রচনা - মৌমিতা || গল্পপাঠ - নীল || শব্দগ্রহণ ও আবহে - মিহান'স প্রোডাকশন হাউস || পরিচালনায় - বুবাই ও মৌমিতা
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
“১৫ আগস্ট”_ এই দিনটি আমাদের ভারতের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে একটি অবিস্মরণীয় দিন। দীর্ঘ দুশো বছর ধরে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অদম্য লড়াই এর পর এই দিন সস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল ভারতবাসী। দিনটা ছিল ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট, সময়টা ছিল রাত ১২ টা, তখন সারা ভারত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। দেশমায়ের বীর সন্তানদের খুশির অশ্রু বৃষ্টি রুপে অনবরত ঝরে চলেছিল প্রকৃতির বুকে। দিল্লিতে গান্ধীজির অনুপস্থিতে এবং জহরলাল নেহেরু, ড: রাজেন্দ্র প্রসাদ ও লর্ড মাউন্টব্যাটেন এর উপস্থিতিতে মধ্যরাতে সবার অলক্ষ্যে স্বাধীন হয় দেশ।।
নিজের আত্মীয় স্বজন, পরিবার , বন্ধুবান্ধব সকলকে ছেড়ে যারা ঘরছাড়া হয়েছিলেন দেশের স্বার্থে, তাদের কতটুকুই বা দিতে পেরেছি আমরা? কতটুকুই বা মনে রেখেছি ভাগৎসিং , রাজগুরু ও শহীদ ক্ষুদিরাম কে? ক্ষুদিরাম বসু যখন শহীদ হয়ে তখন তার বয়স ছিল ,১৮ বছর ৮ মাস ৮ দিন। যে বয়সে আমরা এখণকার ছেলে – মেয়েরা নিজের বাবার হোটেলে বসে খাই, নিজেদের স্বার্থ আর বিলাসিতা ছাড়া কিছুই বুঝি না সেই বয়সে তিনি দেশের স্বার্থে ঘর ছাড়েন। সত্যেন্দ্র বসুর নেতৃত্বে তখন দিকে দিকে ইংরেজ বিরোধী ষড়যন্ত্র মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। স্থির হয়, বড়লাটের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হবে। এই দুঃসাহসিক কাজের জন্যে সবার আগে এগিয়ে আসেন এই ১৮ বছরের ছেলেটি। আর তার সহযোগী হন প্রফুল্ল চাকী। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওনারা অসফল হন এবং ক্ষুদিরাম এর ফাঁসির শুনানি হয়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার সেই গান , ” একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি” , আজও প্রত্যেক ভারতবাসীর হৃদয়ে শিহরণ জাগায়।
কল্পবিজ্ঞান-এর বাংলা ছোট গল্প - অনন্তের সন্ধানে: কল্পবিজ্ঞান গল্প 'অনন্তের সন্ধানে' - অরিত্রর নতুন মহাবিশ্বে যাত্রা। বাংলা ছোট গল্পে রহস্য, ত্যাগ ও সম্ভাবনার এক অনন্য মিশ্রণ। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অনেকে মনে করেন, দেশকে স্বাধীন দেখার অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করার জন্য ক্ষুদিরাম পুনর্জন্ম নেন নেতাজি রুপে। তাই তার গানের শেষ স্তবকে তিনি দেশমাতার উদ্দেশ্যে বলেন ,” দশ মাস দশ দিন পরে জন্ম নেবো মাসীর ঘরে, মাগো…/ তখন যদি না চিনতে পারিস দেখবি গলায় ফাঁসি।”
অনেকে এও মনে করেন যে গলায় ফাঁসির দাগ থাকার কারণেই নাকি নেতাজি সবসময় কলার তোলা জামা পরতেন। যদিও এই ধারণা সম্পূর্ণ কাল্পনিক, এর সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। হ্যাঁ, তবে এ কথা সত্য যে, নেতাজি ক্ষুদিরাম এর দেখানো পথেই অগ্রসর হয়ে ছিলেন। তার বুকেও ছিল ক্ষুদিরামের মত অসীম সাহস আর অপরিসীম দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং সীমাহীন জেদ। তবে তিনি শুধু স্বপ্নই দেখেননি, সেটা সত্যি করার জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন। শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন আমদের স্বাধীন করার জন্য। অথচ কী অদ্ভূত ব্যাপার দেখুন,ওনার শেষ কৃত্য করা তো দূরের কথা , ওনার শেষ দিনটা যে কবে হয়েছিলো, সেই খোঁজই আমরা রাখি নি।
এখনকার সবচেয়ে ট্রেন্ডিং বিষয় হলো, নেতাজির মৃত্যু রহস্য! যা ভেদ করা এখনও সম্ভব হয়নি,আর কখনো হবেও না। অনেকের মতে, নেতাজি ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট জাপানে যাওয়ার পথে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করেন। আবার অনেকে বলেন, দেশকে স্বাধীন করার জন্য তিনি যে দেশের কাছে সাহায্য চাইতে গেছিলেন সেই দেশেই তিনি বন্দী হন এবং সেখানে কারাগারেই তার মৃত্যু হয়। কেউ কেউ জানান যে, নেতাজি ইচ্ছা করেই আর দেশে ফিরে আসেননি। আবার কেউ বলেন যে, নেতাজীকে দেশে প্রবেশ করতে দেওয়াই হয়নি। অনেকের মতে, উত্তরপ্রদেশের ফারিজাবাদের অন্তর্গত রামভবনে থাকা সন্ন্যাসী গুমনামি বাবার সাথে নেতাজির অনেক মিল পাওয়া যায়। এই ব্যাপারে মতভেদের জেরে তিনটি কমিশন সরকার বসান। তার মধ্যে দুটি কমিশন জানান যে, বিমান দুর্ঘটনাতেই নেতাজির মৃত্যু হয় এবং জাপানের মন্দিরে তার অস্থিভস্ম রাখা হয়েছিল।
অথচ, সবথেকে আশ্চর্য্যজনক বিষয় হলো, জাপানের সরকার বার বার জানিয়েছেন যে, ওই তারিখে তো দূরের কথা,তার এক সপ্তাহ আগে বা পরে কোনো বিমান দুর্ঘটনাই নাকি ওখানে ঘটেনি। এমনকি ,১৯৪৬ সালের ২৬ শে জুলাই নেতাজি জহরলাল নেহেরু কে চিঠি লিখে জানান যে, তিনি রাশিয়াতে আছেন। ১৯৪৯ সালের ফাইল থেকে জানা যায় যে, নেতাজি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাননি। ১৯৭৬ সালে লর্ড মাউনটব্যাটেন এর সাথে তিনি ও তার নাতি” সূর্য বসু” দেখা করতে যান। ১৯৪৫ সালের জাপানের সমস্ত মৃত ব্যক্তির তালিকায়,নেতাজির নামই নাকি নেই। তার মৃত্যু বা অন্তর্ধানের কোনো ফাইল যেখানে তৈরিই হয় নি সেখানে কি করে প্রমাণিত হয় যে, তিনি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন?
আসলে নেতাজীকে অনেক আগেই মেরে ফেলা হয়েছিল। তাই তো প্রমানের সমস্ত নথি থাকা সত্বেও, আমরা কোনো নথিই দেখতে পাইনি? সেই নথিতে স্পষ্ট প্রমানিত যে, নেতাজি তখনও বেঁচে ছিলেন। সব জানা সত্বেও আমরা মুখ বন্ধ করে সবটা মেনে নিয়েছি আর সকল ভারতবাসী কেও মানতে বাধ্য করেছি যে, তিনি মারা গিয়েছিলেন।
অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - বসন্ত সিংহ রায়: বসন্ত সিংহ রায়ের মোটিভেশনাল জীবন গল্প পড়ুন—একজন ব্যাঙ্কার থেকে পর্বতারোহী হওয়ার অসাধারণ যাত্রা। এই বাংলা ছোট গল্প সাহস ও সংকল্পের শিক্ষা দেয়। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
লর্ড মাউনটব্যাটেন এর সাথে পূর্বে চুক্তি হয়েছিল যে, ১৯৪৮ সালে আমাদের দেশকে তারা মুক্ত করবেন। অথচ, নেতাজির অন্তর্ধানের পরই বদলে যায় পূর্বের চুক্তি। ভারতের সাথে নতুন চুক্তি হয় যে, ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন করা হবে, কিন্তু তার পরেই ভারতকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হবে। কিন্তু নেতাজির স্বপ্ন ছিল “অখণ্ড ভারত”। অথচ, আমরা তার কোনো স্বপ্নই পূরণ করতে পারি নি। কিংবা বলা যেতে পারে ,করার চেষ্টাও করি নি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ভারতের স্বাধীনতা পত্রে সই করে জানান যে, ১৯৪২ সালে গান্ধীজির আন্দোলনের পরেও আমরা ভারত ছাড়তে রাজি হইনি, কিন্তু ১৯৪৩ সালে গঠিত,আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতা সুভাষচন্দ্র বসুর কারণে আমরা বাধ্য হয়েছি দেশ ছাড়তে। তা সত্বেও তার ছবি কোনো নোট এ ছাপানোর অনুমতি দেওয়া হয় নি? নেতাজিকে দেশে ঢুকতে না দেওয়ার জন্য কেনো দিল্লির লালকেল্লাতে বিরাট সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছিলো তখন? যেনো আমরা দিন গুনছিলাম তার মৃত্যু সংবাদের আশায়। তাই তার চলে যাওয়ার পর দেশবাসীকে জানানো হয় যে, কোনো সরকারি দপ্তরেই নেতাজির ছবি রাখা যাবে না। এমনকি, তার নিজের হাতে তৈরি করা আজাদ হিন্দ ফৌজের কোনো সদস্যকেই নেতাজির অন্তর্ধানের পর আর কাজে রাখা হয় নি।
হত্যা করেছি আমরা! তবে শুধু নেতাজীকে নয়। হত্যা করেছি আমাদের আদর্শ কে , আমাদের বিবেক কে l প্রতি বছর ২৩ জানুয়ারিতে প্রত্যেক পাড়ার অলিতে গলিতে, নেতাজির ছবিতে মালা পড়ানো ছাড়া আর কতটুকুই বা মনে রেখেছি আমরা নেতাজীকে? কতটুকুই বা প্রতিবাদ করেছি তার প্রতি অন্যায়ের? কেনো তার জীবিত থাকার সব প্রমাণ থাকা সত্বেও আমরা সেগুলো দেখতে চাই নি? কেনো প্রশ্ন করি নি আমরা ,যে মানুষটা দেশ স্বাধীন করলো কেনো তাকে দেশে ঢুকতে দেওয়া হলো না? কেনো জানতে চাই নি আমরা যে নেতাজিকে মৃত ঘোষণা করার পরেও কেনো দীর্ঘ ২০ বছর বসু পরিবারের ওপর কড়া নজরদারি রাখা হয়েছিল। চলুন না সবাই একজোট হয়ে শুধু একবার প্রশ্ন ছুড়ে দি তাদের দিকে। কোথায় গেলো আমাদের যোদ্ধা? কিই বা পরিণতি হয়েছিল তার? যিনি আমাদের মায়ের পায়ের শিকল মুক্ত করলেন, মায়ের মুখে একফোঁটা হাসি এনে দিলেন, আমরা কেনো তাকেই দূরে সরিয়ে দিলাম? কেনো ফিরতে দিলাম না তাকে তার মায়ের কাছে। মা যে আজও পথ চেয়ে বসে আছেন তার বীর সন্তানের।এই বুঝি ঘরে ফিরবে সে__
ছোটদের রূপকথার গল্প - লীলার জাদু: লীলার জাদুকরী বনযাত্রার এই ছোটদের গল্প ও রূপকথার গল্প রহস্য, চ্যালেঞ্জ ও মূল্যবান শিক্ষায় ভরা। বন্ধুত্ব ও সাহসের গল্প পড়তে ডুব দাও! সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
কিছু প্রমাণের উপর ভিত্তি করে বলা হয় যে, উত্তরপ্রদেশের ভগবানজি বা গুমনামী বাবাই ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ১৯৭৫ সালে তিনি তার অনুগামীদের জানান যে, তিনি আরও ৪৬ বছর বাঁচবেন এবং দেশের জন্য আরও অনেক কাজ করা তার বাকি রয়েছে। এরপর ১৯৮৫ সালে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু তার কবরের ফলকে কোনো সাল লেখা ছিল না। তাই কিছু বিশেষজ্ঞের ধারণা যে, তিনি মারা যাননি এবং তিনি হয়তো আবার অন্তর্হিত হয়েছেন। তার কথা অনুযায়ী, তিনি হয়েতো ৪৬ বছর আরও বেঁচেছিলেন ।
তাই আমাদের বিশ্বাস, নেতাজি আবার ফিরবেন নতুন রুপে। সব অপমানের বদলা নিতে তিনি ফিরবেন, দেশের মানুষের মনের অন্ধকার কাটাতে তিনি ফিরবেন। তিনি অমর, তার মৃত্যু হতে পারে না। তিনি বেঁচে আছেন, সারা ভারতবাসীর হৃদয়ে। তিনি বেঁচে আছেন দেশমাতার কোলে। যত্ন করে রেখেছেন মা তাকে, একদিন আবার ফিরিয়ে আনবেন বলে। সেদিন সব ধোঁয়াশা কেটে যাবে। মুছে যাবে সব মিথ্যা, সামনে আসবে নতুন সত্য। ভোরের ধোঁয়াশা কাটিয়ে আবার ফিরবেন নেতাজি, নতুন রোদ ঝলমলে সকালের মতন।