রচনা: সুরজিৎ রায় || গল্পপাঠে: সুমনা নাগ
অধ্যায় ১ – জঙ্গলের ঝগড়াঝাঁটি
ছোটদের রূপকথার বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
অনেক অনেক দিন আগের কথা। একটা ঘন জঙ্গলের ভিতর ছোট্ট ছোট্ট প্রাণীরা নিজেদের মতো করে বাস করতো। গাছপালা, লতাগুল্ম আর ঝোপঝাড়ে ভরা সেই জঙ্গলটা যেন ছিল একেবারে রূপকথার মতো। সেই জঙ্গলের এক কোণে থাকতো পাঁচটা পিঁপড়ে। ওরা ছিল খুব পরিশ্রমী, সারাদিন ধরে দানা-দানা খাবার খুঁজে এনে নিজেদের বাসায় জমাতো। দল বেঁধে হাঁটতে হাঁটতে ওরা সারি করে এগোতো, যেন ছোট্ট সৈন্যবাহিনী কোনো বড় কাজ করছে।
জঙ্গলের আরেক পাশে থাকতো সাতটা মাছি। মাছিরা ছিল একেবারেই অন্য রকম। পিঁপড়েদের মতো ওরা এত কষ্ট করে খাবার খুঁজতো না। বরং চোখে পড়লেই ঝটপট উড়ে যেত আর যেখানে খাবার পেত সেখানেই ভিড় করতো। তাদের স্বভাবটা ছিল একটু দুষ্টু। অনেক সময় তারা অন্য কারও খাবারেও ভাগ বসাতে চাইতো।
এই নিয়েই সব গোলমাল শুরু হতো। যখনই জঙ্গলের পাশে থাকা বড় পাকা রাস্তা দিয়ে মানুষজন যেত, তখন অনেক সময় তাদের হাত থেকে খাবারের টুকরো মাটিতে পড়ে যেত। কখনও বিস্কুট, কখনও কেক, আবার কখনও ফল কিংবা টফি। আর এমন কিছু পড়ে গেলেই প্রথমেই ছুটে আসতো পিঁপড়েরা। তারা সারি বেঁধে খাবার টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতো। কিন্তু তার অল্প সময় পরেই ভনভন শব্দ তুলে হাজির হতো মাছির দল।
মাছিরা খাবার দেখেই ঝাঁপিয়ে পড়তো আর চিৎকার করে বলতে শুরু করতো,
— “এটা আমাদের! আমরা আগে দেখেছি!”
পিঁপড়েরা আবার জবাব দিতো,
— “না না, আমরাই আগে এসেছি। খাবার আমাদেরই!”
এভাবেই শুরু হতো টানাটানি, ঠেলাঠেলি আর ঝগড়াঝাঁটি। পিঁপড়েরা খাবার নিচে নামিয়ে টানতে চাইতো, আর মাছিরা সেটা উপরে তুলে উড়িয়ে নিয়ে যেতে চাইতো। জঙ্গলের সেই ছোট্ট কোণটা তখন কোলাহলে ভরে যেত।
কিন্তু জঙ্গলের আরেক বাসিন্দা ছিল একটু আলাদা। সে হলো এক জ্ঞানী মাকড়শা। গাছের উঁচু ডালে তার সুন্দর করে বোনা জাল ছিল, সেখানেই সে থাকতো। মাকড়শা ছিল শান্ত স্বভাবের, আর সবসময় চেষ্টা করতো ঝগড়াঝাঁটি মিটিয়ে ফেলতে। পিঁপড়েরা যেমন তাকে মান্য করতো, মাছিরাও তেমনি তার কথায় চুপ হয়ে যেত।
প্রতিবার যখন পিঁপড়ে আর মাছিরা মারামারি শুরু করতো, তখন মাকড়শা গাছ থেকে ধীরে ধীরে নেমে আসতো। তার পাতলা পা গুলো বাতাসে দুলতে দুলতে ঝরে পড়তো, আর সে গম্ভীর গলায় বলতো,
— “থামো তোমরা! ঝগড়া করে তো কোনো লাভ হবে না। খাবার ভাগ করে নাও।”
প্রথমে কেউ শুনতে চাইতো না, কিন্তু শেষে মাকড়শার কথার জোরে সবাই শান্ত হয়ে যেত। কখনও পিঁপড়েরা একটু পেত, কখনও মাছিরা বেশি পেত, কিন্তু শেষমেশ সবাই কিছু না কিছু নিয়েই ফিরে যেত।
তবে ভিতরে ভিতরে তাদের মনোমালিন্য কমতো না। পিঁপড়েরা মনে করতো মাছিরা খুব অলস, তারা শুধু অন্যের খাবারে ভাগ বসাতে আসে। আর মাছিরা মনে করতো পিঁপড়েরা বেশি জেদি, সবসময় খাবার একা নিয়ে যেতে চায়। তাই ঝগড়ার শেষ হয়েও আবার নতুন ঝগড়ার শুরু হয়ে যেত।
এভাবেই চলছিল তাদের প্রতিদিনের লড়াই। জঙ্গলের অন্য প্রাণীরা অনেক সময় মজা করে এই দৃশ্য দেখতো। কারও কাছে সেটা খেলাধুলার মতো মনে হতো, আবার কারও কাছে সেটা বিরক্তিকর লাগতো। কিন্তু যাই হোক না কেন, পিঁপড়েদের আর মাছিদের এই দ্বন্দ্ব যেন শেষ হওয়ার নামই নিত না।
মাকড়শা মাঝে মাঝে নিজের মনে ভাবতো—“আহা! যদি এরা একসাথে কাজ করতে শিখতো, তাহলে কত ভালো হতো। খাবারও সবাই সমান পেত, আর ঝগড়ারও শেষ হতো।”
কিন্তু মাকড়শা জানতো, এভাবে বোঝানো সহজ নয়। তাই সে চুপচাপ সবকিছু দেখতো আর সুযোগ পেলেই শান্ত করার চেষ্টা করতো।
এইভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল। প্রতিদিনের মতোই পিঁপড়ে আর মাছির দল রাস্তায় পড়ে থাকা খাবার নিয়ে ঝগড়া করতো, আর মাকড়শা শান্তি ফিরিয়ে আনতো। কিন্তু কেউ জানতো না, সামনে আসছে এমন এক ঘটনা, যা বদলে দেবে তাদের গল্প—একটা চকচকে ললিপপ, যা নিয়ে হবে সবথেকে বড় লড়াই!
পেঁতিজ্বলা মাঠের সেই রাত - ভুতের বাংলা ছোট গল্প: পেঁতিজ্বলা মাঠে ঘটে যাওয়া এক রহস্যময় ঘটনার উপর ভিত্তি করে রচিত এই বাংলা ছোট গল্প একটি ভুতের গল্প, যেখানে অতীত ও বর্তমান মিলে সৃষ্টি করে শিউরে ওঠার এক অভিজ্ঞতা। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অধ্যায় ২ – ললিপপের আবিষ্কার
ছোটদের রূপকথার বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
এক সকালে জঙ্গলের গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো ঢুকে পড়েছে। পাখিরা কিচিরমিচির করছে, বাতাসে হালকা শীতলতা। সবকিছু যেন বেশ শান্তিপূর্ণ। ঠিক তখনই একটি ছোট্ট পিঁপড়ে খাবারের খোঁজে বের হলো। সে ধীরে ধীরে সারি থেকে একটু আলাদা হয়ে বড় রাস্তার ধারে চলে এলো।
রাস্তা দিয়ে অনেক মানুষ যাতায়াত করছিল, কেউ হাঁটছিল, কেউ বা সাইকেলে যাচ্ছিল। হঠাৎই সেই পিঁপড়ের চোখে পড়লো এক অদ্ভুত জিনিস। রাস্তার মাঝখানে পড়ে আছে চকচকে, রঙিন একটা ললিপপ।
ললিপপটা ছিল দেখতে যেন জ্বলজ্বল করা সূর্যের মতো। লাল, হলুদ, কমলা রঙ মিশে তৈরি হয়েছে এক মিষ্টি চকচকে গোলক। ললিপপের এক পাশে প্লাস্টিকের হাতল লম্বা করে বেরিয়ে আছে। পিঁপড়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো। এত বড় মিষ্টি সে জীবনে দেখেনি।
তার ছোট্ট মন খুশিতে ভরে গেল। সে ভাবলো,
— “আহা! যদি এটা আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে পারি, তাহলে অনেকদিনের খাবারের চিন্তা থাকবে না। সবাই কত খুশি হবে।”
কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই তার মনে আরেকটা চিন্তা এলো। ললিপপটা এত বড় যে, তার ছোট্ট শরীর দিয়ে সেটা একা টেনে নেওয়া একেবারেই অসম্ভব। যতই চেষ্টা করুক, তার শক্তি দিয়ে সেটা নড়ানো যাবে না।
পিঁপড়ে কিছুক্ষণ চারদিকে তাকালো। রাস্তা তখনো ফাঁকা, মানুষজন দূরে চলে গেছে। সে চুপচাপ ললিপপের চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখলো। তারপর নিজের মনে বললো,
— “না, এটা একা সম্ভব নয়। আমাকে অন্যদের ডাকতেই হবে।”
এই ভেবে সে দৌড়ে চলে গেলো জঙ্গলের ভেতরে, তার অন্য চারজন সঙ্গীকে ডাকতে। দৌড়াতে দৌড়াতে সে বারবার পিছনে তাকাচ্ছিল, যেন কেউ ললিপপটা নিয়ে না যায়।
এদিকে দূর থেকে সবকিছু লক্ষ্য করছিল আরেকটা প্রাণী। সেটা হলো এক মাছি। সে আসলে খাবারের খোঁজে উড়ে বেড়াচ্ছিল, হঠাৎই পিঁপড়ের অদ্ভুত আচরণ দেখে কৌতূহলী হয়ে গেল। মাছির চোখে পিঁপড়েকে এভাবে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা সত্যিই মজার লাগছিল।
মাছিটা নিজে কাছে এসে দেখলো সেই বিশাল ললিপপ। তার চোখ আনন্দে চকচক করে উঠলো।
— “ওহ! এ তো দারুণ খাবার! যদি এটা উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে পুরো মাছিদের দলে ভোজ বসবে।”
কিন্তু তখন সে ভাবলো, একা পক্ষে তো এটা সম্ভব নয়। এত বড় জিনিস একা নিয়ে যাওয়া যাবে না। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল, তারও সঙ্গীদের ডাকতে হবে।
মাছিটা আবার একবার ললিপপের দিকে তাকালো, যেন ঠিক করছে ওটা কার। তারপর দ্রুত ডানা ঝাপটিয়ে ভনভন শব্দ তুলে উড়ে গেল জঙ্গলের ভেতরে—তার ছয়জন সঙ্গীকে খবর দিতে।
এদিকে পিঁপড়ে ফিরে এসে তার চার সঙ্গীকে নিয়ে হাজির হলো ললিপপের কাছে। তারা সবাই ললিপপ দেখে একেবারে হতবাক। ছোট্ট ছোট্ট পিঁপড়ের চোখে যেন সুখের ঝিলিক।
— “ওহ! এত বড় মিষ্টি!”
— “এটা যদি আমরা নিয়ে যেতে পারি, তাহলে এক সপ্তাহ আর কষ্ট করে খাবার খুঁজতে হবে না।”
তারা একে অপরের দিকে তাকালো আর হেসে উঠলো। তারপর সবাই মিলে ললিপপের ক্যান্ডি দিকটা ধরে টানতে শুরু করলো। ধীরে ধীরে সেটি নড়তে লাগলো।
কিন্তু পিঁপড়েরা জানতো না, দূর থেকে কেউ তাদের দিকে নজর রাখছে। সেই মাছি ইতিমধ্যেই তার দলের বাকিদের নিয়ে আসার পথে। আরেকটু পরেই পিঁপড়েদের সামনে শুরু হবে এক নতুন ঝগড়ার আসর—যেটা তাদের জীবনকেও পাল্টে দেবে।
ললিপপটা তখন যেন অপেক্ষা করছিল—কাকে সে তার আসল মালিক বানাবে?
অধ্যায় ৩ – পিঁপড়ে বনাম মাছি
ছোটদের রূপকথার বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
পাঁচটি পিঁপড়ে ললিপপের চারপাশে ভিড় করেছে। তাদের ছোট্ট দেহে যতটুকু শক্তি আছে, সবটুকুই ব্যবহার করছে ললিপপটা টেনে নিয়ে যেতে। ধীরে ধীরে তারা ক্যান্ডির দিকটা ধরে টানছে, আর প্রত্যেকেই নিজের মনে ভাবছে—“এবার আমাদের খাবারের ভাণ্ডার ভরে যাবে।”
ললিপপটা এত বড় যে তাদের টেনে নিয়ে যেতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। একবার টান দিতেই সেটি একটু সরে যাচ্ছিল, আবার থেমে যাচ্ছিল। কিন্তু পিঁপড়েদের মনোবল খুব শক্ত। তারা হাল ছাড়ার পাত্র নয়।
ঠিক তখনই দূর থেকে ভনভন শব্দ ভেসে এলো। পিঁপড়েরা চমকে উঠে মাথা তুললো। চোখের সামনে হঠাৎ হাজির হলো সাতটি মাছি! তারা সবাই একসাথে উড়ে এলো আর ললিপপের উপরে চক্কর দিতে লাগলো।
একটা মাছি গলা ছেড়ে বললো—
— “এই ললিপপটা আমাদের! আমরা প্রথম দেখেছি।”
পিঁপড়ে দল একসাথে উত্তর দিলো,
— “না, আগে আমরা পেয়েছি। এটা আমরা নিয়েই যাব।”
এই শুনে মাছিরা হেসে উঠলো। তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে বললো,
— “চলো দেখি কার বেশি জোর!”
মাছিরা ঝাঁপিয়ে পড়লো ললিপপের প্লাস্টিকের হাতলে। তারা ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে সেটাকে আকাশে তুলতে চাইলো। অন্যদিকে পিঁপড়েরা ক্যান্ডির গোল দিকটা শক্ত করে কামড়ে ধরে টানতে লাগলো মাটির দিকে।
শুরু হলো এক অদ্ভুত যুদ্ধ। ললিপপটা মাঝখানে ঝুলতে লাগলো—একবার উপরে উঠছে, আবার নিচে নামছে। মাছিরা চেষ্টা করছে আকাশে উড়িয়ে নিতে, পিঁপড়েরা আবার মাটিতে নামাতে।
পাশের ঝোপঝাড়ে বসে থাকা কয়েকটা ঘাসফড়িং আর প্রজাপতি মজা করে সবকিছু দেখছিল। তারা চুপিচুপি বললো,
— “দেখো দেখো, আবার শুরু হলো ঝগড়া!”
— “আজ তো বেশ মজার জিনিস নিয়ে লড়াই হচ্ছে।”
পিঁপড়েরা প্রাণপণে টানতে লাগলো। তাদের ছোট ছোট শরীর ঘামে ভিজে গেল, তবুও হাল ছাড়লো না। মাছিরা আবার ডানার জোরে টানতে লাগলো। আকাশে ভনভন শব্দে চারদিক কেঁপে উঠছিল।
একসময় ললিপপটা আধা মাটি থেকে উঠে গেল। পাঁচ পিঁপড়ে ক্যান্ডির দিক ঝুলে আছে, আর সাত মাছি প্লাস্টিকের হাতল ধরে উড়ছে। দৃশ্যটা যেন একেবারে দোলনার মতো—একপাশে মাটি, একপাশে আকাশ।
পিঁপড়েরা চিৎকার করে বললো—
— “ছাড়ো! এটা আমাদের!”
মাছিরা উত্তর দিলো—
— “না! এটা আমরা উড়িয়ে নিয়ে যাব।”
ঝগড়াটা আরও জোরে বাড়তে লাগলো। আকাশে ললিপপসহ পিঁপড়ে আর মাছিরা দুলতে দুলতে একেবারে হাস্যকর একটা দৃশ্য তৈরি করলো।
কিন্তু কেউ ছাড়তে রাজি নয়। প্রত্যেকের মনে শুধু একটাই ভাবনা—“ললিপপটা আমাদের হাতেই থাকতে হবে।”
তাদের এই লড়াই দেখে জঙ্গলের বাতাসও যেন থেমে গেল। গাছের পাতাগুলো নড়ে উঠছিল, যেন তারাও মজা করে দেখছে এই অদ্ভুত কাণ্ড।
অবশেষে লড়াই এতটাই তীব্র হলো যে বোঝাই যাচ্ছিল, সামনে কিছু একটা বড় ঘটনা ঘটতে চলেছে। পিঁপড়ে আর মাছিদের এই দ্বন্দ্ব এবার গড়াবে এক নতুন মোড়ে, আর ললিপপ হবে তার কেন্দ্রবিন্দু।
প্রেসিডেন্ট কেনেডি হত্যা রহস্য - সত্য ঘটনা: কেনেডি হত্যাকাণ্ডের অমীমাংসিত সত্য ও চলমান গবেষণা নিয়ে রহস্যঘেরা বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও নতুন তথ্য উন্মোচনের প্রচেষ্টা উঠে এসেছে। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অধ্যায় ৪ – আকাশে যুদ্ধ
ছোটদের রূপকথার বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
ললিপপটা এখন আর মাটিতে নেই। সাতটা মাছির ডানার জোরে সেটি ধীরে ধীরে উপরে উঠতে লাগলো। পিঁপড়েরা কিন্তু ছাড়লো না। তারা ক্যান্ডির গোল দিকটা শক্ত করে কামড়ে ধরে রইলো। ফলে ললিপপসহ পাঁচটা পিঁপড়ে ঝুলে উঠলো আকাশে।
দৃশ্যটা ছিল একেবারে অদ্ভুত। একপাশে ভনভন করতে থাকা মাছির দল, অন্যপাশে মাটির দিকে টানতে থাকা ছোট্ট পিঁপড়ে, আর মাঝখানে বিশাল এক ললিপপ। দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছিল যেন আকাশে একটা দোলনা ঝুলছে।
পিঁপড়েদের শরীর ছোট হলেও তাদের জেদ অনেক। তারা একটুও ছাড়তে রাজি নয়। প্রত্যেকেই নিজের মনে ভাবছিল—
— “যা-ই হোক না কেন, ললিপপ আমরা ছাড়বো না।”
মাছিরা আবার আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। তাদের মনে হচ্ছিল, ডানার জোরে তারা নিশ্চয়ই জিতবে। একজন মাছি গলা ছেড়ে বললো,
— “আরেকটু জোর দাও! ওরা ধরে রাখতে পারবে না।”
তারপর শুরু হলো এক আসল যুদ্ধ। মাছিরা ললিপপকে উপরে তুলতে তুলতে এদিক-ওদিক উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। পিঁপড়েরা আবার ক্যান্ডির দিক শক্ত করে কামড়ে ধরে টানতে টানতে ঝুলে ছিল। তাদের ছোট্ট শরীরগুলো দুলছিল, কিন্তু দাঁতে কোনো শিথিলতা আসছিল না।
আকাশে ঝুলে থেকে পিঁপড়েরা বারবার বলছিল,
— “এটা আমাদের! আমরা প্রথম পেয়েছি।”
আর মাছিরা জবাব দিচ্ছিল,
— “না, এটা আমরা উড়িয়ে নিয়ে যাব।”
তাদের এই ঝগড়া শুনে চারপাশে থাকা পাখিরা কিচিরমিচির করে হাসতে লাগলো। এক চিল শালিক নিচে বসে বললো,
— “আরে! এত ছোট্ট প্রাণীরা এমন লড়াই করছে যে যেন যুদ্ধক্ষেত্র!”
এদিকে ললিপপটা ভারী বলে মাছিদের ডানায় প্রচণ্ড চাপ পড়ছিল। তবুও তারা হাল ছাড়লো না। সবাই একসাথে গুনগুন শব্দ করে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল।
হঠাৎই একটা ঘটনা ঘটলো। ললিপপের ক্যান্ডি দিকটা এত ভারী হয়ে গেল যে মাছিদের নিয়ন্ত্রণ ভেঙে গেল। তারা উপরে তুলতে পারছিল না। আর পিঁপড়েরা তখনও শক্ত করে কামড়ে আছে। ফলে টানাটানির মধ্যে হঠাৎ ক্যান্ডির দিকটা ফসকে গিয়ে সোজা নিচে পড়ে গেল।
পাঁচটা পিঁপড়ে ক্যান্ডির সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে ধপ করে পড়লো। মাছিরা শুধু ললিপপের প্লাস্টিকের হাতলটা হাতে ধরে আকাশে ভেসে রইলো।
ক্যান্ডি মাটিতে পড়তেই প্রচণ্ড শব্দ হলো—“ঠাস্!”
মাটিতে আঘাত লেগে ক্যান্ডি টুকরো টুকরো হয়ে গেল। বারোটা ছোট ছোট টুকরোয় ছড়িয়ে পড়লো রাস্তার ধারে।
পিঁপড়েরা প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেলেও, পরে দেখলো—আরে! ক্যান্ডি তো ভাগ হয়ে গেছে। তারা দৌড়ে গিয়ে প্রত্যেকে একেকটা টুকরো ধরে ফেললো। যেন লড়াইয়ের ঝামেলা ছাড়াই তাদের খাবার ভাগ হয়ে গেল।
মাছিরা উপরে ভাসতে ভাসতে সব দেখছিল। তারা দ্রুত নেমে এসে বাকি টুকরোগুলো নিয়ে নিলো। সাতটা মাছি প্রত্যেকে একটা করে টুকরো জড়ো করলো।
মুহূর্তের মধ্যে যুদ্ধ থেমে গেল।
পাঁচটা পিঁপড়ে খুশি মনে পাঁচ টুকরো নিয়ে বাসার দিকে ছুটলো।
সাতটা মাছি ভনভন করতে করতে সাত টুকরো নিয়ে উড়ে গেল অন্যদিকে।
কেবল ললিপপের প্লাস্টিকের হাতলটা রয়ে গেল ফাঁকা পড়ে। মাছিরা সেটা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল, কারণ তাদের কাছে ক্যান্ডির টুকরোই বেশি প্রিয় ছিল।
আকাশের সেই বড় যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলো খুব অদ্ভুতভাবে—যেন খাবার নিজেরাই সবার মধ্যে ভাগ হয়ে গেল।
কিন্তু তখনও একটি প্রাণী ছিল, যে সবকিছু নিঃশব্দে দেখছিল। সে হলো সেই জ্ঞানী মাকড়শা। ধীরে ধীরে গাছ থেকে নেমে এলো, আর তার চোখ পড়লো ফাঁকা পড়ে থাকা ললিপপের হাতলের দিকে।
মিলুর নতুন বাসা - ছোটদের রূপকথার গল্প: উষ্ণতা ও মমতায় ভরা এই ছোটদের গল্প এক নিখুঁত রূপকথার গল্প, যেখানে ইঁদুর মিলু খুঁজে পায় নিজের শান্তির ঘর। পড়ুন এক মধুর রাত্রির অভিযানের গল্প। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অধ্যায় ৫ – সবার ভাগ, সবার খুশি
ছোটদের রূপকথার বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
ললিপপের ক্যান্ডি মাটিতে আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে বারোটা টুকরোয় ভেঙে গিয়েছিল, তাতে যেন মুহূর্তের মধ্যেই সব ঝগড়া মিটে গেল। পাঁচটা পিঁপড়ে আর সাতটা মাছি আলাদা আলাদা টুকরো নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে গেল।
পিঁপড়েরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে খুশি হয়ে হাসতে লাগলো। তাদের একজন বললো,
— “দেখো তো! এত বড় ক্যান্ডি নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা কত কষ্ট করছিলাম। শেষে ভাগ হয়ে গেল, আর আমাদের প্রত্যেকের হাতে আলাদা টুকরো চলে এলো।”
অন্য পিঁপড়েটা জবাব দিলো,
— “হ্যাঁ, এবার আর ঝগড়ার দরকার নেই। এই টুকরো নিয়েই আমাদের বাসা ভর্তি হবে।”
ওদিকে মাছিরাও খুব খুশি। তারা টুকরোগুলো ডানায় তুলে নিয়ে আকাশে উড়তে লাগলো। একজন মাছি বললো,
— “আমরা তো ভাবছিলাম কিছুই পাব না। কিন্তু ভাগ্য দেখো, আমাদের প্রত্যেকের জন্য আলাদা টুকরো পড়ে গেল।”
আরেকজন বললো,
— “হ্যাঁ, আজকের দিনটা সত্যিই মজার হয়ে গেল। পেটে ভরে মিষ্টি খাওয়া যাবে।”
এভাবে সবাই নিজের নিজের পথে খুশি মনে চলে গেল। ঝগড়ার আর কোনো চিহ্নই রইলো না। যেন খাবারের টুকরোগুলোই তাদের শেখালো—ভাগাভাগি করলে কারও ক্ষতি হয় না, বরং সবাই খুশি থাকে।
কেবল ললিপপের প্লাস্টিকের হাতলটা রাস্তার পাশে ফাঁকা পড়ে রইলো। মাছিরা সেটা আর নিলো না, কারণ তাদের কাছে ক্যান্ডির মিষ্টি টুকরোগুলোই ছিল আসল আনন্দের জিনিস। পিঁপড়েরাও সেটা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা করলো না।
ঠিক তখনই হাজির হলো সেই জ্ঞানী মাকড়শা। গাছ থেকে নেমে এসে সে একদৃষ্টে হাতলটার দিকে তাকালো। তার চোখে যেন একটা দুষ্টু ঝিলিক ফুটে উঠলো।
সে ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে প্লাস্টিকের হাতলটা নিজের পাতলা পায়ে ধরে নিলো। তারপর টেনে নিয়ে গেলো তার জালের দিকে।
মাকড়শা ভাবলো—
— “আহা, কী সুন্দর একটা লম্বা হাতল! আমি যদি এটাকে আমার জালে বেঁধে দিই, তাহলে দোলনার মতো ঝুলতে পারবো।”
ঠিক যেমনটা সে ভেবেছিল, তেমনটাই করলো। নিজের জালের মাঝখানে শক্ত করে হাতলটা আটকে দিলো। তারপর সেটাকে বানিয়ে ফেললো ছোট্ট দোলনা।
মাকড়শা আনন্দে দুলতে দুলতে হাসতে লাগলো। তার চোখে-মুখে শান্তির ছাপ ফুটে উঠলো। সে মনে মনে বললো,
— “দেখো, ওরা সবাই ক্যান্ডির টুকরো নিয়ে খুশি হলো। আর আমার জন্য রয়ে গেল এই দোলনা। এখন আমি যত খুশি দোল খেতে পারবো।”
বাতাসে হাতলটা নড়তে লাগলো, আর মাকড়শা দুলতে দুলতে যেন একেবারে খেলার স্বর্গে চলে গেল।
সেই দিন থেকে পিঁপড়ে আর মাছিরা যখনই কোনো খাবারের জন্য ঝগড়া করতো, তখন তাদের মনে হতো—“ললিপপের কথা মনে আছে তো? ভাগাভাগি করলে সবাই খুশি হয়।”
আর মাকড়শা? সে তখনো তার দোলনায় দুলে দুলে হাসতো, আর গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো তার জালে ঝিকমিক করতো।