কোনো সাধারণ কালি নয়। এটা এক বিশেষ রাসায়নিক দ্রব্য, যা তাপ দেওয়া হলে লেখাটা পরিবর্তন হয়ে যায়। নির্মালবাবুর ল্যাবেই তারা খাতাটাকে তাপ দিলেন। অলৌকিক ঘটনা! লাল কালি মুছে গিয়ে কাগজে ফুটে উঠল সূর্যের পরিষ্কার হাতের লেখা।
লেখাটা পড়তে শুরু করল অনন্যা। সূর্য লিখেছিলেন, কীভাবে তিনি এই মন্দিরের রক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। লিখেছিলেন, সেই গোপন সম্পদ নিয়ে তাঁর মনের দ্বন্দ্বের কথা। লেখা শেষ হল এই কথা দিয়ে – “আমি জানি না, লোভের কাছে নত হব, না কি এই গোপন সম্পদ রক্ষা করব। কিন্তু, যদি আমার সাথে কিছু ঘটে, তাহলে এই লাল কালির রহস্য উন্মোচন করবে সত্যি।”
এই লেখা পড়ে আরো প্রশ্ন জাগল অনন্যার মনে। কীভাবে জানতেন সূর্য এই লাল কালির রহস্য? আর কে দিয়েছিলেন তাঁকে এই বিশেষ রাসায়নিক? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শ্রাবণ তাঁর সাংবাদিক বন্ধুদের সাহায্য নিল। তারা জানতে পারল, কলকাতায় একজন তান্ত্রিক এই ধরনের বিশেষ রাসায়নিক তৈরি করেন।
অনন্যা ও শ্রাবণ ঐ তান্ত্রিক-এর কাছে গিয়ে সূর্যের কথা জিজ্ঞাসা করল। কিন্তু, তান্ত্রিক কোনো কিছু স্বীকার করতে রাজি হলেন না। তখনই শ্রাবণ তাঁকে দেখাল সূর্যের লেখা চিঠি। চিঠি দেখে তান্ত্রিক চমকে উঠলেন। তিনি স্বীকার করলেন, সূর্য তাঁর কাছে এসেছিলেন এই বিশেষ রাসায়নিকের জন্য। কিন্তু, সূর্য কী উদ্দেশ্যে এই রাসায়নিক চেয়েছিলেন, সেটা তিনি জানতেন না।
এই তথ্যের আলোকে পুলিশের কাছে গেল অনন্যা ও শ্রাবণ। সূর্যের লেখা চিঠি, তান্ত্রিক-এর স্বীকারোক্তি – সব প্রমাণ সহ ঐ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেন তারা। পুলিশ তদন্ত শুরু করল। কিছুদিন পর, ঐ লোভী গোষ্ঠীকে গ্রেফতার করা গেল। সূর্যের মৃতদেহ উদ্ধার করতে কিছুটা সময় লাগল। তবে, পুলিশের তদন্তে প্রমাণ হল, সেই গোষ্ঠীর লোকেরাই সূর্যকে খুন করেছিল। এই ঘটনা কলকাতা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করল। নিখোঁজ কবির রহস্যময় মৃত্যু, গোপন মন্দির, সোনার মূর্তি – সব মিলিিয়ে গল্পের মতোই মনে হল মানুষের কাছে। শ্রাবণ, তাঁর লেখা রিপোর্টের জন্য সারা দেশে প্রশংসিত হলেন।
কিন্তু, এই সব কিছুর মাঝেও অনন্যার মনে একটা জিজ্ঞাসা থেকে গেল। সূর্যের লেখা শেষ খাতায় আরো কিছু লেখা ছিল, লাল কালিতে লেখা সেই বাণীটা। “সত্যি সন্ধানের দাম, চুকাবে রক্তের দাম।” এই কথাগুলোর মানে কি? সূর্য কি এই রক্তাক্ত খাতার রহস্য উন্মোচন করতেই কি নিজের জীবন দিয়েছিলেন?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নির্মালবাবুর সঙ্গে আবার দেখা করল অনন্যা। নির্মালবাবু খাতাটা নিয়ে গবেষণায় মন দিলেন। কয়েক সপ্তাহ পর, তিনি অনন্যাকে জানালেন, তিনি ঐ লাল কালির রাসায়নিক সংযুক্তির একটা অংশ উদ্ধার করতে পেরেছেন। সেই অংশের সঙ্গে তিনি আরো কিছু রাসায়নিক মিশিয়ে খাতার উপর প্রয়োগ করলেন।
অলৌকিক ঘটনা ঘটল আবার। লাল কালিতে লেখা নতুন কিছু লেখা ফুটে উঠল খাতায়। সূর্য লিখেছিলেন, তিনি এই মন্দিরের গোপন সম্পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু, লোভের কাছে নতিস্বীকার করেননি, বরং এই সম্পদ রক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি জানতেন, এই সম্পদ নিয়ে লোভী মানুষেরা তাঁকে ছেড়ে দেবে না। তাই, তিনি এই লাল কালির রহস্য লিখে রেখেছিলেন।
ঐ লাল কালির রাসায়নিকটি আসলে এক বিশেষ কালি, যা রক্তের সংস্পর্শে এলে লেখা পরিবর্তন হয়ে যায়। সুতরাং, সূর্য নিজের রক্তেই ঐ কালিতে লেখা লিখেছিলেন। তিনি জানতেন, তাঁর মৃত্যুর পর এই লাল কালির রহস্য উন্মোচিত হবে, আর তিনি সত্যি উন্মোচনের পথ দেখিয়ে গেলেন।
অনন্যা মায়ের হাত ধরে বাড়ি ফিরল। এই দীর্ঘ যাত্রার শেষ। বাবা হারিয়ে যাওয়ার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে, তবে মৃত্যুর শোক তাঁকে কখনোই ভুলিয়ে যেতে পারবে না। কিন্তু, সূর্যের লেখা শেষ কয়েকটা লাইন অনন্যার মনে গভীর দাগ কাটল: “আমি জীবনে হয়তো সফল কবি হতে পারিনি, কিন্তু মেয়ে, তুমি সত্যিকে খুঁজে বের করলে। আর সে জন্যই তোমার নাম রাখলাম অনন্যা। সত্যকে অন্বেষণ করাই হোক তোমার জীবনের পথ।”
অনন্যার চোখে জল এসে গেল। বাবা তাঁর জন্য এতটা ভেবেছিলেন, এটা তিনি কখনো জানতেন না। মায়ের হাতটা আরো শক্ত করে ধরল অনন্যা। এই রহস্য উন্মোচনের পুরো ঘটনায় তিনি অনেক কিছু শিখেছে। সত্যের সন্ধানের পথ কঠিন, কখনো কখনো রক্তাক্তও হতে পারে। কিন্তু, সত্য উন্মোচিত না হলে মনের শান্তি পাওয়া যায় না।
এই ঘটনার পর অনন্যা আর আগের সেই ভীতু মেয়ে রইল না। সে সাংবাদিকতায় পড়াশুনা শুরু করলেন। শ্রাবণ তাঁকে অনেক সাহায্য করল। কয়েক বছরের মধ্যেই অনন্যা একজন সাহসী ও নিষ্টাবান সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করল। সে সর্বদা সত্যের সন্ধানে নিজেকে উৎসর্গ করল, ঠিক সেইভাবেই যেমনটা চেয়েছিল তাঁর বাবা, কবি সূর্য মিত্র।