বাংলা ঐতিহাসিক কথাসাহিত্যের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
১৯৮৭ সালের এক উষ্ণ গ্রীষ্মের সন্ধ্যা। ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোর এক অভিজাত এলাকায় সিমন হাম্পফ্রিসের জন্মদিন উদ্যাপন চলছে। শহরের বর্ণাঢ্য মানুষের ভিড় জমেছে সেখানে। সিমন, তার স্বভাবসিদ্ধ উদ্দামতা নিয়ে, সবার মাঝে কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে। তার পরনে চকচকে জ্যাকেট, উজ্জ্বল নীল প্যান্ট, আর চুলে রঙিন স্প্রে। তানিয়া হাম্পফ্রিস, তার সঙ্গিনী, একটু দূরে দাঁড়িয়ে, পার্টির প্রাণবন্ত অথচ কেমন যেন বিষণ্ণ পরিবেশটাকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন।
তানিয়া জানতেন সিমন এমনই—উন্মত্ত, অস্থির, আর অনিয়ন্ত্রিত। মাদক আর সঙ্গীতের এই মিশ্রণে সে যেন আরও বেশি মুক্ত। তবে তানিয়ার জন্য এটা ছিল ক্লান্তিকর। পার্টিতে উপস্থিত প্রত্যেকেই যেন নিজেদের জগতে বন্দি। কেউ মদের গ্লাসে ডুবে আছে, কেউ আবার মাদক সেবনে আচ্ছন্ন। এই স্রোতে সিমন ছিল অদ্ভুত এক অনুষঙ্গ—সব কিছুর উর্ধ্বে, কিন্তু তবুও এরই অংশ।
সন্ধ্যা বাড়ার সাথে সাথে সিমনের উচ্ছ্বাস আরও বাড়তে থাকে। আচমকাই সে মঞ্চে উঠে ঘোষণা করে, “এই পার্টি শেষ নয়। এখনই শুরু! আমরা এখনই লস অ্যাঞ্জেলেস যাচ্ছি। রাত শেষ হবে গাড়িতে। নতুন গন্তব্যে।” তার চোখে ছিল পাগলামির এক রঙিন ঝিলিক।
তানিয়া হতচকিত। “এখনই?” সে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে। “এত রাতে?”
“হ্যাঁ, এখনই,” সিমন হেসে বলে। “আমাদের ডজ ডার্ট কি শুধু দেখানোর জন্য? এটা আমাদের মুক্তির টিকিট, তানিয়া। গন্তব্যহীন পথের আনন্দ।”
সিমনের এই বেপরোয়া আচরণ তানিয়াকে অস্থির করছিল। কিন্তু তার গভীরে ছিল একটা কৌতূহল। এই যাত্রা কি তাদের সম্পর্কের মানে খুঁজে পাওয়ার একটা সুযোগ হতে পারে? নাকি আরও অন্ধকারে ডুবিয়ে দেবে?
তাদের সঙ্গী দু’জন ইতিমধ্যে রাজি হয়ে গেছেন। “চলো, সিমন! আমরাও তৈরি,” বলে তারা চিৎকার করে।
ডজ ডার্ট, সিমনের পুরনো গাড়ি, পার্টির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। জীর্ণ অবস্থা সত্ত্বেও এটি যেন এক স্বাধীনতার প্রতীক। সিমনের নির্দেশে সবাই দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে নেয়। তানিয়া বুঝতে পারে, এই যাত্রা আর আটকানো যাবে না।
রাতের ক্যালিফোর্নিয়ার রাস্তা ধরে গাড়ি চলতে শুরু করে। সিমন স্টিয়ারিং হুইলে, চোখে দুরন্ত এক স্বপ্ন। রাস্তার আলো আর গাড়ির ফাঁকা সিট মিলিয়ে একটা অলীক পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
তবে, গাড়ি যত এগোতে থাকে, তানিয়া গভীর চিন্তায় ডুবে যায়। সিমনের জীবনের প্রতি উদাসীন মনোভাব, তার অদ্ভুত সিদ্ধান্তগুলো কি তাদের সম্পর্কের জন্য ভালো? অতীতের সম্পর্কগুলো, বিশেষত ইভসের সঙ্গে তার দিনগুলো, এক এক করে মনে পড়ে। ইভসের রোগগ্রস্ত মানসিকতা আর তাদের ভাঙন তাকে শেখালেও, সিমনের এই উদ্দাম জীবন যেন এক নতুন পরীক্ষা।
তারা লস অ্যাঞ্জেলেসের পথে যখন এক নির্জন রাস্তায় থামে, সিমনের নির্দেশে সবাই গাড়ি রঙ করতে শুরু করে। সিমনের বুদ্ধি—“গাড়ি যদি আমাদের মনের প্রতিবিম্ব হয়, তবে এটাও মুক্ত আর বর্ণময় হওয়া উচিত।” তানিয়া কিছু না বললেও সিমনের সৃজনশীলতার অদ্ভুত রূপে তাকিয়ে থাকেন।
গাড়ির নতুন রঙ নিয়ে তারা আবার যাত্রা শুরু করে। দূরে লস অ্যাঞ্জেলেসের আলো ঝলমল করছে। তানিয়া জানেন, এই যাত্রার সঠিক পরিণতি কী হবে, তা সময়ই বলবে।
গাড়ির ভেতর হঠাৎ এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা নেমে আসে। সিমন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে ওঠে, “তুমি জানো, তানিয়া? জীবন শুধু একরকম পথ নয়। মাঝে মাঝে এটা একটা ধাঁধার মতো। তুমি কি জানো কোন পথে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে?”
কল্পবিজ্ঞান-এর বাংলা ছোট গল্প - মনের সংকেত: "মনের সংকেত" একটি চিত্তাকর্ষক কল্পবিজ্ঞান গল্প, যেখানে মানুষের কল্পনাশক্তির বিপদ ও সম্ভাবনা নিয়ে একটি গভীর বাংলা ছোট গল্প তুলে ধরা হয়েছে, যা পাঠককে ভাবতে বাধ্য করে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
বর্ণিল ডজ ডার্ট
বাংলা ঐতিহাসিক কথাসাহিত্যের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
গভীর রাত। ডজ ডার্ট গাড়িটি ধীরগতিতে একটি নির্জন রাস্তায় এসে থামে। আকাশ ভরা তারার মেলা, চারদিকে সুনসান নীরবতা। সিমন গাড়ি থেকে নেমে হাত মেলে আকাশের দিকে তাকালেন। তানিয়া একপাশে দাঁড়িয়ে এই আচমকা থামার কারণ বুঝতে পারছিলেন না। “এখানে থামলে কেন?” তিনি প্রশ্ন করলেন।
“এই ধূসর গাড়িটা আমাকে বিরক্ত করছে,” সিমন বললেন, যেন নিজের সাথে কথা বলছেন। “এটা এত নীরস আর প্রাণহীন কেন?”
তানিয়া বিরক্তির সুরে বললেন, “গাড়ির রঙ কি এখন এত গুরুত্বপূর্ণ?”
“অবশ্যই!” সিমন উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। “গাড়িটা আমাদের পথের সঙ্গী। এটা আমাদের জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি হওয়া উচিত। আর আমাদের জীবন কি ধূসর?”
সঙ্গে থাকা বন্ধুদের মধ্যে একজন, মাইক, পেছনের সিট থেকে কিছু রং বের করলেন—গোয়েন্দা কাহিনির মতোই এই রং তাদের ব্যাগে ছিল। “আমি সিমনের সঙ্গে একমত,” মাইক বললেন। “গাড়িটা একটু বর্ণিল হওয়া উচিত।”
তানিয়া মাথা নেড়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন, কিন্তু বুঝতে পারলেন সিমনকে থামানো যাবে না। সিমন রং নিয়ে গাড়ির ধাতব শরীর জুড়ে নানা প্যাটার্ন আঁকতে শুরু করলেন। উজ্জ্বল নীল, গাঢ় লাল, আর সোনালি রঙ মিলে তৈরি হলো এক অদ্ভুত, বিশৃঙ্খল নকশা। তানিয়া প্রথমে বিরক্ত হলেও ধীরে ধীরে সিমনের সৃজনশীলতায় মুগ্ধ হলেন।
“তুমি এমন কেন, সিমন?” তানিয়া গভীর কণ্ঠে বললেন। “সব কিছু এত সহজে ঝুঁকিতে ফেলতে পারো?”
“কারণ ঝুঁকি ছাড়া জীবন অর্থহীন,” সিমন হেসে বললেন। “তুমি কি জানো, তানিয়া, এই মুহূর্তটাই গুরুত্বপূর্ণ। আগামীকাল যা হবে, সেটা নিয়ে ভাবার সময় নেই।”
তানিয়া চুপ করে গেলেন। সিমনের এই দর্শন তাঁকে অবাক করত, কিন্তু একই সঙ্গে উদ্বিগ্ন করত। তাঁর অতীতের অভিজ্ঞতা—ইভসের সঙ্গে কাটানো দিনগুলো—তাঁকে শিখিয়েছে যে জীবনের প্রতিটি ঝুঁকি নতুন কষ্টের জন্ম দিতে পারে।
রং শেষ হলে, সিমন একপাশে দাঁড়িয়ে নিজের কাজের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হলেন। “দেখো, তানিয়া,” তিনি বললেন। “এটাই আমার মনের প্রতিচ্ছবি—বিশৃঙ্খল, বর্ণময়, কিন্তু অসাধারণ।”
তানিয়া ধীরে ধীরে বললেন, “তুমি সত্যিই অন্যরকম, সিমন। কিন্তু এই অন্যরকমতা আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে?”
গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। পথে সবার মধ্যে নীরবতা। ডজ ডার্ট যেন নতুন জীবনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তানিয়া জানেন, এই যাত্রা শুধুমাত্র একটি গন্তব্যের নয়, বরং সম্পর্কের গভীরে প্রবেশ করার।
কিন্তু রাস্তা যত গভীরে ঢুকতে থাকে, ততই প্রকৃতি বদলে যেতে থাকে। দূরে অন্ধকার পাহাড় দেখা যায়। হঠাৎ গাড়ির ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়। সিমন গাড়ি থামান এবং সবার মধ্যে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে।
“এটা তো পরিকল্পনার অংশ ছিল না!” মাইক বলে ওঠে।
সিমন হাসেন, “এটাই তো জীবনের মজা। পরিকল্পনা ভেঙে যাওয়ার মধ্যেই তো আসল গল্প লুকিয়ে থাকে।”
লস অ্যাঞ্জেলেসের উন্মাদনা
বাংলা ঐতিহাসিক কথাসাহিত্যের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
গভীর রাত। রাস্তার আলো আর গাড়ির হেডলাইটে আলোকিত লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের দৃশ্য যেন সিনেমার সেটের মতো মনে হচ্ছিল। ডজ ডার্ট গাড়িটি ধীরে ধীরে শহরের ব্যস্ত সড়ক দিয়ে এগোচ্ছিল। সিমন উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন, “আমরা এসে গেছি, লস অ্যাঞ্জেলেস!”
তানিয়া জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন। এক অদ্ভুত উদ্দীপনায় ভরা শহর—রাস্তার পাশে মানুষের ভিড়, জায়গায় জায়গায় বাজছে জ্যাজ সঙ্গীত, আর কফি শপের সামনে বসে থাকা একদল তরুণ যেন ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও আলোচনা করছে। তানিয়ার চোখে এই শহর ছিল মুক্তি আর অনিশ্চয়তার এক অদ্ভুত মিশ্রণ।
সিমনের বন্ধুরা আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল। “সিমন!” বলে একজন হাত নেড়ে চিৎকার করে উঠল। সে ছিল জ্যাক, সিমনের পুরনো বন্ধু। “তুমি আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিলে। কিন্তু তোমার নতুন গাড়ি তো একেবারে শিল্পকর্ম হয়ে উঠেছে!”
জ্যাকের কথায় সিমন হাসলেন। “এটা শুধু গাড়ি নয়, এটা আমাদের যাত্রার প্রতীক,” তিনি বললেন।
বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তাঁদের রাত শুরু হলো মজার এক উন্মত্ততায়। তাঁরা শহরের রাস্তা ধরে হাঁটলেন, যেখানে এক দল বাদক তাদের যন্ত্রে সুর তুলছিল। সিমন হঠাৎ গিটার নিয়ে একটি পুরোনো গান শুরু করলেন। তাঁর কণ্ঠে এক ধরনের উদ্দীপনা ছিল যা রাস্তার পথচারীদেরও থামিয়ে দিল।
তানিয়া পাশ থেকে দেখছিলেন। সিমনের এই প্রাণশক্তি তাঁকে আকর্ষণ করত, কিন্তু একই সঙ্গে চিন্তিত করত। এই শহরের মতোই সিমন ছিলেন অবিন্যস্ত, অনিশ্চিত, কিন্তু উদ্দীপনায় ভরা।
ডিনার হলো শহরের এক কোণের সস্তা রেস্তোরাঁয়। সবার সামনে রাখা প্লেটে হালকা খাবার, আর টেবিল জুড়ে হাসি আর গল্প। তানিয়া কিছু সময়ের জন্য নিজের চিন্তা থেকে মুক্তি পেলেন। কিন্তু মন থেকে বের করতে পারলেন না সিমনের সঙ্গে তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা শহরের এক প্রান্তে গেলেন, যেখানে রাস্তার ধারে একটি পুরোনো বাড়ির ছাদে তাঁরা বসে পড়লেন। শহরের আলো, মানুষ আর গাড়ির শব্দ মিলেমিশে যেন এক অনন্য সঙ্গীত তৈরি করছিল।
“তুমি কী ভাবছ, তানিয়া?” সিমন জিজ্ঞাসা করলেন। তাঁর চোখে ছিল কৌতূহল।
“তুমি জানো, সিমন, আমি তোমার সঙ্গে আছি কারণ তোমার এই উদ্দীপনা আমাকে মুগ্ধ করে। কিন্তু আমি ভয় পাই… আমাদের ভবিষ্যৎ কি এইরকম বিশৃঙ্খল থাকবে?”
সিমন একটু চুপ করে থাকলেন। তারপর বললেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ তৈরি হয় আমাদের আজকের সিদ্ধান্তে। তুমি আমাকে বোঝার চেষ্টা করো, তানিয়া। আমি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে চাই। এই শহর আমাদের শিখিয়েছে, জীবন কখনও থেমে থাকে না। আমরা যদি থেমে যাই, তাহলে জীবনকে হারাব।”
তানিয়া কিছু বললেন না। তিনি জানতেন সিমনের এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা সহজ নয়।
তাদের রাত কাটল হাসি, গান আর আলোচনায়। কিন্তু তানিয়া বুঝতে পারলেন, এই শহরের উন্মাদনা আর সিমনের স্বাধীন মনোভাবের মাঝে তিনি নিজেকে হারাতে বসেছেন।
গ্র্যাপভাইনের শূন্যতা
বাংলা ঐতিহাসিক কথাসাহিত্যের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
ডজ ডার্ট গাড়িটি দ্রুত গতিতে গ্র্যাপভাইনের মরুভূমির মধ্য দিয়ে ছুটে চলছিল। ঘন কালো রাতের আকাশে তারার ছটা ছিল একমাত্র আলোর উৎস। সিমন নিজের স্বভাবসিদ্ধ বেপরোয়া ভঙ্গিতে গুনগুন করে গান গাইছিলেন, আর তানিয়া চুপচাপ বাইরের অন্ধকারে চোখ বোলাচ্ছিলেন। রাতের নির্জনতা তাঁদের দু’জনকে ভাবনার গভীরে টেনে নিচ্ছিল।
হঠাৎই একটি বিকট শব্দে গাড়িটি ঝাঁকুনি খেল। সিমন দ্রুত ব্রেক চাপলেন। গাড়ি থেমে গেল, আর দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে দেখলেন, পেছনের দুই চাকা ফেটে গিয়েছে। চারপাশে ছিল শুধু বালির স্তূপ আর দূরে দূরে কাঁকড় গাছ। সিমন হতাশ হয়ে গাড়ির দরজা বন্ধ করে বললেন, “দেখেছ? ঠিক এই কারণে আমি গাড়ির ওপর নির্ভর করি না।”
তানিয়া গভীর শ্বাস নিয়ে বললেন, “তুমি কি এবার বাস্তবসম্মত হওয়া শিখবে? এখন কী করব, সিমন? আমাদের কাছে সামান্য খাবার আর খুব অল্প টাকা আছে।”
সিমন কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন, “সব ঠিক হয়ে যাবে। গাড়ি তো এখনো চলতে পারে না, আমরা একটু বিশ্রাম করি।”
কিন্তু তানিয়া জানতেন যে বসে থাকা সমস্যার সমাধান নয়। চারপাশে তাকিয়ে তিনি দেখলেন দূরে এক ধরনের আলোর আভাস। “আমি ওখানে যাব। হয়তো কাছাকাছি কোনও ফার্ম বা লোকালয় আছে,” তানিয়া দৃঢ়স্বরে বললেন।
“তুমি পাগল হয়েছ? রাতের বেলা এই নির্জন জায়গায় একা?” সিমন অবাক হয়ে তাকালেন।
“অন্তত আমি কিছু করার চেষ্টা করছি, সিমন। তুমি বসে থাকো আর তোমার গান চালিয়ে যাও।” তানিয়া তাঁকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।
তানিয়ার পা বালিতে ডুবে যাচ্ছিল। ঠান্ডা বাতাসে তাঁর শীত লাগছিল, কিন্তু তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন। আলোর উৎসটি ক্রমেই কাছাকাছি আসছিল। কিছুক্ষণ হাঁটার পর তিনি একটি ছোট্ট ফার্মহাউস দেখতে পেলেন। ফার্মের দরজায় টোকা দিতেই এক বৃদ্ধ এসে দরজা খুললেন।
“কে?” বৃদ্ধ সন্দেহজনক চোখে তাকালেন।
“আমি… আমরা রাস্তার পাশে আটকে পড়েছি। সাহায্যের প্রয়োজন। আমাদের গাড়ির চাকা ফেটে গেছে,” তানিয়া দ্রুত বললেন।
বৃদ্ধ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন, তারপর বললেন, “ঠিক আছে, ভিতরে এসো। আমি কিছুটা সাহায্য করতে পারি।”
বৃদ্ধ তাঁদের কাছে থাকা অল্প কিছু খাবার আর একটি ছোট্ট গ্যারেজের কথা বললেন যেখানে তাঁরা গাড়ির জন্য যন্ত্রপাতি পেতে পারেন।
তানিয়া তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফিরে এলেন। ফার্ম থেকে পাওয়া দিকনির্দেশনায় সিমনের সঙ্গে মিলে গাড়িটি টেনে নিয়ে গেলেন কাছাকাছি গ্যারেজে। পথে সিমনের সহজাত উদাসীন স্বভাব তানিয়ার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিলেও, তানিয়ার দৃঢ় মনোভাব পরিস্থিতিকে কিছুটা সামাল দিল।
রাত কাটল মরুভূমির বাতাসে গায়ের কম্বল মুড়ে। তানিয়া বুঝতে পারলেন, জীবনের এই যাত্রায় তাঁকে সিমনের সঙ্গে শুধু ভালো সময় নয়, কঠিন সময়ও ভাগ করে নিতে হবে। কিন্তু এই দুঃসাহসিক যাত্রা তাঁদের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলছিল।
ভুতের বাংলা ছোট গল্প - কালো জাদু: "কালো জাদু" একটি ভুতের গল্প যা রহস্য, ভয় এবং অতিপ্রাকৃত শক্তির জালে বাঁধা। এটি একটি বাংলা ছোট গল্প, যা পাঠককে অতিপ্রাকৃত জগতের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতায় নিয়ে যায়। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
সাহায্যের আলো
বাংলা ঐতিহাসিক কথাসাহিত্যের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
রাত গভীর, ফার্মের বাতিগুলো নিভে গিয়েছে। তানিয়া আর সিমন গাড়ির পাশে বসে ঠান্ডা হাওয়ায় নিজেদের সামান্য কম্বলে জড়িয়েছেন। সিমনের মুখে উদাসীনতার ছাপ, কিন্তু তানিয়ার মনের অস্থিরতা তাঁকে আরও দৃঢ় করে তোলে। পরের ভোরে, প্রথম সূর্যের আলোয় তাঁরা ফার্মে পৌঁছান।
তানিয়া যখন ফার্মের ভেতরে প্রবেশ করেন, বৃদ্ধ গৃহস্থ বাড়ির উঠোনে বসে ধূমপান করছিলেন। তাঁর চোখে সন্দেহের ছাপ স্পষ্ট। তানিয়া সংক্ষেপে তাঁদের পরিস্থিতি বোঝালেন। বৃদ্ধ মাথা নেড়ে বললেন, “আপনাদের গ্যারেজে পৌঁছানোর কথা বলেছিলাম। আর কী চান?”
তানিয়া বুঝতে পারলেন, আরও সাহায্যের আশা করা বৃথা। হতাশ হয়ে তিনি সিমনের কাছে ফিরে এলেন। “এখানে কেউ আমাদের সাহায্য করতে চায় না। আমাদের অন্য কোনও উপায় বের করতে হবে,” তিনি বললেন।
সিমন কিছুটা চুপ থেকে উঠে দাঁড়ালেন। “তুমি ফার্মের কাছে আরেকবার যাও, আমি এখানে গাড়ির কাছে থাকি। হয়তো আরও কেউ আছে যাকে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে,” তিনি বললেন।
তানিয়া ফার্ম থেকে বেরিয়ে সামনের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পর, একটি ধুলো মাখা ট্রাক এসে থামল। ড্রাইভার জানালা নামিয়ে বললেন, “ম্যাডাম, কিছু দরকার?”
তানিয়া সঙ্গে সঙ্গে সুযোগটি লুফে নিলেন। ড্রাইভারকে পুরো ঘটনা বোঝানোর পর তিনি বললেন, “নিকটবর্তী শহরটা বেশি দূরে নয়। চাইলে আপনাদের সেখানে নামিয়ে দিতে পারি।”
তানিয়া দৌড়ে সিমনের কাছে ফিরে এলেন। দু’জনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ট্রাকে উঠলেন। ড্রাইভার রাস্তার ধুলো উড়িয়ে তাঁদের শহরের দিকে নিয়ে চললেন। তানিয়া আর সিমন জানালার বাইরে তাকিয়ে মরুভূমির শূন্যতা আর পেছনে ফেলে আসা সংকটের কথা ভাবছিলেন।
নিকটবর্তী শহরে পৌঁছে তাঁরা একটি ছোট মোটেলের সামনে নামলেন। মোটেলের ম্যানেজার কিছুটা অবাক হয়ে তাঁদের দিকে তাকালেন। তানিয়া পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করলেন এবং একটি রুমের জন্য অনুরোধ করলেন। ম্যানেজার তাঁদের ক্লান্ত মুখ দেখে এক রাত থাকার অনুমতি দিলেন।
পরের দিন সকালে, তানিয়া স্থানীয় একটি গ্যারেজ খুঁজে বের করলেন। সেখানে তাঁরা টো ট্রাক ভাড়া করে গাড়িটি ফার্ম থেকে আনতে পাঠালেন। গাড়ি মেরামত করতে অনেকটা সময় লাগল। এদিকে, তাঁদের কাছে থাকা টাকা প্রায় শেষ হয়ে এল।
তানিয়া শেষমেশ নিজের পুরোনো এক বন্ধুকে ফোন করলেন, যিনি দূরে অন্য একটি শহরে থাকেন। বন্ধুটি পরিস্থিতি শুনে তাঁদের কিছু অর্থ পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিলেন।
রাতের অন্ধকারে গ্যারেজ থেকে ফিরে মোটেলের রুমে বসে তানিয়া ক্লান্ত শরীরে শুয়ে পড়লেন। সিমন পাশের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরের আলো-আঁধারি দেখছিলেন। এক দীর্ঘ নীরবতার পর তিনি বললেন, “তানিয়া, আমরা যেভাবে দিন পার করছি, এটা কি সত্যিই টিকে থাকবে?”
তানিয়া চোখ বন্ধ করেই বললেন, “আমরা যদি নিজেদের ঠিক রাখতে পারি, তাহলে আমাদের পথও ঠিক হয়ে যাবে।”
এই কথাগুলো সিমনের মনে গভীর ছাপ ফেলল।
অতীতের ছায়া
বাংলা ঐতিহাসিক কথাসাহিত্যের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে কেবল সিমনের হালকা নাসার ধ্বনি শোনা যাচ্ছিল। মোটেলের ছোট্ট জানালায় চাঁদের আলো এসে পড়ছিল। বিছানায় শুয়ে তানিয়া বারবার একটাই মুখ কল্পনা করছিলেন—ইভস। ইভসের মুখের সেই নিষ্পাপ হাসি আর গভীর দৃষ্টির কথা ভোলা সম্ভব নয়।
তাঁর স্মৃতির ঝাঁপিতে ইভসের সঙ্গে কাটানো সময়ের টুকরো টুকরো মুহূর্ত উঁকি দিতে থাকে। ইভস ছিলেন একজন উজ্জ্বল মেধাবী মানুষ—ভিন্নধর্মী চিন্তা-ভাবনা আর শিল্পের প্রতি গভীর ভালোবাসায় ভরা। কিন্তু তাঁর ভিতরেই বাস করত এক গভীর অন্ধকার। স্কিজোফ্রেনিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই তাঁকে ক্রমেই অন্যরকম করে তুলেছিল।
তানিয়া মনে করতে পারেন, ইভস প্রথমবার যখন অসুস্থতার লক্ষণ দেখাতে শুরু করেছিল, তিনি নিজেই বিশ্বাস করতে পারেননি। প্রথমদিকে তাঁর হালকা ভুলে যাওয়া বা অদ্ভুত কথাগুলোকে তানিয়া সাধারণ ক্লান্তি বলে ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে ব্যাপারটা ভয়ঙ্কর আকার নিতে থাকে। ইভস মাঝে মাঝেই অদৃশ্য মানুষদের সঙ্গে কথা বলতেন, এমনকি তাঁদের থেকে ভয় পেতেন।
তানিয়া অনেক চেষ্টা করেছিলেন ইভসকে সাহায্য করতে। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া, নিয়মিত ওষুধ খাওয়ানো—সবই করেছিলেন। কিন্তু ইভসের মনে হয়েছিল, তানিয়া তাঁকে বোঝেন না। একদিন প্রচণ্ড ঝগড়ার পর ইভস তাঁকে বলেছিলেন, “তুমি বুঝতে পারবে না। আমি যা দেখি, তা তোমার চোখে ধরা পড়ে না।”
সেই দিনের পর তানিয়া বুঝেছিলেন, এই সম্পর্ক তাঁকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। নিজের মঙ্গলার্থে তাঁকে ইভসকে ছেড়ে যেতে হবে। তবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না। তাঁকে ভেঙে দিয়েছিল, কিন্তু আবার গড়েও তুলেছিল।
তানিয়া যখন গ্র্যাপভাইনের মরুভূমিতে আটকে পড়েছিলেন, তখন ইভসের সঙ্গে কাটানো দিনগুলোর কথা তাঁকে বারবার মনে করাচ্ছিল যে তিনি কতটা শক্তিশালী হতে পারেন। ইভসের প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও তিনি যেভাবে নিজেকে সামলেছিলেন, সেই অভিজ্ঞতা তাঁকে সিমনের সঙ্গে এই সংকট কাটিয়ে ওঠার সাহস যুগিয়েছে।
পরের দিন সকালে, সিমন গাড়ির কাজ শেষ হওয়া নিয়ে আলোচনা করতে গ্যারেজে গেলেন। তানিয়া একা মোটেলের ঘরে বসে চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিলেন। হঠাৎ তাঁর ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে অপরিচিত একটি নম্বর জ্বলছিল। তিনি কৌতূহল নিয়ে কলটি রিসিভ করলেন।
“তানিয়া, আমি ইভস,” অপর প্রান্ত থেকে পরিচিত কণ্ঠটি শোনা গেল। তানিয়ার শরীর শীতল হয়ে গেল। তিনি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে ছিলেন।
“ইভস? তুমি কোথা থেকে ফোন করছ? কীভাবে…” তিনি জিজ্ঞেস করার আগেই ইভস বললেন, “আমি জানি তুমি এখন কোথায়। তোমার সাহায্য দরকার, তাই না? কিন্তু তোমাকে একটা কথা মনে রাখতে হবে—তুমি অতীতে ফিরে যেতে পারবে না।”
তানিয়া স্তব্ধ হয়ে গেলেন। ইভস ফোন রেখে দিলেন। তানিয়া বারবার নম্বরটি রিডায়াল করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু ফোনটি আর রিং হলো না।
গভীর ধন্দে পড়লেন তানিয়া। এটি কি তাঁর মনের এক ভ্রম, না সত্যিই ইভস তাঁকে ফোন করেছিলেন?
সিমন ফিরে এলে তানিয়া তাঁকে কিছু না বলেই গাড়ি নিয়ে শহর ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে লাগলেন। তাঁদের সামনে ছিল আরও এক দীর্ঘ যাত্রা, আর তানিয়া জানতেন যে এই যাত্রা তাঁদের শুধু শারীরিক নয়, মানসিক পরীক্ষারও সম্মুখীন করবে।
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - গুপ্ত চক্রান্ত: "গুপ্ত চক্রান্ত" একটি রহস্য রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প, যেখানে রহস্য, সাসপেন্স ও টুইস্টের মাধ্যমে এক উত্তেজনাপূর্ণ হত্যাকাণ্ডের খোঁজ চলছে। গল্পটি আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করবে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
পুনরুজ্জীবন
বাংলা ঐতিহাসিক কথাসাহিত্যের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
তানিয়া এবং সিমন শেষমেশ সান ফ্রান্সিসকোর আলোকোজ্জ্বল শহরে ফিরে এলেন। দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি সত্ত্বেও এই শহরের পরিচিত দৃশ্য তাঁদের এক ধরনের স্বস্তি এনে দিল। বন্দর থেকে সোনালি আলোর ঢেউ তানিয়ার মুখে এসে পড়ছিল। এই আলো যেন তাঁকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছিল—জীবনের অর্থ, প্রেম, এবং নিজের আত্মপরিচয় নিয়ে।
সিমনের সঙ্গে কাটানো দিনগুলোর কথা মনে পড়ছিল তাঁর। ঝুঁকিপূর্ণ পথ, ভাঙা গাড়ি, এবং অজানা শহরের অন্ধকার—সব কিছুর মধ্যেই সিমনের সাহসিকতা তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল। কিন্তু একই সঙ্গে সিমনের বেপরোয়া জীবনধারা তানিয়ার শান্ত, স্থিতিশীল জীবনের স্বপ্নের সঙ্গে মেলে না।
তাঁরা দু’জন একটি ছোট কফি শপে বসে ছিলেন। সিমনের চোখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট, কিন্তু তাঁর হাসি এখনও প্রাণবন্ত। তানিয়া কাপ থেকে এক চুমুক কফি নিয়ে বললেন, “সিমন, আমাদের যাত্রাটা যতই কষ্টের হোক, আমি কখনো ভুলতে পারব না। কিন্তু আমি ভাবছি…”
সিমন তাঁর দিকে তাকালেন। “তুমি ভাবছ, আমাদের পথ আলাদা হওয়া উচিত, তাই তো?”
তানিয়া চমকে গেলেন। সিমন তাঁর মনের কথা আগে থেকেই বুঝে গিয়েছিলেন।
“তুমি ঠিকই বলেছ,” তানিয়া ধীরে ধীরে বললেন। “তুমি যেভাবে জীবনকে দেখো, তা একেবারে অনন্য। তুমি আমাকে শেখালে কীভাবে ভয়কে জয় করতে হয়। কিন্তু আমার স্বপ্ন, আমার জীবন একটু আলাদা। আমি একটি স্থিতিশীল জীবন চাই, যেখানে আমি নিজেকে খুঁজে পাব। আর সেই জীবন হয়তো তোমার মতো একজন ভ্রমণপিপাসুর সঙ্গে সম্ভব নয়।”
সিমন গভীরভাবে তানিয়ার কথা শুনলেন। তাঁর চোখে হতাশার ছায়া থাকলেও মুখে একটি নরম হাসি ফুটে উঠল। “তানিয়া, আমি চাই তুমি সুখী হও। আমি জানি, আমাদের পথ আলাদা হলেও আমাদের স্মৃতিগুলো থাকবে। আমি কখনো ভুলব না, কীভাবে তুমি আমাকে শিখিয়েছ জীবনের গভীরতা বুঝতে।”
তাঁরা দু’জন চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে রইলেন। এই নীরবতা যেন দু’জনের সম্পর্কের শেষ অধ্যায়ের এক মধুর উপসংহার।
পরের দিন, তানিয়া একটি ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজে বের করলেন। একটি ফটোগ্রাফি স্টুডিওতে কাজ শুরু করলেন। তিনি অনুভব করলেন, সান ফ্রান্সিসকো যেন নতুন করে তাঁকে আলিঙ্গন করেছে। তাঁর প্রতিটি কাজেই ছিল নতুন জীবনের ছোঁয়া।
তাঁর ফটোগ্রাফির একটি প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে সিমনও উপস্থিত ছিলেন। প্রদর্শনীর প্রতিটি ছবিতেই তাঁদের যাত্রার স্মৃতি ধরা ছিল। মরুভূমির রুক্ষতা, পাহাড়ের অন্ধকার পথ, ট্রাক ড্রাইভারের সদয় মুখ—সবই যেন জীবনের নতুন রঙে রাঙানো।
সিমন এক কোণে দাঁড়িয়ে তানিয়ার ছবি দেখছিলেন। তানিয়া এগিয়ে গিয়ে বললেন, “তুমি কি জানো, এই ছবিগুলো যদি না হতো, তবে আমি আমার ভেতরের শক্তিটাকে কখনোই চিনতে পারতাম না।”
সিমন হেসে বললেন, “তুমি তো সব সময়ই শক্তিশালী ছিলে, তানিয়া। আমি শুধু তোমাকে সেটা মনে করিয়ে দিয়েছি।”
তাঁদের মধ্যে আর কোনো কথা হলো না। কিন্তু তাঁদের চোখে ছিল পরস্পরের প্রতি এক গভীর সম্মান।