শিল্প ও ভালোবাসার এক অপূর্ব মেলবন্ধন! জাদুঘরের আবহে, শিল্পকর্মের সাক্ষীতে ফুটে ওঠে আকাশ ও অনিকার প্রেম। রঙের খেলায়, ঐতিহাসিক ভবনের আলোয় তাদের অনুভূতিগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে।এই রোমান্টিক বাংলা গল্পে আপনি পাবেন শিল্পের প্রতি আগ্রহ, রহস্য, এবং মনের গভীর অনুভূতির এক অপূর্ব মিশ্রণ।

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » প্রতিফলিত প্রেম

প্রতিফলিত প্রেম

প্রতিফলিত প্রেম: একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ভালোবাসা, বিশ্বাস, এবং জীবনের নতুন শুরু একসাথে মিশে যায়। আকাশ এবং অনিকার হৃদয়ের সংযোগের হৃদয়স্পর্শী গল্প।

আমাদের WA চ্যানেল জয়েন করুন

এই মাসের সেরা ভুতের ছোট গল্প, পড়ুন ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন – ঝড়ের রাত

দার্জিলিং-এর পাহাড়ি হাওয়া পেরিয়ে, অনিকা নতুন স্বপ্ন নিয়ে কলকাতায় আসে। সদ্য পোস্ট গ্রাজুয়েশন শেষ করে সে এখানে চাকরির খোঁজে এসে পৌঁছেছে, কিন্তু কলকাতার গুলি আর কোলাহল তাকে প্রথমে কিছুটা অদ্ভুত লাগছিল। সব কিছু এতই নতুন, এতই বেপরোয়া। কিন্তু তার পাশে ছিল সৃজিতা, তার পুরনো বন্ধু, যে নতুন শহরে তার পথচলা সহজ করে দিচ্ছিল। সৃজিতার ফ্ল্যাটে থাকতে থাকতে অনিকা বুঝে ফেলেছিল, জীবনের পথে একা চলা সহজ নয়। সৃজিতার হাসি, খুনসুটি, আর ভালোবাসার কথাগুলো তার নতুন জীবনের ধাক্কা সামলে নিতে সাহায্য করছিল।

একদিন, দুপুরে, ক্লান্তি আর একাকীত্বের কারণে অনিকা ময়দানের মাঠে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। শহরের সঙ্গেই কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি করতে চেয়েছিল সে, যাতে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু চিন্তা করতে পারে। বেঞ্চে বসে, তার চোখের সামনে এল আধো রোদ্দুরে ঢাকা ময়দানের দৃশ্য। একে একে মানুষেরা চলে যাচ্ছিল, এবং সে সব কিছু ভুলে কিছু সময়ের জন্য একান্তে থাকতে চেয়েছিল। 

এমন সময়, হঠাৎ তার চোখ পড়ে এক যুবকের উপর। যুবকটি ছিল আকাশ, কাঁধে সাদা শার্ট আর সোজা হালকা কালো প্যান্টে সে ময়দানের মাঝে দাঁড়িয়ে, একটি ট্যাব হাতে অস্থিরভাবে কাজ করছিল। তার চোখে চোখ ছিল না, মনে হচ্ছিল চারপাশের সবকিছু থেকে সে বিচ্ছিন্ন। মাঠের কোণায় প্রেমে মগ্ন থাকা জুটিরা তাকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করতে পারছিল না। কিন্তু অনিকার চোখ আটকে গেল তার উপর। আকাশের চোখে এক ধরনের সংকট আর চাহনি ছিল, যা তার নিজের দুঃখের মতো এক অদ্ভুত সংযোগ তৈরি করেছিল। 

“আমার কেন এমন মনে হচ্ছে যে, এই লোকটা আমার জীবনের অজানা গল্পের অংশ হতে পারে?” অনিকা নিজে থেকেই মুচকি হেসে বলল। সে অনুভব করল, যেন সে কিছু হারিয়ে ফেলেছে, কিন্তু কী হারিয়েছে তা সে জানত না। কেন জানি না, আকাশের মধ্যে এক অদ্ভুত রহস্য ছিল যা তার নিজস্ব ভেতরকার চুপিচুপি খুঁজে চলা প্রশ্নের সাথে মিলে যাচ্ছিল।

আকাশের সোজা, আত্মবিশ্বাসী চলাফেরা, কিন্তু তার চোখে যে নিরবতা ছিল, সেগুলো অনিকার মনে এক অস্থির চিন্তা সৃষ্টি করল। সে চেয়েছিল, একবারই তাকে একটু চিনতে, একটু জানাতে, কিন্তু মুহূর্তের জন্য নিজেকে থামিয়ে রেখেছিল। “আমার কি এমন কোনো কারণে তার কাছে যাওয়া উচিত?” অনিকা ভাবছিল, “যে মানুষটিকে আমি একদম চিনতে পারি না, তার কাছে কিছু বলার মত সাহস আছে আমার?”

এই ভাবনাগুলো যখন তার মনে দোলা দিয়ে যাচ্ছিল, তখন আকাশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে আবার কাজ শুরু করল। তার সঙ্গীর প্রতি যে এক ধরনের মমত্ববোধ এবং নিষ্ঠা ছিল, তা অনিকার চোখে পরিষ্কার হচ্ছিল। আকাশ তখন খেয়াল না করলেও, অনিকা তাকে আরো কিছু সময় পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। তার মুখাবয়বের মধ্যে এক ধরনের নিরব কষ্ট, অনেক কিছু প্রাপ্তির পরও কিছু পেতে না পারার এক নিঃশব্দ যন্ত্রণা ছিল।

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - দুই স্বপ্ন, এক প্রেম: দুই স্বপ্নবাজের প্রেমের গল্প "দুই স্বপ্ন, এক প্রেম"। পেশাদার জীবনের টানাপোড়েনের মাঝে জন্ম নেয় গভীর ভালোবাসা। রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্পে অনুভব করুন প্রেম, স্বপ্ন ও জীবনের মেলবন্ধন। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

পর্ব ২: প্রথম কথোপকথন

কয়েকদিন পরে, আবারও ময়দানে গিয়ে অনিকা আকাশকে দেখতে পেল। চারপাশের একই দৃশ্য—রোদেলা দুপুরে লোকজনের ভিড়, কেউ গল্পে মত্ত, কেউ আপন মনে হাঁটছে। কিন্তু আকাশ যেন আলাদা। আগের দিনের মতোই, সে তার ট্যাব হাতে নিয়ে কাজ করছে। মুখে এক ধরনের চাপা উদ্বেগ, চোখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। আকাশকে দেখে অনিকার মনে আবার সেই কৌতূহল জাগল। 

সে নিজের মনে বলল, “এই ছেলেটা এতটা চিন্তায় থাকে কেন? আর কাজই বা কী এত জরুরি, যে চারপাশের কিছুই তার নজরে পড়ে না?” 

অনিকা কিছুক্ষণ দূর থেকে তাকিয়ে থাকল। তবে এবার তার মনে হলো, আর অপেক্ষা নয়। কিছু প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরছিল, আর উত্তরগুলো জানার জন্য সাহস করে সে তার কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে, নরম স্বরে বলল,  

“এক্সকিউজ মি… আমি আপনার কাজের জন্য ডিস্টার্ব করছি না তো?”  

আকাশ প্রথমে চমকে তাকাল। তার চোখে এক মুহূর্তের বিস্ময় দেখা গেল। একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে সে বলল,  

“না, না, আপনি কিছু বলছেন?”  

অনিকা একটু হেসে বলল, “আমি কয়েকদিন ধরে আপনাকে এখানে কাজ করতে দেখছি। সবকিছু ঠিক আছে তো? আপনি খুব চিন্তিত মনে হচ্ছেন।”  

আকাশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তার মুখে দ্বিধা ছিল, যেন সে বুঝতে পারছে না একজন অচেনা মেয়ে কেন তার ব্যক্তিগত বিষয়ে জানতে চায়। তবে অনিকার মুখের আন্তরিকতা দেখে সে কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো। অবশেষে, একটু হাসি দিয়ে বলল,  

“আসলে আমি একটি বেসরকারি ব্যাংকের সেলস বিভাগে কাজ করি। আমাদের প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট টার্গেট থাকে। টার্গেট পূরণ করতে পারলে ভালো, কিন্তু পূরণ না হলে সমস্যা। এই মাসটা একটু কঠিন যাচ্ছে।”  

অনিকা তার কথা মন দিয়ে শুনছিল। তারপর ধীরে ধীরে বলল,  

“ওহ! তাই আপনি এত চিন্তায় আছেন। কিন্তু সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি নিশ্চয়ই কঠোর পরিশ্রম করছেন। আমি নিশ্চিত, আপনি সফল হবেন।”  

আকাশ একটু হেসে বলল,  

“ধন্যবাদ। আসলে আপনার কথাগুলো শুনে ভালো লাগছে। কিন্তু এই কাজটা মাঝে মাঝে খুব চাপের মনে হয়।”  

অনিকা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর বলল,  

“আমার নাম অনিকা। সদ্য দার্জিলিং থেকে কলকাতায় এসেছি। নতুন শহর, নতুন জীবন—সব কিছু খুবই নতুন আমার জন্য।”  

আকাশ তার পরিচয় দিয়ে বলল,  

“আমি আকাশ। কলকাতায় বেশ কিছু বছর ধরে আছি। তবে কাজের চাপের কারণে শহরটা উপভোগ করার সময় খুব কম পাই।”  

কথা বলতে বলতে তাদের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি তৈরি হলো। দু’জনেই অনুভব করল, তারা নিজেদের কথা বলতে গিয়ে যেন নিজেদের বোঝার মতো এক সঙ্গী খুঁজে পেয়েছে। অনিকা বলল,  

“আপনার কাজের কথা শুনে আমার মনে হচ্ছে, আপনি খুব সিরিয়াস। কিন্তু মাঝে মাঝে একটু সময় বের করে নিজেকেও সময় দিন। জানেন তো, জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলোও খুব গুরুত্বপূর্ণ।”  

আকাশ একটু হেসে বলল,  

“আপনার কথাগুলো বেশ ভালো লাগছে। সত্যি বলতে, এই কয়েকদিন ধরে এত চাপের মধ্যে ছিলাম যে, কারও সাথে মন খুলে কথা বলার সুযোগই পাইনি।”  

সেদিনের কথোপকথন তাদের মধ্যে এক নতুন বন্ধুত্বের সূচনা করল। তাদের কথা ধীরে ধীরে কাজ, জীবন, স্বপ্ন সবকিছু ছুঁতে লাগল। আকাশের মধ্যে যে চাপা উদ্বেগ ছিল, তা অনিকার আন্তরিক কথায় অনেকটা হালকা হয়ে এল। অন্যদিকে, অনিকা তার নতুন শহরের এক বন্ধুকে পেয়ে যেন এক ধরনের ভরসা পেল। 

সন্ধ্যার আলো ময়দানকে ছুঁয়ে গেল, আর তারা দু’জনই বুঝতে পারল, একটি নতুন সম্পর্কের পথচলা শুরু হয়েছে।

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - কবিতা আর রঙের মিলন: কবিতা ও রঙের মেলবন্ধনে গড়া এক অসাধারণ প্রেমের গল্প। "রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প"-এর এই অধ্যায়ে অনুভূতি, শিল্প ও ভালোবাসার এক নতুন রূপের সন্ধান পাবেন। প্রেমের শিল্পকর্মে হারিয়ে যান। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

পর্ব ৩: বন্ধুত্বের গভীরতা

ময়দানে দেখা করার দিনগুলো ধীরে ধীরে তাদের জীবনের অমূল্য স্মৃতি হয়ে উঠছিল। আকাশ আর অনিকার মধ্যে যে দূরত্ব ছিল, তা আস্তে আস্তে মুছে যাচ্ছিল। প্রথমে ‘আপনি’ দিয়ে শুরু হওয়া সম্বোধনগুলো ‘তুমি’তে এসে ঠেকল, আর এই পরিবর্তন তাদের সম্পর্কের গভীরতার প্রমাণ ছিল। 

একদিন অনিকা মিষ্টি হেসে বলল, “আকাশ, তোমার কাজ নিয়ে তুমি এত চিন্তিত কেন? আমি তো ভাবছিলাম, তোমার মতো কেউ নিশ্চয়ই সহজে সব সামলে নিতে পারো।”  

আকাশ একটু হেসে বলল, “তুমি বুঝতে পারছ না, অনিকা, সেলসের কাজটা বাইরে থেকে যত সহজ মনে হয়, আসলে ততটাই কঠিন। প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষ, নতুন চ্যালেঞ্জ। মাঝে মাঝে মনে হয়, সব ছেড়ে কোথাও চলে যাই।”  

অনিকা তার চোখে চেয়ে বলল, “তাহলে তুমি কি এই কাজ ছেড়ে অন্য কিছু করবে?”  

আকাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “না, কারণ এটা আমি পারি। আর আমার দায়িত্বের কথা ভেবে তো এই কাজ করতেই হবে। কিন্তু তুমিও কি এই চ্যালেঞ্জ নিতে চাইবে?”  

অনিকা উত্তরে কিছু বলেনি। তবে তার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরছিল—সত্যিই কি সে এই পথে হাঁটতে চায়?  

একদিন সন্ধ্যায়, বেঞ্চে বসে গল্প করার সময় অনিকা সরলভাবে বলল, “আচ্ছা, যদি আর দেখা না হয়, তাহলে কীভাবে যোগাযোগ করব? আমাদের মোবাইল নম্বর বিনিময় করা উচিত, তাই না?”  

আকাশ একটু মুচকি হেসে বলল, “ঠিক বলেছ। আমিও ভাবছিলাম, যদি কোনোদিন হঠাৎ প্রয়োজন হয়, তাহলে তো যোগাযোগ করা দরকার।”  

তারা নিজেদের নম্বর বিনিময় করল। সেই দিন থেকেই তাদের গল্প শুধু ময়দানের বেঞ্চেই সীমাবদ্ধ থাকল না; ফোনের মাধ্যমে তাদের কথোপকথন আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠল।  

এক রাতে ফোনে আকাশ বলল, “অনিকা, আজ খুব চাপ ছিল। ক্লায়েন্টকে কনভিন্স করতে এত সময় চলে গেল। মাঝে মাঝে মনে হয়, নিজের জন্য একটুও সময় নেই।”  

অনিকা হাসিমুখে উত্তর দিল, “তাহলে নিজের জন্য একটু সময় রাখো। কাজ তো চলতেই থাকবে, কিন্তু নিজের ভালো থাকা কীভাবে ভুলে যেতে পারো?”  

আকাশ থেমে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর বলল, “তুমি যখন এমন করে বলো, মনে হয় সত্যিই নিজের জন্য একটু ভাবা দরকার।”  

অনিকা মজা করে বলল, “দেখো, আমি তোমার লাইফ কোচ হতে পারি। আমার মজুরি বেশি হবে না, কেবল সপ্তাহে এক কাপ কফি কিনে দেবে!”  

তারা দুজনেই হেসে উঠল। সেই হাসির মধ্যে বন্ধুত্বের সুরের পাশাপাশি এক অন্যরকম অনুভূতির ইঙ্গিত ছিল।  

কথোপকথনের এক সময় অনিকা তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা শেয়ার করল।  

“আকাশ, আমি ভাবছি, আমিও তোমার মতো সেলসের কাজে যোগ দেব। তোমার অভিজ্ঞতা শুনে মনে হচ্ছে, এটা আমার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে।”  

আকাশ অবাক হয়ে বলল, “তুমি সেলসের কাজ করবে? অনিকা, এটা এত সহজ নয়। প্রতিদিনের চাপ আর প্রতিযোগিতার মধ্যে তুমি কি নিজেকে দেখতে চাও?”  

অনিকা আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলল, “চাপ তো জীবনের অংশ, তাই না? যদি না চেষ্টা করি, তাহলে কিভাবে জানব আমি পারব কি না?”  

আকাশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তার মন একদিকে বলছিল, সে অনিকাকে নিরুৎসাহিত করুক, কিন্তু অন্যদিকে তার সাহস আর দৃঢ়তা তাকে মুগ্ধ করছিল। সে বলল, “তুমি সত্যিই সাহসী। তবে একটা কথা মনে রেখো, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে ভাববে। আমি তোমাকে এই চ্যালেঞ্জ নিতে নিরুৎসাহিত করছি না, কিন্তু এটা যে সহজ নয়, সেটা জেনেই এগোও।”  

দিনের পর দিন, তাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হতে লাগল। আকাশ অনিকার সরল হাসি, তার মিষ্টি কণ্ঠ, আর জীবনের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি দেখে মুগ্ধ হচ্ছিল। অন্যদিকে, অনিকা আকাশের দায়িত্বশীলতা আর আন্তরিকতা দেখে অনুভব করল, তার মনের কোণে কিছু একটা জেগে উঠছে।  

একদিন আকাশ ফোনে বলল, “অনিকা, তুমি জানো, তোমার সাথে কথা বললেই আমার সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়। মনে হয়, জীবনে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।”  

অনিকা মৃদু হেসে বলল, “তুমি আমার জীবনের প্রথম এমন বন্ধু, যার জন্য আমি সবসময় ভালো কিছু ভাবি।”  

তাদের কথাগুলো যেন একটা অদৃশ্য সুর তৈরি করছিল, যা দুই মনের মধ্যে ধীরে ধীরে ভালোবাসার বীজ বুনছিল।

পর্ব ৪: চ্যালেঞ্জ এবং সাফল্য

অনিকার সহায়তায় আকাশের জীবনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে শুরু করল। সেলসের কাজে তার যে অস্থিরতা ছিল, তা ধীরে ধীরে কেটে গেল। প্রতিদিন, যখন আকাশ ফোনে বলত, “অনিকা, আজ আবার একদম হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। ক্লায়েন্টকে ধরে রাখতে পারলাম না। জানি না কী হবে!”  

অনিকা শান্ত গলায় বলত, “তুমি চেষ্টায় যদি বিশ্বাস না রাখো, তাহলে কখনো সাফল্য আসবে না। তুমি তো জানো, জীবনই একটা সংগ্রাম। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, তুমি পারবে। তুমি যদি একটু ধৈর্য ধরো এবং মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করো, তাহলে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।”

এই কথাগুলো আকাশের মনকে শক্তি দেয়। দিনের পর দিন, সে অনিকার পরামর্শ অনুসরণ করতে শুরু করল। তার আচরণে আসলেই পরিবর্তন আসতে শুরু করল। আকাশের ভরসা ছিল যে, অনিকা সব সময় তার পাশে থাকবে। সে জানত, যে কোনো পরিস্থিতিতেই অনিকার মিষ্টি কথা তাকে জড়িয়ে ধরবে, সাহস দিবে।  

একদিন আকাশ ফোনে বলল, “অনিকা, আজ আমি একটা বড় সেলস ক্লোজ করেছি! কী যে ভালো লাগছে! তোমার সাহায্য ছাড়া এটা সম্ভব হতো না।”  

অনিকা হাসিমুখে বলল, “তুমি তো আসলেই অনেক ভালো কাজ করেছ। কিন্তু জানো, তোমার ভিতরের শক্তিটা তো তুমি নিজেই বের করতে পেরেছ। আমি শুধু পাশে ছিলাম।”

এই ফোনালাপের পর, আকাশের মধ্যে এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হলো। সে নিজের কাজের প্রতি আরও একাগ্র হয়ে উঠল। তার মনোযোগ এবং আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকল। সেলস টার্গেট পূরণে সে একের পর এক সাফল্য অর্জন করতে লাগল। আকাশ এমন এক অবস্থানে পৌঁছাল, যেখানে তার পরিচিতি শুধু ব্যাংকের মধ্যে নয়, তার কর্মক্ষমতা এবং নিষ্ঠার জন্য সবার কাছে প্রশংসিত হয়ে উঠল।  

একদিন আকাশ নিজে ফোনে বলল, “অনিকা, আজ আমার কাছে একটা বড় খবর আছে। আমাকে ম্যানেজার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে!”  

অনিকা অবাক হয়ে বলল, “ও মাই গড! তুমি সত্যিই এটা পেয়েছো! জানো, আমি জানতাম তুমি পারবে, তবে তাও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে এত দ্রুত হবে!”  

আকাশ এক ঝাঁক সুখের হাসি দিয়ে বলল, “এটা শুধু আমার জন্য নয়, এটা তোমার জন্যও! কারণ তোমার সাহস আর সমর্থন ছাড়া আমি কখনো এই সাফল্য পেতাম না। তুমি যখন আমার পাশে ছিলে, তখন মনে হয়েছিল কিছুই অসম্ভব নয়।”

অনিকা অনুভব করল, এই মুহূর্তটাই যেন তাদের বন্ধুত্বের শিখর। আকাশের সাফল্য, তার হাসি, তার জয়—এগুলো সবই ছিল তার জন্য এক নতুন আনন্দের উৎস। সে মনে মনে ভাবল, “আকাশ শুধু একজন বন্ধুই নয়, একজন মানুষ, যার সঙ্গে আমি জীবনের পরবর্তী অধ্যায় শুরু করতে চাই।”

সেদিন, ময়দানে দেখা হওয়ার সেই প্রথম দিনটি মনে পড়ে গিয়েছিল। যখন আকাশ শুধু ট্যাব হাতে বসে ছিল, তখন তার জীবনে কোথায় কোথায় কী পরিবর্তন এসেছে—এটা ভাবতে ভাবতে অনিকার চোখে পানি চলে এলো। কাঁদতে কাঁদতে সে বলল, “আকাশ, তুমি জানো, তোমার এই সাফল্য আমার জীবনের সেরা উপহার। তোমার পাশে থাকতে, তোমাকে সমর্থন দিতে, এটা আমার জন্য একটা বিশেষ অনুভূতি।”

আকাশ তার হাত ধরে বলল, “তুমি আমার জীবনে আসার পর, আমার সব কিছু বদলে গেছে। তোমার কথা, তোমার হাসি, সব কিছু আমার মনে একটা শান্তি নিয়ে আসে। আমি যদি আজকের অবস্থানে পৌঁছতে পারি, তার সব কৃতিত্ব তোমারই।”

এই কথাগুলো অনিকার মনের গভীরে গিয়ে বসে। তাদের মধ্যে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তা শুধুই বন্ধুত্বের নয়—এটা এখন গভীর অনুভূতির। আর একে অপরকে সমর্থন দিয়ে, তারা একে অপরের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। যখনই আকাশের মনে একটু দুশ্চিন্তা আসে, অনিকা তাকে জানিয়ে দেয়,  

“তুমি সবসময় সেরা, আকাশ। আমি জানি, তুমি কী করতে পারো।”

এভাবেই তাদের সম্পর্ক আরো গভীর হতে থাকে, আর আকাশ তার জীবনের একটি বড় সাফল্য অর্জন করে।

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - পুরনো বাড়ির নতুন স্বপ্ন: এই রোমান্টিক বাংলা গল্পে, স্নেহা বিদেশ থেকে ফিরে এসে কলকাতায় নিজেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করে। দুর্গাপূজার সময় অভিজিতের সাথে দেখা তার জীবনে নতুন আশার আলো জাগিয়ে তোলে। শহরের প্রতি ভালোবাসা এবং অভিজিতের সঙ্গ তাকে তার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

পর্ব ৫: প্রেমের সূচনা

এক সন্ধ্যায়, পার্ক স্ট্রিটের এক নামী রেস্তোরাঁর আলো-আধারে যেন সময় থেমে গিয়েছিল। মোমবাতির নরম আলো, হালকা সুরে বাজানো সঙ্গীত এবং খাবারের মিষ্টি ঘ্রাণ—সব কিছু এক অসাধারণ পরিবেশ তৈরি করেছিল। আকাশ, তার ম্যানেজার পদে পদোন্নতির পর, মনে মনে কিছু বিশেষ পরিকল্পনা করেছিল। আজ সে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিল, যা তার জীবনের অন্যতম স্পর্শকাতর মুহূর্ত হতে চলেছিল।  

এটি তার জন্য এক নতুন শুরু, যেখানে সে তার মনের গভীর অনুভূতি অনিকার কাছে প্রকাশ করতে চেয়েছিল। আকাশ জানত, আজকের রাতটি তার জীবনের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হতে চলেছে। তার হাতের মধ্যে রিজার্ভেশন কিপন, এবং বুকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছিল এক অদ্ভুত উদ্বেগ, এক অজানা তীব্রতা। 

অনিকা যখন রেস্তোরাঁতে প্রবেশ করল, আকাশ এক মুহূর্তের জন্য স্থির হয়ে দাঁড়াল। তার চোখে শুধুই অনিকা। এমনকি রেস্তোরাঁর আলোও যেন ধীরে ধীরে তার সামনে হারিয়ে যাচ্ছিল। অনিকার সাদাসিধে সৌন্দর্য, তার চোখের মিষ্টি ভাব, সব কিছুই তাকে যেন এক নতুন দুনিয়ায় নিয়ে যাচ্ছিল। অনিকা হাসিমুখে এসে তার পাশের চেয়ারে বসে বলল, “আজ কী বিশেষ কিছু আছে কি? তুমি এত চিন্তিত লাগছো।”  

আকাশ কিছুটা স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করে বলল, “না, কিছু না। তবে আজ আমি তোমাকে কিছু খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই।”  

অনিকা হাসলো, একটু খুশি হয়ে বলল, “কী কথা? তোমার মুখে এত গম্ভীর ভাব! আমি তো ভাবছিলাম, তোমার মুখের ওপর এত হাসি ছিল, আজ কেন এত শান্ত?”  

আকাশ একটুখানি থেমে গেল, তারপর তার চোখে কিছু একটা বদল আনল। এক মুহূর্তে তার ভিতর সব কিছু জমে উঠেছিল—অনিকার জন্য তার ভালোবাসা, তার পরিণতি, তার জীবনের সঙ্গী হওয়ার ইচ্ছে। সে বলল, “তুমি জানো, অনিকা, প্রথম দিন যখন ময়দানে তোমার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করি, তখনই মনে হয়েছিল তুমি আমার জীবনে কোনো বিশেষ কিছু হতে চলেছ। তোমার সাহায্য ছাড়া আমি কিছুই করতে পারতাম না। তোমার সঙ্গে কথা বললে, মনে হতো যেন আমি আবার জীবনে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। তোমার সব কথায়, হাসিতে, সব কিছুতেই আমি নিজেকে খুঁজে পাই। তুমি আমার জীবনে একটি আলো, একটা আশার প্রদীপ।”  

আকাশের গলার টান এতটাই গভীর ছিল যে অনিকা একটু চমকে গিয়েছিল। আকাশ তার হাত ধীরে ধীরে অনিকার দিকে এগিয়ে দিয়ে আবার বলল, “অনিকা, আমি জানি, জীবনে অনেক সময় এমন মুহূর্ত আসে যখন কিছু একটা বলার জন্য দুজন মানুষের মাঝে দরকার হয় নির্ভরতা, বিশ্বাস। আমি তোমাকে জানাতে চাই, তুমি আমার জীবন। তুমি ছাড়া আমি আর কিছু ভাবতে পারি না। তুমি কি আমার সঙ্গে থাকতে চাও, জীবনের এই পথচলায় আমার সঙ্গী হতে চাও?”  

অনিকা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল, তার চোখের কোণে কিছুটা বিস্ময় এবং অস্থিরতা ছিল। কিন্তু, সেই অস্থিরতার মাঝে কিছু একটা যেন স্ফুরিত হল—এক অনুভূতি, এক প্রেম, যা সে দীর্ঘদিন ধরে তার ভিতর চেপে রেখেছিল। তার গলা শুষ্ক হয়ে গেল, কিন্তু সে কোনোভাবেই চোখে চোখ রেখে বলল,  

“আকাশ, তুমি জানো, আমি এই শহরে আসার পর প্রথমে মনে করেছিলাম, এই শহরের মাঝে আমি একা, হারিয়ে যাচ্ছি। নতুন জীবন শুরু করতে এসে কতটা অদ্ভুত লাগছিল। কিন্তু তুমি যখন আমার পাশে ছিলে, তোমার কথায়, তোমার দৃষ্টিতে, আমি এক নতুন পৃথিবী দেখতে পেয়েছি। তুমি আমাকে শুধু সাফল্য দেখিয়েছো না, তুমি আমাকে অনুভূতি দিয়েছো, সাহস দিয়েছো। তুমি যখন তোমার কাজের দুশ্চিন্তা নিয়ে আমাকে ফোন করতে, আমি জানতাম, তোমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি সেখানে ছিলাম। আমি জানি, এই সম্পর্কটা শুধুই ভালোবাসা নয়, এটা এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন, যা একে অপরকে পূর্ণতা দেয়।”

অনিকা একটু থেমে আবার বলল, “আকাশ, আমি জানি আমাদের বন্ধুত্ব কোথায় পৌঁছবে, কিন্তু তোমার জন্য আমার হৃদয় একেবারে খোলা। আজ, এই মুহূর্তে, আমি জানাতে চাই, তুমি যে প্রস্তাব দিয়েছো, আমি সেটা মনের গভীর থেকে গ্রহণ করছি। আমি তোমার পাশে থাকতে চাই, তুমি যেমন আছো, তেমনভাবে। আমি তোমার জীবনে সঙ্গী হতে চাই, আর সেও তোমার হাতে হাত রেখে চলতে চাই।”  

আকাশের চোখে খুশিতে জল চলে এলো, সে ভাবতে পারেনি যে এতটা গভীরভাবে অনিকা তার অনুভূতি বুঝতে পারবে। সে ধীরে ধীরে তার হাতটি অনিকার হাতে রেখেই বলল, “তুমি জানো, অনিকা, তোমার এই কথাগুলোই আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত। আমি জানি, আমাদের পথ একসাথে শুরু হবে, যদিও কিছু বাধা আসবে। তবে আমি একথা জানি, তোমার হাত ধরেই আমরা সব কিছু জয় করতে পারব।”  

অনিকাও হাত ধরে বলল, “তাহলে, আকাশ, শুরু করি আমাদের নতুন জীবন। আমি তোমার পাশে থাকব, এই জীবনের সব জায়গায়।”

আকাশ আর অনিকার মধ্যে তখন একটি নতুন সম্পর্কের শুরু হয়েছিল, যা শুধুই ভালোবাসা নয়, এক গভীর বিশ্বাস আর সম্মান দিয়ে গড়ে ওঠে। সেই মুহূর্তে, মোমবাতির আলো, সঙ্গীত, আর চারপাশের হাসির শব্দগুলি যেন সব কিছু মিলিয়ে তাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়ের স্মৃতি হয়ে ওঠে।

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

আমরা কারা

নতুন বাংলা ছোট গল্প

রক্ষক

রহস্য, রোমাঞ্চ ও দেব-দানবের যুদ্ধ নিয়ে লেখা "রক্ষক" এক অনবদ্য বাংলা ছোট গল্প। রাক্ষসের অভিশাপ, দেবীশক্তি ও মানবতার রক্ষার গল্প আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে এক মহাকাব্যিক জগতে!

রহস্য, রোমাঞ্চ ও দেব-দানবের যুদ্ধ নিয়ে লেখা "রক্ষক" এক অনবদ্য বাংলা ছোট গল্প। রাক্ষসের অভিশাপ, দেবীশক্তি ও মানবতার রক্ষার গল্প আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে এক মহাকাব্যিক জগতে!

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: রক্ষক

আকাশের অতিথি

"আকাশের অতিথি" একটি মজার এবং রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান গল্প, যেখানে ভিনগ্রহের অতিথিরা দুর্গাপূজার আবহে শান্তিপুরে নেমে আসে। বাংলা ছোট গল্পের অনন্য স্বাদ নিয়ে রচিত এই উপাখ্যান পাঠককে মুগ্ধ করবে।

"আকাশের অতিথি" একটি মজার এবং রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান গল্প, যেখানে ভিনগ্রহের অতিথিরা দুর্গাপূজার আবহে শান্তিপুরে নেমে আসে। বাংলা ছোট গল্পের অনন্য স্বাদ নিয়ে রচিত এই উপাখ্যান পাঠককে মুগ্ধ করবে।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: আকাশের অতিথি

আষাঢ়ের সন্ধ্যে

"আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়।

"আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: আষাঢ়ের সন্ধ্যে

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!