রচনা - পল্লব ঘোষ ।। গল্পের সূত্রধার - বুবাই সাহা ।। গল্পপাঠ - শুভ ধর ।। বিভিন্ন চরিত্রে - বুবাই সাহা, শিউলি, বাল্মীকি, নীল, ঋদ্ধি ও মৌমিতা ।। সাউন্ড ডিজাইন - মিহান'স প্রোডাকশন হাউস ।। সাউন্ড স্পেশাল ইফেক্ট - শুভ্রকমল মুখার্জী ।। পরিচালনায় - মিহান'স প্রোডাকশন হাউস
অধ্যায় ১: অতীতের অশরীরি ছায়া
হাড়হিম ভুতের বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
মাঘ মাসের শুক্লা-ত্রয়োদশীর রাত। পেলব জ্যোতস্না গায়ে মেখে হু হু করে বয়ে চলেছে হিমেল বাতাস। প্রফুল্ল মহাজনের তিনতলা পাকা বাড়ির পাশের নারকেল গাছের পাতায় বাতাস ধাক্কা খেয়ে একটা ছন্দময় ঝিরঝিরি শব্দ হচ্ছে। ঘুমিয়ে গোটা বাড়ি, গোটা গ্রাম। কেবল জেগে আছে কিছু নিশাচর প্রাণী, যারা রাতের আঁধারের সুযোগে বাইরে বের হবে নিজেদের ক্ষুধা মেটাতে। হিমেল হাওয়া ও ফুটফুটে জ্যোতস্না গায়ে মেখে প্রফুল্ল মহাজনের বাড়ি থেকে বের হল একটা ছায়ামূর্তি। আপাদমস্তক কালো চাদরে ঢাকা। এদিক ওদিক ভালো করে তাকিয়ে এগিয়ে গেল বড়ো রাস্তার দিকে।
হাঁটাচলা দেখে একজন মহিলা বলেই বোধ হয়। মহিলাটি এগিয়ে গেলেও বারবার ঘুরে ঘুরে পেছনের ডাইনে বাঁয়ে তাকাচ্ছে। যেন কোনো গোপন অভিসন্ধি সিদ্ধিই এই শীতার্ত রাতে আজ তার লক্ষ্য। কিছুটা এগিয়ে একটা একচালা ঘরের দরজার সামনে দাঁড়াল মহিলাটি। টক টক করে দুবার দরজায় টোকা দিল। সাথে সাথে ঘরের ভেতর একটা হ্যারিকেন জলে উঠল। দরজা খুলে চাদর গায়ে যে দাঁড়াল সে একটি পুরুষ। তারপর দুজনের মধ্যে কিছুক্ষণ কথা হল।
পুরুষটি একবার ঘরের ভেতরের দিকে তাকিয়ে আলো নিভিয়ে আস্তে আস্তে দরজা বন্ধ করে মহিলাটির সাথে নেমে এল রাস্তায়। দ্রুতপদে গ্রাম ছাড়িয়ে মাঠের দিকে চলতে লাগল, বোধহয় গোপন অভিসারে। নিশাচর প্রাণীদের মতোই আজ তারা ক্ষুধার্ত, কামনা বাসনা মিলনের ক্ষুধা। মাঠের মোটা আল ধরে হাটতে হাটতে মহিলাটি বিরক্ত হয়ে বলল,
চারুবালা : ( বিরক্ত হয়ে ) “তোর ঘরে তো তোর মা আছে, তা সত্ত্বেও কি করে নেশা করিস বলতো? বুড়ি কিছু দেখতে পায় না নাকি?”
লোকটি নেশাতুর গলায় বলল, “ও তো মা ঘুমিয়ে পড়লে করি। তবে তবে তুই আজ আসবে জেনে বেশি নেশা করিনি, বিশ্বাস কর, মা কালীর দিব্যি বলছি !”
চারুবালা : ( মুখ ঝামটা দিয়ে ) “হয়েছে হয়েছে। এখন চল !”
দীননাথ ( জিজ্ঞাসু স্বরে ) “কিন্তু আমরা যাচ্ছি কোথায়?”
মহিলাটি এবার লোকটির হাত ধরে মৃদু হেসে বলল, “আমাকে চাস যদি, আয় না !”
মহিলাটির স্পর্শে লোকটির ঠান্ডা হয়ে আসা হাত যেন উষ্ণ হয়ে উঠলো। ভেতরে ভেতরে তার এতদিন ধরে বেড়ে ওঠা অতৃপ্ত বাসনাটা এবার যেন ধীরে ধীরে তৃপ্তির ছোঁয়া পেতে শুরু করেছে। গ্রাম ছাড়িয়ে অনেকটা দূরে একটা বাঁশবন পেরিয়ে পরিত্যক্ত জমির ওপর এসে পড়ল ওরা। ঠান্ডা হাওয়াটার জোর এখানে একটু বেশিই । কিন্তু সেই বাতাস আর শীতল করতে পারছে না দুজনের শরীর। ধীরে ধীরে মিলনের আগুন জ্বলে উঠেছে দেহের মধ্যে।
চারধারের পরিবেশ দেখে লোকটা চোখ কুঁচকে বলল, “এই এটা কোথায় এলি রে? জায়গাটা কিরকম চেনা চেনা……” তার মুখের কথা শেষ হল না। কারণ ততক্ষণে তার ঠোঁটের ওপর আঙুল রেখে তাকে থামিয়ে দিয়েছে তার সঙ্গিনী । কামাতুর গলায় মেয়েটি বলল,
চারুবালা : ( কামাতুর গলায় ) “যেখানেই হোক। আজ সুযোগ পেয়েছিস, ব্যবহার কর। আবার পাবি কি না কে জানে।”
এই বলে মৃদু হেসে সে লোকটার গায়ের চাদর সরিয়ে তার বুকের ওপর হাত রাখল। লোকটি হেসে বলল, “হুম তা তো বটেই। তোর মতো সুন্দরী যে আমাকে ভালোবেসে এভাবে কাছে ডাকবে তা ভাবিই নি কোনো দিন!”
চারুবালা : ( নিজের ঠোঁট কামড়ে ) “আমি বুঝি এতটা সুন্দরী ! আমিও কাজের লোক, তুইও কাজের লোক। সমানে সমানে প্রেম হয়েছে।”
অনতিদূরে বাঁশবনের থেকে শীতার্ত শেয়ালের ডাক শোনা গেল। মেয়েটি বলল,
“কি রে, ভয় পাচ্ছিস না কি? মরদের মনে ভয় ঢুকলো?” ( ফিক ফিক করে হাসবে )
লোকটার ঠোঁটের কোণে একটা বাঁকা হাসি খেলে গেল। সে বলল,
দীননাথ ( রহস্যময় ভাবে হেঁসে, দাঁতে দাঁত চেপে ) “মরদের সাহস দেখতে চাস বুঝি?”
এই বলে সে একটানে খুলে ফেলল মেয়েটির গায়ের চাদর। আচমকা এমন গরমের কাপড় সরিয়ে দেওয়াতে একটা হিমেল অনুভূতি খেলে গেল শরীরে। চাঁদের আলো মেয়েটির নধর শরীরে ধাক্কা খেয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে। লোকটি এবার হাত রাখল মেয়েটির অর্ধোন্মোচিত ফর্সা কোমড়ে। আলতো চাপ দিয়ে নিজের একদম কাছে টেনে আনল। মেয়েটিও তার কামনা ভরা স্পর্শ দিল লোকটির ঘাড়ে।
উত্তেজনায় খাড়া হয়ে উঠল গায়ের লোম আর সাথে সাথে লোকটির ভেতরে থাকা লোভী পুরুষটি জেগে উঠলো। এক টানে বুকের ওপর থেকে সরিয়ে দিল শাড়ির আঁচল। মেয়েটির শরীরের প্রতিটি খাঁজে খাঁজে প্রতিফলিত হতে লাগল লোকটির গরম নিশ্বাস। হিমেল আঁধারে সবাই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, গ্রাম ছাড়িয়ে দূরের মাঠে ঘাসের উপর দুজন মেতে উঠলো সৃষ্টির আদিম খেলায়। মেয়েটির কামনা ভরা সুখ মিশ্রিত চিৎকার যেন আরো পেয়ে বসল লোকটিকে। তার হাপড়ের মতো ওঠানামা করতে থাকা উন্মুক্ত বক্ষ যুগলের মাঝে নিজের মুখ ডুবিয়ে দিল। পরম আশ্লেষে চুম্বন করতে লাগল তার নগ্ন শরীর। কাম সুখে পাগল মেয়েটি খামচে ধরল পুরুষটির মাথার চুল।
চার ধারের পরিবেশের বাতাসে ধীরে ধীরে ছেয়ে যাচ্ছে একটা মানবগন্ধ আর কামনাভরা চিৎকার। গরম হয়ে উঠেছে যৌন মিলনে রত দুটি দেহ। কামের আগুনে দগ্ধ পুরুষটি তার পুরুষালি হাতে যখন মেয়েটির নগ্ন দেহ মর্দন করতে ব্যস্ত, হঠাৎ সে একটা জোরে টান অনুভব করল তার চুলে। মেয়েটি যেন তার চুলের মুঠি ধরে প্রবল শক্তিতে টানছে তাকে। একটু অবাক হয়েই মাথা তুলল পুরুষটি আর তাতে নিজের চোখের সামনে যা দেখল, এক ধাক্কায় তার কামনা বাসনা মিলনের আকাঙ্ক্ষা সব ধুয়ে মুছে সেখানে জন্ম নিল অকৃত্রিম ভয় আর আতঙ্ক।
মেয়েটির মাথার পরিবর্তে সেখানে রয়েছে এক বীভৎস মূর্তি। সেই মুখের পচা গলা মাংসে কিলবিল করছে হাজার হাজার পোকা, চোখ দুটো লাল ভাঁটার মতো জ্বলছে। একটা পচা গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। সাথে সাথে লোকটির খেয়াল হল, এতক্ষণ যে নগ্ন নধর শরীর টাকে নিয়ে সে খেলা করছিল সেটা আসলে এই বীভৎস মূর্তির পচা গলা দেহ। তার শরীরের কিলবিল করা পোকার দল এবার ঝেঁকে ধরল পুরুষটির শরীর। যন্ত্রণায় ছটফট করে উঠে চিৎকার করল পুরুষটি।
নিজেকে ছাড়ানোর প্রবল চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। এই নির্জন প্রান্তরে কেউ কোথাও নেই তাকে বাঁচানোর জন্য। বীভৎস নারীমূর্তিটি এবার হেসে উঠল এক রক্তজল করা পৈশাচিক হাসি। মাঘের হিমানী কে এক প্রকার অগ্রাহ্য করেই ঘেমে নেয়ে অস্থির হয়ে উঠল পুরুষটির সারা শরীর। বীভৎস মূর্তিটি বলে উঠল,
( কর্কশ গলায় ) “চিনতে পারছিস? কি রে, এই সেই মাঠ, পেঁতি জ্বলার মাঠ, চিনতে পারছিস শয়তান?”
দীননাথ ( যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠে ) “কে কে তুমি? আ..আমাকে আমাকে ছাড়ো !”
চন্দ্রমুখী [ প্রেত ] ( গর্জন করে ) “ছাড়বো বলে তো এখানে আনিনি রে শয়তান। সেই রাতে তোরা আমাকে ছেড়ে ছিলি হ্যাঁ?”
লোকটির স্মৃতিপটে এবার যেন ধাক্কা দিয়ে গেল কয়েক বছর আগের এক বীভৎস ঘটনার ইতিহাস। এমনই মাঘের হিমেল রাত, এই পেঁতিজ্বলার মাঠে………….. তার মুখ থেকে অস্ফুট স্বর বেরিয়ে এল,
দীননাথ ( অস্ফুট স্বর ) “চ….চন…. “
চন্দ্রমুখী [ প্রেত ] ( পৈশাচিক হাসিতে ফেটে পরবে ) কথা শেষ হল না। কারণ ততক্ষণে লোকটির চুলের মুঠি ধরে টেনে তার মুণ্ড ধর থেকে আলাদা করে দিয়েছে ওই বীভৎস মূর্তি। তার পৈশাচিক হাসিতে যেন থরথর করে কেঁপে উঠল পেঁতিজ্বলার মাঠ । প্রতিশোধ পূরণের এক রাতের সাক্ষী হয়ে থাকল শুক্লা-ত্রয়োদশীর চাঁদ আর এই রাতের চাদরে ঢাকা মাঠ। অনতি দূরে বাঁশ বনের থেকে একটা পেঁচার ডাক শোনা গেল, বোধহয় শিকারের উদ্দেশ্যে উড়ে গেল সেটি।
প্রেসিডেন্ট কেনেডি হত্যা রহস্য - সত্য ঘটনা: কেনেডি হত্যাকাণ্ডের অমীমাংসিত সত্য ও চলমান গবেষণা নিয়ে রহস্যঘেরা বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও নতুন তথ্য উন্মোচনের প্রচেষ্টা উঠে এসেছে। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অধ্যায় ২: দীননাথের শেষ সংবাদ
হাড়হিম ভুতের বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
সকালে চায়ের কাপ হাতে খবরের কাগজ নিয়ে বসেছিলেন প্রফুল্ল মহাজন। হন্তদন্ত হয়ে হুড়মুড়িয়ে ঘরের দরজা দিয়ে ঢুকে হাঁফাতে লাগল তাঁর হিসাব রক্ষক মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে। প্রফুল্ল মহাজন একটু অবাক হয়ে বললেন,
প্রফুল্ল : ( বিস্মিত স্বরে ) “কি রে, এরকম ছুটে ছুটে আসছিস কেন?”
কোনো কথা না বলে সামনের টেবিলে রাখা জলের ঘটি থেকে একটু জল খেল মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে। তারপর কিছুটা সময় নিয়ে বসে থিতু হয়ে বলল,
মহেশ : ( ঢোঁক গিলে, ধাতস্ত হয়ে ) “খবর শুনেছেন?”
প্রফুল্ল : ( চিন্তিত স্বরে ) “কার কি খবর?”
মহেশ : “আমাদের দারোয়ান দীননাথ, দীনু দীনু…..”
প্রফুল্ল একটু অবাক হয়েই বললেন,
প্রফুল্ল : ( অবাক স্বরে ) “দীনু, কেন তার আবার কি হল ? মায়ের শরীর খারাপ বলে তো ব্যাটা দুদিন ছুটি নিয়েছিল। মায়ের কিছু হল না কি?”
বলেই তিনি আবার হাতের খবরের কাগজে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। মহেশ চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,
মহেশ : ( বিস্ফারিত চোখে ) “মায়ের নয় কর্তাবাবু, মায়ের নয়। হয়েছে দীনুর। হতভাগা খুন হয়েছে!”
নিজের কান কে যেন বিশ্বাস করতে পারলেন না প্রফুল্ল মহাজন। ধমক দিয়ে বললেন,
প্রফুল্ল : ( ধমক দিয়ে ) “কি বকছিস, সকাল সকাল নেশা ভাঙ করেছিস নাকি?”
মহেশ : ( ব্যস্ত হয়ে হাত পা নেড়ে ) “ঠিকই বলছি কর্তাবাবু। সে কি ভয়ানক মৃত্যু, উ বাবারে ! শরীর থেকে মাথাটা পুরো আলাদা করে ছিঁড়ে ফেলেছে গো ! দেহটা পড়ে আছে ওদিকের পেঁতিজ্বলার মাঠে, গাঁয়ের লোক গিয়ে ভিড় জমিয়েছে সেখানে !”
রীতি মত চমকে উঠলেন প্রফুল্ল মহাজন। ঠিক সেই সময় পেছনের দরজার দিক থেকে একটা মহিলা কন্ঠ শোনা গেল,
চারুবালা : ( শান্ত গলায় ) “বাবু আপনার শরবত?”
তিনি পেছনে ঘুরে তাকালেন। পেতলের গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে তাঁর বাড়ির নতুন কাজের লোক চারুবালা। চারুবালা কে মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যেই সাথে করে এনেছিলেন মাস খানেক আগে। পাশের গ্রামে এক আত্মীয় বাড়ি তিনি গিয়েছিলেন যজ্ঞিবাড়ির নিমন্ত্রণ রাখতে। ফেরার পথে ওই পেঁতিজ্বলার মাঠে এই চারুবালার সাথে দেখা হয়। অভাগী বিধবা চারুবালা মহেশকে বলে একটা কাজ দেওয়ার জন্য। মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে প্রথমটা পাত্তা দিতে চান নি। কিন্তু নাছোড় বান্দা মেয়ে মানুষটি হাতে পায়ে ধরায় রাজি হয় মহেশ। তার কর্তা প্রফুল্ল মহাজনও অনেক দিন ধরেই কাজের লোক খুঁজছিলেন। মহেশ চারুবালাকে নিয়ে হাজির হলে তাকে কাজে রেখে দেন প্রফুল্ল। ঘরকন্যার কাজ সে ভালোই করতে পারে। ধীরে ধীরে প্রফুল্লর খাওয়া দাওয়া দৈনন্দিন সব দায় দায়িত্ব চারুবালাই নিজের কাঁধে নিয়েছে।
রোজ সকালে বাদাম বাটার শরবত খাওয়া অভ্যাস প্রফুল্লর। সেটা নিয়েই এসেছিল চারুবালা। সেটা ভেতরে রেখে দিয়ে যেতে বললেন প্রফুল্ল। চারুবালা ধীর পায়ে এসে সেটা টেবিলে রাখল। মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে একবার চোখ কুঁচকে আপাদমস্তক দেখে নিল চারুবালাকে। যেন সে মনে মনে কিসের একটা হিসাব মেলাতে চাইছে যেখানে চারুবালাকে যোগ করলেই হয়তো প্রত্যাশিত যোগফলটি উত্তর হিসেবে পাওয়া যাবে। চারুবালা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে, প্রফুল্ল শরবতের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল,
প্রফুল্ল : ( শরবতের গ্লাসে চুমুক দিয়ে ) “তুই নিজের চোখে দেখেছিস? এভাবে কে মারল দীনুকে?”
মহেশ : ( হাতের তালুতে হাত ঠুকে ) “আলবাৎ কর্তাবাবু। গাঁয়ের রতনরা বাপবেটায় ওই মাঠের ধার দিয়ে জমিতে লাঙল করতে যাচ্ছিল। মাঠের মধ্যে এমন ভয়ংকর ব্যাপার দেখে গাঁয়ে ছুটে এসে খবর দেয়। আমি গিয়েই দেখেছি। ( নিরাশ ভাবে ) সত্যিই কর্তাবাবু, কে মারলে ওকে অমন করে !”
প্রফুল্ল খানিক্ষণ চুপ থেকে বললেন, “ও তো আর ধনকুবের নয় যে চোর ডাকাত এসে ওকে কেটে রেখে যাবে। হতভাগা নেশা করতো বড্ড। সেই নিয়েই হয়তো কারোর সাথে ঝামেলা করে থাকবে। কিন্তু মাস গেলে তো মাইনে পায়, ধার দেনা করে মদ গেলার তো কথা নয়। চল তো একবার দেখে আসি!”
এই বলে গায়ে চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে নিলেন প্রফুল্ল মহাজন। দুজনে চলল পেঁতিজ্বলার মাঠের উদ্দেশ্যে। গ্রামে ঘটা দূর্ঘটনার আঁচটা যেন আজকের আবহাওয়ার ওপরও প্রভাব ফেলেছে। সকাল থেকেই কিরকম একটা মেঘলা আকাশ, আর সাথে সাথে ঠান্ডা একটা জোলো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। বাঁশ বাগানটা পেরিয়েই ভিড়টা চোখে পড়ল প্রফুল্লর। গ্রাম সুদ্ধ লোক পেঁতিজ্বলার মাঠের মাঝে গোল করে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। নিজেদের মধ্যে এসব নিয়েই কথা বলছে। তাদের অনেকের মতে এই পেঁতিজ্বলার মাঠ ভূতুড়ে, তেনাদের হাতেই দীনুর এই অবস্থা হয়েছে। পেঁতিজ্বলার মাঠ নিয়ে ভূতুড়ে অপবাদটা রয়েছেই, তবে সত্যি বলতে কেউই কখনো এখানে ভূতের দেখা পায়নি।
অধ্যায় ৩: নিখোঁজের পেছনের কানাঘুষো
হাড়হিম ভুতের বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
প্রফুল্ল মহাজন গাঁয়ের ধনবান ব্যক্তি। স্বভাবতই একটা প্রভাব রয়েছে ওনার। নিজের সুদের কারবারিতে সেই প্রভাব তিনি ভালোই খাটান। প্রফুল্ল মহাজন আসতেই লোক জনের কথাবার্তা স্থির হয়ে এল। ভিড়টা নিজের থেকেই তাঁকে জায়গা করে দিল ভেতরে ঢোকার জন্য। দীননাথ এই মহাজনের বাড়িতেই দারোয়ানের কাজ করত। গাঁয়ের লোকেদের ভিড়টার মাঝে মাঠের ওপর পড়ে রয়েছে মুণ্ডহীন অর্ধনগ্ন একটা মৃতদেহ। সারা রাত ঠাণ্ডায় পড়ে থেকে সেটা বেশ খানিকটা সিঁটিয়ে এসেছে মনে হয়। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে চাপ চাপ কালচে রক্ত। দেখে মনে হয় যেন প্রচণ্ড শক্তিধর জীব প্রবল আক্রোশে মুড়োটা গলার মাঝখান থেকে টেনে ছিঁড়ে ফেলেছে। হাত পাঁচেক দূরে মাটিতে পড়ে রক্তমাখা দীনুর কাটা মাথাটা। দুটো চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসছে যেন। মৃত্যুর আগের মূহুর্তের যে বিভীষিকা দীনু দেখেছিল, তার ছাপ যেন স্পষ্ট ওই চোখে। জিভটা মুখের একপাশ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে আর ছেঁড়া মাথাটা থেকে দগদগে হয়ে বেড়িয়ে আছে কন্ঠনালী।
ছেলের এই অবস্থা দেখে ওধারে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছে দীনুর বৃদ্ধ মা। তাকে সামলাচ্ছে গ্রামের অন্যান্য মহিলারা। মড়াটার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলেন না প্রফুল্ল মহাজন। এত নৃসংশ ভাবে কে মারল তা তিনি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারলেন না। গ্রামের লোকেদের তিনি নির্দেশ দিলেন দেহটার ঝটপট একটা ব্যবস্থা করার।
সারা দিন গ্রামের কারোর মুখে কোনো কথা নেই, শুধু দীনুর ব্যাপারে আলোচনা ছাড়া। সন্ধ্যায় বৈঠক খানায় বসে তামাক টানছিলেন প্রফুল্ল। সামনে বসে মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে এক নাগাড়ে বকে চলেছিল গ্রামের ওর তার কল্পনাপ্রসূত নানারকমের মতামত, দীনুকে কে মারতে পারে, কেন মারতে পারে, দুদিন আগে দীনুকে, এ এখানে যেতে দেখেছে , , ও ওখানে যেতে দেখেছে, ওই মাঠে ভূত আছে না পেত্নী আছে না ডাইনি আছে ইত্যাদি নানা কথা। ব্যাপারটা এখনো যেন বিশ্বাস হচ্ছে না প্রফুল্লর। দীনু বেচারা তার ঘরেই কাজ করতো। দোষের মধ্যে একটু নেশাভাঙ করতো এই আর কি ! তার যে এই বীভৎস পরিণতি হবে ভাবতেও অবাক লাগে। প্রফুল্লর স্ত্রী অনেক কাল আগেই গত হয়েছেন। একমাত্র ছেলে শহরে থেকে পড়াশোনা করে। এত বড়ো বাড়িতে বলতে গেলে প্রফুল্ল একা। এক চাকর এসে টুকটাক ঘরের কাজ আর রান্না বান্না করে, আর আছে চারুবালা। তার কর্তাবাবুর দেখাশোনা সে-ই করে। রান্নাঘর থেকে মহেশের কথা কিছু কিছু শুনতে পাচ্ছিল চারুবালা। মনের মধ্যে কৌতূহলটা চেপে রাখতে না পেরে একটু সাহস করেই বাইরে এসে বলল,
চারুবালা : ( কৌতূহলী হয়ে, সাহস জুগিয়ে ) “কর্তাবাবু?”
তার কথা শুনে থেমে গেল মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে। তামাক টানতে টানতে আনমনা হয়েই বললেন প্রফুল্ল,
প্রফুল্ল : ( তামাক টানতে টানতে আনমনা হয়ে ) “হুম বলো !”
চারুবালা : ( সলজ্জ + ধীর কন্ঠে ) “বলছিলাম, কি হয়েছে? কে মারা গেছে না কি?”
মহেশ : ( বিরক্ত হয়ে দাঁত খিচিয়ে ) “ন্যাকামো যতসব ! বাড়িতেই তো থাকো সারাদিন। খবর-টবর রাখো না নাকি !”
প্রফুল্ল হুঁকো থেকে মুখ সরিয়ে বললেন,
প্রফুল্ল : ( ধোঁয়া ছেড়ে ) “আ মহেশ। কি হচ্ছে কি, থাম।”
তারপর চারুবালার দিকে ফিরে বললেন,
প্রফুল্ল : ( শান্ত গলায় ) “আমাদের বাড়িতে যে দারোয়ান ছিল না, ওই দীনু, আজ সকালে ওই পেঁতিজ্বলার মাঠে ওর মরা দেহ পাওয়া গেছে। কে না কে ওকে খুন করে ওখানে ফেলে দিয়ে গেছে !”
আঁৎকে উঠে শাড়ির আঁচলে মুখ চাপা দিল চারুবালা। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
চারুবালা : ( আঁৎকে উঠে শাড়ির আঁচলে মুখ চাপা দিয়ে, কাঁপা কাঁপা গলায় ) “কে কে মারলে দীনুদাদাকে?”
প্রফুল্ল : “জানিনা”
দেখতে দেখতে দুটো দিন কেটে গেল। দীনুর মৃত্যু বিভীষিকার প্রভাবটাও ধীরে ধীরে লঘু হতে শুরু করেছিল। আবার লোকজন যে যার কাজে মন দিয়েছিল। একদিন কোনো এক কাজে দিনের বেলা প্রফুল্লকে বাইরে যেতে হয়েছিল। তাঁর অনুপস্থিতিতে বাড়িতে এসে হাঁকডাক শুরু করল মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে। রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল চারুবালা। মহেশকে দেখেই বলল,
চারুবালা : “আজ্ঞে কর্তাবাবু তো বাড়িতে নেই। কি কাজে বাইরে গেছেন একটু। ফিরতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যাবে বলেছেন।”
মহেশ : “ও আচ্ছা। ঠিক আছে। আমি সন্ধ্যায় না হয় আসবখন।”
ফিরে যাচ্ছিল মহেশ, হঠাৎ কি একটা মনে পড়াতে আবার ঘুরে দাঁড়াল। চারুবালা তখনও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। মহেশের উদ্দেশ্যে সে বলল,
চারুবালা : ( জিজ্ঞাসু স্বরে ) “কিছু বলবেন দাদা বাবু?”
মহেশ চারুবালার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে বলল,
মহেশ : ( মনে মনে কিছু একটা ভেবে নিয়ে ) “তুমি একবার ভেতরে চলোতো, কথা আছে।”
বৈঠকখানায় এসে মহেশ বলল, ( কিছুটা চাঁপা স্বরে ) “চারুবালা, তুমি দীনুর মৃত্যুর ব্যাপারে কিছু জানো?”
চারুবালা : ( বিস্মিত স্বরে ) “মানে? কি বলছেন দাদাবাবু, আমি তো সেদিনই কর্তাবাবুর মুখে শুনলাম।”
মহেশ : ( দাঁতে দাঁত চেপে ) “সব সত্যি করে বলো চারুবালা। আমি অনেকবার তোমাকে দীনুর সাথে আড়ালে কথা বলতে দেখেছি। ঠিক করে বলো আসল রহস্য টা কি ! নাহলে তোমার কর্তাবাবুর কানে একথা গেলে তিনি তোমাকে আস্ত রাখবেন না !”
চারুবালা সবটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, ( একটা ঢোঁক গিলে, হাতে হাত ঘষতে ঘষতে ) “দীনু দাদার মায়ের পায়ে হাতে ব্যাথা ছিল, অনেকবারই আমাকে তিনি বলতেন তেল হলুদ গরম করে দেবার জন্য। কর্তাবাবু একথা জানতে পারলে কি বলতেন না বলতেন, সেই ভেবে আমরা লুকিয়ে কথা বলতাম। তাও খুব বেশি দিন না। এর সাথে দীনু দাদার মরার কি সম্পর্ক তা আমি জানি না !”
এতদিন ধরে মনে মনে হিসাবের যে সমীকরণ টা মিলিয়ে আসছিল মহেশ, চারুবালার যুক্তি সেই সব গোলমাল করে দিতে পারে এই ভেবে সে মনে মনে খুব বিরক্ত হল। তার ভাবনাই যে ঠিক সেবিষয়ে একটা দৃঢ় আত্মপ্রত্যয় রেখে সে বলল,
মহেশ : ( গলার স্বর উঁচিয়ে ) “ওসব ছেঁদো গল্পকথা অন্য জায়গায় পেড়ো। মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যেকে কি এতটাই বোকা ভেবেছ নাকি ! ( শাসিয়ে বলবে ) এখনো সময় আছে সত্যি করে বলো, কি লটরপটর চলছিল দুজনের মধ্যে, নয়তো…”
চারুবালা এবার মাথা নীচু করে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “আমাকে মেরে ফেলবেন তাইতো, মারুন। তবুও বলবো আমি কিছু জানি না। আপনি বয়ঃজ্যেষ্ঠ্য , অনেক ক্ষমতা আছে। আমি গরীব দুঃখী, আমার মতো কাউকে জোর করে দোষী সাব্যস্ত করতেই পারেন আপনি ! কিন্তু আমি এখনো বলবো আমি কিছু করিনি। কোনো রকম লটরপটর হয় নি। এসব কথা শোনাও পাপ !”
কথাবার্তার পীড়া পীড়িতে হয়তো মহেশ একটু বেশিই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। গলার স্বরটা একটু নামিয়ে সে এবার বলল, “দেখো চারুবালা, তুমি অল্প বয়সি বিধবা, দীননাথ অবিবাহিত জোয়ান ব্যাটা ছেলে, তোমাদের মত দুজনকে এভাবে দিনের পর দিন লুকিয়ে কথা বলতে দেখলে যে কেউ এমনটাই ভাববে। আর আমি তো তোমাকে দোষী বলছি না, শুধু বলছি দীনুর সাথে তোমার কি সম্পর্ক ছিল। আবারো বলছি, সত্যি কথাটা আমাকে খুলে বলো।”
চারুবালা : ( কেঁদে ) “আমি সত্যি বলছি আমি জানিনা কিছু । আমার সাথে কারোর কোনো সম্পর্ক নেই!”
এমন সময় বাইরে কারোর পায়ের শব্দ শোনা গেল। এত তাড়াতাড়ি প্রফুল্ল মহাজন ফিরে এলেন নাকি ! কথা কাটা কাটির মাঝে ইতি টেনে মহেশ বলল, “বেশ। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল কি করে ব্যাঁকাতে হয় তা এই মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে ভালো মতোই জানে। আমিও দেখবো কতদিন কথা পেটের ভেতর চেপে রাখতে পারো। ( দাঁতে দাঁত চেপে ) সত্যিটা আমি জেনেই ছাড়বো, যেমন করেই হোক !”
মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে বিদায় নিল।
অধ্যায় ৪: নজরে নজরে
হাড়হিম ভুতের বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
এই ঘটনার পর থেকেই প্রফুল্ল মহাজনের হিসাব রক্ষক হওয়ার পাশাপাশি মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে উঠলো চারুবালার প্রতিটি পদক্ষেপে নজর রাখা এবং তাকেই দীনুর ওই অবস্থার পেছনে দায়ী বলে প্রমাণ করা। মহেশের এমন আচরণ চারুবালার একদমই ভালো লাগত না। এ থেকে মুক্তির কি উপায় হতে পারে সেকথাই বারবার ভাবতে লাগল সে।
প্রফুল্লর বাড়িতে কাজের চাপ একদিন এতটাই বেশি ছিল যে লেখালেখি শেষ করতে মহেশের রাত দশটা বেজে গেল। কাজ শেষ করে মহেশ বেড়িয়ে গেলে পর প্রফুল্ল চারুবালাকে বললেন দরজায় তালা লাগিয়ে দিতে। দীনু মারা যাবার পর থেকে তার জায়গায় নতুন কাউকেই তিনি এখনো পর্যন্ত নিয়োগ করেন নি।
রাস্তায় এসে দাঁড়াল মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে। অনেক রাত হয়েছে। শীতটাও বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে। আজ আবার সে টর্চটাও সঙ্গে আনেনি। তাতে অবশ্য অসুবিধা নেই। রাস্তাঘাট সব তার চেনা। শীতকালে সাপ খোপেরও খুব একটা ভয় নেই। অন্ধকারে পথে হোঁচট খাওয়ার ভয়ে এই যা। এগিয়ে চলল মহেশ। তার বাড়িটা কিছুটা দূরে। প্রফুল্লর বাড়ি যেখানে, সেখান থেকে একদম উল্টোপ্রান্তে। মাঝে দত্তদের পুকুর আর বাঁশ বাগান পেরিয়ে যেতে হবে। ঠান্ডা হাওয়াটা গায়ে লেগে যেন ছুরির মতো কেটে যাচ্ছে। চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে নিল মহেশ।
গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে দত্তদের পুকুরপাড়টা সবেমাত্র পেরিয়েছে হঠাৎ তার মনে হল অনতিদূরের বাঁশঝাড়টা কেমন যেন নড়ছে । অন্ধকারে চোখটা সয়ে এসেছিল মহেশের। একবার চোখ কচলে আবার তাকাল। হ্যাঁ, সত্যিই নড়ছে। কি ব্যাপার, এত জোরেও তো হাওয়া দিচ্ছে না। কুকুর শিয়াল এতটা জোরে বাঁশগাছ নাড়াবে ! সাথে সাথে একটা শেয়ালের ডাক কানে এল মহেশের। এতক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিল মহেশ। শেয়ালের ডাকটা কানে আসতেই আশ্বস্ত হল সে। শেয়ালের দল হবে হয়তো। আবার এগোতে শুরু করল। বাঁশবনটি সবেমাত্র অতিক্রম করেছে মহেশ, এমন সময় একটা পরিচিত চাপা কন্ঠস্বর পেছন থেকে ভেসে এল,
চারুবালা : ( চাঁপা কণ্ঠ স্বর ) “মহেশ দাদাবাবু !”
আচমকা এমন নির্জন জায়গায় এরকম ডাক শুনে একটু চমকে উঠল মহেশ। পরক্ষণেই তার মনে হল এতো তার চেনা গলা, চারুবালা। ঘুরে তাকাল মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে। হ্যাঁ তার থেকে হাত দশেক দূরে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে তার মুখটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না তবে শরীরের গড়ন বলে দিচ্ছে এটা চারুবালাই। মহেশ বেশ গম্ভীর স্বরে বলল,
মহেশ : ( বেশ গম্ভীর স্বরে ) “কি ব্যাপার চারুবালা, তুমি এখানে?”
চারুবালা কোনো জবাব না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। মহেশ ভ্রু কুঁচকে বলল, “কি হল, কথার উত্তর দিচ্ছ না যে ? কি করছো এখানে?”
বলতে বলতে মহেশ ধীরে ধীরে চারুবালার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল । সে যখন চারুবালার অনেকটা সামনে এসে পড়েছে, আচমকা চারুবালার অন্ধকারে ঢাকা মুখটা যেন দপ করে উজ্জ্বল হয়ে উঠে দৃশ্যমান হল মহেশের কাছে। এ কি ! এ তো চারুবালা নয় ! তাহলে…..!!
তাহলে এ কে সেই ভাবনা মনে আসতেই মহেশের সারা শরীরে যেন একটা শিহরণ খেলে গেল। এই মুখ তার মনে পড়েছে। সে চিনতে পেরেছে। আর সাথে সাথেই তার মনে পড়ে যাচ্ছে কয়েকবছর আগের একটা ভয়ংকর ঘটনা……
মিলুর নতুন বাসা - ছোটদের রূপকথার গল্প: উষ্ণতা ও মমতায় ভরা এই ছোটদের গল্প এক নিখুঁত রূপকথার গল্প, যেখানে ইঁদুর মিলু খুঁজে পায় নিজের শান্তির ঘর। পড়ুন এক মধুর রাত্রির অভিযানের গল্প। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অধ্যায় ৫: নিঃসন্তান কৃষকের কষ্টগাথা
হাড়হিম ভুতের বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
কিছু বছর আগের কথা । গ্রামের একদম পূর্বপ্রান্তে একচালা ঘরে বাস করতো শিবরাম আর তার স্ত্রী চন্দ্রমুখী। নিঃসন্তান কৃষক দম্পতির ঘরে অভাব অনটন ছিল নিত্য সঙ্গী। সম্পত্তি বলতে এই বাড়ি, বাড়ির সামনে কিছু জমি জায়গা আর বিঘে কয়েক চাষের জমি। শিবরামের বয়স চল্লিশের কাছাকাছি, তার বৌয়ের বছর পঁয়ত্রিশ। স্বামী স্ত্রী দুজনেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জমিতে চাষের কাজ করতো। কিন্তু তাও, লাভের থেকে লোকসান হতো বেশি। টাকা পয়সাও বেশি ছিল না যে ভালো বীজ সার কিনে জমিতে লাগাবে। নিঃসন্তান বলে তাদের স্বামী স্ত্রী কে গ্রামে এর ওর থেকে কথাও শুনতে হত। এমনিতে শিবরামের বৌ চন্দ্রমুখী বেশ সুশ্রী এবং বয়সোচিত যৌবনে ভরা, তাও যে কেন শিবরাম এখনও সন্তানের মুখ দেখল না, সেটাই যেন ছিল গ্রামের অধিকাংশ মেয়ে বৌয়ের ভাবনার ও আলোচনার একমাত্র বিষয়। শিবরাম ও চন্দ্রমুখী সেসব কথা খুব একটা গায়ে মাখত না। তাদের চেষ্টা ছিল নিজেদের অবস্থার উন্নতি করা। অভাব অনটনের মুখে পড়ে জর্জরিত হয়ে চন্দ্রমুখী একদিন তার স্বামীকে বলল,
চন্দ্রমুখী : “বলছি, তুমি ওই প্রফুল্ল মহাজনের কাছে কটা টাকা ধার নিয়ে ভালো বীজসার কেনো না গো? কতদিন আর এভাবে চলবে?”
শিবরাম চিন্তিত মুখে বলল, “সে না হয় নিলাম। কিন্তু শোধ করতে না পারলে প্রফুল্ল মহাজন এতটুকুও ছেড়ে কথা বলবে না। ভিটে মাটি যা আছে সব দখল করে নেবে। প্রফুল্ল মহাজনকে তুমি চেনো না। এই তো সেবার হরির বাপ টাকা ধার নিলে, শোধ দিতে পারলে না বলে হরিদের আমগাছ আর দুধেল গোরুখানা দখল করে নিল।”
চন্দ্রমুখী : ( একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ) “সব বুঝলাম। কিন্তু টাকা না নিলে যে দুজনকেই এবার না খেতে পেয়ে মরতে হবে যে। বলছি শোনো না, দেখো ঠিক শোধ করতে পারবো। এবারের মতো তো ধার নেওয়া হোক। ( ভরসা দিয়ে ) তুমি আমি একসাথে এত খাটছি, আমি বলছি এবারে চাষ ভালো হবে দেখো। একটি বার নাও না গো।”
চন্দ্রমুখী হাত রাখল শিবরামের হাতে। একটা ভরসা ভরা ছোঁয়া পেয়ে মনে মনে অনেকটা সাহস পেল শিবরাম। স্ত্রীর কথা মতো পরদিনই শিবরাম গেল প্রফুল্ল মহাজনের বাড়ি। প্রফুল্ল মহাজনের সুদের কারবারী বেশ ভালোই রমরমিয়ে চলছে আজকাল। চড়া হারে সুদ দিচ্ছেন আর শোধ করতে না পারলেই সব কেড়ে নিচ্ছেন। গ্রামের সব থেকে ধনবান ব্যক্তি এখন প্রফুল্ল মহাজন। শিবরামকে দেখেই মহাজন বললেন,
প্রফুল্ল : “কি রে শিব, কি ব্যাপার?”
শিবরাম কাঁচুমাচু মুখে বলল,
শিবরাম : ( কাঁচুমাচু মুখে ) “আজ্ঞে কর্তাবাবু, কিছু টাকা যদি ধার দেন। ভালো বীজ সার কিনে জমিতে চাষ করতে পারি।”
পাশ থেকে মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে বলে উঠল,
মহেশ : “শুধু ধার নিলেই তো হবে না বাবা, শোধ করতে হবে।”
শিবরাম : ( হাতজোড় করে ) “আজ্ঞে আমি শোধ করে দেব বাবু। ফসল উঠলেই আমি শোধ করে দেব।”
প্রফুল্ল : “বেশ, তবে ওখানে তারিখ দেওয়া আছে, পাশে টিপ সই দিয়ে যা। পাঁচ মাসের মধ্যে সুদে আসলে যা হবে তা নগদ যদি দিতে না পেরেছ বাছাধন, তাহলে আমার যেটা ইচ্ছা সেটাই কেড়ে আনবো, এই বলে রাখলাম।”
শিবরাম ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালে। মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে পাশ থেকে বাঁকা হাসি হেসে বলল,
মহেশ : ( বাঁকা হাসি হেসে ) “যা ইচ্ছা তাই নেওয়া হবে কিন্ত, একদম লুটে নেওয়া হবে।”
গা টা রি রি করে উঠলো শিবরামের। সে অশিক্ষিত হলেও অবোধ নয়। মহেশের এই কথার মানে সে ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। কিছু না বলে টাকাটা নিয়ে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছিল, এমন সময় দারোয়ান দীনু তার পথ আটকালো।
দীননাথ: “কি শিবরাম বাবু, এখানে কি মনে করে? টাকা চাইতে নাকি !”
কিছু উত্তর না দিয়ে কেবল ঘাড় নাড়ল শিবরাম। দীনু আবার বলল , ( বাঁকা হাসি হেসে ) “তা বেশি করে টাকা নিয়ে ভাগ চাষী রাখো। কতদিন আর ওভাবে বৌটাকে মাঠে খাটিয়ে খাটিয়ে ওর শরীরটা নষ্ট করবে বলো। হাঁটুর ওপর কাপড় তুলে রোদে গা পুড়িয়ে আর পাঁচটা মিনসের সাথে তাল মিলিয়ে মাঠে চাষ করা কি আর অমন সুন্দর বৌয়ের মানায় বলো !”
শিবরাম : ( রাগে গর্জে ) “দীনু, তোকে আমি নিজের ছোটো ভাইয়ের মতো দেখি। তার মানে এই নয় যে তুই যা ইচ্ছা তাই বলবি। আর একটাও উল্টো পাল্টা কথা বললে জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলব।”
দীননাথ: ( তাচ্ছিল্যের সুরে ) “আরে যাও যাও। আগে প্রফুল্ল মহাজনের টাকা তো শোধ করো, তারপর জিভ টেনে ছিঁড়তে আসবে। হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল, হুম যতসব! শালা ভিখিরির জাত, পয়সা না থাকলেও কি হবে, বড়ো বড়ো বাতেলা ভালোই মারতে পারে।”
কিছু বলতে পারল না শিবরাম। অপমানটা গায়ে মেখে বাড়ি ফিরে এল সে। টাকাটা হাতে পেয়ে মন দিয়ে স্বামী স্ত্রী মিলে চাষের কাজ শুরু করল। মহাজন বাড়িতে অপমানের কথাটা সে চন্দ্রমুখীকে কিছু বললে না। হাটে গিয়ে ভালো বীজ সার কিনে আনলে। দিন রাত কাজ করে জমিতে বীজ বুনলে। দেখতে দেখতে শিবরামের জমি ভরে উঠলো সোনালী ফসলে। এটুকু সাফল্য হাঘরে হাভাতে শিবরামের ঘরে আশার আলো ফোটাতে যথেষ্ট। এবারে সে টাকা সময়ের আগেই শোধ করতে পারবে। তারপর সে বুঝে নেবে ওই শয়তান দীনুকে। ব্যাটা বড়ো লোকের ভিটেতে কাজ করে বলে যেন নিজেকে কি মনে করেছে।
এদিকে শিবরামের সাফল্যের কথা যথারীতি প্রফুল্ল মহাজনের কানে গেল। নগদ টাকা হাতে পাওয়ার থেকেও টাকা না পেয়ে জোরজুলুম করে লোকের সম্পত্তি ছিনিয়ে নেওয়াটাই যেন প্রফুল্ল কে বেশি আকৃষ্ট করতো। শিবরামের মতো একটা হাঘরে হাভাতে লোক যে প্রফুল্ল মহাজনের দেনা মিটিয়ে দেবে সেটা যেন তিনি ঠিক মেনে নিতে পারলেন না। বলা বাহুল্য, শিবরামের ভিটে মাটি সব কেড়ে নেওয়ার ধান্দাতেই তাকে টাকা ধার দিয়েছিলেন। সেই উদ্দেশ্য পূরণ করতে তিনি তৎপর হলেন।
এদিকে শিবরামের স্ত্রী চন্দ্রমুখীর ভরা যৌবনের ওপর মহেশ আর দীনুর আগে থেকেই নজর ছিল। চন্দ্রমুখী কে পাওয়ার এবং ভোগ করার একটা নেশা ভেতরে ভেতরে পেয়ে বসেছিল দুজনকেই। তিনজন ভিন্ন মানুষের উদ্দেশ্য এবার এক হয়ে ভাবতে লাগল কিভাবে সব দিক দিয়ে শিবরামের ক্ষতি করা যায়।
মহেশ খাতা দেখতে দেখতে বলল, “বাবু, খবর যা শুনছি, এই তিন-চার মাসেই শিবরাম তো ফসল ফলিয়েছে দারুণ। এবার লাভ করতে শুরু করল বলে। আপনার টাকা কিনা শোধ করবে ওই অভাগী !”
প্রফুল্ল মহাজন কিছু ভেবে বললেন, ( গম্ভীর স্বরে ) “তা কি হতে দেওয়া যায় মহেশ। এমন কিছু করতে হবে যাতে সাপও মরবে কিন্তু লাঠি ভাঙবে না !”
প্রফুল্ল অনেক ভেবে নির্দেশ দিলে শিবরামের চাষের জমি রাতা রাতি জ্বালিয়ে দেওয়ার। কাজটা অতি সহজেই সম্পন্ন করলো মহেশ আর দীনু। প্রতিপক্ষকে হারিয়ে নিঃশেষ করে একদম মাটির সাথে মিশিয়ে না দিলে জয়ের আনন্দ আর কোথায় !
ভাগ্য যে শিবরামের প্রতি এতটাই নিষ্ঠুর, তা সে নিজেও হয় তো এতটা দারিদ্রের মধ্যে থেকেও কখনো কল্পনা করতে পারেনি। রোদে পুড়ে জলে ভিজে তার কষ্টের বোনা ফসল কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের লোভের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আসন্ন ভয়ংকর পরিণামের কথা ভেবে শিবরামের আর বাঁচতেও সাহস হল না। গলায় বিষ ঢেলে আত্মহত্যা করলো সে। লোভী স্বার্থপর এই দুনিয়ায় একা হয়ে পড়ল চন্দ্রমুখী। তার আর কেউ ছিল না, যাওয়ার কোথাও ছিল না। বিধবা নিঃসন্তানা চন্দ্রমুখী এর ওর বাড়িতে কাজ করে চেয়ে চিন্তে দুবেলা যত টুকু যা জোটে তাই খেয়ে দিনপাত করতে লাগল।
যথারীতি নির্ধারিত সময়ের পর প্রফুল্ল মহাজন এল এবং দেনার টাকা না পেয়ে ভিটে মাটি যা আছে সব কেড়ে কুড়ে নিয়ে চলে গেল। চন্দ্রমুখী কিছুটা অনুনয় বিনয় করলেও কোনো লাভ হল না। মাথার ওপর যে ছাদ ছিল সেটাও আর রইল না। সব কিছু হারিয়ে ক্লান্ত শ্রান্ত চন্দ্রমুখী আশ্রয় নিল খোলা আকাশের নীচে। কিন্তু বিপর্যয়ের আরো কিছুটা তখনো বাকি ছিল। সেই রাতেই এমন ঘটনা ঘটল চন্দ্রমুখীর সাথে যাতে তার বাঁচার শেষ আশা ভরসা লাজ লজ্জা যতটুকুও যা বেঁচেছিল, সব ধুয়ে মুছে শেষ হয়ে গেল।
সাক্ষাৎ মানুষ রুপী দুটো পিশাচ, মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে আর দীননাথ ভুঁইয়া, মদের নেশায় চুর হয়ে সেই রাতেই চেপে ধরল চন্দ্রমুখীকে। এতদিন ধরে চন্দ্রমুখী কে পাওয়ার যে কামনা বাসনা তারা দুজন মনের মধ্যে পুষে রেখেছিল, সব আজ মিটিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। গভীর রাতে অভাগী চন্দ্রমুখীর হাত পা বেঁধে তাকে নিয়ে চলল গ্রাম ছাড়িয়ে পেঁতিজ্বলার নির্জন মাঠে। পেঁতিজ্বলার এই মাঠটাকে নিয়ে ভূতুড়ে অপবাদ আছে। এখানে এত রাতে কেউ আসবে না ওই মাঠে। যে কোনো রকমের দুষ্কর্ম করার ক্ষেত্রে ওর থেকে আদর্শ জায়গা আর হয় না।
জোর করে তাকে মদ গিলিয়ে সারারাত ধরে রীতি মত শোষণ ও অত্যাচার চালিয়ে গেল তারা। নির্বস্ত্র নগ্ন চন্দ্রমুখীর শরীরটাকে নিয়ে রীতিমত কামনা ভরা খেলায় মেতে উঠলো দুজনে। প্রতিবাদ করার কোনো ক্ষমতাই আর বেঁচে ছিল না চন্দ্রমুখীর। দুটো মাতাল জানোয়ারের ক্রমাগত শোষণ আর বল প্রয়োগে সংজ্ঞা হারালো চন্দ্রমুখী। কামের খিদে মিটিয়ে সেই নির্জন পেঁতিজ্বলার মাঠেই শয়তান দুটো কেরোসিন ঢেলে জ্বালিয়ে দিল চন্দ্র মুখীর ছিন্নভিন্ন নগ্ন শরীরটা। শিবরাম আগেই আত্মহত্যা করে মরেছে। ঘর বাড়ি, স্বামী, সংসার সব হারিয়ে চন্দ্রমুখীও যে গায়ে আগুন দিয়ে পুড়ে মরেছে, সেটাই ভেবে নিলে গাঁয়ের সকলে।
অধ্যায় ৬: রাত্রির নিঃশব্দ সাক্ষী
হাড়হিম ভুতের বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
আর আজ, এতদিন পরে, চন্দ্রমুখীর সেই অতৃপ্ত আত্মাই ফিরে এসেছে প্রতিশোধ নিতে। চারুবালা আসলে কোনো মানবী নয়। শোষিত নিপীড়িত মৃত চন্দ্রমুখীরই মানবরুপী প্রতিনিধি সে। পেঁতিজ্বলার মাঠে সে-ই কামের তাড়নায় পাগল হয়ে ওঠা দীনুকে নৃসংশ ভাবে হত্যা করে অন্যায়ের প্রতিশোধ নিয়েছে। আজ তার দ্বিতীয় শিকার, মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যের পালা।
ধীরে ধীরে মহেশের চোখের সামনে চন্দ্রমুখী রূপান্তরিত হল পচা গলা দেহধারী এক বীভৎস প্রেতে। পৈশাচিক একটা হাসিতে থরথর করে কেঁপে উঠল দত্তপুকুরের পাশের বাঁশবাগান। এমন শীতের রাতেও মহেশের সারা শরীর ঘেমে অস্থির হয়ে উঠলো। এই নির্জন প্রান্তরে কেউ নেই তাকে বাঁচানোর জন্য। আতঙ্কে একটা মৃত্যু ভয় শরীরের ভেতর থেকে উঠে এসে দলা পাকিয়ে আটকে গেল গলায়। ছুটে পালাতেও যেন ভুলে গেল মহেশ। রক্ত মাখা ধারালো নখ বিশিষ্ট পিশাচটির দুই হাত চেপে ধরল মহেশের গলা। ব্যথায় একটা গোঙানি বেরিয়ে এল তার মুখ থেকে। দাঁতে দাঁত চেপে চন্দ্রমুখীর প্রেত বলে উঠল,
চন্দ্রমুখী [ প্রেত ] ( দাঁতে দাঁত চেপে ) ‘মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে, পৈতেধারী বামুন হয়েও এমন অধর্ম করতে তুমি ভয় পাও না তাই না ! এবার দেখো কেমন লাগে। মনে পড়ে, পেঁতিজ্বলার মাঠে আমার শরীর নিয়ে রীতি মত খেলা করে সেটা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিলে তুমি আর ওই পাষণ্ড দীনু। ওটাকে তো আমি আগেই খতম করেছি। এবার তোমার পালা মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে, তোমার পালা….. হি হি হা হা হা!”
শেষের কথাগুলো আর খুব একটা কানে গেল না মহেশের। দুই হাতের প্রচণ্ড চাপে ততক্ষণে তার দম বন্ধ হয়ে এসেছে। মৃত্যুর আর কিছু মাত্র মুহূর্ত বাকি এমন সময় প্রবল আক্রোশে চন্দ্রমুখী প্রেত তার ধারালো নখ ঢুকিয়ে দিল মহেশের গলার ভেতর, আর ওপর থেকে নীচে পুরো শরীরটাকে চিড়ে ফালা ফালা করে ফেলল।
পরদিন সকালে গ্রামের লোকজন মহেশের ছিন্ন ভিন্ন দেহটা আবিষ্কার করেছিল দত্তদের পুকুরের পাশের বাঁশবনের ধারে। প্রবল আক্রোশে মহেশের শরীরটা কেউ যেন বালিশের মতো ফেঁড়ে ফেলেছে। চোখ আর মুখের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে মৃত্যুর মুহূর্তের যন্ত্রণা আর ভয়। দীনুর মৃত্যুটা পেঁতিজ্বলার মাঠে হওয়ায় সেটা ভূতের কাজ বলে মেনে নিলেও গ্রামের মধ্যে মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যের মতো লোকের এমন অবস্থা কে করলো তা কেউ ভেবে কোনো কিনারা করতে পারলো না। পরপর এমন দুটো ভয়ংকর মৃত্যু যেন এক লহমায় বদলে দিল গ্রামের স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ।
প্রথমে দীনু, তারপর মহেশ , দুজন কাজের লোক এবং সর্বক্ষণের সঙ্গীকে এভাবে হারিয়ে ভেতরে ভেতরে কিরকম যেন একা হয়ে পড়লেন প্রফুল্ল মহাজন। কোনো কাজেই যেন আর তাঁর মন বসতে চায় না। দিনের বেশিরভাগ সময়টা একা একাই কাটাতেন। কি করবেন কিছুই যেন বুঝতে পারলেন না। একবার ভাবলেন থানা পুলিশ কোর্ট কাছারী করে খুনিদের ধরবেন। কিন্তু পরক্ষণেই আবার মনে হল এসব করে কোনো লাভ হবে না। ওদের কোনো শত্রু আছে বলে জানতেনও না প্রফুল্ল, আর কোনো মানুষ যে এত নৃসংশ ভাবে কাউকে হত্যা করতে পারে তা ভাবতেই কেমন অবাক লাগে। মহেশ থাকলেও অন্তত দিনের বেলা কাজ কারবার ও অন্যান্য আলোচনায় তার সাথে দিন কাটত, মহেশ চলে যাওয়ার পর সেটাও আর হল না। দিন দিন কিরকম যেন উদাসীন হয়ে যেতে লাগলেন প্রফুল্ল মহাজন।
আর চারুবালা? দীনু আর মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে, দুজনকেই শেষ করে সে আজ অনেকটাই শান্ত। প্রতিশোধের আগুনে দগ্ধ হতে হতে তার আত্মার যে মুক্তি হয়নি। সেটা পূরণ করতেই তো চন্দ্রমুখীর চারুবালা রুপ ধরে প্রফুল্ল মহাজনের বাড়িতে কাজ করতে আসা। লোভী দীনুকে প্রথমে একটু একটু করে নিজের ভালোবাসার ফাঁদে ফেলা, তারপর তাকে তিলে তিলে যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করা। মহেশকেও মরতে হত তবে হয়তো এতটা তাড়াতাড়ি না। চারুবালা যখন দেখল মহেশ তাকে দীনুর খুনের পেছনে দায়ী বলে সন্দেহ করছে, তখন সে ঠিক করলো মহেশকে আর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। তাই সেই রাতে যখন মহেশ বাড়ি থেকে বের হল, দরজা বন্ধ করার নামে তার পিছু নিল চারুবালা, এবং নির্জন স্থান বুঝে নিজের কার্যসিদ্ধি করলো। তবে চন্দ্রমুখীর প্রতিশোধের আগুন তখনো নেভেনি। একটা চিতা যে তখনো জ্বালানো বাকি আছে , যার জন্য মরতে হয়েছিল তার স্বামীকে। ভেঙে গিয়েছিল তার সুখের সংসার।
ঘরে বিছানায় শুয়ে ছিলেন প্রফুল্ল। তাঁর ঘরের মেঝে মোছামুছি করছিল চারুবালা। এমন সময় উবু হয়ে টেবিলের তলা মুছতে গিয়ে টেবিলের সাথে ধাক্কা লাগল আর টেবিলে রাখা জলের ঘটিটা পড়ল চারুবালার গায়ে জল পড়ে ভিজে গেল চারুবালার বুকের আঁচলের কিছুটা আর ঘটিটা মেঝেতে পড়তেই ঝনঝন শব্দে চোখ খুলে তাকালেন প্রফুল্ল মহাজন। চারুবালা তখন বিরক্ত হয়ে বুক থেকে আঁচলটা সরিয়ে সেটা ঝাড়তে ব্যস্ত, প্রফুল্লর চোখ গেল চারুবালার অর্ধোন্মুক্ত ফর্সা সুডৌল বক্ষ যুগলের দিকে। ভিতরে ভিতরে কিরকম একটা আদিম শিহরণ অনুভব করলেন প্রফুল্ল। স্ত্রী অনেক কাল আগেই গত হয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন নিঃসঙ্গ নিস্তেজ বিষাদভরা জীবনে চারুবালার মতো স্বল্প বয়সি, যৌবনে ভরা এমন পরিচারিকার উপস্থিতি প্রফুল্লর হৃদয়ে পুরুষোচিত আদিম বাসনার বারুদে যেন অগ্নিসংযোগ ঘটিয়ে দিল।
চারুবালার সাথে হঠাৎ চোখা চোখি হতেই তিনি উল্টো দিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে নিলেন। তবে সকালের এই ভাবনা কিরকম যেন একটা কল্পনাতীত সুখের রসদ যোগাতে লাগল সারা দিনটা জুড়ে। দিনের ফাঁকে ফাঁকে তিনি দেখতে লাগলেন কর্মব্যস্ত চারুবালাকে। তবে অন্য দৃষ্টিতে। চারুবালা কিছুটা অনুমান করতে পেরেছিল বটে, তবে নিজে থেকে কোনোরকম প্রতিক্রিয়া দেখিনি। সন্ধ্যায় বৈঠকখানায় বসে একা একা এসব কথাই ভাবছিলেন প্রফুল্ল এতদিন তার বাড়িতে কাজ করছে চারুবালা, কিন্তু কোনো দিন সেভাবে তাকে দেখেন নি তিনি, হয়তো প্রয়োজন হয়নি। নিঃসঙ্গ জীবন একটু সুখ যদি চারুবালার কাছে পাওয়া যায় তো মন্দ কি !
চারুবালা এল তার কর্তাবাবুর জন্য তামাক সেজে নিয়ে । তামাক দিয়ে পেছন ঘুরে চলে যাচ্ছিল চারুবালা, হঠাৎ তামাক টিকে সরিয়ে রেখে হাত ধরে চারুবালাকে নিজের পাশে বসালেন প্রফুল্ল। কর্তার এমন আচরণে একটু যেন সংকুচিত হল চারুবালা। প্রফুল্ল বিষাদভরা গলায় বললেন, ( বিষাদভরা গলায় ) “চারুবালা, চারুবালা এতদিন তো এখানে আছো, একাকী জীবনে কখনো আমার কথা মনে হয় নি, কি গো?”
চারুবালা সলজ্জ কন্ঠে বলল, “কি..কি কথা কর্তাবাবু?”
প্রফুল্ল : ( মোহের মতো ) “জীবনের পরপর ধাক্কাগুলো আর নিতে পারছি না চারুবালা। তোমার কোলে মাথা রেখে একটু শান্তি পেতে চাই গো। তুমি সুন্দরী, অনন্যা, মুগ্ধ করেছ আমাকে। এত দিন তো কাজের চাপে নানা সমস্যায় তোমাকে ঘুরে কোনো দিন ভালো করে দেখিও নি। একটু… একটু আদর করো না আমায়। আর পারছি না আমি, কষ্ট হচ্ছে! !”
ধীরে ধীরে তিনি হাত রাখলেন চারুবালার যৌবন ভরা শরীরের ওপর। প্রফুল্লর পুরুষালি স্পর্শে একটু যেন কেঁপে উঠল চারুবালা। কর্তাবাবুর হতাশা ভরা জীবনের ইচ্ছাটুকু বুঝতে পারল চারুবালা। সে চাপা গলায় বলল,
চারুবালা : ( চাঁপা স্বরে ) “আচ্ছা আচ্ছা বাবু এখন রঘুদা রান্না ঘরে আছে। আমি রাতে আবার আসবো খন।”
প্রফুল্ল : ( বাচ্ছা ছেলের মতো আবদার করে ) “আসবে তো, কথা দাও, আসবে তো চারু?”
চারুবালা উঠে দাঁড়িয়ে শাড়ির খুলে পড়া আঁচল ঠিক করতে করতে বলল,
চারুবালা : ( আঁচল ঠিক করতে করতে ) “আসবো !”
ছায়া, আলো, আর এক ফোঁটা অন্ধকার - বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প: ভয়, প্রেম আর অতৃপ্ত আত্মার রহস্যে মোড়া এক অনন্য রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প। ঈশান ও অন্বেষার জীবনে ঘটে যাওয়া এক রাত বদলে দেয় সবকিছু। এখনই পড়ুন এই ভৌতিক প্রেম কাহিনি! সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অধ্যায় ৭: অগ্নিজ্বালায় মোড়ানো শেষরাত্রি
হাড়হিম ভুতের বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে বিছানায় বসে অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগলেন প্রফুল্ল। গ্রাম্য রজনীর হিমশীতল পরিবেশ পরতে পরতে যেন প্রশমিত করছে তাঁর হৃদয়ে জেগে ওঠা কামনার উষ্ণতা। সিগারেটের ধোঁয়ায় এক অলীক স্বপ্ন জগতে বিচরণ করছিলেন প্রফুল্ল। সেখানে থেকে তাঁকে টেনে বাস্তবের মাটিতে এনে নামালো চারুবালার হৃদয়স্পর্শী গলার স্বর,
চারুবালা : ( মিষ্টি গলায়, চাঁপা স্বরে ) “কর্তাবাবু!”
ঘুরে তাকালেন প্রফুল্ল। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চারুবালা। না এ তাঁর বাড়ির কাজের লোক চারুবালা নয়। অনন্য সুন্দরী এই যুবতি আজ তাঁর রাতের সঙ্গী। পাতলা ফিনফিনে শাড়িতে খোলা চুলে দাঁড়িয়ে চারুবালা। শাড়ির স্বচ্ছতায় দৃশ্যমান হয়েছে তার নির্মেদ অটল যৌবনে ভরা শরীরের প্রতিটি খাঁজ। ঘন ঘন নিঃশ্বাসে কামুক ছন্দে ওঠা নামা করছে তার বক্ষযুগল। উদর কেন্দ্রের গোল সুন্দর নাভি আকৃষ্ট করল প্রফুল্লকে। একটা হালকা মিষ্টি সুবাসে ভরে উঠেছে ঘরের বাতাস। ঘরে জ্বলতে থাকা রাতবাতির মায়াবি আলোয় চারুবালার ভরা যৌবন যেন ফেটে পড়ছে। শরীরের প্রতিটা খাঁজে প্রতিফলিত হচ্ছে সেই আলো। কাম বাসনায় পাগল হয়ে উঠলেন প্রফুল্ল। নিজেকে হার স্থির রাখতে পারলেন না প্রফুল্ল। হাতের সিগারেটটা ছুঁড়ে ছাইদানির মধ্যে ফেলে এগিয়ে এলেন চারুবালার সামনে। আজ, এই মুহুর্তে, না তো তিনি চারুবালার কর্তাবাবু, না তো চারুবালা তাঁর বাড়ির কাজের লোক। মনে মনে পরস্পরকে উদ্দাম যৌনতার সম্পর্কে বেঁধে ফেলেছেন প্রফুল্ল। নিজের হাতের স্পর্শে চারুবালার নরম শরীরটাকে উপভোগ করতে করতে কামাতুর গলায় তিনি বললেন,
প্রফুল্ল : ( কামাতুর গলায় ) “চারুবালা, আর পারছি না, আরো কাছে এসো, আরো আরো কাছে। আজ তুমি শুধু আমার, শুধু আমার!”
এই বলে ধাক্কা দিয়ে তিনি চারুবালাকে ফেলে দিলেন নরম গদির বিছানার ওপর, যেখানে তিনি এত গুলো বছর একাকী রাত্রি যাপন করেছেন। তারপর ক্ষুধার্ত পশুর মত ঝাঁপিয়ে পড়লেন চারুবালা শরীরের উপর। সরিয়ে দিলেন তার গায়ের কাপড়, টেনে ছিঁড়ে ফেললেন শরীরের অন্তর্বাস আর নরম বক্ষযুগলের খাঁজে নিজের মুখ ডুবিয়ে দিলেন। কামসুখে পাগল চারুবালা প্রফুল্লর পিঠে দুই হাত দিয়ে ছিঁড়ে ফেলল গায়ের জামা। মৃদু আঁচড় দিতে লাগল তাঁর নগ্ন পিঠের ওপর।
প্রফুল্ল জীবনের যাবতীয় একাকীত্ব, বিষাদ ব্যঞ্জনা সব কিছু আজ যেন এক সাথে দগ্ধ হতে লাগল কামনার আগুনে। তাঁর পুরুষালি দুই হাতের স্পর্শ খেলে বেড়াতে লাগল চারুবালার নগ্ন শরীরে। শীতের রাতে উদ্দাম যৌনতার উষ্ণতা খেলে গেল প্রফুল্লর সারা শরীর জুড়ে। কামসুখে চিৎকার করে উঠে চারুবালা প্রফুল্লকে নীচের দিকে ঠেলতে লাগল। শীতার্ত ঘরের পরিবেশ ধীরে ধীরে মানবগন্ধে মেতে উঠেছে। পিছনের দেওয়ালে রাতবাতির মৃদু আলোয় ছান্দিক গতিতে উঠানামা করতে থাকা চারুবালার বক্ষযুগলের ছায়া পড়েছে। চারুবালার কপাল মুখ গলা বেয়ে নেমে আসা ঘামের বিন্দু । তার হাপড়ের মতো ওঠানামা করতে থাকা উন্মুক্ত দুই স্তনের মাঝে আপন ছন্দে রাস্তা খুঁজে নিয়ে নেমে গেল নীচে আর জমা হল উন্মুক্ত নাভির ভেতর। চারুবালার কামাতুর চিৎকার যেন আরো পাশবিক করে তুলছিল প্রফুল্লর ভেতরে জেগে ওঠা লোভী পুরুষটিকে। এমন সময় একটা জোরে টান অনুভব করলেন তাঁর মাথায়। কেউ যেন তাঁর চুলের মুঠি ধরে টানতে চাইছে। সাথে সাথে তিনি মুখ তুলে সামনে তাকালেন আর দেখলেন কোথায় চারুবালা !
এই মুখ তো চারুবালার নয়, এ তো এ তো চন্দ্রমুখী ! বিদ্যুতের শক খেলে মানুষ যেমন ছিটকে যায়, চন্দ্রমুখীর ভাবনা মাথায় আসতেই বিছানা থেকে ছিটকে দূরে সরে এলেন অর্ধনগ্ন প্রফুল্ল মহাজন। বিছানায় ততক্ষণে উঠে বসেছে নগ্ন চন্দ্রমুখী। এতক্ষণে তিনি যাকে চারুবালা মনে করে উদ্দাম যৌনতা ও কামপিপাসায় মেতে উঠেছিলেন, সে আসলে চন্দ্রমুখী! এটা কি করে সম্ভব, চন্দ্রমুখী তো কয়েক বছর আগেই…..। কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন প্রফুল্ল,
প্রফুল্ল : ( কাঁপা কাঁপা গলায় ) “কে..কে তুমি?”
চন্দ্রমুখী [ প্রেত ] ( খিলখিলিয়ে হেসে উঠবে ) “গরীবকে চিনতে পারছেন না কর্তাবাবু ? আমি যে শিবরামের অভাগী বৌ !”
প্রফুল্ল : ( একটা আতঙ্কের গোঙানি করে বলবে ) “কি…কিন্তু তুমি তো..”
চন্দ্রমুখী [ প্রেত ] “হ্যাঁ মারা গেছি। অনেক আগে। ওই পেঁতিজ্বলার মাঠে , মহেশ বাঁড়ুজ্জ্যে আর দীনু, এভাবেই আমার ইজ্জত শেষ করে আমাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে দিয়েছিল!”
থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে প্রফুল্ল বললেন, “কি.. কি চাও তুমি??”
চন্দ্রমুখী [ প্রেত ] ( রাগে গর্জন করে ) “সুখ দিতে চাই আপনাকে ! জীবনের শেষ সুখ। কালকের ভোর আর দেখতে পাবেন না প্রফুল্ল বাবু! অনেক আগেই আপনাকে মারতে পারতাম, কিন্তু তাতে যে আপনার পাপবোধ টা হত না। এতদিন ধরে আপনার বাড়িতে ছদ্মবেশে এসে কাজ করেছি শুধু আপনাদের মতো মানুষ রুপী জানোয়ার গুলোকে মারব বলে। আজ আমার সেই ইচ্ছা পূরণ হবে। ( চিৎকার করে ) এই চন্দ্রমুখী প্রতিশোধ চায় প্রফুল্ল বাবু, প্রতিশোধ! গরীবকে দিনের পর দিন শোষণ করে যে চামড়া মোটা করেছেন, সেটা ছিঁড়তে যে সময় লাগে প্রফুল্ল বাবু। দীনু আর মহেশকে আমিই মেরেছি, এবার আপনার পালা !”
( অট্ট হাঁসিতে ফেটে পরবে )
প্রফুল্ল : ( আতঙ্কে চিৎকার করে ) — “না আ আ না…”
আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলেন প্রফুল্ল মহাজন। সেই চিৎকারকেও যেন ছাপিয়ে গেল এক হাড় কাঁপানো পৈশাচিক হাসি। ধীরে ধীরে চন্দ্রমুখীর নগ্ন শরীর পরিণত হল পচা গলা একটা দেহে। বীভৎস সেই মূর্তি। শরীরের জায়গায় গলে গলে পড়ছে রক্ত পচা মাংস, হাড় বেড়িয়ে এসেছে। আর সেই শরীরে কিলবিল করছে শতসহস্র পোকার দল।
প্রেতটি ধীরে ধীরে উঠে আসতে লাগল প্রফুল্লর দিকে। একপা একপা করে পিছিয়ে যেতে লাগলেন তিনি। তবে বেশিক্ষণ না, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাঁর। ভয়ে চিৎকার করে বললেন,
প্রফুল্ল : ( আতঙ্কে চিৎকার করে ) “আ.. আমাকে ছেড়ে দাও, মেরো না, মেরো না !”
বিকট হেসে উঠল চন্দ্রমুখীর প্রেত। “গরীবের সংসার জ্বালাতে চেয়েছিলি শয়তান ! তোর খেয়ে বড়ো হওয়া জানোয়ার গুলো একটা মেয়েকে যখন শেষ করলো, তার বিচার করেছিলি তুই ! আরো আরো চিৎকার কর, যদি তোর পাপের বোঝা একটু কমে ! কেউ বাঁচাতে আসবে না তোকে শয়তান। ( দাঁতে দাঁত চেপে ) তোর এই একাকীত্ব জীবন আজ ঘুচিয়ে দেব।”
আর চিৎকার করতে পারলেন না তিনি। কারণ ততক্ষণে ধারালো নখ বিশিষ্ট পচা গলা দুটো হাত চেপে ধরেছে তাঁর গলা। প্রবল আক্রোশে বারকয়েক ঝাঁকিয়ে মড়মড় শব্দে সম্পূর্ণ উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে প্রফুল্লর ঘাড়। আর তারপর প্রবল প্রতিশোধস্পৃহায় বুক চিরে টেনে বের করে এনেছে তাঁর কলিজা, যেখানে এতদিন ধকধক করছিল গরীবের শোষণ করে ফুলে ফেঁপে ওঠা একটা পাপী প্রাণ। চন্দ্রমুখীর প্রতিশোধ আজ পূর্ণ হয়েছে। তার সাথে যে অন্যায় অত্যাচার হয়েছিল, সেই দোষীদের সে আজ নিজের হাতে শাস্তি দিতে পেরেছে। প্রফুল্ল মহাজনের নিথর রক্তাক্ত শরীরের ওপর বসে বিকট এক পৈশাচিক হাসিতে ফেটে পড়ল চন্দ্রমুখী। পাষণ্ড দের রক্তে সিক্ত হয়ে তার আত্মা এবার শান্তি পাবে, মুক্তি পাবে এই পাপ, লোভ, হিংসা ও ছলচাতুরি ভরা দুনিয়া থেকে।
পেঁতিজ্বলার মাঠে সেই রক্তাক্ত হিমেল রাতে বাঁশবনে শোনা গেল শীতার্ত শেয়ালের ডাক। রাতের পেঁচাটা বার কয়েক ডেকে উড়ে গেল তার শিকারের উদ্দেশ্যে। এই মাঠ শুধু আজ ভূতুড়ে নয়, অভিশপ্তও বটে !!