প্রথম অধ্যায়: জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির রহস্যময় খুন
কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি—একসময়ের কাব্যিক আলো-আঁধারিতে ভরা স্থাপত্য, এখন যেন কেবলই এক নিস্তব্ধ আর শীতল স্মৃতির আধার। ভাঙাচোরা দরজা-জানালা, দেওয়ালের ফাটল, আর ধুলো জমা মেঝে; বাড়িটি যেন নিজেরই গল্প বলতে চাইছে। সেই রাতে, চারদিকে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। বাইরে চাঁদের ক্ষীণ আলো জমির ঘাসে ছড়িয়ে পড়েছে। বাড়ির ভিতরে অন্ধকার, তবে যেন অন্ধকারের গভীরে কিছু একটা লুকিয়ে ছিল—একটা অজানা উপস্থিতি, যা নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেয়।
সেই রাতে বাড়িটির ভেতরে প্রবেশ করেছিল সোহম। একজন তদন্তকারী সাংবাদিক, যে চিরকাল রহস্যের পেছনে ছুটে বেড়ায়। কয়েকদিন আগেই সে এক অদ্ভুত ফোন পেয়েছিল। ফোনের ওপারের কণ্ঠটি কাঁপছিল, “জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, সেখানে গিয়ে সত্যিটা খুঁজে বার কর।”
সেই ফোনকলের উৎস খুঁজতে গিয়ে সোহম বাড়িটির সামনে এসে পৌঁছায়। হাতে ছিল একটি মোমবাতি, আর মনের ভেতর কেবলই উত্তেজনা আর ভয় মিশ্রিত এক অনুভূতি। ঠাকুরবাড়ির বড় লোহার গেট ঠেলে ভেতরে ঢুকে সে চারদিকে তাকাল। ধুলো জমা কারুকার্যময় দেওয়ালের ফাঁক দিয়ে হাওয়া ঢুকে অদ্ভুত এক শীতলতা এনে দিচ্ছিল।
ঘরের ভেতর ঢুকে সোহম হঠাৎই থমকে দাঁড়ায়। তার চোখ চলে যায় ঘরের মাঝখানে। সেখানে নিথর হয়ে পড়ে আছে মিতালি বসুর মৃতদেহ। মিতালি, শান্তিনিকেতনের শিক্ষিকা, যার প্রশংসা সর্বত্র শোনা যেত। তার রক্তাক্ত শাড়ি মেঝের সাথে লেপ্টে আছে, আর গলায় গভীর ক্ষত—যেন কেউ তাকে প্রথম শ্বাসরোধ করে পরে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
সোহম ধীরে ধীরে মৃতদেহের দিকে এগিয়ে যায়। তার চোখে সন্দেহ আর ভয়। এই মৃত্যু শুধু একটা দুর্ঘটনা নয়, এটা কোনো গভীর ষড়যন্ত্রের ফল। হঠাৎ সে খেয়াল করে ঘরের এক কোণে কেউ বসে আছে। মোমবাতির আলোয় এক মেয়েকে দেখে চমকে ওঠে।
সোহম বিস্ময়ে বলে ওঠে, “পিয়া! তুমি এখানে?”
পিয়া, সোহমের ছোটবেলার বন্ধু। শান্তিনিকেতনের শিল্পকলার ছাত্রী। সে বরাবরই সাহসী মেয়ে ছিল, কিন্তু এখন তাকে দেখে সেই সাহসের ছিটেফোঁটাও বোঝা যায় না। পিয়া ভয়ে কুঁকড়ে বসে আছে, ঠোঁট কাঁপছে, কিন্তু কোনো কথা বলছে না। তার চোখে যেন এক গভীর আতঙ্ক।
“তুমি এখানে কী করছ, পিয়া? কী হয়েছে এখানে?” সোহম তার দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে। কিন্তু পিয়া কোনো উত্তর দেয় না। তার হাত কাঁপছে, আর চোখ বারবার মৃতদেহের দিকে চলে যাচ্ছে।
হঠাৎ, ঘরের কোণে একটা অদ্ভুত শব্দ শোনা যায়। সোহম পিছনে ফিরে তাকায়। কোনো মানুষ নয়, তবে এমন কিছু যেন সেখানে লুকিয়ে আছে। মোমবাতির শিখা কেঁপে ওঠে। ঠাকুরবাড়ির অন্ধকার যেন আরও ঘন হয়ে আসে।
সোহম এবার চারপাশ ভালো করে দেখতে শুরু করে। মিতালির হাতের কাছে একটা ছোট্ট চিরকুট পড়ে আছে। কাগজটা রক্তে ভিজে গেছে, কিন্তু কিছুটা লেখা পড়া যায়। তাতে লেখা: “আমার বিশ্বাসঘাতকই আমার মৃত্যু…”
সোহম সেই লেখা পড়েই বুঝে যায়, এই মৃত্যু কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এর পেছনে লুকিয়ে আছে এক গভীর ষড়যন্ত্র। আর সেই ষড়যন্ত্রের জাল কোথাও না কোথাও পিয়ার সাথে জড়িত।
“পিয়া কি সত্যিই কোনো রহস্য জানে? নাকি সে শুধুই এই ঘটনার এক শিকার? আর মিতালির মৃত্যু কেন? কে তাকে হত্যা করল?” এইসব প্রশ্ন সোহমকে চিন্তিত করে তুলল।
ঘরের নিস্তব্ধতা ভেঙে সোহম বলে ওঠে, “এই রহস্যের সমাধান করতেই হবে। পিয়া, তুমি আমার সাথে কথা বলো। আমরা একসাথে এই ভয়ংকর রাতের রহস্য ভেদ করব।”
কিন্তু তার কথার উত্তরে পিয়া শুধু চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার চোখের গভীরে একটা এমন অনুভূতি লুকিয়ে থাকে যা সোহমকে আরও বিভ্রান্ত করে।
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - রক্তকলমের রহস্য: "রক্তকলমের রহস্য" একটি রহস্য রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প, যেখানে সোনা ও কিং একটি অভিশপ্ত রক্তমাখা কলমের ভয়ানক সত্য উন্মোচন করে। গল্পে রহস্য, ভৌতিক থ্রিল এবং সাহসিকতার সমাহার। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
দ্বিতীয় অধ্যায়: মৃত্যুর পেছনের অজানা গল্প
ঘরের নিস্তব্ধতা ভেঙে সোহমের মৃদু কণ্ঠ জিজ্ঞেস করল, “পিয়া, আমাকে সব বলো। তুমি এখানে কেন? কী ঘটেছে?”
পিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে শুরু করল, “আমি মুম্বাই থেকে কয়েকদিন আগেই কলকাতায় এসেছি। মিতালি দিদি আমায় ডেকেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমার বাবার মৃত্যু নিয়ে তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে। আমি আর অপেক্ষা করতে পারিনি। এত বছর ধরে বাবার মৃত্যু নিয়ে যে প্রশ্নগুলো আমাকে কুরে কুরে খেয়েছে, তার উত্তর পাওয়ার জন্য আমি কলকাতায় চলে এলাম।”
সোহম তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকাল। পিয়ার চোখে ক্লান্তি আর মানসিক যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট। সে ধীরে ধীরে বলতে থাকল, “আমার বাবা, অজিত দত্ত, ঠাকুরবাড়ির মালি ছিলেন। আমার ছোটবেলা কেটেছে এই বাড়ির চারপাশে। বাবা আমাদের একমাত্র ভরসা ছিলেন। কয়েক বছর আগে, এক রাতে, বাবা এই বাড়িতেই মারা যান। পুলিশ বলেছিল, ওটা দুর্ঘটনা। কিন্তু আমি কখনোই সেটা বিশ্বাস করতে পারিনি। বাবার মৃত্যু পরিকল্পিত, এটা আমি জানতাম। কিন্তু প্রমাণ করার মতো কিছুই আমার হাতে ছিল না।”
পিয়া তখন এক মুহূর্ত থেমে জোরে নিঃশ্বাস নিল। সোহম শান্তভাবে শুনছিল। পিয়া আবার বলতে শুরু করল, “মিতালি দিদি বাবার মৃত্যুর রহস্য জানতেন। তিনি আমায় বলেছিলেন, তিনি সত্যিটা জানেন এবং কিছু প্রমাণও তার কাছে আছে। আমি আর দেরি করিনি। মুম্বাই থেকে তড়িঘড়ি করে কলকাতায় এসে তার সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।”
“আর আজ রাতে?” সোহম জিজ্ঞাসা করল।
পিয়া যেন আরও বেশি ভয়ে সঙ্কুচিত হয়ে গেল। “আমি আজ রাতেই ঠাকুরবাড়িতে এসেছিলাম। মিতালি দিদি বলেছিলেন, রাতে এখানে আসতে। তিনি বলেছিলেন, দিনের আলোয় এটা করা নিরাপদ নয়। আমি ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই যা দেখলাম… ওটা ভুলতে পারব না। মিতালি দিদি মেঝেতে পড়ে ছিলেন, নিথর। তার শাড়ি রক্তে ভেজা, আর গলায় গভীর ক্ষত। আমি এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম যে প্রথমে বুঝতেই পারিনি কী করব। ঘরটা পুরো অন্ধকার ছিল, কেবল জানালা দিয়ে চাঁদের আলো পড়ছিল।”
পিয়া থেমে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “আমি পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখনই বুঝতে পারলাম, কেউ একজন এখানে ছিল। ঘরের কোনায় একটা ছায়া দেখেছিলাম। সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল, সেই মানুষটা এখনো এখানেই আছে। কিন্তু অন্ধকার আর ভয়ের মধ্যে আমি আর কিছু করতে পারিনি। আর তারপরই তুমি এসে পড়লে।”
সোহম চুপচাপ শুনছিল, কিন্তু তার মন উত্তাল হয়ে উঠছিল। অজিত দত্তের রহস্যজনক মৃত্যু, মিতালি বসুর আকস্মিক মৃত্যু, আর এই ঠাকুরবাড়ির অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা কোনো ছায়া—এই সমস্তকিছু যেন একটা বড় ষড়যন্ত্রের অংশ।
সোহম এবার দৃঢ় গলায় বলল, “তাহলে এটা নিশ্চিত যে মিতালি দিদির কাছে এমন কিছু ছিল, যা কেউ চায়নি প্রকাশ পাক। সেই তথ্যই তার মৃত্যুর কারণ। আর তোমার বাবার মৃত্যু… সেটাও এই রহস্যের সাথে জড়িত।”
পিয়া অসহায় গলায় বলল, “কিন্তু আমার এখন কী করা উচিত, সোহম? আমি ভয় পাচ্ছি। যদি তারাও আমার পেছনে আসে?”
সোহম পিয়ার দিকে তাকিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “তুমি একা নও, পিয়া। আমি আছি। আমরা একসঙ্গে এই রহস্যের শেষ দেখে ছাড়ব। তবে আগে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, মিতালি দিদির সেই প্রমাণটা কোথায়। যা-ই হোক না কেন, সত্যিটা সামনে আনতেই হবে।”
ঠাকুরবাড়ির অন্ধকারে যেন এক অদ্ভুত শীতল বাতাস বয়ে গেল। কোথাও যেন দরজার কব্জি থেকে আওয়াজ এল, আর দূর থেকে শোনা গেল একটা ঘুঙুরের মৃদু শব্দ। পিয়া ভয়ে সোহমের কাছে সরে এল। সোহম তার দিকে তাকিয়ে বলল, “এটা সহজ হবে না, কিন্তু আমাদের শুরু এখান থেকেই করতে হবে। আজ রাতটা খুব দীর্ঘ হবে।”
সোহমের মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরছিল—যে ছায়া পিয়া দেখেছিল, সেটা কি শুধুই তার ভয়? নাকি সত্যিই ঠাকুরবাড়ির এই অন্ধকারে কেউ লুকিয়ে আছে, সত্যটাকে চিরদিনের জন্য মুছে ফেলার জন্য অপেক্ষা করছে?
তৃতীয় অধ্যায়: গোপন তথ্য আর একটি ডায়েরি
পুলিশের উপস্থিতি ঠাকুরবাড়ির ভয়াল পরিবেশকে আরও গম্ভীর করে তুলল। ঘরের কোণে মিতালি বসুর রক্তাক্ত দেহ এবং ভীতসন্ত্রস্ত পিয়া—পুরো দৃশ্য যেন কোনও পুরনো, ভৌতিক রহস্য উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে এসেছে। সোহম আর পিয়া একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল, পুলিশ কর্মকর্তারা পুরো বাড়িটা পরীক্ষা করছিলেন। একজন অফিসার, যিনি নিজেকে এসআই অরিন্দম ঘোষ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন, অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সম্পন্ন ছিলেন। তার নেতৃত্বে তল্লাশি শুরু হয়।
একটি পুরনো টেবিলের পাশ থেকে একজন কনস্টেবল একটি ছেঁড়া ডায়েরির পাতা উদ্ধার করে। পৃষ্ঠাটি রক্তে ভেজা ছিল এবং তাতে একটি মাত্র নাম স্পষ্টভাবে লেখা ছিল—“সুধাংশু”। নামটি দেখে পিয়া চমকে ওঠে।
“সুধাংশু? এই নাম তো আমি শুনেছি!” পিয়া কাঁপা গলায় বলল।
অরিন্দম তার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি কী জানো সুধাংশু সম্পর্কে?”
পিয়া নিজের স্মৃতিতে হাতড়াতে গিয়ে বলল, “সুধাংশু ঠাকুরবাড়ির প্রাক্তন কর্মচারী ছিলেন। আমার বাবা, অজিত দত্ত, তার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, বাবার মৃত্যুর পরে সুধাংশুও কোথায় যেন উধাও হয়ে যায়। আমরা তখন অনেক খুঁজেছিলাম, কিন্তু তার কোনো সন্ধান পাইনি।”
অরিন্দম মনোযোগ দিয়ে শুনলেন এবং পৃষ্ঠাটি হাতে নিয়ে গভীরভাবে পরীক্ষা করলেন। ডায়েরির পৃষ্ঠায় একটি পুরনো লেনদেনের কিছু বিবরণও লেখা ছিল। সেই লেখাগুলো খুব অস্পষ্ট ছিল, কিন্তু মূল বিষয়টি স্পষ্ট ছিল—ঠাকুরবাড়ির জমি নিয়ে একটি বড়সড় ঝামেলা এবং কিছু গোপন লেনদেন।
“এই জমি নিয়ে ঝামেলা কিসের?” অরিন্দম এবার পিয়ার দিকে প্রশ্ন করলেন।
পিয়া গভীর চিন্তায় ডুবে বলল, “বাবা একবার বলেছিলেন, ঠাকুরবাড়ির কিছু জমি নিয়ে মালিক পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। তারা একটি গোপন নথি তৈরি করেছিল, যেখানে এই লেনদেনের বিবরণ ছিল। বাবা সম্ভবত সেই নথি দেখে ফেলেছিলেন।”
এই বক্তব্য শুনে সোহম বলল, “তাহলে কি সম্ভব, মিতালি বসু সেই গোপন নথির সম্পর্কে কিছু জানতেন? আর সেই কারণেই তাকে খুন করা হয়েছে?”
অরিন্দম চিন্তিত মুখে বললেন, “এটা একদমই সম্ভব। তবে এর জন্য আরও প্রমাণ দরকার।”
পুলিশ তদন্ত চালাতে চালাতে আরও কিছু সূত্র খুঁজে পায়। একটি পুরনো অ্যালমিরার ড্রয়ার থেকে উদ্ধার হয় একটি রক্তের দাগযুক্ত কাঁচি। সেটি পরীক্ষা করার জন্য আলাদা করে রাখা হয়। এছাড়াও, তারা একটি পুরনো চিঠি খুঁজে পায়, যেখানে লেখা ছিল, “সত্যটা প্রকাশ হলে আমরা সবাই শেষ হয়ে যাব।” চিঠিটি কার লেখা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
তদন্তের সময় উঠে আসে ঠাকুরবাড়ির প্রায় সকলের নাম। প্রত্যেকেই কোনও না কোনও ভাবে মিতালি বসু এবং অজিত দত্তের জীবনের সাথে যুক্ত। সবচেয়ে বড় সন্দেহের তীর তখন সুধাংশুর দিকে।
“সুধাংশুকে খুঁজে বের করা অত্যন্ত জরুরি,” অরিন্দম দৃঢ় কণ্ঠে বললেন। “তিনি অজিতের মৃত্যুর সময় বাড়িতে ছিলেন, এবং এখন মিতালি বসুর খুনের সাথে তার নাম জড়িয়েছে।”
কিন্তু সুধাংশু তো উধাও। পুলিশ খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারে, অজিতের মৃত্যুর কয়েকদিন পর সুধাংশু হঠাৎ করেই কলকাতার একটি পুরনো বস্তি ছেড়ে চলে যান। একজন বৃদ্ধ দোকানদার জানালেন, সুধাংশু খুব অস্থির অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন এবং যাওয়ার সময় বলেছিলেন, “আমি আর ফিরব না। ওরা আমাকেও শেষ করে দেবে।”
পিয়া এসব শুনে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তার মনে হতে থাকে, তার বাবার মৃত্যুর রহস্য এবং মিতালির খুনের কারণ যেন একই সূত্রে বাঁধা।
তল্লাশির শেষ পর্যায়ে এসে পুলিশ ঠাকুরবাড়ির পেছনের বাগানের মাটিতে কিছু তাজা খননের চিহ্ন পায়। সেখানে আরও তল্লাশি চালানো হবে বলে জানায়।
সোহম পিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “পিয়া, তুমি ভেবেও দেখতে পারছ না, তুমি ঠিক কতটা বিপদের মধ্যে আছ। এটা শুধু জমি আর নথি নয়। এখানে আরও বড় কিছু রয়েছে।”
পিয়া কাঁপা গলায় বলল, “কিন্তু সোহম, এখন আমি কী করব?”
সোহম দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “তুমি যাই করো না কেন, সত্যিটা সামনে আনতেই হবে। মিতালিদির মৃত্যু শুধু একটি ঘটনা নয়। এটা বহু দিনের লুকানো ষড়যন্ত্রের ফল। আমরা একসঙ্গে এই রহস্য ভেদ করব।”
ঠাকুরবাড়ির অন্ধকার যেন আরও ভারী হয়ে উঠল। দূর থেকে শোনা গেল কাকের কর্কশ ডাক। বাড়ির নিস্তব্ধ পরিবেশে নতুন করে আতঙ্কের ছায়া নেমে এল। কিন্তু প্রশ্ন থেকে গেল—সুধাংশু কোথায়? আর তিনি কি সত্যিই এই ঘটনার মূল চাবিকাঠি?
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - অধরা জীবন: অজিত মিত্র, একজন অসফল লেখক, তার নামের একজন খ্যাতিমান লেখকের সাথে দেখা করেন। ঈর্ষায় অন্ধ হয়ে, সে তার জীবন চুরি করার চেষ্টা করে। কিন্তু তার কি ভাগ্য সঙ্গ দেবে? – রহস্য রোমাঞ্চে ভরা এক বাংলা গল্প! সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
চতুর্থ অধ্যায়: গোয়েন্দা অশ্বিনী সেনের কৌশল
অশ্বিনী সেন, গোয়েন্দা বিভাগের অভিজ্ঞ এবং কুখ্যাতভাবে তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন একজন অফিসার, তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ঘটনাস্থল এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপর নজরদারি শুরু করেন। ঠাকুরবাড়ির প্রাচীন, ভগ্ন পরিবেশ যেন তার জন্য একটি জীবন্ত পাজল হয়ে উঠেছিল।
অশ্বিনীর প্রথম পদক্ষেপ ছিল বাড়ির মালিকদের মুখোমুখি হওয়া। বাড়ির বর্তমান মালিক দেবাংশু ঠাকুর এবং তার দুই ছেলে, অনিরুদ্ধ এবং সৌমিত্র, তাদের বংশের গর্বের কথা বললেও ঘটনাচক্রে রহস্যের প্রতি অস্বাভাবিকভাবে উদাসীন ছিলেন।
“আপনারা কি জানেন, অজিত এবং মিতালি বসুর মৃত্যুর সাথে আপনার পরিবারের কিছু সম্পর্ক থাকতে পারে?” অশ্বিনী প্রশ্ন করলেন।
দেবাংশু কপট হাসি দিয়ে বললেন, “আপনার কথার ভিত্তি কী? আমাদের পরিবারের সম্মান হেনস্থা করার অধিকার আপনার নেই।”
অশ্বিনী জবাব দিলেন, “আপনার পরিবারের সম্মান হেনস্থা হবে কিনা তা সত্য উদঘাটনের পরই বোঝা যাবে। আপাতত, আমি সত্য জানতে আগ্রহী।”
অশ্বিনীর চাপের মুখে, ঠাকুরবাড়ির এক বৃদ্ধ কর্মচারী, বামন ঘোষাল, ভয়ে সত্য ফাঁস করেন। তার কথা শোনার পর যেন গল্পের দিক আরও জটিল হয়ে উঠল।
“স্যার, আমি অনেকদিন ধরে এই বাড়িতে কাজ করছি। সুধাংশু এবং অজিত ঠাকুরবাড়ির জমি নিয়ে তৈরি হওয়া সেই গোপন নথি সম্পর্কে জানতেন। সেই নথিতে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, বাড়ির মালিকরা বেআইনিভাবে জমি বিক্রি করে প্রচুর টাকা উপার্জন করছিলেন। কিন্তু এই লেনদেন প্রকাশ হলে বড় বিপদ হত।”
“আর সেই কারণেই কি অজিতকে হত্যা করা হয়?” অশ্বিনী তীক্ষ্ণ চোখে জিজ্ঞাসা করলেন।
বামন মাথা নত করে বললেন, “হ্যাঁ স্যার। ওরা অজিতদাকে বিষ দিয়ে মেরেছিল। আর সুধাংশুকে ভয় দেখিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। আমি চুপ ছিলাম, কারণ আমি নিজের প্রাণ বাঁচাতে চেয়েছিলাম।”
বামনের এই স্বীকারোক্তি পুরো তদন্তকে নতুন দিশা দেয়। দেবাংশুর দুই ছেলে অনিরুদ্ধ এবং সৌমিত্রের নাম আরও সন্দেহজনক হয়ে ওঠে। অশ্বিনী জানতে পারেন, মিতালি বসুও সেই গোপন নথি সম্পর্কে জানতেন এবং তিনি সম্ভবত পিয়াকে বিষয়টি জানাতে চেয়েছিলেন। তার ফলেই তাকে খুন করা হয়।
একটি পুরনো কাগজপত্রের দোকানে তল্লাশি চালিয়ে অশ্বিনী সেই গোপন নথির কিছু অংশ উদ্ধার করেন। নথিতে বাড়ির জমি বিক্রির বেআইনি চুক্তি এবং কিছু বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম উল্লেখ ছিল।
অশ্বিনী দেবাংশুর পরিবারকে চাপে ফেলার জন্য একটি চালাকি করেন। তিনি তাদের জানান, পুলিশের হাতে সমস্ত প্রমাণ পৌঁছে গেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটি শুনে অনিরুদ্ধ অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং তার বাবার বিরুদ্ধে মুখ খোলে।
“বাবা আমাদের বাধ্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই নথি ধ্বংস না করলে আমাদের সবার জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে। অজিতদা এবং মিতালিদি তো শুধু সেই নথি সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন। তারা যদি চুপ থাকতেন, তাহলে এত বড় ঘটনা ঘটত না।”
অশ্বিনী তীক্ষ্ণ স্বরে বললেন, “তাহলে মিতালির হত্যাকারী কে?”
অনিরুদ্ধ ফিসফিস করে বলল, “সুধাংশু। আমরা তাকে ভয় দেখিয়ে পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু সে ফিরে এসেছিল মিতালির সাথে যোগাযোগ করতে। মিতালি সম্ভবত তাকে সহযোগিতা করেছিলেন। আমরা জানি না, কিন্তু সুধাংশুই এই বাড়িতে এসেছিল।”
পুলিশ সুধাংশুকে খুঁজে বের করার চেষ্টা শুরু করে। অশ্বিনী নিশ্চিত হন যে, সুধাংশুই পুরো ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। সুধাংশুর সঙ্গে মিতালির সম্পর্ক এবং তাদের সহযোগিতার কারণ জানার জন্য তদন্ত আরও গভীরে চলে যায়।
এদিকে, দেবাংশুর পরিবার মিথ্যে এবং প্রতারণার জাল দিয়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু অশ্বিনীর তীক্ষ্ণ মেধা এবং ধৈর্য্যের সামনে তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছিল।
ঠাকুরবাড়ির প্রাচীন অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সত্য ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছিল। তবে রহস্যের শেষ অধ্যায় এখনও বাকি। সুধাংশু কোথায়? তিনি কি মিতালির খুনে সরাসরি যুক্ত? নাকি এই ঘটনার পেছনে আরও গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে?
পঞ্চম অধ্যায়:হত্যাকাণ্ডের সমাধান
গোয়েন্দা অশ্বিনী সেন ঠাকুরবাড়ির কেস নিজের কৌশলে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সুধাংশুর খোঁজ এখনও মেলেনি, কিন্তু ঘটনাগুলো একটার পর একটা পরিস্কার হতে শুরু করেছিল। ঠাকুরবাড়ির পরিবেশ ছিল অস্বাভাবিক শান্ত, কিন্তু সেই শান্তির আড়ালে লুকিয়ে ছিল তীব্র ভয় আর ষড়যন্ত্রের ছায়া।
অশ্বিনী ধীরে ধীরে মিতালির হত্যার পিছনের কাহিনী পুনর্গঠন করতে থাকেন। তিনি মিতালির ব্যক্তিগত জিনিসপত্র থেকে একটি টুকরো চিঠি উদ্ধার করেন, যেখানে লেখা ছিল:
“আমি আর চুপ থাকতে পারব না। সুধাংশু যা দেখেছে, তা আমিও জানি। এই সত্য বাইরে আনতে হবে, নইলে কেউই নিরাপদ নয়।”
চিঠির এই টুকরোটি তাকে আরও দৃঢ় করল যে, মিতালি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সত্য প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সত্যের ওজন এতটাই ভারী ছিল যে, তার জন্য তাকে প্রাণ দিতে হল।
অশ্বিনী তার টিমকে নির্দেশ দেন, মিতালির হত্যার রাতে ঠাকুরবাড়ির আশেপাশে কারা ছিল তার খোঁজ করতে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই রাতে একটি অপরিচিত লোককে বাড়ির কাছাকাছি ঘুরতে দেখা গিয়েছিল। স্থানীয় এক চায়ের দোকানের মালিক জানায়, লোকটির চেহারা ভীতিকর ছিল এবং সে রাতের দিকে কিছু সময় সেখানে বসে ছিল।
“আপনি তার চেহারার কোনো বিবরণ দিতে পারবেন?” অশ্বিনী জিজ্ঞাসা করেন।
দোকানদার মাথা চুলকিয়ে বলল, “একটু লম্বা ছিল, দাড়ি ছিল। আর তার হাতের একটা আঙুলে অদ্ভুত বড়ো একটা আংটি পড়া ছিল।”
এই বর্ণনা শুনে অশ্বিনী সন্দেহ করেন, এটি হয়তো একজন ভাড়াটে খুনি হতে পারে। তিনি শহরের অপরাধজগতের কিছু পুরনো রেকর্ড খুঁজে দেখেন এবং একটি নাম খুঁজে পান: রণজিৎ শর্মা, এক কুখ্যাত ভাড়াটে খুনি, যে একই ধরণের অপরাধে জড়িত।
এদিকে, সুধাংশু সম্পর্কে আরও তথ্য জোগাড় করতে অশ্বিনী তার পুরনো সহকর্মীদের খোঁজ নেন। একজন জানান, সুধাংশু কয়েক বছর আগে অজিতের সঙ্গেই কাজ করত এবং তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল। অজিত তার জীবনের শেষ কয়েকদিনে বেশ অস্থির ছিলেন এবং সুধাংশুকে কিছু বলতে চেয়েছিলেন।
“সুধাংশু জানত যে, ঠাকুরবাড়ির মালিকেরা বেআইনি জমি বিক্রির কাজে জড়িত,” অশ্বিনী নিজেই বুঝতে পারলেন। তিনি মনে মনে ভাবলেন, “সে হয়তো অজিতকে সতর্ক করতে চেয়েছিল। কিন্তু অজিত সেই গোপন লেনদেনের নথি দেখে ফেলার পর তার মৃত্যু পরিকল্পিত হয়ে ওঠে।”
অশ্বিনী মিতালির মৃত্যু নিয়ে আরও গভীরে খোঁজ করেন। তিনি দেখেন, মিতালির ফোনের কললিস্টে একটি অদ্ভুত নাম পাওয়া যায়—সুরেশ দত্ত, একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। তিনি জানতে পারেন, সুরেশ দত্ত ঠাকুরবাড়ির জমির কেনাবেচার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। মিতালি তাকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলেন, এবং সম্ভবত তাকে এই বেআইনি কার্যকলাপ বন্ধ করতে বলেছিলেন।
সুরেশ দত্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, “মিতালি আমাকে হুমকি দিচ্ছিল। সে বলেছিল, এই জমি লেনদেনের কথা প্রকাশ করবে। আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সে কথা শুনল না।”
“তাহলে আপনি তাকে খুন করানোর জন্য রণজিৎ শর্মাকে পাঠিয়েছিলেন?” অশ্বিনী সপাটে প্রশ্ন করেন।
সুরেশ রাগান্বিত হয়ে চুপ থাকেন।
অশ্বিনী আরও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মিতালির পর পিয়াও তাদের টার্গেট ছিল। পিয়া তার বাবার হত্যার সত্য উদঘাটনে অদম্য ছিল, এবং মিতালি তার সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। ঠাকুরবাড়ির মালিকেরা জানত, যদি পিয়া এই রহস্য ফাঁস করে, তাহলে তাদের জন্য বড়ো বিপদ আসবে।
তারা ঠিক করেছিল, পিয়াকেও মিতালির মতো সরিয়ে দিতে হবে। সেই রাতে, যখন পিয়া ঠাকুরবাড়িতে আসে, রণজিৎ তাকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পিয়ার বন্ধুরা তাকে অনুসরণ করেছিল এবং সোহম ঘটনাস্থলে সময়মতো পৌঁছে গিয়ে তাকে বাঁচায়।
অশ্বিনী এখন নিশ্চিত, ঠাকুরবাড়ির জমি নিয়ে বেআইনি লেনদেনই এই সমস্ত হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ। কিন্তু এখনও কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে:
১. সুধাংশু কোথায় এবং তিনি কি এখনও জীবিত?
২. গোপন নথির সম্পূর্ণ কপি কি এখনও কোথাও লুকিয়ে আছে?
৩. ঠাকুরবাড়ির মালিকদের আসল উদ্দেশ্য কী?
ঠাকুরবাড়ির প্রতিটি দেয়াল যেন একটি করে অন্ধকার গল্প লুকিয়ে রেখেছে। অশ্বিনী জানেন, সত্য উদঘাটনের জন্য আরও গভীরে নামতে হবে। কিন্তু সত্যের পথেই লুকিয়ে আছে নতুন বিপদ।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - রোমাঞ্চকর সন্ধ্যে: "রোমাঞ্চকর সন্ধ্যে" একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে দুই প্রাক্তন বন্ধু, অভিজিৎ ও পল্লবী, আবার একে অপরকে খুঁজে পায় এবং ভালোবাসার চিরন্তন প্রতিশ্রুতি দেয়। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
ষষ্ট অধ্যায়: শেষে ন্যায়ের বিজয়
গোয়েন্দা অশ্বিনী সেন তার দল নিয়ে ঠাকুরবাড়ির রহস্যের সমস্ত দিক এক এক করে উন্মোচন করছিলেন। বাড়ির মালিকদের জেরা করতে করতে তিনি তাদের অস্বস্তিতে ফেলতে থাকেন। মালিকপক্ষের মুখোমুখি হয়ে তিনি কাগজপত্র, সাক্ষ্য, এবং তথ্যের জাল তৈরি করেছিলেন, যা দিয়ে বেরিয়ে আসে মূল ষড়যন্ত্রের আসল রূপ।
ঠাকুরবাড়ির মালিক, সোমেশ্বর ঠাকুর এবং তার ভাই যোগেশ্বর, অনেকদিন ধরেই বেআইনি জমি বিক্রি এবং দখলদারি নিয়ে কৌশল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু অজিত তাদের কালো লেনদেনের সমস্ত গোপন তথ্য জেনে ফেলেছিলেন। তার হত্যার পরিকল্পনা ছিল তাদের একটি পূর্বপরিকল্পিত কাজ। কিন্তু মিতালির একান্ত জেদ তাদের সীমানা ছাড়িয়ে যায়। মিতালি নিজের জীবন বাজি রেখে সত্য প্রকাশ করার চেষ্টা করছিলেন, যা তাদের কাছে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
জেরায় একসময় সোমেশ্বর চাপ সহ্য করতে না পেরে ফাঁস করেন, “অজিত আমাদের বাধা দিয়েছিল। আমরা তাকে থামাতে বাধ্য হয়েছি। সুধাংশুও আমাদের পথে ছিল। তাকে সরিয়ে রাখার জন্য ভয় দেখিয়ে দূরে পাঠানো হয়েছিল।”
অশ্বিনী শীতল গলায় প্রশ্ন করেন, “মিতালির কী দোষ ছিল? সে তো কেবল তার বাবার মৃত্যুর বিচার চেয়েছিল। তাকে কেন মেরে ফেললেন?”
যোগেশ্বর উত্তর দেয়, “ও যদি কথা বলত, তাহলে আমরা ধ্বংস হয়ে যেতাম। আমরা শুধু নিজেদের বাঁচাতে চেয়েছিলাম।”
অশ্বিনী সেনের টিম অবশেষে সুধাংশুকে একটি ছোট গ্রাম থেকে খুঁজে বের করে। সে সেখানে গা ঢাকা দিয়ে থাকছিল, নিজের জীবনের ভয়ে। তাকে থানায় নিয়ে এসে জেরা করলে সে এক মর্মান্তিক সত্য ফাঁস করে।
সুধাংশু বলেন, “আমি দেখেছিলাম, কীভাবে অজিতকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছিল। আমি চেয়েছিলাম মিতালিকে সাহায্য করতে, কিন্তু আমি নিজেই তখন ভয়ে কাঁপছিলাম। আমি জানতাম, একদিন না একদিন ওরা আমাকেও শেষ করে দেবে।”
সুধাংশুর দেওয়া বিবৃতি মালিকপক্ষের অপরাধের শেকড় আরও গভীর করে তোলে।
ভাড়াটে খুনি রণজিৎ শর্মাকেও অবশেষে ধরা হয়। তাকে জেরা করে জানা যায়, মিতালিকে হত্যার জন্য তাকে ভাড়া করা হয়েছিল। সে স্বীকার করে, “আমি শুধু আদেশ পালন করেছি। ওরা আমাকে বলেছিল, মিতালি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।”
মিতালির মৃত্যুর জন্য বিচার এবং পিয়ার বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে অশ্বিনী সেন আদালতে সমস্ত প্রমাণ পেশ করেন। আদালত বাড়ির মালিক সোমেশ্বর এবং যোগেশ্বর ঠাকুরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। রণজিৎ শর্মার মতো ভাড়াটে খুনিও কড়া শাস্তি পায়।
পিয়া চোখের জলে বলে, “আমার বাবার এবং মিতালির জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তাদের আত্মা এখন শান্তি পাবে।”
এই তদন্তের পর ঠাকুরবাড়ি যেন আরও বেশি নিঃশব্দ হয়ে যায়। জোড়াসাঁকোর এই ঐতিহাসিক বাড়ি সাক্ষী হয়ে থাকে এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র এবং ন্যায়ের জন্য এক সাহসী লড়াইয়ের।
গোয়েন্দা অশ্বিনী সেন একটি পুরনো পাথরের দিকে তাকিয়ে নিজের মনেই বলেন, “এই বাড়ি অনেক গল্প লুকিয়ে রেখেছে। আজ আমরা শুধু একটি গল্পের সমাপ্তি টানলাম। কিন্তু এখানকার প্রতিটি দেয়াল যেন আরও কিছু ফিসফিস করে বলছে।”
ঠাকুরবাড়ি আবারও নিঃশব্দে ডুবে যায়, কিন্তু এই রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনা ইতিহাস হয়ে থেকে যায়—ন্যায়ের জন্য এক নির্ভীক লড়াইয়ের নিদর্শন।