বরফের দেশে মিশা ও তার বন্ধুদের সাহসী অভিযানে উপহার উদ্ধারের জাদুকরী কাহিনি। ছোটদের গল্প ও রূপকথার গল্প ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও উৎসবের আনন্দে ভরপুর।

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » বরফ-হাঁসের উপহার

বরফ-হাঁসের উপহার

বরফের দেশে মিশা ও তার বন্ধুদের সাহসী অভিযানে উপহার উদ্ধারের জাদুকরী কাহিনি। ছোটদের গল্প ও রূপকথার গল্প ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও উৎসবের আনন্দে ভরপুর।

আমাদের WA চ্যানেল জয়েন করুন

এই মাসের সেরা হাড়হিম করা ভৌতিক বাংলা ছোট গল্প পড়ুন ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন – পেঁতিজ্বলা মাঠের সেই রাত

রচনা - সুরজিৎ রায়  ।।   গল্পপাঠে - সুমনা নাগ

অধ্যায় ১ : বরফের দেশে প্রস্তুতি

সম্পূর্ণ বাংলা রূপকথার ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

বরফের দেশটা যেন এক টুকরো স্বপ্ন। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চারদিকে ঝকঝকে সাদা চাদরের মতো বরফে ঢাকা পড়েছে। দূরের পাহাড়গুলো রূপোর মতো ঝিলমিল করছে, গাছের ডালগুলোতে বরফ জমে যেন ছোট ছোট কাঁচের অলঙ্কার ঝুলছে। পাখিদের কিচিরমিচির থেমে গেছে, শুধু মাঝে মাঝে দূর থেকে শোনা যায় ঘণ্টার শব্দ—গ্রামের শিশুরা বরফের ওপর দিয়ে ছোট্ট স্লেজ গড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ক্রিসমাস প্রায় চলে এসেছে। তাই সকাল থেকেই গ্রামজুড়ে ব্যস্ততা। প্রতিটি বাড়ির জানালায় ঝুলছে রঙিন আলো, কারো কারো দরজায় সবুজ ক্রিসমাস রিথ। ছেলেমেয়েরা বরফ কেটে তুষারমানব বানাচ্ছে, আর বড়রা ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর কাজে মগ্ন। এই উৎসব যেন শুধু উপহার কিংবা সাজসজ্জার জন্য নয়, বরং সবার মধ্যে ভালোবাসা আর আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার দিন।

এই আনন্দঘন ব্যস্ততার মাঝেই ছোট্ট মিশার বাড়ি। মিশার বয়স মাত্র আট বছর, কিন্তু তার চোখে কৌতূহলের আলো সবসময় ঝলমল করে। সে সবকিছুতেই আনন্দ খুঁজে পায়। শীতকাল তার সবচেয়ে প্রিয় ঋতু—বরফের ফ্লেক্স গায়ে পড়লে সে হাত বাড়িয়ে ধরতে ভালোবাসে, আবার জানালার কাচে জমে থাকা বরফের ওপর আঙুল দিয়ে নানা নকশা আঁকে।

আজ সকালেই মিশার মা তাকে ডেকে বললেন,
— “চল মা, আজ আমরা কুকি বানাবো। কাল সকালে তো প্রতিবেশীরা আসবে, তাদের জন্য কিছু মিষ্টি রাখা দরকার।”

মিশার চোখ চকচক করে উঠল। সে মায়ের সাথে রান্নাঘরে ঢুকে পড়ল। টেবিলে সাজানো আছে ময়দা, ডিম, চিনি আর মাখন। মা তাকে মিশ্রণ নাড়াতে দিলেন। মিশা খিলখিল করে হেসে বলল,
— “মা, আমি কি নিজের মতো করে একটা কুকির আকার বানাতে পারি?”
মা হেসে মাথা নাড়লেন,
— “অবশ্যই পারো। তবে যেন খাওয়ার মতো হয়!”

মিশা ময়দার মধ্যে থেকে ছোট্ট একটা অংশ নিয়ে গোল গোল করে বানাল, তারপর তার ওপর আঙুল দিয়ে একটা তারা এঁকে দিল। সে ভাবল, “এটা হবে আমার ‘ম্যাজিক কুকি’। যদি সত্যিই এবারের ক্রিসমাসে কোনো জাদু ঘটে!”

চুলার ভেতর কুকিগুলো ঢুকিয়ে দিয়ে মা আর মিশা দুজনেই অপেক্ষা করতে লাগলেন। রান্নাঘর ভরে উঠল মিষ্টি গন্ধে। সেই গন্ধ যেন গোটা বাড়ির মধ্যে ক্রিসমাসের আনন্দ ছড়িয়ে দিল। বাইরে তখনো হালকা বরফ পড়ছে, জানালার পাশে দাঁড়িয়ে মিশা আকাশের দিকে তাকাল। সাদা সাদা ফ্লেক্স যেন আকাশ থেকে নেমে আসা ছোট্ট উপহার।

হঠাৎ তার মনে একটা কথা এল। সে ধীরে ধীরে ফিসফিস করে বলল,
— “ইশ, যদি এবারের ক্রিসমাসে আমি একেবারে সত্যিকারের ম্যাজিক দেখতে পেতাম!”

তার চোখে ভেসে উঠল নানা ছবি—কোথাও কি সত্যিই কোনো জাদুকরী প্রাণী আছে? হয়তো কোনো বরফের পাখি, যে কথা বলতে পারে! হয়তো কোনো পরী, যে অন্ধকার গুহার মধ্যে আলো ছড়িয়ে দেয়!

মা তখন কুকিগুলো বের করে টেবিলে রাখলেন। গরম ধোঁয়া উঠছে, আর সোনালি রঙের কুকিগুলো দেখেই জিভে জল এসে যায়। মা মৃদু হাসি দিয়ে বললেন,
— “তুমি যদি ভালো কিছু চাও, সেটাই তোমার কাছে জাদুর মতো এসে পৌঁছাবে, মা।”

মিশা মায়ের কথা শুনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। জানালার বাইরে অন্ধকার একটু একটু করে নেমে আসছে, ঘরের ভেতর রঙিন আলো জ্বলছে। প্রতিটি আলো যেন তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে—কোথাও না কোথাও লুকিয়ে আছে সত্যিকারের ক্রিসমাস ম্যাজিক।

সন্ধ্যায় তার বন্ধুরা ডাকতে এলো বরফে খেলতে। তারা মিলে বাইরে গেল, বড়সড় এক তুষারমানব বানালো। নাকের জায়গায় গাজর, চোখের জায়গায় কয়লা, মাথায় একটা পুরনো টুপি। সবাই হেসে খিলখিল করে উঠল। কিন্তু মিশার মনে এখনো রয়ে গেল সেই অদ্ভুত আকাঙ্ক্ষা।

রাতের খাবার শেষে বিছানায় শুয়ে পড়ল মিশা। জানালার বাইরে তখনো বরফ ঝরছে। কম্বলের ভেতর গুটিসুটি মেরে সে চোখ বন্ধ করল, কিন্তু মন থেকে বারবার বেরোচ্ছে না সেই ভাবনা—
“হয়তো এবার সত্যিই কিছু একটা ঘটতে চলেছে। হয়তো সত্যিই কোনো জাদুকরী প্রাণী আমার সাথে দেখা করবে…”

এভাবেই বরফের দেশে ক্রিসমাসের প্রস্তুতির দিন শেষ হলো। কিন্তু মিশার হৃদয়ে জেগে রইল এক অদ্ভুত আলো—একটা স্বপ্ন, একটা আশা। যে আশা তাকে আগামী দিনের অসাধারণ অভিযানের দিকে টেনে নিয়ে যাবে।

জীবাণু দিয়ে হত্যা - সত্য ঘটনা: সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত এক রহস্যময় বাংলা ছোট গল্প—বিষাক্ত সূচে যুবরাজের মৃত্যু, ভাইয়ের ষড়যন্ত্র, আর এক বিজ্ঞানভিত্তিক খুনের ইতিহাস যা আপনাকে শিহরিত করে তুলবে। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় ২ : উপহার চুরি হয়ে যাওয়া

সম্পূর্ণ বাংলা রূপকথার ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

ক্রিসমাসের আগের রাত। পুরো গ্রাম জেগে উঠেছে আলো আর আনন্দে। প্রতিটি বাড়ির জানালা রঙিন বাতিতে ঝলমল করছে, আর ক্রিসমাস ট্রির নিচে সাজানো হচ্ছে সুন্দর মোড়ানো উপহার। শিশুরা আনন্দে দৌড়ে বেড়াচ্ছে, কে কোন উপহার পাবে তা নিয়ে কল্পনায় মশগুল।

মিশাও ভীষণ খুশি। বিকেলবেলা মা তাকে তার উপহারটা দেখালেন না, শুধু একটি ছোট্ট বাক্স রঙিন কাগজে মুড়ে ট্রির নিচে রেখে দিলেন। মিশা কৌতূহল সামলাতে না পেরে মাকে জিজ্ঞেস করল,
— “মা, এর ভেতরে কী আছে বলো তো?”
মা মুচকি হেসে বললেন,
— “ওটা হলো সারপ্রাইজ, ক্রিসমাস সকালে খুলে দেখবে।”

মিশা আনন্দে লাফিয়ে উঠল। সে কল্পনা করতে লাগল, হয়তো ভেতরে একটি ছোট্ট তুষার গোলক আছে, যার ভেতর ঝকঝকে আলো ঘুরে বেড়ায়। হয়তো আবার কোনো জাদুর বই, যেখানে গোপন গল্প লেখা আছে।

কিন্তু গ্রামজুড়ে তখন অন্য এক ঘটনা ঘটছে, যা কেউ জানত না। পাহাড়ের পেছনের অন্ধকার গুহায় বাস করত এক অদ্ভুত মানুষ—দুষ্টু খিকখিক বুড়ো। তার লম্বা সাদা দাড়ি আর বাঁকা নাক দেখে সবাই ভয় পেত। কিন্তু আসল ভয় ছিল তার খারাপ স্বভাব। সে ক্রিসমাসকে একদম সহ্য করতে পারত না। যখনই চারদিকে আলো ঝলমল করে আর মানুষজন খুশি থাকে, তার ভেতর কেমন যেন খটখট শব্দ হয়।

সে একা একা নিজের গুহায় বসে খিকখিক করে হাসত আর বলত,
— “হুম্, এরা সবাই আনন্দ করছে! কিন্তু আমি সেটা হতে দেব না। এ বছরের সব উপহার আমি চুরি করব। দেখব এবার কারো মুখে হাসি থাকে কি না!”

রাত গভীর হলে, যখন গ্রামে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, তখন খিকখিক বুড়ো তার লম্বা কালো চাদর গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে এল। তার হাতে ছিল একটা পুরনো বস্তা। নিঃশব্দে সে প্রতিটি বাড়ির জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে লাগল, আর ট্রির নিচে রাখা উপহারগুলো এক এক করে তুলে নিল বস্তার ভেতর।

একটা, দুটো নয়—পুরো গ্রামের সব উপহার গায়েব হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে। বুড়ো খিকখিক করে হেসে গুহার দিকে ফিরে গেল। তার বস্তা ভর্তি রঙিন বাক্স আর ঝকঝকে প্যাকেটে উপচে পড়ছিল।

পরদিন সকাল। ক্রিসমাসের দিন। সবাই যখন ঘুম থেকে উঠে খুশি মনে ট্রির দিকে ছুটে গেল, তখন চোখ কপালে উঠল। কোথাও কোনো উপহার নেই! শিশুরা কান্নায় ভেঙে পড়ল, বড়রা একে অপরের দিকে তাকিয়ে অবাক হলো।

মিশা দৌড়ে গিয়ে দেখল, তার ছোট্ট সারপ্রাইজ বাক্সটাও নেই। সে হতাশ হয়ে গেল।
— “মা, আমার উপহার কোথায় গেল? ট্রির নিচে তো কিছুই নেই!”

মা কিছু বলতে পারলেন না। চারপাশে শুধু কান্নার আওয়াজ আর মন খারাপের গুঞ্জন। যে গ্রামটা গতকাল পর্যন্ত আলো আর আনন্দে ভরে ছিল, সেখানে আজ যেন বিষণ্নতা নেমে এল।

মিশা চুপচাপ জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। বরফ তখনো পড়ছে, কিন্তু সেই বরফের সৌন্দর্যও তার চোখে আর ধরা দিল না। মনটা ভরে গেল দুঃখে। মনে মনে সে ফিসফিস করে বলল,
— “এভাবে তো ক্রিসমাস হতে পারে না! নিশ্চয়ই কেউ আমাদের উপহার চুরি করেছে। কিন্তু কে?”

ঠিক তখনই, দূরের পাহাড়ের দিকে তাকাতেই মিশার মনে হলো—অন্ধকার গুহার ভেতর থেকে যেন কারো খিকখিক হাসির শব্দ ভেসে আসছে।

তার মনে একটা সন্দেহ জাগল।
“হয়তো এটাই সেই খিকখিক বুড়োর কাজ, যার কথা শুনেছি। যদি সত্যিই তাই হয়, তবে উপহারগুলো উদ্ধার করতে হবে।”

মিশার চোখে ভয়ের বদলে সাহসের ঝিলিক ফুটে উঠল। সে জানত না কিভাবে, কিন্তু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল—এবার সে সত্যিকারের কিছু করবে, শুধু বসে থেকে কান্না করবে না।

এভাবেই ক্রিসমাসের সকালটা দুঃখের ছায়ায় শুরু হলো। কিন্তু মিশার হৃদয়ের গভীরে জন্ম নিল এক নতুন সংকল্প—উপহার ফিরিয়ে আনার অভিযানে নামতে হবে।

অধ্যায় ৩ : হিমেলের আবির্ভাব

সম্পূর্ণ বাংলা রূপকথার ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

মিশা সেই দিনটা প্রায় পুরোটা সময় মন খারাপ করে কাটাল। তার মনে হচ্ছিল, চারপাশের বরফঢাকা দেশটা হঠাৎ যেন আনন্দ হারিয়ে ফেলেছে। শিশুরা আর গান গাইছে না, বরং কেউ কান্না করছে, কেউ আবার চুপচাপ বসে আছে। বড়রা সবাই হতাশ, ক্রিসমাসের সাজসজ্জা থাকলেও আসল আনন্দ যেন কোথাও হারিয়ে গেছে।

সন্ধ্যা নামতেই ঠাণ্ডা আরও বেড়ে গেল। মিশা একা একা জানালার পাশে এসে দাঁড়াল। জানালার কাঁচে সে নিজের নিঃশ্বাস দিয়ে কুয়াশার দাগ তৈরি করল, তারপর আঙুল দিয়ে ছোট্ট একটা তারা আঁকল। তার বুক ভরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।
“ইশ, যদি আমি কিছু করতে পারতাম! যদি সত্যিই এই দুঃখের সময় কোনো জাদু এসে সব ঠিক করে দিত!”

ঠিক তখনই, আশ্চর্য এক ঘটনা ঘটল। জানালার বাইরে হালকা আলো ঝিকমিক করতে শুরু করল। প্রথমে মিশা ভেবেছিল হয়তো ক্রিসমাসের আলো, কিন্তু না—এ আলো একেবারে অন্যরকম। সাদা বরফের ওপর আলোটা নেমে আসতে আসতে একটা আকার তৈরি করল।

মিশার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল। ওটা ছিল একটি হাঁস—কিন্তু সাধারণ হাঁস নয়। তার পালকগুলো রূপোর মতো ঝকঝক করছে, আর প্রতিটি ডানা নড়লেই চারপাশে ঝরে পড়ছে ছোট ছোট বরফের তারা। হাঁসটি ধীরে ধীরে জানালার ধারে এসে বসে পড়ল।

তারপর, আরও অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। হাঁসটি মুখ খুলে পরিষ্কার বাংলায় বলল—
— “মিশা, তুমি মন খারাপ করছো কেন?”

মিশা আঁতকে উঠল। সে পেছনে সরে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
— “তুমি… তুমি কথা বলছো?”

হাঁসটি মৃদু হেসে মাথা নাড়ল।
— “হ্যাঁ, আমি কথা বলতে পারি। আমার নাম হিমেল। আমি বরফ-হাঁস। আমার কাজ হলো শীতের সকালে জাদু ছড়িয়ে দেওয়া, আর যারা সত্যিই মন থেকে কিছু চায়, তাদের পাশে দাঁড়ানো।”

মিশার চোখে বিস্ময়ের ঝিলিক।
— “তাহলে তুমি বুঝতে পেরেছো আমার দুঃখ?”

হিমেল মাথা নেড়ে বলল,
— “অবশ্যই। তোমার দুঃখের আলো আমি দূর থেকে দেখেছি। সেই আলোই আমাকে তোমার কাছে টেনে এনেছে। বলো, কী হয়েছে?”

মিশা এক নিশ্বাসে সব বলে ফেলল—কীভাবে খিকখিক বুড়ো সবার উপহার চুরি করেছে, আর পুরো গ্রাম কীভাবে আনন্দ হারিয়েছে। বলার সময় তার চোখ ভিজে উঠল।

হিমেল শান্ত স্বরে বলল,
— “তাহলে আমাদের কিছু করতে হবে। শুধু কান্না করে বসে থাকলে হবে না। উপহারগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে, আর গ্রামে আবার আনন্দ ফেরাতে হবে।”

মিশা দ্বিধা নিয়ে বলল,
— “কিন্তু আমরা কি পারব? খিকখিক বুড়ো তো ভীষণ ভয়ঙ্কর!”

হিমেলের চোখে মিষ্টি দুষ্টুমির ঝিলিক ফুটে উঠল।
— “ভয়ঙ্কর? হুম্… সে যতই ভয়ঙ্কর হোক না কেন, ভালোবাসা আর সাহসের সামনে তার জাদু টিকবে না। তাছাড়া আমি আছি তোমার সাথে। আমরা একসাথে গেলে কোনো বাধাই আমাদের থামাতে পারবে না।”

মিশার বুকের ভেতর কেমন যেন গরম উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ল। এতক্ষণ যে ভয় তাকে ঘিরে রেখেছিল, তা একটু একটু করে মিলিয়ে গেল। সে জানালার কাঁচ খুলে দিল, আর হিমেল লাফিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল। ঘরটা মুহূর্তেই আলোয় ভরে গেল।

হিমেল তার রূপোর মতো ডানা মেলে মিশার দিকে তাকিয়ে বলল,
— “তাহলে প্রস্তুত হও। আজ রাত থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু হবে। বরফের পাহাড়, নদী আর অজানা পথ পেরিয়ে আমাদের পৌঁছাতে হবে খিকখিক বুড়োর গুহায়।”

মিশার চোখ জ্বলে উঠল উত্তেজনায়।
— “হ্যাঁ, আমি প্রস্তুত। আমি ভয় পাবো না। আমি চাই গ্রামে আবার হাসি ফিরুক!”

হিমেল খুশি হয়ে ডানা ঝাপটাল। চারপাশে ছোট ছোট বরফের ফুল উড়তে লাগল।
— “দারুণ! তাহলে আজ রাতেই শুরু হবে আমাদের দুঃসাহসিক অভিযান।”

বাইরে তখন আবার বরফ পড়ছিল। কিন্তু সেই বরফ যেন আর ঠাণ্ডা লাগছিল না, বরং আশার আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল। মিশা জানত, তার জীবনের সবচেয়ে বড় অ্যাডভেঞ্চার শুরু হতে যাচ্ছে—একটা সত্যিকারের ক্রিসমাস ম্যাজিক।

অদম্য মায়া - অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প: অদম্য সাহস ও আত্মবিশ্বাসের অনুপ্রেরণায় ভরা একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প—যেখানে হার মানে না জীবনের ঢেউ, বরং জাগে নতুন করে বাঁচার সাহস ও স্বপ্ন। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় ৪ : বরফ-অভিযান ও চ্যালেঞ্জ

সম্পূর্ণ বাংলা রূপকথার ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

রাত তখন ঘন হয়ে এসেছে। চারপাশে নিস্তব্ধতা, শুধু মাঝে মাঝে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ শোনা যাচ্ছে। মিশা উষ্ণ জামাকাপড় গায়ে জড়িয়ে নিল—মায়ের বোনা উলের টুপি, লম্বা মাফলার আর মোটা দস্তানা। হিমেল জানালার ধারে দাঁড়িয়ে তার ঝলমলে ডানা ঝাপটাচ্ছিল।

— “চল, মিশা। এখনই রওনা দিতে হবে। খিকখিক বুড়োর গুহা অনেক দূরে, বরফের পাহাড় পেরোতে হবে।”

মিশা গভীর শ্বাস নিল। মনে একটু ভয় ছিল, কিন্তু তার চোখে ভেসে উঠল গ্রামের শিশুদের মুখ। সবার কান্না, সবার হতাশা। হঠাৎ বুক ভরে উঠল সাহসে।
— “চলো হিমেল। আমরা পারব!”

দু’জনে বেরিয়ে পড়ল বরফে মোড়া রাস্তায়। আকাশ ভরা তারা ঝলমল করছে, চাঁদ যেন তাদের পথ দেখিয়ে দিচ্ছে। হিমেলের পালকের আলো পুরো পথ আলোকিত করছিল, তাই অন্ধকারে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল না।

তাদের প্রথমেই পড়ল এক বরফের বন। গাছের ডালগুলোয় বরফ জমে ঝুলছে, যেন সাদা স্ফটিকের লণ্ঠন। হঠাৎ ডালের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল ছোট ছোট বরফের মূর্তি। তারা হাঁটাচলা করছে, খিলখিল করে হাসছে।

মিশা অবাক হয়ে বলল,
— “এরা কি জীবিত?”
হিমেল মুচকি হেসে উত্তর দিল,
— “এরা হলো বরফ-প্রাণী। শুধু শীতের রাতে জেগে ওঠে। ভয় পেও না, এরা আমাদের ক্ষতি করবে না। বরং যদি তুমি হাসো, ওরাও তোমাকে দেখে নাচতে শুরু করবে।”

মিশা হাসতেই সত্যি সত্যি ছোট্ট মূর্তিগুলো হাততালি দিয়ে নাচতে লাগল। পথটা আনন্দময় হয়ে উঠল।

কিছু দূর এগোতেই তারা পৌঁছাল জমাট বাঁধা নদীর ধারে। নদীটা দেখতে কাঁচের মতো চকচক করছে। কিন্তু মাঝখানে হঠাৎ করে বরফ ফেটে গেল, ভেতর থেকে বেরিয়ে এল এক অদ্ভুত মাছ। তার গায়ে নীলচে আলো ঝলমল করছে।

মাছটা কথা বলল—
— “কে যাচ্ছে এ পথে? শুধু গান গাইলেই তোমরা পার হতে পারবে।”

মিশা প্রথমে একটু লজ্জা পেল। কিন্তু হিমেল ফিসফিস করে বলল,
— “গাও মিশা, তুমি গাইলে নদীও গলে যাবে।”

মিশা সাহস করে গুনগুনিয়ে উঠল একটি ক্রিসমাস গান। তার মিষ্টি কণ্ঠে চারপাশ যেন ঝলমল করে উঠল। মাছটি আনন্দে লাফিয়ে উঠল, আর নদীর বরফের ওপর একটা ঝকঝকে সেতু তৈরি হয়ে গেল। তারা সহজেই পার হয়ে গেল।

অবশেষে পাহাড়ের কাছে পৌঁছাল তারা। ঠাণ্ডা বাতাস এত জোরে বইছে যে দাঁড়িয়ে থাকাই মুশকিল। পাহাড়ের উপরে উঠতেই তারা দেখতে পেল এক বিশাল জাদুর প্রাচীর। সেটা ছিল স্বচ্ছ বরফ দিয়ে তৈরি, ভেতর থেকে আলো বের হচ্ছে।

হিমেল বলল,
— “এটাই খিকখিক বুড়োর বানানো বাধা। শুধু সত্যিকারের আনন্দের গান গাইলেই এটা গলে যাবে।”

মিশা এবার দ্বিধা না করে হিমেলের সাথে জোরে গান ধরল। তাদের কণ্ঠ মিলতেই চারপাশ কেঁপে উঠল, আর প্রাচীরটা ধীরে ধীরে গলতে শুরু করল। বরফ ঝরে গিয়ে পথ খুলে গেল।

মিশা আনন্দে হেসে উঠল।
— “দেখলে হিমেল, আমরা পেরেছি!”
হিমেল ডানা ঝাপটিয়ে বলল,
— “হ্যাঁ, কারণ তুমি ভয় পাওনি। আর মনে রেখো, সত্যিকারের আনন্দ আর সাহসের সামনে কোনো অন্ধকার টিকতে পারে না।”

তাদের চোখের সামনে এখন পাহাড়ের পেছনে দেখা যাচ্ছে এক অন্ধকার গুহা। সেই গুহা থেকেই যেন ভেসে আসছে ভৌতিক খিকখিক হাসি।

মিশা গভীর শ্বাস নিল।
— “এবার আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
হিমেল মাথা নেড়ে বলল,
— “হ্যাঁ, কিন্তু আমরা একসাথে আছি।”

তারপর দু’জনে ধীরে ধীরে গুহার দিকে এগিয়ে গেল—সাহস, আলো আর ভালোবাসার জাদু সঙ্গে নিয়ে।

প্রেমের নতুন ঠিকানা - বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প: অসম্পূর্ণ ভালোবাসা, বৃষ্টি ভেজা স্মৃতি আর জীবনের নতুন মানে খোঁজার আবেগঘন রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প। মেঘলা ও শান্তনুর হৃদয়ের যাত্রা পাঠককে ছুঁয়ে যাবে গভীরভাবে। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় ৫ : উপহার উদ্ধার

সম্পূর্ণ বাংলা রূপকথার ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

সকালের প্রথম রোদ বরফের সাদা চাদরে পড়তেই গ্রাম যেন সোনালি আলোয় ঝলমল করে উঠল। চারদিকে তখনো উৎসবের আমেজ, কিন্তু মিশার মন যেন অন্য এক উত্তেজনায় কাঁপছে। রাতভর সে ঠিক করেছে, আজ যেভাবেই হোক সান্তা-কাকার হারানো উপহারগুলো খুঁজে আনতে হবে। যদি না পায়, তবে গ্রামের কত শিশুই তো তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নভরা প্যাকেট পাবে না।

মিশা, টিনা আর ছোট্ট কুকুর বরফা বেরিয়ে পড়ল ঘর থেকে। হাতে একটা পুরোনো লণ্ঠন, গলায় ঝোলানো উষ্ণ স্কার্ফ। বরফা লাফাতে লাফাতে পথ দেখাচ্ছিল। বরফে ঢাকা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মিশা অনুভব করছিল, যেন সত্যিই এক রোমাঞ্চকর যাত্রায় বেরিয়েছে।

টিনা বলল, “তুই কি নিশ্চিত? সত্যিই কি আমরা খুঁজে পাব উপহারগুলো?”

মিশা দৃঢ়ভাবে উত্তর দিল, “অবশ্যই! যদি মন থেকে চাই, তবে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।”

তারা যখন গভীর জঙ্গলে ঢুকল, তখন বাতাস আরও ঠান্ডা হয়ে এলো। গাছের ডাল ভেঙে তুষারের ঝিরঝির শব্দ কানে আসছিল। হঠাৎ বরফা থেমে গেল। কান খাড়া করে কিছু একটা শুনতে পেল যেন। মিশা এগিয়ে গিয়ে দেখল, গাছের ফাঁকে একটা বড় সোনালি ব্যাগ আটকে আছে। ঝকঝকে ব্যাগটা যেন আলাদা আলো ছড়াচ্ছে।

“ওই তো! সান্তা-কাকার উপহারের ব্যাগ!”—মিশা চিৎকার করে উঠল।

কিন্তু ব্যাগের উপর ঘুমাচ্ছিল এক অদ্ভুত তুষার-দানব। সাদা লোমে ঢাকা, লালচে চোখের সেই প্রাণীকে দেখে টিনা ভয়ে মিশার হাত চেপে ধরল।

মিশা সাহস জোগাড় করে আস্তে আস্তে ফিসফিস করে বলল, “আমাদের ভয় পাওয়া চলবে না। কিছু একটা করতে হবে।”

তারা তিনজন মিলে চুপিচুপি একটা পরিকল্পনা করল। বরফা হালকা ঘেউ ঘেউ করে দানবটার দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দিল। সেই সুযোগে মিশা আর টিনা ব্যাগের কাছে গিয়ে ধীরে ধীরে টানতে লাগল। দানবটা একবার চোখ মেলে তাকালেও আবার হাই তুলে শুয়ে পড়ল।

অবশেষে তারা উপহারের ব্যাগটা মুক্ত করতে পারল। ব্যাগটা যেন হাসিমুখে আবার নিজের পরিচয় ফিরে পেল। মিশার মনে হলো, সত্যিই সে যেন কোনো অদ্ভুত শক্তির ছোঁয়া পেয়েছে।

গ্রামে ফিরে আসতেই সবাই উল্লাসে চিৎকার করে উঠল। “উপহার ফিরে এসেছে! আমাদের উৎসব আবার পূর্ণ হলো!”

সান্তা-কাকাও পৌঁছে গেলেন কিছুক্ষণের মধ্যেই। তিনি মিশার মাথায় হাত বুলিয়ে মৃদু হেসে বললেন, “তুমি সত্যিই সাহসী। তোমার জন্যই আজ সবার মুখে হাসি।”

মিশা মনে মনে ভাবল, এটাই তার সেই স্বপ্নের ম্যাজিক—যেখানে বিশ্বাস, সাহস আর ভালোবাসা মিলে তৈরি হলো এক অনন্য অলৌকিকতা।

গ্রামের শিশুরা উপহার হাতে খুশিতে ঝলমল করল, আর আকাশ থেকে তখন আলতো করে ঝরে পড়ছিল নতুন তুষারের সাদা আশীর্বাদ।

এই রকম মনমুগ্ধকর অডিও স্টোরির সহযোগে বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

আমরা কারা

নতুন বাংলা ছোট গল্প

বরফ-হাঁসের উপহার

বরফের দেশে মিশা ও তার বন্ধুদের সাহসী অভিযানে উপহার উদ্ধারের জাদুকরী কাহিনি। ছোটদের গল্প ও রূপকথার গল্প ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও উৎসবের আনন্দে ভরপুর।

বরফের দেশে মিশা ও তার বন্ধুদের সাহসী অভিযানে উপহার উদ্ধারের জাদুকরী কাহিনি। ছোটদের গল্প ও রূপকথার গল্প ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও উৎসবের আনন্দে ভরপুর।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: বরফ-হাঁসের উপহার

জীবাণু দিয়ে হত্যা

সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত এক রহস্যময় বাংলা ছোট গল্প—বিষাক্ত সূচে যুবরাজের মৃত্যু, ভাইয়ের ষড়যন্ত্র, আর এক বিজ্ঞানভিত্তিক খুনের ইতিহাস যা আপনাকে শিহরিত করে তুলবে।

সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত এক রহস্যময় বাংলা ছোট গল্প—বিষাক্ত সূচে যুবরাজের মৃত্যু, ভাইয়ের ষড়যন্ত্র, আর এক বিজ্ঞানভিত্তিক খুনের ইতিহাস যা আপনাকে শিহরিত করে তুলবে।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: জীবাণু দিয়ে হত্যা

অদম্য মায়া

অদম্য সাহস ও আত্মবিশ্বাসের অনুপ্রেরণায় ভরা একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প—যেখানে হার মানে না জীবনের ঢেউ, বরং জাগে নতুন করে বাঁচার সাহস ও স্বপ্ন।

অদম্য সাহস ও আত্মবিশ্বাসের অনুপ্রেরণায় ভরা একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প—যেখানে হার মানে না জীবনের ঢেউ, বরং জাগে নতুন করে বাঁচার সাহস ও স্বপ্ন।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: অদম্য মায়া

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!

🔔 সাবস্ক্রাইব করুন! রিয়েল টাইমে মন্ত্রমুগ্ধকর অডিও স্টোরি সহযোগে নতুন নতুন বাংলা ছোট গল্পের আপডেট পেতে এখনই সাবস্ক্রাইব করুন! সাবস্ক্রাইব
অন্ধকার থেকে আলো – অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প শেষ ঠিকানা – রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প আবছা পা – ভুতের বাংলা ছোট গল্প সোনালি পালক – ছোটদের রূপকথার গল্প প্রেমের পথচলা – বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প