অধ্যায় ১: নতুন শুরু
আমি শোভনা সেন, একজন লেখিকা। হালকা এক গরম আবহাওয়ার মধ্যে কোলকাতার ব্যস্ততা আর ভিড় ছেড়ে এক নতুন শুরুর দিকে পা বাড়ালাম। আর এটি শুধুই এক ভ্রমণ নয়, এটি ছিল আমার আত্মার আর মনের মুক্তির পথ—এবং, এক রহস্যময় উপন্যাসের জন্মের সূচনা। হ্যাঁ, আমি সেই লেখিকা, যে এখনই আমার প্রথম ভুত-ভয়ংকর উপন্যাসের খসড়া প্রস্তুত করতে যাচ্ছি। জীবনের চলমানতা, কিছু মুছে ফেলা স্মৃতি, এমনকি মনোবিদ্যার অদেখা কোণে লুকিয়ে থাকা কিছু সত্য, সব কিছু মিলিয়ে এক অজানা অভিযানে পা রাখা। আমি জানি, ভৌতিক গল্পের প্রতি মানুষদের একটা বিশেষ আকর্ষণ থাকে। আর সেই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হল এক অদ্ভুত রহস্য, যেখানে অজানা আতঙ্ক রাত্রির অন্ধকারে ফুঁটে ওঠে। এই ভাবনায় ভাবতে ভাবতে, নিজের মনেই স্রোত চেপে বসেছিল।
এপ্রিলের শেষ। কোলকাতার তাপদাহে হাঁফিয়ে উঠছে শহর। তবে, রাস্তায় বেরিয়ে আসার পর যেন মনে হল, এক অন্যরকম শীতলতা ঘিরে ধরেছে আমাকে। শহরের ঝলমলে আলো আর মানুষজনের ভিড়ে যেটা খুঁজছিলাম, সেটা ছিল এক নির্জনতা—এক রকম শান্তি। সেই শান্তি, যা আমি বহুদিন ধরে অনুভব করিনি। চাঁদপুর গ্রামে পৌঁছাতে সময় নিয়েছিল, তবে সেখানে গিয়ে পৌঁছানোর পর, অবশেষে একটা বিষণ্ণ সৌন্দর্য দেখলাম—পুরনো এক জমিদার বাড়ি। আমি আগে থেকেই জমিদার বাড়ির কেয়ার টেকার মনোহর বাবুর সাথে কথা বলে রেখেছিলাম।
বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, কোনো পুরনো সময়ের গল্পের মধ্যে ঢুকে পড়েছি আমি। বিশাল বাড়ি, একটু জীর্ণ হয়ে পড়া, যেন ইতিহাসের অনেক অজানা গোপন কথা ধারণ করে রয়েছে। মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি ছিল, মনে হচ্ছিল, এখানে কিছু একটা গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে। নীরবতায় অবাক হয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলাম। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে দেখি, পুরনো আসবাবপত্রের মাঝে আলোর কম্পন। ঘরটি ছিল একেবারে নিঃসঙ্গ, কিন্তু কিছুটা অদ্ভুত—যেন, দীর্ঘদিন ধরে এ ঘর কোনো মানুষ দেখেনি। চোখে পড়ল এক কোণে পুরনো একটা আলমারি। খুলতেই, ভিতরে ছিল পুরনো কাগজপত্র, কিছু কাপড় আর একটি খাতা।
খাতাটা খুলতেই চোখে পড়ল—এটা ছিল শিবনাথ দত্তের লেখা। ১৮৮৭ সালের। আমার হৃদয়ে অস্বাভাবিক এক শিহরণ খেলে গেল। শিবনাথ দত্ত, এই গ্রামের এক পরিচিত নাম। তার লেখা, এক অশুভ আত্মার গল্প বলছিল—এক আত্মা, যা প্রতি বছর গ্রামবাসীদের আতঙ্কিত করতে আসে। তার লেখায় ছিল এক গভীর অভিশাপের কথা, যা শুয়ে শুয়ে তার নিজস্ব কাহিনির মতো আমার সামনে উঠে এল। ১৭৮৭ সালে শুরু হয়েছিল এই যাত্রা, যখন ঈশান দত্ত তার ভাই অভিনন্দ দত্তকে বিশ্বাসঘাতকতা করে জমি কেড়ে নিয়েছিল। আর সেই অভিশাপের প্রতিফলনই ছিল আত্মহত্যার মধ্যে। অভিনন্দ দত্ত, নিজের জীবন শেষ করেছিলেন চাঁদপুর গ্রামের বিশালাক্ষী মন্দিরের পুকুরে।
এই গল্প পড়ে, আমি ঠিক জানি না কীভাবে নিজেকে ধরে রাখব। কিন্তু আমি এক লেখিকা, রহস্যের প্রতি আমার আকর্ষণ জন্মেছে। আমি খাতাটা বুকে চেপে ধরে বাড়ির নিচে নামলাম। মনোহরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কি শিবনাথ দত্তের কথা জানেন। তিনি উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, জানি। তবে, এসব নিয়ে বেশি কথা না বলাই ভালো।” আমি চুপ করে থাকলাম, কিন্তু আমার কৌতূহল যেন আরও তীব্র হয়ে উঠল।
পরদিন, গ্রামের বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। একটি পুরনো চায়ের দোকানে বসে, আমি এক প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করলাম—তার নাম হরিদাস। আমি তাকে শিবনাথ দত্তের খাতার কথা বললাম। তাঁর চোখে যে ভীতি ফুটে উঠল, তা দেখে আমি চমকে উঠলাম। তাঁর ঠোঁটের কোণে এক চাপা গোঙানি শোনা গেল। বুঝতে পারলাম, গ্রামের মানুষরা এই অতীত নিয়ে কথা বলতে চান না। কিন্তু আমি জানি, গল্পটা এখানেই শেষ হবে না।
তবে, আমি লেখিকা। আমার মনের মধ্যে এক গভীর অশুভ আহ্বান। আমি এখানে রহস্যের অনুসন্ধানে এসেছি, এবং আমি জানি, এই বাড়ি এবং এই গ্রামের মধ্যে এক অদ্ভুত সংযোগ আছে, যা আমাকে সামনে নিয়ে যাবে। তবে, সময় বয়ে যাচ্ছে, আর এক দুঃখজনক কিন্তু বাস্তব সত্য—কখনো কখনো কিছু রহস্য আমাদের জীবনকে এক অনির্বাচিত পথে নিয়ে যায়।
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - জীবন্ত মূর্তি: "জীবন্ত মূর্তি" একটি রহস্য রোমাঞ্চে ভরা বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ইতিহাস, প্রেম এবং অতীতের সঙ্গে বর্তমানের অদ্ভুত সংযোগ তুলে ধরা হয়েছে। চমকপ্রদ ঘটনায় গল্পটি পাঠককে মুগ্ধ করবে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অধ্যায় ২: রহস্যের সন্ধানে
পরের কয়েকটা দিন আমি লাইব্রেরি আর গ্রামের পুরনো দলিলগুলো খতিয়ে কাটালাম। দৃষ্টির সামনে অনেক কাগজপত্র এসে পড়ে, কিন্তু আমি তাতে কোনো বিশেষ কিছু খুঁজে পেলাম না। সব কিছুই ছিল পুরনো জমির হিসাব, এবং কোথাও কোনো বিশ্বাসঘাতকতার প্রমাণ ছিল না। ঈশান দত্ত ও অভিনন্দ দত্তের সম্পর্কও ছিল আইনগত, যথাযথভাবে জমি কেনা-বেচার দলিল। তাহলে শিবনাথ দত্ত কেন সেই লেখায় বিশ্বাসঘাতকতার কথা লিখেছিলেন? তিনি কি মিথ্যা লিখেছিলেন, নাকি কিছু গোপন কথা লুকিয়ে রেখেছিলেন?
এ প্রশ্ন আমার মনে ঘুরপাক খেতে লাগল। আমি যেন ওই অতীতের গভীরে ঢুকতে চাইছিলাম, যেখানে শুধু রহস্য আর অজানা ইতিহাস জড়িয়ে ছিল। একদিন সন্ধ্যায়, আমি চাঁদপুরের গ্রাম্য লাইব্রেরিতে বসে ছিলাম, যখন একটি অদ্ভুত অনুভূতি আমাকে ছুঁয়ে গেল। ঘরের বাতাসে যেন এক অস্বাভাবিক শীতলতা অনুভূত হচ্ছিল। আমি একটু শিরদাঁড়া সোজা করে আবার কাগজপত্রের দিকে মনোযোগ দিলাম, কিন্তু চোখে পড়ল একের পর এক অস্বস্তিকর প্রতিফলন—আমার চারপাশের সমস্ত কিছু যেন জীবন্ত হয়ে উঠছিল।
এক রাতে ঝড়ের বাতাসে, ঘরের জানালা ভেঙে গেল। কাচের স্নিগ্ধ শস্যের মতো ভাঙা টুকরো গিয়ে পড়ল মেঝেতে। ঘরটা হঠাৎ করে ঠান্ডা হয়ে গেল। বাতাসের সেই ঠান্ডা ঢেউ আমার গায়ে লাগল, আর আলোতেও যেন অদ্ভুত একটা অন্ধকারের ছায়া নেমে এল। এমন সময়, দূর থেকে একটি কান্নার শব্দ ভেসে এলো—শোনা গেল, কেউ যেন মৃদু স্বরে “ঈশান…” বলে চিৎকার করছে। আমি অবাক হয়ে থেমে গেলাম, শরীরটা কাঁপতে লাগল। সে কান্না কেমন যেন অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল যেন সেটা শিবনাথ দত্তের লেখার থেকে উঠে এসেছে।
সারা রাত সেই কান্নার শব্দে ঘুমে থাকতে পারলাম না। আমার মনে হচ্ছিল, কিছু অদ্ভুত কিছু ঘটে চলেছে। পরের দিন সকালে, আমি হরিদাসের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে বিশালাক্ষী মন্দির দেখানোর প্রস্তাব দিলেন। গ্রাম থেকে একটু দূরে, মন্দিরের পুকুরের ধারে গিয়ে তিনি বললেন, “এই পুকুরে ১৭৮৭ সালে অভিনন্দ দত্ত আত্মহত্যা করেছিলেন।” হরিদাসের চোখে সেই পুরনো ক্ষোভ আর ভয় ছিল। তিনি থমকে দাঁড়িয়ে পুকুরের জল দেখতে লাগলেন। জলটা ছিল অদ্ভুত নিস্তব্ধ। মনে হচ্ছিল যেন পুকুরের নিচে অশান্ত চোখ দুটো আমাকে দেখছে। এমনভাবে যেন আমি একে দেখছি, কিন্তু সে চোখ আবার আমার নড়াচড়া অনুভব করছে।
আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম, কিন্তু কিছু বলতে পারলাম না। সেই মুহূর্তে হরিদাস আমাকে শুধু একটিবারের জন্য তাকিয়ে দেখে, এবং তারপর বলতে শুরু করলেন, “গ্রামের অনেকেই জানে না, কিন্তু এই পুকুরের জল নাকি অভিশপ্ত।”
বাড়ি ফিরছিলাম, এমন সময় হঠাৎ করেই আমি একটা ছেলেকে দেখলাম। বয়স হবে, সপ্তাহেরও বেশি। সে আমার দিকে চেয়ে হাসলো। হাসিটা ছিল অদ্ভুত—চোখ দুটো ছিল গহ্বরের মতো, গভীর, অন্ধকার। আমি চমকে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম। আমি তাকে ডাকলাম, কিন্তু সে আর সেখানে ছিল না। আশপাশে তাকালাম, গ্রামবাসীদের জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু কেউ ওই ছেলেটি চেনে না। আমাকে একটা শীতল অস্বস্তি ঘিরে ধরেছিল। ছেলেটি ছিল না, তবে আমি নিশ্চিত ছিলাম, সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিল। কিছু একটা সন্দেহজনক ছিল।
রাতে, আবার সেই কান্নার শব্দ ভেসে এলো। এবার আরও স্পষ্ট, আর এতটাই ভীতিকর ছিল যে আমার মনটা একেবারে আতঙ্কিত হয়ে গেল। শব্দটা এসেছিল, ঠিক আমার ঘরের জানালার বাইরে থেকে। আমি জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ঘন কুয়াশার মধ্যে, এক অদ্ভুত মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। লম্বা কোট, মুখ ঢাকা—কেবল কান্নার শব্দ, আর কিছু নেই। মুখটি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না, তবে কান্নার সুর যেন মুঠো করে আমার মনের গভীরে ঢুকে যাচ্ছিল।
এখন, আমার চিৎকার আটকে গিয়েছিল। চোখে পড়ছিল, মূর্তিটি যেন কোথাও মিলিয়ে গেছে, আর কুয়াশার মধ্যে সে এক অদ্ভুত ভয়াবহতা নিয়ে যেন দাঁড়িয়ে ছিল। এই কান্না, এই অন্ধকার, এক গভীর রহস্য যা কখনো শিথিল হবেনা, মনে হচ্ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম না, এটা বাস্তব, না কি আমার কল্পনা? কিন্তু আমার আশেপাশের এই পরিবেশ, শিবনাথ দত্তের লেখা, সেই অভিশপ্ত পুকুর—এই সব কিছু একে অপরকে গ্রাহ্য করছে, যেন এক অবিনশ্বর চক্রের মধ্যে আমি জড়িয়ে পড়েছি।
এতদিনে যে রহস্য আমি অনুসন্ধান করতে এসেছিলাম, তা যেন আমাকে শিকার করে ফেলছে। আর আমার উপন্যাসের গল্পে যে অজানা ভূতেরা গল্পের গতি বদলে দেয়, এবার বাস্তবে সেই ভূতেরা এসে হাজির হয়েছে।
অধ্যায় ৩: অশান্ত আত্মা
পরের দিন সকালে আর দেরি করতে চাইলাম না। গা ভাসানো রহস্য, শিবনাথ দত্তের লেখা, সেই অদ্ভুত কান্নার শব্দ, আর রাতের অদৃশ্য ছেলে—সব কিছুই মনের মধ্যে জমে ছিল। আমি হরিদাসের কাছে গিয়ে সব খুলে বললাম। হরিদাস অবাক হয়ে আমাকে দেখল, তার চোখে যেন কিছু একটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। সে কিছুক্ষণ নীরব থেকে চিন্তা করল, তারপর বলল, “ঈশান দত্তের বংশধর আর গ্রামে নেই। কিন্তু আছে অভিনন্দ দত্তের বংশধর, একদম গ্রামটার এক প্রান্তে।”
আমি চমকে গেলাম। অভিনন্দ দত্তের নাম শুনে আমার মনে তোলপাড় শুরু হল। “অভিনন্দ দত্ত?” আমি জিজ্ঞেস করলাম। “তাঁর সঙ্গে কী সম্পর্ক আছে?”
হরিদাস আমাকে কিছু না বলেই হাঁটতে শুরু করল। “চল, তুমি জানলে তো এই গল্পটা। অভিনন্দ দত্তের আত্মা প্রতি শতাব্দীতে ফিরে আসে কুয়াশার মধ্যে, ঈশানের নাম ধরে কান্না করে, কিন্তু কেউ কখনও তাকে দেখতে পায় না। তার আত্মা যে শান্তি পাবে, সে কি জানে?”
আমরা কিছুক্ষণ হাঁটার পর গ্রামের এক কোণায় পৌঁছলাম। ছোট্ট এক চালার বাড়ি, পুরনো এবং একটু হালকা অন্ধকারে ঢাকা। বাড়ির বাইরে বসে ছিলেন এক বৃদ্ধা, সোনা নামের। সোনা, আমার মনে হল, খুবই প্রাচীন এবং অভিজ্ঞ। তার চেহারায় কিছু একটা ছিল, যেন সে অনেক কিছুর সাক্ষী। হরিদাস তার কাছে গেল, এবং সব খুলে বলল।
সোনা মনোযোগ দিয়ে শুনল, তার মুখে কোনো রকমের উৎকণ্ঠা বা অবাক হওয়ার চিহ্ন ছিল না। একটু বিরতি দিয়ে তিনি আস্তে আস্তে বললেন, “আমাদের পরিবারে এই গল্প প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। ঈশান দত্ত জমি কেড়ে নেওয়ার পর থেকেই এই অভিশাপ। প্রতি শতাব্দীতে, কুয়াশা নামার সময় অভিনন্দ দত্তের অতৃপ্ত আত্মা ফিরে আসে। কিন্তু কাউকে স্পর্শ করতে পারে না। শুধু কান্নার শব্দ করে ঈশানের নাম ধরে চিৎকার করে।”
আমি নীরবে শুনছিলাম। সোনা যা বলছিল, তা যেন আমার ভিতর এক অদ্ভুত শীতলতার সৃষ্টি করল। ঈশান দত্তের জমি কেড়ে নেওয়া, অভিনন্দ দত্তের আত্মা—এটা কী সত্যি? এবং কি এমন ছিল যা আমাকে এখনো জানানো হয়নি? “কিন্তু, যদি তিনি কোনোদিন ঈশানকে স্পর্শ করতে পারেন, তাহলে কী হবে?” আমি সোনা থেকে প্রশ্ন করলাম।
তিনি কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন, তারপর বললেন, “ঈশান দত্তের আত্মা অতৃপ্ত, সে ফিরে আসার পর কেবল কান্নার আওয়াজ সৃষ্টি করে, কাউকে কখনও আক্রমণ করেনি। কিন্তু সে যদি পূর্ণভাবে ফিরে আসে, তবে তার অভিশাপ অসীম হবে।”
এ কথা শুনে আমার মনে অদ্ভুত এক দোটানা তৈরি হল। আমি যেন একটা অন্ধকার স্রোতে চলে যাচ্ছিলাম। সোনা আরও কিছু বললেন, কিন্তু তা শুনে আমার অস্থিরতা আরও বেড়ে গেল। “এবং কুয়াশায় ফিরে আসার সময়, সেই কান্নার আওয়াজ…এটা তোমার মতো কাউকে নকল করতে পারে, যেমন আজকের রাতে হয়েছিল। সেই কান্না আর শিবনাথের লেখার মধ্যে সম্পর্ক।”
কিছুক্ষণ থেমে, আমি আবার প্রশ্ন করলাম, “তাহলে, আমার সঙ্গে কী হবে? আমি তো এসব জানি না!”
সোনা এক গভীর নিঃশ্বাস নিলেন। তারপর ধীরে ধীরে বললেন, “তোমাকে যে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আসতে হয়েছে, তা জানো। কিন্তু জানো, সেই উত্তর তুমি হয়তো কখনোই পাবে না। কারণ এটা অতীতের অভিশাপের গল্প—এটা আগেও ছিল, এখনো আছে, এবং থাকবে।”
তখন, হঠাৎ করে পেছন থেকে একটা গভীর, বিষণ্ণ, ঝাঁঝালো আওয়াজ শোনা গেল। ঈশান… ঈশান…। শীতল শ্বাসের মতো এক ঝাপটা এল। আমি ঘুরে তাকালাম, কিন্তু কোনো কিছুই ছিল না। হরিদাসও ভয় পেয়ে আমাকে তার পাশে নিয়ে এসে বললেন, “এটা তারই আওয়াজ, এবার সত্যি ফিরে এসেছে।”
আমি থমকে দাঁড়ালাম। “সে কারা?” আমি চিৎকার করলাম, কিন্তু কোনো উত্তর আসল না।
তখন, আবার কান্নার আওয়াজ শোনা গেল, এবার আরও ভয়ংকর। আমাকে মনে হল যেন আমার চারপাশে কিছু অদৃশ্য শক্তি ঘুরছে, আমি কোথাও যাচ্ছি, কিন্তু জানি না কোথায়। তারপর, সেই আওয়াজ আরও কাছে আসতে লাগল। আমি ভয় পেয়ে দৌঁড়ানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু পা চলছিল না। হরিদাস আমাকে আঁকড়ে ধরে বললেন, “এটা কেবল শুরু। তোমাকে একা ছেড়ে যেতে পারি না।”
তারপর, হঠাৎ যেন চারপাশের বাতাস আরও ঠান্ডা হয়ে গেল। এক মুহূর্তে আমার কান্নার আওয়াজটা পুরোপুরি থেমে গেল, তারপর আমি শুনলাম—“তুমি কেন এসেছো এখানে? কেন এই দুঃখের মাঝে আমাকে খুঁজতে এসেছো?”
এ কথা শুনে আমার সমস্ত শরীর কাঁপতে লাগলো। আমি জানি না, ওই আওয়াজ আমার কানে আসছে কি না, কিন্তু এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে, যেন কেউ আমাকে গিলে ফেলতে চাইছে।
এটা কি আসলেই অভিশাপের কাজ?
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - মেঘদূত: রহস্য রোমাঞ্চে ভরা বাংলা গল্প “মেঘদূত”রাজা রবি বর্মার বিখ্যাত চিত্রকর্ম “মেঘদূত” রহস্যজনকভাবে চুরি! ইন্সপেক্টর সত্যজিৎ সেনের কাছে এই রহস্যের সমাধানের ভার। চুরির সাথে জড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত রং, গোপন বার্তা, এবং এক অজানা ব্যক্তি। কৌতূহল, রোমাঞ্চ, এবং অপ্রত্যাশিত মোড়ে ভরা এই গল্পেআপনাকে টেনে নিয়ে যাবে রহস্যের জগতে। শিল্প, রহস্য, এবং রোমাঞ্চের অপূর্ব মেলবন্ধন “মেঘদূত”। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অধ্যায় ৪: অভিশাপ ভাঙা
সোনা চুপ করে কিছুক্ষণ ভাবলেন। আমি দেখলাম, তার চোখে যেন এক অজানা দুঃখের ছায়া ঘুরছে। তারপর, খুব ধীরে ধীরে, যেন আমার কাছে কিছু গোপন সত্যি ফাঁস করতে যাচ্ছেন, বললেন, “বিশালাক্ষী মন্দিরের পুকুরের তলায় একটা লোহার বাক্স আছে। সেখানে ঈশান দত্ত লিখেছিলেন, কীভাবে জমিটা অর্জন করেছিলেন, কেন জমিটা চাই ছিলেন। ঈশান দত্তের ছেলেবেলার এক বন্ধু ছিলেন অভিনন্দ। কিন্তু দুই বন্ধুর মধ্যে বিবাদ বাঁধে জমি নিয়ে। ঈশান জমিটা কিনে নিতে বাধ্য হন, কিন্তু অভিনন্দকে অসম্মান করেননি বলে লিখেছিলেন।”
এই কথা শুনে আমার সারা শরীর যেন শিরশির করে উঠল। মনে হচ্ছিল, যেন কিছু একটা রহস্যময়ভাবে আমাকে ঘিরে ধরছে। আমি জানতাম না, এই সত্যিই কি আমাকে মুক্তি দেবে, নাকি আরও গভীর অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দেবে। “তাহলে সেই বাক্সটা কি সত্যিই পুকুরের তলায়?” আমি একটু ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
সোনা মাথা নেড়ে বললেন, “হ্যাঁ, তবে সেটা সহজ কাজ নয়। পুকুরের তলায় লোহার বাক্সটা থাকা মানে, অনেক বিপদ। তবু যদি তুমি সত্য জানাতে চাও, তাহলে সেটা খুঁজে বের করতে হবে।”
হরিদাস কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, “তবে আমি মনে করি, এটা খুঁজে বের করা আমাদের জন্য বিপজ্জনক হবে। পুকুরে অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে থাকে, বিশেষ করে কুয়াশায়।” তার কণ্ঠে ভয় ছিল, কিন্তু সেই ভয় যেন ছিল আমাদের জন্য সতর্কতা।
আমার মনে তখন এক সঙ্কল্প তৈরি হলো—আমি সত্যটা জানব, যত ভয়ই হোক। আমি সোনাকে বললাম, “আমি যেতে চাই, হরিদাসের সাহায্য নিয়ে। পুকুরের তলায় বাক্সটা খুঁজে বের করতেই হবে।”
হরিদাস এক মুহূর্ত নীরব থেকে শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন, “যেহেতু তুমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছো, আমি তোমার সঙ্গে যাব। তবে সাবধানে।”
তখন, আমি সোনা এবং হরিদাসের সঙ্গে পুকুরের দিকে রওনা দিলাম। পুকুরটি বেশ পুরনো, তলদেশটা ভারী কাদা ও মাটির স্তরে পূর্ণ ছিল। ডুবুরি এসে দাঁড়াল, তার চোখে উৎকণ্ঠা ছিল, তবে সে জানত যে কাজটা কঠিন হবে। সে জানত পুকুরের তলায় কিছু অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে, আর তার চোখে সন্ত্রস্ত দৃষ্টি ছিল।
দীর্ঘ সময় পর, যখন আমরা অপেক্ষা করছিলাম, হঠাৎ জলের উপরে কিছু একটা ভেসে উঠল। প্রথমে আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না, তারপর দেখতে পেলাম, একটি মরচে লেগে থাকা লোহার বাক্স জলের উপরে ভেসে উঠছে। ডুবুরি তাড়াতাড়ি বাক্সটা তোলার চেষ্টা করল। কিছুক্ষণের মধ্যে, আমাদের সামনে সেই লোহার বাক্সটা আসল।
বাক্সটা খুলতে একবার দুবার চেষ্টা করার পর, অবশেষে খোলা গেল। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো পুরনো কাগজপত্রগুলো। আমি হাত দিয়ে কাগজপত্রগুলো তুলে নিলাম, আর তারপর একটু শ্বাস টেনে কাগজটি খুলে পড়লাম। প্রথম পাতায় ঈশান দত্তের লেখা ছিল। তার হাতের লেখা পরিষ্কার ছিল, এবং সেখানে লেখা ছিল, “আমি জমিটা কিনেছি, অভিনন্দের সঙ্গে সম্মান জানিয়ে, তবে গ্রামের লোকজনের কাছে তা প্রকাশ করা হয়নি। অভিনন্দ এই ভুল বোঝাবুঝির কারণে নিজেকে প্রতারিত মনে করেছিলেন, এবং তার পরিণতি এক ভীষণ দুর্ঘটনায় পৌঁছেছিল।”
এই কথাগুলো পড়ে, আমার মনে এক নতুন রহস্যের জন্ম হলো। ঈশান দত্ত কি সত্যিই অভিনন্দকে সম্মান জানিয়ে জমি কিনেছিলেন? গ্রামবাসীদের গুজব, ভুল বোঝাবুঝি—এটাই কি অভিনন্দের আত্মহত্যার কারণ?
সোনা পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, “এখন তুমি বুঝতে পারছো, ঈশান দত্ত তার বন্ধুকে অসম্মান করেননি, কিন্তু এই গল্পটা প্রচলিত হয়ে গিয়েছিল গ্রামে। আর সেই ভুল বোঝাবুঝির কারণে অভিনন্দ হয়তো আত্মহত্যা করেছিল। তার আত্মা যে শান্তি পায়নি, তা এখন বুঝতে পারছো।”
হরিদাস গভীরভাবে শ্বাস টেনে বলল, “এবার বুঝলাম, সত্যি কি ছিল। তবে, তুমি জানো, এই সত্যে এক নতুন সমস্যা তৈরি হতে পারে। যদি অভিনন্দের আত্মা এটা জানে, তাহলে সে শান্তি পাবে না।”
আমার মনে এক অস্থিরতা তৈরি হলো। কি ঘটছে, আমি কী করবো? ঘরের তলায় লুকানো রহস্যগুলো জানানোই ছিল আমার কাজ, কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না, এই সত্য কি আমাকে শান্তি দেবে, না আরও ভয়াবহ কিছু তৈরি করবে। যখন সোনা বললেন, “এবার তুমি কি জানবে, অভিনন্দের আত্মা শান্তি পাবে কি না?” তখন তার কণ্ঠে এমন এক ভয়াবহ শীতলতা ছিল, যেন তার নিজেরই বিশ্বাস ছিল না।
তখনই, হঠাৎ পাশের অন্ধকারে থেকে একটি কণ্ঠ শোনা গেল—এক অন্ধকার, গম্ভীর আওয়াজ। “তুমি কেন এসেছো এখানে? কেন আমার দুঃখের মধ্যে পা রেখেছো?”
আমরা সবাই চমকে উঠলাম। সোনা চুপ করে চোখ বন্ধ করে বললেন, “এটা অভিনন্দের আত্মা। এবার সে বুঝে ফেলেছে, তার দুঃখের সত্যি বের হয়ে এসেছে।”
এক মুহূর্তে চারপাশে শীতল একটা অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল। বাতাস ভারী হয়ে উঠল। সেই কণ্ঠ আরও উচ্চারণ করল, “এবার শান্তি পাই না তো… তুমি জানো, কেন আমি ফিরে এসেছি? তোমার আত্মা শিকার হতে হবে।”
আমার পা যেন থেমে গেল।
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - রতুলের রহস্য: রহস্য রোমাঞ্চে ভরা এক বাংলা গল্প!শিলিগুড়িতে বিখ্যাত ব্যবসায়ী সূর্যকান্ত মিত্র খুন!ইন্সপেক্টর সোমনাথ মজুমদারের তদন্তে উঠে আসে নানা রহস্য।নাতনী অদিতি কি খুনের মূল চক্রী?চুরি যাওয়া মূল্যবান পেইন্টিংয়ের সাথে কী সম্পর্ক?একের পর এক রহস্যের সমাধানে সোমনাথ পৌঁছান সত্যের কাছে।রহস্য রোমাঞ্চ পছন্দ করলে এই বাংলা গল্প আপনার জন্যই! সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অধ্যায় ৫: সত্যের উন্মোচন
সন্ধ্যা নামার আগেই বিশালাক্ষী মন্দিরে পৌঁছালাম। মন্দিরের চারপাশে এক অদ্ভুত শীতলতা ছড়িয়ে পড়েছিল, আর বাতাসে কুয়াশার গন্ধ ভাসছিল। আমি, হরিদাস, সোনা, এবং গ্রামের কয়েকজন প্রবীণ লোকজন—সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলাম। পুকুরের ধারে দাঁড়িয়ে আমি ঈশান দত্তের লেখা সেই পুরনো কাগজটি হাতে নিয়ে জোরে জোরে পড়তে শুরু করলাম। আমার কণ্ঠে যেন এক অদ্ভুত শক্তি ছিল, মনে হচ্ছিল, এই লেখা যেন কোনো অতৃপ্ত আত্মাকে শান্তি দিতে পারবে। আমি পড়লাম:
“আমি জমিটা কিনেছি, অভিনন্দের সঙ্গে সম্মান জানিয়ে, কিন্তু গ্রামে কেউ জানে না। তারা জানে না যে আমি তাকে অর্থ দিয়েছি, সম্মান দিয়েছি। সে বিশ্বাস করেছিল, আমি তাকে প্রতারিত করেছি, কিন্তু এই ধারণা ছিল ভুল। আমি তাকে অসম্মান করিনি, কিন্তু এই ভুল বোঝাবুঝির ফলস্বরূপ, সে আত্মহত্যা করেছে। আমি দুঃখিত।”
আমার কণ্ঠ থেমে গেল। পুরো গ্রাম যেন এক মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে গেল। চারপাশে যে নিস্তব্ধতা তৈরি হলো, তা অদ্ভুত এবং ভীতিকর ছিল। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর গ্রামবাসীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হলো। অনেকেই একে অপরকে দেখছিল, যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না। কেউ কেউ কানাকানি করছিল, “এটা কি সত্যি? আমরা কি এতদিন ভুল শুনেছি?”
সোনা পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার মুখাবয়বে কোনো অভিব্যক্তি ছিল না, তবে তার চোখে কিছু একটা ছিল—যতটা শান্ত, ঠিক ততটাই অভিশপ্ত। হরিদাস তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, চোখে আতঙ্কের ছাপ, কিন্তু কিছু বলছিলেন না। আমি সোনা দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “এখন কি শান্তি পাবে অভিনন্দের আত্মা?”
সোনা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললেন, “সত্যি যদি জানতে পারে, তা হলে অন্তত তার দুঃখ কিছুটা লাঘব হবে। তবে, শান্তি পাবে কি না, জানি না। আত্মা যদি ক্ষুব্ধ থাকে, তবে শান্তি পাওয়ার পথ কঠিন।”
এই কথা বলার পর, চারপাশে হঠাৎ করেই বাতাসটা ভারী হয়ে উঠল, যেন কোথাও থেকে এক অদৃশ্য শক্তি আমাদের ঘিরে ফেলছে। মন্দিরের পুকুরের জলও যেন থমকে গিয়েছিল। সোনা এক মুহূর্ত চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। তারপর, যেন কোনো অজানা জিনিসের মধ্যে ডুবে গিয়ে বললেন, “তুমি জানো, এই মন্দিরে অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। কুয়াশা নামলেই, ঈশান দত্তের আত্মা এখানে ফিরে আসে। কিন্তু কেউ তার দিকে নজর দেয় না, কেউ তাকে বিশ্বাস করে না।”
এতক্ষণে, সবার মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। আমি সোনা আর হরিদাসের দিকে তাকালাম, কিন্তু হঠাৎ করে চারপাশে এক অদ্ভুত, গম্ভীর কণ্ঠ শোনা গেল। সেই কণ্ঠ ছিল গভীর —একটি আত্মার কণ্ঠ, যা আমি কখনও শুনিনি।
“তুমি কেন এসেছো?” সেই কণ্ঠ বলল, “কেন তুমি আমার দুঃখের মধ্যে পা রেখেছো? তুমি কি জানো, আমার কষ্টের পরিণতি কী ছিল?”
আমার শরীরের রক্ত যেন জমে গিয়েছিল। সোনা চোখ বন্ধ করে বললেন, “এটা অভিনন্দের আত্মা। সে আমাদের কাছে ফিরে এসেছে।” হরিদাস তীব্রভাবে শ্বাস টেনে বললেন, “এবার, সে জানবে যে আমরা তার পাপের সত্যি জানতে পেরেছি।”
কণ্ঠটি আবার শোনা গেল, “তুমি কি ভেবেছিলে, আমি আর কখনও ফিরে আসবো না? তুমি আমার দুঃখের কথা জানলে কি শান্তি পাবো? তুমি কি জানো, কেন আমি এখানে ফিরে এসেছি?”
আমি ভয় পেয়ে সোনা দিকে তাকালাম, কিন্তু তার মুখে কোনো পরিবর্তন ছিল না। তিনি আবার বললেন, “অভিনন্দ আত্মহত্যা করেনি, সে কেবল ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়েছিল। কিন্তু তার আত্মা আর শান্তি পাবে না যতদিন না এই সত্যি প্রকাশিত হয়।”
এরপর, একটা ভয়াবহ ঠাণ্ডা হাওয়া আমাদের চারপাশে ঘুরতে শুরু করল। পুকুরের জল উঠতে শুরু করেছিল, যেন কিছু গভীর, অদৃশ্য শক্তি আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আমার হৃদযন্ত্র তীব্রভাবে ধড়ফড় করছিল। সোনা আবার বললেন, “এবার, তার আত্মা বুঝে নেবে যে আমরা তাকে শান্তি দিতে এসেছি।”
এতক্ষণে, সেই অদ্ভুত কণ্ঠ আবার শুনতে পেলাম, তবে এবার তার সুরে কিছুটা শাস্তির অনুভূতি ছিল—“তুমি সত্য জানালে, তাই আমি তোমাদের দুঃখের জন্য ধন্যবাদ জানাই। তবে, এটাই শেষ নয়। আমি তোমাদের শান্তি দেবো না, তবে আমাকে শান্তি দেওয়ার চেষ্টা করো।”
এটা বলেই, কণ্ঠটি হঠাৎ করে থেমে গেল, আর চারপাশে এক ভয়ানক নিস্তব্ধতা বিরাজ করল। পুকুরের জল আবার স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করল। তবে, আমি বুঝতে পারলাম—আমাদের জীবনে এই অদ্ভুত ঘটনাগুলো আমাদের শুধু ভয় দেখানোর জন্য নয়, বরং আমাদের হৃদয়ে কিছু গভীর শঙ্কা সৃষ্টি করতে এসেছিল।
আমরা সবাই একে অপরকে চুপচাপ দেখছিলাম, যেন এই ভয়ঙ্কর রাতের পর কিছু আর আগের মতো থাকবে না।