রচনা - সুরজিৎ রায় | গল্প পাঠে - প্রিয়ম চৌধুরী, সৃতি, দেবলিনা, রনি | আবহ সঙ্গীত, পরিচালনা এবং সম্পাদনা - সৃতি বিশ্বাস | সমগ্র কারিগরি ও নির্মাণ - ইকোলেন্স স্টুডিও
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
ইতিহাসের গন্ধে জড়ানো আতঙ্কের রাত
কলকাতার বুকে, হুগলী নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে এক চিরসবুজ ঐতিহ্যের প্রতীক, শহরের গর্ব, সেই বিখ্যাত জাদুঘর। সাদা মার্বেলের দেওয়াল আর ঢালাও ছাদের এই স্থাপত্য যেন এক নিখুঁত শিল্পকর্ম। দিনের আলোয় এই জাদুঘর ইতিহাসপ্রেমী আর পর্যটকদের ভিড়ে সরগরম। কিন্তু রাতের অন্ধকার নামলে, পুরো জায়গাটা যেন অন্য এক রূপ নেয়। চারদিকে নীরবতা, শুধু বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ আর মাঝেমধ্যে দূরে কোনো পেঁচার ডাক।
আমি, সুরজিৎ রায়, পেশায় একজন ঐতিহাসিক কথাসাহিত্যিক। ইতিহাসের প্রাচীন নিদর্শন আর কিংবদন্তির গল্প আমার লেখালেখির প্রাণ। প্রতি মাসে কয়েকবার আমি এই জাদুঘরে আসি। এখানকার শিল্পকর্ম আর প্রাচীন নিদর্শনগুলোর সঙ্গে মিশে থাকার মাঝে আমি অদ্ভুত এক শান্তি খুঁজে পাই। কিন্তু আজ রাতটা ছিল অন্যরকম। এমন একটা অভিজ্ঞতা আমি আগে কখনও পাইনি।
পরের দিনের প্রদর্শনী ছিল মিশরীয় সভ্যতার অলংকৃত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে। কাঠ আর পাথরের মিশেলে তৈরি তলোয়ার, ঢাল, আর বাঁকানো কটারি—সবকিছুর গায়ে সোনা, রুপো আর রত্নের জৌলুস। জাদুঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সঞ্জীব বাবু আমাকে আগেই ফোন করে বলেছিলেন, “কাল একটু আসবেন। প্রদর্শনীর আগে কিছু বিশেষ নিদর্শনের প্রেক্ষাপট নিয়ে আপনার সাথে আলোচনা করতে চাই।” আমি রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।
রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা। জাদুঘরের বাইরে থেকে লোহার গেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন সঞ্জীব বাবু। ভেতরে কেবল আমরা দু’জন। বিশাল হলঘর, চারদিকে নীরবতা, আর দূরের দেয়ালে টাঙানো মিশরীয় ফ্রেস্কো আর মূর্তির সারি। আলো ঝলমলে কাচের বাক্সের ভেতর রাখা অস্ত্রগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে সঞ্জীব বাবু বললেন, “এই তলোয়ারটা দেখুন। কথিত আছে, এর মালিক ছিলেন এক প্রাচীন ফারাও যিনি তার সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যান। শুনেছি, এই তলোয়ার ছুঁলে নাকি আজও অভিশাপ লেগে যায়।”
আমি মুচকি হেসে বললাম, “আপনার এসব গল্প কি আপনি বানালেন, নাকি কোথাও পড়েছেন?”
সঞ্জীব বাবু জবাব দিলেন, “আপনার মতো লেখকদের এটাই সমস্যা। সবকিছু গল্প মনে হয়। বাস্তবে কত কিছু ঘটে যা বইয়ে লেখা যায় না।”
হঠাৎ, যেন কোথাও থেকে একটা ধাম করে শব্দ হলো। শব্দটা এতই জোরে ছিল যে আমি আর সঞ্জীব দু’জনেই চমকে উঠলাম। আমরা দুজনেই থেমে গেলাম। সঞ্জীব নিচু গলায় বললেন, “শব্দটা কোথা থেকে এলো? এখানে তো আমরা ছাড়া কেউ নেই।”
আমি বললাম, “কিন্তু জাদুঘর তো লক করা ছিল, তাই না?”
সঞ্জীব বাবু মাথা নাড়লেন। শব্দটা আবার হলো, এবার আরও জোরে। এবার মনে হলো শব্দটা এসেছে মিশরীয় মমি রাখা বিশেষ কক্ষের দিক থেকে। সঞ্জীব আমাকে বললেন, “আপনি এখানেই থাকুন। আমি যাচ্ছি দেখে।”
“না,” আমি বললাম। “আমি আপনার সঙ্গে যাচ্ছি।”
আমরা দুজনেই সাবধানে এগিয়ে গেলাম। কালো কাপড়ে ঢাকা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে সঞ্জীব টর্চটা জ্বালালেন। কালো কাপড়টা সরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। ভেতরে ঢুকতেই দেখি কাচের কফিন যেখানে মিশরীয় মমি রাখা ছিল, সেটা খালি।
আমি ফিসফিস করে বললাম, “এটা কি করে সম্ভব? মমিটা গেল কোথায়?”
সঞ্জীব বাবু কোনো কথা বললেন না। তাঁর মুখটা সাদা হয়ে গিয়েছিল। চারদিকে একটা ঠান্ডা বাতাসের হালকা ঝাপটা অনুভব করলাম। মনে হচ্ছিল, যেন কেউ আমাদের ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে।
ঠিক তখনই, আবার সেই শব্দ। এবার মনে হলো শব্দটা একদম আমাদের কাছ থেকে আসছে। আমরা দু’জনেই ঘুরে তাকালাম।
সঞ্জীব বাবু চেঁচিয়ে উঠলেন, “ওটা কী?”
আমি তাকিয়ে দেখি, মিশরীয় দেবতা আনুবিসের কালো পাথরের মূর্তিটা ধীরে ধীরে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। মূর্তির চোখ দুটো লাল হয়ে জ্বলজ্বল করছে। পুরো শরীরটা ঠান্ডায় কেঁপে উঠলো।
আমার গলা শুকিয়ে গেল। কোনো কথাই বেরোলো না। মূর্তিটা একেবারে কাছে এসে থেমে গেল। তারপর, লাল চোখ দুটো নিভে গেল। জাদুঘরের ভেতর একটা দীর্ঘশ্বাসের মতো শব্দ হলো।
সঞ্জীব বাবু মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। আমি তাকে ধরে তুলতে চেষ্টা করলাম। চারপাশে একটা অদ্ভুত শূন্যতা। মনে হচ্ছিল, পুরো জাদুঘর যেন আমাদের দু’জনকে বন্দী করে ফেলেছে।
এমন সময়, মূর্তিটা আবার জীবন্ত হয়ে উঠলো। কিন্তু এবার যেন সেটা আমাদের দিকে নয়, অন্য দিকে ইঙ্গিত করছে।
আমি আতঙ্কে জমে গেলাম। এমন কিছু আমি আমার জীবনে কখনো দেখিনি। ইতিহাসের নিদর্শন কি সত্যিই অতীতের কোনও অজানা অভিশাপের বয়ে আনে? নাকি এটা ছিল কেবল মনের ভুল?
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - মেঘদূত: রহস্য রোমাঞ্চে ভরা বাংলা গল্প “মেঘদূত”রাজা রবি বর্মার বিখ্যাত চিত্রকর্ম “মেঘদূত” রহস্যজনকভাবে চুরি! ইন্সপেক্টর সত্যজিৎ সেনের কাছে এই রহস্যের সমাধানের ভার। চুরির সাথে জড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত রং, গোপন বার্তা, এবং এক অজানা ব্যক্তি। কৌতূহল, রোমাঞ্চ, এবং অপ্রত্যাশিত মোড়ে ভরা এই গল্পেআপনাকে টেনে নিয়ে যাবে রহস্যের জগতে। শিল্প, রহস্য, এবং রোমাঞ্চের অপূর্ব মেলবন্ধন “মেঘদূত”। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
চার্মিআনের পরিচয় এবং প্রস্তাব
তার পর মূর্ত্তিটি আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “সুরজিৎ”।
মূর্তিটির মুখ থেকে “সুরজিৎ” শব্দটি শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। একটা পাথরের মূর্তি আমার নাম জানে কীভাবে? ভয়ে এবং বিস্ময়ে আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মূর্তিটি আবার বলল, “ভয় পেয়ো না, সুরজিৎ। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করব না।” তার গলায় এক অদ্ভুত ধরনের কোমলতা ছিল। মনে হচ্ছিল, এই কথা আমার ভেতরের সব ভীতি মুছে ফেলতে চাইছে।
তবু আমার গলা শুখিয়ে আসছিল। বহু কষ্টে নিজেকে সামলে শুখনো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি আমাকে চেনেন? আপনি আমার নাম জানলেন কীভাবে?”
মূর্তিটি কিছুক্ষণ আমার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে রইল। তারপর ধীরে ধীরে তার কালো পাথরের মতো হাতটি বাড়িয়ে আমার হাতে স্পর্শ করল। তার ছোঁয়া শীতল, অথচ অদ্ভুতভাবে সান্ত্বনাদায়ক। সেই স্পর্শে আমার মনে হচ্ছিল, সে সত্যিই আমার ক্ষতি করতে চায় না।
সে বলতে শুরু করল, “আমার নাম চার্মিআন। আমি ক্লিওপেট্রার সহচরী ছিলাম। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আমার নাম কোথাও নেই। আমার অস্তিত্ব মুছে গেছে, সুরজিৎ। আমি চাই, তুমি আমার গল্প লেখো। তুমি আমার কাহিনি পৃথিবীর সামনে তুলে ধরো।”
তার কথা শুনে আমি আরও বিভ্রান্ত হয়ে পড়লাম। চার্মিআন? ক্লিওপেট্রার সহচরী? ইতিহাসের বইয়ে তো কখনো এই নাম শুনিনি।
আমি বললাম, “কিন্তু আমি আপনার গল্প কীভাবে লিখব? আমি তো আপনার জীবন বা ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানি না।”
চার্মিআন হাসল, সেই হাসি যেন গভীর দুঃখ আর শোকের ভারে ভারাক্রান্ত। সে বলল, “তোমার চিন্তা করার কিছু নেই, সুরজিৎ। আমি তোমাকে আমার গল্প বলব। তবে, আমার কাহিনি বোঝার জন্য তোমাকে আমার সময়ে যেতে হবে, আমার দেশ মিশরে। আর একটা কথা আমরা এখন বন্ধু তুমি আমাকে ‘তুমি’ করে ডাকতে পারো।” আমি মাথা নেড়ে “হ্যাঁ!” বললাম।
আমি যেন বাস্তব আর অবাস্তবের দোলাচলে দুলছিলাম। কী বলছে সে? সময় ভ্রমণ? মিশর? আমার কণ্ঠে সন্দেহ ফুটে উঠল। আমি বললাম, “তুমি কি মজা করছ? এ তো অসম্ভব! আমি কীভাবে তোমার সময়ে যেতে পারি?”
চার্মিআন বলল, “কিছুই অসম্ভব নয়, সুরজিৎ। তুমি শুধু আমার উপর বিশ্বাস রাখো।”
আমি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু তার আগেই চার্মিআন আমার হাত ধরে টেনে নিল। আমি তার শীতল হাতের শক্তি অনুভব করলাম। সে আমাকে নিয়ে কফিনের দিকে এগোল। আমি পেছাতে চাইলাম, কিন্তু পারলাম না। যেন এক অদৃশ্য শক্তি আমাকে বাধ্য করছিল তার নির্দেশ মানতে।
চার্মিআন বলল, “তোমাকে ভয় পেতে হবে না। আমার কফিনের ভিতর দিয়ে আমরা সময় পেরিয়ে চলে যাবো।”
আমি আর কিছু বলার সাহস পেলাম না। চার্মিআন তার অন্য হাত দিয়ে কফিনের ঢাকনা খুলে ফেলল। ভেতরটা অন্ধকার, কিন্তু সেই অন্ধকারের গভীরে একটা অদ্ভুত আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছিল। চার্মিআন বলল, “আমার হাত ধরে থাকো। তোমার চোখ বন্ধ করো।”
আমি বাধ্য হয়ে চোখ বন্ধ করলাম। তারপর মুহূর্তের মধ্যে অনুভব করলাম, যেন কোনো শক্তিশালী ঝড়ে আমাকে কেড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমার চারপাশের সবকিছু ঘুরপাক খেতে লাগল। হাওয়ার শো শো শব্দ, অদ্ভুত সব সুর, আর কোথাও দূরে একটা সুরেলা কণ্ঠ শুনতে পেলাম।
যখন আমার চোখ খুলল, তখন দেখলাম, আমি আর চার্মিআন একটা বিরাট মরুভূমির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। চারপাশে শুধু বালি আর বালি। দিগন্তে দেখা যাচ্ছে কয়েকটা পিরামিড। আকাশটা রক্তিম রঙে রাঙানো, আর বাতাসে মিশে আছে একটা অদ্ভুত গন্ধ।
চার্মিআন বলল, “আমাদের মিশরীয় সভ্যতায় তোমাকে স্বাগত!”
আমি হতভম্ব হয়ে চারিদিকে তাকাচ্ছিলাম। কোথায় আছি আমি? এটা কি সত্যিই প্রাচীন মিশর?
আমি চার্মিআনের দিকে তাকিয়ে বললাম, “তুমি আমাকে এখানে কীভাবে নিয়ে এলে? এটা কি সত্যিই প্রাচীন মিশর? না কি আমি স্বপ্ন দেখছি?”
চার্মিআন মৃদু হাসল। তার মুখে একটা রহস্যময় অভিব্যক্তি ফুটে উঠল। সে বলল, “তুমি স্বপ্ন দেখছ না, সুরজিৎ। এটা বাস্তব। এবার তোমার সামনে আমার গল্পের পর্দা খুলবে। আসো, আমার সঙ্গে।”
সে আমার হাত ধরে মরুভূমির মধ্যে দিয়ে হাঁটতে শুরু করল। বালির উপর দিয়ে হাঁটার সময় আমার মনে হচ্ছিল, আমরা যেন এক নতুন পৃথিবীতে পা রেখেছি। বাতাসে যেন ইতিহাসের শ্বাস প্রশ্বাস মিশে আছে।
চারিদিকে নীরবতা, কিন্তু সেই নীরবতার মধ্যেও একটা চাপা আতঙ্ক লুকিয়ে আছে। দূরে পিরামিডগুলোর ছায়া যেন আমাকে ডাকছিল।
আমি বললাম, “চার্মিআন, তোমার গল্প আমি শোনার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু এখানে আমাদের কি কোনো বিপদ হতে পারে না?”
চার্মিআন থেমে আমার দিকে তাকাল। তার চোখে এক ধরনের কঠিন দৃঢ়তা ফুটে উঠল। সে বলল, “তোমাকে ভয় পেতে হবে না, সুরজিৎ। তুমি আমার অতিথি। আমি যতক্ষণ তোমার সঙ্গে আছি, তোমার কোনো ক্ষতি হবে না। তারপর সবচেয়ে বড় কথা এখানে আমাদের কেউ দেখতে পাবে না বা আমাদের উপস্থিতি অনুভব করতে পারবে না। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো—এই পৃথিবীতে প্রত্যেকটা কাজের একটা মূল্য আছে। আমার গল্প লেখার দায়িত্ব তোমার উপর, আর সেটাই হবে তোমার পরীক্ষা।”
আমি আর কথা বাড়ালাম না। আমরা ধীরে ধীরে মরুভূমি পেরিয়ে একটা পাথরের তৈরি শহরের দিকে এগোতে লাগলাম। শহরের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, এই জায়গাটা বহু শতাব্দী ধরে একা দাঁড়িয়ে আছে, তার নিজের ইতিহাস বয়ে নিয়ে।
আমার মনে ভয়, কৌতূহল, আর উত্তেজনার এক অদ্ভুত মিশ্রণ চলছিল। চার্মিআনের পাশে হাঁটতে হাঁটতে আমার মনে হচ্ছিল, আমি একটা বিশাল রহস্যের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। চার্মিআন কি সত্যিই তার হারিয়ে যাওয়া কাহিনি আমাকে বলবে? আর সেই গল্প কি শুধুই তার, না কি আমার নিজের জীবনের সঙ্গেও তার কোনো যোগসূত্র রয়েছে?
শহরের গেটে পৌঁছে চার্মিআন থামল। সে বলল, “এটাই আমার শহর। এখানেই তোমাকে আমার গল্পের শুরুটা বলব। আসো, সুরজিৎ। আমাদের হাতে সময় খুব কম।” আমি চার্মিআনের নির্দেশ মেনে তার সঙ্গে এগিয়ে গেলাম।
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
ক্লিওপেট্রার দেশে যাত্রা
আমি চার্মিআনের হাত ধরে বাজারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। চার্মিআনের উপস্থিতি যেন পুরো পরিবেশকে আরও মোহময় করে তুলেছিল। তার গায়ের রং গমের মতো উজ্জ্বল, যেন সূর্যের আলো তার শরীরে মিশে গেছে। তার মুখশ্রী আকর্ষণীয়, আর তার বড়ো বড়ো চোখ দুটি যেন সমুদ্রের গভীর রহস্য বহন করে। কাজলের টানে তার চোখের সৌন্দর্য আরও ফুটে উঠেছে। চোখের উপরে টানা কালো রেখা, যা প্রাচীন মিশরীয় নারীদের পরিচিত বৈশিষ্ট্য, যেন তার চোখ দুটিকে আরও তীক্ষ্ণ আর মায়াবী করে তুলেছে। তার গাঢ় কালো চুল কাঁধ পর্যন্ত নেমে এসেছে, যার মাঝখান থেকে সিধা করা স্নিগ্ধ রেখা তার ব্যক্তিত্বকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে। চুলে বাঁধা সোনার ও নীল পাথরের অলঙ্কার, যা সূর্যের আলোয় চকচক করছিল, সেই সময়ের মিশরীয় সংস্কৃতির প্রতীক।
তার সাদা লিনেনের পোশাক, যা তার শরীরকে আলতোভাবে জড়িয়ে রেখেছে, খুব সরল হলেও অত্যন্ত আকর্ষণীয়। কোমরে বাঁধা সোনার বেল্ট পোশাকের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করেছে। তার গলায় রঙিন পাথর ও সোনার তৈরি চোকার, হাতের কবজিতে সোনার ও ব্রোঞ্জের চুড়ি, আর কানে ঝুলানো ছোটো গোলাকার দুল তার ব্যক্তিত্বকে আরও উজ্জ্বল করছিল। পায়ের সোনার নুপুর যেন তার প্রতিটি পদক্ষেপে সুর তুলছিল।
খ্রিস্টপূর্ব ২১০ সালের মিশরের এই বাজার যেন জীবন্ত ইতিহাস। নীল নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই ব্যস্ত বাজারের দৃশ্য আমার কাছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। বাজারে ঢুকতেই ভিন্ন ভিন্ন গন্ধ আর কোলাহল আমার মনকে আচ্ছন্ন করে তুলল। তাজা ফলের গন্ধ, মশলার সুঘ্রাণ, আর মানুষের কোলাহল যেন এক মিশ্র সিম্ফনি।
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, “এই বাজারটা তো দেখতে বেশ আধুনিক মনে হচ্ছে!”
চার্মিআন মুচকি হেসে বলল, “এটাই আমাদের মিশরের সংস্কৃতি। এখানে শুধু কেনাবেচা নয়, আমাদের জীবনযাপনেরও প্রতিফলন ঘটে। প্রতিটি দোকান, প্রতিটি পণ্য আমাদের সভ্যতার পরিচায়ক।”
আমি তার কথায় মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম। বাজারের মাঝখানে একদল কৃষক তাদের তাজা শস্য আর ফলমূলের গাদা সাজিয়ে বসেছেন। আঙ্গুর, ডুমুর, খেজুর আর তিলের তেলের পাত্র লালচে মাটির পাত্রে সাজানো। পাশেই মৎস্যজীবীরা টাটকা মাছ বিক্রির জন্য বড়ো বড়ো ঝুড়ি সাজিয়ে রেখেছেন। তাদের মুখে চিৎকার—“তাজা মাছ! নীল নদীর সেরা মাছ!”
এক কোণে বসে আছেন একজন মৃৎশিল্পী, যিনি মাটি থেকে তৈরি করছেন পাত্র আর দেবদেবীর মূর্তি। তার পাশে স্বর্ণকার সূক্ষ্ম কারুকাজে মগ্ন, রঙিন পাথর আর সোনার অলঙ্কারের ঝলক সূর্যের আলোয় যেন চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, “চার্মিআন, এ কি স্বর্ণের গুণমান আজকের সোনার থেকেও ভালো?”
চার্মিআন হেসে বলল, “হ্যাঁ, আমাদের সময়ের স্বর্ণকাররা শিল্পের পূজারী ছিলেন। প্রতিটি অলঙ্কার ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে তৈরি।”
বাজারের একপাশে সঙ্গীতশিল্পী বীণা বাজাচ্ছেন। তার চারপাশে জড়ো হওয়া মানুষ যেন সেই সুরে হারিয়ে গেছে। একটা ছোটো ছেলের হাত ধরে তার মা তিলের তেল কিনছেন। শিশুদের চোখ চকচক করছে খেলনা আর মিষ্টির দোকানের দিকে।
হঠাৎ, চার্মিআনের চোখে একটা অদ্ভুত আলো ফুটে উঠল। সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি কি জানো, এই বাজারে একটা বিশেষ জায়গা আছে, যেখানে সময় থেমে গেছে।”
আমি কিছুটা বিস্মিত হয়ে বললাম, “সময় থেমে গেছে? তার মানে?”
চার্মিআন একটু গম্ভীর হয়ে বলল, “এই বাজারের শেষপ্রান্তে আমাদের একটা পুরোনো মন্দির আছে। সেখানে গেলে তুমি সময়ের প্রকৃত শক্তি অনুভব করবে।”
আমি আবার কৌতূহলী হয়ে বললাম, “তুমি আমাকে সেখানে নিয়ে যাবে?”
চার্মিআন বলল, “অবশ্যই, তবে আগে আমি তোমাকে আমাদের সভ্যতার আরও কিছু দিক দেখাতে চাই। আমাদের সভ্যতা শুধু সোনা বা শস্যে ধনী ছিল না, আমরা ছিলাম জ্ঞানে আর সংস্কৃতিতে ধনী।”
বাজার থেকে বেরিয়ে আমরা যখন হাঁটছিলাম, চার্মিআন আমাকে মিশরের বিশাল পিরামিড আর স্থাপত্যের কথা বলল। “দেখছো নীল নদ? এটাই আমাদের সভ্যতার প্রাণ। আর এই মরুভূমি আমাদের সাহসিকতার প্রতীক। আমরা এখানে পিরামিড বানিয়েছি, যা শুধু আমাদের রাজাদের সমাধি নয়, আমাদের জ্ঞানের প্রতীক।”
আমি বললাম, “তোমাদের জ্যোতির্বিজ্ঞান আর স্থাপত্য নিয়ে আমি শুনেছি। কিন্তু তোমাদের কাছে এর আসল গল্প কী?”
চার্মিআন হেসে বলল, “তুমি আমার গল্প লিখলে সবই জানতে পারবে। আমাদের সভ্যতা শুধু অতীত নয়, আজকের যুগেরও প্রেরণা।” চার্মিআন তারপর এক মুহূর্ত থেমে বলল, “তুমি হয়তো ভাবছো, আমি তোমার কাছে এত আপন হয়ে উঠলাম কেন?”
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, “হ্যাঁ, এটা তো অদ্ভুতই মনে হচ্ছে।”
চার্মিআন একটু দুঃখ নিয়ে বলল, “আমার অস্তিত্ব হারিয়ে যাওয়ার আগে, আমি চাই কেউ আমার গল্প জানুক। তুমি যদি না লেখো, তবে হয়তো আমার গল্পও হারিয়ে যাবে।”
আমি তার কথায় গভীর আবেগ অনুভব করলাম। চার্মিআন যেন শুধুমাত্র ইতিহাসের এক চরিত্র নয়, বরং এক জীবন্ত স্মৃতি, যে হারিয়ে যাওয়ার আগেই তার গল্প বলতে চায়। আমরা আরও কিছুটা দূরে এগিয়ে গেলাম। আমাদের সামনে একটা বিশাল প্রাসাদের মতো গঠন দেখা যাচ্ছিল। চার্মিআন বলল, “ওখানেই তোমার পরবর্তী অভিযান শুরু হবে।”
আমার মনে এক অদ্ভুত উত্তেজনা তৈরি হলো। আমি বললাম, “তুমি কি বলছো? আবার কিছু নতুন রহস্য অপেক্ষা করছে আমার জন্য?”
চার্মিআন মুচকি হেসে বলল, “তুমি নিজেই জানতে পারবে।”
এই কথা শুনে আমি আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে চার্মিআনকে অনুসরণ করতে লাগলাম। আমার মনে একটাই প্রশ্ন, এই রহস্য আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে?
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - রতুলের রহস্য: রহস্য রোমাঞ্চে ভরা এক বাংলা গল্প!শিলিগুড়িতে বিখ্যাত ব্যবসায়ী সূর্যকান্ত মিত্র খুন!ইন্সপেক্টর সোমনাথ মজুমদারের তদন্তে উঠে আসে নানা রহস্য।নাতনী অদিতি কি খুনের মূল চক্রী?চুরি যাওয়া মূল্যবান পেইন্টিংয়ের সাথে কী সম্পর্ক?একের পর এক রহস্যের সমাধানে সোমনাথ পৌঁছান সত্যের কাছে।রহস্য রোমাঞ্চ পছন্দ করলে এই বাংলা গল্প আপনার জন্যই! সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
রাজপ্রাসাদের রহস্য
চার্মিআনের হাত ধরে আমি রাজপ্রাসাদের অন্দরমহলে প্রবেশ করলাম। চারদিকে সুরম্য প্রাচীর, মসৃণ মার্বেলের মেঝে আর প্রাচীন মিশরীয় শিল্পের অভূতপূর্ব নিদর্শন চোখে পড়ছে। সবকিছু এতটাই জাঁকজমকপূর্ণ যে আমার কাছে যেন স্বপ্নের মতো লাগছিল। প্রাসাদের মধ্যভাগে এক উঁচু মঞ্চে বসে আছেন এক অতীব সুন্দরী মিশরীয় রমণী। তার গায়ে পরা সোনালি কাজের পোশাক সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে। মাথায় বাঁধা সাপের আকৃতির মুকুট, যা রাজসিকতার প্রতীক। বড় বড় কাজল টানা চোখ, তীক্ষ্ণ নাসা আর লাল টুকটুকে ঠোঁট যেন তাকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে। তিনি আর কেউ নন—মিশরের রাজকন্যা ক্লিওপেট্রা। তার পাশে বসে আছেন তার সহচরীরা, যারা তাকে পাখা দিয়ে বাতাস দিচ্ছে।
চার্মিআন আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। আঙুল তুলে বলল, “ওই দেখো, ইনি ক্লিওপেট্রা। এই যুগের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং সুন্দরী নারী। আর ওখানে, ওর পাশে বসে আছি আমি।”
আমি বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি ক্লিওপেট্রার দিকে। ফিসফিস করে বললাম, “ও কি জানে আমরা এখানে?”
চার্মিআন হেসে বলল, “না, আমাদের কেউই দেখতে পাবে না। এই জগতের আমরা কেবল দর্শক।”
ক্লিওপেট্রার গলায় ছিল এক সোনার চোকার, যাতে নীল পাথর বসানো। হাতের আঙ্গুলে শোভা পাচ্ছিল নানান মূল্যবান রত্নখচিত আংটি। তার পায়ে ছিল সোনার তৈরি নুপুর, যা তার হাঁটার সময় মৃদু শব্দ তুলছিল। তিনি যেন এক জীবন্ত দেবী। তার চলন, তার কথা বলার ভঙ্গি, সবকিছুই ছিল তার রাজকীয়তাকে তুলে ধরার এক নিখুঁত উদাহরণ।
চার্মিআন আমাকে রাজপ্রাসাদের ছাদে নিয়ে এলো। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে। নীল নদের মৃদু হাওয়া আমাদের মুখে এসে লাগছিল। নিচে তাকিয়ে দেখি, একদল সেনা প্রাসাদের বাইরে মহড়া দিচ্ছে। চার্মিআন বলল, “এখানে তোমার সময় থেমে আছে, কিন্তু ইতিহাসের প্রতিটি ক্ষণ এখানে জীবন্ত।”
আমি মুগ্ধ হয়ে তার কথা শুনছিলাম, আর ভাবছিলাম, সত্যিই কি আমি ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায়ের সাক্ষী?
চার্মিআনের সাথে এতক্ষণ কাটানোর পর আমি যেন পুরোপুরি মিশরের ঐতিহাসিক পরিবেশে ডুবে গিয়েছিলাম। তার উপস্থিতি, কথার ভঙ্গি, আর আশেপাশের বিস্ময়কর দৃশ্য সবই আমাকে মুগ্ধ করছিল। ক্রিস্টপূর্ব ২১০ সালের মিশরে হাঁটতে হাঁটতে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম, এখানে আসার পিছনে আমার মূল উদ্দেশ্য কী। কিন্তু হঠাৎই সেই প্রশ্নটা আমার মাথায় ফিরে এলো।
আমি একটু থেমে চার্মিআনের দিকে তাকিয়ে বললাম, “তুমি বললে না তো, তোমার গল্প? তুমি কে? ক্লিওপেট্রার পাশে তোমার এই অবস্থান কেমন করে?”
চার্মিআন আমার প্রশ্ন শুনে এক মুহূর্তের জন্য চুপ করে গেল। তার বড় বড় কাজল টানা চোখ দুটো যেন আরও গাঢ় হয়ে উঠল। তারপর সে নরম স্বরে বলল, “আমার গল্প খুব সাদামাটা হলেও, আমি ইতিহাসের একটা হারানো অধ্যায় হয়ে গেছি। আমি ছিলাম ক্লিওপেট্রার নিকটতম সহচরী। তার বিশ্বাসপাত্র। তার দুঃখ, তার যুদ্ধ, তার ভালোবাসা—সবকিছু আমি দেখেছি।”
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, “তাহলে তুমি ক্লিওপেট্রার সমস্ত রহস্য জানো?”
চার্মিআন হাসল, সেই হাসিতে যেন প্রাচীন মিশরের এক গোপন জগত ফুটে উঠল। “হয়তো জানি, হয়তো জানি না। কিছু গল্প ইতিহাসের গহীনে লুকিয়ে থাকে, কিছু গল্প কখনও বলা হয় না,” সে বলল।
তার কথা শুনে আমি আরও জানতে আগ্রহী হলাম। মনে হলো, ইতিহাসের এই অধ্যায়ে আরও গভীরে ডুব দিতে চাই। প্রাসাদের ছাদে একটা বেঞ্চের মত পাথরের ওপর আমরা বসলাম। চার্মিআন বলতে শুরু করল,
“ক্লিওপেট্রার রাজপ্রাসাদে তখন জীবন ছিল যেন এক ছন্দময় সুর। রাজপ্রাসাদের অন্দরমহল সুবাসিত করত সুগন্ধি আর তাজা ফুলের মালা। আর সেই প্রাসাদেরই প্রহরী ছিল এলেক্সাস, একজন শক্তিশালী, সাহসী এবং অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী অঙ্গরক্ষক। তার দীর্ঘ গঠন, চকচকে ত্বক আর গভীর চোখের চাহনিতে যে কোনো মানুষ মোহিত হয়ে যেত। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না।
আমার সাথে এলেক্সাসের প্রথম দেখা হয়েছিল প্রাসাদের এক বিশাল আঙিনায়। সেদিন আমি প্রাসাদের শিল্পীদের কাজ দেখতে গিয়েছিলাম। এলেক্সাস তখন প্রহরারত অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল। তার চোখে ছিল আত্মবিশ্বাস, এবং ঠোঁটে এক রহস্যময় হাসি। আমার বুকের ভেতর যেন কিছু একটা কাঁপলো। সে আমার দিকে তাকিয়েছিল, আর সেই দৃষ্টিতে আমি বুঝতে পারলাম, এ দেখা কেবল একপক্ষীয় নয়। আমরা কথা বলেছিলাম সেদিন। তার কণ্ঠস্বর যেন মরুভূমির রাতে শোনা কোনো মৃদু সুরের মতো, যা মনকে প্রশান্তি দেয়।
এরপর আমাদের দেখা হতে লাগল প্রায় প্রতিদিন। রাজপ্রাসাদের অলিন্দে, বাগানে কিংবা নীল নদীর পাড়ে—প্রতিটি মুহূর্ত যেন এক নতুন গল্পের শুরু। আমি জানতাম, আমাদের সম্পর্ক লুকিয়ে রাখতে হবে। কারণ ক্লিওপেট্রার মতো এক মহীয়সী রাণীর অঙ্গরক্ষকের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না। কিন্তু প্রেম তো কোনো সীমা মানে না। এলেক্সাসও আমাকে গভীরভাবে ভালোবাসত, এবং তার সাহসী হৃদয় আমাকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করত।
কিন্তু সেই সুখের দিন বেশিদিন স্থায়ী হলো না। ক্লিওপেট্রা ছিল এক অত্যন্ত চতুর এবং সন্দেহপ্রবণ শাসক। তার প্রাসাদে কিছুই গোপন থাকত না। আমাদের সম্পর্কের কথা তার কানে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগেনি। একদিন, নীল নদীর ধারে এলেক্সাসের সাথে আমার গোপন সাক্ষাৎ চলছিল, আর সেই মুহূর্তেই ক্লিওপেট্রার গুপ্তচর আমাদের দেখে ফেলে।
ক্লিওপেট্রা বিষয়টি জানতে পেরে প্রথমে কিছুই প্রকাশ করল না। সে তার ভেতরের রাগ আর ক্রোধকে চেপে রেখে একটি নিখুঁত পরিকল্পনা আঁটল। তার নজর পড়েছিল এলেক্সাসের প্রতি, কিন্তু সেটি ভালোবাসার জন্য নয়। সে চেয়েছিল এলেক্সাস তার একান্ত ব্যক্তিগত দাস হয়ে থাকুক। ক্লিওপেট্রা নিজে ছিল একজন ক্ষমতাশালী নারী, কিন্তু তার চরিত্রে ছিল একধরনের অপ্রতিরোধ্য ব্যভিচারী আচরণ। এলেক্সাসকে সে নিজের করে নিতে চেয়েছিল, কিন্তু এলেক্সাস সরাসরিই তা প্রত্যাখ্যান করে। সে বলেছিল, “আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া আর কারো হতে পারি না।”
ক্লিওপেট্রার এই প্রত্যাখ্যান সহ্য হলো না। সে তার ভেতরের অন্ধকারকে জাগ্রত করল এবং প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। এক সন্ধ্যায়, সে আমাকে প্রাসাদে ডেকে পাঠাল। আমি ভেবেছিলাম হয়তো কোনো কাজের জন্যই আমাকে ডাকা হয়েছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি, ক্লিওপেট্রা নিজের হাতে এক বিষাক্ত ছুরি মেলে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে এক শীতল হাসি। সে বলল, “তোমাদের ভালোবাসা আমার রাজ্যকে অপমান করেছে। তুমি আর এলেক্সাস কেউই এই রাজ্যে বেঁচে থাকার অধিকার রাখো না।”
আমি প্রতিবাদ করতে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তার চোখে তখন ক্রোধের আগুন জ্বলছিল। সে জানিয়ে দিল যে, মরুভূমির এক বিশেষ বিছের বিষ সে সংগ্রহ করেছে, যা দিয়ে সে এলেক্সাসকে হত্যা করবে। আমি এলেক্সাসকে সতর্ক করতে ছুটে যেতে চাইলাম, কিন্তু ক্লিওপেট্রার দাসীরা আমাকে থামিয়ে দিল।
সেই রাতেই, ক্লিওপেট্রা তার পরিকল্পনা কার্যকর করল। এক গোপন কক্ষে ডেকে পাঠিয়ে সে এলেক্সাসকে তার আনুগত্য প্রমাণ করার জন্য চাপ দিল। এলেক্সাস পুনরায় তা প্রত্যাখ্যান করল, এবং ক্লিওপেট্রার চোখে আগুন জ্বলে উঠল। সে তার হাতে থাকা ছুরিতে বিষ মেখে এলেক্সাসের বুকে আঘাত করল। আমি যখন সেখানে পৌঁছালাম, তখন এলেক্সাস মাটিতে পড়ে ছিল, তার মুখে আমার জন্য শেষবারের মতো এক অসহায় চাহনি।
ক্লিওপেট্রা তখন আমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। তার মুখে সেই একই শীতল হাসি। সে বলল, “তোমাদের প্রেমের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তুমি এই রাজ্যের নিয়ম ভেঙেছ। তাই তোমাকেও মরতে হবে।” এর পর সে বিষাক্ত ছুরিটি আমার বুকে ঢুকিয়ে দিল। ব্যথা আমার শরীর ছেয়ে ফেলেছিল, কিন্তু তার থেকেও বেশি ছিল এলেক্সাসকে হারানোর যন্ত্রণা।
শেষ মুহূর্তে, আমি দেখেছিলাম ক্লিওপেট্রার বিজয়ের হাসি। কিন্তু আমার মনে ছিল শুধু এলেক্সাস। আমি জানতাম, মৃত্যু হয়তো আমাদের পৃথক করেছে, কিন্তু আমাদের ভালোবাসা চিরন্তন। মৃত্যুর পরেও আমি বিশ্বাস করি, আমাদের আত্মা একসঙ্গে থাকবে, আর ক্লিওপেট্রার প্রতিশোধের সেই রাত হয়তো তার নিজের জন্যও এক অভিশাপ হয়ে থাকবে।
এই ছিল মিশরের বুকে আমাদের নিষিদ্ধ প্রেমের করুণ পরিণতি। মরুভূমির রুক্ষ হাওয়া আর নীল নদীর ঢেউ যেন আজও আমাদের সেই ভালোবাসার গল্প গুনগুনিয়ে শোনায়।”
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
বন্ধুত্বের বন্ধন
চার্মিআনের কথা শুনে আমি গভীরভাবে মগ্ন হয়ে ছিলাম। তার কণ্ঠের প্রতিটি শব্দ যেন ইতিহাসের এক এক টুকরো চিত্র হয়ে আমার সামনে ফুটে উঠছিল। আমি ওকে কিছু একটা বলতে যাবো, এমন সময় হঠাৎ দেখি তার চোখে জল। তার সেই ভেজা চোখ, কাজলের টানে আরও গভীর হয়ে ওঠা দৃষ্টিটা আমাকে কিছুটা অস্বস্তি, আবার কিছুটা আকর্ষণে বেঁধে রাখল। আমি সাহস করে তার কাছে গিয়ে হাত বাড়ালাম। আমার কাঁধে মাথা রেখে চার্মিআন অশ্রুতে ভিজতে লাগল। তার শরীরের কম্পন, তার দীর্ঘশ্বাসের শব্দ—সব যেন আমাকে এক অন্যরকম অনুভূতিতে ভরিয়ে তুলল।
রাত তখন অনেক হয়েছে। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, তার ম্লান আলো প্রাসাদ চত্বরের সিঁড়িগুলোকে রহস্যময় করে তুলেছিল। চার্মিআন হঠাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে আমার হাত ধরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল। আমি তার সঙ্গে পা মিলিয়ে চললাম। সে আমাকে প্রাসাদের পেছনের এক সুন্দর বাগানে নিয়ে এল। বাগানটি ছিল ফুলে ভরা, চাঁদের আলোয় ফুলগুলোর রং যেন সাদা-কালো ছবির মতো ফুটে উঠছিল।
একজন প্রহরী বাগানের এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিল। চার্মিআন আঙুল তুলে তার দিকে ইশারা করে বলল, “ওই যে, আমার এলেক্সাস!”
আমি কিছুটা অবাক হলাম, কিছুটা কৌতূহলী। চার্মিআনের কথায় এলেক্সাসের দিকে তাকালাম। দূর থেকে তার মুখ পুরোপুরি দেখা যাচ্ছিল না। তবে যত কাছে এগোলাম, ততই আমার বিস্ময় বাড়তে লাগল। তার চেহারা, তার দাঁড়াবার ভঙ্গি, এমনকি তার চোখের গভীরতাও যেন আমার নিজেরই প্রতিচ্ছবি। আমি হতবাক হয়ে গেলাম। আমি নিজের মধ্যে আর এলেক্সাস এর মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
আমার চুপ হয়ে যাওয়া দেখে চার্মিআন আমার হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল, “সুরজিৎ, এবার বুঝতে পারলে, আমি তোমাকেই কেন আমার গল্প লেখার জন্য বেছে নিয়েছিলাম?”
আমার কণ্ঠ যেন শুকিয়ে গেল। আমি শুধু নীরবে তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। সেই গভীর চাহনি আমাকে অতীত আর বর্তমানের এক জটিল আবর্তে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল।
আমরা বাগানের একটি পাথরের ওপর বসে পড়লাম। চার্মিআন আমাকে কিছু বলছিল, কিন্তু আমার মন তখন পুরোপুরি বিভ্রান্ত। তখনই বাগানের এক কোণে চার্মিআনের আর এলেক্সাসের একটি দৃশ্য আমাকে আরও মুগ্ধ করল। খ্রিস্টপূর্ব ২১০ সালের চার্মিআন আর তার এলেক্সাস চাঁদের আলোয় বাগানের এক কোণে বসে একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিল।
চার্মিআনের চোখে এক গভীর ভালোবাসা ফুটে উঠছিল, আর এলেক্সাসের চোখে ছিল এক অপরিসীম মমতা। তারা একে অপরের হাতে হাত রেখে বসে রইল। এলেক্সাস তার মৃদু স্বরে চার্মিআনকে বলল, “তুমি জানো তো, আমার জীবনের সমস্ত সুখ তুমি। তোমার সঙ্গে এই ক্ষণগুলোই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার।”
চার্মিআন তার হাত ধরে বলল, “এলেক্সাস, তোমাকে ছাড়া আমি কিছুই নই। তুমি আমার প্রাণ, আমার ভালোবাসা, আমার ইতিহাস।”
চাঁদের আলোয় তাদের মুখ দুটি যেন এক অপার্থিব জ্যোতিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল। তাদের মধ্যকার ভালোবাসা শুধু তাদের নয়, পুরো পরিবেশকেই এক স্বর্গীয় সৌন্দর্যে ভরে তুলছিল। আমি আর চার্মিআন সেই দৃশ্য দেখে চুপচাপ বসে রইলাম।
রাত ধীরে ধীরে আরও গভীর হয়ে এলো। চার্মিআন হঠাৎ বলল, “আমাদের এবার ফিরতে হবে। অতীতকে বেশি সময় ধরে ছুঁয়ে থাকা আমাদের জন্য বিপজ্জনক।”
আমি তার কথা শুনে কিছু না বলে তার পিছু পিছু চললাম। সে আমাকে প্রাসাদের ঠেলে এক ফাঁকা জায়গায় একটা পুরোনো মন্দিরের কাছে নিয়ে এল। তার মুখে তখন এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা। সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার কাজ শেষ। ইতিহাসের গল্প বলা হয়েছে। এবার তোমাকে ফিরতে হবে, কিন্তু আমার গল্প তোমার মনে গেঁথে থাকবে চিরকাল।”
আমি কিছু বলার আগেই সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল। আমার চারপাশে শুধুই নীরবতা। চার্মিআনের মুখের সেই শেষ দৃষ্টিটুকু আমার মনের গহীনে চিরস্থায়ী হয়ে রইল।
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - রহস্যের রঙ: ষাট বছরের পুরনো রহস্য উন্মোচন! এক অসাধারণ “অবলম্বন” চিত্রকর্ম, এক লেখক, এবং এক গ্রামের লুকানো রহস্য। এই বাংলা গল্পের লেখনীতে ফুটে উঠেছে রহস্য, রোমাঞ্চ, এবং শিল্পের গভীরতা। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
ফিরে আসা এবং লেখার শুরু
চোখ খুলতেই দেখলাম, আমি মিউজিয়ামের মমির ঘরে চার্মিআন এর মমির পাশে শুয়ে আছি। আলো-আঁধারি ভোরের আলো জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকছে। পাশেই সঞ্জীব বাবু বসে আমাকে তোলার চেষ্টা করছেন। তার কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, “উঠুন! আপনি ঠিক আছেন তো?”
আমি ধীরে ধীরে উঠে বসলাম। মাথা তখনও যেন ঘুরছে। সঞ্জীব বাবু উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে বললেন, “আমি ভোরবেলা উঠে দেখি মমিটা তার নির্দিষ্ট জায়গাতেই আছে, কিন্তু আপনাকে মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে যাই। কী হয়েছিল আপনার?”
আমি তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চার্মিআন-এর মমির দিকে একবার গভীরভাবে তাকালাম। আমার মনে তখনও রাতের ঘটনাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল। একমাত্র আমিই জানতাম সেই রাতে কী ঘটেছিল। কিন্তু তা বলার মতো মানসিক শক্তি তখন আমার ছিল না।
আমি হালকা হাসি দিয়ে বললাম, “কিছু না সঞ্জীব বাবু, হয়তো ক্লান্তি থেকে এমনটা হয়েছে। ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য করার জন্য।”
সঞ্জীব বাবু আমাকে মিউজিয়াম থেকে বাইরে নিয়ে এলেন। সূর্যের আলো তখন সবে শহরটাকে আলোকিত করছে। আমি বাড়ি ফিরে গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। কিন্তু চার্মিআন-এর মমি, তার গল্প, তার চোখের জল—সব কিছু আমার মনে গভীরভাবে দাগ কেটে গেল। সেই থেকেই আমি আমার নতুন উপন্যাস লেখা শুরু করলাম। নাম দিলাম “প্রেমের অতীত”।
উপন্যাসটি চার্মিআন আর এলেক্সাসের বিরহ আর প্রেমের গল্প। গল্পটি আমার মনের গভীর থেকে উঠে আসা। কয়েক মাসের মধ্যে উপন্যাসটি ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করল। পাঠকরা আমার গল্পে হারিয়ে যেতে লাগল। আমি ভেবেছিলাম, আমার চার্মিআনের সঙ্গে সংযোগ এখানেই শেষ, কিন্তু জীবন তো সবসময়ই রহস্যময়!
একদিন আমি মেট্রো ধরে এস্প্ল্যানেড থেকে টালিগঞ্জের দিকে যাচ্ছিলাম। মেট্রোর ভিড়ের মধ্যে আমি একটি কোণে বসে ছিলাম। হঠাৎ দেখি, আমার সামনের সিটে বসে থাকা একজন ২৩-২৪ বছরের মহিলা আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তার চোখে এক ধরনের কৌতূহল, যা আমার মধ্যে অস্বস্তি আর কৌতূহল দুটোকেই জাগিয়ে তুলল। কিন্তু ভিড়ের মাঝে উনার মুখ পুরোটা দেখতে পাচ্ছিলাম না।
তিনি একটু সামনে ঝুঁকে এসে বললেন, “আপনি ‘প্রেমের অতীত’ উপন্যাসের লেখক, না?”
আমি তার কথায় চমকে উঠলাম। সবচেয়ে অবাক হলাম তাকে দেখে। তার চেহারা—চোখ, ভ্রু, এমনকি তার মুখের কাঠামো—সবকিছু যেন মিশরের চার্মিআনের মতো। আমি কিছুক্ষণ হতবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তারপর নিজেকে সামলে হালকা হাসি দিয়ে বললাম, “হ্যাঁ, আমি ওই উপন্যাসের লেখক। আপনি পড়েছেন?”
মহিলাটি নিজের ব্যাগ থেকে একটি বই বের করে বললেন, “হ্যাঁ, পড়েছি। অসাধারণ লেখা! একটা অটোগ্রাফ দেবেন?”
আমি তার বইটি হাতে নিলাম এবং অটোগ্রাফ দেওয়ার আগে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনার নাম কী?”
তিনি মুচকি হেসে বললেন, “হর্ষিতা।”
আমি বইতে তার নাম লিখতে গিয়ে থমকে গেলাম। হর্ষিতা—এই নামের অর্থও তো “আনন্দময়ী,” যা চার্মিআনের অর্থের মতোই। আমার হাত সামান্য কাঁপছিল, কিন্তু আমি নামটি লিখে দিলাম। বইটি ফেরত দিয়ে বললাম, “আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগল।”
হর্ষিতা হেসে বললেন, “আপনার লেখা আমাকে ভীষণ প্রভাবিত করেছে। যেন মনে হয়, আমি নিজেই সেই গল্পের অংশ। ধন্যবাদ, স্যার।”
তিনি তার স্টেশনে নেমে গেলেন। আমি তাকে যেতে দেখলাম, কিন্তু আমার মন তখন অদ্ভুত চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। তার মুখ, তার কথা, তার নাম—সব যেন আমার চার্মিআনের সঙ্গে মিলে যাচ্ছিল।
আমি নিজের মনে একটাই প্রশ্ন করতে থাকলাম, “চার্মিআন কি সত্যিই আমার কাছে ফিরে এসেছে? নাকি এ শুধুই কাকতালীয় ঘটনা?”
এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো কখনও জানা হবে না। কিন্তু সেই দিনের পর থেকে আমার মন এক অদ্ভুত বিশ্বাসে ভরে গেল যে, কিছু গল্পের সত্যি হওয়া দরকার নেই, কারণ তারা আমাদের মনের গভীরে চিরকাল জীবন্ত থাকে।