অধ্যায় ১: রহস্যের শুরু
রবিন সেন একজন সাধারণ, সোজা-সাপটা জীবন যাপনকারী মানুষ। কলকাতার একটি প্রতিষ্ঠিত বীমা কোম্পানিতে কাজ করেন তিনি, যেখানে তার প্রধান কাজ ছিল বীমা দাবির কাগজপত্র যাচাই করা, তথ্য বিশ্লেষণ করা এবং সবকিছু সঠিকভাবে প্রক্রিয়া করা। প্রতিদিনের মতো আজও অফিসে এসেছে রবিন, তার ডেস্কে বসে কাজ শুরু করার সময় মনে পড়ে যায়, গত সপ্তাহে তার কাছে কোন নতুন বীমা দাবি আসেনি। তার জীবন একদম রুটিনমাফিক—প্রতিদিন এক ঘরানার কাজ, কখনো কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে না। তিনি নিঃসন্দেহে একজন পেশাদার, অফিসের নিয়মকানুন মেনে চলে, কিন্তু কখনোই তার মনে হয়নি যে কিছু রহস্য তার জীবনের দরজায় দাঁড়িয়ে।
আজকের দিনটিও প্রথমে তার কাছে অন্য দিনের মতোই মনে হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে একটি অদ্ভুত ফাইল তার ডেস্কে চলে আসে। ফাইলটি ছিল বিষ্ণু আগরওয়ালের বীমা দাবি সংক্রান্ত, যিনি কিছুদিন আগে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। বিষ্ণু আগরওয়াল ছিলেন এক ধনী ব্যবসায়ী, কলকাতার অন্যতম বড় শিল্পপতি। তার মৃত্যু হয়েছিল এক দুর্ঘটনায়, এবং তার পরিবার তার মৃত্যুর পর একটি বড় পরিমাণ বীমা দাবি জমা দিয়েছে।
ফাইলটি খোলার পর, প্রথমে সবকিছুই স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। কিন্তু খুব দ্রুতই রবিন কিছু অস্বাভাবিকতা খুঁজে পেতে শুরু করেন। প্রথমত, ফাইলের মধ্যে থাকা কিছু খরচের হিসাবগুলো পুরোপুরি খোলাসা হয়নি। কিছু খরচ ছিল যেগুলোর কোনো ব্যাখ্যা ছিল না, অথচ সেগুলি বিপুল পরিমাণ টাকা সংক্রান্ত। যেমন, বিষ্ণু আগরওয়ালের মৃত্যুর পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে জমা দেওয়া দাবির মধ্যে ছিল বিশাল একটি অস্বাভাবিক খরচ, যার পেছনে কোন নথিপত্র বা ব্যাখ্যা ছিল না। এই ধরনের অস্বচ্ছতা রবিনের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়।
আরেকটি অদ্ভুত বিষয় ছিল কিছু ফোন নাম্বার, যা ফাইলের মধ্যে মিশে ছিল। ফোন নাম্বারগুলি একেবারে অজ্ঞাত, কিছু পরিচিতি ছিল না, আর সবথেকে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এই নাম্বারগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ল্যান্ডলাইন নাম্বার ছিল, যা ভারতে না থেকে অন্য কোনো দেশের কোড থেকে আসছিল। এই ফোন নাম্বারগুলির কোন ভিত্তি ছিল না, এবং এর সাথে সম্পর্কিত কোনো তথ্যও ফাইলে ছিল না। রবিন কিছুক্ষণ ধরে ফোন নাম্বারগুলো পর্যবেক্ষণ করছিলেন, এবং অনুভব করলেন, এগুলোর মধ্যে কিছু গোপন বিষয় লুকানো থাকতে পারে।
ফাইলের আরো একটি অদ্ভুত দিক ছিল বিষ্ণুর মৃত্যুর পর তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে মুছে দেওয়া লেনদেনের তথ্য। রবিন যখন ওই অ্যাকাউন্টের ট্রানজ্যাকশন হিসাব চেক করেন, তিনি দেখতে পান কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনের তথ্য পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে গেছে। এই ধরনের তথ্য মুছে ফেলা সাধারণত একটি বড় জালিয়াতির ইঙ্গিত দেয়, এবং এটা রবিনের মনে সন্দেহের জন্ম দেয়। কেন কোন লেনদেন গোপন করা হচ্ছে? এবং যদি এসব লেনদেন গোপন করা হয়, তবে এর পেছনে কি কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে?
এছাড়া, ফাইলের মধ্যে আরও কিছু অদ্ভুত ঘটনা ছিল। বিষ্ণু আগরওয়ালের মৃত্যুর পর তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং অস্থাবর সম্পত্তির ব্যাপারে কেমন যেন গোপনীয়তা বজায় রেখেছিল। এ সব বিষয়গুলো রবিনের মনেও নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করে। তার মনে হতে থাকে, তার সামনে যে ফাইলটি এসেছে, সেটি কোনো সাধারণ বীমা দাবি নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কিছু বড় রহস্য, যা তার জীবনের সাধারণ গতিপথকে বদলে দিতে পারে।
রবিন জানতেন না, এই ফাইলের মধ্যে যে তথ্য লুকিয়ে রয়েছে, তা তাকে এমন এক ভয়ানক পথে নিয়ে যাবে, যেখানে কোনো প্রত্যাবর্তন সম্ভব হবে না। সে কীভাবে এবং কেন এই রহস্যের শিকার হবে, তা তার ভাবনায় ছিল না, কিন্তু এখন সে জানে—এই অদ্ভুত বীমা দাবির ফাইলটি তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে যাচ্ছে।
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - আকাশছোঁয়া রহস্য: রাতে সোহমের সামনে উন্মোচিত হয় এক অদ্ভুত দৃশ্য। লেকের ধারে এক উজ্জ্বল গোলক, আর তার ভেতরে রহস্যময় এক প্রাণী! পৃথিবী রক্ষার জন্য কি সোহমকে এই অদ্ভুত প্রাণীর সাহায্য নিতে হবে?রহস্য রোমাঞ্চে ভরা এই বাংলা গল্পে জেনে নিন সোহমের অভিযানের কাহিনী। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অধ্যায় ২: অনুসন্ধানের পথে
প্রথম দিকে, শুধু কিছু সন্দেহজনক তথ্য তার মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল, কিন্তু এখন তা এক ভয়ের রূপ নিতে শুরু করেছিল। রবিনের মন থেকে একবারই কাটছিল না যে, কিছু যেন খুবই অস্বাভাবিক ঘটছে, যা সে এখনও পুরোপুরি বুঝতে পারছে না। এই অনুভূতির সাথে কাজ করতে করতে তার মধ্যে এক অদ্ভুত উদ্বেগ তৈরি হচ্ছিল।
রবিন, যে সবসময় নিয়মের মধ্যে কাজ করতে অভ্যস্ত, এবার নিজের রুটিনের বাইরে গিয়ে কিছু খুঁজে বের করার জন্য মনস্থির করে। তিনি প্রথমে বিষ্ণু আগরওয়ালের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত নেন। বিষ্ণুর স্ত্রী, মিতালি, এবং তার ছেলে, অমিত, কেবল এতটুকু বলেছিলেন যে বিষ্ণু একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন এবং তার মৃত্যু ছিল এক দুর্ঘটনা। কিন্তু যখন রবিন তাদের আরো কিছু প্রশ্ন করেন, তখন তাদের মুখে কিছু গুলিয়ে যায়, একেবারে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন তারা।
“বিষ্ণু একটা গোপন প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন,” অমিত তার দিকে মুঠো করে একপাশে তাকিয়ে বলেছিল। কিন্তু এরপর আরও কিছু বলার আগে সে থেমে যায়। মিতালি চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, “সব কিছুই খুব স্বাভাবিক ছিল। আমাদের কাছে সব কিছু পরিষ্কার ছিল, তবে সে প্রকল্প সম্পর্কে আমরা বেশি কিছু জানতাম না।”
এখানে রবিনের সন্দেহ আরো গভীর হয়। গোপন প্রকল্প? এই বিষয়টি অনেকটা রহস্যের মতো মনে হচ্ছিল। এটি কি কোনো ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল, না কি এর পেছনে কোনো অন্ধকার প্রকল্প ছিল?
রবিন তখন তার অফিসের কম্পিউটার সিস্টেমে আরও গভীরে প্রবেশ করেন। অফিসের ডেটাবেসে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়, কিন্তু বিশেষ কিছু নজরে আসে। বিষ্ণু আগরওয়ালের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মধ্যে কিছু অস্বাভাবিক লেনদেন ছিল। ওই লেনদেনগুলো ছিল এমন, যা কোনো সাধারণ ব্যবসায়িক লেনদেনের মতো নয়। তাদের সাথে কোনো নথি বা ব্যাখ্যা ছিল না। মজার ব্যাপার হলো, কিছু লেনদেন সম্পন্ন হয়েছিল বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে, এবং কিছু লেনদেন হ্যাকারদের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছিল—যারা কোনো ট্র্যাক রেখেছিল না। এমনকি কিছু লেনদেনের পেছনে কোনো নাম বা চিহ্নও পাওয়া যায়নি।
বিষ্ণু আগরওয়ালের ব্যবস্থাপনায় সম্পন্ন হওয়া এই অস্বাভাবিক লেনদেনগুলি রবিনের সন্দেহ আরো গভীর করেছে। তার মনে হচ্ছিল, এই লেনদেনগুলোর পেছনে কিছু গোপন ও বৃহত্তর পরিকল্পনা ছিল। এমনকি, কিছু লেনদেনের তথ্য গোপন করা হয়েছিল, এবং সেগুলি পরবর্তী সময়ে বাতিল হয়ে যায়। এটা সবই যেন কোনো বড় ধরনের খেলা চলছিল, যা সামনে এসে পড়ছে রবিনের।
একদিন রবিন তার কপিরাইট করা তথ্যগুলো বিশদভাবে পর্যালোচনা করতে গিয়ে আরো কিছু অস্বাভাবিক তথ্য খুঁজে পান। বিষ্ণুর মৃত্যুর পর, তার পরিবার কীভাবে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং অন্যান্য সম্পত্তির ব্যাপারে কেমন এক গোপনীয়তা বজায় রেখেছে, তা তার কাছে রহস্যময় মনে হচ্ছিল।
এছাড়া, রবিন একটি খুঁজে পায় যে, বিষ্ণু আগরওয়ালের কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং অ্যাকাউন্ট হ্যাকারদের মাধ্যমে পরিবর্তন বা মুছে ফেলা হয়েছিল। এবং এটি কেবল নিছক কাকতালীয় ঘটনা ছিল না। রবিন ধরে নিল যে, এই সমস্ত ঘটনা, ফাইলের মধ্যে লুকানো অস্বাভাবিকতা, এবং হ্যাকিংয়ের ঘটনা এক সাথে মিলিয়ে বড় কিছু রহস্যের সংকেত দিচ্ছিল।
যতই তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ততই যেন নতুন নতুন সমস্যা সামনে আসছিল। একদিন, যখন রবিন আরো গভীরে প্রবেশ করতে শুরু করেন, তার কাছে একটি ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্তে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির কণ্ঠ শুনে রবিনের শরীরের রক্ত যেন জমে গিয়েছিল। ওই ব্যক্তি হুমকি দিয়েছিল, “তুমি যা খুঁজছো, তা তোমার জীবন শেষ করে দিতে পারে। আর যদি তুমি আরো গভীরে যাও, তবে তোমার জন্য আর কিছু বাঁচবে না।”
এই হুমকি রবিনের মন থেকে কখনোই মুছে যায়নি। কিন্তু কোনো কিছুই তাকে থামাতে পারেনি। সে জানত, এখন তার কাছে সঠিক পথ খুঁজে বের করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
অধ্যায় ৩: প্রথম হুমকি
রবিন সেন একদিন তার ডেস্কে বসে, বিষ্ণু আগরওয়ালের বীমা দাবির ফাইল নিয়ে কাজ করছিলেন। দীর্ঘদিনের অভ্যাস অনুযায়ী, তিনি একে একে সব নথি যাচাই করছিলেন, তবে আজ কিছুটা অস্বাভাবিক লাগছিল। ফাইলের মধ্যে থাকা বিভিন্ন পলিসি এবং লেনদেনের মধ্যে কিছু এমন তথ্য ছিল, যা তার কাছে অদ্ভুত মনে হচ্ছিল। বিশেষত, ফাইলের একটি অংশ ছিল যেখানে বিষ্ণুর কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তির অদ্ভুত আর্থিক লেনদেনের রেকর্ড ছিল, এবং সে সম্পর্কিত কোনো প্রমাণ ছিল না। এসব কিছুই প্রথম দিকে তার চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এখন তা স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।
তবে এর মাঝেই, যখন রবিন একটি গোপন ফাইল থেকে কিছু এক্সট্রা ডকুমেন্ট বের করার চেষ্টা করছিল, তার ফোনের স্ক্রীনে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসলো। তিনি ফোনটি তুলতেই অপর প্রান্ত থেকে এক অজ্ঞাত, ভীতি-ভরা কণ্ঠ শোনা যায়—”তুমি যে রহস্য অনুসন্ধান করছো, সেটা তোমার জীবন শেষ করে দেবে।” রবিন কিছু সময় স্তম্ভিত হয়ে শুনেছিলেন। তার হৃদপিণ্ডের হার দ্রুত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত ব্যক্তি কথা বলেই থেমে না গিয়ে, আরো বলেছিল, “যত দ্রুত সম্ভব সব কিছু ছেড়ে দাও, আর না হলে ফল ভাল হবে না।”
ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর রবিন কিছুটা শিউরে ওঠেন। সে জানত, এমন পরিস্থিতিতে ভীত হওয়া মানে তার কাজের প্রতি সৎ আগ্রহের পরাজয়। তবে তার মন বলে, “এটা আরেকটা সতর্কতা।” কিছু সময়ের জন্য সে পুরোপুরি স্থির হয়ে থাকলেও, সে জানত, এই ফোনটা কোনো সাধারণ ভয়ভীতি প্রদর্শন নয়। এর পিছনে কিছু ছিল, যা সে বুঝতে পারছিল না।
ফোনের পর, রবিনের মনে একটি নতুন সংকল্প জাগে—সে থেমে যাবে না। রহস্য যে গভীরে গিয়েছে, তা সে জানত। তিনি আবার বিষ্ণু আগরওয়ালের বীমা দাবি ফাইলটি খোলেন। এবার তিনি আরও গভীরে মনোযোগী হয়ে যান। ফাইলের মধ্যে তিনি কিছু লুকানো তথ্য খুঁজে পান—তথ্যগুলো এমন, যা সাধারণত কোনো স্বাভাবিক বীমা দাবির ফাইলে থাকে না। বিশেষ করে, বিষ্ণুর একটি ব্যবসায়িক চুক্তি এবং তার ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মধ্যে বড় অংকের লেনদেনের একাধিক প্রমাণ ছিল। এসবের সঙ্গে কোনো বীমা নথির সম্পর্ক ছিল না, এমনকি অনেক লেনদেন বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা হ্যাকারদের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছিল। এসবই যেন একটি পরস্পর সম্পর্কিত রহস্যের ইঙ্গিত দিচ্ছিল।
এরপর, রবিন নিজের ডেস্কে বসে সেই লেনদেনের তালিকা মনোযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করেন। সেখানে একটি চিত্র ফুটে ওঠে—বিষ্ণু আগরওয়াল একাধিক প্রতিষ্ঠানকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং বিভিন্ন অপ্রকাশিত পলিসি চালিয়ে টাকা পাচার করছিলেন। সেসব লেনদেনের কোনো নথি ছিল না, যা এক ধরনের অস্বাভাবিকতা প্রকাশ করছিল। আর সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার ছিল, কিছু লেনদেনের মধ্যে বেশ কিছু বিদেশি অ্যাকাউন্ট এবং অচেনা ব্যক্তি যুক্ত ছিল, যাদের সঙ্গে বিষ্ণুর কোনো সম্পর্ক ছিল না।
এদিকে, রবিন আরও একটি বিষয় খেয়াল করেন—বিষ্ণুর জীবন বীমা পলিসির সময়সীমা শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগে এক বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়েছিল। এই পরিমাণ অর্থের বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা ছিল না। এত বড় অংকের অর্থ হঠাৎ করে কোথা থেকে এলো? প্রশ্নটা রবিনের মনে বারবার ফিরে আসছিল। আরো মদতপুষ্ট হয়ে, তিনি তাঁর কাজ চালিয়ে যান। অনেক সময় কাটানোর পর, সিস্টেমে কিছু অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখতে পান, যা তাকে বুঝিয়ে দেয়—এই রহস্যের মধ্যে কোনো বৃহত্তর পরিকল্পনা রয়েছে, এবং সে এখন একটি মারাত্মক খেলায় জড়িয়ে পড়েছে।
ফোনের হুমকির পরেও, রবিন আরো দৃঢ় মনোভাবে তদন্ত চালিয়ে যান। তিনি জানতেন, এসব তথ্য সাধারণ বীমা দাবি থেকে অনেক দূরে, এবং এর মধ্যে কিছু এমন ঘটনার আভাস রয়েছে, যা সে সহজে পাশ কাটিয়ে যেতে পারে না। তিনি তার গোপন নথিগুলি খতিয়ে দেখতে থাকেন, যেন ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি তার তদন্তে বাধা দিতে না পারে। রবিন নিশ্চিত ছিল যে, বিষ্ণু আগরওয়ালের মৃত্যু এবং তার ব্যবসায়িক জীবনের মধ্যে কিছু গোপন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, যা কেউ না কেউ ঢাকার চেষ্টা করছে।
অধ্যায় ৪: আন্তর্জাতিক চক্র
রবিন তার অনুসন্ধান আরও গভীর করতে থাকেন। ফাইলের মধ্যে যা কিছু তিনি আগে খেয়াল করেননি, তা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। বিষ্ণু আগরওয়ালের বীমা দাবির সঙ্গে জড়িত সমস্ত অস্বাভাবিক লেনদেন এবং নথি যাচাই করার পর, রবিনের মনে হয় যে, এটা আর কোনো সাধারণ বীমা দাবি নয়। একে একে সেসব তথ্য চেপে থাকা গোপন রহস্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি আরও বিস্তারিতভাবে বিষ্ণুর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন ট্র্যাক করতে শুরু করেন, আর সেখানেই তার চোখে পড়ল কিছু অস্বাভাবিক শংসাপত্র এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য।
বিষ্ণু আগরওয়ালের একাধিক লেনদেনের মধ্যে, বেশ কিছু ব্যবসায়িক চুক্তি ছিল, যেগুলি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পন্ন হয়েছিল। রবিন একদিন রাতে যখন একতরফা ব্যাংক ট্রান্সফার চেক করছিলেন, তখন তিনি লক্ষ্য করেন, কিছু বড় অংকের টাকা পঠানো হয়েছিল সিঙ্গাপুর, হংকং এবং সুইজারল্যান্ডের অজ্ঞাত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এসব লেনদেনের কোনো ব্যাখ্যা ছিল না, অথচ সেগুলি বিষ্ণুর নিজের নামের অধীনে করা হয়েছিল।
এগুলোই ছিল প্রথমে রবিনের কাছে যে বিষয়গুলো সন্দেহজনক মনে হয়েছিল, তবে এবার তা আরও গভীরে চলে যায়। রবিন বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে জানলেন, বিষ্ণু আগরওয়াল কেবল একটি সাধারণ ব্যবসায়ী ছিলেন না—তিনি একটি আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রের মূল সদস্য ছিলেন, যারা বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার, মিথ্যা বিলিং, এবং অন্যান্য অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল।
এভাবে একাধিক দেশের মধ্যে সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের সন্ধান পেয়ে রবিনের চোখ খুলে যায়। তাঁর হাতে থাকা তথ্যগুলো তাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যায়, যেখানে এই চক্রের সদস্যদের মুখোশ খুলে যাবে। বিষ্ণু আগরওয়াল তার জীবনবীমার মাধ্যমে যে অর্থ পরিমাণ দাবি করেছিলেন, তা ছিল চক্রের এক অংশ। রবিন আরও জানেন, বিষ্ণু ছিল এই চক্রের এক গুরুত্বপূর্ণ ‘মুখ’—অথচ তার মৃত্যু ছিল এই পরিকল্পনারই একটি বড় অংশ।
তবে যা আরও উদ্বেগজনক ছিল, তা হলো বিষ্ণু আগরওয়ালের পরিবারের সদস্যরা এখনও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল। রবিনের কাছে এমন কিছু তথ্য আসে, যা তাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে, বিষ্ণু আগরওয়ালের স্ত্রী এবং সন্তানরা এখনো আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রের জন্য কাজ করছে। বিষ্ণুর মৃত্যুর পর তারা খুব সতর্ক হয়ে উঠেছিল এবং সেই সময়ে তাদের দ্বারা পরিচালিত সব লেনদেন ছিল খুবই গোপনীয়। রবিন বুঝতে পারে, যদি সে এর থেকে বেরিয়ে আসতে না পারে, তাহলে তার জীবনও বিপদের মুখে পড়বে।
রবিন আরো একটি ভীতিকর তথ্য পায়, যা তাকে চূড়ান্তভাবে শঙ্কিত করে তোলে। বিষ্ণুর পরিবারের সদস্যরা এবং চক্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বিশেষ ধরনের সাংকেতিক কোড ব্যবহার করতেন, যেগুলি কোনো সাধারণ বীমা প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয় না। রবিন যখন এই কোডের গোপন অর্থ খুঁজে পায়, তখন সে আবিষ্কার করে যে, বিষ্ণু আগরওয়াল আসলে সেই চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার করা বিপুল পরিমাণ অর্থের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। এটি একেবারে বড় ধরনের অর্থ পাচারের পরিকল্পনা ছিল, যা বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অপরাধী সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিল।
এক রাতে, রবিন যখন আরও গোপন নথি তদন্ত করছিল, তার কম্পিউটারে একটি অস্বাভাবিক হালকা ঝলক উঠতে থাকে, এবং সাথে সাথে একটি অ্যাডভান্সড এনক্রিপ্টেড বার্তা আসে। সেই বার্তায় লেখা ছিল, “তুমি যা জানো, তা জানালে তুমি একেবারে শেষ হয়ে যাবে।” রবিন জানত, এই বার্তা নিছক একটি ভয় দেখানো বা হুমকি নয়, বরং এর পিছনে ছিল একটি আসল অভ্যন্তরীণ বিপদ। সে জানত, এখন তার লক্ষ্য শুধু রহস্য উদঘাটন নয়, বরং নিজের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করা।
তবে রবিনের মনোভাব ছিল দৃঢ়—সে এই রহস্যের কিনারা না করা পর্যন্ত থামবে না। তিনি আরও জানতে চান, বিষ্ণু আগরওয়ালের পরিবার এখনো সেই আন্তর্জাতিক চক্রের সাথে জড়িত কেন, এবং কীভাবে তারা এর সাথে সম্পর্কিত। তার সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, কিন্তু সে জানত, যদি সে এই গোপন চক্রের শেষ প্রান্তটি খুঁজে পেতে সক্ষম হয়, তাহলে তার জীবন শুধু এক রহস্যের সমাধান হবে না, বরং একটি বৃহত্তর অপরাধী চক্রের মুখোশ খুলে যাবে।
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - নির্জন সেতু: এক রহস্যময় মৃত্যু, এক নির্জন সেতু, এবং বন্ধুত্বের টান। রহস্য রোমাঞ্চে ভরা এই বাংলা গল্পে শিউলি তার বন্ধু সোনার মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করে।কীভাবে মারা গেল সোনা?কে তার মৃত্যুর পিছনে দায়ী?শিউলি রহস্যের সমাধান খুঁজে বের করতে নেমে পড়ে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অধ্যায় ৫: চক্রের সন্ধানে
রবিন নিজের অনুসন্ধানে আরও গভীরতা আনতে শুরু করল। বিষ্ণু আগরওয়ালের মৃত্যুর পরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মিলছিল, যা তার মনে সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল। একদিন, যখন রবিন বিষ্ণুর বীমা দাবি ফাইলটি পুনরায় খতিয়ে দেখছিলেন, তিনি আরো কিছু অজানা তথ্য পেয়ে যান, যা এই চক্রের জটিলতা আরও বড় করে তোলে।
ফাইলের মধ্যে কিছু ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং লেনদেনের তথ্যে যে গরমিল ছিল, তা এবার একেবারে স্পষ্ট হয়ে উঠল। রবিন লক্ষ্য করেন, বিষ্ণু আগরওয়ালের নামের সাথে আরও কিছু পরিচিত ব্যবসায়ীদের নাম যুক্ত ছিল, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কর্মকর্তা ছিলেন। এই লেনদেনগুলো অস্বাভাবিকভাবে গোপনীয় ছিল, আর সব কিছু এড়িয়ে গিয়ে বিদেশি ব্যাংকগুলোতে জমা হচ্ছিল। তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য ছিল, বিষ্ণু আগরওয়ালের মৃত্যুর পরও, এই চক্রের সদস্যরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে—এবং এটা কোনো সাধারণ বীমা প্রতারণা নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক অপরাধের জাল।
রবিন আরো খোঁজ নিতে থাকে, এবং তাকে জানা যায় যে, বিষ্ণু আগরওয়ালের কোম্পানির মধ্যে কিছু অজ্ঞাত কর্মকর্তাও এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রথমে এটা রবিনের কাছে কিছুটা অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল, কিন্তু যখন সে আরো অনেক পুরনো অফিসীয় ফাইল দেখছিল, তখন তার কাছে কিছু শক্তিশালী প্রমাণ আসে। সেই প্রমাণগুলো তাকে ধরে নিয়ে যায় এমন কিছু ডকুমেন্টের দিকে, যেগুলোর মধ্যে ছিল নানা ধরনের মিথ্যা বীমা ক্লেইম এবং সন্দেহজনক আর্থিক চুক্তি। এর মধ্যে একটা বিশেষ চুক্তি ছিল, যা বিষ্ণু আগরওয়ালের কোম্পানির একটি ব্যতিক্রমী ‘স্টক ফান্ড’ গঠন করে, যা সরকারের একটি বিশেষ মন্ত্রক থেকে অনুমোদিত হয়েছিল। যদিও এই চুক্তি আগে পর্যন্ত কোনো পরিদর্শকের নজরে পড়েনি, কিন্তু রবিনের বিশ্লেষণে স্পষ্ট হলো—এই স্টক ফান্ডের মধ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছিল।
তবে সবার বড় রহস্য ছিল বিষ্ণু আগরওয়ালের পরিবার। রবিন জানত, বিষ্ণুর মৃত্যু শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং তার পরিবারও এই চক্রের অংশ হতে পারে। বিশেষ করে, বিষ্ণুর স্ত্রী এবং ছেলে এখনও সেই চক্রের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রাখছিল। রবিনের হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী, বিষ্ণুর স্ত্রীর অজানা একাধিক ফোন কল এবং কিছু গোপন ই-মেইল একে একে প্রমাণ করছিল যে, তারা কোনো এক গভীর প্রতারণার জালে জড়িয়ে পড়েছিল।
রবিনের কাছে তথ্যগুলো যখন আরও গভীর হয়ে উঠছিল, তখন সে বুঝতে পারে যে, এই চক্রের পরিসর শুধু একজন ব্যবসায়ী এবং তার পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর সাথে জড়িত ছিল বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্তা, এমনকি কিছু ব্যাংক কর্মকর্তাও। রবিন আরও তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে, এবং একদিন সন্ধ্যার দিকে সে জানতে পারে, বিষ্ণু আগরওয়ালের কোম্পানির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এবং কিছু সরকারি কর্তা বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারকারী চক্রের অংশ। এই চক্রটি শুধু ভারতে নয়, বরং সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, এবং শ্রীলঙ্কাতেও একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছে।
রবিনের শঙ্কা আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে, কারণ সে মনে করতে থাকে, যদি সে এই চক্রের কার্যকলাপ পুরোপুরি উদঘাটন করতে পারে, তাহলে তার নিজের জীবনও বিপন্ন হতে পারে। কিন্তু তার মনোবল এতটাই দৃঢ় ছিল যে, সে একে একে সমস্ত তথ্য খুঁটে বের করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। সে জানত, কোনো কিছুই তাকে থামাতে পারবে না। যদিও এই রহস্যের পরিসর ক্রমেই বড় হয়ে উঠছিল, তবুও রবিনের মধ্যে এক ধরনের ভয়াবহ উত্তেজনা ছিল—যে উত্তেজনা তাকে একের পর এক নতুন সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছিল।
রবিন বুঝতে পারে, তাকে এই রহস্যের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত যেতে হবে, এমনকি নিজের জীবনও বিপন্ন হলেও। সে আর কোনো দিন আগের মতো শান্ত থাকতে পারে না—সে জানত, এই চক্রের পেছনে এমন কিছু বিরাট শক্তি কাজ করছে, যা যদি প্রকাশিত হয়, তবে একটি পুরোপুরি নব্য দুনিয়া উন্মোচিত হবে। কিন্তু সে কি নিজেকে বাঁচাতে পারবে? সে কি এই রহস্য উদঘাটন করতে পারবে?
অধ্যায় ৬: বিশ্বাসঘাতকতার সন্ধান
রবিন যখন তার অনুসন্ধান শেষ করতে যাচ্ছিল, তখনই তার সামনে এক ভয়াবহ সত্য চলে আসে, যা তাকে একেবারে স্তম্ভিত করে দেয়। দীর্ঘ সময় ধরে যে তদন্তটি সে চালাচ্ছিল, তা ঠিক কোথায় গিয়ে থামবে, তা এখনো সে জানত না। কিন্তু একদিন, যখন রবিন সব কিছু সংকলন করে একসাথে রাখছিল, তখন একটি নতুন চমকপ্রদ তথ্য তার চোখে পড়ে। এই তথ্য ছিল বিষ্ণু আগরওয়ালের বীমা দাবির ফাইলের মধ্যে, একটি ছাপানো নথি।
এই নথিটি প্রথম দিকে তার কাছে খুবই সাধারণ মনে হয়েছিল, কিন্তু যখন সে গভীরভাবে তা দেখল, তখন তার মধ্যে একটি জটিল প্যাটার্ন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রবিন লক্ষ্য করেন যে, কিছু নির্দিষ্ট লেনদেন এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক অদ্ভুত অস্বাভাবিকতা ছিল, যা সে আগে খেয়াল করেনি। এছাড়া, ফাইলের মধ্যে থাকা কিছু রেকর্ডে একটি নাম ছিল—‘শঙ্কর’, যিনি তার নিজ কর্মচারী। কিন্তু সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় ছিল, শঙ্কর এর আগে কখনো তার নজরে পড়েনি।
রবিন প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিল না যে, শঙ্কর, যে তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, সেই ব্যক্তি এই চক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হতে পারে। শঙ্করের সাথে বহু বছর ধরে কাজ করার পরেও, রবিন কখনো সন্দেহ করেনি। তবে এখন সে জানতে পারে, শঙ্কর আসলে এই আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং সেই চক্রের কার্যকলাপ গোপন রাখার জন্য সে সব কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছিল।
বিষ্ণু আগরওয়ালের মৃত্যুর পরেও শঙ্কর কীভাবে এই সমস্ত তথ্য গোপন রাখার ব্যবস্থা করেছিল, সে বিষয়ে রবিন আরও গভীরভাবে তদন্ত চালায়। শঙ্কর, যে কিনা অফিসের একটি সাধারণ কর্মী ছিল, সে কীভাবে এই বড় ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রের অংশ হতে পারে, তা রবিনের কাছে অজানা ছিল। তবে তার গবেষণা চালাতে চালাতে রবিন একের পর এক অজানা তথ্য খুঁজে পায়। ফাইলের মধ্যে একাধিক সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ মেলে, যা শঙ্করের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিল। এই লেনদেনগুলো একে একে শঙ্করের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিদেশে চলে যাচ্ছিল।
তবে সবচাইতে ভয়াবহ তথ্য ছিল, শঙ্করের সাথে কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ ছিল, যাদের নাম রবিন খুঁজে পায় না। এমনকি, কিছু গোপন ই-মেইলে একাধিক নাম ছিল, যাদের সাথে শঙ্কর যোগাযোগ রেখেছিল। এই তথ্যের মাধ্যমে রবিন বুঝতে পারে যে, শঙ্করের ভূমিকা শুধু গোপনীয়তা রক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; সে আসলে একটি বড় অংশ ছিল যা বিষ্ণু আগরওয়ালের মৃত্যুর পেছনে এক ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার অংশ ছিল।
এবার রবিন বুঝতে পারে, শঙ্করের ষড়যন্ত্রের মধ্যে শুধুমাত্র শঙ্কর নয়, আরো অনেকের জড়িত থাকার সম্ভাবনা ছিল। শঙ্কর এবং তার সঙ্গীরা বিষ্ণু আগরওয়ালের মৃত্যুকে আড়াল করে, যেন সমস্ত কিছু স্বাভাবিক দেখায়। এই পরিকল্পনার একান্ত অংশ ছিল, যাতে রবিন বা কোনো অন্য কেউ কখনো এই তদন্তে থামতে না পারে। শঙ্কর চাইত না, তার অপকর্মের কোনো প্রমাণ সামনে আসুক, বিশেষ করে তার নিজের দলের বিরুদ্ধে।
রবিনের সামনে এখন প্রশ্ন ছিল, শঙ্কর কেন এত কিছু করতে গিয়েছিল? তার এতটা ক্ষতিকর কাজ করার পিছনে কি কোনো ব্যক্তিগত কারণ ছিল? অথবা, সে কোনো ভয়ঙ্কর চাপের মধ্যে পড়েছিল, যা তাকে এই চক্রে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য করেছিল?
রবিন এতদিন ধরে যে রহস্যের খোঁজে ছিল, তার মাঝে এখন সে আরেকটি গভীর এবং ব্যক্তিগত রহস্য পেয়ে গেছে। কিন্তু এখন রবিন নিজেকে কীভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারবে? শঙ্করের আসল উদ্দেশ্য কী ছিল? সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেলেই আসবে প্রকৃত হত্যাকারীর সন্ধান, কিন্তু সেই পথ কি নিরাপদ থাকবে?
রবিন জানত, তাকে শঙ্করের নীলনকশার সাথে যুক্ত সমস্ত সদস্যদের খুঁজে বের করতে হবে, এবং এই চক্রের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। কিন্তু সে জানত না, তার নিজের জীবনও এতে বিপন্ন হতে পারে।
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - রাত্রির কান্না: "রাত্রির কান্না" একটি রহস্য রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প যেখানে ঠাকুরবাড়ির গোপন ষড়যন্ত্র, হত্যা ও ন্যায়ের লড়াই উন্মোচিত হয়। গোয়েন্দা অশ্বিনী সেনের নেতৃত্বে সত্যের সন্ধান উঠে আসে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অধ্যায় ৭: চূড়ান্ত সংগ্রাম
রবিন যখন শঙ্করের সাথে মুখোমুখি হয়, তখন সে এক ভয়াবহ সত্যের সম্মুখীন হয়। শঙ্করের মুখের মধ্যে যা কিছু লুকানো ছিল, সবকিছু এক মুহূর্তে যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রবিন জানত, এখন আর কোনো পিছনের রাস্তা নেই। তাকে সত্য উদঘাটন করতে হবে, এবং তার জন্য তাকে সমস্ত ঝুঁকি নিতে হবে। শঙ্কর, যে এতদিন তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, এখন আর কোনো ভান রাখছিল না। সে জানিয়ে দেয়, “রবিন, তুমি যা খুঁজছো, তা তোমার জীবনকে বদলে দেবে। তবে, যদি তুমি এটা শেষ করতে চাও, তোমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে।”
শঙ্কর তার হাতে থাকা কয়েকটি ক্লু রবিনকে দেয়। একেকটি ক্লু যেন ধাপে ধাপে তাকে সেই জায়গায় নিয়ে যায়, যেখানে প্রতারণার মূল কৃত্রিম নির্মাণ চলছে। শঙ্করের বয়ানে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়, বিষ্ণু আগরওয়ালের মৃত্যুর পরও এই চক্রের কাজ চলছিল, তবে এখন চক্রের কপাল গঠনকারী মানুষটি আর কেউ নয়, তারই অতি পরিচিত—রবিনের কোম্পানির প্রধান, অজয় মিত্র। এই সত্য জানার পর রবিনের মনে যেন এক ভয়ঙ্কর ঝড় বয়ে যায়। সে যা কিছু ভাবতে পারছিল না, সেটি হলো তার আশপাশের বিশ্ব এতদিন ধরে, এত সহজে বিশ্বাস করা ছিল, কিন্তু অজয় মিত্র, যিনি কোম্পানির শীর্ষে বসে ছিল, আসলে এই বিশাল অপরাধ চক্রের মূল খেলোয়াড়।
রবিন তখন অনুভব করল, সে শুধু নিজের জীবনের জন্য নয়, এমনকি অনেক মানুষের জন্যও একটি বড় সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। তাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এবং এর জন্য তাকে জীবনের সব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। শঙ্করের মধ্যে যেসব অনুভূতি ছিল, তা এবার যেন পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। সে জানিয়ে দেয়, “রবিন, যদি তুমি জানো, তুমি বুঝতে পারবে, প্রতিটি সিদ্ধান্তে আমাদের জীবন থাকে, এবং তুমি যে পথ বেছে নিয়েছো, তাতে হয়তো তোমার জীবনের সব কিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে।”
রবিন সেই মুহূর্তে বুঝতে পারে, শঙ্করের কথায় সত্যিই কিছু আছে। তার সামনে আর কোনো ভুল করার সুযোগ নেই। সে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়, তাকে পুরো চক্রের অন্ধকার উন্মুক্ত করতে হবে। একদিকে তার সাহস, অন্যদিকে এই রহস্যের গভীরতা—সব কিছু মিলিয়ে এক নতুন লড়াই শুরু হয়। রবিন ঠিক করে, সে শঙ্করকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেবে এবং চক্রের সব তথ্য বের করে আনবে।
কিছুদিন পর, রবিন তার তদন্তে এগিয়ে যেতে থাকে। শঙ্করের দেওয়া ক্লুগুলি আর অজয় মিত্রের সাথে যে গোপন সম্পর্কগুলি সে খুঁজে বের করেছে, তা সব এক এক করে পুলিশের কাছে নিয়ে আসে। শঙ্করের সহযোগিতায় চক্রের বেশিরভাগ সদস্য ধরা পড়ে। রবিন বুঝতে পারে, শুধুমাত্র তার সাহস এবং সততার কারণে, এই প্রতারণা চক্রটিকে ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে।
কিন্তু রবিন জানে, এই সফলতার সঙ্গে এক ধরনের ভীতি ও সংকটও এসেছে। তার জীবন এক নতুন আলোয় দেখা শুরু হয়। যদিও সেই পুরোনো শান্তি, যে শান্তি সে পেতো আগের মতো রুটিনে, তা আর ফিরে আসে না। তার ভেতর এক গভীর পরিবর্তন আসে—সে জানে, পৃথিবীতে এমন কিছু সত্য রয়েছে, যা অন্ধকারে ঢাকা পড়ে থাকে, এবং এগুলি খুঁজে বের করার জন্য মাঝে মাঝে জীবনকেও বিপদে ফেলতে হয়।
গল্পের শেষ মুহূর্তে পাঠকও এক এক ধাপে রহস্যের ক্লু গুলি বুঝতে থাকে এবং অবশেষে রবিনের অনুসন্ধান শেষ হয়ে যায়। তার এই কঠিন পথচলার শেষে, সে বুঝতে পারে, জীবনের কিছু সত্য কেবল তখনই খুঁজে পাওয়া যায়, যখন কেউ সমস্ত ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে যায়। এখন রবিন জানে, প্রতিটি পদক্ষেপই তাকে শুধুমাত্র নিজেকে নয়, বরং আশপাশের পৃথিবীটিকেও নতুন করে দেখতে শিখিয়েছে।