রহস্য, রোমাঞ্চ ও দেব-দানবের যুদ্ধ নিয়ে লেখা "রক্ষক" এক অনবদ্য বাংলা ছোট গল্প। রাক্ষসের অভিশাপ, দেবীশক্তি ও মানবতার রক্ষার গল্প আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে এক মহাকাব্যিক জগতে!

রক্ষক

রহস্য, রোমাঞ্চ ও দেব-দানবের যুদ্ধ নিয়ে লেখা "রক্ষক" এক অনবদ্য বাংলা ছোট গল্প। রাক্ষসের অভিশাপ, দেবীশক্তি ও মানবতার রক্ষার গল্প আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে এক মহাকাব্যিক জগতে!

আমাদের WA চ্যানেল জয়েন করুন

এই মাসের সেরা ভুতের ছোট গল্প, পড়ুন ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন – ঝড়ের রাত

অধ্যায় ১ : যদা যদা হি ধর্মস্য, গ্লানির্ভবতী ভারত

রচনা - অমিত ঘোষ   ||   কন্ঠাভিনয়ে – সান্ত্বনা সেন, ঋতুশ্রী চক্রবর্ত্তী, স্বাগতম হালদার, শৈভিক ঘোষ, বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, চয়ন দে   ||   শব্দ গ্রহণ, সম্পাদনা এবং আবহ - বিশ্বজিৎ বিশ্বাস   ||   রেকর্ডিং স্টুডিও – কাহানী স্টুডিও'জ

সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

সময়কাল : ত্রেতাযুগ। স্থান: দণ্ডকারণ্য। সময় : মধ্যরাত।

প্রাসাদের একটি কক্ষে দণ্ডায়মান এক তেজোদৃপ্ত ঋষি। তাঁর সামনে নতজানু ভয়ঙ্কর দর্শন এক রাক্ষস। মন্দ্রস্বরে ঋষি বলে উঠলেন,

“তোমার প্রার্থনা আমি স্বীকার করলাম। কিন্তু যে পাপ তোমরা এতদিন করেছ তার প্রায়শ্চিত্ত তোমাদের করতেই হবে। মনে রেখো তোমার প্রাণভিক্ষা আমি যে মঞ্জুর করলাম তা কেবল তোমাদের প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিতে। কিন্তু তোমার সাথী আর তার স্বরূপে ফিরতে পারবে না। সেজন্য আমার ভুক্তাবশিষ্ট মাংসখণ্ড তোমার সঙ্গে রাখো যাতে তোমার সাথে তার আত্মাও এই ধরিত্রীর বুকে থাকতে পারে। আমি এই কক্ষ থেকে নিস্ক্রান্ত হওয়া মাত্র তোমাদের শরীর প্রস্তরীভূত হবে, কিন্তু আত্মা মুক্ত থাকবে। তবে তার বিচরণ ক্ষেত্র শুধু এই প্রাসাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। এখন ত্রেতাযুগ, কলিযুগের শেষভাগ অবধি তোমাদের প্রতীক্ষা করতে হবে, তারপর ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় তোমরা পাপমুক্ত হবে।

শুধু দুটি সতর্ক বাণী মেনে চলবে : এক, তোমাদের এই প্রস্তরীভূত জড় শরীর যেন নষ্ট না হয়, কোন দেব, দানব, নর, বানর, বা পশু-পক্ষী যেন এদিকে না আসে। তোমাদের তা লক্ষ্য রাখতে হবে। দুই, কোন নতুন পাপাচারে লিপ্ত হবে না। তুমি সম্মত আছ?”

রাক্ষস সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল। 

“উত্তম। অতি উত্তম।” 

রাক্ষসের উপর নিজের কমণ্ডলু থেকে পবিত্র জল ছিটিয়ে দিয়ে মহর্ষি কক্ষ থেকে প্রস্থান করলেন। তাঁর মুখমণ্ডল শান্ত, কিন্তু চোখে আসন্ন কোন বিপদের ছায়া। প্রাসাদের সীমানা অতিক্রম করেই তিনি আরাধ্য দেবতার উদ্দেশ্যে করজোড়ে বলে উঠলেন,

“হে প্রভু, হে চক্রপাণি, হে কমলাপতি, তুমি সর্বজ্ঞ, সর্বগামী। তুমি জান যে আমি আজ জ্ঞাতসারে এক সত্য এই পাপীদের কাছে গোপন করেছি। যদি কোন প্রাণীর মুখনিঃসৃত ভুক্তাবশেষ খাদ্য বা পানীয় এদের প্রস্তরীভূত দেহে স্পর্শ হয়, তাহলেই আমার কমন্ডুলের মন্ত্রপূত জলের প্রভাব লোপ পাবে, আর তখনই রাক্ষসশক্তি জেগে উঠবে। আর সেই শক্তি হবে আরো অনেক ভয়ঙ্কর, অপ্রতিরোধ্য। তখন সেই মায়াবী শক্তির হাত থেকে ত্রস্ত মানবকুলকে কে বাঁচাবে প্রভু? কে হবে সেই রক্ষক? কে হবে?”

কল্পবিজ্ঞান-এর বাংলা ছোট গল্প - আকাশের অতিথি: "আকাশের অতিথি" একটি মজার এবং রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান গল্প, যেখানে ভিনগ্রহের অতিথিরা দুর্গাপূজার আবহে শান্তিপুরে নেমে আসে। বাংলা ছোট গল্পের অনন্য স্বাদ নিয়ে রচিত এই উপাখ্যান পাঠককে মুগ্ধ করবে। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় ২ : অভ্যুত্থান অধর্মাস্য

সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

সময়কাল : ডিসেম্বর, ২০২১। স্থান : বস্তার জঙ্গল, ছত্তিশগড়। সময় : সকাল ১১টা।

জঙ্গলের মধ্যে পিকনিক করতে ব্যস্ত জনাকুড়ি ছাত্রছাত্রীর একটি দল। এরা সবাই জগদলপুর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। সকালের ব্রেকফাস্ট শেষ, এবার লাঞ্চের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বেশীরভাগই সেলফি তুলতে ব্যস্ত। এরই মধ্যে তিনজন এদিক ওদিক দেখে একটু পাশে সরে গেল। মনোজ, অভ্র, সঞ্জয়। শুধু খাবার আর চা-কফিতে এদের মন ভরে না, তাই তারা জঙ্গলের আরও ভেতরে ঢুকে পড়ল। কিন্তু বসবে কোথায়? জঙ্গল তো ক্রমশ আরও ঘন হয়ে উঠছে। হঠাৎ অভ্রর চোখে পড়ল বাড়িটা। 

অভ্র : “ঐ দেখ একটা বাড়ি। চল ওখানে গিয়ে বসি।” 

তিন বন্ধু বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়াল। বাড়ি নয়, বাড়ির ভগ্নাবশেষ। পাঁচিলটা তো একেবারে ধসে পড়েছে। অথচ ভাঙা বাড়ির কারুকার্য অসাধারণ। এই সব দেখে সঞ্জয় বলে উঠল… 

সঞ্জয় : “এমন জায়গায় এই বাড়ি? মনে হয় এককালে কোন রাজার প্রাসাদ ছিল! কার হতে পারে?” 

মনোজ : “আমার বাবার।” 

এই বলে মনোজ তার সাইড ব্যাগ থেকে একটা রাম-এর বোতল বের করল। এই সময় বেশি ভ্যাজর ভ্যাজর তার ভাল লাগে না।

অভ্র : “চল-চল, এবার শুরু করি। 

সঞ্জয় : “আচ্ছা ওদিকে কি? একটা দরজা দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে ওদিকে একটা ঘর আছে।”

মনোজ : “আরে ছাড় না। আমি স্টার্ট করছি।” 

এই বলে মনোজ বোতলের ছিপি খুলে গলায় খানিকটা রাম ঢেলে দিল।

সঞ্জয় : “আরে করিস কি, সকালবেলা এভাবে কেউ গেলে নাকি? বমি করে মরবি তো।” 

সঞ্জয়ের কথা মনোজের কানে ঢুকল না, সে দিব্যি বোতলে আরেকটা চুমুক দিল। তারপর মুখ মুছে বোতলটা অভ্রর হাতে চালান করে বলল,

“এবার চল। ঐ ঘরটায় ঢুকে বসা যাক‌।”

হঠাৎ কোথা থেকে ছুটে এলো একঝলক বরফের মতো ঠাণ্ডা হাওয়া। অভ্রর মনে হল কেউ যেন তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ঙ্কর তার চাহনি, ফিসফিসিয়ে বলছে…

“আর এগিয়ো না, তাহলেই সর্বনাশ হবে।”

অভ্র চমকে উঠে পিছনে তাকাল, কেউ নেই। হয়তো মনের ভুল। তিনজনে এগিয়ে গেল ভাঙা দরজাটার দিকে। মুহূর্তের মধ্যে আবহাওয়া পাল্টে গেল। নিমেষে দুলে উঠলো আশপাশের বড় বড় গাছপালা, নির্মেঘ আকাশে ঘনিয়ে এলো কাজল কালো মেঘ, ছুটে এলো ঝড়, তার সাথে পাল্লা দিয়ে নামল বৃষ্টি। শীতের সকালে কালবৈশাখী! তিনজনে একসাথে ভাঙা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ল।

একটা বেশ বড়সড় ঘর, কিন্তু কি অসম্ভব নিঃশব্দ। এমনকি বাইরের তুফানের শব্দ-ও কেউ যেন মন্ত্রবলে শুষে নিয়েছে। ঘরভর্তি নোংরা, আবর্জনা। হঠাৎ সঞ্জয় চেঁচিয়ে উঠল, “ওটা কি?”

তিনজনে ফিরে তাকাল কোণার দিকে। একটা পাথরের মূর্তি। দেখে মনে হয় কোন রাজার মূর্তি। ভয়াবহ চেহারা, দানবাকৃতি গঠন। আশ্চর্য ব্যাপার হল মূর্তির কোলে রয়েছে একটি পাথরের আঙ্গুল। আঙ্গুলে একটা পান্নাখচিত আংটি, মূর্তির থেকে ভাঙা? না, তা তো নয়। মূর্তির সব কটা আঙ্গুল-ই যথাস্থানে আছে‌। তাহলে এটা কি? দানবাকৃতি মূর্তিটি অসাধারণ প্রাণবন্ত। তিনজনে রুদ্ধশ্বাস আতঙ্কে তাকিয়ে রইল সেদিকে। হঠাৎ মনোজের মনে হল আঙ্গুল-টা যেন নড়ে উঠল।

না, ভুল না, সত্যি ই নড়ছে পাথরের টুকরোটা, যেন ওটা জীবন্ত, আর তার সাথে যুক্ত হল পচা মাংসের বিকট গন্ধ। মনোজ আর সহ্য করতে পারল না। তার মাথা ঘুরে উঠল, শরীর গুলিয়ে উঠল, তার পেটের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল সকালের ব্রেকফাস্ট আর নির্জলা রাম। তীব্র বমিতে ভেসে গেল সেই পাথুরে মূর্তি আর আঙ্গুলটি। বিধ্বস্ত মনোজ মেঝেতে পড়ে গেল। অভ্র আর সঞ্জয় বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে দেখল যে মনোজের শরীরটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে, যেন কোন অদৃশ্য দানব তার নখ দিয়ে মনোজকে চিরে ফেলছে।

আর্তনাদ বেরিয়ে এল তাদের গলা থেকে, তারপর দুজনে ঝাঁপিয়ে পড়ল দরজার দিকে, পালাতে হবে। কিন্তু সেই ভাঙা দরজা তখন বজ্রআঁটুনি-তে আটকে গেছে, নিস্তব্ধ ঘরে জেগে উঠেছে আসুরিক হুংকার। কোন অদৃশ্য হাত তাদের ছিটকে ফেলে দিল‌‌। সঞ্জয় চীৎকার করে উঠল, শেষবারের মতো। পাশে পড়ে থাকা অভ্র অনুভব করল গরম রক্তের ফোয়ারা তার সারা শরীর ভিজিয়ে দিল, সঞ্জয়ের রক্ত। চরম আতঙ্কে শেষ মুহূর্তের চীৎকার করতে চাইল অভ্র, কিন্তু তার গলা দিয়ে স্বর বের হল না। ঝাপসা অন্ধকারে তার মনে হল সেই পাথরের মূর্তি জীবন্ত হয়ে উঠেছে। 

আসুরিক পদক্ষেপে সে এগিয়ে আসছে। হঠাৎ পেছন থেকে একটি হাত তার গলা চেপে ধরল। হাতের আঙ্গুলে পান্নার আংটি অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করছে। নিজের শেষ শক্তি একত্রিত করে অভ্র মুখটা ফেরাল। আংটি বসানো হাতটা বেরিয়েছে এক দানবিক শরীর থেকে, নিঃসীম আতঙ্কে আর যন্ত্রণায় অভ্রর চোখের পাতা বন্ধ হয়ে এলো। শেষ মুহূর্তেও সে দেখল দুদিকে দুটো কালো ছায়াদানব, তাদের হিংস্র দৃষ্টিতে রাক্ষসি মায়ার তাণ্ডব আর মৃত্যুর করাল ছায়ার যুগলবন্দী।

অধ্যায় ৩ : তদাত্মাৰাম সৃজাম্যহাম

সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

সময়কাল : বর্তমান সময় (২০২২)। স্থান : ডিমরাপাল, জগদলপুর, ছত্তিশগড়। সময় : বিকেল ৪টা।

জগদলপুর থেকে যে রাস্তাটা সোজা বস্তার অরণ্যের দিকে চলে গেছে, সেই পথে পড়ে ডিমরাপাল নামে একটি ছোট গ্ৰাম। গ্ৰামের শেষপ্রান্তে একটি ছোট বাড়ির দোতলার ঘরে টেবিলের ওপর ছড়িয়ে আছে গোটাকতক পেপার কাটিং। সেগুলোর হেডলাইন মোটামুটি একরকম : 

“বস্তারের বিভীষিকা”, 

“বস্তারের জঙ্গলে ভয়ঙ্কর মৃত্যুর কবলে আরও দুই”। 

ঘরের জানালায় রাস্তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইমনকল্যাণ চৌধুরী, ছত্তিশগড় পুলিশ ক্রাইম ব্রাঞ্চের একজন অফিসার, আপাতত আন্ডারকভার। গ্ৰামের লোকেরা তাকে জানে একজন ফ্রিল্যান্সিং ফটোগ্ৰাফার হিসেবে, যে গত দু’মাস ধরে এই বাড়িটা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। বিগত এক বছর ধরে বস্তারের জঙ্গলে ঘটে চলেছে রহস্যময় হত্যাকাণ্ড, জঙ্গলের বিভিন্ন অংশে একের পর এক পাওয়া যাচ্ছে মানুষের ছিন্নভিন্ন দেহ। ভিক্টিম’রা সবাই স্থানীয় বাসিন্দা। বস্তারের জঙ্গলে লেপার্ড ছাড়া কোন বড় জানোয়ার নেই, সুতরাং অজানা জন্তুর আক্রমণ নয়। পুলিশের ধারণা এটা কোন সিরিয়াল কিলারের কাজ; কিন্তু ঘন জঙ্গলে অজানা সিরিয়াল কিলার কি করছে? উত্তর জানা নেই কারোরই, তাই পাঠানো হয়েছে ইমনকে, এই সিরিয়াল কিলারকে ধরার জন্য।

জানালা ছেড়ে ইমন টেবিলের দিকে তাকাল। বেশ সুপুরুষ-ই বলা চলে তাকে। শ্যামবর্ণ লম্বা চওড়া চেহারা,  মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি একটা আলাদা গাম্ভীর্য এনে দিয়েছে। বয়স ত্রিশের আশেপাশে। ইমন টেবিল থেকে পেপার কাটিং-এর পাশ থেকে একটা লাল ফাইল তুলে নিল। অন্ধকার নামছে, সুইচ টিপে ঘরের আলোটা জ্বালিয়ে সে ফাইলটা খুলল‌। বেরিয়ে এলো কতগুলো ফটো, ডেডবডির। ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় প্রতি ক্ষেত্রেই দেহের নিম্নাংশ মূলত পেট ছিন্নভিন্ন হয়েছে, ইমন একটা ফটো তুলে নিল, চোখের সামনে কিছুক্ষণ ধরে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করল। তার মুখে হালকা হাসি ফুটে উঠল, যেন কোনো সাফল্য অর্জন করেছে। সে যেটা দেখতে পেয়েছে সেটা অন্য কারো চোখে ধরা পড়বে না। 

তারপরই তার হাসি মিলিয়ে গেল যখন তার মোবাইল বেজে উঠল, হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেসেজ ঢুকেছে। মেসেজটা এসেছে তার সবথেকে বিশ্বস্ত অনুচরের থেকে‌। একটা ফটো – একটি কাপল্, বাইকে চড়ে আছে। সে মনে মনে বলে উঠলো, “স্বামী – স্ত্রী? হতেও পারে, ফটোতে মুখ খুব পরিষ্কার আসনি‌।”

অনেক দিন থেকেই সে এদের পিছনে পড়ে আছে। তার সোর্স অনুযায়ী প্রায় প্রতিটি মার্ডারের পরেই ঘটনাস্থলে পাওয়া গেছে একজোড়া পায়ের ছাপ, পুরুষ এবং স্ত্রীলোক। না, কেউ তাদের চোখে দেখেনি। তবে এই বাড়িতে ঘাঁটি গেড়ে বসার পর ইমন তার নিজের সোর্স কাজে লাগিয়েছিল‌। অদ্ভুত ব্যাপার হল তার সোর্সের স্পেশাল ক্ষমতা থাকা স্বত্বেও তারা এদেরকে এতদিন ট্র্যাক করতে পারেনি। তাই বলে হাল ছাড়েনি ইমন, তার নিজস্ব সোর্স নিয়ে খোঁজ চালিয়ে গেছে। 

ইমন : “অবশেষে পাত্তা করা গেছে এক রহস্যময় দম্পতির, যারা নাকি বিগত চার-পাঁচ মাস ধরে বস্তারের জঙ্গলে ঘোরাফেরা করছে, গ্ৰামের মানুষদের সাথে মেলামেশা করছে সমাজকর্মী হিসেবে। কিন্তু তাদের পায়ের ছাপ-ই কি মার্ডার স্পটে রয়েছে? যদি তাই হয় তাহলে কেন? আরো আছে, আরো–ও আছে । প্রতিটি ভিক্টিমের পোস্টমর্টেম রিপোর্টে এক অদ্ভুত মিল পাওয়া গেছে : প্রত্যেকের পাকস্থলীতে পাওয়া গেছে সেদ্ধ রাঁধা মাংস, অথচ কিসের মাংস সেটা অ্যানালাইসিসে বোঝা যায় নি। মুরগি, ছাগল, গরু, ভেড়া, এমনকি কুকুর বা বেড়াল-ও নয়। কিসের মাংস খেয়েছিল প্রতিটি মানুষ – আর তার ফলেই কি মৃত্যু হয়েছে! তাহলে শরীর ছিন্নভিন্ন হল কিভাবে? আর এসবকিছুর সাথে ঐ দম্পতির কানেকশন কোথায়? (ইমন দাঁতে দাঁত চেপে ধরল‌।) অবশেষে তাদের খোঁজ পাওয়া গেছে, এবার, এবার অ্যাকশন।”

সিঁড়িতে পায়ের শব্দ হল‌। সামান্য চমকে উঠল ইমন। না, অচেনা কেউ নয়। দরজা নক করে ঘরে ঢুকল বাসক, ইমনের সাথী তথা অ্যাসিস্ট্যান্ট। বেঁটেখাটো কালো চেহারা, ইমনের সমবয়সী, কিন্তু চোখেমুখে একটা ধূর্ততার ছাপ। চোখের দৃষ্টি হিংস্র, ইমনের মতো ঠাণ্ডা নয়। বাসক ঘরে ঢুকেই বলে উঠল, 

বাসক : “হাই ই…..”

ইমন : “তোকে কতবার বলেছি আমার নাম ধরে ডাকবি না?”

বাসক : “স্যরি, হাই বস।”

ইমন :  “কি খবর বল।”

বাসক : “হোয়াটসঅ্যাপ দেখেছ? ফটো এসেছে!”

ইমন : “হ্যাঁ। তবে ফটো ক্লীয়ার না। আপডেট বল।”

বাসক : “মায়া অনেক চেষ্টা করেও এর বেশি পারেনি। ও আমদের বেস্ট সোর্স‌।”

ইমন : “সেটাই আশ্চর্য লাগছে। মায়া কোনদিন ফেল করে না। ওর হাত থেকে কেউ বাঁচতে পারে না। বাই দ্যা ওয়ে, এদের ফটো পেল কি করে?”

বাসক : “লাস্ট মার্ডার স্পটের পাশে একটা তেঁতুল গাছের পাশে এদের বাইক থেমেছিল, কেন কে জানে! মায়া ওখান থেকে ওদের ইমেজ পেয়েছে। ঐ জায়গাটা মায়ার …..।”

ইমন : “জানি। আশ্চর্য হচ্ছে এরা এতদিন মায়াকে এড়াতে পারল কি করে? কোন মন্ত্রবলে? যাকগে, অন্তত একটা ছবি তো পাওয়া গেছে। মায়াকে বল ওর স্পেশাল ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ফটো অনুযায়ী ঐ কাপল্ কে খুঁজে বের করতে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আমাদের জানতেই হবে এরা কারা, আর কেন মার্ডার স্পটে হাজির থাকছে। এদের ঠিকানা পেলেই আমরা হানা দেব।”

বাসক : “তার আর দরকার হবে না ই…, স্যরি, বস ।”

ইমন : “মানে?” 

বাসক : “ওরা আজ এই গ্ৰামে এসেছে, লোকাল হেলথ সেন্টারে। ওরা একটা NGO চালায়, জগদলপুরে নতুন ব্রাঞ্চ খুলেছে। মায়া ওদেরকে ট্র্যাক করছে। এখনো ওদের নাম ……”

ইমন : “নাম ধাম শোনার সময় নেই, দরকারও নেই। আজই ওদের সাথে কথা বলতে হবে।”

বাসক : “কিন্তু ওরা যদি কথা বলতে না চায়?”

ইমন : “তুই ভালো করেই জানিস, আমরা যে কাউকে কথা বলাতে পারি। তবে হ্যাঁ, এদের নিশ্চয়ই কোন বিশেষ ক্ষমতা আছে, নাহলে মায়াকে এতবার এড়িয়ে যাওয়া সাধারণ কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তাই দেখাসাক্ষাৎ কথাবার্তা হবে আমাদের প্ল্যানমাফিক।”

বাসক : “কোথায় হবে? আর কবে?”  

ইমন : “এই বাড়িতে, আমাদের ডেরায়, আজই।”

বাসক : “কিন্তু এখানে ওদের আনবে কিভাবে?”

ইমন : “একটা প্ল্যান মাথায় এসেছে। জগদলপুরে ফেরার রাস্তা এই বাড়ির সামনে দিয়ে। আশেপাশে আর আর কোন বাড়ি নেই, আর তারপরই ধূধূ হাইওয়ে। যদি সন্ধ্যেবেলা ফেরার সময় কোনভাবে ওদের বাইক আটকে যায়, তাহলে রাতটুকু থাকার জন্য ওদের এই বাড়িতেই আশ্রয় চাইতে হবে।”

বাসক : “ওরা বাধ্য হবে আমাদের ডেরায় ঢুকতে! তারপর ….”

ইমন : “তারপর জানা যাবে ওদের আসল উদ্দেশ্য। জানিস তো কথা পেতে গেলে কথা দিতে হয়! মনে হচ্ছে আমাদের মিশনের আজ একটা ব্রেক-থ্রু পাওয়া যাবে।”

বাসক : “তার মানে তুমি ওদের সব সত্যি কথা বলে দেবে? তারপর যদি ওরা আমাদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়?”

ইমন : (কঠিন ভাবে) “আমরা একটা মিশনে এসেছি; সেটা পুরো করবোই। তেমন বুঝলে ওরা দুজন রাতের অন্ধকারে হারিয়ে যাবে‌। আজকের থিম – শিকার আর শিকারী। তুই রেডি হয়ে নে। আর মায়াকে কন্টাক্ট করে বল ওদের ট্র্যাক করতে, আজকের অপারেশনে ওর সাহায্য লাগবে।”

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - আষাঢ়ের সন্ধ্যে: "আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় ৪ : পরিত্রাণায় সাধুনাম

সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

সময়কাল : সেই একই দিন। স্থান : একই। সময় : সন্ধ্যা ৭টা‌।

শুনশান রাস্তা দিয়ে জগদলপুরের দিকে ছুটে চলেছে একটা বাইক। বাইকের আরোহী দুজন। একজন পুরুষ আর একজন মহিলা। হঠাৎ রাস্তায় একটা আওয়াজ হল, আর সাথে সাথে বাইকটা থেমে গেল। 

লোপা : “কি হল?” 

অঘোর : “বাইকের টায়ার পাংচার হয়ে গেছে।” 

লোপা : “এবার কি হবে?”

লোকটা সামনের দিকে আঙ্গুল দেখাল। প্রায় ১০০ মিটার দূরে একটা দোতলা বাড়ি, বাইরে বাল্ব জ্বলছে। 

অঘোর : “ওখানে যেতে হবে। চলো।”

আধ ঘন্টা পরে। ইমনের ড্রয়িংরুমে বসে আছে একজোড়া অতিথি। লোকটির গড়ন লম্বা, ফর্সা, চোখে চশমা। মহিলাও দীর্ঘাঙ্গী‌, সিঁথিতে হাল্কা সিঁদুরের আভাস। দুজনের-ই বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। গরম চায়ের কাপ অতিথিদের হাতে দিয়ে ইমন বলল, 

“নমস্কার! আমি ইমন, আর এ আমার বন্ধু বাসক‌। আমরা ফ্রিল্যান্সিং ফটোগ্ৰাফার, বস্তার জঙ্গল আর তার জন্ত-জানোয়ারের ফটো তুলে বেড়াচ্ছি দু’মাস ধরে। এই বাড়িটা ভাড়া নিয়ে আছি।” 

অঘোর : “নমস্কার! আমার নাম অঘোরনাথ, ও আমার স্ত্রী ….” 

লোপা : “নমস্কার! আমি লোপা” 

অঘোর : “আমরা সমাজকর্মী”। 

ইমন : “সেটাই আপনাদের পেশা?” 

অঘোর : “দেখুন, আমাদের নির্দিষ্ট কোন পেশা নেই। মানুষের সেবা করতে ভালো লাগে, তাই NGO কর্মী হিসেবে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াই।” 

ইমন চোখ সরু করল, অঘোরের হাতে একটা মোটা সোনার বালা, লোপার গলায় সোনার নেকলেস, আর হ্যাঁ, আঙ্গুলে জ্বলজ্বল করছে একটা দামী আংটি, পাথরটা ঠিক চেনা গেল না। পাশে রাখা ব্যাগে কি আছে জানা নেই, তবে বাইরে রাখা বাইকের দাম অন্তত দেড় লাখ – সমাজকর্মী / NGO? অঘোর বোধহয় ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন, 

অঘোর : “এই বাইক আর অলঙ্কার দেখে ভুল বুঝবেন না। ওগুলো আমাদের মালিকের। আমরা তাঁর নামে বিভিন্ন সময় সমাজসেবক হিসাবে কাজ করি।” 

লোপা : “বা কখনো সমাজসংস্কারক হিসাবে।” 

ইমন : “তাই বুঝি!” 

লোপা : “ইয়েস স্যার। আমি একটাও মিথ্যে কথা বলছি না।” 

বাসক : “আপনারা নন-ভেজিটারিয়ান তো? আমাদের কিন্তু রাতে রুটি আর মাংস।” 

অঘোর : (হাসিমুখে) “খাওয়ার ব্যাপারে আমার কোন বাছবিচার নেই, আর মাংসে তো আরওই না। আর হজমশক্তিও অত্যন্ত ভালো, দেখে নেবেন। তবে আমার মিসেস কিন্তু পুরো ভেজ।” 

ইমন : “নো প্রবলেম, ওনার জন্য পনীর আছে। আপনারা রেস্ট নিন, আমরা রান্নার ব্যবস্থা করি।”

ইমন চোখের ইশারায় বাসককে ডেকে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। বাইরে গিয়েই সে ফিসফিস করে বলে উঠল, “অপারেশন স্টার্ট।” 

বাসক : “ওকে বস”

রান্নাঘর। বাসক সদ্য বানানো একগোছা রুটি হাতে নিয়ে সেগুলো ক্যাসারোলে ভরে রাখল। ইমন রান্নাঘরে ঢুকেই বাসক কে বলল, 

ইমন : “রুটি কমপ্লিট?”

বাসক : “হ্যাঁ। এই শেষ হল।” 

ইমন : “তাহলে মাংসটা করে ফেলা যাক। তারপর ইন্টিরোগেশন শুরু করব।”

ইমন মুচকি হাসল। তারপরই সে এক অদ্ভুত কাজ করল। পাশে রাখা হান্টিং নাইফটা তুলে নিয়ে সোজা বাসকের বুকে বসিয়ে দিল। মুহূর্তের মধ্যে বাসক মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল। নির্লিপ্ত ভাবে সেদিকে তাকিয়ে ইমন বলল, “আই অ্যাম স্যরি ভাই। তোকে বলার সময় ছিল না। অপারেশনের শেষটা আমাকে একাই করতে হবে, গুডবাই।”

অধ্যায় ৫ : বিনাশায়-চ দুষ্কৃতাম, ধর্ম সংস্থাপনার্থায়

সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

সময়কাল / স্থান : একই। সময় : রাত ১১টা।

ডিনার শেষ। ইমনের ড্রয়িংরুমে বসে আছে তিনজন – ইমন, অঘোর আর লোপা। বাইরে শুরু হয়েছে প্রবল ঝড়বৃষ্টি। বাসক নেই। খাওয়ার সময় ইমন নিজে থেকেই জানিয়েছে যে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করায় বাসক শুয়ে পড়েছে, আজ আর উঠবে না। ইমন বলল, “আপনাদের ড্রিঙ্কস চলে তো?” 

অঘোর : “আমার স্ত্রীর চলে না”

লোপা : “আর তুমি হলে বিশ্বখাদক। এক সমুদ্র জল তুমি গিলে নিতে পার, একপাত্তর তো নস্যি।”

অঘোর ও ইমন: “চিয়ার্স।”

নিজের গ্লাসে চুমুক দিয়ে ইমন সিরিয়াস হল। মনে মনে ভাবল এবার সোজাসুজি আসল কথায় আস্তে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ।  

ইমন : “আচ্ছা আপনারা এই ডিমরাপালে ঠিক কি কারণে এসেছিলেন জানতে পারি? শুধু ডিমরাপাল-ই নয়, বিগত বেশ কিছুদিন ধরে আপনাদের বস্তারের জঙ্গলে বিভিন্ন এরিয়ায় দেখা গেছে। …. বিশেষত যে সমস্ত অঞ্চলে ভয়ঙ্কর মার্ডার হয়েছে।” 

অঘোর : “আপনি এত কথা জানালেন কি করে! আর সেকথা জেনে আপনি কি করবেন, একজন ফ্রিল্যান্সিং ফটোগ্রাফার?”

ইমন : “স্যরি, আমার আসল পরিচয় পরে বলছি। এখন আমার প্রশ্নের জবাব দিন।” 

অঘোর : ” আপনার কি ধারণা আমরা মার্ডার করেছি?”

লোপা : “আমরা সমাজসেবক, মাই ডিয়ার স্যার। আমরা মানুষকে বাঁচাই, মারি না। আমি আগেই বলেছি যে আমি একটাও মিথ্যে কথা বলি না। আমি একটা বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী, মিথ্যে বলে নিজেকে অপমান করি না।” 

ইমন : (অধৈর্যভাবে) “ওসব বাজে কথা থাক। আমি জানতে চাই আপনারা মার্ডার স্পটে কি করছিলেন। আর আপনারা কিন্তু আমার রান্না করা খাবার খেয়ে এখান থেকে আর বেরোতে পারবেন না। সো কাম অন। আমার হাতে বেশি সময় নেই।” 

অঘোর : “লোপা সত্যি বলছে, স্যার। আমরা কাউকে মারতে নয়, লোকের প্রাণ বাঁচাতেই ঐসব মার্ডার স্পটে গেছি। খুনের পর, উদ্দেশ্য একটাই, মার্ডারারকে খুঁজে বের করা এবং তাকে ধরা।”

ইমন কিছুক্ষণ একটু চুপ করে রইল। এই পন্থায় কাজ হচ্ছে না, এবার তাকে অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে। ওপর থেকে আনা লাল ফাইলটা সে বাড়িয়ে দিল অঘোরের দিকে। 

ইমন : “এখানে মার্ডারগুলোর কিছু ডিটেইলস আছে। দেখে বলুন তো আর কি জানেন আপনারা এই মার্ডার সম্পর্কে?”

এতক্ষণ পরে অঘোর একটু আগ্ৰহ দেখাল। ফাইলটা সে আর তার স্ত্রী কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করল, তারপর ইমনের দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। 

অঘোর : (হেঁসে) “দুটো পয়েন্ট বেশ ইন্টারেস্টিং। এক, লাশের ফটোতে দেখা যাচ্ছে যে ভিক্টিমের পেটটা ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো চেরার খাঁজটা বাইরের দিকে। অথচ বাইরে থেকে অস্ত্র চালালে চেরাটা হওয়া উচিত ভেতর দিকে। তাহলে কি পেটের ভেতর থেকে অস্ত্র চালানো হয়েছিল! কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? আর দুই, পোস্টমর্টেম এবং ভিসেরা রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ভিক্টিম মাংস খেয়েছিল, কিন্তু কিসের মাংস – সেটা বলা যায়নি। তাহলে কি এমন খেল যা অ্যানালাইসিস করেও বোঝা গেল না। তার মানে একটাই : ঐ প্রাণীটির মেডিক্যাল সায়েন্সে কোন রেকর্ড নেই। সেটাই বা কিভাবে সম্ভব? তার মানে বস্তার অরণ্যে এক অজানা প্রাণী ঘুরে বেড়াচ্ছে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট যার কোন খোঁজ রাখে না। আর যেহেতু গত এক বছর ধরে এই হত্যাকাণ্ড হয়ে চলেছে সুতরাং এটা ধরে নেওয়া যায় যে ঐ অজানা প্রাণী বছর খানেক আগেই এখানে এসেছে, আগে ছিল না।” 

ইমন : “বাঃ, চমৎকার বলেছেন তো! এমনভাবে বললেন যেন পুরো প্ল্যানটা জানেন। এমনটা তো শুধু মার্ডারার-ই পারে।” 

লোপা : “না, আরও একজন জানবে। মার্ডারারকে যে আগে থেকেই চেনে, তার খুনের সিম্পটম গুলো জানে, রাদার বলা উচিত : তাদের।” 

ইমন : (গর্জন করে) “ইউ মিন, খুনী দুজন? আর তারা আগেও এভাবে খুন করেছে? আর সেটা আপনারা জানেন কি করে! সেটা কবে হয়েছিল? আর, ডাবল মার্ডারার থিওরীটা আপনাদের দুজনের সাথে তো পারফেক্টলি ম্যাচ করে।” 

লোপা : “কুল ডাউন, মিঃ ইমন। আগেই বলেছি, আমরা মার্ডারার নই, তবে হ্যাঁ, তাদের নাম জানি।

অঘোর : “এই মার্ডারার-দের হাতে আগের খুনগুলো হয়েছিল বহুকাল আগে, বা বলা ভালো বহু যুগ আগে। তাই না লোপা?” 

লোপা : “টু বি মোর স্পেসিফিক, তিন যুগ।”

ইমন :(উত্তেজনা) “হোয়াট!” 

অঘোর : “ইয়েস স্যার। আপনাকে বরং শুরু থেকেই বলি। ত্রেতাযুগে দণ্ডকারণ্যে দুই রাক্ষস বাস করত, ইলবল আর বাতাপী। তারা ছিল প্রচণ্ড দুরাচারী। অন্যান্য রাক্ষস মানুষের প্রাণবধ করত স্বভাবের দোষে, বা নরমাংসের লোভে। কিন্তু এদের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের আত্মাকে দখল করা‌। সেটা করতে গিয়ে এরা এক অদ্ভুত উপায় অবলম্বন করত। ইলবল লোককে, বিশেষত মুনি ঋষিদেরকে নিমন্ত্রণ করে নিজের প্রাসাদে নিয়ে আসত। আর তাদের খাওয়াত ভেড়ার মাংস। সে ভেড়া সত্যিকারের ভেড়া না, বাতাপী মায়াবলে ভেড়ার রূপ ধারণ করত। যেই খাওয়া শেষ হত, ইলবল বাতাপীর নাম ধরে ডাকত, আর সাথে সাথে বাতাপী পেটের ভেতর থেকে পেট চিরে বেরিয়ে আসত, বেচারা মুনিরা মারা পড়ত। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে তাদের অস্থিমজ্জায় রাক্ষসের দেহাংশ থাকার কারণে তাদের আত্মা ঐ দুই রাক্ষসের দাসত্ব স্বীকার করতে বাধ্য হত। এভাবে দণ্ডকারণ্যে মুনিদের প্রাণসংশয় হয়ে উঠেছিল। তখন ভগবান বিষ্ণুর নির্দেশে মহর্ষি অগস্ত্য তাদের বাড়িতে গেলেন। তিনি করলেন এক চমৎকার। দুর্ধর্ষ শক্তির বলে তিনি খাওয়ার সাথে সাথেই ভেড়ার মাংস হজম করে ফেললেন। ইলবল বার বার নাম ধরে ডাকা স্বত্ত্বেও বাতাপী আর অগস্ত্যের পেট চিরে বেরিয়ে এলো না। তখন ভীত ইলবল অগস্ত্যের পা ধরে নিজের প্রাণভিক্ষা চাইল। দয়ালু মহর্ষি তা মঞ্জুরও করলেন। বাতাপীর হাতে জন্মগত এক আংটি ছিল, সেই আঙ্গুলটি অগস্ত্য খান নি। বাতাপীর আত্মা সেই কাটা আঙ্গুলে রয়ে গেল। মুনি তাদের দুজনকে তিনযুগ ধরে প্রায়শ্চিত্তের নির্দেশ দিয়ে তাদের শরীর জড়পদার্থে পরিণত করে প্রস্থান করলেন।” 

ইমন : (রেগে) “কি আজেবাজে পৌরাণিক গল্প শোনাচ্ছেন মশাই। আপনি বলতে চান যে এই কলিযুগে ইলবল আর বাতাপী কোনভাবে আবার জেগে উঠেছে, আর তারা আগের পদ্ধতিতে, আই মিন ভেড়ারূপী বাতাপীকে ইউজ করে ইলবল এখানকার লোকদের মেরে ফেলছে! এটা ২০২২, এসব কি করে বিশ্বাস করা যায়?” 

অঘোর : “যুক্তির আলোকে স্যার, বিশ্বাসের ভিত্তিতে। চারটে জোরালো এভিডেন্স। এক, ভিক্টিমদের পেট কাটা হয়েছে পেটের ভেতর থেকে – বাতাপীর খুন করার ট্রেডমার্ক প্রসেস। দুই, সেযুগের দণ্ডকারণ্য আজ ছত্তিশগড়ের বস্তার অরণ্য, আইডেন্টিক্যাল লোকেশন অফ সিরিয়াল কিলার্স – ইলবল এণ্ড বাতাপী। আর তিন, তুমি বলবে?” 

লোপা তার ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে ইমনের দিকে এগিয়ে দিল… 

লোপা : “লুক হিয়ার, মিঃ ইমন, এটা একটা ভিসেরা রিপোর্ট। এখানে ভিক্টিমদের খাদ্যনালীতে পাওয়া মাংসের আইডেন্টিটি মেনশন করা হয়েছে : রাক্ষস।” 

ইমন : “কিন্তু রাক্ষসের টিস্যু ম্যাচ করাতে গেলে তো …….!” 

লোপা : “আমরা যে ল্যাব থেকে এই রিপোর্ট এনেছি সেখানে রাক্ষসের স্যাম্পল আছে। নিজের চোখেই দেখুন, পারফেক্ট ম্যাচ।” 

ইমন : “কিন্তু ইলবল আর বাতাপী ফিরে এল কি করে?” 

অঘোর : (সামান্য রেগে) “সেটা তো আপনি-ই ভালো বলতে পারবেন।” 

ইমন : “এনাফ। আর আমি কিছু শুনতে চাই না। আর কাউকে শোনাবার সুযোগ-ও দেব না। এই কথাবার্তা এখানেই শেষ। (চীৎকার) বা….!” 

অঘোর : “চীৎকার করে কাকে আহ্বান করছেন? বাসক? না বাতাপী?” 

ইমন : (আমতা আমতা করে কিছু বলার চেষ্টা করে)

লোপা : “এভিডেন্স নাম্বার চার, আইডেন্টিফিকেশন অ্যাট দ্যা বার। আলটিমেট এভিডেন্স। তুমি ধরা পড়ে গেছ, মিঃ ইমন। অ্যান্ড সুড আই সে, দানবরাজ ইলবল! ইয়োর গেম ইজ আপ।”

ছোটদের রূপকথার গল্প - শীতের রাজ্যের জাদু: "শীতের রাজ্যের জাদু"একটি মজাদার ছোটদের গল্প, যেখানে রাজা শীতল রূপকথার গল্পের মাধ্যমে শিশুদের জন্য শীতের রাজ্যে গরমের অনুভূতি এনে দেন। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় ৬ : সম্ভাবামি যুগে যুগে

সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

নিজের শরীরে একটা চরম ঝাঁকুনি দিয়ে ইমন তার রাক্ষস রূপ ধারণ করল। রক্ত জল করা এক জান্তব গর্জন করে সে অঘোর আর লোপার দিকে অগ্রসর হল।

রাক্ষস : “তিনটে মাতাল ছেলের মুখনিঃসৃত বমির কল্যাণে আমরা প্রস্তরীভূত অবস্থা থেকে রাক্ষসের রূপ আর ক্ষমতা ফিরে পেয়েছি। আসল ইমন চৌধুরীর লাশটা এই বাড়ির পিছনে পড়ে আছে। আজ তোমাদের-টাও সেখানে যোগ হবে। আমি বুঝেছিলাম যে তোমরা আমাকে অনুসরণ করছ। তাই কৌশলে তোমাদের এখানে এনে সব জেনে নিলাম। এবার তোমাদের মরতে হবে যাতে আমার রহস্য আর কেউ জানতে না পারে। তোমরা বুদ্ধিমান, তবুও আমার রান্না মাংস খেয়েছ। এবার আসবে যন্ত্রণাময় মৃত্যু। বাতাপী, বাতাপী!”

অঘোর আর লোপা পরস্পরের দিকে তাকাল, তারপর অনুত্তেজিত অথচ দৃঢ় পদক্ষেপে ইলবলের সামনাসামনি এসে দাঁড়াল। তারা আশ্চর্য রকম শান্ত, চোখে প্রদীপ্ত চাহনি। গম্ভীর গলায় অঘোর বলে উঠল…

অঘোর : “ইলবল, শক্তির অহঙ্কারে মত্ত হয়ে তুমি অতীতের শিক্ষা ভুলে গেছ। তিন যুগ আগে দৈবশক্তির কাছে তুমি পরাস্ত হয়েছিলে, আজও তাই হবে। তোমার চর মায়া-র মাধ্যমে তুমি আমাদের খোঁজ পেয়েছ, আর তার জাদুবিদ্যার সাহায্যে আমাদের বাইক বিগড়ে দিয়ে তোমার বাড়িতে আমাদের ঢুকতে বাধ্য করেছ – এটাই ভাবছ, তাই না? আচ্ছা ভাবতো এই কলিযুগে রাক্ষসের টিস্যু স্যাম্পল কোথায় পাওয়া যায়?” 

ইলবল পাশে পড়ে থাকা ভিসেরা রিপোর্ট-টার দিকে তাকাল, তার মাথা যেন ঘুরে উঠল। পুরো রিপোর্ট দেবনাগরী হরফে লেখা, নীচে ডক্টর’স সাইনে নাম লেখা আছে ধন্বন্তরী। 

রাক্ষস : “দেবরাজ ইন্দ্রের চিফ মেডিক্যাল অফিসার! তাহলে কি…..! না, তা কি করে সম্ভব! মায়া নিজে এদের …….।” 

ইলবলের ভাবনা ফুরানোর আগেই প্রবল বজ্রপাতে চারিদিক কেঁপে উঠল, সাথে সাথেই জানালার কাঁচ ভেঙ্গে ঘরের মেঝেতে এসে পড়ল এক ভয়ঙ্কর দর্শন রাক্ষসীর শরীর, বজ্রাঘাতে ঝলসানো। 

রাক্ষস : (অস্ফূট স্বরে) “মায়া!” 

লোপামুদ্রা :(দৈব স্বর) “দেবরাজ ইন্দ্র তোমার এই আস্তানা সার্ভিলেন্সে রেখেছেন, ইলবল। তাই বজ্র দ্বারা তোমার গুপ্তচর মায়াকে বধ করেছেন। তোমার পরম মিত্র বাতাপীর সাথে তারও খেলা শেষ।” 

চমকে উঠে ইলবল, সামনে তাকিয়েই বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গেল। এ কাকে দেখছে সে!! যেন কোন মন্ত্রবলে লোপার পোশাক বদলে গেছে, তার পরণে এখন তপস্বিনীর চীরবাস। 

লোপামুদ্রা : “বলেছিলাম না আমি একটাও মিথ্যে কথা বলছি না! তবে আমার পুরো নামটা বলা হয় নি। আমি বিদর্ভ রাজকন্যা লোপামুদ্রা। মীট মাই হাসব্যান্ড -….” 

রাক্ষস :(বিস্ময়ে) “অগস্ত্য!”

রুদ্ধশ্বাস আতঙ্কে অঘোরের রুপান্তরিত চেহারার দিকে তাকিয়ে ইলবল কথাটা শেষ করল। স্বাধ্বী লোপামুদ্রার পাশে দণ্ডায়মান জটাজুটধারী তেজোদীপ্ত মহর্ষি অগস্ত্য। 

অগস্ত্য : “তুমি মূলেই ভুল করেছ ইলবল। ভেবেছিলে কেউ তোমাকে আটকাতে পারবে না। কিন্তু এই কলিযুগে যদি রাক্ষস শক্তি নতুন করে জেগে ওঠে, তবে তাকে চ্যালেঞ্জ করে আবির্ভূত হবে দেবীশক্তি। বুঝতেই পারছ, বাতাপী আর তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে ফিরে আসবে না। তুমি জান আমার পরিপাকতন্ত্রের অসীম ক্ষমতার কথা। সমুদ্রের জল সম্পূর্ণ শুষে দানবসংহারে দেবরাজকে সাহায্য করেছিলাম। বাতাপীকে তুমি মেরে রন্ধন করে আমাকে খেতে দিয়েছিলে; ঠিক যেভাবে তুমি এই অঞ্চলের সাধারণ দরিদ্র মানুষদের নিজের জালে ফেলে হত্যা করেছ। কিন্ত গতবারের মত এবারও বাতাপী আমার পাকস্থলীতে জীর্ণ হয়ে গেছে। সেজন্যই আমার পত্নী মাংস খায়নি যাতে বাতাপীর মায়ায় ওর কোন ক্ষতি না হয়। গতবার বাতাপীর আত্মার বন্ধন খুলে দিয়ে আমি প্রচণ্ড ভুল করেছি, এবার আর তা হবে না। বাতাপীর আত্মাকে অ্যারেস্ট করার জন্য অলরেডি যমরাজ তাঁর পাশ অস্ত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন, ঐ দেখ।” 

যমরাজের কৃষ্ণবর্ণ পাশ ইলবলের চোখের সামনে ভেসে উঠল… 

অগস্ত্য :”বাতাপী এখান থেকে সোজা নরকে যাবে।” 

লোপামুদ্রা : “অ্যালং উইথ ইউ, ইলবল। খেলাটা ঘুরে গেছে, তোমরা শিকার, আর আমরা শিকারী।” 

লোপামুদ্রার শেষ বাক্যটি ইলবলের ক্রোধের জ্বালামুখী খুলে দিল। মুহূর্তের মধ্যে তার হাতে চলে এল একটা বিকট দর্শন খড়গ, সূর্যের আলোর মত তার নিষ্কলঙ্ক রং সবার চোখ ধাঁধিয়ে দিল। ইলবল চীৎকার করে বলল, (হুংকার দিয়ে) “মূর্খ তপস্বিনী! তুমি ইলবলের আসল ক্ষমতা এখনও দেখ নি, এবার দেখবে। আমি অন্যান্য রাক্ষসের মত অকারণে নরহত্যা করি না। তার পিছনে অন্য উদ্দেশ্য আছে, রাক্ষস কুলের উত্তরণ।”

লোপামুদ্রা : “জানি ইলবল” 

অগস্ত্য : (বজ্রকন্ঠে) “তোমার মালিক, বা বলা উচিত, এক্স বস – রাক্ষসরাজ রাবণ ত্রেতাযুগে তোমাকে এই অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছিলেন যাতে মানুষের আত্মাকে বন্দী করে রাক্ষসদের দাস বানানো যায়। তারপর সেই আত্মার যখন পুনর্জন্ম হবে – নর, বানর, পশু, পক্ষী, যক্ষ, দেব, দানব, সে হয়ে পড়বে রাক্ষসদের জন্মদাস। এভাবে সমগ্ৰ সৃষ্টির উপর স্থাপিত হবে রাক্ষসকুলের অপ্রতিহত কর্তৃত্ত্ব। কিন্তু ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্রের হাতে রাবণ নিহত হবার পর এই প্রজেক্ট অবসোলেট হয়ে যায়। সেটাই আবার তুমি নতুনভাবে শুরু করে ত্রিভুবনের অধীশ্বর হওয়ার স্বপ্ন দেখছ, তাই না?” 

রাক্ষস : “তুমি আর তোমার স্ত্রী প্রয়োজনের তুলনায় বড় বেশি জেনে ফেলেছ, মহর্ষি। কিন্তু এই চক্রান্তের কথা তোমরা আর কাউকে বলতে পারবে না। আমাকে এই মন্ত্রপূত খড়গটি দিয়েছিলেন স্বয়ং লঙ্কাপতি রাবণ, একে নিবারণ করার ক্ষমতা অগস্ত্য বা লোপামুদ্রা কারোরই নেই।” 

অগস্ত্য : ” কাউকে বলার প্রয়োজন নেই ইলবল; কারণ রাক্ষসদের এই গোপন প্রজেক্টের কথা অলরেডি ত্রিদেবের কর্ণগোচর হয়েছে। তাই দেবলোকের সিক্রেট এজেন্ট হিসেবে আমি এবং আমার পত্নী রাক্ষসের আস্তানায় ইনফিলট্রেট করেছি, এই প্রজেক্টকে চিরতরে ধ্বংস করার জন্য। সেকাজ আমরা প্রায় সমাপ্ত করেছি বাতাপী আর মায়াকে বিনাশ করে। বাকি আছ শুধু তুমি।” 

লোপামুদ্রা : (ধীরগলায়) “আর তোমার রাবণদত্ত খড়গ! স্বয়ং রাবণকে যিনি ত্রেতাযুগে বধ করেছিলেন, এই কলিযুগে তোমাকেও তিনিই চরম শাস্তি দেবেন। তবে তোমার মত তুচ্ছ ক্ষমতা সম্পন্ন রাক্ষসের জন্য সেই ভগবান বিষ্ণুর নিজে প্রকট হওয়ার প্রয়োজন নেই, তাঁর এই দুই কর্মীই যথেষ্ট। (অগস্ত্যকে) স্বামী, আসুন এই রাক্ষসের অন্ত করা যাক।” 

অগস্ত্য এবং লোপামুদ্রা চোখ বুজে হাতজোড় করে তাঁদের প্রভুকে স্মরণ করলেন। ইলবল খড়গ উঁচিয়ে অগস্ত্যের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে গেল। ঠিক সেই মুহূর্তে এক প্রবল আলো তার সামনে ঝলসে উঠল, সহস্র সূর্যের তেজ সম্বলিত এক চাকার মত ঘূর্ণায়মান শক্তি সহসা আবির্ভূত হল; ভগবান বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র। সেই চক্রের তেজে ইলবলের চোখ ধাঁধিয়ে গেল, খড়গ হস্তচ্যুত হল, দুহাতে চোখ ঢেকে সে অগস্ত্যের পদপ্রান্তে ধরাশায়ী হল। তার আর্তনাদ শোনা গেল, “মহর্ষি, ক্ষমা! ক্ষমা!”

অগস্ত্য : “ক্ষমা! ক্ষমা! আমি আগের বার তোমায় সাবধান করেছিলাম ইলবল, যে দ্বিতীয়বার পাপাচারে লিপ্ত হয়ো না, কিন্তু তুমি আমার কথা শোনো নি, তুমি ক্ষমার অযোগ্য।” 

মহর্ষি অগস্ত্যর কথা শেষ হতে না হতেই চক্রের আঘাতে ইলবল দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। তার মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে লোপামুদ্রা তার স্বামীকে বললেন, “আমাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ হল, তাই না?” স্ত্রীর হাতটি ধরে মহর্ষি মৃদু হেঁসে বললেন, “আপাতত। তবে দানব শক্তি যদি পুনরায় কখনো জেগে ওঠে, তখন প্রভুর আজ্ঞাবহ সমাজকর্মীরা আবার ধরিত্রীর বুকে আবির্ভূত হবে, মানবকুলের রক্ষক রূপে।”

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

আমরা কারা

নতুন বাংলা ছোট গল্প

রক্ষক

রহস্য, রোমাঞ্চ ও দেব-দানবের যুদ্ধ নিয়ে লেখা "রক্ষক" এক অনবদ্য বাংলা ছোট গল্প। রাক্ষসের অভিশাপ, দেবীশক্তি ও মানবতার রক্ষার গল্প আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে এক মহাকাব্যিক জগতে!

রহস্য, রোমাঞ্চ ও দেব-দানবের যুদ্ধ নিয়ে লেখা "রক্ষক" এক অনবদ্য বাংলা ছোট গল্প। রাক্ষসের অভিশাপ, দেবীশক্তি ও মানবতার রক্ষার গল্প আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে এক মহাকাব্যিক জগতে!

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: রক্ষক

আকাশের অতিথি

"আকাশের অতিথি" একটি মজার এবং রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান গল্প, যেখানে ভিনগ্রহের অতিথিরা দুর্গাপূজার আবহে শান্তিপুরে নেমে আসে। বাংলা ছোট গল্পের অনন্য স্বাদ নিয়ে রচিত এই উপাখ্যান পাঠককে মুগ্ধ করবে।

"আকাশের অতিথি" একটি মজার এবং রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান গল্প, যেখানে ভিনগ্রহের অতিথিরা দুর্গাপূজার আবহে শান্তিপুরে নেমে আসে। বাংলা ছোট গল্পের অনন্য স্বাদ নিয়ে রচিত এই উপাখ্যান পাঠককে মুগ্ধ করবে।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: আকাশের অতিথি

আষাঢ়ের সন্ধ্যে

"আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়।

"আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: আষাঢ়ের সন্ধ্যে

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!