পরিচ্ছেদ ১: রহস্যের সূচনা
কলকাতার বালিগঞ্জ এলাকার ছোট্ট অথচ জনপ্রিয় চিরাচরণ ক্যাফেতে ইন্সপেক্টর সোমনাথ মজুমদার বসেছিলেন। তার সামনে ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা। সোমনাথ, ৪৫ বছর বয়সী একজন অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার, যার চেহারায় দৃঢ়তার স্পষ্ট ছাপ থাকলেও চোখে ছিল এক গভীর মানসিক বোঝাপড়ার ঝলক। জীবনের বহু রহস্য ভেদ করলেও, আজকের দুপুরটা যেন একটু শান্ত, নিরুদ্বেগ।
তবে তার পাশেই বসে থাকা দশ বছরের ছেলেটি এই শান্তির ব্যতিক্রম ঘটায়। ছেলেটির নাম রতুল। মলিন একটি ঝোলা পাশে রাখা, মুখটি ক্লান্ত এবং বিষণ্ণ। তার চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়তেই সোমনাথ চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে জিজ্ঞাসা করেন,
“তুমি কাঁদছো কেন, খোকা?”
ছেলেটি প্রথমে কিছু বলতে চায়নি। কিন্তু সোমনাথের স্নেহমিশ্রিত কণ্ঠে মনের জড়তা ভাঙে।
রতুল: “আমার কাকা বিশ্বজিৎ কাকু নিখোঁজ। আমি মাকে বলেছিলাম কিন্তু মা বিশ্বাস করেনি। বাড়িতে কেউ শুনতেই চায় না। তাই আমি পালিয়ে এসেছি।”
সোমনাথ: (তার গম্ভীর কণ্ঠে) “তোমার কাকা কবে থেকে নিখোঁজ? কোনো ঝামেলা হয়েছিল?”
রতুল: “তিন দিন হয়ে গেল। তিনি শিলিগুড়ি যেতেন, সূর্যকান্ত মিত্র নামে এক বড়লোকের জন্য কাজ করতেন। মা বলছে, কাকু হয়তো ফিরে আসবেন। কিন্তু আমি জানি, তিনি ঝামেলায় পড়েছেন।”
সোমনাথ ছেলেটির মাথায় হাত রেখে তাকে সান্ত্বনা দেন। “তোমার কাকাকে খুঁজে বের করা আমার দায়িত্ব। তুমি এখন কোথায় যাবে?” রতুল চুপচাপ তাকিয়ে থাকে, যেন তার জীবনের শেষ ভরসা সোমনাথ মজুমদার। ঠিক তখনই সোমনাথের ওয়াকিটকিতে একটি জরুরি বার্তা আসে।
ওয়াকিটকি থেকে ভেসে আসে: “ইন্সপেক্টর মজুমদার, শিলিগুড়িতে সূর্যকান্ত মিত্রকে তার বাড়ির স্টুডিয়োতে খুন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য আপনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
সোমনাথ দ্রুত রতুলকে স্থানীয় থানায় নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এবং নিজে শিলিগুড়ি রওনা দেন। ট্রেনে বসে রতুলের কথাগুলি তার মাথায় ঘুরছিল। বিশ্বজিৎ নিখোঁজ হওয়া এবং সূর্যকান্ত মিত্রের খুন কি কোনোভাবে যুক্ত?
শিলিগুড়িতে পৌঁছে সোমনাথ ঘটনাস্থলে যান। সূর্যকান্ত মিত্রের বাড়ি বাইরে থেকে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ। কিন্তু ভিতরের স্টুডিয়ো ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন—একটি বিশৃঙ্খল, আতঙ্কময় দৃশ্য। মেঝেতে সূর্যকান্ত মিত্রের নিথর দেহ পড়ে আছে। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন, পাশে রক্তের দাগ। ঘর এলোমেলো অবস্থায়, যেন কেউ কিছু খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে।
সোমনাথের নজরে পড়ে দেওয়াল থেকে একটি মূল্যবান চিত্র—”মুক্তা-কুমারী”—চুরি হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ঘরের অন্য চিত্রগুলো একেবারে ঠিকঠাক জায়গায় আছে। যেন চোরের লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র এই একটি পেইন্টিং।
ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক তরুণী, অদিতি সেন। তিনি সূর্যকান্ত মিত্রের নাতনী। তার চোখে ভয় এবং উদ্বেগের ছাপ।
সোমনাথ: “আপনি এখানে কীভাবে এলেন?”
অদিতি: “আমি আজ বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে দাদুর ঘরে এসেছিলাম। এসে দেখি উনি মেঝেতে পড়ে আছেন। আমি তখনই পুলিশে খবর দিই।”
সোমনাথ: “আপনার সঙ্গে আর কেউ ছিল?”
অদিতি: “না, আমি একাই ছিলাম। তবে… আমার দুলটা হারিয়ে গেছে।”
এই কথায় সোমনাথ একটু থমকে যান। একটি দুল খুনের দৃশ্যের সঙ্গে কীভাবে জড়িত হতে পারে? তার মনে প্রশ্ন ওঠে—এটি কি নিছকই একটি কাকতালীয় ঘটনা?
সোমনাথ প্রথমেই বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের বিষয়ে খোঁজ নেন। সূর্যকান্ত মিত্রের ছেলে অভিষেক বিদেশে থাকেন, এবং তার নাতি যশ বাড়ির আরেক সদস্য। যশকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘটনার রাতে সে বাড়িতে ছিল না। অন্যদিকে, অদিতির কথাগুলিতে অসঙ্গতি লক্ষ করেন সোমনাথ।
ঘরে থাকা একটি জানালার পাশে পায়ের ছাপ পাওয়া যায়। মাটি এবং কাঁচের টুকরো দেখে মনে হয় কেউ সেখান দিয়ে পালিয়েছে। কিন্তু ঘরের ভেতরের এলোমেলো অবস্থা দেখে বোঝা যায়, চোর শুধু পেইন্টিংটি লক্ষ্য করেছিল।
তদন্তের এই পর্যায়ে সোমনাথ একটি নতুন সূত্র খুঁজে পান। পেইন্টিংটির নাম “মুক্তা-কুমারী”। এটি সূর্যকান্ত মিত্রের ব্যক্তিগত সংগ্রহের একটি অমূল্য চিত্র। কিন্তু চিত্রের একটি অদ্ভুত বিষয়—চিত্রের মহিলার পরা দুলটি অদিতির হারানো দুলের মতো। সোমনাথ এখন নিশ্চিত, অদিতি কিছু লুকোচ্ছে।
অন্যদিকে, রতুলের কথাগুলিও সোমনাথের মনে বারবার ফিরে আসে। তার কাকা বিশ্বজিৎ কি মিত্রের এই খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত? এই দুটি রহস্য কি একে অপরের সঙ্গে কোনোভাবে সংযুক্ত?
ঘটনার ঘনঘটা বাড়তে থাকে, আর সোমনাথ ধীরে ধীরে গভীর এক ষড়যন্ত্রের সামনে এসে দাঁড়ান।
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - রহস্যের রঙ: ষাট বছরের পুরনো রহস্য উন্মোচন! এক অসাধারণ “অবলম্বন” চিত্রকর্ম, এক লেখক, এবং এক গ্রামের লুকানো রহস্য। এই বাংলা গল্পের লেখনীতে ফুটে উঠেছে রহস্য, রোমাঞ্চ, এবং শিল্পের গভীরতা। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
পরিচ্ছেদ ২: সন্দেহের বেড়াজাল
সোমনাথ মজুমদার শিলিগুড়িতে মিত্র পরিবারের সদস্যদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রহস্য খুঁজতে ব্যস্ত। তার মাথায় এখন কেবল একটি প্রশ্ন ঘুরছে—”মুক্তা-কুমারী” নামের এই পেইন্টিং, অদিতির হারানো দুল, এবং সূর্যকান্ত মিত্রের মৃত্যু কি একে অপরের সঙ্গে কোনওভাবে যুক্ত?
“মুক্তা-কুমারী” একটি অত্যন্ত মূল্যবান চিত্রকর্ম। ছবিতে একজন রূপবতী নারীকে দেখা যায়, তার পরনে সাদা রেশমি শাড়ি এবং তার গলায় ঝুলছে মুক্তোর দুল। পেইন্টিংটির বিশেষত্ব হলো, মুক্তোর দুলটি বাস্তব মুক্তো দিয়ে তৈরি, যা ছবির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুণ। এই ছবিটি সূর্যকান্ত মিত্রের ব্যক্তিগত সংগ্রহের একটি দুর্লভ রত্ন। শোনা যায়, ছবিটি প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী নীরদ সেন আঁকেন, এবং এর পেছনে একটি অভিশপ্ত ইতিহাস রয়েছে। কথিত আছে, এই ছবিটি যাঁর সংগ্রহে থাকে, তাঁর জীবনে নেমে আসে অপ্রত্যাশিত দুর্যোগ।
ঘরের বিশৃঙ্খলার মধ্যেও সোমনাথ লক্ষ্য করেন, “মুক্তা-কুমারী” চুরি হলেও অন্যান্য দামী চিত্রগুলি অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছে। তিনি ভাবেন, “এটি কি শুধুই পেইন্টিং চুরি, নাকি এর পেছনে আরও বড় কোনও উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে?”
পরের দিন সকালে, যশের সঙ্গে কথা বলতে যান সোমনাথ। যশ, সূর্যকান্ত মিত্রের নাতি, এক যুবক যার ব্যক্তিত্ব কিছুটা নির্লিপ্ত এবং চঞ্চল। সোমনাথ প্রথমে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করেন:
সোমনাথ: “খুনের রাতে তুমি কোথায় ছিলে?”
যশ: (কিছুটা নার্ভাস) “আমি বাড়িতে ছিলাম না। বন্ধুদের সঙ্গে ডিনারে গিয়েছিলাম। দরকার হলে তুমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে পারো।”
সোমনাথ: “তুমি কি কখনো দাদুর সংগ্রহে থাকা ‘মুক্তা-কুমারী’ ছবিটি নিয়ে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছ?”
যশ: (অস্থির হয়ে) “ছবিটা দেখতে সুন্দর, কিন্তু আমার কোনও আগ্রহ নেই। আমি এইসব পুরোনো জিনিসে তেমন সময় দিই না।”
যশের উত্তর সরাসরি হলেও সোমনাথ তার চোখে এক অদ্ভুত অস্বস্তি লক্ষ্য করেন। যশ কি সত্য বলছে, নাকি কিছু লুকোচ্ছে?
অন্যদিকে, অদিতি যে খুনের সময় কলেজে ছিল, তা তার সহপাঠীদের কাছে নিশ্চিত করা হয়। তবে, অদিতির চোখে-মুখে এক ধরনের চাপ স্পষ্ট। সোমনাথ তাকে জিজ্ঞেস করেন,
সোমনাথ: “তোমার হারানো দুল সম্পর্কে বলো। কবে খেয়াল করেছিলে যে দুলটা নেই?”
অদিতি: (বিস্মিত হয়ে) “কলেজ থেকে ফিরে আমি বুঝতে পারি, আমার দুলের একটি অংশ নেই। কিন্তু… এটা কীভাবে খুনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে?”
সোমনাথ: (গভীর দৃষ্টিতে) “তুমি কি জানো, ‘মুক্তা-কুমারী’ ছবিতে যে দুল দেখা যায়, তা তোমার দুলের সঙ্গে হুবহু মেলে?”
অদিতি নিঃশ্বাস বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তার চেহারার আতঙ্ক সোমনাথের সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
তদন্তের মধ্যেই সোমনাথ আবার রতুলকে ডেকে পাঠান। ছোট্ট ছেলেটি কিছুটা ভীত, কিন্তু তার চোখে এখন সাহসের আভাস।
সোমনাথ: “রতুল, তোমার কাকা বিশ্বজিৎ সম্পর্কে আর কিছু বলতে পারো? তিনি কি সূর্যকান্ত মিত্রের বাড়িতে যাতায়াত করতেন?”
রতুল: (মৃদু কাঁপা গলায়) “হ্যাঁ। কাকা মাঝে মাঝে দাদুর কাজে সাহায্য করতেন। কিন্তু কয়েকদিন আগে, তিনি বলেছিলেন যে তার সঙ্গে বড় কিছু ভুল হচ্ছে। তারপর থেকে আমি তাকে আর দেখিনি।”
সোমনাথ: “তিনি কি কখনো ‘মুক্তা-কুমারী’ ছবির কথা বলেছিলেন?”
রতুল: “হ্যাঁ, বলেছিলেন। তিনি বলতেন ছবিটা অভিশপ্ত।”
বিশ্বজিতের নিখোঁজ হওয়া এবং মিত্রের মৃত্যু, দুটো ঘটনা কি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত? সোমনাথ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকেন।
তদন্ত আরও রহস্যময় মোড় নেয়, যখন শিলিগুড়ির এক গুপ্ত বাজার থেকে পুলিশ “মুক্তা-কুমারী” ছবিটি উদ্ধার করে। সোমনাথ তৎক্ষণাৎ সেই দোকানদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
সোমনাথ: “ছবিটা কে বিক্রি করেছিল?”
দোকানদার: (ভীতস্বরে) “এক মুখোশধারী লোক এসেছিল। তার মুখ আমি দেখিনি। তবে তার হাতে একটা পুরোনো দাগ ছিল।”
সোমনাথ: “দাগটা কোথায় ছিল?”
দোকানদার: “ডান হাতের কব্জিতে।”
এই তথ্য সোমনাথকে নতুন এক সম্ভাবনার দিকে ঠেলে দেয়। যশের ডান হাতে একটা পুরোনো পোড়ার দাগ আছে, যা তিনি আগে খেয়াল করেছিলেন। এখন, এই দাগ কি কেবলই কাকতালীয়, নাকি যশের সঙ্গে এই রহস্যের গভীর কোনও সম্পর্ক রয়েছে?
ঘটনাস্থলে পাওয়া জানালার কাছে পায়ের ছাপ এবং ঘরে এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে থাকা জিনিসপত্রও নতুন এক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। সোমনাথ বুঝতে পারেন, এই রহস্য কেবল একটি খুন বা চুরির নয়—এটি হয়তো আরও বড় কোনও ষড়যন্ত্রের অংশ।
সোমনাথের চোখে তখন একটি দৃঢ় সংকল্প—যে করেই হোক, এই জটিল রহস্য সমাধান করতেই হবে। এবার তার পরবর্তী পদক্ষেপ হবে যশ এবং অদিতির অতীত খুঁটিয়ে দেখা, এবং সেই সঙ্গে রতুলের কাকার সন্ধান করা।
পরিচ্ছেদ ৩: অদিতি ও যশের সত্য উন্মোচন
সোমনাথ মজুমদার এখন এক এক অজানা পথে চলছেন। সূর্যকান্ত মিত্রের মৃত্যু এবং “মুক্তা-কুমারী” পেইন্টিংয়ের চুরির পেছনে কি গভীর কোনও রহস্য লুকিয়ে আছে? সোমনাথ ভাবতে থাকেন, আর একে একে তিনি পুরানো দালানগুলির অন্ধকার কোণে যে সমস্ত সত্য খুঁজে বের করেছেন, সেগুলোর মধ্যে এক একটি রহস্য যেন নতুন প্রশ্নের জন্ম দেয়।
সোমনাথ আবার অদিতিকে ডেকে পাঠান। অদিতি, যার চোখে ভয় ও সন্দেহের মিশ্রণ স্পষ্ট, তাকে এবার কিছু কঠিন প্রশ্ন করা হয়।
সোমনাথ: “খুনের রাতের ঘটনাটি স্পষ্ট করে বলো। তোমার দাদুর সঙ্গে কি কিছু ঝগড়া হয়েছিল?”
অদিতি: (গলা ধরে আসে) “হ্যাঁ, আমার দাদুর সঙ্গে কিছু সমস্যা হচ্ছিল। পড়াশোনার বিষয় নিয়ে প্রচণ্ড তর্ক হয়েছিল। আমি খুব রাগী হয়ে তাকে ঠেলে দিয়েছিলাম। কিন্তু… আমি তাকে মারার ইচ্ছা ছিল না, সোমনাথ। সে একেবারে হঠাৎ পড়ে গিয়েছিল, আমি ভেবেছিলাম সে ঠিক হয়ে উঠবে, কিন্তু তারপর…” (অদিতি থেমে যায়, চোখে জল)
সোমনাথ: “তবে, তুমি কি মনে করো, তোমার দাদুর মৃত্যু শুধু একটি দুর্ঘটনা ছিল?”
অদিতি: “হ্যাঁ, আমি বিশ্বাস করি এটি দুর্ঘটনা। আমি কখনোই তাকে হত্যা করিনি, সোমনাথ। আমার মনে হচ্ছিল, সে যদি বেঁচে থাকতো, আমার জীবন আরও সুন্দর হতো। কিন্তু…”
সোমনাথের মনে সন্দেহ ঘুরে বেড়ায়। তার মুখে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না, কিন্তু এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অদিতির অভিব্যক্তি কি সত্যিই সঠিক?
এবার যশের সঙ্গে দ্বিতীয়বার কথোপকথনে প্রবেশ করেন সোমনাথ। যশ, যাকে প্রথম দিকে সন্দেহের তীর ছিল, এবার কিছুটা হালকা মনে হয়।
সোমনাথ: “তুমি বলেছিলে যে খুনের রাতে তুমি বাড়িতে ছিলে না। কিন্তু পরে যে চুরির পেইন্টিংটি বিক্রি করেছিলে, তা কি তুমি বুঝতে পেরেছিলে যে এই ঘটনার সাথে এটি সম্পর্কিত?”
যশ: (অস্থির হয়ে) “সত্যি বলতে, আমি প্রথমে কিছু বুঝতে পারিনি। খুনের পর বাড়ি ফিরে এসে দেখি দাদু পড়ে আছেন, তার রক্তের মধ্যে আমি ঘাবড়ে গিয়ে ছিলাম। আমি কিছু না ভেবেই স্টুডিও এলোমেলো করে দিয়েছিলাম, যেন কিছু ঢেকে রাখি। কিন্তু তারপর যে পেইন্টিংটি চুরি হয়েছিল, আমি সেটা বিক্রি করে দিয়েছিলাম। আমার উদ্দেশ্য কখনোই খুন করা ছিল না, আমি শুধু ভয় পেয়েছিলাম।”
সোমনাথ: (বিস্মিত হয়ে) “তুমি কি ভাবতে পারো, পেইন্টিংটি কেন চুরি করা হয়েছিল? এবং কেন তুমি সেটি বিক্রি করতে গিয়েছিলে?”
যশ: (খুব ধীরে) “আমি জানি না, সোমনাথ। পেইন্টিংটি দেখে আমি কেবল মনে করেছিলাম যে, কেউ তার থেকে কিছু লাভ করতে চাইবে। সেটা আমি বুঝতে পারিনি।”
সোমনাথ: “অথচ, তুমি যখন এই কাজ করছিলে, তখন কি তুমি জানতে না যে এটাই পুরো ঘটনার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ?”
যশ: (আতঙ্কিত হয়ে) “না, আমি কিছু জানতাম না। আমি কেবল নিজের জীবনের জন্য চিন্তিত ছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, পেইন্টিংটি বিক্রি করলেই কিছুটা আর্থিক লাভ হতে পারে, কিন্তু তারপর এই বিপদে পড়ে গেলাম।”
যশের কথার মধ্যে, অদিতির মধ্যে, এবং অন্যদের মধ্যে যা কিছু বেরিয়ে এসেছে, সবকিছু মিলিয়ে আরও গভীর রহস্যের আভাস দেয়। সোমনাথ বুঝতে পারেন, যে ঘটনাগুলির মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে, তা একটি বড় খেলার অংশ। কিছু একটা লুকানো আছে—একটি উদ্দেশ্য, একটি পরিকল্পনা, যা আরও অন্ধকারের মধ্যে ডুবে গেছে।
আরেকটি নতুন সূত্র সোমনাথের হাতে আসে যখন শিলিগুড়ির একটি গুপ্ত বাজার থেকে পুলিশের কাছে চুরি হওয়া “মুক্তা-কুমারী” পেইন্টিংটি উদ্ধার হয়। দোকানদার জানায়, মুখোশধারী এক ব্যক্তি ছবিটি বিক্রি করে ছিল। তার এক হাতের কব্জিতে একটি পোড়ানোর দাগ ছিল। সোমনাথ তখন খেয়াল করেন, যশের ডান হাতেও ঠিক একই দাগ রয়েছে।
সোমনাথ: (ধীরে) “যশ, তোমার হাতে এই দাগ কি?”
যশ: (কিছুটা হকচকিয়ে) “এটি… এটি পুরনো, কিছুদিন আগে একটি দুর্ঘটনায় পোড়েছিল।”
সোমনাথ আরও জোরালোভাবে তাকে জিজ্ঞাসা করেন, “এটি কি তোমার কোনো ভুল সিদ্ধান্তের ফলাফল?”
যশের দাগ, অদিতির সন্দেহজনক মন্তব্য, এবং পেইন্টিংয়ের ব্যাপারে তার আচরণ—সবকিছু মিলিয়ে যেন একটা নতুন মাত্রা পেয়েছে। সোমনাথ নিশ্চিত হতে পারেন, একে একে সব জিনিসের পেছনে কোনও দুর্বৃত্ত পরিকল্পনা কাজ করছে।
আরও কিছু সময় পর সোমনাথ মনে করেন, এই রহস্যের মূল কারণ হয়তো কোনো পূর্বপরিকল্পিত শিকার, যেখানে সবাই একে অপরের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য তৈরি করছে। এই চোরাকারবারি বা খুনের পেছনে কোনো বড় উদ্দেশ্য আছে।
সোমনাথ: (মনে মনে) “এটা তো শুধুই খুন বা চুরি নয়, এর পিছনে হয়তো কিছু গভীর রহস্য রয়েছে… কোনও ভয়ানক ষড়যন্ত্র।”
এই পথে আরও অনুসন্ধান শুরু করতে, সোমনাথ তার পরবর্তী পদক্ষেপে একটু স্পষ্টতা চায়—যা তাকে আরও কাছে নিয়ে যাবে সত্যির।
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - মৃত্যুর শেষ খাতা: "মৃত্যুর শেষ খাতা" একটি রহস্য রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প, যেখানে এক সাধারণ বীমা কর্মী রহস্যময় মৃত্যু ও প্রতারণা চক্র উন্মোচনে সাহসিকতার সঙ্গে জীবন ও সততার লড়াই করে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
পরিচ্ছেদ ৪: বিশ্বজিতের নিখোঁজ রহস্য
সোমনাথ মজুমদার এখন আরও এক ধাপ এগিয়ে। মিত্রের মৃত্যু এবং বিশ্বজিতের নিখোঁজ হওয়া একেবারে নতুন দিশা দেখাচ্ছে তাকে। রতুলের দেওয়া তথ্যের পর, সোমনাথ বুঝতে পারেন যে, বিষয়টি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সম্পর্কের সমীকরণ নয়, বরং একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। মিত্রের বিরুদ্ধে কিছু গোপন তথ্য ছিল, যা বিশ্বজিৎ জানতেন, এবং সেই তথ্যই তাকে বিপদে ফেলেছিল।
একদিন রতুল সোমনাথের কাছে এসে, তার কাকার সম্পর্কে কিছু গোপন তথ্য জানায়। সে জানায়, তার কাকা বিশ্বজিৎ মিত্রের বিরুদ্ধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতেন। এই তথ্যগুলো মিত্রের বিরুদ্ধে একটি বড় অপরাধের প্রকাশ ঘটাতে পারে, এবং সেই কারণেই মিত্র নিজে তাকে নিখোঁজ করে দিয়েছিল। রতুলের মুখে শোনা কথা, সোমনাথের মনে আরও বড় প্রশ্নের জন্ম দেয়।
রতুল: “কাকা জানতেন মিত্রের কিছু গোপন ব্যাপার। সেগুলো যদি ফাঁস হয়ে যেত, তবে মিত্রের বিপদ ঘটত।”
সোমনাথ: “তোমার কাকা কী তথ্য জানতেন?”
রতুল: “এটা আমি জানি না, কিন্তু তিনি অনেকবার বলেছিলেন, মিত্রের বিদেশে অর্থ পাচারের ব্যাপারে কিছু প্রমাণ তার হাতে আছে।”
সোমনাথ: (চিন্তিত হয়ে) “অর্থ পাচার… তাই তো! এটা তো পুরো ঘটনা বদলে দিতে পারে।”
রতুলের দেওয়া তথ্য সোমনাথের মনকে আরও জাগিয়ে তোলে। মিত্রের বিদেশে অর্থ পাচারের পরিকল্পনা, এবং বিশ্বজিৎ সেই প্রমাণ ফাঁস করতে চেয়েছিলেন—এটাই কি মূল রহস্য? এই বিষয়ে অনেক কিছুই এখন পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। সোমনাথ মনে করেন, মিত্র হয়তো জানতে পেরে বিশ্বজিৎকে সরিয়ে দিয়েছে, যাতে তার অপরাধ ফাঁস না হয়।
সোমনাথ আরও কিছু দিন আগের তথ্যগুলো খতিয়ে দেখতে শুরু করেন। এর মধ্যে, মিত্রের সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যবসায়ী, যারা আন্তর্জাতিক পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের নাম উঠে আসে। এই ব্যবসায়ীদের মধ্যে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিল, যারা মিত্রের পরিকল্পনার গোপন সংযোগ স্থাপন করেছিল।
সোমনাথ: (মনে মনে) “মিত্রের মৃত্যুর পেছনে হয়তো এইসব ব্যবসায়ীদের হাত আছে। তার মৃত্যু ও বিশ্বজিৎ নিখোঁজ হওয়া—দু’টোই কি সম্পূর্ণ রকম ভাবে পরস্পর সম্পর্কিত?”
এদিকে, সোমনাথের হাতে আরও একটি সূত্র আসে। শিলিগুড়ির একটি গুপ্ত বাজারে পুলিশ চুরি হওয়া পেইন্টিং উদ্ধার করে। এই চুরি হওয়া পেইন্টিং, “মুক্তা-কুমারী”, সোমনাথের কাছে আগেই গুরুত্ব পেয়েছিল। পেইন্টিংটি যখন উদ্ধার হয়, তখন পুলিশ জানায় যে, এক মুখোশধারী ব্যক্তি এটি বিক্রি করতে এসেছিল।
পুলিশ কর্মকর্তা: “এই ছবি ছিল মিত্রের স্টুডিওতে। কিন্তু, এই মুখোশধারী ব্যক্তি এটি বিক্রি করেছিল, এর পিছনে কোনো বড় কারণ থাকতে পারে।”
সোমনাথ: (জিজ্ঞাসা করে) “আপনার কাছে কি কোনো তথ্য আছে, সেই ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে?”
পুলিশ কর্মকর্তা: “আমরা তেমন কিছু নিশ্চিত নই, তবে ছবি বিক্রেতার শরীরে পোড়ানোর দাগ ছিল।”
এই নতুন তথ্য সোমনাথের চিন্তা আরও গভীর করে তোলে। “এটা তো যশের হাতের দাগের মতো! যশ কি সত্যিই এই বাজারের সঙ্গে জড়িত?”—এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে তার মাথায়।
সোমনাথ আবার যশের সাথে কথা বলতে যান। যশের মুখে কিছুটা ভয় ফুটে ওঠে, কিন্তু সোমনাথ তাকে কিছু কঠিন প্রশ্ন করেন।
সোমনাথ: “যশ, তুমি কি জানো, শিলিগুড়ির গুপ্ত বাজারে ওই ছবি বিক্রি করা হয়েছে?”
যশ: (হালকা ভয় পেয়ে) “না, আমি জানি না। আমি তো কেবল… কেবল নিজের জীবন নিয়ে চিন্তা করছিলাম।”
সোমনাথ: “তোমার যদি কোনো সম্পর্ক থাকে, তুমি সেটা আমাদের জানাতে পারো। এভাবে সব কিছু চাপা দেওয়া হবে না।”
যশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে, তার চোখে আতঙ্ক স্পষ্ট। তারপর সে ধীরে ধীরে মুখ খোলার চেষ্টা করে।
যশ: “সত্যি বলতে, আমি জানি না, কিন্তু আমি… আমি জানি যে কিছু তথ্য মিত্রের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। কিছু পেইন্টিংগুলোও ছিল, যা মিত্রের শত্রুদের কাছে চলে গিয়েছিল। কিন্তু আমি… আমি জানি না, সোমনাথ, আমি কিছু করিনি।”
এখন সোমনাথের কাছে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। মিত্রের মৃত্যু, বিশ্বজিৎ নিখোঁজ, পেইন্টিং চুরি—সবই একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। মিত্রের বিদেশে অর্থ পাচারের পরিকল্পনা এবং সেই তথ্য আটকানোর জন্য বিশ্বজিৎকে সরিয়ে দেওয়া—এটা কি শুধুই একটি দুর্ঘটনা ছিল?
সোমনাথ ভাবতে থাকেন, “বিশ্বজিৎ কি আসলেই মিত্রের গোপন তথ্য ফাঁস করতে চেয়েছিল? তাহলে মিত্র তাকে কেন নিখোঁজ করাল?” আর, যশ কি সত্যিই পুরো ঘটনার সাথে জড়িত ছিল? যদি তাই হয়, তবে কি এটি ছিল তার কোনো বড় পরিকল্পনার অংশ, যা এখনো পুরোপুরি প্রকাশিত হয়নি?
এখন সব কিছু এক হয়ে যাচ্ছে, এক একটি পাজলের টুকরো জায়গায় জায়গায় বসছে। কিন্তু সোমনাথ জানেন, এই রহস্যের সমাধান একদম কাছাকাছি, আর তার পরবর্তী পদক্ষেপই এই পুরো ঘটনার পর্দাফাশ করবে।
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - আকাশছোঁয়া রহস্য: রাতে সোহমের সামনে উন্মোচিত হয় এক অদ্ভুত দৃশ্য। লেকের ধারে এক উজ্জ্বল গোলক, আর তার ভেতরে রহস্যময় এক প্রাণী! পৃথিবী রক্ষার জন্য কি সোহমকে এই অদ্ভুত প্রাণীর সাহায্য নিতে হবে?রহস্য রোমাঞ্চে ভরা এই বাংলা গল্পে জেনে নিন সোহমের অভিযানের কাহিনী। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
পরিচ্ছেদ ৫: রহস্যের শেষ অধ্যায়
পরিশেষে, সোমনাথ মজুমদার তার দীর্ঘ এবং কঠিন অনুসন্ধান সফলভাবে সম্পন্ন করলেন। শিলিগুড়ির গুপ্ত বাজারের তথ্য, যশের অস্বাভাবিক কথাবার্তা এবং রতুলের গোপন তথ্য—সব কিছু মিলিয়ে এক কঠিন চিত্র তার সামনে ফুটে উঠেছিল। আর এবার, তাকে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর মিলেছে।
অবশেষে, তদন্তের শেষ পর্যায়ে সোমনাথ নিশ্চিত হন যে, যশ ছিল সমস্ত ঘটনার এক কেন্দ্রীয় চরিত্র। পেইন্টিং চুরি, বিশ্বজিৎকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, এবং তার অস্বাভাবিক আচরণ—সব কিছুই তাকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছিল। সোমনাথ প্রমাণ জোগাড় করেন এবং যশের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য লাভ করেন।
সোমনাথ: “যশ, তোমার বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে। তুমি যদি এখনও কিছু না বলো, তবে পরিণতি হবে ভয়াবহ।”
যশ: (কাঁপতে কাঁপতে) “আমি… আমি খুন করতে চাইনি! এটা একটি দুর্ঘটনা। আমি কিছুই জানতাম না, শুধু… শুধু অদিতির ব্যাপারে কিছু করছিলাম। আমার উদ্দেশ্য কখনোই খুন করা ছিল না!”
সোমনাথ: “তোমার সব কথা ঠিক নয়, যশ। তুমি জানো, এসব দুর্ঘটনা হতে পারে না। তুমি সব জানো, কিন্তু সত্যি বলছো না।”
যশ মাথা নিচু করে থাকে। সোমনাথের কঠোর প্রশ্নে সে কিছুক্ষণ চুপ থাকে, এরপর আঘাতপ্রাপ্ত মুখে বলে,
যশ: “আমি সত্যি বলছি, আমি চাইনি কিছু এমন ঘটে। আমি জানি না, কিভাবে এই সব কিছু ঘটল।”
এবার, সোমনাথ যশকে গ্রেফতার করেন, কিন্তু তার বিরুদ্ধে একটিও হত্যা অভিযোগ আনা হয়নি। অদিতির মানসিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে, তাকে কোনো অভিযোগ থেকে রেহাই দেওয়া হয়।
কিছুদিন পর, পুলিশ উত্তরবঙ্গের এক প্রত্যন্ত এলাকা থেকে নিখোঁজ বিশ্বজিৎকে উদ্ধার করে। তার চেহারা অবশেষে সামনে আসতে থাকে। নিখোঁজ থাকা বিশ্বজিৎ আত্মসমর্পণ করেন।
বিশ্বজিৎ: (দুঃখিত চোখে) “মিত্র আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। সে জানত, আমি তার অপকর্ম ফাঁস করতে যাচ্ছি। মিত্রের সমস্ত অপরাধের প্রমাণ আমার কাছে ছিল। তবে সে জানত, আমি তাকে প্রকাশ্যে আনলে তার সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। তাই সে আমাকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল।”
বিশ্বজিৎ আরো জানান, মিত্রের অনেক বড় অপরাধ ছিল—বিশ্বব্যাপী অর্থ পাচারের একটি বৃহৎ পরিকল্পনা। তার ওপর চাপ প্রয়োগ করে মিত্র তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু বিশ্বজিৎ পালিয়ে গিয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেই প্রমাণ ছিল মিত্রের বিরুদ্ধে এক বিশাল হাতিয়ার।
বিশ্বজিৎ তার বক্তব্যে সকল প্রমাণ তুলে ধরলে, পুলিশ মিত্রের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মিত্রের অপরাধের ভয়াবহতা, তার পাচারের সম্পর্ক, এবং বিশ্বজিৎকে হত্যার চেষ্টা—সব কিছু খোলামেলা হয়ে উঠে। মিত্রকে গ্রেফতার করা হয়, এবং তদন্ত সারা হয়ে যায়।
সোমনাথ: (বিশ্বজিৎকে ধন্যবাদ জানিয়ে) “তুমি যদি পালিয়ে না যেতে, তবে হয়তো কিছুই জানা যেত না। তুমি সত্যি কথা বলেছ, এবং সেই কারণে মিত্রের অপকর্ম এখন প্রকাশিত হয়েছে।”
বিশ্বজিৎ: “তোমাদের সাহসের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। যদি আমি থাকতাম, মিত্র আমাকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন আমি মুক্তি পেলাম।”
মামলা শেষ হওয়ার পর, রতুল তার কাকার সঙ্গে পুনর্মিলিত হয়। তাদের সম্পর্ক যেন একটি নতুন জীবনের শুরু হয়। রতুল বুঝতে পারে, তার কাকার জীবন এবং অস্তিত্ব অনেক গভীরতার মধ্যে চলে গিয়েছিল, আর সেই কারণেই তাদের মধ্যে এত রহস্য ছিল। কিন্তু শেষমেশ, সে তার কাকার সাথে ফিরে এসে এক নতুন সূর্যের আলো দেখতে পায়।
রতুল: “এতদিন পর, কাকা, তোমার সাথে কথা বললাম। সব কিছু ভেবেছিলাম, কিন্তু এতদিন ধরে তুমি কোথায় ছিলে?”
বিশ্বজিৎ: “সব কিছুই সময়ের সাথে আসে, রতুল। আজকে যা বলছি, সে কথাগুলো সত্যি। তবে আশা করি তুমি সব কিছু বুঝবে।”
সোমনাথ মজুমদার জানতেন, এই তদন্তটি ছিল তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু সব শেষে, সে সফল হয়েছে। তার কঠোর পরিশ্রম এবং অটুট মনোভাবই তাকে এই সফলতার পথে নিয়ে এসেছে।
সোমনাথ: (নিজে মনে) “এটা ছিল কঠিন একটা মামলা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্য বেরিয়ে এল। রতুলের সঙ্গে কাকার মিলন, মিত্রের অপরাধের প্রমাণ, আর যশের অস্বীকার—সব কিছু মিলিয়ে এক সুস্পষ্ট ছবি দাঁড়িয়েছে।”
এইভাবে, সোমনাথ মজুমদারের জন্য শেষ হলো এক কঠিন মামলা, কিন্তু তার জন্য নতুন কিছু রহস্যের শুরু। সে জানত, যতই রহস্য সমাধান হোক, জীবনে নতুন চ্যালেঞ্জ আসবেই। এখন সে প্রস্তুত ছিল পরবর্তী রহস্যের জন্য—আর এই তদন্তের সমাপ্তি তাকে আরেকটি গল্পের জন্য প্রস্তুত করে দিয়েছিল।