"রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প 'পুনঃবিচ্ছেদ' হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বিচ্ছেদের মধ্যেও প্রেমের অনুভূতি, নস্টালজিয়া আর জীবনের এক অন্যরকম গল্প। শিখা ও রাহুলের আবেগঘন মুহূর্তে প্রেম নতুন রূপ পায়।"

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » পুনঃবিচ্ছেদ

পুনঃবিচ্ছেদ

রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প 'পুনঃবিচ্ছেদ' হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বিচ্ছেদের মধ্যেও প্রেমের অনুভূতি, নস্টালজিয়া আর জীবনের এক অন্যরকম গল্প। শিখা ও রাহুলের আবেগঘন মুহূর্তে প্রেম নতুন রূপ পায়।

আমাদের WA চ্যানেল জয়েন করুন

এই মাসের সেরা রোমান্টিক ছোট গল্প, পড়ুন ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন – পুনঃবিচ্ছেদ

রচনা - সুরজিৎ রায়   ||   গল্প পাঠে - বুবাই সাহা, মৌমিতা সাহা , কৌশিক সাহা, রুভীনা, শুভ ধর  ||   সংগীত - সৌরভ মণ্ডল   ||   সমগ্র কারিগরি ও নির্মাণ - মিহান'স প্রোডাকশন হাউস

অধ্যায় ১: মন্দিরে পুনর্মিলন

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সদর শহর তমলুক। তমলুকের বর্গভীমা মন্দির। বিশাল চত্বরে বসন্তের নরম রোদ ঝলমল করছে। পাখির কলকাকলি আর ভক্তদের মৃদু গুঞ্জন মিলে এক ধরণের প্রশান্তিময় পরিবেশ তৈরি করেছে। রাহুল মন্দিরের দাওয়ায় বসে আছে, পাশে ছয় বছরের ছেলে শান্তভ মন্দিরের মেঝেতে নিজের মতো করে খেলায় মগ্ন। রাহুলের চোখ চলে গেল মন্দিরের কারুকার্যময় গম্বুজে। সময় যেন এখানে থমকে থাকে।

এই মন্দির রাহুলের কাছে শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি তার জীবনের এক অনন্য অধ্যায়ের সাক্ষী। ২০০৯ সালের এক শরতের বিকেলে, এই মন্দির প্রাঙ্গণেই প্রথমবার শিখার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। শিখা তখন সদ্য কলেজে ভর্তি হয়েছে, তার চোখে স্বপ্নের ঝিলিক। রাহুল তখন পোস্ট গ্রাজুয়েশনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, কিন্তু শিখার অনাবিল হাসি যেন তাকে এক নিমেষে অন্য জগতে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। মন্দিরের পুকুরের সিঁড়িতে বসে তারা প্রথম কথা বলেছিল। কথার বিষয় ছিল সাধারণ—পড়াশোনা, স্বপ্ন, আর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা। কিন্তু সেই সাধারণ কথাগুলির মধ্যেই তারা একে অপরের মধ্যে খুঁজে পেয়েছিল এক গভীর সংযোগ।

আজ, পনেরো বছর পর, ১৪’ই ফেব্রুয়ারী, সেই একই জায়গায় বসে রাহুল মনে মনে সেই মুহূর্তগুলোকে আবার ছুঁয়ে দেখতে চেষ্টা করছিল। মন্দিরের ঘণ্টার শব্দে যেন শিখার সেই উচ্ছল হাসি এখনও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। সময় বদলেছে, কিন্তু এই মন্দির রাহুলের হৃদয়ে শিখার উপস্থিতিকে চিরস্থায়ী করে রেখেছে।

“বাবা! আমার বলটা কোথায়?” হঠাৎ শান্তভের চিৎকারে রাহুল বাস্তবে ফিরে এল।

“এখানেই কোথাও দেখো। তুমি তো নিজের খেলনা নিজেই হারাও,” হালকা হেসে বলল রাহুল।

শান্তভ মেঝের দিকে ঝুঁকে বল খুঁজতে খুঁজতে প্রায় পিছলে যাচ্ছিল। এমন সময় একজন মহিলা এসে শান্তভকে ধরে ফেলল।

“এই বাবা….! একটু হলেই তুমি পড়ে যেতে। তোমার মা কোথায়?” মহিলার গলায় মায়াভরা সুর।

শান্তভ অবাক হয়ে মহিলার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি’তো বাবার সাথে এসেছি।”

এই কথাগুলো শুনে রাহুল ওদের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু মহিলাটিকে দেখতে পেয়ে তার পা যেন মাটিতে গেঁথে গেল। মুহূর্তেই মনে হলো সময় যেন ১৫ বছর পিছিয়ে গেছে। সেই মুখ—চেনা, প্রাণবন্ত, আর এক অদ্ভুত মাধুর্যে ভরা। সেই মায়াভরা চোখ, যেগুলো একসময় তার সমস্ত দুঃখ ভুলিয়ে দিতে পারত। যদিও মুখে একটু বয়সের ছাপ পড়েছে, তবু সেই পরিচিত আলোর ঝলক সে স্পষ্ট দেখতে পেল। রাহুলের গলা শুকিয়ে এলো, হৃদয় ছলকে উঠল পুরনো স্মৃতিতে। কত কথা, কত অনুভূতি, কত না বলা ব্যথা যেন মুহূর্তে ফিরে এলো। চিনে নিতে একটুও ভুল হলো না—এ যে শিখা!

নিজের অজান্তেই রাহুলের মুখ থেকে শব্দটা বেরিয়ে এলো, “শিখা!”

মহিলাটি নিজের নাম পরিচিত কিন্তু পুরোনো কন্ঠে শুনে থমকে গেল। চোখের গভীরে এক ঝলক বিস্ময়, আবেগ, আর একচিলতে অতীতের স্মৃতি ফুটে উঠল। তারপর ধীরে ধীরে বলল, “রাহুল!” শব্দটি তার কণ্ঠে যেন সময়ের নদীতে ভেসে আসা একটি হারানো স্মৃতির মতো শোনাল। রাহুলের নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে তার গলা কেঁপে উঠল। রাহুলের মনে হলো, সেই ছোট্ট একটুকরো শব্দে তার পুরো অতীত জীবনের গল্প লুকিয়ে আছে। শিখার কণ্ঠে সেই পুরনো মায়ার আভাস এখনও স্পষ্ট। মনে হলো, যেন হারিয়ে যাওয়া একটা গানের সুর ফিরে এসেছে তার জীবনে, যেখানে প্রতিটি সুর শুধুই প্রেমের অনুভূতির।

মুহূর্তে দুজনের মধ্যকার সেই ১৫ বছরের দূরত্ব যেন মুছে গেল। সময়ের কাঁটা যেন থেমে গিয়ে তাদের হারানো স্মৃতিগুলোকে নতুন রঙে আঁকতে শুরু করল। শিখার চোখে সেই একই উজ্জ্বলতা, অথচ তার পাশে ছোট্ট মেয়েটি নতুন বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।

মেয়েটি শিখার হাত ধরে টানতে টানতে বলল, “মা! তাড়াতাড়ি চলো, পুজো শেষ হয়ে যাবে।”

শিখা মৃদু হেসে রাহুলের দিকে তাকিয়ে বলল, “একটু দাঁড়াও। আমি পুজো দিয়ে আসছি।” 

রাহুলের গলা শুকিয়ে গেল। সে কিছু বলতে চাইল, কিন্তু শব্দগুলো গলার কাছে আটকে গেল। শুধু তাকিয়ে রইল শিখার দিকে। তার মনে হলো, এই মুহূর্ত যেন কোনো পুরনো স্বপ্নের পুনরাবৃত্তি। মন্দিরের শঙ্খধ্বনি আর ঘন্টাধ্বনির মাঝে তার হৃদয়ের আঘাত যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। রাহুল অনুভব করল, তার জীবনের সেই পুরনো অধ্যায়ের পর্দা এখনও পুরোপুরি নামেনি। শিখার চলে যাওয়া মানে শুধু দূরত্ব নয়, একটুকরো অতীতকে আবার হারিয়ে ফেলার মতো বেদনাও।

শিখা মন্দিরের ভেতরে চলে যেতেই রাহুল দাওয়ার এক কোণে বসে পড়ল। তার মনে হতে লাগল, যেন সময় আবার পেছনে ফিরে গেছে। ২০০৯ সালের সেই দিনগুলো, শিখার খিলখিলিয়ে হাসি, তার প্রাণোচ্ছল চোখের চাউনিতে লুকিয়ে থাকা স্বপ্ন—সব কিছু যেন মনের পর্দায় জীবন্ত হয়ে উঠল। মন্দিরের এই কোণে বসেই তো শিখা তাকে প্রথমবার বলেছিল, “তোমার সাথে কথা বলতে আমার এত…. ভালো লাগে!” রাহুলের মনে হলো, শিখার সেই হাসিটাই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল আলো।

অধ্যায় ২: প্রথম দেখা

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

কলেজের শেষ দিনগুলো ছিল রাহুলের জীবনের এক অদ্ভুত সময়। ভবিষ্যতের চিন্তা, বন্ধুত্বের আবেগ, আর জীবনের প্রতি এক ধরণের নতুন কৌতূহল সব মিলিয়ে সময়টা ছিল অনিশ্চিত, কিন্তু আনন্দে ভরা। এক বিকেলে কাঁথির প্রভাত কুমার কলেজ ক্যাম্পাসের আঙিনায় রাহুল তার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল। আকাশে সূর্য ডুবছিল, আর তার সাথে শেষ হয়ে যাচ্ছিল তাদের কলেজ জীবন।

শ্রেয়া হাসতে হাসতে বলল, “ওই রাহুল, তুই একদম চুপচাপ কেন?”

রাহুল হেসে উত্তর দিল, “চুপচাপ বলছিস কেন? একটা মেয়ের মোবাইল নম্বর দে–না, প্রেম করব।” তার কথায় হাসির রোল উঠল।

“তোর মতো অলসের প্রেমিক হওয়া কোনো মেয়ের কপালে লেখা নেই!” শ্রেয়া ঠাট্টা করে বলল।

রাহুল হাল ছেড়ে দেওয়ার ছেলে ছিল না। সে অনেকটা জোর করেই বলল, “তুই দিচ্ছিস কি দিচ্ছিস না?”

একটু ভেবে শ্রেয়া বলল, “ঠিক আছে, আমার পিসির মেয়ে শিখার নম্বর দেব। খুব ভালো মেয়ে। কিন্তু তুই ওকে বিরক্ত করবি না। আর হ্যাঁ, আমার নাম ভুলেও বলিস না। নাহলে মায়ের কাছে শুনতে হবে।” তারপর সে রাহুলকে শিখার মোবাইল নম্বর দিল।

সেদিন রাতে রাহুলের হাতের তালু ঘামে ভিজে ছিল, তবু সাহস করে সে নম্বরটা ডায়াল করল। ফোনটা রিং হওয়ার প্রতিটা মুহূর্ত তার হৃদয়জোড়া উত্তেজনায় থরথর করছিল। হঠাৎ ওপারে শিখার নরম মিষ্টি গলা শোনা গেল, “হ্যালো, কে বলছেন?” সেই এক শব্দ যেন রাহুলের পুরো পৃথিবী বদলে দিল। গলার স্বরটায় ছিল এক অদ্ভুত টান, যা তাকে আরও গভীর করে শিখার দিকে টেনে নিল।

রাহুল খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “আমি রাহুল। তোমার নম্বরটা শ্রেয়া’র কাছ থেকে পেয়েছি।”

শিখার গলায় একটু অবাক হওয়া আর কৌতূহল ঝরে পড়ল। তারপর বলল, “ও আচ্ছা। কীভাবে সাহায্য করতে পারি?”

রাহুল একটু নার্ভাস হয়ে বলল, “তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাই। কথা বলতে ভালো লাগবে।”

শিখা একটু হেসে বলল, “বন্ধুত্ব? তাও অজানা কারও সঙ্গে? আচ্ছা, দেখি চেষ্টা করা যায় কিনা।”

সেদিন কথাবার্তা খুব বেশি না এগোলেও, সেই প্রথম কথোপকথন যেন তাদের জীবনে নতুন সূর্যোদয়ের সূচনা করেছিল। প্রতিদিন রাতে ফোনে একে অপরের কণ্ঠ শোনার অপেক্ষা যেন তাদের দিন কাটানোর একমাত্র কারণ হয়ে উঠল। শিখার হাসি রাহুলের দিনকে আলোকিত করত, আর রাহুলের গভীর চিন্তাভাবনা শিখার মনের ওপর এক অদ্ভুত প্রভাব ফেলত। রাত জেগে কথা বলার সময়, তারা নিজেদের প্রিয় গান, সিনেমা, বই আর জীবনের স্বপ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করত।  

একদিন শিখা বলল, “তুমি জানো রাহুল, আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো আমাদের বর্গভীমা মন্দির।” রাহুল কিছু না বলে হাসল, কিন্তু তার মনের গভীরে শিখার প্রতিটি কথা যেন এক নতুন অধ্যায় লিখে চলেছিল।  

তারা দুজনেই বুঝতে পারছিল, এই সম্পর্কটা বন্ধুত্বের গণ্ডি ছাড়িয়ে আরও গভীর কিছুতে পরিণত হচ্ছে। একে অপরের সঙ্গে সময় কাটানোর ইচ্ছা, ছোট ছোট বিষয় শেয়ার করার আনন্দ, আর পরস্পরের দুঃখ-কষ্টে সান্ত্বনা দেওয়ার মধ্যে তারা নিজেদের জীবনের একটি নতুন গল্প বুনে চলেছিল। 

প্রায় এক মাস পর রাহুল একদিন সাহস করে বলল, “শিখা, তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই। কোথাও আসবে?”

শিখা একটু ভেবে বলল, “তমলুকের বর্গভীমা মন্দিরে আসতে পারবে? আমার বাড়ির কাছে। মন্দিরের চত্বরে বসে কথা বলা যাবে।”

সেদিন সকালবেলা রাহুল বাসে করে কাঁথি থেকে নিমতৌড়ি, তারপর ওখান থেকে আরেকটা বাসে করে কলেজ মোড়, সেখান থেকে রিকশা করে তমলুক বার্গভীমা মন্দিরে পৌছালো। মন্দিরের চত্বরে দাঁড়িয়ে প্রায় পনেরো মিনিট মত অপেক্ষা করছিল আর তার মনে কেমন একটা অজানা উত্তেজনা কাজ করছিল। হঠাৎই সে দেখল, সিঁড়ি ভেঙে শিখা উপরে উঠে আসছে। মৃদু রৌদ্রের আলোয় শাড়িতে মোড়া শিখার চেহারাটা যেন এক অপূর্ব আভা ছড়িয়ে দিচ্ছিল। তার কপালের ছোট্ট লাল টিপ, কোমরে আঁচল জড়ানো ভঙ্গি, আর সাদামাটা অথচ পরিপূর্ণ সাজ যেন রাহুলের চোখে এক অনন্য মাধুর্যের ছবি আঁকল।  

শিখার চোখগুলো ছিল গভীর আর মায়াভরা, যেন তার মধ্যে একটা অদ্ভুত আকর্ষণ লুকিয়ে আছে। যখন শিখা হাসল, সেই হাসির ঝিলিক রাহুলের হৃদয়কে কাঁপিয়ে দিল। সে যেন নিজের চারপাশের সবকিছু ভুলে শুধু শিখার মৃদু পায়ে ধীরে ধীরে উপরে ওঠার দৃশ্য দেখতেই মগ্ন হয়ে গেল।  

রাহুলের মনে হলো, এতদিনের অচেনা কণ্ঠের পেছনে থাকা মানুষটা যেন এক জীবন্ত কবিতা। শিখার প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি ছিল এমন, যেন প্রকৃতি নিজে তার সৃষ্টিকে গর্বের সঙ্গে প্রকাশ করছে। রাহুল বুঝতে পারল, সে শুধুমাত্র শিখার সৌন্দর্যে মোহিত হয়নি, বরং শিখার ব্যক্তিত্বের সেই গভীরতায় ডুবে গেছে, যা সে এতদিন কেবল কল্পনা করেছিল।

শিখা সিঁড়ির শেষ ধাপটা পার করে যখন রাহুলের সামনে এসে দাঁড়াল, রাহুলের মনে হলো যেন সময় থেমে গেছে। তার মনে ভেসে উঠল, “এটাই সেই মানুষ, যার জন্য আমি এতটা পথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছি। এই মুহূর্তটা যেন আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত।” শিখার দিকে তাকিয়ে রাহুলের চোখে ছিল অব্যক্ত ভালোবাসার এক নিঃশব্দ ভাষা।

রাহুল মুচকি হেসে বলল, “তোমার ছবি দেখেছি। কিন্তু সামনা-সামনি তোমাকে আরও ভালো লাগছে।” শিখা লজ্জা পেয়ে উত্তর দিল, “তুমিও কিন্তু ছবির থেকেও সুন্দর।” রাহুল একটু হাসি মিশিয়ে বলল, “ছবি আর বাস্তবের মধ্যে পার্থক্য তো থাকবেই। কিন্তু তোমার এই হাসি, সেটা তো ছবিতে ধরা পড়ে না।” শিখা চোখ নামিয়ে মৃদু হেসে বলল, “তুমি এত মিষ্টি কথা বলতে শিখলে?”  

রাহুল লাজুক ভঙ্গিতে বলল, “মিষ্টি কথা তো এমনিতেই চলে আসে। কিন্তু তোমার সামনে একটু নার্ভাস লাগে।” শিখা মজা করে বলল, “আচ্ছা? কেন? আমি কি এত ভয়ংকর?” রাহুল গম্ভীর মুখে বলল, “ভয়ংকর না, কিন্তু ঝড়ের মতো।” শিখা হাসি চাপতে না পেরে বলল, “ঝড় হলে তো সবাই পালিয়ে যায়, তুমি পালাওনি কেন?” রাহুল গভীর চোখে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল, “ঝড় দেখার সাহস হয়তো আমার আছে।”  

তাদের হাসির শব্দ মন্দির চত্বরকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলল। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর শিখা আবার জিজ্ঞেস করল, “তুমি এত চুপচাপ কেন?” রাহুল হালকা হেসে উত্তর দিল, “কী বলব? তোমার মতো মানুষের সামনে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলি।” শিখা হেসে বলল, “আরে, আমি তো খুব সাধারণ। এত ঘাবড়ানোর কিছু নেই।” রাহুল গম্ভীরভাবে বলল, “সাধারণ তুমি, কিন্তু তোমার এই সরলতাই অসাধারণ।”  

এরপর তারা মন্দিরের দাওয়ায় বসে নিজেদের স্বপ্নের কথা বলতে শুরু করল। শিখা জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কী করতে চাও জীবনে?” রাহুল ভাবতে ভাবতে বলল, “পড়া শেষ করব। একটা ভালো চাকরি চাই। নিজের মতো কিছু করতে চাই।” শিখা উৎসাহভরা চোখে বলল, “তাহলে তো আমাদের পরিকল্পনা মিলে গেল।” রাহুল একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তোমার স্বপ্ন কী?” শিখা মুচকি হেসে বলল, “আমি চাই এমন একটা জীবন যেখানে কাজের পাশাপাশি ভালোবাসা থাকবে। মানুষকে সাহায্য করতে পারব, আর সঙ্গে একজন সঙ্গী থাকবে, যে আমার পাশে থাকবে।” রাহুল মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে বলল, “তুমি এত সুন্দর করে স্বপ্ন দেখতে জানো!”  

সন্ধ্যার আকাশে লাল সূর্যের আভা ধীরে ধীরে ম্লান হচ্ছিল। মন্দিরের চারপাশে আলো-আঁধারির খেলা। শিখা আর রাহুল মন্দিরের পুকুরের সিঁড়িতে বসে সময়টা যেন আঁকড়ে ধরতে চাইছিল। কিন্তু সময় কারও জন্য থেমে থাকে না। শিখা নরম গলায় বলল, “আমাকে এখন যেতে হবে। মা চিন্তা করবে।” রাহুল একটু থেমে ম্লান হাসি দিয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমাকেও ফিরতে হবে। কিন্তু আজকের দিনটা যেন খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেল।”  

শিখা তাকিয়ে রইল রাহুলের দিকে। তার চোখে একটা অদ্ভুত আবেগ। বলল, “সব সময় তো আর সময় থেমে থাকতে পারে না, তাই না? তবে আজকের এই মুহূর্তগুলো আমি সারাজীবন মনে রাখব।” রাহুল মৃদু হাসল, “আমিও।”  

ওরা মন্দিরের সিঁড়ি থেকে উঠে দাঁড়াল। শিখা নিচে নেমে দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করল। রাহুল পেছন থেকে একবার ডেকে বলল, “শিখা!” শিখা ফিরে তাকাল। রাহুল একটু ইতস্তত করে বলল, “আমার জন্য পরে একটু বেশি সময় রাখবে তো?” শিখা হেসে বলল, “তুমি তো আমার সব সময় নিয়েই নিয়েছ, রাহুল।”  

বিদায় নেওয়ার মুহূর্তটা যেন তাদের দুজনের জন্যই খুব ভারী হয়ে উঠেছিল। শিখা তার শাড়িটা ঠিক করে নিল। বিদায় বলতে বলতে শিখা বলল, “আজকের দিনটা আমার জীবনের একটা সুন্দর অধ্যায় হয়ে থাকবে।”  

রাহুল সেদিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলল, “আমারও।” তাদের হাসি, তাদের চোখের গভীরতা, সবকিছুতেই যেন ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতির ছোঁয়া লুকিয়ে ছিল। তারপর তারা এক বুক আবেগ আর অপেক্ষা নিয়ে চলে গেল।

অধ্যায় ৩: প্রেমের গভীরতা

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

প্রথম দেখার সেই মুহূর্ত যেন শিখা আর রাহুলের জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। তারপর তারা আরও ২-৩ বার দেখা করল। কখনো মন্দিরের সিঁড়িতে বসে রোদ ঝলমলে দুপুর কাটত, কখনো শহরের কোনও ছোট্ট কফি শপে এক কাপ কফি আর একরাশ গল্প। রাহুল কাঁথিতে থাকতো, আর শিখা থাকতো তমলুকে তাই তাদের মধ্যে বেশি দেখা হত না।

কিন্তু তাদের প্রতিটি সাক্ষাৎ যেন এক একটা ছোট্ট উৎসবের মতো ছিল। রাহুল যখন শিখার পাশে থাকত, তার সমস্ত দুশ্চিন্তা মুছে যেত। শিখার সেই প্রাণোচ্ছল হাসি, চোখের গভীরতা, আর তার প্রতিটি ছোট ছোট অঙ্গভঙ্গি রাহুলের মনে যেন অদ্ভুত এক প্রশান্তি নিয়ে আসত। শিখার জন্য ছোটখাটো চকলেট বা তার পছন্দের ফুল নিয়ে আসত রাহুল। শিখার চোখের উজ্জ্বলতা দেখে সে বুঝে যেত, এটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার। 

অন্যদিকে, রাহুলের সঙ্গে সময় কাটানো শিখার কাছে ছিল এক আশ্রয়ের মতো। রাহুলের কথায়, তার সহজ-সরলতায় শিখা এক ধরনের নিরাপত্তা খুঁজে পেত। প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি দিন তাদের বন্ধনকে আরও গভীর করে তুলছিল। 

তাদের দেখা হওয়ার সেই ছোট ছোট জায়গাগুলো যেন ভালোবাসার নিঃশব্দ সাক্ষী হয়ে উঠেছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিখা আর রাহুল বুঝতে পারল, তাদের জীবনের প্রতিটি রঙ, প্রতিটি স্বপ্নে একে অপরের ছায়া আছে। ভালোবাসা তাদের মাঝে শুধু মিষ্টি অনুভূতি নয়, বরং একে অপরের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠছিল।

একদিন বিকেলে তারা রূপনারায়ণ নদীর পাড়ে দেখা করল। রূপনারায়ণ নদীর পাড়ে বিকেলের সেই মুহূর্ত ছিল যেন কোনো সিনেমার দৃশ্য। চারিদিক নিস্তব্ধতায় ডুবে ছিল, নদীর মৃদু ঢেউ আর পাখিদের কিচিরমিচির ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। আকাশে সূর্য হেলে পড়েছে, তার মৃদু আলোর ঝলক নদীর জলে প্রতিফলিত হচ্ছিল। শিখা হালকা হলুদ রঙের চুড়িদার পরেছিল, আর তার খোলা চুলে বাতাস খেলা করছিল। রাহুল তাকে দেখে বারবার মুগ্ধ হচ্ছিল। 

দুজনেই একটানা হাত ধরে বসেছিল। শিখার হাতটা রাহুলের হাতের মধ্যে রাখা, আর মাঝে মাঝে শিখা নদীর দিকে তাকিয়ে হালকা হাসি দিচ্ছিল। রাহুল সেই হাসির দিকে তাকিয়ে অনুভব করছিল, এই হাসি তার জীবনের সমস্ত ব্যথা ভুলিয়ে দিতে পারে। এক সময়, রাহুল হালকা ভাবে শিখার কাঁধে হাত রেখে তাকে কাছে টেনে নিল। শিখা প্রথমে একটু চমকে উঠলেও তার চেহারায় কোনো আপত্তি ছিল না। রাহুল তার ঠোঁট শিখার কানের কাছে নিয়ে এসে মৃদু স্বরে বলল, “তুমি জানো, তুমি যখন আমার পাশে থাকো, আমার মনে হয় জীবনটা স্বপ্নের মতো সুন্দর।” 

এই কথা বলার পর রাহুল ধীরে ধীরে শিখার কানের গোড়ায় আলতো করে একটা চুমু খেল। শিখার সারা শরীর শিহরিত হয়ে উঠল। সে সামান্য পিছিয়ে বলল, “দুষ্টু! কেউ দেখে ফেলবে।” তার গলায় একদিকে ছিল লাজুকতা, আর অন্যদিকে ছিল অদ্ভুত এক আবেগ। রাহুল শিখাকে তার আরো কাছে টেনে বলল, “যদি দেখেও ফেলে, আমি গর্ব করে বলব, এটা আমার ভালোবাসা।” 

রাহুল তার মুখটা শিখার মুখের কাছে নিয়ে এল। তার চোখে চোখ রাখা শিখার পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠল। ধীরে ধীরে রাহুল তার ঠোঁট শিখার ঠোঁটের সঙ্গে মিলিয়ে দিল। প্রথম স্পর্শেই যেন পৃথিবীটা থমকে গেল। শিখার মনে হচ্ছিল, যেন সবকিছু হারিয়ে গেছে, শুধু রাহুলের এই স্পর্শই তার কাছে সবকিছু। 

রাহুলের চুমু ছিল গভীর, তাতে ভালোবাসার প্রতিটা আবেগ জড়িয়ে ছিল। শিখাও তার সমস্ত হৃদয় দিয়ে সেই চুমুতে সাড়া দিল। চারিদিকে নদীর হাওয়া বইছিল, আর সেই মুহূর্তে তাদের ভালোবাসার গভীরতা যেন নদীর মতোই বিস্তৃত হয়ে উঠছিল। 

তারা দুজনেই সময়ের অস্তিত্ব ভুলে গিয়েছিল। প্রায় দশ-পনেরো মিনিট ধরে তারা একে অপরকে অনুভব করছিল। রাহুল শিখাকে আলতো করে বলল, “তুমি জানো, এই মুহূর্তটা আমি সারাজীবন মনে রাখব।” শিখার চোখে জল চলে এসেছিল। সে মৃদু গলায় বলল, “আমিও, রাহুল। এই ভালোবাসার অনুভূতি কোনোদিন ভুলব না।” 

সেদিনের সেই প্রথম চুমু তাদের সম্পর্কের গভীরতাকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। তারা বুঝতে পারল, এই ভালোবাসা কেবল মুহূর্তের আবেগ নয়, বরং জীবনের এক স্থায়ী বন্ধন।

তারপর কয়েকমাস কেটে গেছে। ওদের মধ্যে নিয়মিত ফোনে কথা হত। একদিন শিখা বলল, “আমি আমার একজন বান্ধবীর বিয়ের রিপেপসন অ্যাটেন্ট করতে কলকাতা যাচ্ছি, তুমি আসতে পারবে?” রাহুল উত্তরে বলল, “তোমার বান্ধবীর বিয়ের রিপেপসনে আমি কি করবো? তারপর আমি ওকে চিনি না, এইভাবে কারোর বিয়ের রিপেপসনে যাওয়া যায় নাকি?” শিখা বলল, “সে আমাদের ব্যাপারটা জানে। ও নিজেই বলেছে, তোমাকে নিয়ে আসার জন্য।” রাহুল একটু ভেবে, “হুমম” বলে ফোনটা কেটে দিল।

নির্ধারিত দিনে ওরা রিপেপসন হলে পৌঁছাল। হাওড়ায় একটা হোটেলে রিপেপসন ছিল। শিখা ওর বান্ধবী মিমির সাথে রাহুলের পরিচয় করালো। ওরা নবদম্পতিকে উপহার দিল। সেদিন লাল শাড়িতে শিখাকে যেন একটু বেশি আকর্ষণীয় দেখাচ্ছিল। রাহুল যেন আবার নতুন করে ওর প্রেমে পড়তে চাইছিল। রাহুলকে একটা কালো পাঞ্জাবিতে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল। তারা রাত ৯ টার দিকে ডিনার শেষ করে রিপেপসন থেকে বেরিয়ে এল।

রিপেপসন হলটা হাওড়ার দিঘা বাসস্ট্যান্ড থেকে পায়ে হাঁটা দুরত্বে ছিল। ওরা হেঁটে বাস্ট্যান্ড এর দিকে আসছিল, একটু দুর এসে শিখা বলল, “রাহুল, আজ বাড়ি ফেরা কি খুব দরকার। এমনিতেই তোমার কাঁথি পৌঁছাতে রাত ১-২ বেজে যাবে, আমারও প্রায় ১২ টা বেজে যাবে। তারপর আমি নিমতৌরি থেকে ভেতরে যাওয়ার জন্য এত রাতে কিছু পাবো কিনা ঠিক নেই।” রাহুল কথাটা শুনে ভাবল, শিখাতো ঠিক বলছে। কিন্তু…? সে শিখাকে জিজ্ঞেস করল, “তাহলে কি করা যায়, প্রাইভেট কার বুক করবো?” শিখা একটু হেসে লাজুক সুরে বলল, “তুমি না একটা পাগল। আমি ভাবছিলাম আমারা যদি আজ রাতটা…..” শিখা লজ্জায় কথাটা শেষ করতে পারল না।

শিখার কথা শুনে রাহুলের মাথা ঘুরে গেল। রাহুল বলল, “একটু দাড়াও। আমি একজনকে ফোন করছি।” তারপর রাহুল ফোনটা বের করে তার বন্ধু সৈকতকে ফোন করল, “হ্যালো ভাই, তুই ফ্ল্যাটে আছিস?” উত্তরে “হ্যা! বল কি হয়েছে” রাহুল বলল, “আমি আর শিখা একটা রিপেপসন এ এসে আটকে পড়েছে, আজ রাতটা তোর ফ্ল্যাটে থাকা যাবে যদি তোর কোনো প্রব্লেম না থাকে।” সৈকত হেঁসে বলল, “চলে আয়, আমার টু বি এইচ কে ফ্ল্যাট। আমি একা আছি কোনো অসুবিধা নেই। তুই দমদম স্টেশন এ হনুমান মন্দিরে চলে আয়, ওখানে এসে আমাকে ফোন করবি আমি গিয়ে তোদের নিয়ে আসবো।” বলেই ফোনটা কেটে দিল। শিখা বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিল যে রাত হয়ে গেছে বলে সে তার আরেকজন বান্ধবীর বাড়িতে চলে যাবে, পরেরদিন সকালে বাড়ি ফিরবে। ওরা একটা ট্যাক্সি ধরে সৈকতের ফ্ল্যাটের কাছে দমদম হনুমান মন্দিরে নামল। সৈকত নিজে এসে ওদের নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে গেল। সৈকত ওদের রুমটা দেখিয়ে দিল দিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।

বন্ধ ফ্ল্যাটের নিস্তব্ধতায় সেই মুহূর্তটা যেন সময়ের সীমারেখা অতিক্রম করে চিরস্থায়ী হয়ে উঠেছিল। রুমের নরম আলোয় শিখাকে দেখছিল রাহুল, যার লাল শাড়ি তাকে নববধূর মতো দেখাচ্ছিল। তার মনের প্রতিটা ধুকপুকানি যেন শিখার উপস্থিতিতে দ্বিগুণ হয়ে উঠছিল। শিখা সেই মিষ্টি হাসি নিয়ে রাহুলের দিকে এগিয়ে এলো। তার চোখে ছিল এক গভীর টান, যা রাহুলকে বাকরুদ্ধ করে তুলেছিল। 

রাহুল কিছু বলতে যাবে, এমন সময় শিখা হঠাৎ করে তাকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু খেল। রাহুল প্রথমে একটু চমকে উঠলেও শিখার আবেগময় চুমুতে সে নিজেকে হারিয়ে ফেলল। সে শিখার কোমর ধরে তাকে আরো কাছে টেনে নিল। তাদের গভীর চুম্বনে বন্ধ ফ্ল্যাটের প্রতিটা কোণ যেন প্রেমের নীল আভায় ভরে উঠল। তাদের হৃদয়ের স্পন্দন এক হয়ে গিয়েছিল, যেন এই মুহূর্তটাই তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 

রুমের আলো তারা বন্ধ করল, কিন্তু জানলার ফাঁক দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদের আলো রুমটাকে সোনালী আভায় ভরে তুলেছিল। সেই আলোয় শিখার মুখখানি যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। রাহুল শিখার চুলে হাত বোলাচ্ছিল, আর শিখা তার চোখ বন্ধ করে সেই স্পর্শে নিজেকে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করছিল। 

তারা ধীরে ধীরে বিছানায় চলে গেল। শিখার হাত রাহুলের হাত ধরে ছিল, আর তাদের প্রতিটা স্পর্শে যেন হৃদয়ের ভাষা প্রকাশ পাচ্ছিল। একে অপরের দিকে তাকিয়ে তারা জীবনের সমস্ত দ্বিধা ভুলে গিয়েছিল। তারা একে অপরের পোশাক খুলতে শুরু করল, প্রতিটা মুহূর্তে তাদের শরীর এবং মনের সংযোগ গভীর থেকে গভীরতর হয়ে উঠল।

৩০-৪৫ মিনিটের সেই প্রেমময় আবেগের পর, শিখা ক্লান্ত হয়ে রাহুলের বুকের ওপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। রাহুল তার চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। শিখা মৃদু স্বরে বলল, “তুমি জানো, আজ আমি নিজেকে সম্পূর্ণ অনুভব করছি। যেন এই রাতটা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর রাত।” 

রাহুল শিখার মাথায় একটা চুমু খেয়ে বলল, “আজকের রাতটা আমার কাছে একটা একটা স্বপ্ন।” শিখা তার তৃপ্তি ভরা মুখে হাসি নিয়ে বলল, “তুমিই আমার স্বপ্ন, তুমিই আমার বাস্তব।” তার পর আবার রাহুলকে জিজ্ঞেস করল, “রাহুল, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো।” রাহুল হেঁসে বলল, “তুমি আমার প্রিয় উপন্যাসের সেই অধ্যায়, যেটা আমি কখনোই শেষ না করে অনন্তকাল ধরে পড়তে চাই।”

চাঁদের আলোয় তাদের আবেগময় মুহূর্তগুলো ফ্ল্যাটের প্রতিটি কোনায় যেন এক চিরন্তন চিত্র হয়ে থেকে গেল। পরের দিন সকালে, ওরা উঠে রেডি হয়ে ৮ টার দিকে নাগেরবাজারে একটা দিঘা বাস ধরে বাড়ির পথে রহনা দিল।

রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - রক্ষক: রহস্য, রোমাঞ্চ ও দেব-দানবের যুদ্ধ নিয়ে লেখা "রক্ষক" এক অনবদ্য বাংলা ছোট গল্প। রাক্ষসের অভিশাপ, দেবীশক্তি ও মানবতার রক্ষার গল্প আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে এক মহাকাব্যিক জগতে! সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় ৪: সম্পর্কের বিচ্ছেদ

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

এভাবে একে অপরকে ভালোবাসতে ভালোবাসতে প্রায় দেড় বছর চলে গিয়েছিল। রাহুল ও শিখার সম্পর্ক ছিল একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকার প্রতিশ্রুতি, কিন্তু এই সম্পর্কের গভীরতার সঙ্গে সঙ্গে কিছু প্রশ্নও উঠে আসছিল। একদিন সন্ধ্যায় শিখা রাহুলকে ফোন করে বলল, “তোমাকে কিছু বলতে চাই।” রাহুল ফোনটা তুলে একটু চিন্তিত মুখে বলল, “বল না, কী হয়েছে?”  

শিখা কিছুক্ষণ চুপ থেকে, তারপর ধীরে ধীরে বলল, “তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?” রাহুল একটু অবাক হয়ে, আর কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে বলল, “হ্যা! করবোই তো। সেই জন্য তো তোমাকে ভালোবেসেছি।”  

শিখা ধীরে ধীরে বলল, “এখনই বিয়ে করতে পারবে, মানে কয়েক মাসের মধ্যে?”  

এই প্রশ্ন শোনার পর রাহুল কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজের মনকে সামলাতে চেষ্টা করল। কিছুটা অস্থির হয়ে বলল, “আমি এখনো পড়া শেষ করিনি। চাকরি পাইনি। কীভাবে তোমাকে এখন বিয়ে করব? আর বিয়ে করে নিলে সংসার চালাবো কি করে?”  

শিখা চুপ করে গেল। তার চোখে একটা অদ্ভুত হতাশা ছিল, যেন তার স্বপ্নটাও হঠাৎ ভেঙে গেছে। কিছুক্ষণ নীরবতা কাটানোর পর, শিখা ঠোঁট বেঁধে শুধুমাত্র “হুমম!” বলে ফোনটা কেটে দিল।

এরপর থেকে শিখা প্রায়ই বিয়ের কথা বলত রাহুলের কাছে। শিখার মুখে বিয়ের কথা শোনা রাহুলের জন্য একদম নতুন কিছু ছিল না, কিন্তু সে জানত, এই মুহূর্তে তার কাছে কিছুই নেই যা দিয়ে সে তাদের ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারবে। রাহুল বাস্তববাদী ছিল। সে জানত, আবেগের বশে কোনো সম্পর্কের শুরু হলে, পরে সেটা বড় সমস্যায় পরিণত হতে পারে। সে তাই শিখাকে বোঝাতে চেষ্টা করত যে, বিয়ের আগে তার জীবনে কিছু সাফল্য থাকা জরুরি।  

একদিন, দুপুরের দিকে, যখন তাদের ফোনে কথা হচ্ছিল, শিখা দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “যেদিন তুমি মাসে পাঁচ হাজার টাকা রোজগার করতে পারবে, সেদিন আমার সঙ্গে কথা বলবে।”  

এই কথাটা শুনে রাহুল ভেঙে পড়ল। তার বুকটা যেন চাপা পড়ে গেল। এক মুহূর্তের জন্য সে কিছুই বলতে পারল না। তারপর একটু থেমে, ভারী গলায় বলল, “তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?”  

শিখা একটু চুপ করে থেকে বলল, “ভালোবাসি বলেই চাই, তুমি যেন নিজের পায়ে দাঁড়াও, নিজের জীবনে সফল হও।”  

রাহুল বুকে আঘাতের ছাপ নিয়ে বলল, “তোমার মতে কি আমি এখন সফল নই? শুধু টাকা উপার্জন করতে পারলেই সফল হওয়া যায়? কেন তুমি শুধু আমার জীবনের সমস্যা দেখছো? তোমার এত আক্ষেপ কেন?”

শিখা একগাল হাসল, কিন্তু তার হাসিটা তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল। “আক্ষেপ নেই, রাহুল। আমি চাই তুমি নিজের জন্য কিছু করো। আমি তোমাকে ভালোবাসি বলেই চাই, তুমি সামনে এগিয়ে যাও। কিন্তু যদি তুমি আমার সঙ্গ পেতে চাও, তো কিছু একটা অর্জন করতে হবে। আমি সারা জীবন অপেক্ষা করতে পারি না। তুমি কি জানো, আমি তোমার জন্য কত কিছু মেনে নিয়েছি? কিন্তু জীবন তো এগিয়ে যায়, রাহুল। আমরা যদি একে অপরকে মানিয়ে চলতে না পারি, তাহলে আমাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী হবে?”  

এই কথাগুলো শোনার পর রাহুল চুপ হয়ে গেল। তার মুখে কোনো কথা ছিল না। মনে হচ্ছিল, তার স্বপ্নগুলো শিখার কাছে নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে। 

“তুমি কি আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইছো না?” রাহুল অনেকটা অবশেষে, যেন ভেঙে পড়া কণ্ঠে প্রশ্ন করল।  

শিখা চোখের কোণে জল জমিয়ে বলল, “আমি চাই, কিন্তু আমি জানি না কতদিন এমন চলতে থাকবে। যদি তুমি এমনভাবে না ভাবো, যদি তুমি শুধু আমাদের সম্পর্কের জন্য কিছু করতে না চাও, তাহলে আমাদের পথ আলাদা হতে পারে।”

এরপর দুজনের মধ্যে দীর্ঘ নীরবতা নেমে আসে। শিখা রাহুলের দিকে একবার তাকিয়ে, আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিল। রাহুলের মনে এক কঠিন চাপ জন্ম নিল, তার জীবন নিয়ে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। “এটা কি শেষ? আমরা কি আর একসাথে থাকতে পারব?” এই প্রশ্নগুলো রাহুলের মনকে ধীরে ধীরে জ্বালিয়ে তুলছিল।

এ ঘটনার পর শিখা ধীরে ধীরে রাহুলের থেকে দূরে চলে গিয়েছিল। এক সময় তারা যেখানেই একে অপরকে খুঁজে পেত, সেখানে কিছু না কিছু আশার আলো থাকত। কিন্তু শিখা এখন যেন তার জীবন আর সম্পর্ক নিয়ে এক নতুন পথ ধরতে চেয়েছিল। রাহুল অনেকবার শিখার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল, কিন্তু শিখা কোনো না কোনো বাহানায় না বলে দিত। “আমার এখন অনেক কাজ আছে, আমি একটু ব্যস্ত,”—এগুলো ছিল তার অভ্যাস হয়ে উঠেছে। রাহুলের মনে একটা অজানা ভয় ক্রমশ গভীর হয়ে উঠছিল। 

একদিন, শিখার বন্ধু শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করেছিল, “শিখা আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে না কেন? কী হয়েছে তার?” শ্রেয়া একটু সময় নিয়ে বলেছিল, “ও এখন নিজের জীবনের দিকে মন দিতে চায়, রাহুল। তুমি-ও তোমার জীবনে এগিয়ে যাও। একে অপরকে ধরে রাখার জন্য যদি দুজনের মানসিকতা এক না হয়, তাহলে সম্পর্ক আর চালিয়ে যাওয়া যায় না।” এই কথাগুলো রাহুলের জন্য যেন এক ভারী আঘাত হয়ে এসেছিল। সারা শরীরে যেন একটা শীতল অনুভূতি ছড়িয়ে পড়েছিল। তার মনে হচ্ছিল, কোথাও কিছু ভুল হয়ে গেছে। হয়তো সে কিছু বুঝতে পারল না, যা শিখা চাইছিল। 

অবশেষে একদিন, সবকিছু যেন শেষ হয়ে যাচ্ছিল। ওরা আবার বার্গভীমা মন্দিরে দেখা করল। সেই মন্দির, যেখানটায় তাদের প্রথম প্রেমের শুরু হয়েছিল, আজ সেই জায়গাটাই যেন তাদের শেষ দেখা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ চুপ-চাপ বসে ছিল, একে অপরকে কিছু না বলেই। যেন তাদের মধ্যে কোনো শব্দ আর ছিল না। 

শেষে, রাহুলই মুখ খুলল, “কি হয়েছে, শিখা?” 

শিখা চোখে জল নিয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল, “বাড়িতে আমাদের ব্যাপারে জানতে পেরে গেছে। আমার বিয়ের জন্য ছেলে দেখা শুরু করেছে।” কথাটা বলার পর সে আর কিছু বলতে পারল না, কেবল কাঁদতে শুরু করল। 

রাহুলের সামনে পৃথিবী যেন ধীরে ধীরে সরে সরে যাচ্ছিল। সে জানত, তার পক্ষে এখন শিখাকে বিয়ে করা সম্ভব না। সে যে অবস্থায় ছিল, সেটা ছিল অনেক দূরের কথা। নিজের জীবনের চিন্তা-ভাবনা, ক্যারিয়ার, সব কিছু নিয়ে সে ব্যস্ত ছিল, কিন্তু শিখার জন্য কিছু করতে পারছিল না। 

কিছুক্ষণ পর, তারা মন্দির থেকে বেরিয়ে আসে। রাহুলের মনে হচ্ছিল, এই মুহূর্তটিই যেন তাদের সম্পর্কের শেষ মুহূর্ত। ১-২ দিন তারা ফোনে কথা বলেছিল, তবে সেই কথাও এবার বন্ধ হয়ে যায়। শিখা আর রাহুলের মধ্যে কোনো যোগাযোগ আর থাকল না। 

রাহুলের মনে হচ্ছিল, শিখা তার জীবনের অংশ হয়ে থাকবে, কিন্তু সেই অংশ আর তার কাছে নেই। শিখা ধীরে ধীরে রাহুলের জীবনের থেকে হারিয়ে গিয়েছিল, যেমন একদিন সূর্য ডুবে যাওয়ার পর অন্ধকার নেমে আসে। রাহুল কিছুই আর করতে পারেনি। তার কাছে একমাত্র স্মৃতি ছিল, সেই সুন্দর মুহূর্তগুলো, যখন তারা একে অপরকে ভালোবাসত।

এভাবেই, একদিন সবকিছু শেষ হয়ে গেল। শিখা চলে গেল, আর রাহুল জানত, সে আর কখনো ফিরে আসবে না।

অধ্যায় ৫: বর্তমান দিন, ১৪’ই ফেব্রুয়ারী

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

১৫ বছর পর, আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি। বর্গভীমা মন্দিরের চত্বরে আচমকা শিখার সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়ার পর রাহুলের মনে সেই পুরনো দিনগুলো যেন একে একে ভেসে উঠতে লাগল। দুপুরের রোদ মন্দিরের গায়ে ছড়িয়ে পড়েছে, আর সারা আকাশ নীল, সোনালী রশ্মিতে ভরপুর। সময় যেন সেদিনের মতোই চলে আসছিল, কিন্তু রাহুলের ভেতর যেন কিছুটা সময় থেমে ছিল। তার চোখ বারবার মন্দিরের ভেতরের দিকে চলে যাচ্ছে, মনে হাজারো প্রশ্ন ভিড় করছে—শিখা আসবে তো? কীভাবে কথা শুরু করবে? এতদিন পর তাকে দেখে কী বলবে?

রাহুল এক মুহূর্তের জন্য নিজেকে থামিয়ে নিজেকেই বলল, “আমি কি ঠিক করলাম এখানে আসার জন্য? আমার কাছে কী কিছু আছে বলার?” মনে হচ্ছিল, যেন এত বছর পরে শিখাকে দেখার সময়টা অনেক জটিল হয়ে গেছে। তাদের সম্পর্কের শেষ মুহূর্তে যখন সমস্ত কিছু ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল, যখন রাহুল বুঝতে পেরেছিল যে, শিখা আর কখনো তার জীবনেই ফিরে আসবে না। কিন্তু আজ, এই মন্দিরের ছায়ায়, তার সামনে সে উপস্থিত, ঠিক যেমনটা ছিল—হালকা হাসি, চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা, ঠিক যেন প্রথম দিনের মতোই। 

রাহুল মনে মনে বলল, “কী বলব তাকে? শিখা… তুমি কী সেই শিখাই? যে একদিন আমার জন্য স্বপ্ন দেখেছিল? তোমার চোখে কী যেন আছে, যা আমি এত বছর আগেও দেখেছিলাম, কিন্তু কেন মনে হচ্ছে আজ আবার নতুন করে সব কিছু শুরু হচ্ছে?”

এত বছর পর তাকে দেখে পুরনো স্মৃতিগুলো এত গভীরভাবে ফিরে আসবে, সেটা সে ভাবতে পারেনি।শুধু শিখার অপেক্ষায় বসে আছে। শিখার মধ্যে এক ধরনের নীরব অনুভূতি রয়েছে, তা যেন রাহুলকে আরও বেশি দিকহীন করে তুলছে।

সে আরও একবার মন্দিরের ভেতরের দিকে তাকাল। আজকের দিনে, অনেক কিছু বদলে গেছে, সময়ের সাথে সম্পর্কের মাঝে অগণিত বাধা তৈরি হয়েছে, কিন্তু শিখার চোখের মধ্যে এখনও সেই আগের পরিচিত চাহনি, সেই ভালোবাসার কোমলতা।

এভাবে, মন্দিরের ভিড়ের মাঝে নিরবতার সাথে ছেলেকে কোলে করে বসে রইল। থেকে রাহুল নিজের ভেতরেই বহু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে লাগল।

মিনিট পনেরো পর শিখা মন্দিরে পূজা দিয়ে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এল। মেয়েটি মিষ্টি হাসি নিয়ে মা’র হাত ধরে ছিল, ঠিক যেন ছোট্ট শিখার মতো। ফিরে এসে শিখা রাহুলের পাশে বসল। রাহুলের বুকের ভেতরটা হঠাৎ করেই যেন ভারি হয়ে উঠল। ১৫ বছরের দূরত্বের পর এই মুহূর্তটা তাকে যেন জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে। শিখা রাহুলকে ও শান্তভকে প্রাসাদ দিল। 

রাহুল জিজ্ঞেস করল, “কেমন আছো?”  

শিখা একটু চুপ করে থাকল। তারপর বলল, “ভালো।”  

কিন্তু শিখার সেই “ভালো” বলার মধ্যে যেন অজস্র না-বলা কথার যন্ত্রণা লুকিয়ে ছিল। তার চোখের চাহনিতে ছিল একরাশ বিষণ্নতা। 

শিখা পাল্টা জিজ্ঞেস করল, “তুমি কেমন আছো?”  

রাহুল একটু হাসি দিয়ে বলল, “ভালো।”  

এই কথাগুলোতে এক মুহূর্তের জন্য তাদের মধ্যে যেন পুরনো দিনের সেই মধুর আবেগ ফিরে এল। কিন্তু বাস্তবতা তাদের আবার ফিরিয়ে নিয়ে এল বর্তমানের কঠিন সত্যের সামনে। তাদের সন্তানরা তখন মন্দিরের গাছের তলায় খেলা করছিল, আর তারা দুজন বসে ছিল সময়ের এক সেতুতে, যার দুই প্রান্তে ছিল অতীত আর বর্তমান। 

কিছুক্ষণ নীরবতার পর রাহুল আবার বলল, “তোমার মেয়ের বয়স কত? নাম কী রেখেছ?”  

শিখা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “এই সবে আট বছরে পা দিয়েছে। নাম স্নিগ্ধা।”  

রাহুলের বিস্ময়ের সাথে বলল,  “স্নিগ্ধা…।”  

শিখা জিজ্ঞেস করল, “তোমার ছেলের নাম কী? আর বয়স?”  

রাহুল বলল, “ছয় বছর। নাম শান্তভ।”  

দুজন যেন একে অপরের দিকে অবাক হয়ে তাকাল। সেই চেনা অনুভূতি, সেই পুরনো চোখের তুলি যেন আবার আঁকা হচ্ছিল। দীর্ঘ ১৫ বছর পর আজ, যখন শিখা তার মেয়ের নাম বলল—”স্নিগ্ধা”—আর রাহুল তার ছেলের নাম বলল—”শান্তভ”—তাদের চোখে যেন একটা ঝলক জ্বলে উঠল। 

তাদের কথাগুলো শুনে মনে পড়ে গেল সেই দিনগুলোর কথা, যখন তারা একে অপরের সঙ্গে স্বপ্ন দেখত, একে অপরকে প্রতিশ্রুতি দিত। শিখা একদিন বলেছিল, “যদি আমাদের ছেলে হয়, আমরা তার নাম রাখব শান্তভ, আর মেয়ে হলে স্নিগ্ধা।” আজ, এই ১৫ বছর পর, এই দুই নাম, যা কখনও শুধুমাত্র স্বপ্ন ছিল, তা আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তবে আজ সেই স্বপ্নের পেছনে কতটা অশ্রু, কতটা দুর্ভোগ, কতটা বিচ্ছেদ লুকিয়ে আছে—তা শুধু দুজনেই জানে। 

তারা চুপ হয়ে গেল, যেন কোন শব্দ নেই বলার। সেই মুহূর্তে, রাহুলের মনে হলো যেন তাদের প্রেম জীবনের এক প্রিয় অধ্যায় ছিল, যেটা এখন শুধুই স্মৃতি। কিন্তু শিখা তার চোখ তুলে রাহুলকে দেখল, আর তার চোখে সেই পুরনো প্রেমের অঙ্গীকার ঝিলমিল করছিল।  

রাহুল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “শিখা তুমি জানো, শান্তভ আর স্নিগ্ধা… ওই নামগুলো যেন জীবনের এক পুরোনো অধ্যায়ের পাতা উল্টাতে থাকে।”

শিখা তার চোখের জল চাপতে চাপতে বলল, “তুমি জানো, আমারও ঠিক তেমনই। মনে পড়ে, একদিন আমরা এখানেই বসে এই নামগুলো বলেছিলাম। অথচ আজ… আমরা… কতটা দূরে চলে গেছি, রাহুল।” 

রাহুল চোখ নামিয়ে বলল, “তুমি কি কখনো ভেবেছ, যদি আমরা সেই সময়টাতে আমাদের স্বপ্নগুলো একসঙ্গে বাঁচতে পারতাম, তাহলে কী হতো?”

শিখা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। “হ্যাঁ, অনেকবার। কিন্তু আমাদের জীবন তো আর একরকমের ছিল না। আমরা যে পথে গিয়েছিলাম, সে পথে অনেক বাধা ছিল।”

এরপর দুজনেই কিছুক্ষণের জন্য একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল। মন্দিরের শান্ত পরিবেশে, সেই প্রথম ভালোবাসার স্মৃতি তাদের হৃদয়ে ফের ঢেউ তুলেছিল। আজ, এই মুহূর্তে তারা জানতো, জীবন কীভাবে চলে গেছে, কিন্তু আজও একে অপরের চোখে তাদের পুরনো প্রেমের ঝিলমিল স্মৃতি জ্বলজ্বল করছিল। 

শান্তভ আর স্নিগ্ধা মন্দিরের পাশের গাছের বেদীতে বসে খেলছিল। তাদের হাসি, তাদের ছোট ছোট চলাফেরা, যেন পুরনো দিনের সেই পরিচিত অনুভূতিগুলোকে আবার জীবন্ত করে তুলছিল। আজ ১৫ বছর পর, অনেক কিছু বদলে গেছে—জীবন, সময়, সম্পর্ক—কিন্তু সেই প্রথম ভালোবাসার রেশ যেন আজও অমলিন। একে অপরকে কিছু না বলেও, দুজনের মধ্যে যেন একটি অমোচনীয় সম্পর্ক ছিল। শান্তভ আর স্নিগ্ধা তাদের ছোট ছোট খেলায় মগ্ন থাকলেও, রাহুল আর শিখার চোখে কিছু গভীর কথা ছিল যা এখন আর বলা হয়নি। সেই পুরনো দিনগুলোর কথা, তাদের কথা বলার সময়, হাসি ভাগাভাগি করার সময়, আজ যেন দুজনের বুকের মধ্যে চাপা পড়ে ছিল।

কল্পবিজ্ঞান-এর বাংলা ছোট গল্প - আকাশের অতিথি: "আকাশের অতিথি" একটি মজার এবং রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান গল্প, যেখানে ভিনগ্রহের অতিথিরা দুর্গাপূজার আবহে শান্তিপুরে নেমে আসে। বাংলা ছোট গল্পের অনন্য স্বাদ নিয়ে রচিত এই উপাখ্যান পাঠককে মুগ্ধ করবে। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় ৬:  জমানো ব্যাথা

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

রাহুল হঠাৎ করে একটু তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো, “তোমার বর নিশ্চয় মাসে ৫ হাজার টাকার বেশি ইনকাম করে, আমি তো পারলাম না।” রাহুলের কথাটা শিখার হৃদয়ে গভীরভাবে আঘাত করলো। তার চোখের কোনে জল জমে উঠেছিল, কিন্তু সে নিজেকে সামলে হাসির আড়ালে ব্যথা লুকানোর চেষ্টা করল। রাহুলকে কিছু না বলেই, শুধু এক নিঃশ্বাসে “হুমম!” বলে মুখ ফিরিয়ে নিল। তবে রাহুল তার চোখের মধ্যে লুকানো কষ্টটা ঠিকই বুঝতে পারছিল। সে কিছু বলল না, যেন শিখার মনের কথা শুনে নিজেরও শব্দ হারিয়ে গিয়েছিল।

শিখা কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর, সে হঠাৎ বলে উঠলো, “তোমার স্ত্রী কেমন আছে? সে কি করে? নিশ্চয় তোমাকে আমার থেকেও ভালোবাসে।” শিখার কথা শুনে রাহুল একটু স্তব্ধ হয়ে গেল। সে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, “আমাদের ২ বছর আগে ডিভোর্স হয়ে গেছে। অনেক চেষ্টার পর ছেলের কাস্টেডি পাই।” এই কথা শুনে শিখা এক পলকেও কিছু বলল না। তার মনে শুধু একটাই কথা ঘুরছিল, “ভাগ্যের কি পরিহাস!”

সে ভাবছিল, তাদের মধ্যে এত বছর আগে যে প্রেম ছিল, সে কী এতটা সহজে মুছে যাবে? শিখার মনে এক অজানা কষ্ট, এক অজানা বিষাদ এসে ভর করলো। “কেন এমন হলো? কেন আমাদের ভাগ্যে এমন পরিণতি?” শিখা নিজেকে শুধোল। সেই পুরনো স্মৃতিগুলো যেন চোখের সামনে ভেসে উঠল, যখন রাহুল তার হাতে হাত রেখে বলেছিল, “তুমি আমার সঙ্গী, আমি তোমাকে কখনো ছেড়ে যাবো না।” কিন্তু এখন সেই কথা ছিল কেবল এক স্বপ্নের মতো, যা বাস্তবে রূপ নিতে পারেনি।

মন্দিরের শান্ত পরিবেশেও, দুজনের মাঝে সেই চুপ থাকা, নিঃচুপ শব্দে কান্না চাপা, মনে হচ্ছিল কিছু একটা অসমাপ্ত থেকে গেছে।

শিখা একটু থেমে রাহুলের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার হাতে যদি সময় থাকে, তাহলে রাজবাড়ীর দিকে একটু যাওয়া যেতে পারি?” রাহুল তার দিকে মৃদু হাসি দিয়ে বলল, “আমার হাতে এখন শুধু সময় আর সময়।” কথা বলার ভঙ্গি ছিল শান্ত, কিন্তু চোখে এক অদ্ভুত তীক্ষ্ণতা ছিল। যেন এই সময়ের প্রতিটা মুহূর্ত রাহুল মনের মধ্যে জমিয়ে রাখতে চায়, যেটি হয়তো আর কখনো ফিরে পাবে না।

শিখা একটু দ্বিধায় দাঁড়িয়ে ছিল। তার চোখের মধ্যে এতটা কষ্ট, এতটা অবাক হওয়া, যেন একটা সময়ে সব কিছু মনের মধ্যে সাজিয়ে রাখা ছিল। সে শান্তভকে কোলে তুলতে গেল, কিন্তু শান্তভ প্রথমে না বললেও, অবশেষে রাহুলের কথায় সে শিখার কোলে উঠে পড়ল। তার কোমল শরীর শিখার বুকে মাথা রেখে যেন একটা স্থিতি পেল, আর রাহুল স্নিগ্ধাকে কোলে তুলে নিয়ে মন্দিরের দিক থেকে রাজবাড়ীর দিকে এগিয়ে গেল।

রাজবাড়ী যাওয়ার পথে, তারা এক দোকানে দাঁড়িয়ে সামান্য কিছু খেতে গেল। দোকানটা ছিল পুরনো, কিন্তু সেই পুরনো গন্ধের মধ্যে যেন এক ধরনের পরিচিতি ছিল। যখন খাওয়া শেষ হলো, শিখা রাহুলকে লক্ষ্য করে বলল, “তুমি এখন খাওয়ার পর আর সিগারেট খাও না? আগেতো যখন এখানে আসতে তখন আমার কাছ থেকে ৫ টাকা নিয়ে সিগারেট খেতে।”

রাহুল মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিল, “না, ছেড়ে দিয়েছি।” তার কণ্ঠে এক ধরনের শান্তি, আর মাঝে মধ্যে এক ধরনের যন্ত্রণা ছিল, যেন এতটা সময়ে সে নিজেকে চেনার চেষ্টা করেছে, খুঁজে বেড়িয়েছে তার আসল পরিচয়। শিখা সেদিনও দেখেছিল, রাহুল কীভাবে ছোট ছোট অভ্যেস পরিবর্তন করেছে, কীভাবে সে পরিণত হয়েছে, আর কীভাবে সে একটি নতুন জীবন খুঁজে পেয়েছে। তবে, সেই পুরনো রাহুলকেও অনুভব করছিল সে।

তাদের সামনে রাজবাড়ীর পথ ছিল খোলা, কিন্তু মনে মনে দুজনেই জানত, এই পথ যেন তাদের অতীতের স্মৃতির জটিল দিকগুলোকেই আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাহুল আর শিখার মধ্যে যে সম্পর্ক ছিল, তা কখনো পুরোপুরি মুছে যায়নি, যদিও সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলেছে। শিখা রাহুলের পাশে হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে ভাবছিল, “এই ভালোবাসা কি কেবল অতীতেই সীমাবদ্ধ থাকবে? না, হয়তো আজও কিছু না কিছু বাকি রয়ে গেছে আমাদের মধ্যে।”

অধ্যায় ৭: তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

তাম্রোলিপ্ত রাজবাড়ীর ভগ্নপ্রায় সৌন্দর্যের মাঝে বিকেলটা যেন আরও ধীরলয়ের হয়ে উঠেছিল। বিশাল আমবাগানের পাতা ঝরার মৃদু শব্দ আর পাশের দীঘির জলের ঠান্ডা হাওয়া তাদের কথা বলার জন্য এক নিঃশব্দ জায়গা করে দিল। দীঘির পাড়ে একটা পুরনো বেঞ্চে রাহুল আর শিখা বসল। তাদের সন্তানরা সামনের মাঠে দৌড়ঝাঁপ করছিল, আর এই নীরব সময়ে তাদের পুরোনো প্রেম নতুন করে জেগে উঠছিল। রাহুলের নজর গেল শিখার বাম কানের গোড়ার দিকে। হালকা আলোয় দেখা গেল একটা কালসিটে দাগ। তার মন কেমন করে উঠল।  

রাহুল বলল, “শিখা, তোমার কানের পাশে এই দাগটা কিসের? কী হয়েছে?” শিখা এক মুহূর্ত চুপ করে রইল। সে নিজের চুলগুলো দিয়ে দাগটা ঢাকতে চেষ্টা করল, কিন্তু সেটা রাহুলের চোখ এড়াল না। রাহুল আবার বলল, “শিখা, লুকিও না। আমি জানি কিছু একটা ঘটেছে। বলো, কী হয়েছে?”  

শিখার চোখের কোণে জল গড়াতে শুরু করল। সে কাঁপা গলায় বলল,”কিছু হয়নি। ছোটখাট একটা দুর্ঘটনা।” কিন্তু রাহুল চুপ করে রইল, তার চোখ শিখার চোখে গেঁথে ছিল। শিখা যেন আর কিছুই লুকোতে পারল না। নিজের ভারাক্রান্ত মনের ভারটা নামিয়ে রেখে বলল, “আমার বর… একদিন ও রাগের বশে মেরেছিল। এই দাগ সেদিনের।” কথাগুলো বলতে বলতেই শিখার গলা ভেঙে গেল। চোখের জল ধরে রাখতে পারল না।  

রাহুল থমকে গেল। তার মনে পড়ল সেই পুরোনো দিনগুলো, যখন রূপনারায়ণ নদীর ধারে তারা দেখা করেছিল। রাহুল একসময় শিখাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে প্রথমবার চুমু খেয়েছিল ওর কপালে, তারপর ঠোঁটে। সেদিন রাহুল বলেছিল, “তোমার শরীরের এই জায়গাটা শুধু আমার।” শিখা তখন হাসি দিয়ে বলেছিল, “আর বাকি শরীরটা?” রাহুল বলেছিল, “আমি তোমার শরীরকে না, তোমার সত্তাকে ভালোবেসেছি।”  

আজ সেই স্মৃতি তার মনে ঝড় তুলল। শিখার বর্তমান কষ্ট আর অতীতের সেই নিঃস্বার্থ প্রেম যেন একসঙ্গে এসে তার হৃদয় ভারাক্রান্ত করে তুলল। রাহুল একটু রেগে বলল, “তোমার বর কীভাবে এতটা নৃশংস হতে পারে, শিখা? তুমি কেন এসব সহ্য করছ?” শিখা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমার মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়েই তো। আমি তো চাই না ও বাবাহীন বড় হোক। আমার শ্বশুরবাড়িতে থেকে আমি শুধু টিকে থাকার চেষ্টা করছি।”  

রাহুল চুপ হয়ে গেল। শিখার কথা তার মনের ভেতরে গভীর ক্ষত তৈরি করছিল। শিখা একটা ম্লান হাসি হেঁসে বলল,  “তুমি জানো, রাহুল, আমার জীবনটা এতটাই জটিল যে মাঝে মাঝে মনে হয়, সব ছেড়ে পালিয়ে যাই। কিন্তু সেটা কি সম্ভব?”  

রাহুল এক মুহূর্তের জন্য নিজের ভেতরের অস্থিরতাকে সামলানোর চেষ্টা করল। তারপর বলল, “তুমি পালাবে কেন? তুমি তো অনেক বেশি শক্তিশালী। কিন্তু শিখা, তোমার জীবনে যদি একটা নিরাপদ পথ খুঁজে নিতে পারো, তাহলে নিজেকে এতটা কষ্টে রেখো না।”  

শিখা অশ্রুভরা চোখে রাহুলের দিকে তাকাল তারপর বলল, “রাহুল, তুমি তো এক সন্তানের বাবা। তুমি নিশ্চয়ই বুঝবে, একটা মা তার সন্তানের জন্য কতটা করতে পারে। আমি শুধু চাই আমার মেয়েটা একটা সুস্থ জীবন পাক।”  

রাহুল ধীরে ধীরে নিজের হাত শিখার হাতে রাখল। তারপর বলল, “তুমি সত্যিই অসাধারণ, শিখা। কিন্তু আমি চাই না তুমি নিজেকে শেষ করে দাও। তোমার মেয়ের জন্য তোমার ভালো থাকা দরকার।”  

শিখা আর কিছু বলল না। রাজবাড়ীর আমবাগানের মধ্যে দিয়ে আসা বাতাস তাদের চারপাশে যেন একধরনের নীরব বোঝাপড়া ছড়িয়ে দিল।  

কিছুক্ষণ নীরবতার পর রাহুল বলল, “তুমি কি জানো, শিখা? অনেক দিন পর এখানে এসে আমার মনে হচ্ছে, আমি আবার জীবনের সেই সরল দিনগুলোতে ফিরে গেছি। কিন্তু আজকের পরিস্থিতি আমাকে খুব অসহায় করে তুলছে। আমি চাই তোমার জীবনে শান্তি আসুক।”  

শিখা চোখের জল মুছে বলল, “আমার জীবনে হয়তো শান্তি নেই। কিন্তু রাহুল, তুমি যদি পারো, নিজের ছেলেটার জন্য সুখী থাকার চেষ্টা করো। ওর জন্য তোমার অনেক কিছু করতে হবে।”  

রাহুল হাসল, “তুমি নিজের দুঃখ ভুলে আমাকে উপদেশ দিচ্ছ! আমাকে মহানতা দেখাচ্ছ, শিখা।”  

শিখা মৃদু হাসল, “মহান আমরা কেউ নই, রাহুল। আমি শুধু একজন মা।”  

বিকেলের আলো ক্রমশ ম্লান হয়ে এলো। দীঘির জলে পড়ে থাকা রোদ্দুরের প্রতিফলন তাদের চুপ থাকা মুহূর্তগুলোর সাক্ষী হয়ে রইল।  

রাহুলের মনে হল, এত বছর পরেও শিখার প্রতি তার অনুভূতি মুছে যায়নি। কিন্তু আজ তাদের জীবন দুটি আলাদা পথে হাঁটছে। সে জানত, এই মুহূর্তগুলো স্মৃতি হয়ে থাকবে, কিন্তু বাস্তবতায় কোনো সমাধান নেই।  

শিখা বলল “তোমার সাথে কথা বলে একটু মন হালকা লাগছে, রাহুল।”  

তারা বেঞ্চ থেকে উঠল। শিশুদের খেলা শেষ হয়ে গেছিল। স্নিগ্ধা আর শান্তভ দুই জনেই ক্লান্ত হয়ে তাদের কাছে এসে দাঁড়াল। এই দৃশ্যটা দেখে রাহুলের মনে হল, জীবনের যত দুঃখই থাকুক না কেন, এই ছোট্ট মুহূর্তগুলোই তাদের জীবনকে অর্থ দেয়।  

দুজনে সন্তানদের নিয়ে দীঘির পাড় ধরে হাঁটতে লাগল। চারপাশে সন্ধ্যার আবরণ নেমে এলো। রাহুল আর শিখা জানত, তাদের এই মুহূর্তগুলো আর কখনো ফিরে আসবে না, কিন্তু আজকের দিনটা তাদের হৃদয়ে এক নতুন অধ্যায় লিখে দিল।

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - আষাঢ়ের সন্ধ্যে: "আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় ৮: কঠিন বাস্তব

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

বসন্তের সন্ধ্যার বাতাস ধীরে ধীরে ঘিরে ধরছিল তাম্রোলিপ্ত রাজবাড়ীর আমবাগান। দীঘির পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে শিখা আর রাহুলের কথোপকথন যেন অতীত আর বর্তমানের এক মেলবন্ধন তৈরি করছিল। শিখা তার কষ্টের গল্প শেষ করে এবার একটু থমকে রইল। কিছুক্ষণ নীরব থেকে সে রাহুলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কেমন আছো, রাহুল? তোমার জীবনটা কেমন চলছে এখন?”  

রাহুল একমুখ হাসি দিয়ে বলল, “আছে তো। একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। করোনা মহামারীর পর থেকে বেশিরভাগ কাজই বাড়ি থেকে। প্রথম প্রথম কেমন যেন অদ্ভুত লাগত, কিন্তু এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।”  

শিখা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর সরাসরি প্রশ্ন করল, “আর তোমার বিয়ে? তুমি তো বলেছিলে তোমার ডিভোর্স হয়ে গেছে। কী হয়েছিল?”  

রাহুল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল, “আমার বিয়েটা বাড়ি থেকে দেখাশোনা করেই হয়েছিল। প্রথম এক-দুই বছর সব ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু তারপর সমস্যা শুরু হল। বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময় থেকে। কাজের চাপ তখন এত বেড়ে গেল যে, অফিসের বাইরে আর কোনো কিছু ঠিকমতো সামলাতে পারতাম না।”  

শিখা রাহুলকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তাহলে কি এটা শুধুই সময়ের অভাবের জন্য হয়েছিল?”  

রাহুল একটু থেমে বলল, “সময়ের অভাব ছিল, কিন্তু তার থেকেও বড় কারণ ছিল বোঝাপড়ার অভাব। আমার স্ত্রী হয়তো আমাকে নিয়ে অন্যরকম একটা জীবন চেয়েছিল, যেখানে আমি সারাক্ষণ ওর কাছে থাকব। কিন্তু বাস্তবে সেটা সম্ভব হয়নি। ঝগড়া বাড়তে বাড়তে একটা সময় মনে হল, আমরা দুজনেই একে অপরের জীবনে শুধুই তিক্ততা আনছি। শেষমেশ আলাদা হয়ে যাই।”  

শিখা বিষণ্ণ হয়ে তাকিয়ে রইল।  

রাহুল আবার বলল, “তবে জানো শিখা, আমার ডিভোর্সের পর একটা কথা বুঝেছি। প্রেম বা ভালোবাসা হয়তো আমার জন্য নয়। এত চেষ্টা করেও কাউকে সুখী করতে পারলাম না। জানি না, দোষটা কোথায় ছিল—আমার না ওর? নাকি সময়ের? ভালোবাসা তো শুধু দেওয়া নয়, নেওয়াও।”

“আমাদের ডিভোর্সের পর অনেক চেষ্টা করেছি, শিখা। নতুন করে শুরু করার। কিন্তু প্রতিবার মনে হয়েছে, যেন কিছু ফাঁকা রয়ে গেছে। কিছুটা অপূর্ণ। ভালোবাসাকে আমি কোনোদিন ভুলতে পারিনি।”  

রাহুলের কথা শুনে শিখার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। তার মনে হতে লাগল, রাহুলের এই শূন্যতা, এই হতাশার কারণ হয়তো সে নিজেই। স্মৃতির পাতা উল্টে যেতে লাগল তার চোখের সামনে—সেই দিনগুলো যখন তারা মন্দিরের ধারে বসে ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনত। রাহুলের উচ্ছল মুখ, তার অগাধ বিশ্বাস, আর সেই কোমল চোখগুলো—সবকিছুই যেন আজ নতুন করে কষ্ট দিতে শুরু করল শিখাকে।  

রাহুল সেদিন মাত্র কয়েক মাস সময় চেয়েছিল। যদি সে একটু অপেক্ষা করতে পারত, হয়তো তাদের গল্পটা অন্যরকম হতে পারত। হয়তো শান্তভ আর স্নিগ্ধা এক ছাদের তলায় একসঙ্গে বড় হত। শিখা অনুভব করল, জীবনের কিছু সিদ্ধান্ত ভুলের কারণে কতটা গভীর ক্ষত তৈরি করতে পারে। রাহুলের একাকিত্ব, তার হতাশা—সব যেন আজ তাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করতে লাগল। তবু, সময়ের এ নিষ্ঠুর খেলার সামনে সে নিজে একজন অসহায় দর্শক মাত্র।   

শিখা অশ্রুসিক্ত চোখে রাহুলের দিকে তাকাল। তারপর হঠাৎ রাহুলের হাত ধরে ফিসফিসিয়ে বলল,

“রাহুল, জানো, আজও মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে মনে হয়, তুমি পাশে বসে আছো, সেই পুরোনো দিনের মতো। কিন্তু বাস্তবটা যখন ঠেলে দেয়, তখন বুঝি, আমি সেই সঙ্গটাই চিরতরে হারিয়েছি।”  

“আমি জানি, সময় হয়তো আর ফিরিয়ে আনা যায় না। কিন্তু বিশ্বাস করো, প্রতিটি মুহূর্তে আমি তোমাকে ভেবেছি। তোমার মুখটা, তোমার হাসিটা—সব কিছুই আমার হৃদয়ে গেঁথে আছে। রাহুল, আমি কি সত্যিই এত বড় অপরাধ করেছিলাম যে, আজ এই একাকিত্ব আমাদের জীবনকে আচ্ছন্ন করে ফেলল?”  

“তোমার চোখে যে অভিমান দেখছি, সেটা আমি বয়ে বেড়াতে পারব না। হয়তো আমরা আলাদা হয়েছি, কিন্তু জানো, আমি কখনও আমাদের প্রেমকে আলাদা করতে পারিনি। রাহুল, তোমার জন্য আজও আমার হৃদয়ে সেই একই জায়গা রয়ে গেছে। যদি পারো, আমাকে ক্ষমা করো।”   

রাহুল তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল। তারপর বলল,

“শিখা, তুমি কি জানো, এই পনেরো বছর ধরে কতবার ভেবেছি—সবকিছু কি আলাদা হতে পারত? যদি আমি একটু বেশি বোঝানোর চেষ্টা করতাম, যদি তুমি একটু অপেক্ষা করতে, হয়তো আমাদের গল্পটা অন্যরকম হত।”  

“তোমার সিদ্ধান্ত হয়তো ভুল ছিল না, কারণ সেই সময় তোমার নিজের পথ খুঁজে পাওয়াটা জরুরি ছিল। কিন্তু জানো, শিখা, আমি কখনও তোমাকে দোষ দিতে পারিনি। কারণ ভালোবাসা তো দোষ দেখার জায়গা নয়। এটা শুধু অনুভব করার জায়গা।” 

শিখা কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমি যদি তখন একটু সাহস করে তোমাকে সময় দিতে পারতাম, তাহলে হয়তো আমাদের জীবনটা অন্যরকম হত।”  

রাহুল একটু থেমে বলল, “হয়তো হত। কিন্তু এখন তো আমরা এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি, যেখানে অতীত নিয়ে ভেবে লাভ নেই। যা হয়েছে, সেটা মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।”  

শিখা মৃদু কাঁপা গলায় বলল, “তুমি কি সত্যিই এগিয়ে যেতে পেরেছো, রাহুল?”  

রাহুল একটু হেঁসে বলল, “আমার জীবনটা এখন কাজ, ছেলে, আর একাকিত্ব নিয়ে। এগিয়ে যাওয়ার চেয়ে বলা ভালো, আমি নিজেকে ব্যস্ত রাখি।”  

তাদের কথোপকথন ক্রমশ গভীর থেকে গভীরতর হয়ে যাচ্ছিল। শিখার চোখে জল আর রাহুলের হতাশা তাদের পুরোনো স্মৃতিগুলোকে আরও জীবন্ত করে তুলছিল।  

শিখা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “রাহুল, তবুও তোমার মধ্যে সেই ভালোবাসাটা ছিল। তুমি অন্তত চেষ্টা করেছিলে। কিন্তু আমি? আমি তো সেদিন সাহসই করতে পারিনি।”  

রাহুল শিখার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি নিজের মেয়ের জন্য যে ত্যাগ করেছো, সেটা সাহসের চেয়ে কম নয়, শিখা। আমি জানি, তুমি নিজের পরিস্থিতি মেনে নিয়েই ভালো থাকার চেষ্টা করছ।”  

শিখা আর কিছু বলল না। সে শান্তভকে কোলে করে ঘুরছিল। শান্তভ ঘুমিয়ে পড়েছিল। ওরা আবার একটা বেঞ্চে বসলো। দীঘির জলের ঢেউগুলো তাদের নীরবতার সাক্ষী হয়ে রইল।

অধ্যায় ৯: পুনঃবিচ্ছেদ

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

বেলা পড়ে গিয়েছিল, সূর্যের আলো ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসছিল। শান্তভ শিখার কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছিল, যেন জীবনের সমস্ত ক্লান্তি ভুলে গেছে। স্নিগ্ধা পাশেই বসে নিজের মোবাইলে গেমে ডুবে ছিল। সময় যেন থমকে গিয়েছিল, আর সেই নীরবতার মাঝেই শিখা আর রাহুলের মনের অগোচর কথাগুলো যেন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল।  

শিখার মনের মধ্যে এক অজানা কষ্ট বয়ে যাচ্ছিল। সে শান্তভের মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের চোখের জল আটকে রাখার চেষ্টা করছিল। রাহুল তার পাশে বসে ছিল, চোখে এক অদ্ভুত স্থিরতা। শিখা সাহস করে কথা বলল, “রাহুল, আমারা যদি আবার…” কিন্তু কথাটা শেষ করার আগেই সে থেমে গেল। কথাটা যেন আটকে গেল কণ্ঠে।  

রাহুল তার দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে সামনের গাছের দিকে তাকিয়ে বলল, “শিখা, সেটা হয় না। আমাদের পথগুলো অনেক আগেই আলাদা হয়ে গেছে। জীবনের এই জায়গায় এসে আবার সবকিছু শুরু করা সম্ভব নয়।”  

শিখার চোখ দিয়ে ঝরে পড়তে লাগল নীরব অশ্রু। সে চুপচাপ বসে ছিল, তার হৃদয়ের ভাঙা টুকরোগুলো যেন আরো একবার মাটিতে ছড়িয়ে পড়ছিল। তার মনে পড়ে যাচ্ছিল সেই পুরোনো দিনগুলো, যখন তারা একে অপরের স্বপ্ন ছিল।  

ওরা দুজনেই বুঝেছিল, ভালোবাসা থাকলেও জীবনের বাস্তবতাগুলোকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। সময় আর পরিস্থিতি তাদের যা কেড়ে নিয়েছে, তা আর ফেরানো সম্ভব নয়। তবুও, সেই নীরবতার মধ্যে, তাদের হৃদয়ের ভেতরে কোথাও একটা আশা জেগে উঠছিল—যদিও তারা একসাথে নয়, কিন্তু তাদের ভালোবাসা আজও বেঁচে আছে, নিঃশব্দে, অমলিন।

রাহুল স্থির চোখে দীঘির জলের দিকে তাকিয়ে ছিল। দীঘির জল যেন তার মনের প্রতিচ্ছবি—অতি গভীর, অথচ শান্ত। সূর্যের শেষ রশ্মি রক্তিম আভায় আকাশ রাঙিয়ে দিচ্ছিল, ঠিক যেমন তাদের সম্পর্কের শেষ স্মৃতিগুলো রঙিন হলেও বিদায়ের ছোঁয়া নিয়ে এসেছে। চারপাশের নীরবতা যেন ওদের দুজনের মধ্যে এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করছিল।  

রাহুল ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। তার প্রতিটি পদক্ষেপে যেন ওজন বাড়ছিল, শুধু সন্তানের নয়, বরং একটি অসমাপ্ত ভালোবাসার ভার। শিখা পেছন থেকে বলল, “আমাদের কি আর পুনর্মিলন হতে পারে না রাহুল? আমাদের কি আর দেখা হবে না?”  

রাহুল থমকে গেল। কয়েক মুহূর্ত চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে সে শিখার দিকে ফিরে তাকাল। মুখে এক অদ্ভুত হালকা হাসি ফুটে উঠল, যা আসলে বেদনার গভীর প্রতিফলন। রাহুল বলল, “আমাদের আবার দেখা হবে কিনা জানি না, তবে এটা আমাদের পুনঃবিচ্ছেদ হয়ে থাকুক।” তার কণ্ঠের স্থিরতায় যেন তীক্ষ্ণ এক ছুরি শিখার হৃদয়কে ভেদ করে দিল।  

শিখার চোখে জমে থাকা জল এবার গাল বেয়ে নেমে আসতে লাগল। তার ঠোঁট কাঁপছিল, কিন্তু কোনো শব্দ বেরোচ্ছিল না। সে বুঝতে পারছিল, এই পুনঃবিচ্ছেদে শুধু তাদের দুই হৃদয়ের নয়, বরং তাদের জীবনের সমস্ত স্মৃতির বিদায় জানানো হয়েছে।  

রাহুল ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে গেল। শিখা স্থির হয়ে শান্তভকে কোলে করে বসে রইল, যেন এক পাথরের মূর্তি। পশ্চিম আকাশের রক্তিম আলো তার মুখে পড়ছিল, আর সেই আলোতে তার চোখের জল ঝিলমিল করে উঠছিল। দীঘির জলে প্রতিফলিত আকাশের মতো তাদের ভালোবাসাও আজ গভীর, কিন্তু বিদায়ের আভায় আচ্ছন্ন।

সন্ধ্যার আকাশে ততক্ষণে তারা জ্বলজ্বল করতে শুরু করেছে। চারপাশে এক শান্ত, নীরব পরিবেশ। রাহুল শান্তভকে আলতো করে ঘুম থেকে তুলল। শান্তভ প্রথমে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করলেও, শিখার স্নেহমাখা কণ্ঠ শুনে তাড়াতাড়ি মায়ের কোল থেকে বেরিয়ে এল। শিখা শান্তভের নরম গালে একটা চুমু খেয়ে বলল, “বাবু, ভালো থেকো। বড়ো হয়ে বাবার খেয়াল রাখো।”  

শান্তভ কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল, তারপর শিশুসুলভ হাসিতে বলল, “আন্টি তুমিও ভালো থেকো।” তার সেই নিষ্পাপ কথাগুলো যেন শিখার হৃদয়ের গোপন ব্যথাগুলোকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। শান্তভ স্নিগ্ধার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, “দিদিভাই, আজকে আমি আসি। আবার একদিন আসবো। তোমার সঙ্গে খুব মজা করবো।”  

স্নিগ্ধা তাকে জড়িয়ে ধরল, আর তার মুখে শিশুসুলভ আনন্দের ঝলকানি দেখা গেল। কিন্তু সেই আনন্দের মাঝে একটা চাপা বিষণ্ণতা যেন শিখা আর রাহুলের মনের গভীরতায় প্রবেশ করছিল।  

শান্তভ আর স্নিগ্ধাকে নিয়ে রাহুল আর শিখা দুই বিপরীত দিকের পথ ধরল। সন্ধ্যার বাতাস তাদের চারপাশে এক অদ্ভুত নীরবতার আবরণ তৈরি করছিল। রাহুল পা ফেলছিল ধীরে ধীরে, যেন প্রতিটি পদক্ষেপ তার হৃদয়কে আরও ভারী করে দিচ্ছিল। শিখাও একইভাবে পেছনে পড়ে থাকা প্রতিটি স্মৃতির ঝাপটা অনুভব করছিল।  

একটু দূর এগিয়ে, দুজনেই একসঙ্গে পেছন ফিরে তাকাল। তাদের চোখের চাহনি যেন সময়কে থামিয়ে দিল। শিখার চোখের কোণ ভিজে উঠেছিল, কিন্তু সেই চোখে দুঃখের ছায়ার চেয়ে বেশি ছিল একটা গভীর অনুভূতির প্রতিচ্ছবি। রাহুলের চোখেও জল, কিন্তু সেখানে ছিল এক অদ্ভুত প্রশান্তি।  

এই বিচ্ছেদের মধ্যে যেন তারা নিজেদের হারিয়ে যাওয়া প্রেমকে নতুন করে খুঁজে পেয়েছিল। জীবনের জটিলতায়, ভুলে যাওয়া অনুভূতিগুলো যেন আজ আবার ফিরে এসেছিল। তারা জানত, এই পথ আলাদা, কিন্তু এই পথেই তাদের ভালোবাসা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হয়েছে।  

রাহুল আর শিখা ধীরে ধীরে তাদের পথ ধরল। আকাশে তারারা জ্বলতে থাকল, যেন সেই তারাগুলো তাদের গল্পের সাক্ষী হয়ে রইল। সেই রাত্রি শুধু বিদায়ের ছিল না, বরং ছিল এক চিরন্তন প্রেমের নিঃশব্দ উদযাপন।

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

আমরা কারা

নতুন বাংলা ছোট গল্প

দানব মামার বন্ধু

"দানব মামার বন্ধু" একটি মজার ছোটদের গল্প, যেখানে মুন্না ও এক দানবের অদ্ভুত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। রূপকথার গল্পের আবহে দানব মামা তার ভালো ব্যবহার দিয়ে গ্রামবাসীর মন জয় করে।

"দানব মামার বন্ধু" একটি মজার ছোটদের গল্প, যেখানে মুন্না ও এক দানবের অদ্ভুত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। রূপকথার গল্পের আবহে দানব মামা তার ভালো ব্যবহার দিয়ে গ্রামবাসীর মন জয় করে।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: দানব মামার বন্ধু

সময়ের স্মৃতি

"সময়ের স্মৃতি" একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প, যেখানে দিদিমার ঘড়ির মাধ্যমে জীবনের স্মৃতি, ত্যাগ, ভালোবাসা ও একাত্মতার মর্মার্থ তুলে ধরা হয়েছে। সময়ের টিকটিক গল্প বলে যায়।

"সময়ের স্মৃতি" একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প, যেখানে দিদিমার ঘড়ির মাধ্যমে জীবনের স্মৃতি, ত্যাগ, ভালোবাসা ও একাত্মতার মর্মার্থ তুলে ধরা হয়েছে। সময়ের টিকটিক গল্প বলে যায়।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: সময়ের স্মৃতি

পুনঃবিচ্ছেদ

"রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প 'পুনঃবিচ্ছেদ' হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বিচ্ছেদের মধ্যেও প্রেমের অনুভূতি, নস্টালজিয়া আর জীবনের এক অন্যরকম গল্প। শিখা ও রাহুলের আবেগঘন মুহূর্তে প্রেম নতুন রূপ পায়।"

রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প 'পুনঃবিচ্ছেদ' হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বিচ্ছেদের মধ্যেও প্রেমের অনুভূতি, নস্টালজিয়া আর জীবনের এক অন্যরকম গল্প। শিখা ও রাহুলের আবেগঘন মুহূর্তে প্রেম নতুন রূপ পায়।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: পুনঃবিচ্ছেদ

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!