বাংলা রহস্য কল্পবিজ্ঞানের গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
ভবিষ্যতের নিউ ইয়র্ক সিটি, ৩০০৫ সাল। ভবিষ্যতের এই মেগাসিটি এখন এক বৈজ্ঞানিক বিস্ময়। আকাশ ছোঁয়া টাওয়ারগুলোর মাঝখানে যেন বাতাসে ভাসমান এক প্রযুক্তির দুনিয়া। সাইবারনেটিক উন্নতি, জিনগত পরিবর্তন এবং যান্ত্রিক জীবনের মিশেলে এই শহর তার মানবিকতার বহু অংশ হারিয়ে ফেলেছে।
তবে এর মাঝেও এক অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক ভ্যালেরিয়ান, যার দৃষ্টি অতীতের স্মৃতিতে আটকে আছে। পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী ভ্যালেরিয়ান, যার চেহারায় সময়ের ছাপ আর চোখে যুদ্ধের অভিজ্ঞতার অন্ধকার। বহু বছরের মিশনে কাটানো জীবনে যে শুধুই যুদ্ধ দেখেছে, তার জীবন যেন একটা বন্ধ ফ্রেমে আটকে পড়েছে। কিন্তু যুদ্ধের পরেও তার কাছে সবচেয়ে গভীর ক্ষত এক রাতের স্মৃতি—রোমানের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের মুহূর্ত।
রোমান ছিল তার মিশনের সঙ্গী, একসাথে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সহযাত্রী। যুদ্ধক্ষেত্রের নৃশংসতার মধ্যেও রোমানের এক অদ্ভুত গুণ ছিল—একটি সাধারণ জিনিসকেও আনন্দময় করে তোলার ক্ষমতা। যুদ্ধের মধ্যে যখন এক রাতে তারা মাছ ধরেছিল, রোমান তার বিখ্যাত উখা রান্না করেছিল। সেই সুপের ঘ্রাণ তাদের দুজনকে অস্থায়ী শান্তি দিয়েছিল, যুদ্ধের নৃশংসতা থেকে সাময়িক মুক্তি। উখা যেন তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের এক প্রতীক হয়ে উঠেছিল, যে প্রতীক আজও ভ্যালেরিয়ানের মনে জীবন্ত।
রোমান ছিল প্রযুক্তির সর্বশেষ পরীক্ষা—জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে তাকে এক অসম্ভব ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। তার শরীর দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে পারত, প্রায় অমরতার কাছাকাছি। এই ক্ষমতা তাকে অসাধারণ সৈনিক করে তুললেও, ধীরে ধীরে এটি তার মনকে বদলে দিতে শুরু করে। রোমানের অহংকার আর অস্থিরতা তার ব্যক্তিত্বকে গ্রাস করতে থাকে।
ভ্যালেরিয়ান প্রথমে এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। সে বারবার রোমানকে সতর্ক করেছিল, কিন্তু রোমান তার কথা শুনতে চাইত না। সময়ের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বের গভীরতায় ফাটল ধরে। রোমান ক্রমশ তার নিজের ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, বাকি সবার থেকে দূরে সরে যেতে থাকে।
ভুতের বাংলা ছোট গল্প - মৃত্যুর হাসি: "মৃত্যুর হাসি" একটি রহস্যময় ভুতের গল্প যেখানে দুই ভাইবোনের সাহস, মায়ের আত্মার আশীর্বাদ, ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই আপনাকে টানবে। পড়ুন এই বাংলা ছোট গল্প, যা ভয় ও আবেগে ভরা। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
ক্রিমসন থ্রেড
বাংলা রহস্য কল্পবিজ্ঞানের গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
৩০০৬ সাল। “ক্রিমসন থ্রেড” মিশন ছিল এমন এক অভিযান, যা মানব ইতিহাসের এক গভীর কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এটি ছিল এমন একটি পরিকল্পনা, যেখানে বিপজ্জনক জেনেটিক অস্ত্রকে নিরস্ত্র করতে হবে, যা একবার সক্রিয় হলে পৃথিবীর এক বিশাল অংশকে ধ্বংস করে দিতে পারত। ভ্যালেরিয়ান এবং রোমান সহ সেরা সৈনিকদের একটি দল এই মিশনের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল।
তবে, মিশন শুরুর আগে থেকেই ভ্যালেরিয়ান রোমানের আচরণে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেছিল। রোমানের কথা বলার ধরণে একধরনের অস্বাভাবিক আত্মবিশ্বাস, এমনকি উদ্ধত অহংকার ফুটে উঠছিল। ভ্যালেরিয়ান বুঝতে পারছিল যে রোমানের জিনগত পরিবর্তন শুধু তার শারীরিক ক্ষমতা নয়, তার মানসিক স্থিতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
মিশনের প্রথম ভাগে, দলটি সফলভাবে শত্রুপক্ষের ঘাঁটিতে প্রবেশ করে। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় তখন, যখন রোমান তার নির্দেশ অমান্য করে নিজের সিদ্ধান্তে কাজ শুরু করে। তার চোখে তখন এক অদ্ভুত আক্রোশ, যেন সে শুধুমাত্র ধ্বংস করার জন্যই সেখানে এসেছে।
ভ্যালেরিয়ান বারবার তাকে সতর্ক করার চেষ্টা করলেও, রোমান কারও কথা শুনতে রাজি ছিল না। তার শক্তি এবং দ্রুত সেরে ওঠার ক্ষমতা তাকে এক অপ্রতিরোধ্য যোদ্ধায় পরিণত করেছিল, কিন্তু সে নিজেকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না।
রোমানের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তে দলটির মধ্যে বিভ্রান্তি এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তার অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক আচরণ পুরো মিশনকে বিপদে ফেলে দেয়। এক পর্যায়ে, শত্রুদের ফাঁদে পড়ে দলটির অধিকাংশ সদস্যই মারা যায়। ভ্যালেরিয়ান সেই মুহূর্তে বুঝতে পারে, এই মিশন কেবল শত্রুর বিরুদ্ধে নয়, রোমানের বিরুদ্ধেও এক যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।
মিশনের শেষে, ভ্যালেরিয়ান রোমানকে এক গভীর গুহার মধ্যে খুঁজে পায়। সেই গুহা, যা ওল্ড ইংল্যান্ডের ইতিহাসে এক রহস্যময় স্থান হিসেবে পরিচিত, যেন দুই প্রাক্তন বন্ধুর জন্য এক অশুভ মঞ্চ তৈরি করেছিল।
রোমান তখন সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। তার চোখে কোনো অনুশোচনা নেই, বরং একধরনের শীতল নির্দয়তা। ভ্যালেরিয়ান তাকে বোঝানোর শেষ চেষ্টা করে, কিন্তু রোমান কোনো কথাই শুনতে চায় না। তাদের মধ্যে এক ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়।
রোমানের শক্তি তার জিনগত পরিবর্তনের কারণে প্রায় অতিমানবীয়। ভ্যালেরিয়ান তার নিজের সীমিত শক্তি দিয়ে রোমানের আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। সেই সংঘর্ষে গুহার ভেতরের পাথরগুলো কেঁপে ওঠে।
ভ্যালেরিয়ান বুঝতে পারে, এই লড়াইয়ে তাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সে গুহার ছাদে থাকা একটি দুর্বল অংশ লক্ষ্য করে। পুরো গুহার ছাদ ধসে পড়ার আগে, সে শেষবারের মতো রোমানের দিকে তাকায়। রোমানের মুখে তখন এক অদ্ভুত শীতল হাসি—যেন সে জানত, এই লড়াইয়ের পরিণতি কী হতে চলেছে।
ছাদ ধসে পড়ে, রোমান পঞ্চাশ টন পাথরের নিচে চাপা পড়ে যায়। গুহার বাইরে এসে ভ্যালেরিয়ান হাঁপাতে হাঁপাতে বসে পড়ে। কিন্তু তার মনে তখন শুধু একটাই প্রশ্ন: “আমি কি তাকে বাঁচাতে পারতাম?”
এই ঘটনার পর, ভ্যালেরিয়ানের জীবন বদলে যায়। সে তার বন্ধুকে হত্যা করতে বাধ্য হয়েছে, যে একসময় তার জীবনের সবচেয়ে বড় আশ্রয় ছিল। সেই রাতে তার মনে বারবার ফিরে আসে রোমানের সেই হাসি এবং সেই কণ্ঠস্বর: “তুমি আমাকে থামাতে পারতে।”
রোমানের মৃত্যু তার কাছে শুধু একজন বন্ধুর হার নয়, বরং তার নিজের মানবিকতার এক অংশ হারানো। এই অপরাধবোধ তাকে তাড়া করে, তার প্রতিটি স্বপ্নকে এক দুঃস্বপ্নে রূপান্তরিত করে।
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - অন্তিম সন্ধ্যা: "অন্তিম সন্ধ্যা" একটি রহস্য রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প, যেখানে এক তরুণীর মৃত্যু, তার পরিবার, এবং শহরের অন্ধকারে লুকানো সত্যের খোঁজে উত্তেজনা ও মর্মস্পর্শী মুহূর্তের বুনন। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অতীতের আহ্বান
বাংলা রহস্য কল্পবিজ্ঞানের গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
৩০০৭ সাল। নিউ ইয়র্কের প্রযুক্তিপূর্ণ শহুরে জীবনের ভেতরেও ভ্যালেরিয়ানের মনের গভীরে একটি অস্থিরতা বাসা বেঁধে আছে। গত কয়েক বছর ধরে “ওল্ড ইংল্যান্ড”-এর গুজব তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। মানুষের কানে কানে খবর ছড়িয়ে পড়েছে—সেখানে একটি “প্রেতাত্মা” ঘুরে বেড়ায়, যার উপস্থিতি শুধুমাত্র রাতের বেলায় টের পাওয়া যায়। যদিও এটিকে নিছক গুজব মনে করা হয়, ভ্যালেরিয়ান এই কাহিনির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক পরিচিত নাম শুনে থমকে যায়: রোমান।
ভ্যালেরিয়ান সিদ্ধান্ত নেয়, এই রহস্যের শেষ করতে তাকে ফিরে যেতে হবে সেই জায়গায়, যেখানে সে একসময় রোমানকে চিরতরে হারিয়ে ফেলার আশা করেছিল। লজ, ওল্ড ইংল্যান্ডের এক প্রত্যন্ত ছোট্ট জনবসতি, এখনো তার নির্জনতা ধরে রেখেছে। ভ্যালেরিয়ান সেখানে পৌঁছানোর পর দেখতে পায়, স্থানীয় মানুষজন তাকে একধরনের সতর্কতা এবং ভয়ে দেখছে।
লজের এক বৃদ্ধ বাসিন্দা, মেরডক, তাকে বলে,
“তুমি কি সেই গুহার কথা শুনেছ? রাতের বেলা সেখানে যাওয়ার সাহস কোনো মানুষের নেই। সেখানে এমন কিছু আছে যা আমাদের নিয়মিত ভয় দেখায়। আমরা তাকে ‘বনভূমির প্রেত’ বলে ডাকি।”
মেরডক আরও যোগ করে,
“তোমার মতো একজন সৈনিক এলে হয়তো আমাদের এই ভয়ানক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে পারবে।”
ভ্যালেরিয়ান মৃদু হেসে জানায় যে তার উদ্দেশ্য ভিন্ন। কিন্তু তার মনের ভেতর এক প্রবল প্রশ্ন জেগে ওঠে: রোমান কি সত্যিই জীবিত?
পরের দিন সন্ধ্যায়, অস্ত্র এবং হালকা সরঞ্জাম নিয়ে, ভ্যালেরিয়ান গুহার পথে পা বাড়ায়। ওল্ড ইংল্যান্ডের বনভূমি, যা দিনে শান্তিপূর্ণ মনে হয়, রাতে যেন এক অদ্ভুত রহস্যে পরিপূর্ণ। পাখিদের ডাক থেমে যায়, বাতাসের শব্দ যেন ফিসফিসানি হয়ে ওঠে।
গুহার কাছাকাছি পৌঁছে ভ্যালেরিয়ান দেখতে পায়, জায়গাটি আগাছায় সম্পূর্ণ ঢেকে গেছে। কিন্তু তার অভিজ্ঞ চোখ খেয়াল করে, এখানে কেউ সম্প্রতি যাতায়াত করেছে। মাটিতে পায়ের ছাপ স্পষ্ট, এবং গুহার প্রবেশপথের কাছে কয়েকটি আধপোড়া মশাল পড়ে আছে।
গুহার ভেতরে ঢুকে ভ্যালেরিয়ান প্রথমেই একটা অস্বাভাবিক গন্ধ পায়—একধরনের আদ্রতা মেশানো ধোঁয়ার গন্ধ। গুহার দেয়ালে আংশিক পোড়া আঁচড়ের দাগ এবং ছিন্ন পাথর দেখেই বোঝা যায়, এখানে কেউ বসবাস করছে বা লুকিয়ে আছে।
হঠাৎ, গুহার গভীর থেকে এক অস্পষ্ট আওয়াজ ভেসে আসে।
“আমাকে মুক্তি দাও… তুমি কেন ফিরে এলে?”
ভ্যালেরিয়ান মুহূর্তের জন্য থমকে যায়। কণ্ঠস্বরটি অবিশ্বাস্যভাবে পরিচিত। এটি সেই কণ্ঠ, যা সে এত বছর ধরে তার স্বপ্নে শুনেছে। এটি রোমানের কণ্ঠস্বর।
ভ্যালেরিয়ানের মনের ভেতর হাজারো স্মৃতি ভিড় করে আসে। সেই রাত, যেখানে সে নিজের বন্ধুকে জীবন্ত সমাধিস্থ করেছিল। তার অপরাধবোধের ভার যেন আরও বাড়তে থাকে। গুহার গভীরে পা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কণ্ঠস্বর আরও পরিষ্কার হতে থাকে।
“তুমি আমাকে কেন ছেড়ে চলে গেলে, ভ্যাল?”
এই কথাগুলো তার হৃদয়ে তীরের মতো বিঁধে। ভ্যালেরিয়ান জানে, তাকে সত্যের মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু সে কীভাবে নিশ্চিত হবে—রোমান সত্যিই জীবিত, নাকি এটি তার অতীতের দুঃস্বপ্নেরই এক নতুন রূপ?
গুহার আরও ভেতরে প্রবেশ করার সময় ভ্যালেরিয়ান দেখতে পায় একটি অস্থায়ী শিবির। সেখানে একটি তামার পাত্রে উখার অবশিষ্টাংশ পড়ে আছে—একটি স্মৃতি, যা তাকে রোমানের সঙ্গে কাটানো দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়।
ভ্যালেরিয়ান শিবিরের পাশে দাঁড়িয়ে দেখে, একটি ছায়ামূর্তি তাকে লক্ষ্য করছে। মোমের আলোতে সেই মুখটি দেখা যায় না, কিন্তু তার চেহারার কাঠামো ভ্যালেরিয়ানের কাছে ভীষণ পরিচিত।
“তুমি আমাকে শেষ করতে এসেছ, নাকি বাঁচাতে?”
ভ্যালেরিয়ান কোনো উত্তর দিতে পারে না। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়ামূর্তিটি রোমান হতে পারে, কিন্তু সে নিশ্চিত নয়। তবে এতদিনের অপেক্ষার পর, তাদের মুখোমুখি হওয়া অবশ্যম্ভাবী।
প্রেতের ছায়া
বাংলা রহস্য কল্পবিজ্ঞানের গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
গুহার ভেতরের অন্ধকার যেন এক অতল গভীরতা নিয়ে বসে আছে। পায়ের তলায় পাথরের টুকরো খচখচ শব্দ করে, আর বাতাসের ভেজা গন্ধ ভ্যালেরিয়ানের নাকে লাগে। গুহার দেয়াল ধরে এগোতে এগোতে হঠাৎ সে থমকে দাঁড়ায়। দূর থেকে ভেসে আসা এক অস্পষ্ট আওয়াজ তাকে চমকে দেয়।
“ভ্যাল… তুমি ফিরে এসেছ?”
কণ্ঠস্বরটি পরিচিত, তবে যেন অনেক পাল্টে গেছে। এটি কি রোমানের? তার গভীর, দৃঢ় কণ্ঠস্বর কি এমন করুণ হয়ে যেতে পারে? ভ্যালেরিয়ানের মনের ভেতর প্রশ্নের ঢেউ উঠতে থাকে। এই কণ্ঠস্বর একদিকে ভয় জাগায়, আবার অন্যদিকে এক পুরোনো বন্ধুত্বের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে।
কণ্ঠস্বরের উৎসের দিকে এগোতে গিয়ে ভ্যালেরিয়ান নিজেকে থামিয়ে কিছুক্ষণ শ্বাস নেয়। তার হাতে ধরা ছোট্ট আলোটি গুহার দেয়ালে প্রতিফলিত হচ্ছে, কিন্তু তাতে আশপাশ আরও রহস্যময় মনে হয়। কণ্ঠস্বর আবার শোনা যায়, এবার আরও স্পষ্ট এবং করুণ।
“ভ্যাল, আমি জানি তুমি এখানে আছ। দয়া করে চলে যেও না।”
ভ্যালেরিয়ানের হৃদয় দ্রুত স্পন্দিত হয়। কণ্ঠস্বরের আড়ালে আরও কিছু লুকিয়ে আছে—একটা চাপা হাসি, এক ভয়ংকর সুর, যা তার মেরুদণ্ড দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দেয়। এটি কি রোমান, নাকি তার নিজের দুঃস্বপ্নের সৃষ্টি?
আরও কয়েক পা এগোতেই ভ্যালেরিয়ান খেয়াল করে, গুহার মেঝেতে কিছু চিহ্ন। এগুলি মানুষের পায়ের ছাপের মতো, কিন্তু অস্বাভাবিকভাবে বড়। তার অভিজ্ঞ চোখ বলে দেয়, এগুলো রোমানের পায়ের ছাপ হতে পারে, কিন্তু কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে।
অন্ধকারের গভীর থেকে আবার সেই কণ্ঠস্বর আসে, এবার তার সঙ্গে যোগ হয় এক অদ্ভুত হাসি। হাসিটি তিক্ত, ভয়ংকর, এবং অস্বাভাবিকভাবে মেশানো এক করুণতায়।
“তুমি কি আমার জন্য অনুতপ্ত, ভ্যাল? আমি এখানে একা ছিলাম। বছরের পর বছর…”
ভ্যালেরিয়ান তার বন্দুকটি শক্ত করে ধরে। তার মন বলছে এটি একটি ফাঁদ হতে পারে। রোমানের ভয়ংকর পরিণতির সাক্ষী হওয়ার পর, সে জানে রোমান আর আগের মানুষ নেই। কিন্তু এই কণ্ঠে এমন কিছু আছে, যা তার সিদ্ধান্তকে নাড়া দেয়।
গুহার আরও ভেতরে প্রবেশ করতেই এক আলোকিত জায়গা দেখা যায়। মাটিতে ছড়ানো মোমবাতি, দেয়ালে আঁকিবুঁকি, এবং মাঝখানে একটি ছায়ামূর্তি। ছায়াটি ধীরে ধীরে ঘুরে ভ্যালেরিয়ানের দিকে মুখ করে।
রোমান। কিন্তু তার মুখে সেই পুরোনো আত্মবিশ্বাস আর নেই। তার চোখগুলো অদ্ভুতভাবে জ্বলজ্বল করছে, যেন সেই চোখের ভেতর কোনো অন্ধকার শক্তি কাজ করছে। তার মুখে করুণ এক হাসি, কিন্তু সেই হাসির আড়ালে লুকিয়ে আছে এক গভীর রহস্য।
রোমান ফিসফিস করে বলে, “তুমি আমাকে শেষ করতে এসেছ, তাই না?” তুমি কি জানো আমি এখানে কীভাবে বেঁচে ছিলাম?”
ভ্যালেরিয়ান কোনো উত্তর দেয় না। তার হাতের বন্দুকের দিকে তাকায়, কিন্তু সেটা ব্যবহার করার সাহস হয় না। রোমানের এই দুর্বল অবস্থাও তার জন্য ভীতিপ্রদ।
“তুমি আমাকে এখানে রেখে গিয়েছিলে, ভ্যাল। আমি চেয়েছিলাম মুক্তি, কিন্তু তুমি আমাকে শাস্তি দিলে।”
রোমানের কণ্ঠে একদিকে অভিমান, অন্যদিকে এক অদ্ভুত স্বীকারোক্তি। ভ্যালেরিয়ান দ্বিধাগ্রস্ত। তার ভেতরের অপরাধবোধ আর বাস্তবতার সংঘর্ষ তাকে অসাড় করে দেয়।
ভ্যালেরিয়ান শেষ পর্যন্ত ফিসফিস করে বলে, “আমি জানি, রোমান, আমি জানি আমি ভুল করেছিলাম। কিন্তু তুমি যা হয়ে গিয়েছ, তা ঠিক নয়।”
রোমান হঠাৎ হাসতে শুরু করে। সেই হাসি আবারও ভ্যালেরিয়ানের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
“তুমি কি জানো, ভ্যাল? আমার ভেতরে এখন এমন কিছু আছে, যা আমাকে তোমার থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী করেছে।”
ভ্যালেরিয়ান জানে, সে যদি এখন ভুল পদক্ষেপ নেয়, তবে এই পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হতে পারে। কিন্তু সে জানে, রোমানকে তার মুখোমুখি হতে হবে—একজন বন্ধু, একজন শত্রু, এবং অতীতের এক দুঃস্বপ্ন।
গুহার গভীরে এগোতে এগোতে ভ্যালেরিয়ান তার অতীতের স্মৃতির সাথে বর্তমান মিশ্রিত হতে দেখে। রোমানের আকৃতি, তার অস্পষ্ট চোখ, ভ্যালেরিয়ানের কাছে বাস্তব ও বিভ্রমের মাঝখানে এক অদ্ভুত অবস্থানে থাকে। এমনকি রোমান নিজেও একটি পরিবর্তিত চরিত্রে পরিণত হয়েছে, তার মানবিকতার শেষ চিহ্ন হারিয়েছে।
ভ্যালেরিয়ান শেষবার রোমানের মুখোমুখি দাঁড়ায়। কিন্তু এই যুদ্ধে কোনো অস্ত্র কাজে লাগে না। বরং, এটি হয় মানসিক শক্তি ও দোষমুক্তির জন্য একটি যুদ্ধ। ভ্যালেরিয়ানকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়—সে কি রোমানকে ক্ষমা করবে, নাকি তাকে শেষবারের মতো ধ্বংস করবে?
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - স্বপ্নের সাথী: "স্বপ্নের সাথী" একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে প্রেমের জটিলতা, বিচ্ছেদ ও পুনর্মিলন খুঁজে পাওয়া যায়। হৃদয়স্পর্শী সম্পর্কের গভীরতা ও নতুন সূচনার গল্প। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
বন্ধুত্ব ও দোষমুক্তি
বাংলা রহস্য কল্পবিজ্ঞানের গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
গুহার ভিতরে মোমের আলো ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে। ভ্যালেরিয়ান ও রোমানের মুখোমুখি হওয়ার মুহূর্তে সময় যেন স্থির হয়ে গিয়েছিল। ভ্যালেরিয়ানের মনে বারবার প্রশ্ন জেগেছে: রোমান কি বাস্তব, নাকি তার নিজের অপরাধবোধের অবিচ্ছেদ্য অংশ?
রোমান সামনের দিকে এগিয়ে আসে, তার চেহারায় পুরোনো বন্ধুত্বের ছায়া ও এক ভয়াবহ পরিবর্তনের ছাপ। তার কণ্ঠস্বর নরম হলেও ভেতরে লুকিয়ে আছে এক অদ্ভুত শক্তি।
রোমান বলে, তার চোখে অপার্থিব এক জ্যোতি, “তুমি আমাকে এখানে ফেলে গিয়েছিলে, ভ্যাল, তুমি কি জানো, এই গুহার দেয়ালগুলো আমাকে কত কথা বলেছে? তারা আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে বেঁচে থাকতে হয়, কিন্তু সেই বেঁচে থাকা আমার সবকিছু বদলে দিয়েছে।”
ভ্যালেরিয়ান, তার হাতে বন্দুক ধরে, চুপচাপ শুনতে থাকে। রোমানের প্রতিটি কথা তার বুকের ভেতর একধরনের ব্যথা সৃষ্টি করে।
“তুমি কি জানো, ভ্যাল, আমি এখানে একা থাকতে থাকতে বুঝেছি, মানুষ তার নিজের পাপের ভার ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে নিয়ে যায় না।”
ভ্যালেরিয়ানের মনে পুরোনো স্মৃতিগুলো একের পর এক জেগে ওঠে। যুদ্ধক্ষেত্রের সেই বিভীষিকা, রোমানের পরিবর্তনের প্রতিটি মুহূর্ত, এবং সেই চূড়ান্ত সংঘর্ষ যখন সে তার বন্ধুকে এই গুহায় আটকে দিয়েছিল।
ভ্যালেরিয়ান ফিসফিস করে বলে “আমি জানি আমি তোমাকে ফেলে এসেছিলাম। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম, এর কোনো আর পথ নেই।”
রোমান হেসে ওঠে, সেই হাসি যেন গভীর অন্ধকার থেকে উঠে আসে, “তুমি কি ভেবেছিলে, আমি তোমাকে ক্ষমা চাইব? অথবা তুমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে?”
ভ্যালেরিয়ানের মনে তখন আরও বড় প্রশ্ন উঠে আসে। রোমান কি সত্যিই তার সামনে দাঁড়িয়ে, নাকি এই পুরো ব্যাপারটাই তার মানসিক অস্থিরতার সৃষ্টি? সে নিজের হাতে বন্দুকের দিকে তাকায়। এটা তার কাছে বাস্তব, কিন্তু রোমানের অস্তিত্ব কি তেমনই বাস্তব?
ভ্যালেরিয়ান ধীরে ধীরে জিজ্ঞাসা করে, “তুমি আসলেই এখানে আছ?”
রোমান হাসে, “তুমি কি বিশ্বাস কর, ভ্যাল? আমি কি তোমার পাপের মূর্তি, নাকি তোমার প্রাক্তন বন্ধু? সেটাই আসল প্রশ্ন।”
ভ্যালেরিয়ান ধীরে ধীরে বন্দুক নামিয়ে রাখে, “আমি জানি না তুমি কে, রোমান। কিন্তু আমি জানি, আমি ভুল করেছি। আমি জানি, আমার ভয় আমাকে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।”
রোমান এগিয়ে আসে। তার চোখে যেন একধরনের প্রশান্তি ফুটে ওঠে, “ভ্যাল, ক্ষমা চাওয়ার জন্য সাহস লাগে। কিন্তু ক্ষমা পাওয়ার জন্য তোমাকে নিজেকে ক্ষমা করতে হবে।”
রোমান ধীরে ধীরে ম্লান হতে থাকে, যেন তার পুরো উপস্থিতি মোমের মতো গলে যাচ্ছে। ভ্যালেরিয়ান চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যায়।
“তুমি কোথায় যাচ্ছ, রোমান?” সে চিৎকার করে।
রোমানের কণ্ঠস্বর আবার ভেসে আসে, এবার আরও দূর থেকে।
“আমি এখানে ছিলাম, ভ্যাল, যতক্ষণ না তুমি নিজেকে মেনে নিতে শেখো। এবার সময় এসেছে তোমার নিজের পথ খুঁজে নেওয়ার।”
গুহার ভেতরের সব আলো নিভে যায়, আর ভ্যালেরিয়ান একা দাঁড়িয়ে থাকে। তার মনের ভেতর শান্তির একটি অনুভূতি কাজ করে, যা বহু বছর ধরে সে অনুভব করেনি। এই মুহূর্তে, সে বুঝতে পারে, রোমান হয়তো বাস্তব ছিল, হয়তো ছিল না। কিন্তু তার আসল যুদ্ধ ছিল নিজের ভেতরের দানবের সঙ্গে। গুহা থেকে বেরিয়ে আসার সময় ভ্যালেরিয়ান আকাশের দিকে তাকায়। তার মনে হয়, সে নিজেকে কিছুটা হলেও ক্ষমা করতে পেরেছে। এই গুহা তাকে নতুন এক জীবনের শুরু করার সুযোগ দিয়েছে। তারপর, গুহার বাইরে পাখির ডাক শুনতে শুনতে ভ্যালেরিয়ান ধীরে ধীরে “ওল্ড ইংল্যান্ড” ছেড়ে বেরিয়ে যায়, জীবনের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করার জন্য।