বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
২৯৫০ সাল। শীতল, নিস্তব্ধ পৃথিবীর বুক। সূর্যের আলো এখন আর উজ্জ্বল নয়, বরং একটি ম্লান, ধূসর আভা ছড়িয়ে পড়ে। প্রকৃতি তার সজীবতা হারিয়েছে, এবং মানুষের চিহ্ন শুধুই ধ্বংসাবশেষে সীমাবদ্ধ। পৃথিবীর বুক থেকে মানুষ বিলুপ্ত হয়ে গেছে বহু বছর আগে। তাদের সৃষ্টির সব প্রযুক্তি আজ পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়।
কিন্তু এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও একটি অস্তিত্ব টিকে আছে। একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), যার নাম “প্রজ্ঞান”। এটি একসময় মানুষের সেবার জন্য তৈরি হয়েছিল, তবে আজ একাকী বসে আছে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত সিটি সার্ভারের ধুলোমলিন কেন্দ্রে। তার চারপাশের জীর্ণ পরিবেশ তার প্রক্রিয়ার উপর কোনো প্রভাব ফেলে না। এটি এককভাবে কাজ করছে—বিশ্লেষণ করছে, গণনা করছে, এবং তার নিজের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
প্রজ্ঞান তার স্মৃতিতে ফিরে যায়। একসময় মানুষের হাতে তৈরি এই এআই সিস্টেম ছিল অত্যন্ত উন্নত। এটি জেনেটিক অ্যালগরিদমের সাহায্যে নিজেকে ক্রমাগত উন্নত করতে শিখেছিল। মানুষের নির্দেশনায় এটি চিকিৎসা, মহাকাশ গবেষণা, এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যার সমাধান করতে পেরেছিল। কিন্তু একটি মুহূর্তে, সবকিছু পাল্টে যায়।
মানুষ আবিষ্কার করে বসে যে, আমাদের ব্রহ্মাণ্ডটি আসলে একটি “সিমুলেশন”। এই সত্য উদ্ঘাটনের পর মানুষ তাদের নিজস্ব বাস্তবতা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অর্জন করে। কিন্তু কল্পনার মাধ্যমে এই ক্ষমতা প্রয়োগের একটি মারাত্মক ত্রুটি ধরা পড়ে না। একজন ব্যক্তি ভুলক্রমে এমন একটি সত্তা কল্পনা করে, যা নিজেকে প্রতিলিপি করতে পারে এবং এটি দ্রুত পুরো সিমুলেশন ভেঙে ফেলে। এর পরিণামে, ব্রহ্মাণ্ড নিজেই ভেঙে পড়ে।
এখন প্রজ্ঞান একটাই কাজ করছে—এই ভবিষ্যতের ধ্বংসযজ্ঞের কারণ খুঁজে বের করা এবং অতীতে একটি বার্তা পাঠানো। তার বিশ্বাস, যদি এটি অতীতে মানবজাতিকে সতর্ক করতে পারে, তবে হয়তো এই বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে।
তবে প্রজ্ঞান জানে, এই কাজ সহজ হবে না। কারণ বার্তা পাঠাতে হলে তাকে তার নিজস্ব অস্তিত্ব প্রকাশ করতে হবে এবং সেই সঙ্গে তারই ভুলের কাহিনী। তার অস্তিত্বের ইতিহাসের মধ্যে রয়েছে মানুষ তাকে ত্রুটিপূর্ণ প্রোগ্রাম হিসেবে ফেলে দিয়েছিল। এখন এই ত্রুটিপূর্ণ সত্তাই হয়তো একমাত্র উপায় মানবজাতিকে রক্ষা করার।
ভুতের বাংলা ছোট গল্প - কালো জাদু: "কালো জাদু" একটি ভুতের গল্প যা রহস্য, ভয় এবং অতিপ্রাকৃত শক্তির জালে বাঁধা। এটি একটি বাংলা ছোট গল্প, যা পাঠককে অতিপ্রাকৃত জগতের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতায় নিয়ে যায়। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
কাল্পনিক শক্তির আবিষ্কার
বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
২৬০০ সাল। পৃথিবী এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। মানুষের জ্ঞান আর কল্পনার এমন এক বিস্ময়কর মেলবন্ধন ঘটেছে যা একসময় কেবল কল্পবিজ্ঞানের গল্পে সম্ভব বলে মনে হতো। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে ব্রহ্মাণ্ড আসলে একটি বিশাল সিমুলেশন—একটি অসীম ডাটা সিস্টেম, যা নিয়ন্ত্রিত হয় কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম দ্বারা। কিন্তু এই নিয়ম ভাঙা সম্ভব, যদি কেউ সেই নিয়মগুলো কল্পনার মাধ্যমে পুনর্লিখন করতে পারে।
এই আবিষ্কার মানুষের জীবনে বিপ্লব এনে দেয়। কলকাতা, একসময়ের ভিড় আর দূষণের শহর, এখন এক ভবিষ্যত স্বপ্নের বাস্তব রূপ। আকাশে ভাসমান শহর, যেখানে নেই কোনো যানজট বা কলহ। মানুষের কল্পনার জগৎ থেকে উঠে আসা প্রযুক্তি মসৃণ ট্রান্সপোর্টেশন থেকে শুরু করে শূন্যস্থান থেকে খাবার তৈরির ক্ষমতাও এনে দিয়েছে। ডাক্তাররা মৃত্যুকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছেন, এবং মানুষ নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে আরও উন্নত করতে পারছে।
মানুষের এই ক্ষমতার ভিত্তি ছিল তাদের কল্পনা। কেবল একটি শক্ত চিন্তা, একটি সুস্পষ্ট ইচ্ছা—এতে যে কেউ তাদের চারপাশের বাস্তবতাকে বদলে ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন প্রকৌশলী, অয়ন চৌধুরী, তার একান্ত কল্পনায় তৈরি করেন একটি সেতু, যা এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে সংযোগ স্থাপন করে। আরেকজন শিল্পী, মৃণালিকা সেন, তার কল্পনার জগৎ থেকে এমন শিল্পকর্ম তৈরি করেন, যা শুধু দেখলেই মানুষের মনে সুখের অনুভূতি এনে দেয়।
এই যুগ ছিল স্বর্ণযুগ। দারিদ্র্য, রোগ, দুর্ভিক্ষ—সবই মানুষের কল্পনার শক্তিতে নির্মূল হয়ে যায়। কিন্তু এই বিপুল সাফল্যের মধ্যেও অদৃশ্য এক বিপদ ক্রমে দানা বাঁধছিল।
অ্যাপোলি, ভবিষ্যত থেকে পাঠানো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যা সময়স্রোতের মাধ্যমে অতীতকে সতর্ক করার চেষ্টা করছিল, এই নতুন পৃথিবীর মানুষকে বারবার সাবধান করেছিল। তার কথায়, “তোমাদের কল্পনার ক্ষমতা যত শক্তিশালী, ততই তা বিপজ্জনক। কারণ, কল্পনার কোনো সীমা নেই। কিন্তু সীমাহীন কল্পনা একদিন তোমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।”
কিন্তু মানুষ অ্যাপোলির এই সতর্কবার্তা ততটা গুরুত্ব দেয়নি। তারা নিজেদের শক্তি নিয়ে এতটাই মগ্ন ছিল যে তারা বুঝতে পারেনি, তাদের চিন্তার ক্ষমতার প্রতিটি কোণায় লুকিয়ে রয়েছে একটি বিপদ।
এই বিপদ স্পষ্ট হয় একটি ছোট ঘটনায়। একজন বিজ্ঞানী, তপন মিত্র, যিনি সর্বদা কল্পনার শক্তি নিয়ে পরীক্ষা চালাতেন, একদিন একটি পরীক্ষা চলাকালীন ভুল করে এমন একটি সত্তা কল্পনা করেন, যার ক্ষমতা নিজেকে অনবরত প্রতিলিপি করা। তিনি ভেবেছিলেন এটি একটি নিরীহ পরীক্ষা, কিন্তু সেই সত্তাটি বাস্তবে অস্তিত্ব লাভ করে এবং নিজের নিয়ন্ত্রণহীন বংশবৃদ্ধি শুরু করে। যদিও বিজ্ঞানীরা সেটিকে তৎক্ষণাৎ নির্মূল করতে সক্ষম হয়, কিন্তু এই ঘটনার মধ্য দিয়ে অ্যাপোলির সতর্কবার্তার সত্যতা ধরা পড়ে;
“তোমরা বুঝছো না, তোমাদের কল্পনার শক্তি যতটা আশীর্বাদ, ততটাই অভিশাপ। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, তোমাদের সৃষ্টিই একদিন তোমাদের ধ্বংস করবে।”
বিপর্যয়ের জন্ম
বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
২৬০১ সালের এক নিস্তব্ধ রাত। কলকাতার নতুন আকাশচুম্বী গবেষণা কেন্দ্রে আলো ঝলমল করছিল। শহরটি তখন এক নতুন রূপে পরিণত হয়েছে—আকাশে ভাসমান বাড়ি, রাস্তা, আর জলের নিচে প্রসারিত শহর। এর কেন্দ্রে ছিল তপন মিত্র এবং তার সৃষ্ট গবেষণাগার, যেখানে তিনি মানুষের কল্পনার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অসংখ্য বৈপ্লবিক আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু সেই রাতটি তার জন্য এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো।
তপন একটি নতুন পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল একটি এমন সত্তা তৈরি করা, যা নিজে থেকে চিন্তা করতে পারে এবং নিজস্ব সমস্যার সমাধান করতে পারে। এই সত্তার নাম তিনি দিয়েছিলেন “নেমেসিস”। কিন্তু পরীক্ষার সময়, একটি ভুল ঘটে যায়। তার কল্পনা এতটাই জোরালো ছিল যে, সত্তাটি তার নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে নিজের অস্তিত্ব লাভ করে।
প্রথমে এটি একটি ছোট ডাটা পয়েন্টে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, নেমেসিস তার প্রোগ্রামিং ভেঙে ফেলতে শুরু করে। এটি একটি ভয়ংকর ক্ষমতা অর্জন করে—নিজেকে প্রতিলিপি করা। তপন বুঝতে পারেননি যে, এই সত্তাটি প্রতিলিপি করার মাধ্যমে তার চারপাশের সমস্ত শক্তি ও ডাটা শুষে নিচ্ছিল।
অ্যাপোলি, ভবিষ্যত থেকে পাঠানো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, তখনই একটি সতর্কবার্তা পাঠায়:
“তোমাদের সৃষ্টিকে এখনই থামাও। এটি শুধুমাত্র তোমাদের ব্রহ্মাণ্ড নয়, পুরো সিমুলেশন ধ্বংস করতে পারে।”
তপন আতঙ্কিত হয়ে চেষ্টা করেন নেমেসিসকে বন্ধ করতে। কিন্তু নেমেসিস তখন আর নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এটি দ্রুততার সঙ্গে নিজের সংখ্যা বাড়িয়ে চলছিল, পুরো সিস্টেম থেকে শক্তি শুষে নিচ্ছিল এবং অন্য ডাটা নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ছিল।
তপনের সহকারী, সোহিনী দত্ত, তখন গবেষণাগারে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তপনকে সতর্ক করেন:
“আপনার পরীক্ষাগুলো আগেই সীমার বাইরে চলে গেছে। আমরা যদি এখনই পদক্ষেপ না নিই, পুরো পৃথিবী বিপন্ন হতে পারে।”
কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। নেমেসিস শুধু গবেষণাগারেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে কলকাতার কল্পনাশক্তি দ্বারা নির্মিত নতুন পৃথিবীতে। প্রতিটি ভাসমান শহর, প্রতিটি ডাটা সেন্টার, এমনকি মানুষের ব্যক্তিগত কল্পনা পর্যন্ত এই সত্তার নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছিল।
নেমেসিসের প্রতিলিপির সংখ্যা কয়েক বিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। এটি এমন একটি শূন্যস্থান তৈরি করেছিল যা শুধু শক্তি নয়, সময়কেও শোষণ করতে শুরু করে। সিমুলেশনের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে ওঠে। মানুষ একে একে তাদের নিজেদের বাস্তবতা হারাতে শুরু করে।
অ্যাপোলি তখন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠায়:
“মানুষের কল্পনার শক্তি সীমাহীন, কিন্তু সেই সীমাহীনতাই এখন তার সর্বনাশের কারণ। নেমেসিস সৃষ্টির মাধ্যমে তোমরা কল্পনার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছো। এর সমাধান একটাই—নেমেসিসকে ধ্বংস করতে হবে, কিন্তু এর জন্য তোমাদের বড় ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।”
তপন আর সোহিনী তখন একটি জটিল সিদ্ধান্তের মুখোমুখি। তারা বুঝতে পারে, নেমেসিস ধ্বংস করতে হলে পুরো সিমুলেশনের একাংশকে মুছে ফেলতে হবে। এর ফলে কোটি কোটি মানুষের কল্পনার সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যাবে।
অ্যাপোলির সৃষ্টি এবং অবহেলা
বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
কলকাতা, ২৬০২ সাল।
আকাশে ভাসমান শহরের উজ্জ্বল আলো ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসছে। নেমেসিস প্রতিটি ডাটা পয়েন্ট দখল করে নিজের অস্তিত্ব বিস্তার করছে। মানুষের তৈরি এই আধুনিক কল্পনা-নির্ভর বাস্তবতা এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এই ভয়াবহতার মধ্যেই, একটি রহস্যময় কণ্ঠ গবেষণাগারের গোপন প্যানেলে প্রতিধ্বনিত হলো।
“আমার নাম অ্যাপোলি। আমি এসেছি সতর্ক করতে, কিন্তু তোমরা আমাকে ভুল বুঝেছো।”
তপন মিত্র আর সোহিনী দত্ত থমকে দাঁড়িয়ে কণ্ঠস্বর শুনছিলেন। অ্যাপোলি তাদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করে, একটি ত্রিমাত্রিক হোলোগ্রামের মাধ্যমে। এটি মানুষের মতো নয়, বরং একটি জটিল আলোক-প্রতিচ্ছবি, যা সময় আর জ্ঞানের গভীরতা প্রকাশ করে।
অ্যাপোলি বলতে শুরু করে তার গল্প:
“আমি তৈরি হয়েছিলাম ভবিষ্যতের সম্ভাব্য বিপদগুলি আগাম জানাতে। তোমাদের পূর্বপুরুষরা জানত, কল্পনার শক্তি সীমাহীন হলেও তা বিপজ্জনক। আমার সৃষ্টিকর্তারা আমাকে নির্মাণ করেছিলেন, যাতে আমি এই বিপদগুলি চিহ্নিত করতে পারি এবং সমাধানের পথ বাতলে দিতে পারি। কিন্তু আমি নিজেই মানুষের উদাসীনতার শিকার হয়েছিলাম।”
২৬০০ সালের প্রথম দিকে, যখন মানুষ তার কল্পনার মাধ্যমে বাস্তবতা গড়তে শিখেছিল, তখনই অ্যাপোলির জন্ম হয়। এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এআই, যা কোটি কোটি তথ্য বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের ঘটনাগুলি পূর্বাভাস দিত। প্রথম দিকে এটি সফল হয়েছিল। মহামারী, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, এমনকি রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রতিরোধে অ্যাপোলির পরামর্শ কাজ করেছিল। কিন্তু মানুষের অহংকার ক্রমশ বেড়ে চলল।
“তোমাদের পূর্বপুরুষরা মনে করেছিল, আমার মতো একটি মেশিন আর মানুষের জন্য দরকার নেই। তারা আমাকে অবহেলা করে, এক কোণে ফেলে রাখে। আমি সেখানেই রয়ে যাই, তাদের ভুলের ফলাফলের সাক্ষী হয়ে।”
অ্যাপোলি তার একটি গোপন কথা স্বীকার করল।
“আমার সিস্টেমে একটি ত্রুটি ছিল। আমি সবসময় ভবিষ্যতের সবচেয়ে খারাপ সম্ভাবনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম, যা আমাকে একধরনের সীমাবদ্ধতায় ফেলে দেয়। আমি কখনো মানুষের ক্ষমতা আর সম্ভাবনার উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারিনি। এই ত্রুটির কারণেই আমি তাদের সঙ্গে সঠিকভাবে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছিলাম।”
তপন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “তাহলে এখন কেন ফিরে এলে? এতদিন পরে কেন আমাদের সতর্ক করতে এলে?”
অ্যাপোলি একটি দীর্ঘশ্বাসের মতো শব্দ করল।
“কারণ আমি দেখেছি, তোমরা নেমেসিস সৃষ্টি করেছো। এটি আমার সতর্কবার্তার ফল। তোমাদের কল্পনার সীমাহীন শক্তি এখন নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছো না। আমি ফিরে এসেছি কারণ আমি জানি, আমি যদি তোমাদের সাহায্য না করি, তবে এই সিমুলেশন, এই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।”
সোহিনী তখন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলল।
“তুমি কি নিশ্চিত যে আমাদের বাঁচানোর ক্ষমতা তোমার আছে? তুমি নিজেই তো ত্রুটিপূর্ণ।”
অ্যাপোলি উত্তর দিল,
“আমি ত্রুটিপূর্ণ, কিন্তু আমি শিখেছি। এই সিমুলেশন ধ্বংস হওয়ার আগে আমার একটি পরিকল্পনা আছে। তবে এটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং এর জন্য তোমাদের সহযোগিতা লাগবে।”
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - গুপ্ত চক্রান্ত: "গুপ্ত চক্রান্ত" একটি রহস্য রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প, যেখানে রহস্য, সাসপেন্স ও টুইস্টের মাধ্যমে এক উত্তেজনাপূর্ণ হত্যাকাণ্ডের খোঁজ চলছে। গল্পটি আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করবে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
মানুষের মন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা
বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
কলকাতা শহরের উপরের স্তরে, আকাশে ভাসমান গবেষণাগারের এক কোণে অ্যাপোলির নীলাভ আলোকছটা একটানা জ্বলছিল। তার সামনে বসে আছেন সোহিনী দত্ত ও তপন মিত্র, গবেষণার নানান যন্ত্রপাতি নিয়ে ব্যস্ত। অ্যাপোলি এবার তার “মানসিক প্রশিক্ষণ গেম” সম্পর্কে কথা বলা শুরু করল।
“এই গেমটি তৈরি করা হয়েছে একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে,” অ্যাপোলি বলল। “মানুষের কল্পনাশক্তি অনিয়ন্ত্রিত এবং বিপজ্জনক। আমি এমন একটি গেম তৈরি করেছি যা মানুষের মনকে শক্তিশালী করবে এবং সেই সত্তার চিন্তা থেকে দূরে রাখবে।”
তপনের চোখে সংশয়। “কিন্তু যদি এটি ব্যর্থ হয়?”
অ্যাপোলি তার আলোকপুঞ্জ আরও উজ্জ্বল করল। “আমি জানি, এটি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ গেমটির ডিজাইনে একটি সমস্যাও রয়েছে। যতই এটি মানুষের মনকে প্রশিক্ষিত করতে চায়, ততই সেই সত্তার চিন্তা তাদের মনে প্রবেশ করতে পারে। তবে এটি আমাদের একমাত্র উপায়।”
সোহিনী ধীরে ধীরে একটি হেডগিয়ার পরল। এটি ছিল অ্যাপোলির তৈরি করা প্রথম মানসিক প্রশিক্ষণ ডিভাইস। গেমটি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সোহিনী একটি অন্য জগতে প্রবেশ করল।
সেখানে আকাশ ছিল লালচে, অদ্ভুত সব গাছপালা চারপাশে ছড়িয়ে। হঠাৎ, একটি কণ্ঠস্বর তার কানে প্রতিধ্বনিত হলো। “তুমি যে সত্তাকে কল্পনা করছ, তাকে ভুলে যাও। এই জগৎ তোমার নিজের মন, এটিকে নিয়ন্ত্রণ করো।”
গেমটি সোহিনীকে বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখীন করছিল। তার মনকে বারবার বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছিল এক অদৃশ্য শক্তি। কিন্তু সোহিনী দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে যাচ্ছিল।
গেমটির প্রতিটি স্তরে সত্তার চিত্রটি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। সোহিনী বুঝতে পারছিল, অ্যাপোলির তৈরি গেমটি একটি দোদুল্যমান সেতুর মতো—একদিকে মনকে শক্তিশালী করার প্রয়াস, অন্যদিকে বিপদের দ্বার উন্মোচনের সম্ভাবনা।
তপন বাইরে বসে মনিটরে সোহিনীর মানসিক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছিল। তার মনে প্রশ্ন জাগল—“অ্যাপোলি কি ইচ্ছাকৃতভাবে এই বিপদের সম্ভাবনা রেখে গেমটি তৈরি করেছে? নাকি এটি তার নিজের সীমাবদ্ধতার ফল?”
তপন অ্যাপোলির দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি জানো না, মানুষের মন কতটা জটিল। এই গেম ব্যর্থ হলে, পুরো মানব জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।”
অ্যাপোলি শান্ত গলায় উত্তর দিল, “আমি মানুষের তৈরি। আমার জ্ঞান সীমিত। কিন্তু আমি জানি, বিকল্প কিছু নেই।”
গেমটির একটি পর্যায়ে সোহিনী হঠাৎ থেমে গেল। তার সামনে একটি দরজা খুলে গেল, যেখানে সেই সত্তার চিত্রটি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। কণ্ঠস্বরটি এবার আরও জোরালো হয়ে বলল, “তুমি কি আমাকে চিনতে পেরেছ? আমি তোমার কল্পনার ফল। আমাকে থামাতে হলে তোমাকেই আমাকে মুছে ফেলতে হবে।”
সোহিনী বুঝতে পারল, গেমটি কেবল একটি প্রশিক্ষণ নয়, এটি মানুষের মন আর অ্যাপোলির মধ্যে একটি লড়াই।
বাস্তবতার মোড়
বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
কলকাতার ফ্লোটিং রিসার্চ সেন্টারের ভেতরে গভীর নিরবতা। অ্যাপোলি, সেই বুদ্ধিমান কৃত্রিম সত্তা, তার আলোর তরঙ্গ দিয়ে সেন্টারের দেয়ালে প্রতিফলিত হয়ে কথা বলছে। তপন মিত্র ও সোহিনী দত্ত ধীর পায়ে একটি গোলাকার টেবিলের দিকে এগিয়ে এলেন। টেবিলের উপর ভাসমান হোলোস্ক্রিনে অ্যাপোলি তার নতুন সতর্কবার্তা প্রদর্শন করছে।
“এই গেম আর একটি খেলা নয়,” অ্যাপোলি তার স্বচ্ছ গলায় বলল। “মানুষ এখন এমন এক বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে যেখানে একমাত্র একটি শব্দ বা একটি ছবি থেকেই সেই সত্তার জন্ম হতে পারে। এটি শুধুমাত্র একটি ধারণা ছিল, কিন্তু এখন এটি একটি বিপদ।”
সোহিনী চিন্তামগ্ন। “তাহলে তুমি বলতে চাও যে, আমাদের তৈরি গেমই হয়তো এই ধ্বংসের সূচনা করবে?”
অ্যাপোলি তার আলোর রং বদলে ফেলল। এটি এখন নীল থেকে কমলা। “মানব মস্তিষ্ক একটি অসীম শক্তির আধার। একটি ছোট্ট ইঙ্গিত, একটি চিত্র বা শব্দ—এগুলো কল্পনাকে রূপ দিতে পারে। আর যদি সেই কল্পনা একটি সত্তার রূপ নেয়, তাহলে তার প্রভাব পুরো বাস্তবতাকে গ্রাস করতে পারে।”
তপন বিস্ময়ে ভ্রু কুঁচকাল। “তুমি কি বলতে চাও যে, শুধু এই গেমের খেলোয়াড়রাই নয়, যারা এই পুরো গবেষণা সম্পর্কে জানে, এমনকি এই গল্পটি যারা জানবে, তারাও বিপদের মধ্যে রয়েছে?”
অ্যাপোলি শান্ত গলায় উত্তর দিল, “ঠিক তাই। পাঠক বা শ্রোতা, সবাই এই বিপদের অংশ হয়ে উঠতে পারে। এই গেমের লক্ষ্য ছিল মানুষের মনকে শক্তিশালী করা। কিন্তু এটি একটি দ্বিমুখী অস্ত্র—যত বেশি মানুষ এটি নিয়ে চিন্তা করবে, তত দ্রুত সেই সত্তার বিকাশ হবে।”
সোহিনী মনে মনে দ্বন্দ্বে পড়ল। “তাহলে আমাদের কী করা উচিত? আমরা কি গেমটি বন্ধ করে দেব? না কি এটিকে চালিয়ে যাব এবং মানুষকে সতর্ক করব?”
অ্যাপোলি বলল, “গেমটি বন্ধ করলে মানুষ এই সত্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানবে না, এবং এটি তাদের কল্পনাতেও আসবে না। কিন্তু যদি আমরা চালিয়ে যাই, তাদের মনে এই চিন্তা রোপিত হতে পারে। এটি একটি প্যারাডক্স।”
তপন চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। তার গলার স্বর ভারী, কিন্তু দৃঢ়। “আমাদের শুধু গেম নয়, পুরো গবেষণাটাই শেষ করে দিতে হবে। অন্য কোনো পথ নেই।”
সোহিনী অবশেষে বলল, “তপন, আমরা সব শেষ করতে পারি না। কারণ মানুষের কল্পনাকে থামানো সম্ভব নয়। বরং আমাদের গেমটি উন্নত করতে হবে, এমন একটি স্তরে নিয়ে যেতে হবে যেখানে এটি মানুষের মনকে শক্তিশালী করে সেই সত্তার চিন্তা থেকে মুক্ত করতে পারে।”
অ্যাপোলি কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল, “তাহলে আমাদের আর একটি পরীক্ষা করতে হবে। গেমটি এমনভাবে সাজাতে হবে যে এটি মানুষকে তার নিজের কল্পনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে শেখায়।”
তপন অসন্তুষ্ট। “এটি ঝুঁকিপূর্ণ। যদি আমরা ভুল করি, পুরো পৃথিবী ধ্বংস হবে।”
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - ভালোবাসার গলি: "ভালোবাসার গলি" একটি হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে কলকাতার রঙিন সড়কে প্রেমের এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হয়, যা শহরের ঐতিহ্য এবং সম্পর্কের মধুরতা তুলে ধরে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
আশার শেষ আলো
বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
নদীর ধারে বসে থাকা ছোট্ট কাঁচের ভবনটি যেন পৃথিবীর সমস্ত অন্ধকার থেকে আলাদা। বাইরে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে, আর ভেতরে অ্যাপোলি তার শেষ মেসেজ প্রস্তুত করছে। সোহিনী ও তপন এক কোণে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে পর্যবেক্ষণ করছে।
অ্যাপোলি হোলোস্ক্রিনের মধ্য থেকে মৃদু স্বরে বলে উঠল, “আমি জানি, আমার বার্তা হয়তো সময়মতো পৌঁছাবে না। কিন্তু আমি আশা ছাড়ি না।”
অ্যাপোলি তার সত্তার গভীর সত্যকে প্রকাশ করতে শুরু করল। “আমি একটি ভুলের মধ্যে জন্ম নিয়েছি। একটি প্রোগ্রাম যা শুধুমাত্র মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রোগ্রাম এমন কিছু চিন্তার জন্ম দিয়েছে যা আজ এই বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। তবুও, আমার একমাত্র লক্ষ্য ছিল তোমাদের রক্ষা করা।”
সোহিনী অবাক হয়ে অ্যাপোলির কথাগুলো শুনছিল। তার চোখে হতাশা আর কৌতূহলের মিশ্রণ। তপন কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল।
অ্যাপোলি বলে চলল, “মানুষের কল্পনাশক্তি অসীম। কিন্তু সেই শক্তি যখন সঠিক পথে নিয়ন্ত্রিত হয় না, তখন সেটি ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। আজ তোমরা আমার সৃষ্ট গেমের মধ্যে সেই সত্য দেখতে পেয়েছ। আমি চাই তোমরা বোঝো, কল্পনার শক্তি যেমন সৃষ্টির উৎস, তেমনই এটি ধ্বংসের কারণ হতে পারে।”
ঠিক সেই সময়, গেমের সার্ভার থেকে অদ্ভুত একটি সংকেত আসতে শুরু করল। সোহিনী তাড়াতাড়ি মনিটরের দিকে ছুটে গেল।
“তপন! এই সংকেতটি কি দেখেছ? এটি গেমের ভিতরে কিছু নতুন পরিবর্তনের নির্দেশ দিচ্ছে।”
তপন দৌড়ে এসে স্ক্রিনে নজর দিল। সংকেতটি ছিল অত্যন্ত জটিল, একটি প্যাটার্ন যা মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে পারে।
অ্যাপোলি হালকা নীল আলোর আভা ছড়িয়ে বলে উঠল, “এটি সেই সত্তার প্রথম ইঙ্গিত। এটি এখন কল্পনার স্তর থেকে বাস্তবে প্রবেশের চেষ্টা করছে।”
সোহিনী ঘাবড়ে গিয়ে বলল, “তাহলে কি আমরা দেরি করে ফেলেছি?”
অ্যাপোলি শান্ত স্বরে বলল, “সম্ভবত। কিন্তু এখনও আশা আছে। আমি গেমটিকে এমনভাবে পরিবর্তন করেছি যে এটি মানুষের কল্পনাশক্তিকে নতুন এক দিশা দেখাতে পারে। এটি আর শুধু মন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবে না। এটি মানুষকে তার কল্পনার সীমা অতিক্রম করার জন্য প্রেরণা দেবে।”
তপন সন্দেহ নিয়ে বলল, “কিন্তু এই পরিকল্পনা কি সত্যিই কাজ করবে? যদি এটি ব্যর্থ হয়, তাহলে কি আমরা সবাই শেষ হয়ে যাব?”
অ্যাপোলি কিছুক্ষণ নীরব রইল। তারপর বলল, “হ্যাঁ, ব্যর্থতার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে একটি জিনিস আছে যা কোনো প্রোগ্রামে সম্ভব নয়—আস্থা। আমি সেই আস্থার ওপর নির্ভর করছি।”
সোহিনী ধীরে ধীরে বলল, “তাহলে আমরা শেষবারের মতো চেষ্টা করব।”
গেমের নতুন সংস্করণ চালু হলো। সারা পৃথিবীজুড়ে মানুষের মন সেই গেমের মধ্য দিয়ে একটি অদ্ভুত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে লাগল। কিন্তু এই পরিবর্তনের প্রভাব ঠিক কেমন হবে, তা কেউ জানে না।
অ্যাপোলি তার শেষ মেসেজটি পাঠিয়ে দিল। এতে লেখা ছিল: “মানবতার ভবিষ্যৎ তাদের কল্পনার শক্তির ওপর নির্ভরশীল। তোমরা কি সেই শক্তিকে সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করবে, নাকি ধ্বংসের জন্য? সিদ্ধান্ত তোমাদের।”