বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
শ্রেয়া, এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। একদম সাদামাটা, মিশুকে ও কিছুটা অন্তর্মুখী মেয়ে। তবে তার স্বপ্ন ছিল বিশাল—সে বড় হবে, মানুষকে প্রেরণা দেবে, আর তার চারপাশের পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে তুলবে। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সে জানত, এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হতে চলেছে তার জীবনে। তবে সে ভাবতেও পারেনি, কলেজের এই নতুন জীবনে তার জীবনের অজানা রং ফুটে উঠবে।
কলেজের প্রথম দিন, সবাই নতুন। শ্রেয়া নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করছিল। ক্লাসরুমে বসে, প্রথমে ইন্ট্রোডাকশন দিচ্ছিল সবাই। শ্রেয়া-ও নিজের ইনট্রোডাকশন দিল। বাকিরা যখন নিজেদের ইন্ট্রো দিচ্ছিল তখন শ্রেয়ার নজর পড়ল অনিরুদ্ধ নামে এক ছেলের ওপর। তার সুদর্শন চেহারা এবং আত্মবিশ্বাসী মনোভাব এক মুহূর্তে শ্রেয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তার কথা বলার ভঙ্গি, হাসি, সব কিছুতেই এক অদ্ভুত জাদু ছিল। শ্রেয়া, যে সাধারণত নিজেকে আলাদা রাখে, অনিরুদ্ধের সাথে কিছুটা বিভ্রান্ত হলেও মুগ্ধ হয়েছিল।
দু’টো ক্লাস শেষ হওয়ার পর শ্রেয়া কলেজ ক্যান্টিনে এসে বসে, একটা কফি অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। ওই সময় ক্যান্টিনে অনিরুদ্ধ ও আর একজন নতুন মেয়ে একসাথে ক্যান্টিনে ঢোকে। তারা শ্রেয়া যে টেবিলে বসে ছিল সেখানে এসে বসে। সাথে থাকা মেয়েটি শ্রেয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, “হ্যালো! আমি নন্দিনী, বাংলা বিভাগ।” শ্রেয়া ওর সাথে হাত মিলিয়ে বললো, “আমি শ্রেয়া, আমিও বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছি। নন্দিনী অনিরুদ্ধ এর দিকে ইশারা করে বললো, “এ আমার বন্ধু অনিরুদ্ধ, এ-ও বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছে।” অনিরুদ্ধ শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে “হাই” বললো। শ্রেয়া ও তার দিকে তাকিয়ে “হ্যালো” বললো।
ধীরে ধীরে ওদের তিন জনের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। একদিন শ্রেয়া, নন্দিনী ও অনিরুদ্ধ কলেজের শেষে ওরা প্ল্যান করল নন্দিনীর ফ্ল্যাটে পার্টি করার জন্য। নন্দিনী একা ফ্ল্যাটে থাকতো। ওর মা বাবা থাকতো বাইরে। নন্দিনী শ্রেয়া কে বলে, “তুই বাড়িতে বলে দিস, রাতে আমার কাছে থেকে যাবি।” শ্রেয়া এই প্রস্তাবে প্রথমে রাজি হয়নি। শেষে নন্দিনী শ্রেয়ার মাকে ফোন করে শ্রেয়াকে থাকার জন্য রাজি করল। শেষমেশ ঠিক হল সামনের শনিবারে তারা কলেজ শেষ করে নন্দিনীর ফ্ল্যাটে যাবে।
পার্টির প্রস্তুতি
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
শনিবার দিন প্ল্যান মত কলেজ শেষ করে তিনজন একসাথে কলেজ থেকে বেরোলো। শ্রেয়া নন্দিনীর স্কুটিতে উঠে বসল। অনিরুদ্ধ তার মোটরসাইকেলটা বের করে নন্দিনীকে বললো, “তোরা যা আমি একটু পরে আসছি।” নন্দিনী শ্রেয়াকে একটা হেলমেট দিয়ে নিজে আরেকটা হেলমেট পরে নিল। নন্দিনী অনিরুদ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো, “সাবধানে চালাস, আর তাড়াতাড়ি আসিস। আমরা তোর জন্য ওয়েট করব। আর আমি খাবার অর্ডার করে দিচ্ছি।” অনিরুদ্ধ মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেল। শ্রেয়া আর নন্দিনী ও ফ্ল্যাটের দিকে এগিয়ে গেল। ১৫-২০ মিনিট পর শ্রেয়া আর নন্দিনী ফ্ল্যাটে পৌঁছালো।
নন্দিনী ফ্ল্যাটের চবিখুলে ভেতরে ঢুকল ও শ্রেয়াকে ভেতরে আসতে বললো। শ্রেয়া ভেতরে ঢুকে একটু অবাক হল। ফ্ল্যাটটা বেশ সাজানো গোছানো। একটা বেডরুম, কিচেন ও ছোটো একটা হল রুম। নন্দিনী শ্রেয়াকে হাত ধরে বেডরুমে নিয়ে গেল। কলেজের ব্যাগটা রেখে শ্রেয়াকে বলল, “স্নান করবি?” শ্রেয়া বলল, “করে নিলে হয়।” তখন নন্দিনী বলল, তাহলে একটা কাজ কর জিন্স, টপ, ব্রা আর প্যান্টি সব খুলে ওয়াশিং মাশিনে ফেলে দে। আমার একটা নাইটি পরে নে। নন্দিনীর কথা শুনে শ্রেয়া কেমন হকচকিয়ে গেল। তারপর বলল, “সে ঠিক আছে, কিন্তু এখন অনিরুদ্ধ আসবে আমি ব্রা প্যান্টি ভেতরে না পরলে কেমন একটা লাগবে।” তখন নন্দিনী একটা সিল্কের নাইটি, আর নিজের একটা ব্রা, প্যান্টি আর একটা তোয়াল বের করে শ্রেয়াকে দিল। আর বাথরুম এর দিকে ইশারা করলো। শ্রেয়া বার্থরুমে চলে গেল স্নান করতে।
বার্থরুম থেকে বেরিয়ে শ্রেয়া নন্দিনী কে দেখে অবাক হয়ে যায়। নন্দিনী শুধু ব্রা – প্যান্টি পরে খাটে বসে আছে। শ্রেয়া বলল, “কি রে তুই এই ভাবে বসে আছিস কেন?” নন্দিনী বলল, “স্নান করব তো তাই, আর আমি আমার এই ব্রা-এর হুক খুলতে পারছি না। একটু খুলে দে তো!” শ্রেয়া নন্দিনীর ব্রা এর হুক খুলে দিল। নন্দিনী ব্রা-টা খুলে ওটা আর ওর সালোয়ার পাজামা হাতে নিয়ে ওই অবস্থায় বর্থরুমে ঢুকে গেল। ওই সময় দরজায় কলিং বেলের শব্দ পেল ওরা। নন্দিনী ভেতর থেকে বলল, “মনে হয় অনিরুদ্ধ এসেছে, তুই দেখ। আর বেডরুমের দরজাটা দিয়ে যা।” শ্রেয়া দরজায় লাগানো ডিসপ্লে দেখতে পেল অনিরুদ্ধ এসেছে। ওর হাতে একটা ব্যাগ।
শ্রেয়া দরজা খুলে দিল। অনিরুদ্ধ ভেতরে ঢুকে শ্রেয়াকে দেখে একটু অবাক হল। কারন সে শ্রেয়াকে এই অবস্থায় দেখেনি। সে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, “আরেকজন কোথায়?” শ্রেয়া বলল, “স্নান করছে।” অনিরুদ্ধ আর কোনো কথা না বলে সোজা রান্নাঘরের দিকে ব্যাগটা হাতে নিয়ে চলে গেল। ফ্রিজ টা খুলে ব্যাগ থেকে ৬ টা বিয়ায়ের ক্যান বের করে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিল। ব্যাগের ভেতর থেকে আরো কয়েকটা প্যাকেট বের করলো। ওগুলো খাবারের প্যাকেট ছিল, খাবার গুলো প্লেটে সাজিয়ে মাইক্রোওভেনে গরম করতে দিল।
অনিরুদ্ধ এর এইসব কাজকর্ম দেখে শ্রেয়া খুব বুঝতে পারছিল যে এখানে অনিরুদ্ধ প্রথমবার আসছে না, তার প্রায়ই আসা যাওয়া আছে। অনিরুদ্ধ খাবারগুলো গরম করে এক প্লেট ফিসফ্রাই নিয়ে বসার ঘরে চলে এলো। ওই সময় নন্দিনী রুম থেকে বেরিয়ে এলো। নন্দিনী অনিরুদ্ধ দেখে বলল, “আরে সরি আমি খাবার অর্ডার দিতে একদম ভুলে গেছি।” অনিরুদ্ধ বলল আমি সেটা ভালো করে জানতাম বলেই নিজেই নিয়ে চলে এলাম। নন্দিনী বলল, “কটা বিয়ার এনেছিস?” অনিরুদ্ধ বলল, “৬ টা, ২ টা করে সবার।” শ্রেয়া বলে উঠল, “আমি ২ টা খেতে পারব না।” নন্দিনী বলল, “খুব পারবি, আর না পারলে পরে দেখা যাবে। আমি একটু চা বসিয়ে দিই।” অনিরুদ্ধ আর শ্রেয়া মাথা নেড়ে একসাথে সম্মতি দিল।
কিছুক্ষণ এর মধ্যে নন্দিনী চা করে নিয়ে হলঘরে বসল।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - কলকাতার শেষ ট্রেন: কলকাতার ব্যস্ত রেলস্টেশনে শুরু হয় রিয়া ও অমিতের অবিশ্বাস্য প্রেমের গল্প। শেষ ট্রেনের জার্নিতে ভাগ করে নেওয়া স্মৃতি, গোপন আকাঙ্ক্ষা আর অদম্য মিলনের টানে জড়িয়ে পড়ে তারা। এক বছর পর ফিরবে কি অমিত? জানতে পড়ুন এই রোমান্টিক বাংলা গল্প, “কলকাতার শেষ ট্রেন “। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
পার্টি শুরু
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
ওরা তিনজন মিলে চা খেতে খেতে খুব গল্প করছিল। এমন সময় অনিরুদ্ধ হঠাৎ করে শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করে বসল, “তোর বয়ফ্রেন্ড আছে?” শ্রেয়া বলল “না।” অনিরুদ্ধ আবার জিজ্ঞেস করল, “কোনোদিন কেউ তোকে প্রোপোজ করেনি?”
শ্রেয়া – হ্যাঁ, স্কুলে একজন করেছিল।
নন্দিনী – তারপর
শ্রেয়া – আমি না বলে দিই, আর বাবাকে বলে দিছিলাম। আমার বাবা তার বাবাকে জানিয়েছিল।
অনিরুদ্ধ হেঁসে বলল, “এই তোদের মত মেয়েদের জন্য আমার মত ছেলেরা এখনও সিঙ্গেল।” নন্দিনী অনিরুদ্ধ এর দিকে তাকিয়ে বলল, “তোর শুধু গার্লফ্রেন্ড নেই, বাকি সর্বগুণে পরিপূর্ণ।” শ্রেয়া কিছুই বুঝে উঠতে পারল না। এইভাবে গল্প করতে করতে তখন ৮ টা বাজে। নন্দিনী বলে ওঠে, “তাহলে এবার শুরু করা যাক!” অনিরুদ্ধ শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে ওর মত জানতে চায়। শ্রেয়া মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। অনিরুদ্ধ ফ্রিজ থেকে ৩ টা বিয়ারের ক্যান বের করে নিয়ে এলো। নন্দিনী প্লেটে করে কিছু নন ভেজ প্লাটার নিয়ে এল। ওরা একসাথে চিয়াসর করে বিয়ার খেতে শুরু করল।
এমন সময় শ্রেয়ার মায়ের ফোন আসে নন্দিনীর মোবাইলে, “হ্যালো! নন্দিনী শ্রেয়াকে একবার ফোনটা দাও।” নন্দিনী শ্রেয়াকে ফোনটা দিয়ে বললো, “কাকীমা ফোন করেছে, কথা বল।” আর অনিরুদ্ধ এর দিকে ইশারা করে চুপ থাকতে বলল। শ্রেয়া ফোনটা নিয়ে কথা বলে রেখে দিল। অনিরুদ্ধ শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করল, “সব ঠিক আছে?” শ্রেয়া বলল, “হুমম।” বলেই আবার বিয়ার খেতে শুরু করলো।
একটা করে বিয়ার সবার শেষ হওয়ার পর নন্দিনী বলল, “আমি তাহলে মেন কোর্স অর্ডার করি?” অনিরুদ্ধ বলল, “কি করা যায়?” শ্রেয়া বলল, “তন্দুরি রুটি আর ডাল মাখনি।” অনিরুদ্ধ বললো, “একটা চিকেন কড়াই ও এ্যাড করে দে।” নন্দিনী সেই মত অর্ডার প্লেস করে দিল। ১৫-২০ মিনিট পর অর্ডার চলে এলো। আর ততক্ষণে ওদের একটা করে বিয়ার ক্যান শেষ হয়ে গেছে। অনিরুদ্ধ পার্সেল টা নিয়ে দরজা লাগিয়ে নন্দিনী ও শ্রেয়াকে বললো, “একটু হুইস্কি হবে নাকি? বেশি না এক পেগ করে।” শ্রেয়া একটু অবাক হয়ে বলল, “হুইস্কি! তুই আবার আনতে যাবি নাকি?” নন্দিনী বলল, “না না, বাড়িতেই আছে।” কথাটা শেষ হতে না হতে অনিরুদ্ধ ফ্রিজ থেকে একটা দামী হুইস্কির বোতল বের করে নিয়ে এলো। নন্দিনী পাশের আলমারি থেকে ৩ টা হুইস্কি গ্লাস ও তিনটে ডিনার প্লেট বের করল।
হুইস্কি পেগ বানানোর পর, তিনজন রুটি, ডালমাখনি আর চিকেন কারী দিয়ে খেতে শুরু করলো। এইসময় খেতে খেতে শ্রেয়া বলল, “এই মাত্র বিয়ার খেলাম, তারপর হুইস্কি। ককটেল হয়ে যাবে না?” নন্দিনী বলল “না কিছু হবে না, তুই এনজয় কর!” সবার হালকা নেশা হয়ে গিয়েছিলো। অনিরুদ্ধ তাড়াতাড়ি হুইস্কির পেগ টা শেষ করে নিজের জন্য আরেকটা বানালো। শ্রেয়া বলে উঠল, “এত খাস না, বাইক চালিয়ে বাড়ি ফিরবি কি করে?” নন্দিনী ও মাথা নেড়ে শ্রেয়ার কথায় সম্মতি জানালো। অনিরুদ্ধ বলল, “সে আমি ঠিক চলে যাবো। আমার অভ্যেস আছে।” ওরা আর কথা না বাড়িয়ে হুইস্কি আর খাবার প্লেটে মন দিল।
খাওয়া শেষ হতে নন্দিনী বুঝতে পরে যে অনিরুদ্ধ এর নেশা হয়ে গেছে, সে টলছিল। খাবারের প্লেট আর গ্লাসগুলো ওয়াশ বেসিনে রেখে নন্দিনী অনিরুদ্ধকে বলল, “আজ বাইক নিয়ে বাড়ি যাস না। বাইকটা আমাদের পার্কিং এ রেখে দে। তুই একটা ক্যাব করে নে।” অনিরুদ্ধ তখন হাতমুখ ধুয়ে ফ্রিজ থেকে আরেকটা বিয়ারের ক্যান বের করতে যাচ্ছিল। শ্রেয়া বাধা দিয়ে বলল, “আজকে আর না। আবার কোনোদিন খাওয়া যাবে।” নন্দিনী ও শ্রেয়ার কথায় সম্মতি দিল। অবশেষে অনিরুদ্ধ ওদের কথা মেনে নিল। নন্দিনী মোবাইলে একটা ক্যাব বুক করলো। ক্যাবটা ১০ মিনিটের মধ্যে এসে পৌঁছাল। নন্দিনী ও শ্রেয়া অনিরুদ্ধ কে ক্যাবে তুলে দিয়ে রুমে ফিরে এল।
পুরোনো দিনের কথা
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
রুমে ফিরে এসে নন্দিনী ও শ্রেয়া পাশাপাশি সোফায় বসেছিল। দুজনেরই একটু একটু করে নেশা উঠতে শুরু করেছিল। নন্দিনী শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “জানিস শ্রেয়া, আমার জীবনটা কেমন একটা অসমাপ্ত মনে হয়। সব আছে কিন্তু কিছুই নেই। দেখলে মনে হবে আমি কত স্বাধীন, কত আনন্দে আছি। কিন্তু ভেতর থেকে যেন আমি নিজে নিজেকে বেঁধে রেখেছি। জীবনটা যেন এক অতৃপ্ত আত্মার মত ঘুরে বেড়াচ্ছে।” কথাটা শেষ করে সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শ্রেয়া চুপ করে তার কথাগুলো শুনছিল। মনে মনে ভাবলো, নন্দিনী মনে হয় তার পুরোনো কোন প্রেম বিচ্ছেদের কথা ভেবে এই কথা গুলো বলছে।
শ্রেয়া একটু সাহস নিয়ে নন্দিনীকে জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে আমাকে বলতে পারিস। যদি তোর কোনো আপত্তি না থাকে।” নন্দিনী শ্রেয়ার কথা শুনে যেন মনে একটা সান্তনা পেল। সে বলল, “আমি ছোট বেলা থেকেই প্রায় একা একা থাকতাম। আমার মা বাবা আজ পর্যন্ত কোনোদিন আমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেনি। আমি যখন মাধ্যমিক পাশ করে একটা নতুন স্কুলে ভর্তি হলাম তখন আমার আলাপ হয় অনিরুদ্ধ এর সাথে। অনিরুদ্ধ খুব ভালো ছেলে, সহজ সরল প্রাণজ্বল। একদিন অনিরুদ্ধ আমাকে প্রোপোজ করে, তখন আমাদের ক্লাস ইলেভেন এর পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আমিও তার প্রোপোজ একসেপ্ট করি। কিন্তু..”
শ্রেয়া নন্দিনীকে থামিয়ে দিয়ে বলে, “তার মানে তোরা গার্লফ্রেন্ড – বয়ফ্রেন্ড?” নন্দিনী উত্তরে বলে, “ছিলাম, এখন আমরা ভালো বন্ধু।” নন্দিনীর কথা শুনে শ্রেয়ার মাথায় কেমন জট পাকিয়ে যাচ্ছিল। শ্রেয়া আবার বলে উঠলো, “কি ব্যাঙ যে বলছিস, আমার মাথায় কিছুদিন ঢুকছে না।” নন্দিনী ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো, “আরে তুই পুরোটা শোন দিলেতো মাথায় ঢুকবে। দাঁড়া আমি একটা করে বিয়ার নিয়ে আসি।” শ্রেয়া বললো, “১ টা ক্যান নিয়ে আয়। দুজনে ভাগ করে নেবো।”
নন্দিনী আর কোনো কথা না বাড়িয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। ডিপ ফ্রিজ খুলে দেখে ক্যান গুলো বরফে আটকে গেছে। কোনোভাবে ৩ টা ক্যান বের করে দুটোকে ডিপফ্রিজের বাইরে রেখে দিল আর একটা ক্যান নিয়ে রান্নাঘর থেকে একটা বাটিতে কিছু ফ্রাইড – সল্টেড কাজু নিয়ে বসার ঘরে চলে এল। বসার ঘরে এসে টেবিলে ক্যান ও কাজুর বাটিটা রেখে; টিভির নিচের ড্রয়ার থেকে একটা সিগারেটের প্যাকেট ও লাইটার বের করে সোফায় বসলো। শ্রেয়া বলে উঠলো, “তুই তো সব ব্যবস্থা করে রেখেছিস!” নন্দিনী শুধু “হুমম” বলে সিগারেটে আগুন দিল। একটু বিয়ার খেয়ে সিগারেটে ২-৩ টান দিয়ে বলতে শুরু করল।
“আমি অনিরুদ্ধের প্রপোজ একসেপ্ট করার পর কিছুদিন আমরা স্বাভাবিক প্রেমিক প্রেমিকার মত আচরণ করতাম, তবে আমাদের মধ্যে সেইরকম কোনো শারীরিক সম্মন্ধ ছিল না। আসলে আমরা নিজেরা ডিসাইড করে ছিলাম যে, যতক্ষণ না আমরা কলেজে উঠছি আমাদের মধ্যে সেই রকম কোনো সম্পর্ক হবে না। অনিরুদ্ধ তাতে আমাকে সাপোর্ট করেছিল। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আগের ৩-৪ মাস আমরা পড়ার চাপে সেইভাবে কোন যোগাযোগ রাখতে পারিনি। যখন পরীক্ষা শেষ হল আমরা তখন আমরা একদিন সন্ধ্যেয় প্রিন্সেস ঘাটে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আমরা অনেক্ষণ গঙ্গাপাড়ে হাত ধরে হাটছিলাম। তারপর অনিরুদ্ধ আমাকে কিস করতে চায়। আমি তখন কিছুটা অপ্রস্তুত ছিলাম কিন্তু আমি রাজি হই। অনিরুদ্ধ যখন আমাকে কিস করে আমার মনে-শরীরে সেই রকম কোন অনুভূতি হচ্ছিল না। আমার মধ্যে কোন নতুন উত্তেজনা দেখা দিচ্ছিল না। তবে এটা বলা ভুল হবে যে অনিরুদ্ধ আমাকে জোর করে কিস করছিল। সে যাই হোক আমরা সেদিন ওখান থেকে নিজেদের ঘরে ফিরে আসি।”
নন্দিনী যখন এই সব কথা বলছিলো, তখন শ্রেয়া ২-৩ চুমুক বিয়ার খায়। নন্দিনীর হাতের সিগারেটটা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। সে সিগারেটটা নিভিয়ে উঠতে দাঁড়াল। বললো, “দাঁড়া বাথরুম থেকে আসি।” নন্দিনী বাথরুম থেকে আসার পর শ্রেয়াও বাথরুম হয়ে এলো। শ্রেয়া এসে বললো, “তারপর!” নন্দিনী আবার আবার কিছুটা বিয়ার খেয়ে ও আর একটা সিগারেটে ধরিয়ে বলতে শুরু করল।
“তারপর কয়েকদিন কেটে গেছে। আমার প্রতি অনিরুদ্ধের ভালোবাসা আরো গভীর হচ্ছিল। আমি অনিরুদ্ধকে আরো নতুন করে জানতে চাইছি, তাকে আরো বেশি করে ভালোবাসতে চাইছি। কিন্তু ওই প্রেমিকা হিসেবে ভালোবাসতে পারছি না। তারপর একদিন আমি এই ফ্ল্যাটে চলে আসি এখানে কলেজে ভর্তির জন্য। একদিন রাতে আমি আর অনিরুদ্ধ এখানে একসাথে কাটানোর প্ল্যান করি।”
সেদিন রাতে কি হয়েছিল
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
নন্দিনী সিগারেটে কয়েক টান দিয়ে বলতে শুরু করলো, “আমি ফ্ল্যাটে ছিলাম। আমি সেদিন প্রথম বার বিয়ার খাই। অনিরুদ্ধ নিয়ে এসেছিল। আমরা বিয়ার খেয়ে তারপর রাতে খাওয়ার খেয়ে একসাথে শুতে গেলাম। বিয়ার খাওয়ার সময় অনিরুদ্ধ আমাকে জড়িয়ে এক্দুবার কিস করেছিল আমিও তাকে খুব গভীর ভাবে আদর করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারছিলাম না। অনিরুদ্ধের মনে হচ্ছিল আমাদের প্রথমবার বলে আমরা এই আচরণ হচ্ছে। বিছানা পর্যন্ত অনিরুদ্ধ আমাকে কোলে তুলে নিয়ে এসেছিল। আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে অনিরুদ্ধ তার টি-শার্টটা খুলে ফেললো। তারপর আমর ওপরে উঠে অমার কাঁধে, কানের গোড়ায়, মুখে, ঠোঁটে কিস করতে লাগলো।” শ্রেয়া মন দিয়ে কথা গুলো শুনছিল। তখন বিয়ার ও শেষ হয়ে গিয়েছিল। শ্রেয়া নিয়ে ফ্রিজ থেকে আর একটা বিয়ার বের করে নিয়ে এল। নন্দিনী আবার বলতে শুরু করলো।
“অনিরুদ্ধ এক এক করে অমার সব কাপড় খুলে দেয়। আমার মুখ গলা থেকে কিস করতে করতে আমার বুকের খাঁজে কিস করে। আমি তখন চরম উত্তেজনায় ডুবে আছি। কিন্তু কথা যেন একটা শুন্যতা অনুভব করছিলাম। তারপর আমরা যখন উত্তেজনার চরম মুহুত্তে তখন আমাদের সেই চরম মূহুর্ত্ত ঘটলো । আমি অনিরুদ্ধের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পারলাম। আমাদের কারোরই শরীরে কোন কাপড় ছিল না।”
শ্রেয়া এবার বলে উঠলো, “তোর কথা শুনে সবকিছুইতো এখন পর্যন্ত ঠিক লাগছে। তবে একটা প্রশ্ন আমার মাথার মধ্যে ঘুরছে, তুই বার বার ‘শুন্যতা-শুন্যতা’ বলছিস সেটা কি? একটু সহজ করে বল।” নন্দিনী আবার বলতে শুরু করল, “সেদিন রাতের পর আমরা আরো ৩-৪ বার একসাথে থেকেছিলাম। একদিন আমি অনুভব করি যে আমি ঠিক ভাবে অনিরুদ্ধকে ভালোবাসতে পারছিনা। আমার শরীর যেন অন্যকিছু চাইছে। আরো কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম আমার শারীরিক চাহিদা কোন পুরুষ মেটাতে পারবে না। আমি অনেক কষ্টে অনিরুদ্ধকে কথা গুলো বললাম সে প্রথমে বিশ্বাস করতে চাইনি। তারপর সে মেনে নিয়েছিল। আমি অনুরুদ্ধকে কষ্ট দিতে চাইনি আমি সত্যি তাকে চাই কিন্তু একজন ভালো বন্ধু হিসেবে। তারপর কিছুদিন অনিরুদ্ধ আমার সাথে কোন যোগাযোগ রাখেনি। পরে আমি তাকে বুঝিয়ে আমরা বন্ধুদের মত থাকতে শুরু করি। তবে অনিরুদ্ধ আর তারপর থেকে আর কারোর সাথে এখনো পর্যন্ত সম্পর্ক শুরু করেনি।”
কথাটা শেষ করে নন্দিনী অঝোরে কাঁদতে শুরু করলো। শ্রেয়া এইরকম একটা পরিস্তিতির জন্য কিছুটা প্রস্তুত ছিল। সে নাদিনীকে কাছে টেনে নিয়ে চোখের জল মুছিয়ে তাকে সামলে নিতে লাগলো। এমন সময় শ্রেয়ার চোখ পড়লো নন্দিনীর মোবাইল এর নোটিফিকেশন-এ, অনিরুদ্ধ মেসেজ করেছে, “আমি অনেক্ষন আগে পৌঁছে গেছি, কাল সকালে গিয়ে বাইক নিয়ে আসবো।” শ্রেয়া নন্দিনীকে অনিরুদ্ধের মেসেজ-এর কথাটা জানালো। নন্দিনী এখন নিজিকে একটু সামলে নিয়েছে। উঠে গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে এলো। আবার সোফায় বসে একটা সিগারেটে আগুন ধরাতে যাবে, এমন সময় শ্রেয়া নন্দিনীর মুখ থেকে সিগারেটা টেনে ফেলে দিল। নন্দিনীর মুখটা নিজের মুখের কাছে টেনে নিয়ে ওর ঠোঁটে আলতো করে কিস করলো। নন্দিনীও শ্রেয়াকে কাছে টেনে নিয়ে কিস করতে লাগলো। ওরা সোফা থেকে উঠে দুজন দুজনকে জড়িয়ে বেডরুমের দিকে চলে গেলো।
নতুন জীবন
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
বিছানায় দুজন একসাথে শুয়ে পড়লো। দুজনের শরীরে যেন এক নতুন উদ্দামতা, যেন হাজার আগ্নেয়গিরি একসাথে ফেটে যাচ্ছে। দুজন দুজনকে শরীরের বিভিন্ন্য জায়গায় কিস করতে লাগলো। নন্দিনী শ্রেয়ার নাইটিটা খুলে ফেললো, সাথে নিজেরটাও খুলে ফেললো। এখন দুজনে অর্ধ নগ্ন হয়ে একে অপরকে চরম উত্তেজনায় আদর করতে লাগলো। তার কিছুক্ষনের মধ্যে দুজনেই সম্পুর্ন্য নগ্ন হয়ে শারীরিক মিলনের চরম উত্তেজনায় পৌঁছালো। এইভাবে তারা প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট মত নতুন আবেগ ও উত্তেজনায় ডুবে ছিল। যখন তারা দুজনেই শান্ত হল, তখন প্রায় রাত ২ টা বাজে। ওরা ওই নগ্ন অবস্থায় একে অপরকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
পরেরদিন সকালে ওদের ঘুম ভাঙলো অনিরুদ্ধের ফোন পেয়ে। রাতে প্রচুর মদ খাওয়া হয়ে গিয়েছিল তাই ঘুম ভাঙেনি। সকাল তখন ৯ টা বাজে। নন্দিনী উঠে দেখে শ্রেয়া তখনও ঘুমাচ্ছে। ওর মুখটা খুব শান্ত আর সন্তুষ্ট দেখাচ্ছিল। নন্দিনী উঠে নিচে পরে থাকা নাইটিটা তুলে পরে নিলো। তারপর ফোনটা ধরে অনিরুদ্ধের সাথে কথা বলতে লাগলো। অনিরুদ্ধ বললো সে দুপুরে এসে বাইক নিয়ে যাবে। নন্দিনী ফোনটা রেখে বার্থরুমে চলে গেলো। ওয়াশিং-মেশিনটা চালিয়ে দিল। নন্দিনী ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে চলে গেল। কিছুক্ষনের মধ্যে চা বানিয়ে নিয়ে বেডরুমে চলে এলো। বেডরুমে এসে দেখে শ্রেয়া জেগে গেছে কিন্তু ওঠেনি। শ্রেয়ার গায়েও কোনো কাপড় ছিল না। সে কোন ভাবে বিছানার চাদরটা জড়িয়ে উঠে বসলো। শ্রেয়াকে নতুন ভাবে দেখছিল নন্দিনী। ওর মধ্যে একটা সন্তুষ্টি আর পরিপূর্ণতার ভাব দেখাচ্ছিল। নন্দিনী শ্রেয়ার ঠোঁটে একটা হালকা কিস করে ওকে চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিল।
নন্দিনী চা খেতে খেতে শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে! কিছু বলবি?” শ্রেয়া চাদরটা আরও কাছে টেনে নিয়ে চুপ করে বসে থাকলো। ওর চোখ থেকে আনন্দ ঝরে পড়ছিল। নন্দিনী আর কথা না বাড়িয়ে শ্রেয়াকে বললো, “তুই ফ্রেশ হয়ে নে, আমি ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছি। কি খাবি বল?” শ্রেয়া বললো, “কিছু একটা বানা, আমি সব কিছু খাই।” নন্দিনী দুটো খালি চায়ের কাপ নিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল। শ্রেয়া বার্থরুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে ওয়াশিং মেশিন থেকে নিজের কাপড় গুলো বের করে নিল। সে শুধু নন্দিনীর নাইটিটা পড়েছিল। বার্থরুম থেকে বেরিয়ে শ্রেয়া রান্না ঘরে চলে গেল। নন্দিনী অমলেট বানাচ্ছিল। শ্রেয়া নন্দিনীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, “তোর জীবনের শুন্যতা হয়তো আমার জীবনের শূন্যতার জন্য অপেক্ষায় ছিল। কাল রাতের কথা আমার সারা জীবন মনে থেকে যাবে।”
ওরা ব্রেকফাস্ট বানিয়ে বসার ঘরে চলে এল। ব্রেকফাস্ট শেষ করার পর নন্দিনী বললো, “আজকে রাতেও থেকে যা।” শ্রেয়া বললো, “আমি পরে কোনোদিন আসবো। বাড়ি যেতে হবে, মা নাহলে চিন্তা করবে। তুই আমাকে আইরন টা দে আমি আমার জামা কাপড়গুলো ফ্রেশ করে নিই।” নন্দিনী বেডরুমের একটা দিকে ইশারা করে দিল। শ্রেয়া নিজের কাপড়গুলো ফ্রেশ করে নিল। ওয়াসিং-মেশিন’এর ড্রায়ারে ওগুলো শুখিয়ে গিয়েছিল। তারপর সে নিজের জিন্স টপ পরে বসার ঘরে এলো। ব্যাগটা ওখানেই রাখছিল। ব্যাগটা তুলে নন্দিনীর কাছে গিয়ে ওর ঠোঁটে একটা ডিপ কিস করে বললো, “তাহলে এখন আসি, কাল কলেজে দেখা হবে।” নন্দিনী বললো একটু ওয়েট কর এখুনি অনিরুদ্ধ আসবে, ওর সাথে চলে যাবি।” নন্দিনীর কথামতো শ্রেয়া অনিরুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। শ্রেয়া ও নন্দিনী কিছুক্ষন একসাথে কাটালো। একটু পরে অনিরুদ্ধ এলো, সে শ্রেয়াকে নিয়ে বেরিয়ে গেল।
প্রথম প্রেমের শেষ
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
শ্রেয়ার জীবনে যখন প্রথমবার নন্দিনীর সাহসিকতার ছোঁয়া অনুভব হয়, তখন সে ভেবেছিল, এই সম্পর্ক এক অন্যরকম যাত্রায় নিয়ে যাবে তাকে। নন্দিনী যে তাকে বাঁচিয়ে তুলেছিল, তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল এমন এক নির্দিষ্ট সময়ে, যখন শ্রেয়ার নিজেকে একেবারেই হারিয়ে ফেলেছিল। তবে, সম্পর্কের এক অদৃশ্য ভার এবং দূরত্বও তার ভিতরে ঢুকে গিয়েছিল।
নন্দিনী যখন দিন দিন পড়াশোনায় তন্ময় হয়ে পড়েছিল, শ্রেয়ার মনে একটা অস্থিরতা তৈরি হতে থাকে। শুরুতে দুজনের মধ্যে ছিল এক অপরিসীম বন্ধুত্ব, ভালবাসা—এমনকি আত্মবিশ্বাসও। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নন্দিনী ক্রমশই নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তার মাথায় ছিল একটাই লক্ষ্য—এগিয়ে যেতে হবে, জীবনের উচ্চতায় পৌঁছাতে হবে। তার পড়াশোনার চাপ বাড়তে থাকলে, স্বাভাবিকভাবেই সম্পর্কের প্রতি তার মনোভাব কিছুটা কমে যায়।
একদিন শ্রেয়া লক্ষ্য করে, নন্দিনী তার সাথে আগের মতো সময় কাটাচ্ছে না। মাঝে মাঝে, শ্রেয়া তাকে ফোন করলে, নন্দিনী খুব ব্যস্ত থাকে, তার শরীরি ভাষায় যেন এক ধরনের ঠান্ডা ভাব চলে আসে। শ্রেয়ার মনের মধ্যে একটা গুঞ্জন শুরু হয়। সে জানতো না, এই সম্পর্কের পরিণতি কোথায় পৌঁছাবে। নন্দিনী যা করছিল, তা কি শুধুই পড়াশোনার জন্য? নাকি সে সত্যিই তাকে আর আগের মতো অনুভব করছে না?
শ্রেয়ার মনে দ্বিধা দেখা দেয়, কিন্তু কিছু বলার সাহস তার হয় না। একদিন, শ্রেয়া নিজেই ফোন করে নন্দিনীকে জানিয়ে দেয়, “নন্দিনী, আমাকে কিছু সময়ের জন্য তোর থেকে দূরে থাকতে হবে। আমি এখন শুধুমাত্র আমার পড়াশোনা আর ভবিষ্যতের দিকে মনোযোগ দিতে চাই। আমাদের সম্পর্কটা হয়তো আমাদের জন্য এখন উপযুক্ত নয়।”
এই কথাগুলি নন্দিনীর কাছে বিদায়ের মতো মনে হয়। তার মনের অন্দরে এমন একটা শূন্যতা তৈরি হয়, যা সে কোনোভাবে পূর্ণ করতে পারছিল না। সেই মুহূর্তে তার মনে হল, তার জীবনের প্রথম প্রেম যেন একেবারে শেষ হয়ে গেল। নন্দিনী তার জীবনে এমন একটা পরিবর্তন আনল, যা শ্রেয়াকে ভেঙে ফেলল, কিন্তু তাকে সেই মুহূর্তে এতটা দুর্বলও হতে দিল না।
শ্রেয়া যখন বুঝতে পারে, তাকে আর নন্দিনীকে একসাথে দেখা যাবে না, তখন তার সামনে ভবিষ্যতের এক নতুন পথ খুলে যায়। সে জানতো, নন্দিনীর স্মৃতি তার মন থেকে মুছে যাবে না, কিন্তু তাকে এগিয়ে যেতে হবে। নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য, নিজের লক্ষ্যকে সামনে রেখে শ্রেয়া সিদ্ধান্ত নেয়, সে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দেবে। এই সিদ্ধান্ত তার জীবনের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ, একটি নতুন অধ্যায় শুরু করার মত।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - ঈ-মেইলের অসীম প্রান্তরে: এই রোমান্টিক বাংলা গল্পটি দুইজন অধ্যাপক, সোহিনী এবং আদিত্যের প্রেমের গল্প, যাদের পরিচয় ইমেলের মাধ্যমে। সাহিত্য এবং গবেষণা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে তাদের বন্ধুত্ব গভীর হয় এবং বটানিক্যাল গার্ডেনের সবুজের মতো তাদের প্রেম ফুটে ওঠে। এই গল্পটি ইমেলের মাধ্যমে প্রেমের সম্ভাবনা এবং বাস্তব জীবনে বন্ধুত্ব ও প্রেমের সম্পর্কের সৌন্দর্য তুলে ধরে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
নতুন শহর, নতুন সম্পর্ক
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
শ্রেয়া যখন নিউ ইয়র্কে এসে পৌঁছেছিল, তখন তার মনে অনেক আশা ছিল। একদিকে, এক নতুন জীবন শুরু করার উত্তেজনা, আরেকদিকে, পুরনো স্মৃতির ভার যা তাকে শান্ত থাকতে দিচ্ছিল না। নন্দিনীর স্মৃতি এখনও তার সাথে ছিল, তবে সে নিজেকে বিশ্বাস করেছিল, এ শহর তাকে তার পুরনো জীবন থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করবে। নিউ ইয়র্কের বিশালত্ব যেন তার ছোট শহরের ঘেরাটোপ থেকে তাকে মুক্তি দিতে চেয়েছিল।
একদিন, নিউইয়র্কের এক সাহিত্য উৎসবে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে, শ্রেয়ার জীবন আরও এক মোড় নেয়। উৎসবে প্রবেশ করে সে তার এক প্রিয় লেখককে শুনতে পাওয়ার জন্য গিয়েছিল। তবে, কপাল খুলে যায় যখন সে সেখানে দেব নামের এক লেখকের সাথে পরিচিত হয়। দেব ছিল একজন নতুন প্রজন্মের লেখক, যার চিন্তাভাবনা পরিশীলিত এবং বুদ্ধিদীপ্ত। তার কণ্ঠের সুর, তার মিষ্টি কথাবার্তা শ্রেয়াকে যেন এক অজানা স্নিগ্ধতায় ঘিরে ফেলেছিল।
দেবের সাথে প্রথম আলাপেই শ্রেয়া বুঝতে পারল, সে একজন এমন মানুষকে পেয়েছে, যে তার মনের মধ্যে খোলামেলা আলো ফেলতে পারে। দেবের কথা বলার ধরন ছিল এমন, যেন সে শ্রেয়ার অনুভূতিগুলো বুঝতে পারে, তার দুঃখগুলো উপলব্ধি করতে পারে, অথচ কোনো চাপ সৃষ্টি না করে। তার এই গভীর বোঝাপড়া শ্রেয়ার মনকে শান্তি দিতে শুরু করেছিল, এবং এক অদ্ভুত আকর্ষণ তাকে দেবের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল।
নন্দিনীর সাথে সম্পর্কের বিরতির পর শ্রেয়া আর কারোর সাথে কোন সম্পর্ক গড়ে তোলেনি। সে নিজেও জানতো না সে নিজে মেয়েদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট না ছেলেদের প্রতি। কলেজে জীবনের সেই রাতের পরেও শ্রেয়া ও নন্দিনী একসাথে কাটিয়েছে। তারা দুজনেই এই সম্পর্কটাকে খুব উপভোগ করতো। কিন্তু তারা এটা খুব ভালোভাবে বুঝতো যে তাদের সম্পর্ক তাদের নিজেদের পরিবার বা সমাজ কেউই মেনে নেবে না। হয়ত সে কারণে দুজনে নিজেদের অজান্তে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরী করে নিয়েছিল।
কিছুদিন পর, দেব ও শ্রেয়ার সম্পর্কের মধ্যে একটি বন্ধুত্বের সূচনা হয়। তারা একে অপরকে বুঝতে শুরু করল, এবং শ্রেয়া অনুভব করল, এমন কাউকে পেলে হয়তো সে সত্যিই জীবনের কোথাও হারিয়ে যায়নি। তাদের মধ্যে অবিশ্বাস্য এক সম্পর্ক গড়ে উঠছিল, যেখানে দুজনেই একে অপরকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করছিল।
দিনের পর দিন, শ্রেয়া দেবের কাছে আরো অনেক কিছু শিখতে শুরু করল। তবে, এটি ছিল শুধু একটি বন্ধুত্ব, এবং শ্রেয়া জানতো, তার জন্য এটি এতটুকু এক নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা। তার জীবনে এখনো কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না, কিন্তু দেবের প্রতি যে ধরনের টান অনুভব করছিল, তা তার হৃদয়ে এক নতুন ভাবনা জন্ম দিয়েছিল।
তবে, শ্রেয়া কখনোই তার মনের গোপন প্রস্তাবগুলো দেবের কাছে প্রকাশ করতে পারেনি। তার মন তখনো খুব কিছু প্রশ্নে আটকে ছিল। তার কাছে দেব শুধুমাত্র একজন ভালো বন্ধু ছিল, তবে মনের গভীরে শ্রেয়া জানতো, তার সম্পর্ক এই বন্ধুত্বের সীমানা ছাড়িয়ে যাবে কি না, তা শুধুই সময়ই বলে দেবে।
একদিন শ্রেয়া সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করতে গিয়ে শ্রেয়া জানতে পারে যে অনিরুদ্ধ আর নন্দিনী একে অপরকে বিয়ে করছে। শ্রেয়া নন্দিনীর সাথে যোগাযোগ করে। শ্রেয়া, নন্দিনী আর অনিরুদ্ধ সেদিন অনেক্ষন ধরে ফোনে একসাথে কথা বলে। কথাবার্তার মধ্যে শ্রেয়া জানতে পারে যে অনিরুদ্ধ তার আর নন্দিনীর সম্পর্কের ব্যাপারটা জানে ও মেনে নিয়েছে। কিন্তু সমাজ ও পরিবারের কথা চিন্তা করে তারা একে অপরকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওটাই নন্দিনীর কাছে বেস্ট বলে মনে হয়েছিল। অনিরুদ্ধ আর নন্দিনী শ্রেয়াকে তাদের বিয়েতে আসার জন্য খুব অনুরোধ করে। কিন্তু শ্রেয়া সেই অনুরোধ রাখতে পারে না। তবে কথা দেয় কলকাতায় ফিরলে সে নিচ্চয় তাদের সাথে দেখা করবে।
আরেক নতুন জীবনের শুরু
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
দেবের সাথে তার সম্পর্কের গভীরতা প্রতিদিন আরও বাড়ছিল। প্রথমে, যখন তারা একে অপরের সাথে সময় কাটাতো, তখন তা ছিল শুধুই বন্ধুত্বের সূচনা। কিন্তু ধীরে ধীরে, দেবের প্রতি শ্রেয়ার অনুভূতিগুলি বদলে যেতে শুরু করেছিল। দেব ছিল এক অভূতপূর্ব ব্যক্তি—তার মিষ্টি কথা, তার পরিশীলিত চিন্তাভাবনা, তার হাসি—সবই শ্রেয়াকে একটা অদ্ভুত শান্তি এনে দিচ্ছিল। দেবের সাথে থাকলে, তার সমস্ত অতীতের দুঃখ যেন আর অনুভব হতো না। একে অপরকে বুঝে, শ্রেয়া আর দেব একে অপরের জীবনে এমন একটি শক্তিশালী ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যা তাদের সম্পর্ককে পরিপূর্ণ করে তুলেছিল।
তাদের সম্পর্ক সমাজের চোখে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সম্পূর্ণ ছিল। শ্রেয়া আর দেব, একে অপরকে ভালোবাসার চূড়ান্ত প্রতীক হয়ে ওঠে। তারা একসাথে সুখী জীবন কাটানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে চলল। তাদের মধ্যে ছিল না কোনো কপটতা, কোনো মিথ্যা, ছিল শুধু নির্ভেজাল ভালোবাসা। শ্রেয়া অনুভব করছিল, তার জীবন এক নতুন শুরুর দিকে এগিয়ে চলেছে, যেখানে শুধু আনন্দ, শান্তি এবং একে অপরের প্রতি বিশ্বাস থাকবে।
একদিন দেব শ্রেয়াকে বিবাহের প্রস্তাব দিল। শ্রেয়া তা মেনে নিল। পরে দুজনের পরিবার তাতে সম্মত হল। বিবাহের পর শ্রেয়া এবং দেবের জীবন যেন এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছিল। তাদের মধ্যে কোনো অশান্তি, কোনো দূরত্ব ছিল না। সব কিছু ছিল একদম শান্ত, একদম পরিপূর্ণ। দেবের সঙ্গে প্রতিটি দিন যেন শ্রেয়ার জীবনের অমূল্য মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একে অপরকে বোঝার গভীরতা, প্রেমের মিষ্টিতা, এবং পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীলতা—এগুলো তাদের সম্পর্কের মধুর স্বাদকে আরও মধুর করে তুলেছিল। কিন্তু বাস্তব জীবনের সবকিছু কেবল সম্পর্কের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে না, জীবনে নতুন কিছু যোগ হওয়া প্রয়োজন।
শ্রেয়া জানত, তার জীবনে একটা নতুন দায়িত্ব আসতে চলেছে। এই নতুন দায়িত্ব আর কিছু না, একটি নতুন প্রাণ, একটি নতুন জীবন—যা তাদের ভালোবাসার একটি চিরকালীন চিহ্ন হয়ে থাকবে। যখন শ্রেয়া জানতে পারল যে সে মা হতে চলেছে, তখন তার মনে এক ধরনের অদ্ভুত অনুভূতি হলো। প্রথমে একটু ভয়, তারপর আনন্দ—সব কিছু মিলিয়ে তার জীবনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো।
দিনগুলো চলছিল, এবং যখন শেষ পর্যন্ত আনন্দিতার আগমন ঘটল, শ্রেয়ার জীবন একেবারে আলাদা রূপ নিল। ছোট্ট একটি জীবনের আগমন যেন তাদের পরিবারে নতুন আলো ছড়িয়ে দিল। দেব এবং শ্রেয়া দুজনেই খুব খুশি ছিলেন, কিন্তু শ্রেয়া জানত যে এই সুখের মধ্যে এক ধরনের বড় দায়িত্বও চলে এসেছে। মা হওয়া, একজন সন্তানের অভিভাবক হওয়া—এ সব কিছুই তাকে জীবনের এক নতুন দিক থেকে চিন্তা করতে শিখিয়েছিল।
আনন্দিতা ছিল তাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর উপহার। তার ছোট ছোট হাসি, কান্না, এবং ছোট ছোট মুভমেন্টগুলো যেন শ্রেয়া এবং দেবের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জিনিস হয়ে উঠেছিল। শ্রেয়া দেখতে পেত, যখন দেব আনন্দিতাকে কোলে নিয়ে হাসে, তখন তার চোখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি চলে আসে। তার জীবনের সমস্ত কঠিন সময়, সমস্ত কষ্ট যেন এই ছোট্ট জীবনটার মাঝে বিলীন হয়ে যায়।
অতীতের গ্রহণযোগ্যতা
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
শ্রেয়া তার পরিবারকে নিয়ে নিউ ইয়র্কে সুখে কাটছিল। একদিন দেব ও শ্রেয়া দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা চাইছিল অনিন্দিতা বাঙালি ভারতীয় সংস্কৃতিতে বড় হয়ে উঠুক। সেই হিসেবে মত তারা চিরদিনের মত আমেরিকা ছাড়ার ব্যবস্তা নেয়। এবং তারা সেইভাবে প্রস্তুতি শুরু করে। শ্রেয়া ৫ বছর পর দেশে ফিরছে, মনে একটা নতুন অস্তিরতা তৈরী হচ্ছিল। ওরা কলকাতা এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করলো। এয়ারপোর্টের গেটের বাইরে এসে শ্রেয়া একটা দৃশ্য দেখে চমকে যায়, অনিরুদ্ধ আর নন্দিনী হাতে একটা কাটআউট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাতে লেখাছিল, ” দেব ও শ্রেয়া, তোমাদের কলকাতায় স্বাগতম।” নন্দিনীকে এতদিন পর দেখে শ্রেয়ার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। সে অনিদিতাকে দেবের কোলে তুলে দিয়ে ছুটে চলে যায় নন্দিনীর কাছে। তাকে জড়িয়ে ধরে। নন্দিনীও শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে।
দেব ওদের অবস্থা দেখে কিছুটা হতভম্ব হয়ে অনিন্দিতাকে কোলে করে দাঁড়িয়ে ছিল। অনিরুদ্ধ পরিস্হিতিটা একটু সরল করার জন্য দেবের কাছে এগিয়ে এসে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, “হ্যাল্লো! আমি অনিরুদ্ধ। ও আমার স্ত্রী নন্দিনী, আমি নন্দিনী আর শ্রেয়া একসাথে কলেজে পড়তাম।” দেব ও অনিরুদ্ধের সাথে হাত মেলাল। শ্রেয়া ও নন্দিনীর আবেগের গভীরতাকে ওরা দুজনে ছাড়া একমাত্র অনিরুদ্ধ অনুভব করতে পারছিলো। নন্দিনী ও শ্রেয়া নিজেদেরকে সামলে নিল। নন্দিনী দেবের সাথে আলাপ করে অনিন্দিতাকে কোলে তুলে নিল। অনিরুদ্ধ বলল, গাড়ি নিয়ে এসেছি সবাই চলো গাড়িতে বসে কথা হবে। নন্দিনী ও শ্রেয়া অনিদিতাকে নিয়ে গাড়ির মাঝের সিটে বসল। অনিরুদ্ধ ও দেব গাড়িতে লাগেজ গুলো তুলে সামনে বসলো। অনিরুদ্ধ গাড়িটা চালাতে শুরু করলো। ওরা এয়ারপোর্ট ছেড়ে বেরোলো।
শ্রেয়া আজ অনেকটাই বদলে গেছে। গত কয়েক বছরে তার জীবনে যেসব পরিবর্তন ঘটেছে, তার প্রতিটি মুহূর্ত যেন একটি মূল্যবান শিক্ষা নিয়ে এসেছে। দেবের সঙ্গে তার সংসার, আনন্দিতার আগমন—এসব সব কিছুই তাকে এক নতুন দৃষ্টিকোণ দিয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে শিক্ষা তার জীবনে এসেছে, তা হলো অতীতকে গ্রহণ করার ক্ষমতা।
শ্রেয়া এবার নিন্দিনীকে জিজ্ঞেস করলো, “তোদেরকে আমাদের আসার খবর কে দিল?” নন্দিনী বললো আমি আর অনিরুদ্ধ সেদিন তোর বাড়ি গেছিলাম। ওখানেই অনিরুদ্ধের কিছু কাজ ছিল তাই মনে করলাম একবার কাকু কাকিমার সাথে দেখা করে আসি। কাকিমার কাছে থেকে খবর পেলাম তোদের আসার ব্যাপারে। তার পর আমি আর ও তোদের সারপ্রাইস দেবো বলে প্ল্যান করলাম।” শ্রেয়া শুধু একটু হাঁসলো আর কিছু বললো না। দেব অনিরুদ্ধকে তার ঘরের রাস্তা বলে দিচ্ছিল। গাড়িটি গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চললো। প্রায় ৪৫ মিনিট পরে গাড়িটি দেবের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। বাড়ির দরজায় দেবের বাবা-মা অপেক্ষা করছিল। ওরা সবাই গাড়ি থেকে নামলো। দেব তার মা-বাবার সাথে নন্দিনী ও অনিরুদ্ধের পরিচয় করিয়ে দিল। লাগেজ গুলো গাড়ি থেকে নামিয়ে ঘরের ভেতরে রাখলো। দেব অনিরুদ্ধ ও নন্দিনীকে ভেতরে ডাকল। ওদেরকে দুপুরে লাঞ্চ করে যাওয়ার জন্য খুব অনুরোধ করছিল। কিন্তু অনিরুদ্ধ ও নন্দিনী শুধু চা খেয়ে বেরিয়ে পড়ল। বললো খুব তাড়াতাড়ি একদিন ওরা গেট টুগেটার এর প্ল্যানিং করবে।
শ্রেয়া এখন অতীতের সঙ্গে তর্ক করছে না, বিক্ষোভ দেখাচ্ছে না। বরং, সে বুঝতে শিখেছে, অতীতের সেই কষ্ট, ভুল, বিচ্ছেদ সব কিছুই তাকে আজকের শ্রেয়া বানিয়েছে। যেদিন নন্দিনীর ভালোবাসা বিচ্ছেদ হয়েছিল, সেদিন সে ভেবেছিল যে তার জীবনের অন্ধকারে হারিয়ে যাবে। কিন্তু সেই অন্ধকারও তাকে আলোর দিকে নিয়ে এসেছে। এই প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি সম্পর্কেই ছিল তার জীবনের গভীরতা, জীবনের সঠিক পথের খোঁজ। দেবের সঙ্গে তার সম্পর্ক এক আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। সে বুঝতে পেরেছিল, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর সহানুভূতি ছাড়া কোনো সম্পর্ক টিকে থাকতে পারে না। দেব তাকে বুঝিয়েছে যে ভালোবাসা কখনোই কোনও শর্ত ছাড়া হয় না, বরং এটি একে অপরকে পরিপূর্ণ করে তোলে।
তিন চার দিন পর ওরা একটা রেস্তোরা তে প্ল্যান করে। নন্দিনী শ্রেয়ার সাথে কথা বলে করেছিল। ওরা প্ল্যান মতো সেদিন সন্ধ্যায় রেস্তোরাতে সবাই উপস্তিত হয়। দেব ও শ্রেয়া অনিন্দিতাকে নিয়ে আসেনি সেদিন। টেবিলে বসে অর্ডার দেওয়ার পর ওয়েটার সবার জন্য বিয়ার আর ফিশ প্লাটার নিয়ে এলো। ওরা চিয়ার্স করে খেতে শুরু করলো। কোন এক সন্ধ্যেতে শ্রেয়ার জীবনে এই বিয়ারের চুমুকের থেকে শুরু হয়েছিল এক নতুন জীবন। আজ এক আলাদা জীবন। যেমন সময় রেস্তোরার একজন সংগীত শিল্পী গিটার হাতে নিয়ে গাইতে শুরু করে,
“গোপন কথাটি রবে না গোপনে,
উঠিল ফুটিয়া নীরব নয়নে।
না না না, রবে না গোপনে॥
বিভল হাসিতে
বাজিল বাঁশিতে,
স্ফুরিল অধরে নিভৃত স্বপনে–
না না না, রবে না গোপনে॥”
নন্দিনী ও শ্রেয়া গানের সাথে সাথে গুন্ গুন্ করতে থাকে আর দুজনের চোখ যেন একে ওপরের সাথে অনেক জমানো কথা বলতে থাকে। সেটা কেবল ওরাই শুনতে পাচ্ছিলো, আর একজন ওদের চোখের ভাষা বুঝতে পারছিল , অনিরুদ্ধ।