সোনাময়ী রায়, বন্ধুমহলে যিনি সোনা নামে পরিচিত, ছিলেন এক স্বপ্নবিলাসী মেয়ে। কলকাতার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হলেও, তার চিন্তাভাবনা আর কল্পনার জগৎ ছিল বহুদূর বিস্তৃত। ছোটবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি তার ছিল অসীম টান। গল্প পড়তে পড়তে তিনি নিজেই একদিন গল্পকার হয়ে উঠবেন, এমন এক স্বপ্ন লালন করতেন। লেখালেখির প্রতি তার অনুরাগ এতটাই গভীর ছিল যে স্কুলজীবন থেকেই নিজের ডায়েরিতে নানা রকম কাহিনি লিখতেন। তবে, সেই কাহিনিগুলোর মধ্যে যেন কিছু একটা অপূর্ণতা ছিল, যা তাকে সবসময় ভাবায়।
কলেজজীবনে এসে সোনা ঠিক করেন, তিনি একজন পেশাদার লেখিকা হবেন। তবে, লেখার জন্য কী বিষয় বেছে নেবেন, সেটি নিয়ে তিনি ক্রমাগত দ্বিধাগ্রস্ত থাকতেন। কখনো তিনি ভাবতেন প্রেমের গল্প লিখবেন, আবার কখনো তার মন পড়ে থাকত রহস্য আর ভয়ের গল্পের দিকে। নিজের স্টাইল তৈরি করার চেষ্টায় তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বইয়ের পাতায় ডুবে থাকতেন।
সোনার জীবন যেন বদলে যেতে শুরু করে যখন সে দ্য শাইনিং বইটির প্রতিটি পাতা গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করে। স্টিফেন কিং-এর বর্ণনার ভয়ঙ্করতা, চরিত্রগুলির গভীরতা, আর প্রতিটি দৃশ্যের নিখুঁত চিত্রায়ণ সোনার মনকে মুগ্ধ করে তোলে। প্রতিটি অধ্যায় যেন তাকে আরও গভীর এক রহস্যময় জগতে টেনে নিয়ে যায়। কিং-এর লেখার শৈলীতে এমন এক চুম্বকীয় আকর্ষণ ছিল, যা সোনাকে রাতের ঘুম কেড়ে নেয়।
পড়ার সময় সোনার মনে বারবার একটি প্রশ্ন উঁকি দেয়—“আমি কি এমন কিছু লিখতে পারি? এমন কোনো গল্প, যা পাঠকের মনে গভীর ভয় আর বিস্ময় সৃষ্টি করতে পারে?” বইটি পড়ার প্রতিটি মুহূর্ত তাকে তার নিজের লেখালেখি সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখায়। তার মনে হয়, যদি সে কিং-এর মতো এক অন্ধকার আর রহস্যময় জগতের গল্প তৈরি করতে পারে, তবে পাঠকেরা তার লেখার ভক্ত হয়ে উঠবে।
কিন্তু যখন সে তার লেখার খসড়াগুলি প্রকাশকদের কাছে পাঠায়, তখন তার প্রত্যাশার সম্পূর্ণ বিপরীত প্রতিক্রিয়া আসে। “খুব বেশি ‘কিং-কিং’ লাগছে”—এই কথাগুলি যেন তার আত্মবিশ্বাসে একটি বিশাল আঘাত করে। একের পর এক প্রত্যাখ্যান সোনার মনে হতাশা তৈরি করে, কিন্তু একই সঙ্গে এক ধরনের প্রতিরোধ শক্তিও জাগিয়ে তোলে। তার মনে হয়, সে যা লিখছে, তা হয়তো সঠিক পথে নেই। তবে, কিং-এর লেখা থেকে প্রাপ্ত অনুপ্রেরণা তার ভেতরে যে সৃষ্টিশীল আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে, তা তাকে থামাতে দেয় না। এই আগুনই তাকে নতুন পথ খুঁজতে বাধ্য করে।
একদিন বিকেলে সোনা তার বন্ধুদের সঙ্গে কলকাতার রবীন্দ্র সদনে একটি আন্তর্জাতিক লেখক ও কবি সম্মেলনে যায়। হলঘরের উজ্জ্বল আলো, মঞ্চের জমকালো সাজসজ্জা, আর উপস্থিত লেখকদের অভিজাত ব্যক্তিত্ব সোনাকে মোহিত করে। কিন্তু হঠাৎ করেই তার চোখ যেন স্থির হয়ে যায়—মঞ্চের কোণে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মানুষটি যেন তাকে ঘিরে রাখে এক অদ্ভুত মাধুর্যে। সেই মানুষটি আর কেউ নয়, খোদ স্টিফেন কিং! কিং-এর ব্যক্তিত্ব, তার শান্ত অথচ দৃঢ় ভঙ্গি, সোনার হৃদয়ে ঝড় তোলে।
দ্রুত পায়ে কিং-এর দিকে এগিয়ে যায় সোনা। কিং তখন তার স্বাক্ষর দিচ্ছিলেন একদল পাঠকের বইয়ের উপর। সোনা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়, কিন্তু সাহস করে বলে ওঠে, “মি. কিং, আমি আপনার একজন বড় ভক্ত। আপনার লেখা আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। কিন্তু আমার নিজের লেখাগুলো সব প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। সবাই বলে, আমি নকল করছি… আপনাকে।”
কিং এক মুহূর্তের জন্য সোনার দিকে গভীরভাবে তাকান। তারপর এক উষ্ণ হাসি দিয়ে বলেন, “সোনা, অনুকরণে কখনও সৃজনশীলতা জন্মায় না। নিজের গল্প খুঁজে বের করো। তুমি যেটা অনুভব করো, সেটা লিখো। পাঠকদের মন ছোঁয়ার জন্য তোমার নিজের গল্পই যথেষ্ট।”
কিং-এর কথাগুলো সোনার হৃদয়ে এক নতুন শক্তি এনে দেয়। তার কণ্ঠস্বরের দৃঢ়তায় সোনা অনুভব করে, এই কথাগুলো শুধু পরামর্শ নয়, যেন তার জন্য একটি নতুন পথের দিশা। কিং-এর সঙ্গে এই ছোট্ট কথোপকথন সোনার জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে ওঠে। সেদিন থেকেই সোনা সিদ্ধান্ত নেয়, সে আর কিং-এর ছায়ায় লুকিয়ে থাকবে না। তার নিজের গল্পের জন্য সে নতুন পথ খুঁজে নেবে।
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - অধরা জীবন: অজিত মিত্র, একজন অসফল লেখক, তার নামের একজন খ্যাতিমান লেখকের সাথে দেখা করেন। ঈর্ষায় অন্ধ হয়ে, সে তার জীবন চুরি করার চেষ্টা করে। কিন্তু তার কি ভাগ্য সঙ্গ দেবে? – রহস্য রোমাঞ্চে ভরা এক বাংলা গল্প! সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অস্বাভাবিক পরিবর্তন
কিং-এর পরামর্শে সোনা নতুন উদ্যমে নিজের লেখা শুরু করেছিল। নিজের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, আর দৈনন্দিন জীবনের ছোট-বড় ঘটনাগুলোকে শব্দে পরিণত করার চেষ্টা করছিল সে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসতে শুরু করে। গভীর রাত পর্যন্ত একা বসে থাকা, ঘরের দেয়ালে গল্পের খসড়া লিখে ফেলা, আর নিজের চিন্তাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা যেন সোনার জীবনের নিত্য সঙ্গী হয়ে উঠেছিল।
এমন এক সন্ধ্যায়, চায়ের কাপ হাতে স্থানীয় সংবাদপত্র পড়তে গিয়ে সোনা একটি শিরোনামে আটকে যায়— “স্টিফেন কিং কলকাতায়!” তার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে যায়। প্রতিবেদনে লেখা ছিল, কিং কলকাতার বিখ্যাত হান্টেড হাউস, পুতুল বাড়ি নিয়ে একটি রহস্যময় উপন্যাস লিখতে চান। এই বাড়ির ইতিহাস আর ভৌতিক কাহিনী নিয়ে তিনি গভীর আগ্রহী।
সোনা খবরটি পড়ার পর থেকেই যেন তার মন কেমন অস্থির হয়ে ওঠে। পুতুল বাড়ি, স্টিফেন কিং, আর রহস্যময় উপন্যাস—সব মিলিয়ে যেন তার হৃদয়জুড়ে এক অদ্ভুত উত্তেজনার জন্ম দেয়। তার মনে হতে থাকে, যেন কিং তাকে ডাকছেন, তার সৃষ্টির জগতে প্রবেশ করতে বলছেন। সোনা ঠিক করল, এই রহস্যময় লেখককে সামনে থেকে দেখা আর তার সৃষ্টির জগতে ঢোকার এটাই সুযোগ।
দু’দিন পরে, সোনা কিং-এর সঙ্গে দেখা করতে পৌঁছায়। কিং তখন পুতুল বাড়ি থেকে সামান্য দূরের এক হোটেলে থাকছেন। তার রুমে ঢোকার সময় সোনার হাত-পা কাঁপছিল। দরজায় কড়া নাড়ার পর কিং নিজেই দরজা খুললেন। কিং-এর চেহারা দেখে সোনা হতবাক হয়ে গেল। তার প্রিয় লেখক, যার লেখা তার জীবন বদলে দিয়েছে, তাকে সামনে থেকে দেখে সোনা যেন মুহূর্তের জন্য কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলল।
“হাল্লো… কিং?” সোনা কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করল।
“হ্যাঁ। আরে তুমি? ভেতরে এসো।” কিং এর ঠান্ডা অথচ জিজ্ঞাসু দৃষ্টি সোনার দিকে স্থির হলো।
সোনা হোটেল রুমের ভেতরে যাওয়ার পর ওরা সোফায় বসলো। কিং হোটেল-এর রিসেপশন এ ফোন করে চা নিয়ে আসতে বলল।
তারপর কিং হেসে বললেন, “বল, আমি তোমাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারি?”
সোনা গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে বলল, “আমি শুনেছি আপনি পুতুল বাড়ি নিয়ে লিখছেন। আমি… আমি কি আপনার সঙ্গে এই উপন্যাসে কাজ করতে পারি? আমি সত্যিই শিখতে চাই।”
কিং কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন, তারপর বললেন, “ঠিক আছে। তবে শর্ত একটাই—তোমাকে নিজের চিন্তা দিয়ে গল্পে অবদান রাখতে হবে। আর একটি কথা মনে রেখো, সোনা, অনুকরণ নয়, নিজের পথ খুঁজে নাও।”
এই কথা শোনার পর সোনা যেন উড়ে যেতে লাগল। এরপর থেকে তারা একসঙ্গে কাজ করতে শুরু করল। সোনা প্রায় প্রতিদিন কিং-এর সঙ্গে পুতুল বাড়িতে যেত। পুতুল বাড়ির গা ছমছমে পরিবেশ, ময়লা দেয়াল, ভাঙা পুতুল, আর পুরনো গল্পের ছায়া যেন সোনার কল্পনাশক্তিকে নতুন করে জাগিয়ে তুলল।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিং-এর প্রতি তার শ্রদ্ধা এক অসুস্থ আবেগে রূপ নিতে শুরু করল। সে কিং-এর কথাকে নিজের জীবনের চেয়ে বড় মনে করতে শুরু করল। এমনকি সে অনুভব করল, যেন কিং-এর লেখা তার জীবনের উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছে।
একদিন, পুতুল বাড়ি থেকে ফেরার পথে সোনা কিংকে বলল, “আপনার মতো লেখা শেখার জন্য আমি যেকোনো কিছু করতে পারি।”
কিং একটু হেসে বললেন, “নিজের সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া ভালো, তবে নিজেকে হারিয়ে ফেলো না, সোনা। লেখক হওয়া মানে নিজের সত্তাকে রক্ষা করা।”
তবে সোনা এই পরামর্শের গভীরতায় আর মন দিল না। কয়েকদিন পর থেকে তার মধ্যে অদ্ভুত এক অভ্যাস জন্ম নিল। সে মাংসের দোকান থেকে রক্ত নিয়ে এসে নিজের ফাউন্টেন পেনে ভরে লিখতে শুরু করল। প্রথম দিকে এটি তার কাছে কেবল একটি কৌতূহল মনে হয়েছিল, তবে ধীরে ধীরে এটি এক ধরনের নেশায় পরিণত হলো।
তার ঘরের দেয়াল ভরে উঠতে লাগল রক্ত দিয়ে লেখা অদ্ভুত বাক্য আর গল্পের খসড়ায়। তার বন্ধুরা বিষয়টি লক্ষ্য করলেও, সোনার লেখালেখি নিয়ে তারা কিছু বলার সাহস করল না।
পুতুল বাড়িতে তাদের যাতায়াত বাড়তে থাকল। বাড়ির পরিবেশ, কিং-এর নির্দেশনা, আর সোনার নিজের লেখালেখির নেশা মিলে এক ভয়ানক মিশ্রণ তৈরি করতে থাকল। এক রাতে, পুতুল বাড়ির ভাঙা আয়নার সামনে বসে কিং সোনাকে বললেন, “সোনা, এই আয়নার দিকে তাকাও। এখানে প্রতিটি গল্প লুকিয়ে আছে। শুধু রক্ত দিয়ে লিখতে হলে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
সোনার হৃদয় শিরশির করে উঠল। কিং-এর কথা তাকে এক অজানা রহস্যের দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকল, যার গভীরতা সে তখনো পুরোপুরি বুঝতে পারেনি।
ভয়ঙ্কর সন্ধান
পুতুলবাড়ির দিকে এগোতেই সোনার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে ওঠে। বাড়িটির সামনে দাঁড়াতেই সে একটি শীতল বাতাসের প্রবাহ অনুভব করে, যা তার শরীরের প্রতিটি রোমকূপকে সজাগ করে দেয়। কিং শান্ত এবং নিশ্চুপ। সোনার মনে হয়, বাড়িটির গভীরে যেন কোনো রহস্য তাকে ডেকে নিচ্ছে।
“মিঃ কিং, আমরা কি সত্যিই ভিতরে যাচ্ছি?” সোনা জিজ্ঞাসা করল, তার গলায় এক ধরনের অস্পষ্ট কাঁপুনি।
কিং তার চশমার কাচ মুছতে মুছতে বললেন, “তোমার যদি সাহস থাকে, তবে এই রহস্যের দরজা খুলতে পারবে। লেখক হওয়া মানে অজানা অন্ধকারকে আলিঙ্গন করা।”
বাড়ির দরজা ঠেলে তারা ভিতরে প্রবেশ করল। ভেতরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই সোনা যেন এক অদ্ভুত চাপ অনুভব করল। দেয়াল জুড়ে লেখা – “আমি লিখবো, রক্তকলমে!” এই লেখাটি দেখে সোনার শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল।
সে ভয়ে কিং-এর দিকে তাকাতে চাইল, কিন্তু কিং কোথায়? তিনি তো ঠিক তার পাশেই ছিলেন! “মিঃ কিং! মিঃ কিং!” সোনা চিৎকার করে উঠল, কিন্তু কোনো সাড়া পেল না।
ঘরের এক কোণে তার দৃষ্টি গেল। সেখানে একটি পুরনো পুতুল পড়ে আছে, মেঝেতে রক্তে ভিজে। পুতুলটির পাশে একটি কলম পড়ে রয়েছে—রক্তমাখা কলম। সোনার চোখ মুহূর্তে বিস্ফোরিত হয়ে গেল। সে তাড়াতাড়ি ঝুঁকে কলমটি তুলল। কিন্তু এই কলমটি দেখে তার মনের মধ্যে এক অজানা আতঙ্ক জন্মাল।
“এটা তো… এটা তো আমার কলম!”
কলমটি তার নিজের, যেটি সে কয়েকদিন আগে হারিয়েছিল। কিন্তু এটি এখানে কীভাবে এল? এবং এটি রক্তমাখা কেন? তার হাত কাঁপতে লাগল। আতঙ্কে সে কলমটি ফেলে দিতে চাইল, কিন্তু তার হাত যেন শক্ত হয়ে গেছে।
হঠাৎ, ঘরের মধ্যে এক অদ্ভুত আওয়াজ শোনা গেল। পেছন থেকে কারো শ্বাসের শব্দ। সোনা ঘুরে দাঁড়াল এবং দেখল—কিং। তিনি ঠিক তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন, তবে তার মুখটা যেন অদ্ভুত ঠেকল।
“মিঃ কিং! আপনি কোথায় ছিলেন? আপনি জানেন এটা কীভাবে এখানে এল?” সোনা আতঙ্কে প্রশ্ন করল।
কিং একটি ঠান্ডা হাসি দিয়ে বললেন, “তোমার কলম, তাই না? এই কলম দিয়ে তুমি কি লিখেছিলে, সোনা? মনে আছে?”
সোনার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। “আমি… আমি তো শুধু গল্পের খসড়া লিখেছিলাম। কিন্তু সেটা রক্ত দিয়ে নয়!”
কিং ধীরে ধীরে এগিয়ে এলেন। তার গলা যেন গভীর এবং শীতল হয়ে উঠল। “তোমার প্রতিটি লেখা রক্তের গল্প বলে। তুমি নিজের অজান্তেই এই বাড়িকে তোমার কল্পনার রঙে রাঙিয়ে দিয়েছো। এই বাড়ি তোমার কল্পনার জায়গা নয়, এটা বাস্তব। এবং এই কলম—এটাই তোমার ভবিষ্যৎ।”
সোনা কিং-এর কথা শুনে এক অদ্ভুত অসহায়ত্ব অনুভব করল। “আপনি কী বলছেন? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!”
কিং আরও কাছে এসে তার হাতে সেই রক্তমাখা কলমটি তুলে দিলেন। “এটা ধরো, সোনা। আর অনুভব করো, কীভাবে গল্প তৈরি হয়। এটা শুধু একটা কলম নয়, এটা তোমার কল্পনা আর বাস্তবতার মধ্যে সেতু।”
সোনা কিছু বুঝে উঠতে পারল না। কিন্তু তার হাত কলমটি ধরল। সঙ্গে সঙ্গে ঘরের চারপাশে এক অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা দিল। দেয়ালের লেখাগুলো চকচক করতে শুরু করল। পুতুলটি যেন নড়তে শুরু করল। ঘরের মধ্যে অন্ধকার আরও গভীর হয়ে এল।
“মিঃ কিং! এটা কী হচ্ছে?” সোনা আতঙ্কে চিৎকার করল।
কিং এবার সম্পূর্ণ শান্ত গলায় বললেন, “তুমি যা লেখো, সেটাই তোমার বাস্তব। তোমার গল্পের ভয়াবহতাই তোমার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তুমি কি এখনো লেখার সাহস দেখাবে, সোনা?”
সোনা স্থির হয়ে গেল। তার হাতের রক্তমাখা কলম যেন তাকে নতুন করে ডাকছে। কিন্তু এই ডাক কি সৃষ্টির, নাকি ধ্বংসের?
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - রোমাঞ্চকর সন্ধ্যে: "রোমাঞ্চকর সন্ধ্যে" একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে দুই প্রাক্তন বন্ধু, অভিজিৎ ও পল্লবী, আবার একে অপরকে খুঁজে পায় এবং ভালোবাসার চিরন্তন প্রতিশ্রুতি দেয়। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
কিং-এর রহস্যময় উপস্থিতি
সোনা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। মনের ভেতর একটা অজানা আতঙ্ক তাকে কুঁকড়ে দিচ্ছিল। কিং-এর চোখে সেই আগুনের মত জ্বলজ্বলে চাহনি দেখে তার হৃদপিণ্ড যেন গলা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। কিং আবারও বললেন, ধীর অথচ দৃঢ় স্বরে, “সোনা, ভেতরে এসো। সময় ফুরিয়ে আসছে।”
সোনা কিছু না বলে কিং-এর নির্দেশ মেনে ভেতরে প্রবেশ করল। ঘরের ভেতরের শীতল বাতাস যেন তার ত্বক ভেদ করে হাড় পর্যন্ত ঠান্ডা করে দিচ্ছিল। দেয়ালের অদ্ভুত আঁকিবুঁকি যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে।
কিং মেঝেতে সোনাকে বসিয়ে দিলেন। তার মুখে কোনো নরমাভাব নেই, বরং তার চোখে একধরনের অদ্ভুত দৃঢ়তা ফুটে উঠেছে। সোনা কিছু বলতে যাবে, কিন্তু তার গলা থেকে কোনো শব্দ বেরোল না। যেন তার কণ্ঠস্বরও জমে গেছে।
হঠাৎ সোনা অনুভব করল, পেছন থেকে কারও উপস্থিতি। সে ধীরে ধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। ঘরের কোণায় থাকা সেই পুতুলটা এখন মেঝের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছে। পুতুলের চোখ দুটি সরু লাল আলোর মতো জ্বলজ্বল করছে।
“মিঃ কিং, এই পুতুলটা এখানে এল কীভাবে?” সোনা ভয়ে গলা কাঁপিয়ে প্রশ্ন করল।
কিং কোনো জবাব দিলেন না। বরং তিনি সোনার হাত থেকে রক্তমাখা কলমটি তুলে নিলেন। কলমটি হাতে নিয়ে তিনি ঘরের মেঝেতে চক্রাকার কিছু অদ্ভুত প্রতীক আঁকতে শুরু করলেন।
সোনা ভয় পেয়ে চিৎকার করতে চাইল, কিন্তু তার গলা দিয়ে একটিও শব্দ বেরোল না। তার হাত-পা অবশ হয়ে গেল। সে যেন কিং-এর চোখের সম্মোহনে আটকে গেছে।
কিং বললেন, “সোনা, এই কলম শুধুমাত্র তোমার নয়। এটি সেই শক্তির অংশ যা কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেয়। তুমি লিখেছো রক্ত দিয়ে, আর সেই রক্ত এখন ফিরে আসছে।”
সোনা কিং-এর কথার মানে কিছুই বুঝতে পারল না। তার মনে হচ্ছে, তার শরীর থেকে সমস্ত শক্তি যেন বেরিয়ে যাচ্ছে। সে দুর্বল বোধ করছিল, কিন্তু তার চোখ আটকে ছিল কিং-এর আঁকায়। প্রতীকগুলো যেন ঘরের চারপাশে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।
“কিন্তু… এটা কেন করছেন আপনি? আমাকে এমন অবস্থায় কেন ফেললেন?” সোনা কাঁপা গলায় বলল।
কিং গভীর কণ্ঠে উত্তর দিলেন, “তুমি যখন রক্ত দিয়ে লিখতে শুরু করেছিলে, তখনই তুমি এই চক্রের অংশ হয়ে গিয়েছিলে। এই পুতুলবাড়ি শুধু একটা জায়গা নয়, এটা একটা দরজা। আর তোমার লেখা এই দরজাকে খুলতে সাহায্য করেছে।”
হঠাৎ ঘরের চারপাশে অদ্ভুত আওয়াজ শুরু হল। যেন হাজারো মানুষের ফিসফিসানি। প্রতীকগুলোর আলো আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল, আর ঘরের মেঝে কাঁপতে শুরু করল। পুতুলটি ধীরে ধীরে নড়তে শুরু করল, তার হাত-পা যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে।
সোনা চিৎকার করে উঠল, “মিঃ কিং, এটা থামান! দয়া করে, এটা থামান!”
কিং তার দিকে তাকিয়ে এক অদ্ভুত হাসি দিয়ে বললেন, “এটা থামানো যায় না, সোনা। তুমি পশুর রক্ত দিয়ে যা শুরু করেছ, সেটা নিজের রক্ত শেষ করতে হবে। এটা তোমার কল্পনার নির্মাণ, আর এটাই তোমার ভবিষ্যৎ।”
সোনা নিজের সমস্ত শক্তি জড়ো করে চিৎকার করল, “আমি চাই না! আমি এভাবে লেখালেখি করব না! দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন!”
এই সময় পুতুলটি হঠাৎ করে একটি অদ্ভুত চিৎকার করে উঠল, তার চোখের লাল আলো আরও উজ্জ্বল হয়ে গেল। ঘরটি যেন ভেঙে পড়তে চাইছিল। সোনা তার চোখ বন্ধ করে ফেলল, আর মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগল—এই দুঃস্বপ্ন থেকে তাকে কেউ মুক্ত করুক।
কিন্তু তখনই সে অনুভব করল, কিং তার কাঁধে হাত রাখলেন। তার হাতের স্পর্শে যেন বিদ্যুৎ প্রবাহিত হল। কিং বললেন, “সোনা, সাহসী হও। তুমি যদি নিজের গল্পের নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারো, তবে অন্য কেউ সেটা করবে। তুমি কি সাহস দেখাতে পারবে?”
সোনার চোখ খুলতেই সে দেখল, প্রতীকগুলো ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে, আর পুতুলটি আবার মেঝেতে নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে আছে। ঘরের চারপাশের অন্ধকার ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে।
কিং তাকে সাহায্য করে দাঁড় করালেন। সোনা কাঁপা গলায় বলল, “এটা কী ছিল?”
কিং মৃদু হেসে বললেন, “এটা তোমার কল্পনার শক্তি। এখন এটা তোমার হাতে। মনে রেখো, লিখতে গেলে সাহস আর বিশ্বাস দুটোই থাকতে হবে।”
সোনা কিংয়ের অস্বাভাবিক আচরণে ভয় পেয়ে পুরোপুরি থমকে গিয়েছিল। তার সামনে থাকা কিং হঠাৎ সেই রক্তমাখা কলম তুলে নিয়ে সোনার দিকে ধেয়ে এল। সোনার মনে হল, যেন তার জীবন এখানেই শেষ হয়ে যাবে। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘরের এক কোণ থেকে এক প্রচণ্ড আওয়াজ হলো।
কিং হঠাৎ থমকে গেল। সোনা অবাক হয়ে দেখল, ঘরের একপাশ থেকে ঠিক কিংয়ের মতো দেখতে আরেকজন মানুষ ছুটে এসে প্রথম কিংকে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দিল। সোনা ভয়ে চিৎকার করে উঠল।
নতুন আগত ব্যক্তি সোনার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললেন, “সোনা! তুমি পালাও! এ কিং মানে আমি না। এটা দুষ্ট শক্তি দ্বারা তৈরি।”
সোনা কিংয়ের মতো দেখতে এই নতুন ব্যক্তিকে দেখে বিভ্রান্ত হয়ে গেল। তার মনে হল, এ কীভাবে সম্ভব? তবে সেই সময় তার ভাবনার জন্য কোনো সুযোগ ছিল না। প্রথম কিং মাটিতে পড়ে গর্জন করতে করতে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, আর নতুন কিং তাকে থামানোর চেষ্টা করছিল।
সোনা ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নিল। তার হাত-পা তখনো কাঁপছিল, কিন্তু সে সাহস সঞ্চয় করল। কিংয়ের মতো দেখতে নতুন লোকটি চিৎকার করে বললেন, “সোনা! রক্ত কলমটা ছাড়িয়ে নাও! ওটা ওর শক্তির উৎস।”
সোনা কিংয়ের হাতে থাকা রক্তমাখা কলমটির দিকে তাকাল। তার ভেতরে যেন নতুন এক শক্তি জন্ম নিল। সে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে প্রথম কিংয়ের হাত থেকে কলমটি ছিনিয়ে নিল। কিন্তু তার আগেই প্রথম কিং চিৎকার করে উঠল, তার শরীর থেকে যেন ধোঁয়া বের হতে শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার শরীর গলে গিয়ে কঙ্কালে পরিণত হল।
সোনা চমকে গিয়ে এক পা পিছিয়ে এল। নতুন কিং তার দিকে এগিয়ে এসে বললেন, “এই রক্ত কলমকে নষ্ট করতে হবে। যতক্ষণ এটা থাকবে, এই দুষ্ট শক্তি আমাদের তাড়া করবে।”
সোনা বিস্মিত গলায় বলল, “কিন্তু আপনি কে? আপনি কি আসল কিং?”
নতুন কিং শান্ত গলায় বললেন, “আমি আসল কিং। তুমি যাকে দেখেছিলে, সেটা এই পুতুলবাড়ির অভিশাপ। সে আমার মতো দেখতে তৈরি হয়েছে, কারণ এটা আমাদের দুর্বলতাকে কাজে লাগায়।”
সোনা তার কথা শুনে মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। আসল কিং তখন পকেট থেকে একটি লাইটার বের করলেন। তিনি রক্তমাখা কলমটি সোনার কাছ থেকে নিয়ে লাইটারের শিখায় ধরালেন।
রক্ত কলমটি জ্বলতে শুরু করল। কলমের শিখা অস্বাভাবিকভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠল, যেন সেটার ভেতর থেকে অন্ধকার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘরের ভেতরে থাকা সেই কঙ্কাল এবং পুতুলটি একসঙ্গে জ্বলে উঠল। পুতুলটি অদ্ভুত গলায় চিৎকার করে বলল, “তোমরা আমাদের শেষ করতে পারবে না!”
কিং চিৎকার করে বললেন, “তোমার সময় শেষ! তোমার অভিশাপ আজ শেষ হয়ে গেল!”
সোনা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে দেখছিল এই ভয়াবহ দৃশ্য। ঘরের ভেতরের সবকিছু যেন জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। দেয়ালের আঁকিবুঁকিগুলো একের পর এক অদৃশ্য হয়ে গেল। এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘরের ভেতর ছড়িয়ে পড়ল।
কিং সোনার হাত ধরে বললেন, “চলো, এখান থেকে বেরিয়ে যাই। এই বাড়ি আর নিরাপদ নয়।”
সোনা কিংয়ের হাত ধরে পুতুলবাড়ি থেকে বেরিয়ে এল। বাইরে এসে সে গভীরভাবে শ্বাস নিল, যেন তার বুকের ভেতরের সমস্ত আতঙ্ক এখন মুক্তি পেয়েছে।
কিং তার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি সাহস দেখিয়েছো, সোনা। এই অভিশাপ অনেক বছর ধরে এখানে ছিল। কিন্তু তোমার লেখা আর সাহস আজ একে শেষ করে দিয়েছে।”
সোনা কিংয়ের কথার গভীরতা বুঝতে পারল। তার চোখে জল এসে গেল, কিন্তু সে মৃদু হেসে বলল, “আমার লেখা কি সত্যিই এমন কিছু করতে পারে?”
কিং বললেন, “তোমার কলমের শক্তি যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করো, তবে তুমি যা চাও তা করতে পারো।”
সোনা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল। পুতুলবাড়ির ধ্বংসস্তূপ তার চোখের সামনে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছিল। তার মনে হল, যেন এক নতুন ভোর শুরু হচ্ছে।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - প্রতিফলিত প্রেম: প্রতিফলিত প্রেম: একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ভালোবাসা, বিশ্বাস, এবং জীবনের নতুন শুরু একসাথে মিশে যায়। আকাশ এবং অনিকার হৃদয়ের সংযোগের হৃদয়স্পর্শী গল্প। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
রহস্যের সমাপ্তি
সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মতলার একটি নিরিবিলি রেস্তোরাঁর কোণে বসে ছিল সোনা আর কিং। তাদের সামনে দু’কাপ কফি, কিন্তু দুজনের মন যেন ঘন মেঘে ঢাকা। সোনা এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি। তার মাথার ভেতর হাজারো প্রশ্ন ঘুরছিল।
কিং সোনার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি কি ঠিক আছো? মনে হচ্ছে, তুমি এখনও ভয় পেয়ে আছো।”
সোনা মাথা নেড়ে বলল, “আমি ঠিক আছি। কিন্তু আমার মনে প্রচুর প্রশ্ন জমে আছে। এতকিছুর পরেও যেন মনে হচ্ছে এটা কোনো দুঃস্বপ্ন ছিল।”
কিং মৃদু হেসে বললেন, “আমি জানি, এই অভিজ্ঞতা তোমার জন্য সহজ ছিল না। কিন্তু তুমি যা পারফর্ম করেছো, তা সত্যিই সাহসিকতার পরিচয়।”
কফিতে একটা চুমুক দিয়ে কিং বললেন, “তুমি ওই কলমটা কোথা থেকে পেয়েছিলে? তোমার কি মনে আছে?”
সোনা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “হ্যাঁ, মনে আছে। আমি ‘পেন হাসপাতাল’ থেকে কিনেছিলাম। এটা খুব পুরোনো ফাউন্টেন কলম ছিল। আমি পুরোনো জিনিস ভালোবাসি। তখন সেটার আকর্ষণ আমাকে ভীষণ টেনেছিল।”
কিং চিন্তিতভাবে বললেন, “পেন হাসপাতাল? অদ্ভুত। ওটা খুবই নামকরা দোকান। কিন্তু এই কলমটা হয়তো বহু বছর ধরে অজানা কারণে রয়ে গেছে। তুমি কি জানো, এর সঙ্গে একটি ভয়ানক ইতিহাস জড়িয়ে আছে?”
সোনা কিংয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “ইতিহাস? মানে কি?”
কিং একটু থেমে গম্ভীর গলায় বললেন, “১৯১৬ সালের কথা। জন রবার্ট নামে একজন ইংরেজ লেখক তখন কলকাতায় থাকতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন নোবেল পুরস্কার পান, তখন রবার্ট ভারতীয়দের প্রতি ভীষণ ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন। তার ইচ্ছে ছিল, তিনি এমন একটি উপন্যাস লিখবেন যা তাকে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি এনে দেবে। কিন্তু তার কোনো লেখাই সাফল্য পায়নি। নিজের ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে একসময় তিনি পাগল হয়ে যান।”
সোনা কিংয়ের কথা মন দিয়ে শুনছিল।
কিং আবার বলতে শুরু করলেন, “তখন এক রাতে রবার্ট একটি ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার মেয়েকে এই কলম দিয়ে হত্যা করেন। মেয়ের শরীরের রক্ত দিয়ে নিজের আত্মহত্যার নোট লেখেন। তারপর নিজেও সেই কলম দিয়ে আত্মহত্যা করেন।”
সোনা বিস্ময়ে কিংয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল।
“তাহলে এটা সেই কলম?” সোনা বিস্মিতভাবে বলল।
কিং মাথা নেড়ে বললেন, “হ্যাঁ। এই কলমের সঙ্গে রবার্টের আত্মা এবং তার অমীমাংসিত ক্রোধ আটকে আছে। আমি যখন পুতুলবাড়ি নিয়ে রিসার্চ শুরু করি, তখন এই ঘটনার সব কিছু জানতে পারি। এই পুতুলবাড়িটা ছিল সেই সময় রবার্টের বাড়ির কাছেই। সেই কারণে এই জায়গায় তার আত্মার উপস্থিতি ছিল আরও শক্তিশালী।”
সোনা ভয়ে আর বিস্ময়ে কিংয়ের কথা শুনছিল।
“তুমি কি জানো, আমি কাল তোমার বাড়িতে ফোন করেছিলাম? আমি সব জানার পর তোমাকে সতর্ক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখন আমি শুনলাম, তুমি পুতুলবাড়িতে গেছো। আমি সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ছুটে যাই। ভাগ্য ভালো যে আমরা সময়মতো ওই কলমটাকে নষ্ট করতে পেরেছি।”
সোনা চুপ করে সবকিছু শুনছিল। তার মাথায় সব ঘটনা একটা সিনেমার মতো ভাসছিল।
কিং মৃদু হেসে বললেন, “তুমি জানো, সোনা, তুমি না থাকলে এই অভিশাপ কখনো শেষ হতো না। তোমার সাহস আর সিদ্ধান্ত এই দুষ্ট শক্তিকে শেষ করেছে।”
সোনা কিংয়ের কথা শুনে খানিকটা স্বস্তি পেল।
কয়েকদিন পর, সোনা ও কিং মিলে তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি উপন্যাস লিখে শেষ করল। উপন্যাসটির নাম রাখা হলো “রক্তকলমের রহস্য”। উপন্যাসটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পাঠকদের মধ্যে তা ঝড় তুলল। প্রতিটি পাঠক উপন্যাসের রহস্যময় আর থ্রিলিং গল্পে মুগ্ধ হয়ে গেল।
কিন্তু কেবল সোনা আর কিং জানত, এই উপন্যাসটি কোনো কাল্পনিক গল্প নয়। তাদের জীবনের এক ভয়ানক অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি।
একদিন উপন্যাসটি নিয়ে একটি সাক্ষাৎকারে সোনা মৃদু হেসে বলেছিল, “লেখা শুধু অনুভূতির প্রকাশ নয়, কখনো কখনো এটা অতীতের অভিশাপ থেকে মুক্তির পথ।”
রক্ত কলমের রহস্য সেখানেই শেষ নয়। সোনা জানে, তার লেখার শক্তি এখন আরও অনেক গভীর। আর কিং? সে হয়তো নতুন কোনো রহস্যের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছে।