একজন সাধারণ বীমা কর্মী অজান্তেই জড়িয়ে পড়ে এক ভয়ঙ্কর রহস্যের জালে। বীমা দাবির কাগজপত্রে লুকিয়ে থাকা তথ্য তাকে নিয়ে যায় এক অন্ধকার পথে, যেখানে প্রতি পদে পদে বিপদ।কীভাবে সে এই রহস্যের সমাধান করবে?জানতে পড়ুন এই রোমাঞ্চকর বাংলা গল্প।

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » মৃত্যুর শেষ খাতা

মৃত্যুর শেষ খাতা

একজন সাধারণ বীমা কর্মী অজান্তেই জড়িয়ে পড়ে এক ভয়ঙ্কর রহস্যের জালে। বীমা দাবির কাগজপত্রে লুকিয়ে থাকা তথ্য তাকে নিয়ে যায় এক অন্ধকার পথে, যেখানে প্রতি পদে পদে বিপদ।কীভাবে সে এই রহস্যের সমাধান করবে?জানতে পড়ুন এই রোমাঞ্চকর বাংলা গল্প।

আজকে শেষ খাতাটাও শেষ হয়ে গেল। ক্লান্ত চোখ বুলিয়ে একবার চারপাশে দেখলাম। রাত তখন বেশ গড়িয়েছে। ঘড়িতে তিনটে পুরো। টেবিলের উপর ঝাঁকিয়ে থাকা লেম্পের আলোয় ঘরটা একটা অস্বাভাবিক ছায়াপথের মধ্যে ডুবে আছে। খাতাগুলোর পাতা উল্টে দেওয়ার শব্দে ঘরটা আরও একটু যেন গমগম করে উঠলো। কতগুলো খাতা? গুনতে পারব না। প্রতিটা খাতার ভার, প্রতিটা পাতায় লেখা অশুভ গল্পগুলো যেন আমার নিজের কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছে।

এই কাজটা শুরু করার আগে জানতাম না, এতটা কষ্টের। শুধু কাজের কথা নয়, মানসিক চাপ। এই খাতাগুলোতে লেখা তথ্যগুলো, এক একটা যেন একটা করে গর্তের মধ্যে নামিয়ে দিচ্ছিল আমাকে। জীবনে কত মানুষের সাথে দেখা হয়েছে, কিন্তু এই খাতাগুলো পড়তে পড়তে মনে হয়েছে, আসল মানুষের সংখ্যাটাই কম। লোভ, ক্ষোভ, স্বার্থ – এই তিনটে বিষই মানুষকে কী করিয়ে ফেলে, সেটাই যেন দেখছিলাম প্রতিটা পাতায়।

আমি সত্যিই বীমা কোম্পানির একজন সাধারণ অফিস কর্মী ছিলাম। কিন্তু একদিন যখন বস বস একটা গোপনীয় ফাইল আমার হাতে এল, তখন জীবনের ধারাই বদলে গেল। ফাইলটা পড়ে আমার মাথা ঘুরে গিয়েছিল। এটা কোন সাধারণ বীমা দাবি নয়। এটা ছিল একটা খুনের ষড়যন্ত্রের রূপরেখা।

কীভাবে খুন করা হবে, কোন জালিয়াতি দিয়ে বীমা দাবি করা হবে, সবকিছুই লেখা ছিল সেই ফাইলে। মৃত্যু যেন একটা নাটকের মঞ্চায় পরিণত হচ্ছিল, আর এই ফাইল ছিল সেই নাটকের স্ক্রিপ্ট। স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের কাছে যাওয়ার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু পরের ঘটনায় সেই চিন্তা মাথা থেকে উড়িয়ে দিল। আমাকে একটা নতুন ফাইল দেওয়া হল। এটাও একটা বীমা দাবির কাগজপত্র, কিন্তু এবারেরটা আরও ভয়ঙ্কর। এই ফাইলের মধ্যে লুকিয়ে ছিল একটা ভয়ঙ্কর রহস্য। একজন রাজনৈতিক নেতার খুনের প্ল্যান।

দুটো ফাইল আমাকে উল্টো পথে ঠেলে দিল। পুলিশের কাছে গেলে কিছু হবে না, সেটা বুঝতে পারছিলাম। তাহলে কী করা? কার কাছে যাব? একের পর এক ফাইল আমার হাতে আসতে লাগলো। প্রতিটা ফাইলই একটা করে খুনের গল্প বর্ণনা করছিল। প্রতিটা খুনের পেছনেই ছিল কালো টাকা, ক্ষমতার লোভ, প্রতিশোধের আগুন।

আমি তখন কোম্পানির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কাছে গেলাম। সব খুলে বলাই ঠ

ঠিক করলাম। কিন্তু তিনি শুনেই আমাকে থামিয়ে দিলেন। শান্ত, নির্বিকার চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “শোভন, তুমি এসব জেনো না, ভালো। কোম্পানির ভালোর কথা না ভাবলেও নিজের ভালোটা তো ভাব। এই জগতে অনেক রহস্য থাকে, সেগুলোর পেছনে না লাগাই ভালো।”

কিন্তু থামতে পারলাম না। কোনো একটা অদৃশ্য টান যেন আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। আমার মনে হতে লাগলো, এই খাতাগুলোর মধ্যে লুকিয়ে আছে কোনো বড় রহস্যের সূত্র। একটা রহস্য, যা এই শহরের ক্ষমতার কেন্দ্রকে নাড়িয়ে দিতে পারে।

কাজেই ঐ কর্মকর্তার কাছ থেকে কিছু না হয়ে নিজেই তদন্ত শুরু করলাম। খুব সাবধানে, খুব গোপনে। প্রতিটা ফাইলের তথ্য নিয়ে মেলে ধরার চেষ্টা করলাম কোনো প্যাটান আছে কিনা। অবশেষে একটা জিনিস খুঁজে পেলাম। প্রতিটা খুনের পেছনেই ছিল একটা নির্দিষ্ট কোম্পানির নাম। ‘শিয়ালী এন্টারপ্রাইজ’। কোম্পানিটা সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করলাম। কিন্তু কোনো ঠিক সূত্র ধরতে পারলাম না। কোম্পানিটা একটা ধোঁয়াশা, যতই কাছে যেতে চাই, ততই দূরে সরে যায়

এই সময়ের মধ্যে আরও কিছু ঘটনা ঘটলো। অচেন মানুষের ফোন, রাতের অন্ধকারে গলির মধ্যে, অজানা গাড়ির হেডলাইটের আলো। মৃত্যুভীতি আমার চারপাশে ঘুরঘুর করতে লাগলো। কিন্তু থামা যায় না। এতদূর এসে থেমে গেলে সব ব্যর্থ হয়ে যাবে।

কয়েক মাস পর্যন্ত চেষ্টা চালানোর পর অবশেষে একটা শান্তি পেলাম। একজন সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ হলো। তিনিও এই ‘শিয়ালী এন্টারপ্রাইজ’ নিয়ে তদন্ত করছিলেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেল, কোম্পানিটা একটা বড় ধরনের অপরাধ জগতের কেন্দ্রস্থল। জমি জালিয়াতি, অস্ত্র চোরাচালন, এমনকি খুন পর্যন্ত – সবকিছুই এদের কাজ।

সাংবাদিকটির সঙ্গে মিলে একটা পরিকল্পনা করা হলো। সব প্রমাণ নিয়ে পুলিশের কাছে যাওয়া হবে। কিন্তু ঠিক সেই সময় একটা ভয়ঙ্কর খবর পেলাম। সাংবাদিকটি নিখোঁজ। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালেও কোনো ফল হলো না।

আমি একা। হাতে প্রমাণ আছে, কিন্তু তা প্রকাশ করলে নিজের জীবন বিপদে পড়বে, জানি। কিন্তু এই অবস্থায়ও থাকতে পারছি না। এই খাতাগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকা অপরাধের জাল বেরিয়ে আসা দরকার।

সিদ্ধান্তটা কঠিন ছিল, কিন্তু একটা কাজ করতে হলো। আমার কাছে থাকা প্রমাণগুলো সাবধানে একটা ওয়েবসাইটে অ্যানোনিমাসলি আপলোড করলাম। সাথে একটা লিঙ্ক দিলাম, যেটা এই গোটা গল্পটাকে নিয়ে লেখা একটা বিস্তর ডকুমেন্টের দিকে নিয়ে যাবে।

ওয়েবসাইটে প্রমাণগুলো পোস্ট করার পর শহরে একটা তোলপাড় সৃষ্টি হলো। নিউজ চ্যানেল, সংবাদপত্র – সব জায়গায় শুধু ‘শিয়ালী এন্টারপ্রাইজ’ নিয়েই আলোচনা। পুলিশ বাধ্য হয়ে তদন্ত শুরু করলো। আমি জানতাম, এখন আমাকে আরও সাবধানে থাকতে হবে।

কয়েকদিন পরে আমার ফোনে একটা ফোন এলো। অপরিচিত নম্বর। কাঁপা কাঁপা গলায় একজন ব্যক্তি বললেন, “আপনি যা করেছেন, খুব ভুল করেছেন। আপনার জীবন বিপদের মধ্যে আছে।”

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই ফোনটা কেটে দিলেন। আমার হাত-পা কাঁপছিল। কিন্তু আর পিছনে ফিরতে পারার উপায় ছিল না। কয়েকদিন পরে পুলিশ আমার দোরগোড়ায় এলো। তবে গ্রেফতার করতে নয়, সাহায্য চাইতে।

ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। কিন্তু তাদের আরও প্রমাণ দরকার। আমি সাবধানে কিছু তথ্য, কিছু ফাইল তাদের হাতে তুলে দিলাম। জানতাম, এটা একটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, কিন্তু এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।

পুলিশের তদন্তে ‘শিয়ালী এন্টারপ্রাইজ’ এর কালো কারখানা ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে লাগলো। গ্রেফতারি হলো, জব্দিবার হলো অপরাধের জাল। শহর জুড়ে আলোচনা চলতে থাকলো এই বিশাল অপরাধ জগতের।

আমি স্বস্তি পেয়েছিলাম, ঠিক আছে বলা যায় না। কিন্তু মনে একটা অবর্ণনীয় শান্তি এসেছে। এই খাতাগুলোর ভার আমার কাঁধ থেকে নেমে গেছে। এই গোটা অভিজ্ঞতা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। জীবনে সত্যিটা বের করা কতটা কঠিন, আর সেই সত্যি প্রকাশ করতে কতটা সাহস লাগে, সেটা বুঝতে পেরেছি।

আজ এই শেষ খাতাটাও শেষ করে ফেললাম। এবার আর কোনো অন্ধকার নেই, কোনো গোপনীয়তা নেই। সবকিছুই সামনে এসে গেছে। কিন্তু এই গল্পের শেষ এখানেই নয়। এই শহরে, এই রাজ্যে, হয়তো আরও অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে, অপেক্ষা করছে উদঘাটনের। আর সেই রহস্যের পিছনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত, সেটা নেওয়া হবে পরের কোনো একদিন।

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

About The Author

নতুন বাংলা ছোট গল্প

জীবনপথের সন্ধানে

মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প: সঞ্জয়ের আত্ম-উদ্বোধন এবং নতুন জীবন শুরু করার যাত্রা। অনুপ্রেরণা এবং বিশ্বাসের মাধ্যমে জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার একটি সাফল্যমণ্ডিত গল্প।

মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প: সঞ্জয়ের আত্ম-উদ্বোধন এবং নতুন জীবন শুরু করার যাত্রা। অনুপ্রেরণা এবং বিশ্বাসের মাধ্যমে জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার একটি সাফল্যমণ্ডিত গল্প।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: জীবনপথের সন্ধানে

নিঃশব্দ মুক্তি

"নিঃশব্দ মুক্তি" একটি বাংলা ছোট গল্প যেখানে থালিয়া, একজন নির্যাতিত স্ত্রী, ফুটবল আসক্ত স্বামী মার্কের অত্যাচারের শৃঙ্খল ভেঙে নিজের ও মেয়ে গাব্বির জন্য নতুন জীবনের সন্ধান করে। গল্পটি সমাজের অন্ধকার বাস্তবতা ও সাহসিকতার মাধ্যমে নারীর মুক্তির পথে যাত্রাকে তুলে ধরে।

"নিঃশব্দ মুক্তি" একটি বাংলা ছোট গল্প যেখানে থালিয়া, একজন নির্যাতিত স্ত্রী, ফুটবল আসক্ত স্বামী মার্কের অত্যাচারের শৃঙ্খল ভেঙে নিজের ও মেয়ে গাব্বির জন্য নতুন জীবনের সন্ধান করে। গল্পটি সমাজের অন্ধকার বাস্তবতা ও সাহসিকতার মাধ্যমে নারীর মুক্তির পথে যাত্রাকে তুলে ধরে।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: নিঃশব্দ মুক্তি

মুক্তির পথে প্রেম

১৯৪৩ সালের ভারতীয় মুক্তির আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত এই ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য গল্পে বিজয় ও সুফিয়ার প্রেম এবং সংগ্রামের কাহিনী উঠে এসেছে। বাংলা ছোট গল্পের এই অধ্যায়ে, সাহসী অভিযান ও বিপদের মধ্যে ভালোবাসা ও দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক হয়ে ওঠে তাদের জীবন।

১৯৪৩ সালের ভারতীয় মুক্তির আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত এই ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য গল্পে বিজয় ও সুফিয়ার প্রেম এবং সংগ্রামের কাহিনী উঠে এসেছে। বাংলা ছোট গল্পের এই অধ্যায়ে, সাহসী অভিযান ও বিপদের মধ্যে ভালোবাসা ও দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক হয়ে ওঠে তাদের জীবন।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: মুক্তির পথে প্রেম

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!