"রোমাঞ্চকর সন্ধ্যে" একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে দুই প্রাক্তন বন্ধু, অভিজিৎ ও পল্লবী, আবার একে অপরকে খুঁজে পায় এবং ভালোবাসার চিরন্তন প্রতিশ্রুতি দেয়।

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » রোমাঞ্চকর সন্ধ্যে

রোমাঞ্চকর সন্ধ্যে

"রোমাঞ্চকর সন্ধ্যে" একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে দুই প্রাক্তন বন্ধু, অভিজিৎ ও পল্লবী, আবার একে অপরকে খুঁজে পায় এবং ভালোবাসার চিরন্তন প্রতিশ্রুতি দেয়।

আমাদের WA চ্যানেল জয়েন করুন

এই মাসের সেরা ভুতের ছোট গল্প, পড়ুন ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন – ঝড়ের রাত

বন্ধুত্বের শুরু

জলপাইগুড়ি, ছোট্ট এক শহর, যেখানে পাহাড়ের কোলে বয়ে চলে এক শান্ত নদী। এখানে অভিজিৎ আর পল্লবী জন্মেছে, বেড়ে উঠেছে, তাদের জীবনের প্রথম স্বপ্ন দেখেছে। একই স্কুলে পড়াশোনা, একসঙ্গে খেলা, পড়া—সবকিছুতেই ছিল একে অপরের উপস্থিতি।  

পল্লবী ছিল এক প্রস্ফুটিত ফুলের মতো। হাসিখুশি, প্রাণবন্ত, সবসময় কিছু না কিছু নিয়ে মেতে থাকত। সবার মধ্যে যেন একটি আলাদা ঔজ্জ্বলতা ছিল তার। একদিকে যখন পল্লবী সহজে সবার সাথে খুব সহজে বন্ধুত্ত করতে পারত, অভিজিৎ ঠিক তখনই ছিল সেই শান্ত, নিঃশব্দ কিশোর, যে সবার মাঝে দাঁড়িয়ে নিজের পৃথিবীতে ডুবে থাকত। তবে দুজনের মধ্যে অটুট বন্ধুত্ত ছিল। 

স্কুলের মাঠে দুপুরবেলা যখন সমস্ত ছাত্ররা ছুটে যেত খেলার জন্য, তখন পল্লবী আর অভিজিৎ দুজনেই স্কুলের পেছনে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত। একদিন স্কুলের ছুটির পরে পল্লবী স্কুলের মাঠে বসে অভিজিৎকে মজা করে বলল, “জানিস, আমার ইচ্ছে, আমরা বড় হলে তুই গান গাইবি আর আমি নাচব। পুরো স্টেজ যেন শুধু আমাদের দখলে থাকে।” অভিজিৎ একটু হেসে বলল, “তুই তো বেশ স্বপ্ন দেখতে পারিস! আমি ভালো গান গাইতে পারি না, আর তোর নাচ দেখে সবাই হাসবে।” পল্লবী একটু অভিমানের সুরে বলল, “তুই কখনো আমার কথা বিশ্বাস করিস না, অভি। আমি জানি, তুই আমার পাশে থাকলে আমি যা চাই সেটাই পাব। তুই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।”  

অভিজিৎ চুপ করে তাকিয়ে রইল পল্লবীর দিকে। তার মনের গভীরে কোথাও পল্লবীর এই কথাগুলো এক অদ্ভুত ভালো লাগার অনুভূতি এনে দিল। সে মৃদু হেসে বলল, “তুই সবসময়ই এমন কথা বলিস, যে আমার মনে হয় তুই আমার জীবনের সব শূন্য জায়গাগুলো সম্পুর্ন্য করে দিচ্ছিস।”  

পল্লবী হেসে বলল, “তাহলে আমি সবসময় তোর পাশে থাকবো, তোর সব শূন্যতা পূরণ করতে।”

পল্লবীর চিত্রকলা এবং নাচের প্রতি তার ভালোবাসা থেকেই অভিজিৎ বুঝতে পারত, একদিন সে এক বড় মঞ্চে তার প্রতিভা দেখাবে। তবে অভিজিৎ, একটু বাস্তববাদী ছিল, তার স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার, কিছু বড় করার। তারা একে অপরকে সমর্থন করতো।

সেই সময়ে, সম্পর্কের মায়াজালে আবদ্ধ হলেও অভিজিৎ কখনও বুঝতে পারেনি, পল্লবী তার জীবনের কতটা গভীর অংশ দখল করে নিয়েছে। প্রতিদিনের সাধারণ কথোপকথন, স্কুলের ফাঁকে ছোট ছোট মুহূর্তগুলো, আর পল্লবীর উজ্জ্বল হাসি—এসব যেন অভিজিতের জীবনের এক অমূল্য অংশ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সেই অনুভূতিগুলোকে নাম দিতে সে তখনও অক্ষম ছিল।

পল্লবীও বুঝতে পারত, অভিজিৎ তার জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। অভিজিৎ যখন তার পাশে থাকত, তখন তার পৃথিবী যেন সম্পূর্ণ হত। কিন্তু যখন সে অভিজিৎকে দূরে কোথাও অন্য কারও সঙ্গে দেখতে পেত, তখন তার মন এক অদ্ভুত বেদনায় ভরে উঠত।

তারা দুজনেই ভেতরে ভেতরে বুঝত, এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক বন্ধুত্বের সীমা ছাড়িয়ে অন্য কোথাও পৌঁছেছে। তবুও, একে অপরের দিকে তাকিয়ে সেই অনুভূতিকে স্বীকার করার সাহস তখন তাদের ছিল না। অনুভূতির এই নীরবতা, মনের গভীরে দোলা দেওয়া এক অদ্ভুত মায়ায় তাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছিল।

অতঃপর, স্কুল শেষের দিন এসে গেল। সেদিন আবহাওয়া ছিল ভারি, আকাশে মেঘ জমে আসছিল। স্কুলের বন্ধুরা একে অপরকে বিদায় জানাতে আসছিল, কিন্তু অভিজিৎ আর পল্লবী একে অপরের পাশে বসে ছিল, চুপ করে। কেউ কিছু বলছিল না। পল্লবী ছিল একটু মনমরা। অভিজিৎ তার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুই কোথায় যাবি, পল্লবী?” পল্লবী একটু ভারী গলায় বলল, “জানিনা।”

অভিজিৎ কথাটা শুনে কিছুটা স্তব্ধ হয়ে গেল। তার চোখে যেন কোনও উত্তর ছিল না। পল্লবী তার হাতটা শক্ত করে ধরে বলল, “তুই একদিন একজন বড় ইঞ্জিনিয়ার হবি, আমার বিশ্বাস আছে। কিন্তু আমরা যদি একসাথে থাকতে পারতাম তাহলে হয়তো আরো ভালো হতো?” কথাটা শুনে অভিজিৎ গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠলো,

“না চাহিলে যারে পাওয়া যায়,

না চাহিলে যারে পাওয়া যায়,

তেয়াগিলে আসে হাতে,

দিবসে সে ধন হারায়েছি আমি– পেয়েছি আঁধার রাতে………”

সেদিন, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পল্লবী যখন চলে গেল, অভিজিৎ তার জীবনের সবচেয়ে বড় শূন্যতা অনুভব করল। সে বুঝতে পারল, পল্লবী ছাড়া তার সমস্ত পৃথিবী অসম্পূর্ণ। তাদের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বের মত, কিন্তু সেই বন্ধুত্বের মধ্যে লুকিয়ে ছিল কিছু অদেখা অনুভূতি, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরো গভীর হয়ে উঠেছিল।

শুরুর দিকে, তারা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও সময়ের সাথে সেই যোগাযোগ একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেল। পল্লবী তার নতুন জীবনের দিকে মনোনিবেশ করল, আর অভিজিৎ নিজের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কখনও একে অপরকে ফোন করতো, কখনও কখনও চিঠি লিখত, কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে তাদের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল। জীবনের চাকা ঘুরছিল, আর দুজনেই অনেক কিছু বদলাতে বদলাতে চলছিল।  

তবে, অভিজিৎ জানত, পল্লবী তার মনে সবসময় থাকবে, এবং যতই দূরে থাকুক, এই সম্পর্ক কখনো মুছে যাবে না। কিন্তু সেই ছোটবেলার শহর, সেই স্কুল, সেই মাঠ, সেই মুহূর্তগুলো সবসময় মনে পড়ে যেত। জীবনের সবকিছু পাল্টানো, তবে পল্লবী চলে যাওয়ার পরও তার ছায়া কখনোই মুছে যায়নি।  

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - প্রতিফলিত প্রেম: "প্রতিফলিত প্রেম" একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ভালোবাসা, বিশ্বাস, এবং জীবনের নতুন শুরু একসাথে মিশে যায়। আকাশ এবং অনিকার হৃদয়ের সংযোগের হৃদয়স্পর্শী গল্প। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

পুনর্মিলন

বছর কয়েক পর, একজন বন্ধুর বিয়েতে যোগ দিতে জলপাইগুড়ি শহরে ফেরত আসে অভিজিৎ। শহরটা আগের মতোই ছিল, তবে তার মনে হচ্ছিল যেন এক শীতল প্রলেপ পড়ে গেছে সবকিছুতে।

যখন সে বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রবেশ করল। অভিজিতের হটাৎ এক কোণে নজর গেল, সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল পল্লবী। অনেক বছর পর, সেই পল্লবীকে দেখার অনুভূতি একেবারেই অন্যরকম ছিল। দীর্ঘদিন পর তাকে আবার দেখার মুহূর্তটা যেন এক রহস্যময় সুরে ভরা, মিষ্টি দুঃখের গল্পের মতো। পল্লবী, তার মিষ্টি হাসি, নীল পোশাক, কাঁধে ঝুলানো সাদা শাল—সব কিছু যেন আগের মতোই ছিল। তবে এই এক মুহূর্তে, তাকে দেখে অভিজিৎ যেন হারিয়ে গেল এক সোনালি অতীতে।

পল্লবীও অভিজিতের দিকে তাকিয়ে আনন্দে উচ্ছসিত প্রায় চিৎকার করে বলল, “অভি! তুই? আমাকে জানাসনি কেন, তুই এখানে আসছিস?” অভিজিৎ হেসে বলল “হুমম!” পল্লবী বললো, “তুই এখনো সেই রকম, চুপ চাপ শান্ত।” অভিজিৎ কিছু বলল না। 

পল্লবী আর অভিজিৎ, দুজনেই যেন সময়ের সব দূরত্ব আর স্মৃতির ভার ভুলে গেল। ১০-১২ বছরের দীর্ঘ বিচ্ছেদ তাদের হৃদয়ে যে শূন্যতা সৃষ্টি করেছিল, সেই পুনর্মিলনের মুহূর্তে তা ভরে উঠল এক গভীর অনুভূতিতে। পল্লবী অভিজিতের দিকে তাকিয়ে, চোখে এক অদ্ভুত উজ্জ্বলতা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। অভিজিৎ, বরাবরের মতো শান্ত, কিন্তু তার চোখ দুটো কথা বলছিল—আনন্দ, বিস্ময় আর চাপা এক অভিমানের মিশ্রণে।

পল্লবীর হাসি থেমে গিয়েছিল, তার চোখে জল এসে পড়ছিল। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল, যেন অভিজিতের মুখ দেখে তার সমস্ত স্মৃতির বই নতুন করে খুলে গেছে। অভিজিৎ ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এসে মৃদু হাসল, কিন্তু তার চোখেও এক ঝলক অশ্রু ছিল।

দুজনেই কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছিল না। দীর্ঘ সময়ের বিরহ আর অতীতের মধুর স্মৃতি তাদেরকে এক গভীর অনুভূতির জালে জড়িয়ে রেখেছিল। তারা বুঝল, এত বছরে অনেক কিছু বদলালেও, তাদের মনের গভীরে ভালোবাসার সেই আগুন এখনও নিভে যায়নি।

বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে ভোরের দিকে, পল্লবী অভিজিতকে ডেকে বলল, “অভি, কাল বিকেলে আমাদের পুরোনো ডেরায় যাবি, পাহাড়ের টিলায়?”

অভিজিৎ খানিক চুপ থেকে, কেমন যেন একটা অদ্ভুত শান্তি অনুভব করে বলল, “হুমম।”

তারা দুজনেই পাহাড়ের পথে রওনা হল। সেদিনের সন্ধ্যা ছিল একেবারে বিশেষ। সূর্য তার শেষ রশ্মি ছড়িয়ে দিয়ে পাহাড়ের ঢালে লালচে আভা ফেলে যাচ্ছিল। যেন প্রকৃতি তাদের জন্য এক রঙিন চাদর বিছিয়ে রেখেছে। পল্লবী পরনে ছিল সেই আগের মতো নীল লং ড্রেস, আর তার ওড়না হাওয়ায় উড়ছিল। অভিজিৎ শুধু তাকিয়েই থাকল। পল্লবী নিজে থেকেই বলল, “এই জায়গাটা আমার খুব প্রিয়, অভি, এখানে এলেই তোর কথা খুব মনে পড়ে। জায়গাটা তোর-ও খুব প্রিয় ছিল।”  

অভিজিৎ মৃদু হেসে বলল, “তোর জন্যই তো আমার এই জায়গাটা এত সুন্দর লাগে।” 

তারা পাহাড়ের চূড়ায় বসে নিজেদের পুরনো দিনের কথা বলতে শুরু করল। পল্লবী বলল, “আমার এখনো মনে হয় যেন কিচ্ছু বদলায়নি। আমাদের দিনগুলো, হাসি, স্বপ্ন—সব কিছু যেন এখনো আগের মতই আছে।” অভিজিৎ কিছুটা নরম গলায় বলল, “এমনটাই তো। কত দিন পরে ফিরলাম, সেই চেনা মানুষগুলো, চেনা পথ, আবার যেন নতুন করে সবকিছু অনুভব করছি।” 

পল্লবী বলল, “অভি, আমাদের সম্পর্কটা তো সেভাবে ছিল না। শুধু বন্ধু ছিলাম আমরা, তাই না?”

অভিজিৎ যেন একটু থমকে গেল। সে মুচকি হেসে বলল, “বন্ধু? হ্যাঁ, হয়তো।”  

পল্লবী তার দিকে তাকিয়ে বলল, “কিন্তু জানিস তুই যখন চলে গেলি আমি কেমন একটা বিভ্রান্তির মধ্যে পরে যেতাম……..” কথাটা শেষ না করেই পল্লবী গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠলো, “আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে, দেখে আমি পাইনি…………..”   

অভিজিৎ অস্তাগত সূর্যের লাল আভায় রাঙানো পল্লবীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। তার মনের গভীরে এক ঝড় বয়ে যাচ্ছিল—ভালোবাসার সত্যিটা বলতে চাইলেও ভয় ছিল, যদি এই সম্পর্কটাই ভেঙে যায়। পল্লবীর হাসি, তার চোখের উজ্জ্বলতা, সবকিছুই অভিজিতের মনে যেন এক স্বর্গীয় সুর তুলছিল। কিন্তু সেই সুরের মাঝে এক ভয়ানক নীরবতা ছিল। সে বুঝতে পারছিল, এই অনুভূতিটা বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি, অনেক গভীর। পল্লবীর দিকে তাকিয়ে সে ধীরে ধীরে পেছনে সরে গেল। তার মনে শুধু একটাই কথা ঘুরছিল—”যদি বলার পর তাকে হারিয়ে ফেলি?” 

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - দুই স্বপ্ন, এক প্রেম: দুই স্বপ্নবাজের প্রেমের গল্প "দুই স্বপ্ন, এক প্রেম"। পেশাদার জীবনের টানাপোড়েনের মাঝে জন্ম নেয় গভীর ভালোবাসা। রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্পে অনুভব করুন প্রেম, স্বপ্ন ও জীবনের মেলবন্ধন। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

প্রেমের প্রতিজ্ঞা

সন্ধ্যার রঙিন আভা পাহাড়ের চারপাশে মিশে গিয়ে এক মোহময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। পূর্বের এক টুকরো চাঁদের ম্লান আলো আর তারার ক্ষীণ ঝিলিক যেন তাদের জীবনের দীর্ঘ বিচ্ছেদের গল্পকে আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছিল। অভিজিৎ আর পল্লবী একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে বসে ছিল, যেন এই মুহূর্তটা কোনোভাবেই হাতছাড়া হতে না দেয়। পল্লবীর নরম হাতের উষ্ণতা অভিজিতের হৃদয়ে এক শান্ত স্রোতের মতো প্রবাহিত হচ্ছিল। তাদের চোখে কোনও কথা ছিল না, তবু সেই নীরবতা ছিল গভীর ভালোবাসায় ভরা। ঠাণ্ডা হাওয়ার স্পর্শেও তাদের মনে ছিল এক উষ্ণ অনুভূতি, যেন দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পাওয়া এক পূর্ণতার স্বাদ। অভিজিৎ গুনগুন গেয়ে করে উঠলো,

“তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম

নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমানিশীথিনী-সম

তুমি রবে নীরবে

মম জীবন যৌবন, মম অখিল ভুবন

তুমি ভরিবে গৌরবে নিশীথিনী-সম

তুমি রবে নীরবে……”

গানটা গাইতে গাইতে এখানে থেমে গেল অভিজিৎ। পল্লবী বলে উঠলো, “কি রে থামলি কেন? ভালোই লাগছিল!” 

সন্ধ্যার মিষ্টি হাওয়া আর চাঁদের নরম আলো তাদের ঘিরে ধরেছিল। পল্লবী তখন অভিজিতের সামনে দাঁড়িয়ে, চোখে অদ্ভুত এক জিজ্ঞাসা। অভিজিৎ বুকে জমা সমস্ত সাহস একত্রিত করে পল্লবীর হাত দুটো ধরে তার চোখে চোখ রেখে বলল,  

“পল্লবী, আমি তোকে স্কুলের দিনগুলো থেকেই ভালোবাসি। আমাদের বন্ধুত্ব ছিল অসাধারণ, কিন্তু সেই বন্ধুত্বের আড়ালে একটা গভীর অনুভূতি লুকিয়ে ছিল, যেটা তখন বুঝিনি। আজ এত বছর পর আমি সেটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। তুই জানিস, তোর অভাবে আমার দিনগুলো কতটা ফাঁকা ছিল? তোর সেই হাসি, সেই কথা—সবকিছু আমি মিস করতাম।  

কতবার ভেবেছি তোকে বলব, কিন্তু সাহস হয়নি। ভেবেছিলাম, যদি বলার পর তুই দূরে সরে যাস? তুই আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অংশ। তোর সঙ্গে দেখা না হলে আমার জীবনটা কেমন হতো, আমি ভাবতেই পারি না।  

আজ তোকে একটা কথাই বলতে চাই, পল্লবী। আমি তোকে শুধু ভালোবাসি না, তোকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। যদি তুই আমাকে গ্রহণ করিস, আমি প্রতিদিন তোকে সেই সুখ দিতে চেষ্টা করব যা তোর প্রাপ্য। আজ যদি তুই আমাকে ‘না’ বলিস, আমি তোর এই হাসিটা আর আমাদের এই মুহূর্তটাকে স্মৃতি করে বাঁচব।”  

অভিজিতের চোখ তখন জ্বল-জ্বল করছিল। তার কণ্ঠে ছিল কম্পন, কিন্তু তাতে ছিল এক অনন্য সত্য। এই মুহূর্তে তার হৃদয়ের প্রতিটি শব্দ যেন পল্লবীর কাছে পৌঁছেছিল, একেবারে গভীর ভালোবাসায়। 

অভিজিতের কথা শুনে পল্লবী কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। চোখের কোণ দিয়ে নীরব অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। তার বুকের ভেতর জমে থাকা কথাগুলো যেন হঠাৎ করে মুক্তি পেল। পল্লবী ধীরে ধীরে অভিজিতের হাতগুলো নিজের হাতে নিলো। তারপর মৃদু কণ্ঠে বলল,  

“অভি, তোকে কী বলব! আমি তো তোকে সেই স্কুল লাইফ থেকেই জানি। তোর সঙ্গে কাটানো প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহূর্ত আমার মনে অমলিন হয়ে আছে। আমি তোকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখতাম, জানিস? কিন্তু কখনো বলতে পারিনি। ভয় পেতাম, যদি তুই বুঝতে না পারিস।  

তোর প্রতি আমার অনুভূতিগুলো সবসময় আলাদা ছিল। তোর হাসি, তোর সেই শান্ত মেজাজ, তোর পাশে থাকার সেই অভ্যাস—সবকিছু আমাকে তোর প্রতি আরও বেশি টানতো। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম, হয়তো আমি তোর মতো কখনো এতটা গভীরভাবে ভালোবাসতে পারব না। হয়তো তুই অন্য কারো সঙ্গে সুখী হবে, আর আমি দূর থেকে তোকে দেখে শান্তি পাব।  

তুই যখন বললি তুই আমাকে আজও ভালোবাসিস, তখন মনে হলো, আমি স্বপ্ন দেখছি। তুই ভাবলি কী করে আমি তোকে ‘না’ বলব? অভি, তুই আমার জীবনের সেই অংশ, যেটা ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। আজ এত বছর পর আমি তোকে এটা বলতে পারি, আমি তোর সেই স্কুলের দিনগুলো থেকেই ভালোবাসি। শুধু সাহস করিনি তোকে বলার।  

আজ আমি জানি, আমরা দুজনেই একে অপরের জন্য।”  

পাহাড়ের ঠাণ্ডা হাওয়া তাদের চুলগুলোকে এলোমেলো করে দিচ্ছিল, কিন্তু তাদের হৃদয় যেন সেই মুহূর্তে সবচেয়ে শান্ত, সবচেয়ে নিরাপদ জায়গায় ছিল। অভিজিৎ আর পল্লবীর চোখে একে অপরের জল মুছতে মুছতে সেই চোখেই যেন এক পৃথিবী কথা বলে যাচ্ছিল। 

রাত গভীর হচ্ছিল, আকাশে চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়েছিল। তারা সেই আলোয় যেন এক অদ্ভুত জাদুকরী আবেশে হারিয়ে যাচ্ছিল। সময় থেমে ছিল। শব্দহীন সেই রাতের সাক্ষী ছিল কেবল পাহাড়ের চূড়া, দূরে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ আর তাদের হৃদয়ের ছন্দ।  

পল্লবীর বুকের গভীরে একটা অজানা আরাধনা যেন এক নিমেষে পূর্ণতা পেল। অভিজিৎ পল্লবীর হাত শক্ত করে ধরলো। তার চোখের ভাষা যেন বলে উঠল, “তুইই আমার সবকিছু।” পল্লবী অনুভব করল, এই মানুষটা তাকে কতটা চায়, কতটা গভীরভাবে ভালোবাসে। 

হঠাৎ অভিজিৎ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। সেই আলিঙ্গনে কোনো শব্দ ছিল না, ছিল শুধু অনুভূতির গভীরতা। পল্লবী তার মুখ অভিজিৎ-এর কাঁধে লুকিয়ে ফেলল। তাদের হৃদয়ের অন্তর্দ্বন্দ্ব যেন মুহূর্তেই থেমে গেল। তাদের মধ্যে যে দূরত্ব এত বছর ধরে ছিল, সেই দূরত্ব যেন এই আলিঙ্গনের উষ্ণতায় মুছে গেল। 

তারা দুজনেই বুঝতে পারল, এই রাত, এই পাহাড়, এই মুহূর্ত তাদের জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। তারা একে অপরকে পেয়েছে, এবং এই পাওয়া যেন এক শাশ্বত প্রতিশ্রুতি হয়ে দাঁড়াল। চারপাশের প্রকৃতিও যেন তাদের জন্য মিষ্টি এক সুর তুলছিল, যা তাদের ভালোবাসার গল্পে এক অমলিন স্মৃতি হয়ে থাকবে।

তারা একে অপরকে শক্ত করে জড়িয়ে ছিল, যেন পৃথিবী থেমে গেছে। এতদিনের অসম্পূর্ণতা, এতদিনের খুঁজে পাওয়া না পাওয়া—সব কিছু মিলিয়ে একটি অনুভূতি প্রবাহিত হচ্ছিল। পল্লবী মৃদু কাঁপতে কাঁপতে বলল, “অভি, এতদিন পর আমরা একে অপরকে পেয়েছি। আমি জানতাম, একদিন এই দিনটা আসবে।”  

তারপর দুজনেই একসাথে গাইতে লাগলো,

“আমারো পরানো যাহা চায়

তুমি তাই, তুমি তাই গো

আমারো পরানো যাহা চায় …

তোমা ছাড়া আর এ জগতে

মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো

আমারো পরানো যাহা চায় …”

আর তারপর, সেই পাহাড়ের টিলায়, রাতের অন্ধকারে, তারা দুজনেই বুঝতে পারল—এই প্রেম, এই সম্পর্ক কখনো শেষ হবে না। আকাশের তারাগুলি তাদের ভালোবাসার প্রমাণ হয়ে উজ্জ্বল হয়ে জ্বলছিল, এবং চাঁদের আলো, পাহাড়ের ঠাণ্ডা হাওয়া, সবকিছু যেন একসঙ্গে তাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তকে জীবন্ত করে তুলেছিল। এটি এক অন্তহীন যাত্রা, যা কেবল ভালোবাসার সঙ্গেই বিকশিত হবে।

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

আমরা কারা

নতুন বাংলা ছোট গল্প

রক্ষক

রহস্য, রোমাঞ্চ ও দেব-দানবের যুদ্ধ নিয়ে লেখা "রক্ষক" এক অনবদ্য বাংলা ছোট গল্প। রাক্ষসের অভিশাপ, দেবীশক্তি ও মানবতার রক্ষার গল্প আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে এক মহাকাব্যিক জগতে!

রহস্য, রোমাঞ্চ ও দেব-দানবের যুদ্ধ নিয়ে লেখা "রক্ষক" এক অনবদ্য বাংলা ছোট গল্প। রাক্ষসের অভিশাপ, দেবীশক্তি ও মানবতার রক্ষার গল্প আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে এক মহাকাব্যিক জগতে!

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: রক্ষক

আকাশের অতিথি

"আকাশের অতিথি" একটি মজার এবং রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান গল্প, যেখানে ভিনগ্রহের অতিথিরা দুর্গাপূজার আবহে শান্তিপুরে নেমে আসে। বাংলা ছোট গল্পের অনন্য স্বাদ নিয়ে রচিত এই উপাখ্যান পাঠককে মুগ্ধ করবে।

"আকাশের অতিথি" একটি মজার এবং রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান গল্প, যেখানে ভিনগ্রহের অতিথিরা দুর্গাপূজার আবহে শান্তিপুরে নেমে আসে। বাংলা ছোট গল্পের অনন্য স্বাদ নিয়ে রচিত এই উপাখ্যান পাঠককে মুগ্ধ করবে।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: আকাশের অতিথি

আষাঢ়ের সন্ধ্যে

"আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়।

"আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: আষাঢ়ের সন্ধ্যে

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!