"মৃত্যুর হাসি" একটি রহস্যময় ভুতের গল্প যেখানে দুই ভাইবোনের সাহস, মায়ের আত্মার আশীর্বাদ, ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই আপনাকে টানবে। পড়ুন এই বাংলা ছোট গল্প, যা ভয় ও আবেগে ভরা।

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » মৃত্যুর হাসি

মৃত্যুর হাসি

"মৃত্যুর হাসি" একটি রহস্যময় ভুতের গল্প যেখানে দুই ভাইবোনের সাহস, মায়ের আত্মার আশীর্বাদ, ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই আপনাকে টানবে। পড়ুন এই বাংলা ছোট গল্প, যা ভয় ও আবেগে ভরা।

আমাদের WA চ্যানেল জয়েন করুন

এই মাসের সেরা ভুতের ছোট গল্প, পড়ুন ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন – ঝড়ের রাত

বাংলা ভুতের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

নন্দনপুর গ্রামের এক কোণে সোনা-রঙা ধানের ক্ষেতে ঢেউ খেতে খেতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ছিল এক ছোট্ট দোতলা বাড়ি। বাড়িটির চারপাশে ছিল শান্ত পরিবেশ, দূরে দেখা যেত গাছপালায় ঘেরা ছোট একটি পুকুর। এই বাড়িতেই বাস করত দুই ভাই-বোন, রবি আর ছবি। রবি ছিল ১২ বছরের এক চঞ্চল আর অভিমানী ছেলে। তার দৌড়ঝাঁপ, হাসি-ঠাট্টা, আর নানা রকম কৌতূহল তাকে গ্রামের সবার মাঝে একটু আলাদা করে তুলেছিল। অন্যদিকে, ৮ বছরের ছবি ছিল শান্ত, নির্লিপ্ত এবং নিজের জগতে ডুবে থাকা এক মেয়ের মতো। কিন্তু তাদের শৈশবের রঙিন দিনগুলো বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।

ছবির জন্মের দিনই তাদের মা পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। মায়ের মৃত্যুর সেই দিনটি যেন রবির মনে এক অমোচনীয় ক্ষতের দাগ এঁকে দেয়। তাদের বাবা, বিমলবাবু, দুই সন্তানকে নিয়ে একা সংসার চালানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু গ্রামের লোকজন আর আত্মীয়স্বজনের চাপ সহ্য করতে না পেরে তিনি কয়েক মাসের মধ্যেই মায়াকে বিয়ে করেন। নতুন মা আসার পরই দুই ভাই-বোনের জীবনে দুঃখের অন্ধকার মেঘ জমতে শুরু করে।

মায়া ছিল নিষ্ঠুরতার এক জীবন্ত প্রতীক। তার নিজের কোনো সন্তান ছিল না, কিন্তু সৎ সন্তানদের প্রতি তার ব্যবহার যেন কোনো পুরোনো প্রতিশোধ নেওয়ার মতো। রবির প্রতিটি কাজ তার চোখে ভুল ছিল। সে যতই চেষ্টা করুক না কেন, মায়ার মুখে একটিবারের জন্যও প্রশংসার কথা শোনা যেত না। আর ছবি—ছোট্ট, মায়াবী ছবির অবস্থা ছিল আরও করুণ। সে যেন মায়ার চোখে কেবল এক বোঝা, এক ভুলের প্রতীক।

প্রতিদিন মায়ার কড়া কথার ঝড়ে ছবি ধীরে ধীরে আরও নির্লিপ্ত হয়ে পড়ত। তার চোখে জমে থাকা অশ্রু যেন চিরকালীন সঙ্গী হয়ে গিয়েছিল। রাতে, জানালার পাশে দাঁড়িয়ে, চাঁদের আলোয় সে কোনো এক অজানা আশার সন্ধান করত। সেই ছোট্ট মনের ভেতরে ছিল এক অদ্ভুত আশা—হয়তো একদিন এই দুঃখের অন্ধকার কেটে যাবে, আর সূর্যের আলোয় তাদের জীবনে ফিরবে নতুন দিনের গল্প।

গ্রামের নীরব সন্ধ্যা। পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়েছে, আর তার শেষ আলো ধানের ক্ষেতে সোনা রঙা আভা ছড়িয়ে দিয়েছে। এমন সময় গ্রামের এক কোণে এসে হাজির হলেন এক বৃদ্ধা মহিলা। তাঁর পরনে মলিন শাড়ি, হাতে একটি পুরনো লাঠি। তাঁর চোখে এক প্রকার গভীর বিষাদ, আর কণ্ঠে অদ্ভুত এক রহস্যময় সুর। বাড়ির বাইরে বসে থাকা রবি আর ছবি তাঁকে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে গেল।

মহিলা ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে বললেন, “তোমরা জানো না, তোমাদের মা সাবিত্রী কত গুণে গুণান্বিতা ছিল। সে শুধু তোমাদের মা নয়, এই পুরো গ্রামের গর্ব ছিল। এক সময় গ্রামজুড়ে বিখ্যাত ছিল সে—জাদুকরী চিকিৎসক বলে সবাই তাকে জানত। তার স্পর্শে মানুষ সেরে উঠত, তার কথায় সব দুঃখ দূর হয়ে যেত। কিন্তু তার চলে যাওয়ার পর যেন সব বিদ্যা অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। এখন সে শুধু তোমাদের জীবনের নয়, এই গ্রামেরও এক গভীর শূন্যতার প্রতীক।”

বৃদ্ধার কথা শুনে ছবির বুকের ভেতর এক অদ্ভুত শিহরণ জেগে উঠল। তার ছোট্ট হৃদয়ে এই প্রথম এমন এক অনুভূতি এল, যা আগে কখনও হয়নি। মা সম্পর্কে এত কিছু শোনার পর, তার দুঃখের সাথে মিশে গেল এক ধরনের নতুন কৌতূহল আর তীব্র আকাঙ্ক্ষা।

রবি, পাশে বসে থাকা, মায়ার কঠোরতার তিক্ত অভিজ্ঞতায় ইতিমধ্যেই অনেক কিছু শিখে নিয়েছে। সে বৃদ্ধার কথাগুলো শুনে বিষণ্ণ চেহারায় ছবির দিকে তাকাল। ছবির চোখে তখন এক ধরনের অদম্য আলো ফুটে উঠেছিল। সেই আলো যেন বলতে চাইছিল—“আর নয়। এখন সময় এসেছে নিজের পথ খোঁজার।”

ছবি দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “আমরা পালিয়ে যাব। এখানে আর এক মুহূর্তও থাকতে পারব না। আমাদের নিজের পথ নিজেরা তৈরি করতে হবে।”

রবি প্রথমে অবাক হয়ে তাকাল। তার চোখে ভয় আর দ্বিধার মিশ্র প্রতিচ্ছবি। কিন্তু ছবির চোখে যে নতুন দৃঢ় সংকল্পের ঝলক দেখা গেল, তা রবিকে চুপ করে মানিয়ে নিতে বাধ্য করল।

রাতের অন্ধকারে, দুই ভাই-বোন একসঙ্গে বসে একটি নতুন সূচনা করার সংকল্প করল। আজকের রাতই তাদের জীবনে নতুন অধ্যায়ের শুরু। অজানা পথের দিকে পা বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে, এই বিশ্বাসে তারা নিজেদের শক্ত করল।

রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - অন্তিম সন্ধ্যা: "অন্তিম সন্ধ্যা" একটি রহস্য রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প, যেখানে এক তরুণীর মৃত্যু, তার পরিবার, এবং শহরের অন্ধকারে লুকানো সত্যের খোঁজে উত্তেজনা ও মর্মস্পর্শী মুহূর্তের বুনন। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

দ্বিতীয় অধ্যায়: অরণ্যের অন্ধকার

বাংলা ভুতের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

রবি আর ছবি অরণ্যের গহিন পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছিল। মায়ার হাত থেকে মুক্তি পেতে তাদের এই পালানো একমাত্র উপায় ছিল, কিন্তু সেই পথে নেমে এসেছিল গভীর রাতের ভয়াবহতা। চারপাশে কেবল অন্ধকার, যেন সমস্ত পৃথিবী গিলে নেওয়ার জন্য মুখ খুলে আছে। গাছগুলির লম্বা ছায়া চাঁদের ক্ষীণ আলোতে ক্রমে বড় হয়ে উঠে এমন আকার নিচ্ছিল, যেন তারা জীবন্ত হয়ে ছুটে আসবে।

বাতাস থেমে গিয়েছিল, আর তার পরিবর্তে অজানা শিসের শব্দ কানে ভেসে আসছিল। গাছের পাতার মৃদু সরসর শব্দ, শ্বাপদের দূর থেকে আসা হালকা গর্জন আর পায়ের তলায় শুকনো পাতার মচমচ শব্দ মিলেমিশে অরণ্যের নিস্তব্ধতাকে আরও ভারী করে তুলেছিল। 

রবি হঠাৎ থমকে দাঁড়াল। তার মনে হচ্ছিল কেউ তাদের পিছু নিয়েছে। তার ঘাড়ের পেছনে যেন একটি ঠাণ্ডা নিঃশ্বাসের স্পর্শ অনুভব করছিল, কিন্তু ঘুরে দেখার সাহস হচ্ছিল না। ছবি তার হাত শক্ত করে ধরল। “দাদা, আমরা কোথায় যাচ্ছি? এখান থেকে বের হওয়া কি আদৌ সম্ভব?” ছবির কণ্ঠে আতঙ্ক স্পষ্ট হয়ে উঠল। 

কিন্তু রবিরও কোনো উত্তর ছিল না। তার মনে হচ্ছিল যে এই বনের গভীরতা তাদের গিলে খাবে। তবে পিছু হটার উপায় ছিল না। তারা দু’জনই জানত, মায়ার কাছে ফিরে যাওয়ার চেয়ে এই ভয়ংকর অরণ্যে পথ হারানোই ভালো।

হঠাৎই তাদের চোখে পড়ল এক পুরনো বাড়ির ছায়া। বাড়িটি মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের মতো লাগছিল। তার দেয়ালে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসা শিকড়গুলো যেন বিশাল অন্ধকার হাত হয়ে বাড়িটিকে আঁকড়ে ধরে আছে। ছবির পা এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল। তার বুকের ভেতর একটি অজানা শ্বাস আটকে গেল। 

“ওটা… বাড়ি?” ছবি ফিসফিস করে বলল। তার চোখে মিশে ছিল ভয় আর কৌতূহল। রবি কিছু না বলে বাড়িটির দিকে এগিয়ে গেল। বাড়ির ছাদ থেকে চাঁদের আলো ঠিকরে পড়ছিল, আর জানালার ভাঙা কাঁচগুলো যেন তাদের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠছিল। বাতাসে ভেসে এল এক তীব্র, পচা গন্ধ। 

ছবি আস্তে আস্তে রবির পিছু নিল। বাড়িটির দরজায় পৌঁছে তারা থেমে দাঁড়াল। “দাদা, আমরা কি এখানে ঢুকব?” ছবির কণ্ঠে এক অদ্ভুত শীতলতা। তার ছোট্ট চোখ দুটি অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছিল, ভয়ে এবং অজানা কৌতূহলে। বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে, তার মনে হচ্ছিল যেন কিছু একটা তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে—একটি অদৃশ্য হাত, যা তাকে জানাতে চায় এই বাড়ির মধ্যে লুকিয়ে থাকা গভীর রহস্য।

রবি সামনের দিকে তাকিয়ে বলল, “এটা আমাদের একমাত্র আশ্রয়। আর কোথাও যাওয়ার উপায় নেই।” তার কণ্ঠে দৃঢ়তার আভাস থাকলেও চোখে ছিল দ্বিধা। সামনের ভাঙাচোরা দরজার দিকে তাকিয়ে তার বুকের মধ্যে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল। মনে হচ্ছিল এই বাড়ি শুধু একটি কাঠামো নয়, বরং এক বিশাল জীবন্ত সত্তা, যা তাদের আগমনের অপেক্ষায় ছিল।

বাড়ির দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই একটি বিষাক্ত, পচা গন্ধ তাদের নাকে আঘাত করল। গন্ধটি এমন ছিল যেন বহু বছর ধরে মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকা পাতা, সোঁদা মাটি আর মৃত্যুর নিঃশ্বাস মিলে এক ভয়ংকর পরিবেশ তৈরি করেছে। দেয়াল থেকে প্লাস্টার খুলে পড়ছিল, আর মেঝের ফাটলে জঙ্গল গজিয়ে উঠেছিল।

“ছবি, আমার হাতটা শক্ত করে ধর,” রবি বলল। তার গলায় ছিল এক ধরনের সতর্কতা। বাড়ির ভেতরের অন্ধকার যেন তাদের চুপচাপ গিলে নিচ্ছিল। তারা পা ফেলার সাথে সাথে মেঝে কাঁপতে লাগল।

ছবি একপাশে রাখা একটি ভাঙা চেয়ারের দিকে তাকিয়ে থাকল। চেয়ারটির উপরে ধুলো জমে ছিল, কিন্তু তার চেয়ে বেশি ছিল এক ধরনের অদৃশ্য দাগ, যা যেন অতীতের কোনো ভয়ঙ্কর মুহূর্তের সাক্ষী। ছবির গলা শুকিয়ে এল।

“তুই কি বুঝতে পারছিস?” রবি ফিসফিস করে বলল।

ছবি মাথা নেড়ে বলল, “এখানে কিছু একটা আছে। আমি জানি। হয়তো আমাদের মায়ের কিছু… কিছু…”

তার কথা শেষ হওয়ার আগেই, বাড়ির ভেতর থেকে এক ফিসফিসে শব্দ ভেসে এল। শব্দটি ঠিক স্পষ্ট নয়, কিন্তু এমন ছিল যেন কেউ গভীরভাবে শ্বাস নিচ্ছে। রবি আর ছবি থেমে গেল। তাদের দেহ শীতল হয়ে গেল, যেন কেউ তাদেরকে পেছন থেকে দেখছে।

“দাদা, আমরা কি ভুল করছি?” ছবি আবার ফিসফিস করল।

রবি কোনো কথা বলল না। তার মন বলছিল কিছু একটা ঠিক নয়। কিন্তু পিছু হটার উপায়ও ছিল না। অন্ধকারে ঢুকে, তারা বাড়িটির আরো গভীরে প্রবেশ করল। এই বাড়ির দেয়ালে, মেঝেতে, এমনকি বাতাসেও, যেন মৃত্যুর ছায়া বাস করছিল।

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - স্বপ্নের সাথী: "স্বপ্নের সাথী" একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে প্রেমের জটিলতা, বিচ্ছেদ ও পুনর্মিলন খুঁজে পাওয়া যায়। হৃদয়স্পর্শী সম্পর্কের গভীরতা ও নতুন সূচনার গল্প। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

তৃতীয় অধ্যায়: ভুলে যাওয়া জাদু

বাংলা ভুতের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

বাড়ির ভেতরের অন্ধকার যেন জীবন্ত ছিল—প্রতিটি দেয়াল থেকে ভেসে আসছিল শ্বাসরুদ্ধকর নিস্তব্ধতা। রবি আর ছবি ধীরে ধীরে ঘরের ভেতরে পা রাখল। বাতাস ভারী, যেন কোনো অজানা দুঃস্বপ্ন তাদের গিলে খেতে চায়। ঘরের কোণায় একটা পুরোনো আয়না দাঁড়িয়ে ছিল, ধুলোয় ঢাকা, তবুও রহস্যময়।

ছবি ধীরে ধীরে আয়নার সামনে এগিয়ে গেল। তার শ্বাস ভারী হয়ে এল, ঠোঁট শুকিয়ে উঠল। আয়নায় তাকাতেই সে নিজের প্রতিবিম্বের বদলে দেখল এক অচেনা মহিলার মুখ—চোখ ভরা বেদনা, ঠোঁটে চাপা হাসি। মুহূর্তের মধ্যে মহিলার ঠোঁট নড়ল, যেন কিছু বলতে চাইছে।

ছবি ভয়ে চিৎকার করে উঠল, “দাদা!” তার চিৎকার ঘরের অন্ধকারে প্রতিধ্বনিত হয়ে হারিয়ে গেল। রবি ছুটে এল, আর আয়নায় তাকিয়ে তার দম বন্ধ হয়ে গেল।

ঘরের বাতাসে এক ধরনের অজানা শীতলতা। রবি মেঝেতে পড়ে অজ্ঞান, আর ছবি আয়নার সামনে কাঁপতে কাঁপতে দাঁড়িয়ে। দরজা হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেল, যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি তাদের পালানোর পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে।  

ছবি ভয়ে দিশেহারা হয়ে দরজার দিকে দৌড়ে যেতে চাইল, কিন্তু পায়ের তলা যেন আটকে গেল। হঠাৎ আয়না থেকে একটি মৃদু, অথচ স্পষ্ট কণ্ঠ ভেসে এলো, “পালাস না, আমি তোর মা, সাবিত্রী।”  

ছবি হতবাক। কাঁপা গলায় বলল, “মা? এটা কীভাবে সম্ভব? তুমি তো…”  

“হ্যাঁ, আমি চলে গেছি,” কণ্ঠটি স্নেহময় হলেও তাতে এক ধরনের বিষণ্ণতার ছোঁয়া ছিল। “কিন্তু আমি সবসময় তোদের সঙ্গে ছিলাম, দেখেছি সবকিছু। মায়া তোদের জীবনটা কীভাবে নরক বানিয়েছে।”  

ছবি এক পা পিছিয়ে এসে বলল, “তুমি…তুমি সত্যি আমার মা?”  

এই সময়, সাবিত্রী আত্মা আয়না থেকে বেরিয়ে এলো। তার অবয়বটা ঝাপসা, তবু ছবির কাছে তা পরিচিত এবং স্নেহময়। ছবির চোখ ভিজে উঠল। “মা!” বলে সে কাঁদতে শুরু করল।  

সাবিত্রী আত্মা ধীরে ধীরে ছবির কাছে এসে তার গালে আলতো করে হাত রাখল। “তুই খুব কষ্ট পেয়েছিস, জানি। কিন্তু এখন আর ভয় পাবি না। আমি তোদের বাঁচাব।”  

এমন সময় রবি মেঝেতে নড়েচড়ে উঠল। জ্ঞান ফিরতেই প্রথমেই তার চোখ পড়ল মায়ের আত্মার দিকে। সে চমকে উঠে চিৎকার করতে চাইল, কিন্তু গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না।  

“রবি, ভয় পাস না,” সাবিত্রী শান্ত কণ্ঠে বলল, “আমি তোর মা।”  

রবি শ্বাস নিল গভীরভাবে। “মা! এটা সত্যি তুমি? কিন্তু তুমি তো মরে গেছ!”  

“হ্যাঁ, আমি মরে গেছি, কিন্তু আমি তোদের ছেড়ে যেতে পারিনি। তোদের প্রতিটা কষ্ট আমি দেখেছি।”  

রবি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। ভয়ের বদলে তার চোখে এক ধরনের দৃঢ়তা দেখা গেল। “মা, ছোট মা আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করেছে। আমরা পালানোর চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু…”  

“আমি সব জানি,” সাবিত্রী বলল, তার কণ্ঠে ক্রোধ ফুটে উঠল। “মায়া তার এই কাজের শাস্তি পাবে। কিন্তু তার আগে তোদের একটা জিনিস জানতে হবে। তোদের জীবন শুধু মায়ার হাতে নয়। এই বাড়িতে এমন কিছু আছে, যা তোদের রক্ষা করবে। এবং গ্রামের মানুষের উপকারে আসবে।”  

ছবি বিস্মিত হয়ে বলল, “কী আছে, মা? তুমি কী বলতে চাইছ?”  

“চল, তোদের দেখাই,” সাবিত্রী বলল।  

সাবিত্রী তাদের বাড়ির আরেকটি ঘরের দিকে নিয়ে গেল। ঘরটি অনেক দিন বন্ধ ছিল। দরজাটি খুলতেই ভেতরে অদ্ভুত এক পরিবেশ। মেঝেতে ধুলো জমে গেলেও ঘরের মাঝখানে একটি পুরনো কাঠের বাক্স ছিল।  

রবি একটু দ্বিধায় জিজ্ঞাসা করল, “এটা কী?”  

সাবিত্রী বলল। “এর মধ্যে এমন কিছু আছে, যা তোদের রক্ষা করবে।”  

ছবি ধীরে ধীরে বাক্সটির কাছে এগিয়ে গেল। রবি তার পাশে দাঁড়াল। বাক্সের ঢাকনা খুলতেই ঘরের মধ্যে এক অদ্ভুত আলো ছড়িয়ে পড়ল। বাক্সের মধ্যে ২টা তাবিজ ও একটা পুরোনো পুঁথি ছিল। ছবির চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল।

“এটা এমন এক জিনিস, যা তোদের শক্তি দেবে। মায়ার অত্যাচারের শেষ করার সময় এসেছে,” সাবিত্রী বলল, তার কণ্ঠ দৃঢ়।  

রবি ও ছবির চোখে ভয়ের বদলে এক ধরনের আশা আর সাহস দেখা দিল। এই প্রথম তারা অনুভব করল যে, তারা আর একা নয়।

ছোটদের রূপকথার গল্প - ইঁদুরের রাজত্ব: "ইঁদুরের রাজত্ব" একটি মজার ও শিক্ষামূলক ছোটদের গল্প। পনির ও ইঁদুরের চাহিদার মজার রূপকথার গল্প যা শিশুদের কল্পনার জগতে ভ্রমণ করাবে ও জীবনের ছোট ছোট শিক্ষা দেবে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

চতুর্থ অধ্যায়: ফিরে যাওয়া

বাংলা ভুতের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

সূর্যের প্রথম আলো ঘরের ভেতর ঢুকতে শুরু করেছে। সাবিত্রী তার ছেলে-মেয়েদের তাবিজটি গলায় পরিয়ে দিয়ে বলল, “এই তাবিজ যতক্ষণ তোদের সাথে থাকবে, কেউ তোদের ক্ষতি করতে পারবে না। যদি মায়া আবার তোদের মারতে আসে বা অত্যাচার করতে চায়, তবে সে অবশ হয়ে যাবে।”

ছবি কিছুটা কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “মা, এই তাবিজ কি সত্যি কাজ করবে?”

সাবিত্রী মৃদু হেসে বলল, “পাগলি মেয়ে, মায়ের কথা কখনো ভুল হয়? তোর জন্য তো জীবনে যা করিনি তাই করলাম। এখন এই তাবিজ তোদের রক্ষা করবে।”

সঙ্গে একটি পুরনো পুঁথি এগিয়ে দিয়ে সাবিত্রী বলল, “এই পুঁথিতে অনেক গোপন চিকিৎসার পদ্ধতি লেখা আছে। তোরা বড় হলে পড়ে বুঝতে পারবি। তবে সাবধানে রাখিস, এই পুঁথি অনেক মূল্যবান।”

ছবি উদ্বিগ্ন মুখে বলল, “যদি ছোট মা এটা নষ্ট করে দেয়?”

সাবিত্রী দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দিল, “এই পুঁথি মন্ত্রপূত। তোরা দুজন ছাড়া আর কেউ এর ক্ষতি করতে পারবে না।”

রবি এবার ভেজা চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “মা, আমরা তোদের ছাড়া থাকতে পারব না। তুমি আমাদের সাথে বাড়ি চলো।”

সাবিত্রী চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল। কয়েক মুহূর্তের নীরবতার পর বলল, “তা হয় না, পাগল ছেলে। আমি তো আত্মা। আত্মা বাড়িতে থাকলে ভালো হয় না। তবে তোরা যদি কখনো আমাকে দেখতে চাস, সন্ধ্যের পর এই বাড়িতে চলে আসিস।”

ছবি কেঁদে উঠল, “মা, তুমি আবার আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছ?”

সাবিত্রী তাদের দুজনকে কাছে টেনে নিল। মায়ের হাতে সেই চেনা স্নেহের স্পর্শে তাদের চোখে জল চলে এল। “তোমাদের জন্য সবসময় আশীর্বাদ থাকবে। সাহসী হও, ভালো থেকো। এখন তোরা বাড়ি যা।”

রবি আর ছবি তাদের মা’র গলা জড়িয়ে ধরল। সাবিত্রী তাদের আদরে ভরিয়ে দিল। তারপর অশ্রুভরা চোখে বিদায় জানাল।

বাড়ি ফেরার পথে, রবি আর ছবি পুঁথি আর তাবিজ শক্ত করে ধরে রাখল। বাড়িতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে দেখে লোকজন চারপাশে জড়ো হয়েছে। তাদের বাবা বিপিন বাবু উদ্বিগ্ন মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ছেলে-মেয়েকে সুস্থভাবে দেখে তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

ঠিক তখনই মায়া তাদের দিকে তেড়ে এলো। তার চোখে আগুনের মতো রাগ। “আজ তোদের শেষ করে দেব!” চিৎকার করে সে রবির দিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে গেল।

কিন্তু হঠাৎই মায়া থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। তার শরীর শক্ত হয়ে গেল, এবং এক মুহূর্ত পর মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ল।

ছবি আর রবি বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিল। তারপর হঠাৎ দুজনে একসঙ্গে হাসি ফেলে দিল।

ছবি বলল, “মা ঠিকই বলেছিল। এই তাবিজ আর পুঁথি আমাদের রক্ষা করবে।”

রবি বলল, “হ্যাঁ, আর মা’র আশীর্বাদ তো আমাদের সঙ্গে আছেই।”

তারা পুঁথিটা আলমারির ভেতর সাবধানে রেখে দিল। এই প্রথমবার তারা অনুভব করল, তাদের জীবনে এক নতুন ভোরের সূচনা হয়েছে। ভয় আর অন্ধকারের সেই ছায়া যেন চিরদিনের মতো দূর হয়ে গেছে।

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

আমরা কারা

নতুন বাংলা ছোট গল্প

আষাঢ়ের সন্ধ্যে

"আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়।

"আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: আষাঢ়ের সন্ধ্যে

শীতের রাজ্যের জাদু

"শীতের রাজ্যের জাদু: একটি মজাদার ছোটদের গল্প, যেখানে রাজা শীতল রূপকথার গল্পের মাধ্যমে শিশুদের জন্য শীতের রাজ্যে গরমের অনুভূতি এনে দেন।"

"শীতের রাজ্যের জাদু: একটি মজাদার ছোটদের গল্প, যেখানে রাজা শীতল রূপকথার গল্পের মাধ্যমে শিশুদের জন্য শীতের রাজ্যে গরমের অনুভূতি এনে দেন।"

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: শীতের রাজ্যের জাদু

স্নেহের আশ্রয়

"স্নেহের আশ্রয়" একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ভালোবাসা ও যত্নের শক্তি দুটি বিপন্ন শিশুর জীবন বদলে দেয়। এটি অতীতের স্মৃতি ও মানবতার এক হৃদয়স্পর্শী উপাখ্যান।

"স্নেহের আশ্রয়" একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ভালোবাসা ও যত্নের শক্তি দুটি বিপন্ন শিশুর জীবন বদলে দেয়। এটি অতীতের স্মৃতি ও মানবতার এক হৃদয়স্পর্শী উপাখ্যান।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: স্নেহের আশ্রয়

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!