বাংলা রূপকথার ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
ছোট্ট একটি গ্রামে এক নির্জন এলাকায় বিপিন বাবু নামের এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক বসবাস করতেন। তাঁর বাড়িটি ছিল একটি পুরনো কাঠের বাড়ি, যার চারপাশে বড় বড় গাছ আর দূরে এক সরু খাল। গাছের পাতাগুলি সন্ধ্যার হাওয়ায় দুলছিল, যেন রাতের গল্প বলার জন্য তারা প্রস্তুত।
বিপিন বাবু ছিলেন খুবই সরল মানুষ। তিনি সারা দিন বই পড়তেন, পাখিদের খাবার দিতেন, আর গ্রামের বাচ্চাদের মজার গল্প শোনাতেন। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় সবকিছুই ছিল অন্য রকম। তাঁর ছোট্ট রান্নাঘরে বসে তিনি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ভাবছিলেন, “আজ বৃষ্টি নামতে পারে।” এমন সময় তিনি এক অদ্ভুত শব্দ শুনলেন।
কোণ থেকে যেন একটা আলতো কর্কশ শব্দ ভেসে এল। প্রথমে ভেবেছিলেন, হয়তো কোনো পুরনো দরজা খুলে গেছে। কিন্তু না, শব্দটা আবার এলো। তিনি তাকালেন আর অবাক হয়ে দেখলেন, রান্নাঘরের এক কোণে ছোট্ট একটি সাদা ইঁদুর।
ইঁদুরটি অদ্ভুত রকমের। তার সাদা রঙ এতই উজ্জ্বল যে মনে হচ্ছিল, যেন সে কোনো জাদুর রাজ্য থেকে এসেছে। তার ছোট্ট চোখদুটিতে একটি নিরীহ অনুরোধের আভাস। বিপিন বাবু একটু হাসলেন আর বললেন, “তুমি নিশ্চয়ই খাবার খুঁজতে এসেছ। কিন্তু আমার পনির খুবই কম আছে।”
ইঁদুরটি যেন উত্তর দিতে পারে! সে ছোট্ট স্বরে বলল, “দয়া করে, আমাকে কিছু পনির দিন। আমি খুব ক্ষুধার্ত।”
বিপিন বাবুের চমক আরও বেড়ে গেল। তিনি ভ্রু কুঁচকে বললেন, “তুমি কথা বলতে পারো? এ তো সত্যিই অদ্ভুত!”
ইঁদুরটি বিনীতভাবে মাথা নেড়ে বলল, “আমার গল্প অনেক দীর্ঘ। আমি শুধু এক টুকরো পনির চাই। আপনি অনেক ভালো মানুষ, আমি জানি।”
বিপিন বাবু কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। “যদি এই ছোট্ট প্রাণী সত্যিই এত ক্ষুধার্ত হয়, তবে এক টুকরো পনির দেওয়ায় ক্ষতি কী?”
বিপিন বাবু তার টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে একটি ছোট টুকরো পনির কেটে দিলেন। সাদা ছোট্ট ইঁদুরটি আনন্দে নাচতে নাচতে পনিরটি মুখে তুলে নিল। খেতে খেতে সে একবার উঠে দাঁড়াল, আর একবার বসে পড়ল। তার চোখে তখন গভীর সন্তুষ্টির ছাপ।
অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - নতুন দৃষ্টি: "নতুন দৃষ্টি" একটি অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প, যা সংগ্রাম, আত্মবিশ্বাস এবং শান্তির সন্ধানে একজন মহিলার যাত্রা তুলে ধরে। একটি শক্তিশালী মোটিভেশনাল গল্প, যা পাঠকদের অনুপ্রাণিত করবে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
পরিবার ও বন্ধুদের অনুরোধ
বাংলা রূপকথার ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
তবে খাওয়া শেষ হতেই ইঁদুরটি বলল, “আপনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমার স্ত্রী খুবই ক্ষুধার্ত, আর আমার কিছু বন্ধু রয়েছে যারা দিনের পর দিন খাবার ছাড়াই আছে। আপনি যদি একটু সাহায্য করেন, আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ থাকব।”
বিপিন বাবু অবাক হয়ে ইঁদুরটির কথা শুনলেন। প্রথমে একটু দ্বিধা হলেও তিনি নিজেকে বললেন, “আচ্ছা, এ তো একটুখানি পনির। আরেকটু দিলেই বা ক্ষতি কী?” তিনি আরেকটু পনির কেটে দিলেন। কিন্তু এরপরই রান্নাঘরের জানালার ধারে আরও দুটি ইঁদুর এসে উপস্থিত হল।
“আমার নাম মিক্কি,” বলল দ্বিতীয় ইঁদুরটি। “আমি আমার ভাই টিক্কির সঙ্গে এসেছি। আমরা শুনেছি আপনি দয়ালু মানুষ। দয়া করে আমাদেরও কিছু পনির দিন।”
বিপিন বাবু একটু বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন। তিনি বললেন, “তোমরা সবাই কি এখানে পনির খেতে এসেছ?”
তৃতীয় ইঁদুরটি মাথা নাড়ল। “আমাদের গ্রামে খাবারের অভাব হয়েছে। আমরা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে এখানে এসেছি, কারণ শুনেছি আপনি সাহায্য করতে পারেন।”
বিপিন বাবু আর কিছু বললেন না। তিনি আরও কয়েক টুকরো পনির কেটে ইঁদুরগুলোর দিকে বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু যতক্ষণ না তিনি পনির দিতে থাকেন, আরও ইঁদুর আসতেই থাকল।
এবার বাড়ির প্রতিটি কোণ থেকে ছোট ছোট ইঁদুর বেরিয়ে আসতে শুরু করল। কেউ লাল রঙের, কেউ বাদামি, কেউ একেবারে ধূসর। তাদের প্রত্যেকের চোখে যেন একই রকমের ক্ষুধা আর কৃতজ্ঞতার ছাপ। তারা সবাই বিপিন বাবুকে দেখে বলল, “আমাদেরও একটু খাবার দিন।”
বিপিন বাবু গভীরভাবে ভাবলেন। “এভাবে যদি চলতে থাকে, তবে আমার বাড়ির সমস্ত পনিরই তো শেষ হয়ে যাবে!”
তবুও তিনি তাদের কারও আবদার ফেলে দিতে পারলেন না। একের পর এক তিনি পনির কাটতে লাগলেন। রান্নাঘরের কৌটাগুলো একে একে খালি হতে লাগল। ইঁদুরগুলো তাদের ক্ষুধা মিটিয়ে হাসিমুখে বিপিন বাবুকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক পাশে বসে পড়ছিল।
এর মধ্যেই একটি ছোট্ট ইঁদুর, যে সবচেয়ে বেশি সাহসী মনে হচ্ছিল, বলল, “আপনি যদি আমাদের সাহায্য না করতেন, তবে আমরা সবাই ক্ষুধার কারণে অসুস্থ হয়ে যেতাম। আপনি সত্যিই মহান। কিন্তু আমাদের গ্রামের বৃদ্ধ ইঁদুর নেতা খুবই অসুস্থ। সে এক টুকরো বিশেষ জাদুকরী পনির ছাড়া বাঁচতে পারবে না। আপনি কি আমাদের সাহায্য করতে পারবেন?”
জাদুকরী পনিরের সন্ধানে
বাংলা রূপকথার ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
বিপিন বাবু কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “জাদুকরী পনির? এটা কোথায় পাওয়া যাবে?”
ধূসর ইঁদুর মৃদু হেসে বলল, “আমাদের পূর্বপুরুষরা বলত, একটি জাদুকরী গাছ আছে, যেখানে বিশেষ একধরনের পনির জন্মায়। সেই পনির একবার খেলে, আমাদের আর কখনো ক্ষুধা লাগবে না। গাছটি জঙ্গলের সবচেয়ে গভীর অংশে আছে।”
বিপিন বাবু গভীর শ্বাস নিয়ে বললেন, “আচ্ছা, আমি সেই পনির আনতে চেষ্টা করব। তবে তোমরা আমার বাড়ি আর ক্ষতি করবে না।”
ইঁদুরটি সম্মতি জানাল, আর পুরো ইঁদুরের দল এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল। তারা অপেক্ষা করার জন্য প্রস্তুত ছিল, কিন্তু তাদের চোখে ছিল একধরনের অবিশ্বাস।
বিপিন বাবু আবার জঙ্গলের পথে বেরিয়ে পড়লেন। তার মন ভরে ছিল এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতিতে—একদিকে ইঁদুরদের তাড়ানোর তাগিদ, আর অন্যদিকে সেই জাদুকরী গাছের রহস্যময় গল্প।
জঙ্গলের প্রবেশপথে পৌঁছানোর পর তিনি দেখলেন, আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেছে। চারপাশে পাখির ডাক থেমে গেছে, আর বাতাসের শব্দে মনে হচ্ছিল, জঙ্গল তার আগমনের জন্য প্রস্তুত।
“এইবার সব ঠিকঠাক করতে হবে,” তিনি নিজেকে বললেন। “এটাই শেষ সুযোগ। যদি জাদুকরী পনির না পাই, তবে আমার বাড়ি, আমার শান্তি—সবকিছু হারিয়ে যাবে।”
বাইরে এসে তিনি পাথরের বেঞ্চে বসে পড়লেন। ঠান্ডা হাওয়া তাকে খানিকটা শান্ত করল। তবে মনের ভিতরে ঝড় বয়ে চলেছে। “ইঁদুরদের চাহিদা তো মেটাতে হবে। নাহলে তারা বাড়িটা ধ্বংস দেবে, তবে আমি কোথায় থাকব? আর কীভাবেই বা এ সমস্যার সমাধান করব?”
ঠিক তখনই পাশের ঝোপ থেকে মৃদু আওয়াজ শুনতে পেলেন তিনি। “বিপিন বাবু!”
তিনি চমকে উঠে তাকালেন। একটি ছোট্ট খরগোশ ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এল। খরগোশটির গায়ের রঙ ঝকঝকে সাদা, চোখ দুটি বড়ো আর দয়ালু।
“তুমি কে?” বিপিন বাবু জিজ্ঞেস করলেন।
খরগোশটি বলল, “আমার নাম মৃণাল। আমি এই জঙ্গলের বাসিন্দা। তোমার সমস্যার কথা আমি জানি।”
বিপিন বাবু অবাক হয়ে বললেন, “তুমি জানো? তাহলে বলো, আমি কী করব?”
মৃণাল মিষ্টি হেসে বলল, “ইঁদুরদের খুশি করার সহজ উপায় আছে। তাদের যদি জাদুকরী পনির দেওয়া যায়, তবে তারা আর কখনও কিছু চাইবে না।”
“তুমি জানো জাদুকরী পনিরের ব্যাপারে?” বিপিন বাবু বিস্মিত হয়ে বললেন।
“হ্যাঁ,” মৃণাল মাথা নাড়ল। “এই জঙ্গলের গভীরে একটি পুরোনো গুহা আছে। সেখানে এক প্রাচীন পনিরের গাছ আছে। সেই গাছ থেকে পনির ফল ধরে, এবং সেটা খেলে ইঁদুররা চিরতরে তৃপ্ত হয়ে যায়। তবে…”
“তবে কী?” বিপিন বাবু উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
“গুহার পথে বিপদ রয়েছে,” মৃণাল বলল। “তুমি সাহস করে যেতে পারলে, আমি তোমাকে পথ দেখাতে পারি। তবে মনে রেখো, সেই গুহায় প্রবেশের আগে তোমার সত্যিকারের মনের শক্তি প্রয়োজন হবে।”
বিপিন বাবু কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তিনি ভাবলেন, “আমার যদি এই জাদুকরী পনির পেতে হয়, তবে অবশ্যই ঝুঁকি নিতে হবে।”
শেষমেশ তিনি মৃণালের দিকে তাকিয়ে দৃঢ়স্বরে বললেন, “ঠিক আছে। আমি গুহায় যেতে রাজি।”
মৃণাল খুশি হয়ে বলল, “চলো, তবে সময় নষ্ট করা যাবে না। ইঁদুরেরা বাড়ি ধ্বংস করার আগে আমাদের এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।”
বিপিন বাবু আর মৃণাল জঙ্গলের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। গভীর জঙ্গলের অন্ধকারে মৃণালের সাদা গায়ে যেন আলো ঠিকরে পড়ছে। তাদের যাত্রা শুরু হলো এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে।
বাংলা ছোট গল্প - একসাথে পথচলা: "একসাথে পথচলা" একটি হৃদয়স্পর্শী বাংলা ছোট গল্প, যেখানে পবন এবং সুজাতার জীবনের পেশাগত সাফল্য ও পারিবারিক ভালোবাসার অনবদ্য যাত্রা তুলে ধরা হয়েছে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
বিপিন বাবুের সংকট
বাংলা রূপকথার ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
রাত গভীর হচ্ছে। জঙ্গলের পথে অন্ধকার যেন ঢেউ খেলছে। পাতা মচমচ শব্দ করে উঠলে মনে হয়, কেউ বুঝি পিছনে হাঁটছে। বিপিন বাবু একটু ভয় পেলেন, কিন্তু সাহস ধরে এগিয়ে চললেন। কিছু দূর যাওয়ার পর হঠাৎ মাটির ওপর আলোর কিরণ পড়তে দেখলেন। মৃণাল হাসিমুখে বলল, “চলো, আমি তোমাকে সেই গুহার পথ দেখাই।”
মৃণাল আর বিপিন বাবু একসঙ্গে হাঁটতে শুরু করলেন। গুহার দিকে যাওয়ার পথ বেশ দুর্গম, পাথরের মধ্যে সরু গলি আর জঙ্গলের গভীর অন্ধকার। মৃণাল মাঝেমাঝে থেমে পথ চিনিয়ে দিচ্ছিল।
একসময় তারা পৌঁছাল গুহার প্রবেশপথে। কিন্তু গুহার দরজার সামনে বিশাল এক সিংহকল্প মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। মূর্তিটির চোখ যেন জীবন্ত, গা থেকে সোনালি আলো ঠিকরে পড়ছে।
“এটা কী?” বিপিন বাবু হতচকিত হয়ে বললেন।
মৃণাল শান্তভাবে বলল, “এটাই সেই গুহার প্রবেশপথ পাহারা দিচ্ছে। কিন্তু তোমার সত্যিকারের মনের সাহস থাকলে এই মূর্তি তোমাকে পথ ছেড়ে দেবে।”
বিপিন বাবু গভীর শ্বাস নিয়ে এগিয়ে গেলেন। মূর্তিটির দিকে তাকিয়ে তিনি দৃঢ়স্বরে বললেন, “আমি এই গুহায় প্রবেশ করতে চাই। আমি জানি, ইঁদুরদের সমস্যা সমাধান করতেই হবে, এবং সেই জন্যই আমি এখানে এসেছি।”
এক মুহূর্ত চুপচাপ থাকার পর মূর্তিটির চোখের সোনালি আলো ম্লান হয়ে গেল। দরজা খুলে গেল, এবং বিপিন বাবু দেখলেন, গুহার ভেতরে রহস্যময় আলো ছড়িয়ে পড়েছে।
জাদুকরী পনির ও জাদুকরী পাথরের গল্প
বাংলা রূপকথার ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
বিপিনবাবু আর মৃণাল গুহার ভেতরে ঢুকে আশ্চর্য হয়ে গেল। তাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটি কোনো সাধারণ গাছ নয়। গাছের পাতাগুলো ঝকঝক করছে, আর ডালগুলো থেকে ঝুলছে সোনালী রঙের পনির। গাছটির সৌন্দর্য আর এর থেকে ছড়ানো মিষ্টি গন্ধ তাদের মুগ্ধ করল। মৃণাল বিস্মিত হয়ে বলল, “কাকা, এটা কি স্বপ্ন নাকি সত্যি?” বিপিনবাবু হেসে বললেন, “স্বপ্ন নয় মৃণাল, তবে সত্যিই এই জঙ্গলে এমন জাদুকরী জিনিস আছে তা ভাবিনি।”
তারা গাছটির চারপাশে ঘুরে দেখল, আর পনিরের কয়েকটি টুকরো সাবধানে তুলে নিল। পনিরগুলো হাতে নিতেই তারা টের পেল যে এগুলো শুধু সুগন্ধী নয়, বরং গায়ে একটা নরম, উষ্ণ অনুভূতি দিচ্ছে। বিপিনবাবু বললেন, “এই পনির অবশ্যই কিছু বিশেষ গুণসম্পন্ন। চল, ইঁদুর সর্দারের জন্য নিয়ে যাই।”
বাড়ি ফিরে ইঁদুর সর্দার পনির দেখে খুব খুশি হল। সে এক টুকরো পনির খেয়েই বলল, “এই পনির সাধারণ খাবার নয়, এটা আমাদের শক্তি ও জাদুর উৎস। তোমাদের উপকারের প্রতিদান স্বরূপ আমি তোমাদের এই পাথর দিচ্ছি।” সর্দার একটি ঝলমলে পাথর তুলে বিপিনবাবুর হাতে দিল এবং বলল, “এই পাথরটি তোমাকে পশু-পাখিদের ভাষা বোঝার ক্ষমতা দেবে। এটি তোমার জঙ্গলে আরও গভীর বন্ধুত্ব তৈরি করবে।”
বিপিনবাবু পাথরটি হাতে নিয়ে ভেবে দেখলেন, কীভাবে এই উপহার কাজে লাগানো যায়। মৃণালও খুব উত্তেজিত। সে বলল, “বিপিন কাকা, আমরা যদি সত্যি পশুদের সঙ্গে কথা বলতে পারি, তাহলে তো পুরো জঙ্গলটা আমাদের বন্ধু হয়ে যাবে!”
ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য বাংলা ছোট গল্প - স্বপ্নের সন্ধানে: "স্বপ্নের সন্ধানে" একটি হৃদয়স্পর্শী ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য গল্প, যেখানে প্রেম, প্রতিকূলতা ও নতুন জীবন গড়ার সংগ্রাম প্রতিফলিত হয়েছে। এটি একটি মজবুত বাংলা ছোট গল্প যা পাঠকদের মন ছুঁয়ে যায়। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
জঙ্গলে প্রথম অভিজ্ঞতা
বাংলা রূপকথার ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
পরের দিন সকালবেলা, তারা পাথরটি নিয়ে কাছের জঙ্গলে গেল। পাথরটি হাতে ধরে বিপিনবাবু চোখ বন্ধ করে বললেন, “কেউ কি আমাকে শুনতে পাচ্ছ?”
এমন সময় একটা সবুজ তোতা এসে ডালে বসে বলল, “আমরা সবাই শুনতে পাচ্ছি, বিপিনবাবু!”
বিপিনবাবু তো অবাক! মৃণালের চোখে বিস্ময়ের ঝিলিক। তোতা বলল, “তোমরা যে পনির গাছ থেকে পনির এনেছিলে, সেটা জঙ্গলের এক মহামূল্য সম্পদ। ওই পনির খেলে আমরা প্রাণীজগৎ আরও শক্তিশালী হই। তুমি আমাদের বন্ধু, তাই আমরা তোমাকে সাহায্য করব।”
বিপিনবাবু ও মৃণাল বুঝতে পারল, এই পাথর শুধু পশুদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যম নয়, এটি প্রকৃতি ও মানুষকে একসঙ্গে বাঁধার সেতু। তারা জঙ্গলের অন্যান্য প্রাণীদের সঙ্গেও কথা বলল—একটা দারুণ রঙিন ময়ূর, এক দুষ্টু বানর আর এক বুদ্ধিমান হরিণ। সবাই তাদের আন্তরিক স্বাগত জানাল।
একদিন, হরিণ এসে বিপিনবাবুকে বলল, “বিপিনদা, তুমি তো মানুষ; তুমি জঙ্গলের কথা মানুষদের বোঝাতে পারবে। এই জঙ্গল আমাদের বাড়ি, আর মানুষ যদি এখানে গাছ কেটে ফেলে, তাহলে আমরা সবাই বিপদে পড়ব। তুমি আমাদের হয়ে কথা বলো।”
বিপিনবাবু প্রতিজ্ঞা করলেন, তিনি এই জঙ্গল ও এর বাসিন্দাদের রক্ষা করবেন।
বিপিনবাবু ও মৃণালের জঙ্গলের অভিজ্ঞতা শুধু তাদের নিজেদের জন্য নয়, পুরো গ্রামকে বদলে দিল। তারা পনির গাছের গল্প আর জঙ্গলের প্রাণীদের কথা গ্রামের লোকেদের শোনাল। সবাই মিলে ঠিক করল, তারা জঙ্গলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবে।
ইঁদুর সর্দারও মাঝেমাঝে গ্রামে এসে বিপিনবাবুকে নতুন নতুন উপহার দিতে লাগল। আর সেই জাদুকরী পাথর—তা বিপিনবাবুর জীবনের অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠল।
শেষ রাতে, মৃণাল বলল, “বিপিন কাকা, আমাদের এই জঙ্গল অভিযানের গল্প একদিন সবাই জানবে। তুমি দেখো, আমাদের এই কাজ একদিন ইতিহাস হয়ে উঠবে।”
বিপিনবাবু হাসলেন আর বললেন, “গল্প যত জাদুকরীই হোক, তার আসল জাদু হলো মানুষের ভালোবাসা আর প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বই আমাদের সব জয় এনে দেবে।”
আকাশের চাঁদটা ঠিক তখনই ঝলমলে আলো দিয়ে তাদের আশীর্বাদ করল। আর গ্রামটা ঘুমিয়ে পড়ল এক সুরম্য, শান্ত রাতের আলিঙ্গনে।