রহস্য রোমাঞ্চে ভরা বাংলা গল্প "মেঘদূত"রাজা রবি বর্মার বিখ্যাত চিত্রকর্ম "মেঘদূত" রহস্যজনকভাবে চুরি! ইন্সপেক্টর সত্যজিৎ সেনের কাছে এই রহস্যের সমাধানের ভার। চুরির সাথে জড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত রং, গোপন বার্তা, এবং এক অজানা ব্যক্তি। কৌতূহল, রোমাঞ্চ, এবং অপ্রত্যাশিত মোড়ে ভরা এই গল্পেআপনাকে টেনে নিয়ে যাবে রহস্যের জগতে। শিল্প, রহস্য, এবং রোমাঞ্চের অপূর্ব মেলবন্ধন "মেঘদূত"।

মেঘদূত

রহস্য রোমাঞ্চে ভরা বাংলা গল্প "মেঘদূত"রাজা রবি বর্মার বিখ্যাত চিত্রকর্ম "মেঘদূত" রহস্যজনকভাবে চুরি! ইন্সপেক্টর সত্যজিৎ সেনের কাছে এই রহস্যের সমাধানের ভার। চুরির সাথে জড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত রং, গোপন বার্তা, এবং এক অজানা ব্যক্তি। কৌতূহল, রোমাঞ্চ, এবং অপ্রত্যাশিত মোড়ে ভরা এই গল্পেআপনাকে টেনে নিয়ে যাবে রহস্যের জগতে। শিল্প, রহস্য, এবং রোমাঞ্চের অপূর্ব মেলবন্ধন "মেঘদূত"।

কলকাতার আর্ট গ্যালেরি জগতের কাছে ‘রবিবার’ ছিল মহোৎসবের মতো। প্রতি রবিবারই এখানে জমায়িত হতেন শিল্পপ্রেমীরা, শিল্পীরা, আর কৌতূহলী মানুষ্যরা। কিন্তু আজকের রবিবার ছিলো অন্যরকম। এক অশ্বস্তিকর চাপ চেপে ধরেছিল গোটা গ্যালেরিকে। কারণ, দেওয়ানজি গ্যালেরির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ – রাজা রবি বর্মার বিখ্যাত ‘মেঘদূত’ চিত্রকর্মটি নিখোঁজ।

প্রথমে তো কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখা গেল সব ঠিকঠাক। শনিবার রাতে গ্যালেরি লক করা হয়েছিল, সবকিছু স্বাভাবিক। কিন্তু রবিবার সকালে দরজা খুলতেই চোখে পড়লো দেয়ালের ফাঁকা জায়গা। ‘মেঘদূত’ – যে চিত্রকর্মটি প্রেম, বিয়োগ আর মনের উদ্বেগের এত সুন্দর চিত্র তুলে ধরেছিল, সেটিই আর নেই।

পুলিশ তৎপর হলো। ইন্সপেক্টর সত্যজিৎ সেন, যিনি কলকাতার শিল্প জগতের রহস্যে খ্যাত, তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। সত্যজিৎ নিরীক্ষণ করলেন ফাঁকা দেয়ালটিকে। চোখে পড়লো দেয়ালের নিচে একটা ছোট্ট খাম। খুলে দেখা গেল, ভিতরে একটা হলুদ কাগজে বাংলায় কয়েক লাইন লেখা:

“মেঘের গহনে মিশেছে রূপ, অদৃশ্য পথে চলেছে চুরি, সময় কম, সত্যজিৎ, খুঁজে নাও যদি, কলকাতার শিল্পজগতের মুখ চুপসে যাবে চিরকালের মতো।”

কবিতার মতো লেখাটি পড়ে সত্যজিতের কপালে চিন্তার দাগ। এটা কি কোনও চোরের খেলা, নাকি শিল্প জগতের কারও ষড়যন্ত্র? রহস্য আরও জটিল হলো যখন জানা গেল, চুরি যাওয়ার আগের রাতে বিখ্যাত শিল্প সমালোচক, অরিন্দম মিত্র, দেওয়ানজি গ্যালেরিতে দেখা দিয়েছিলেন।

সত্যজিৎ অরিন্দমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। অরিন্দম অবাক হয়ে বললেন, “এটা অসম্ভব! ‘মেঘদূত’ কতটা মূল্যবান, তা আমি জানি। কিন্তু আমি চোর নই!” অরিন্দম আরো জানালেন, গত কয়েকদিন ধরে তিনি ‘মেঘদূত’ চিত্রকর্ম নিয়ে একটি গবেষণা করছিলেন।

এর মধ্যে জানা গেল, দেওয়ানজি পরিবারের এক আত্মীয়, রোহিত, অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছেন। রোহিতের কি এই চুরির সঙ্গে কোনও যোগ আছে? সত্যজিৎ রোহিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। কিন্তু রোহিত জানালেন, তার চুরির সঙ্গে কোনও সম

সত্যজিত সন্তুষ্ট হলেন না রোহিতের জবাব নিয়ে। কিছু একটা গন্ধ আসছিল। তিনি দেওয়ানজি পরিবারের প্রধান, শ্রীকান্ত দেওয়ানজির সঙ্গে কথা বললেন। শ্রীকান্ত জানালেন, রোহিতের আর্থিক সমস্যা ঠিকই আছে, কিন্তু ‘মেঘদূত’ চুরির মতো কাজ সে করতে পারে না। তিনি আরও জানালেন, গত কয়েকদিন ধরে গ্যালেরিতে কিছু সন্দেহজনক লোক আনাগোনা করছিল।

এই নতুন তথ্যে সত্যজিতের কান খাড়া হলো। তিনি গ্যালেরির কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। একজন কর্মী জানালেন, চুরির আগের কয়েকদিন ধরে একজন মধ্যবয়সী মহিলা বেশ কয়েকবার গ্যালেরিতে এসেছিলেন। ‘মেঘদূত’ চিত্রকর্মটি খুব মনোযোগ সহকারে দেখতেন তিনি। মহিলার সাথে থাকতেন এক তরুণ ছেলে, মনে হয় ছেলেটি তার ছেলে।

এই তথ্য পুলিশের তদন্তে নতুন মোড় ঘুরিয়ে দিল। সত্যজিৎ মহিলার খোঁজে তলিয়ে গেলেন। কিন্তু শুধু মহিলার বিবরণ আর নেই। ছবি বা কোনো সনাক্তকারী চিহ্নও পাওয়া গেল না সিসিটিভি ফুটেজে।

এদিকে, অরিন্দমের গবেষণা নিয়েও সন্দেহ জাগল সত্যজিতের মনে। তিনি অরিন্দমের বাড়িতে তল্লাশি চালালেন। অরিন্দমের বাড়িতে ‘মেঘদূত’ চিত্রকর্মের অনেকগুলো স্কেচ পাওয়া গেল। কিন্তু চুরি হওয়া আসল চিত্রকর্মটির কোনো সন্ধান পাওয়া গেল না।

অরিন্দম জানালেন, ওই স্কেচগুলো তিনি গবেষণার জন্যে এঁকেছিলেন। কিন্তু সত্যজিত সন্তুষ্ট হলেন না। তিনি মনে মনে জানতেন, এখানে আরও কিছু গোপন কথা লুকিয়ে আছে।

কয়েকদিন পর, এক অপ্রত্যাশিত খবর এলো। শহরের বাইরে এক জঙ্গলে ‘মেঘদূত’ চিত্রকর্মটি খুঁজে পাওয়া গেছে। কিন্তু, চিত্রকর্মটির অবস্থা খারাপ। কেউ যেনো রং মেশানো রাসায়নিক দিয়ে কিছু অংশ মুছে ফেলেছে।

পুনরুদ্ধার হওয়া চিত্রকর্মটি দেওয়ানজি গ্যালেরিতে ফিরিয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু চিত্রকর্মের মূল্য অনেকটা কমে গেছে।

রহস্যের আরও একটা স্তর উন্মোচিত হলো মুছে ফেলা অংশের পরীক্ষা করার পর। রাসায়নিক পরীক্ষায় জানা গেল, মুছে ফেলা অংশে রাজা রবি বর্মা নাকি একটা গোপন বার্তা লিখে রেখেছিলেন।

কিন্তু সেই বার্তাটা আর পড়া যাচ্ছে না। এই নতুন তথ্যে আরও জটিল হয়ে উঠলো রহস্য। রহস্যের সমাধানের চাবি কি সেই মুছে ফেলা বার্তাতেই লুকিয়ে আছে?

সত্যজিৎ নিজের চেম্বারে বসে চিন্তাভরা মুখে ছিলেন। ‘মেঘদূত’ ফিরে এলেও রহস্যের সমাধান তো মেলেনি। বরং জটিলতা আরও বেড়েছে। মুছে ফেলা অংশের গোপন বার্তা – এটাই যেন রহস্যের মূল কড়া। কিন্তু সেই বার্তা আর পড়া যাচ্ছে না।

এই সময়, সত্যজিতের টেবিলে ফোনটা রিং হয়ে উঠলো। ফোনের অপর প্রান্তে ছিলেন ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তার সোমনা। সোমনা উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন, “সত্যজিৎbabu, একটা আশ্চর্যজনক খবর আছে!”

সত্যজিৎ আগ্রহী হয়ে বললেন, “কী বলছেন সোমনা? কিছু খবর পেয়েছেন?”

“হ্যাঁ,” সোমনা জানালেন, “মুছে ফেলা অংশের পরীক্ষা করতে গিয়ে আমরা একটা অদ্ভুত জিনিস খুঁজে পেয়েছি। রাসায়নিকের নিচে, আল্ট্রাভায়োলেট রশ্নি ফেলালে একটা লেখা দেখা যাচ্ছে।”

সত্যজিৎ চমকে উঠলেন। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্নি! এ তো তিনি ভাবেননি। “লেখাটা কী লিখেছে, বুঝতে পারছেন?”

“ঠিক করে বুঝতে পারছি না,” সোমনা বললেন, “কিন্তু কিছু সংখ্যা আর জ্যামিতিক আকৃতি আছে। মনে হচ্ছে কোনও ধরণের কোড।”

এই খবরে সত্যজিৎ আশা জাগল। কোড – এটাও হতে পারে রহস্যের সমাধানের চাবি। তিনি সোমনাকে তुरন্ত করে ফরেনসিক ল্যাবে আসতে বললেন।

ল্যাবে গিয়ে সত্যজিৎ আল্ট্রাভায়োলেট রশ্নি ফেলে দেখলেন মুছে ফেলা অংশটিকে। লেখাটি স্পষ্ট নয়, কিন্তু কিছু সংখ্যা আর জ্যামিতিক আকৃতি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সত্যজিৎ সেই কোডটা কাগজে কপি করে নিলেন।

এবার নতুন সমস্যা – এই কোডটা কীভাবে খুলবেন? সত্যজিৎ জানতেন, এই শহরে এ ধরণের কোড খুলতে পারে এমন মাত্র কয়েকজন মানুষ্য আছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন অবসর গোয়েন্দা সুমিত্র সেন।

সত্যজিৎ সুমিত্র সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। সুমিত্র কোডটা দেখে চিন্তায় পড়ে গেলেন। “এটা কোনও সাধারণ কোড নয়,” সুমিত্র বললেন, “এটা এক ধরণের শিল্পীদের গোপন ভাষা, যা তারা নিজেদের মধ্যে গোপন বার্তা আদান-প্রদানের জন্যে ব্যবহার করতেন।”

সুমিত্র আরও জানালেন, এই ভাষা খুব কম লোকেই জানে। তিনি কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। কয়েকদিনের চেষ্টার পর, অবশেষে কোডটা খুলতে সফল হলেন তারা।

কোডটা খুললে বেরিয়ে এলো একটা ঠিকানা – কলকাতার বাইরে, এক প্রত্যন্ত গ্রামের ন

ঠিকানা পেয়ে সত্যজিৎ নিজের দল নিয়ে ছেয়ে গিয়েছিলেন সেই প্রত্যন্ত গ্রামে। গ্রামটি ছিল পুরনো মন্দির আর সবুজের মাঝে ঘেরা, শহরের কোলাহল থেকে একেবারে দূরে। সত্যজিৎ গ্রামের মোড়ে দাঁড়িয়ে একটা চা দোকানে ঢুকে খোঁজ নিতে শুরু করলেন।

“কাকাবাবুর বাড়ি কোথায়?” জিজ্ঞাসা করলেন সত্যজিৎ, চা খেতে খেতে।

চা দোকানদার কৌতূহলী হয়ে তাকালেন, “কাকাবাবু? কী দরকার আপনার?”

“একটা খবর পেয়েছি,” সত্যজিৎ সাবধানে উত্তর দিলেন, “কাকাবাবুর কাছে নাকি পুরনো জিনিসের একটা বড়ো কালেকশান আছে।”

চা দোকানদার চিন্তায় পড়ে গেল। “হ্যাঁ, আছে ঠিকই,” সে বললো, “কিন্তু আপনি কাকাবাবুকে কী জিনিস দেখাতে চাইছেন?”

“একটা বিশেষ ধরণের রঙ,” সত্যজিৎ ব্যাখ্যা করলেন, “যা রাজা রবি বর্মার চিত্রকর্ম নষ্ট করতে ব্যবহার করা হয়েছে।”

এই কথায় চা দোকানদার চমকে উঠল। সে ঘাড় নাড়ল। “আমার এসবের কিছুই জানা নেই।”

কিন্তু সত্যজিৎ জানতেন, কিছু গোপন করছে সে। একটু জোর দিয়েই সে জিজ্ঞাসা করল, “কাকাবাবুর বাড়ি কোথায়? নিজেই গিয়ে জিজ্ঞাসা করবো।”

চা দোকানদার আর না থাকতে পারলো। সে একটা সরু গলির দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, “ঐ গলি ধরে যেতে থাকুন। একটা পুরনো বাড়ি পাবেন, সেটাই কাকাবাবুর বাড়ি।”

সত্যজিৎ দল নিয়ে গলি ধরে হাঁটা শুরু করলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা পুরনো, জীर्ण-শীর্ণ বাড়ি দেখতে পেলেন। বাড়ির দেওয়ালে ঝোলানো ছিল। সত্যজিৎ দরজায় কড়া নাড়লেন। একটু দেরিতে দরজা খুললেন একজন বৃদ্ধ মানুষ্য।

“কে?” জিজ্ঞাসা করলেন বৃদ্ধটি।

“আমি ইন্সপেক্টর সত্যজিৎ সেন,” সত্যজিৎ নিজের পরিচয় দিলেন, “কিছু জরুরি কথা আছে।”

বৃদ্ধটি একটু সন্দিহ নিয়ে দরজা খুলে দিলেন। সত্যজিৎ নিজের দল সহঘরের ভেতরে ঢুকলেন।

“আপনি কী জানতে চান?” বৃদ্ধটি জিজ্ঞাসা করলেন।

সত্যজিৎ রংয়ের কথা বলা শুরু করলেন। কথা শুনে বৃদ্ধটির চোখ দু’টি বড় হয়ে গেল. “আপনি কীভাবে জানলেন?” কম্পমান গলায় জিজ্ঞাসা করলেন তিনি।

সত্যজিৎ জানালেন, তিনি পুলিশ অফিসার এবং রাজা রবি বর্মার চুরি ও ক্ষতির তদন্ত করছেন। বৃদ্ধটি একটু চুপ থাকার পর, বৃদ্ধটি গভীর শ্বাস নিয়ে বললেন, “ঠিক আছে, সত্যিটা শুনুন।”

বৃদ্ধটির নাম কাকাবাবু। তিনি একজন অবসর শিল্প-সংরক্ষক। কয়েক বছর আগে, একজন অপরিচিত ব্যক্তি তাঁর কাছে আসেন। সেই ব্যক্তির কাছে ছিল রাজা রবি বর্মার একটি খাতা। খাতায় ছিল অমূল্য কিছু স্কেচ ও লিখন। কাকাবাবু জানতেন, খাতাটি খাঁটি, কিন্তু ব্যক্তিটির সন্দেহজনক আচরণ তাঁকে সতর্ক করে দিয়েছিল।

ব্যক্তিটি কাকাবাবুকে প্রস্তাব দেন, খাতাটি কেনার বিনিময়ে তিনি কাকাবাবুকে একটি বিশেষ রং দেবেন। সেই রং দিয়ে কোনো চিত্রকর্মের অংশ মুছে ফেলা গেলে, সেই অংশ চিরতরে হারিয়ে যাবে, কোনো রাসায়নিক পরীক্ষাতেও ধরা পড়বে না। কাকাবাবু শিল্পের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রাখতেন। তিনি জানতেন, এই রং কতটা বিপজ্জনক। তাই ব্যক্তিটির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। কিন্তু ব্যক্তিটি জোর জুলুম করতে শুরু করে। বাধ্য হয়ে কাকাবাবু খাতাটি কিনে নেন, কিন্তু রং নিতে রাজি হননি।

কিন্তু কয়েকদিন পর, রাতের অন্ধকারে কেউ কাকাবাবুর বাড়িতে ঢুকে সেই বিশেষ রং চুরি করে। কাকাবাবু সন্দেহ করেন, সেই অপরিচিত ব্যক্তিই চুরির পেছনে থাকতে পারে। কিন্তু কোনো প্রমাণ না থাকায়, পুলিশে অভিযোগ করতে পারেননি।

কাকাবাবুর কথা শুনে সত্যজিৎ অবাক হয়ে গেলেন। তিনি কাকাবাবুকে খাতাটি দেখতে চাইলেন। কাকাবাবু তাঁর গোপন কক্ষ থেকে খাতাটি বের করলেন। খাতাটি দেখে সত্যজিৎ চমকে উঠলেন। খাতায় ছিল রাজা রবি বর্মার হাতের লেখা, আর তার মধ্যে একটা পৃথক পাতায় ছিল ঠিক সেই লেখা, যা ‘মেঘদূত’ চিত্রকর্ম থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল!

এই খাতাটিই ছিল রহস্যের শেষ টুকু। খাতার লেখা থেকে জানা গেল, রাজা রবি বর্মা ‘মেঘদূত’ চিত্রকর্মে একটি গোপন বার্তা লুকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু পরে মনে হয়েছিল, সেই বার্তা হয়তো বিপত্তির কারণ হতে পারে। তাই তিনি চিত্রকর্মের একটি অংশে আরেকটা বার্তা লিখেছিলেন, যাতে আগের বার্তাটি মুছে ফেলা যায়। সেই দ্বিতীয় বার্তাই ছিল, খাতায় লেখা লেখাটি।

দ্বিতীয় বার্তায় রাজা রবি বর্মা লিখেছিলেন, তাঁর কিছু শিল্পকর্ম চুরি হয়ে গেছে। চোরেরা কে, কোথায় আছে, সেই সব তথ্যই ছিল সেই বার্তায়। এই তথ্যের সাহায্যে পুলিশ চুরি হয়ে যাওয়া শিল্পকর্মগুলো উদ্ধার করতে সক্ষম হলো।

কাকাবাবুর খাতার সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে, পুলিশ তৎপর হয়ে উঠলো। চুরি হওয়া শিল্পকর্মের তালিকা ও অপরিচিত ব্যক্তির বিবরণ নিয়ে জাল বিছানো হলো। কিছুদিন পর, শহরের এক সন্দেহজনক নিলামের খবর পেল পুলিশ। নিলামে রাজা রবি বর্মার একটি অজানা চিত্রকর্ম বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেল।

সত্যজিৎ নিজেই সেজগতোষ সেই নিলামে গেলেন। নিলামে ছিল কলকাতার সমাজের প্রথম সারির অনেক শিল্পপ্রেমী ও ব্যবসায়ী। নিলাম শুরু হলো। রাজা রবি বর্মার চিত্রকর্মটির দাম আকাশছোয়া।

শেষ পর্যন্ত, সেই চিত্রকর্মটি কিনে নিলেন একজন ধনকুবের ব্যবসায়ী, যিনি আগে থেকেই পুলিশের নজরে ছিলেন। নিলাম শেষে, সত্যজিৎ ও তাঁর দল ব্যবসায়ীকে আটক করলেন। ব্যবসায়ী জিজ্ঞাসাবাদে ভেঙে পড়লেন। সে স্বীকার করল, কয়েক বছর আগে সেই অপরিচিত ব্যক্তিই তাঁকে রাজা রবি বর্মার কিছু চুরি হওয়া শিল্পকর্ম দেখিয়েছিলেন।

লোভে পড়ে ব্যবসায়ী সেই চিত্রকর্ম কিনে নেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি জানতে পারেন, পুলিশ এই চুরিগুলোর তদন্ত করছে। তাই তিনি নিলামের মাধ্যমে চিত্রকর্মটি হাতছাড়া করতে চেয়েছিলেন।

ব্যবসায়ীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে সেই অপরিচিত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। অপরিচিত ব্যক্তিটি ছিলেন এক বিদেশী চোর, যে ভারতের অমূল্য শিল্পকর্ম চোরাই চালানির জন্যে একটি চক্র চালাচ্ছিল।

এইভাবেই ‘মেঘদূত’ চুরির রহস্যের সমাধান হলো। চুরি হওয়া শিল্পকর্মগুলো ফিরে পেল দেশ। কিন্তু, রহস্যের সমাধানের পথে ‘মেঘদূত’ চিত্রকর্মটির মূল্য অনেকটা কমে গেল।

যদিও, শিল্পের প্রতি ভালোবাসা রেখেছিল অমলিন। ‘মেঘদূত’ – যে চিত্রকর্মটি প্রেম, বিরহ আর মনের উদ্বেগের এত সুন্দর চিত্র তুলে ধরেছিল, সেটি আবার দেওয়ানজি গ্যালেরির দেয়ালে স্থান পেয়ে গেল। কিন্তু, এখন চিত্রকর্মটির ক্ষতির চিহ্নগুলো, যেন একটা গল্প বলে, শিল্পের রহস্যময় জগতের আর এক অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে।

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

About The Author

নতুন বাংলা ছোট গল্প

ভালোবাসার গলি

"ভালোবাসার গলি" একটি হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে কলকাতার রঙিন সড়কে প্রেমের এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হয়, যা শহরের ঐতিহ্য এবং সম্পর্কের মধুরতা তুলে ধরে।

"ভালোবাসার গলি" একটি হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে কলকাতার রঙিন সড়কে প্রেমের এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হয়, যা শহরের ঐতিহ্য এবং সম্পর্কের মধুরতা তুলে ধরে।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: ভালোবাসার গলি

বন্ধুত্বের জাদু

"বন্ধুত্বের জাদু" একটি মনোমুগ্ধকর ছোটদের গল্প। এই রূপকথার গল্পে স্নেহা ও তার বন্ধুরা জাদুকরি উপত্যকাকে বাঁচাতে সাহস, ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের মাধ্যমে এক অনন্য অভিযানে পা বাড়ায়।

"বন্ধুত্বের জাদু" একটি মনোমুগ্ধকর ছোটদের গল্প। এই রূপকথার গল্পে স্নেহা ও তার বন্ধুরা জাদুকরি উপত্যকাকে বাঁচাতে সাহস, ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের মাধ্যমে এক অনন্য অভিযানে পা বাড়ায়।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: বন্ধুত্বের জাদু

হাভেলির রহস্য

"‘হাভেলির রহস্য’ একটি ভুতের গল্প, যেখানে অর্ণব ও রিয়া একটি পুরনো হাভেলিতে ভয়াবহ রহস্য উদঘাটন করে। এক চাঞ্চল্যকর বাংলা ছোট গল্প যা আপনার মনে গভীর প্রভাব ফেলবে।"

"‘হাভেলির রহস্য’ একটি ভুতের গল্প, যেখানে অর্ণব ও রিয়া একটি পুরনো হাভেলিতে ভয়াবহ রহস্য উদঘাটন করে। এক চাঞ্চল্যকর বাংলা ছোট গল্প যা আপনার মনে গভীর প্রভাব ফেলবে।"

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: হাভেলির রহস্য

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!