ক রাতে সোহমের সামনে উন্মোচিত হয় এক অদ্ভুত দৃশ্য। লেকের ধারে এক উজ্জ্বল গোলক, আর তার ভেতরে রহস্যময় এক প্রাণী! পৃথিবী রক্ষার জন্য কি সোহমকে এই অদ্ভুত প্রাণীর সাহায্য নিতে হবে?রহস্য রোমাঞ্চে ভরা এই বাংলা গল্পে জেনে নিন সোহমের অভিযানের কাহিনী।

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » আকাশছোঁয়া রহস্য

আকাশছোঁয়া রহস্য

ক রাতে সোহমের সামনে উন্মোচিত হয় এক অদ্ভুত দৃশ্য। লেকের ধারে এক উজ্জ্বল গোলক, আর তার ভেতরে রহস্যময় এক প্রাণী! পৃথিবী রক্ষার জন্য কি সোহমকে এই অদ্ভুত প্রাণীর সাহায্য নিতে হবে?রহস্য রোমাঞ্চে ভরা এই বাংলা গল্পে জেনে নিন সোহমের অভিযানের কাহিনী।

কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে লেকের ধারে একতলা বাড়িটা নিঃশব্দে আঁধারে ডুবে ছিল। সোহম, জানলার কাচে হেলান দিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। শহরের আলোকজালের মাঝেও তারার ঝিলিক ছিটমুট ছিল দেখা যাচ্ছে। আকাশটা অনেকটা কালো কাপড়ের মতো, তার উপরে ছড়ানো হয়েছে হীরের টুকরো তারা। চাঁদ নেই, কিন্তু রাতটা মোটেই অন্ধকার নয়।

সোহমের পাশেই ঘুমিয়েছিল রানী, তার বিশ্বস্ত পালিত কুকুর। রানীর নিঃশ্বাসের শব্দটা একটা মৃদু সুর তৈরি করছে ঘরে। এই পরিচিত শব্দটা সোহমের মনে একটা শান্তি এনে দেয়। কিন্তু সেই শান্তিটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না

একটা কৃষ্ণ বিন্দু সোহমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আকাশে, তারাদের মাঝে, ক্রমে এগিয়ে চলেছে সেই কালোটে বিন্দু। একটা কৃত্রিম উপগ্রহ। কিন্তু আজ এই উপগ্রহটা একটু খানি অস্বাভাবিক লাগছিল সোহমের কাছে। হয়তো চাঁদের আলো না থাকায়, বাঁকা চোখে লাগছিল। কিন্তু একটা অদ্ভুত অনুভূতি তার মনে গাঁথা হয়ে গেল। যেন সেই কৃষ্ণ বিন্দুটা খুব কাছেই আছে। এত কাছে যে যেন হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে ফেলা যাবে।

সে ঘুম থেকে উঠে টেবিলে রাখা দূরবীনটা নিল। চোখ লাগিয়ে দেখল উপগ্রহটাকে। কিন্তু কিছুই অস্বাভাবিক লাগল না। হয়তো সত্যিই চোখের ছলনা। রানী ঘুম থেকে জেগে উঠে সোহমের পাশে এসে গড়িয়ে পড়ল। সে তার মাথাটা সোহমের হাঁটুর কাছে রেখে দিল। সোহম আলতো করে তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে জানালার কাছে ফিরে গেল। কিন্তু সেই অস্বস্তিটা এখনও পুরোপুরি কাটেনি।

এমন সময় হঠাৎ বাড়ির বাইরে একটা জোরে ঝমঝম শব্দ হলো। সোহম জানালাটা আরো খুলে বাইরে তাকাল। রাস্তাঘাট একেবারেই ফাঁকা। তখন রাত সাড়ে তিনে। ঘুমের দেশে তলিয়ে থাকা শহরটা নিঃশব্দ। সেই সময় আবার শব্দটা হলো। এবার আরো জোরে। এটা যেন ধাতুর কিছু একটা ঠকঠকানি।

সোহম বুঝতে পারছিল না, শব্দটা আসছে কোন দিক থেকে। একটু পর সে দেখল, বাড়ির ঠিক পেছনে, লেকের ধারের গাছপাড়ার মধ্যে একটা মিটমিটে আলো জ্বলে উঠেছে। সে জানালার কাচে কপাল ঠেকিয়ে ভালো করে দেখার চেষ্টা করল। আলোটা খুব ক্ষীণ, কিন্তু লালচে।

রানী নিচু স্বরে গর্জানি শুরু করল। সোহম তাকে চুপ করানোর জন্য আলতো করে স্পর্শ করল। সে জানত এই এলাকাটা নিরাপদ নয়। মাঝেমধ্যেই লেকের ধারে মদ খেয়ে আড্ডা দেওয়া ছেলেদের গোলযোগ শোনা যেত। হয়তো আজও সেই রকম কিছু। কিন্তু এই লাল আলো আর ধাতুর ঠকঠকানি? এগুলো কিছুই ঠিক মিলছিল না।

কৌতূহল আর একটু ভয় মেশানো টানে সোহম জানালাটা খুলতে গেল। কিন্তু হঠাৎ সে থেমে গেল। একটা ঠাণ্ডা হাওয়া এসে তার গায়ে লাগল। সেই সাথে একটা অদ্ভুত গন্ধ। ধাতুর মতো, পোড়া পলিথিনের মতো। গন্ধটা এতটাই তীব্র ছিল যে, সোহমের নাক সিঁটকে গেল।

এই অস্বাভাবিক ঘটনায় সোহমের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব চলছিল। একদিকে কৌতূহল তাকে জানালার বাইরে যেতে বলছিল, অন্যদিকে ভয় তাকে সাবধান করে দিচ্ছিল। শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিয়ে সোহম জানালাটা না খুলেই টেলিফোনটা হাতে নিল। সে জানতো ঠিক পাশেই থানা আছে। তবে রাতের বেলায় কিছু হবে কিনা সন্দেহ ছিল।

মোবাইলটা হাতে নিয়ে নম্বর ডায়াল করতেই সে থমকে গেল। নেটওয়ার্ক নেই! সে আবার চেষ্টা করল, কিন্তু ফল একই। রানী এবার জোরে ঘেউঘেউ করে ডেকে উঠল। সে বোঝা যাচ্ছিল, সেও এই পরিস্থিতিতে অস্বস্তিতে আছে।

সোহম জানলা দিয়ে আবার বাইরে তাকাল। লাল আলোটা এখনও জ্বলজ্বল করছে গাছপাড়ার মধ্যে। ঠকঠকানির শব্দটাও থেমে গিয়েছে। কিন্তু সেই অস্বাভাবিক গন্ধটা এখনও বাতাসে ভাসছে। সিদ্ধান্ত নিতে হলো। সোহম জানতো এভাবে বসে থাকা ঠিক নয়। একটা কিছু একটা ঘটছে, আর সে বসে থেকে দেখবে?

সে রানীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির দরজা খুলল। রানী জোরে ঘেউঘেউ করে উঠল, যেন সোহমকে বাধা দিতে চাইছে। কিন্তু সোহম আর দেরি করল না। টর্চ জ্বালিয়ে সে বেরিয়ে পড়ল বাড়ির বাইরে। লেকের দিকে যাওয়ার রাস্তাটা অন্ধকার। টর্চের আলোয় সে এগিয়ে চলল। গাছপাড়ার কাছে পৌঁছলেই সে থমকে গেল।

একটা লোহার গেট, যেটা সাধারণত বন্ধ থাকে, সেটা এখন খোলা। আর গেটের ভেতরে, লেকের ধারে, একটা অদ্ভুত আকৃতির যান দাঁড়িয়ে আছে। যেন কোন বিজ্ঞানের বই থেকে বেরিয়ে এসেছে। আকাশের কৃষ্ণ বিন্দুর মতোই কালো, কিন্তু আকারে অনেক বড়। এবং সেই যান থেকেই আসছে সেই লাল আলো আর ধাতুর ঠকঠকানির শব্দ।

রানী সোহমের পা তেড়ে ধরে জোরে টান দিল। কিন্তু সোহম থামল না। কৌতূহল আর একটু ভয় মেশানো টানে সে টর্চের আলোয় গেটের দিকে এগিয়ে গেল।

বাঁকা হয়ে একবার গেটের ভেতর ঝাপসা করে দেখল। সেটা কোনো উড়োজাহাজ নয়, বরং একটা বড় ধাতব গোলক। একেবারে মসৃণ, কোনো দরজা বা জানালা চোখে পড়ল না। লাল আলোটা গোলকের নীচের দিক থেকে আসছিল, যেন জ্বলজ্বল করা কোনো পাথর। আর ঠকঠকানির শব্দটা? সেটা গোলকের দেহ থেকেই আসছে। যেন কেউ ভেতর থেকে ধাতব দেয়ালটা খিল খিল করে আঘাত করছে।

সোহমের পায়ে আরো জোর দিল। সে জানতো ঝুঁকি নিচ্ছে, কিন্তু কৌতূহলটা তাকে আর থামায় রাখতে পারছিল না। হঠাৎ, ঠকঠকানির শব্দটা থেমে গেল। লাল আলোটাও নিভে গেল। চারপাশে একটা অস্বাভাবিক নিঃশব্দতা নেমে এলো। শুধু লেকের ছোট্ট ঢেউয়ের শব্দটা বাতাসে ভাসছে।

সোহম আরো একটু এগিয়ে গেল। সে টর্চের আলোয় গোলকটা ঘুরে দেখছিল। হঠাৎ, গোলকের একটা অংশ ক্লিক করে খুললো। একটা সরু সিঁড়ি বেরিয়ে এলো। সিঁড়িটা এতটা আলোকিত যে, তার আলোয় গোলকের ভেতরের একটা ঝাপসা ছবি দেখা যাচ্ছে।

সোহম হতবাক হয়ে গেল। ভেতরে কোনো যন্ত্রপাতি নেই। শুধু একটা সাদা ঘর, আর ঘরের মাঝখানে একটা চেয়ারে বসে আছে একটা মানুষ। কিন্তু ঠিক মানুষ না। লম্বা, সরু দেহ, মুখটা একটু লম্বাটে, আর চোখ দুটো বড় আর কালো। সে সোহমের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল। সেই হাসিটা এতটা অদ্ভুত ছিল যে, সোহমের শরীরটা কাঁটা দিয়ে উঠল।

মানুষটা, না, সেই অদ্ভুত প্রাণীটা, সোহমের দিকে হাত বাড়িয়ে ইশারা করল। “এসো,” একটা মৃদু, কিন্তু অদ্ভুত স্বরে সে বলল। সোহম জানতো এটা হয়তো ভুল, হয়তো বিপদ, কিন্তু কৌতূহল আর একটু ভয় মিশ্রিত একটা টান তাকে সামনে এগিয়ে যেতে বাধ্য করল। রানী এবার আর টান ধরে না, সে নিচু স্বরে ঘেউঘেউ করে কাঁপছে। সোহম একবার রানীর দিকে তাকাল, তারপর সিঁড়িটা বেয়ে গোলকের ভেতরে ঢুকে গেল।

গোলকের ভেতরে ঢুকে সোহম প্রথমে অন্ধকারে কিছুই দেখতে পেল না। কিন্তু সেই অদ্ভুত প্রাণীটির চেয়ার থেকে আলো ছড়িয়ে পড়ায় ক্রমে সবকিছু স্পষ্ট হলো। সাদা ঘরটা আধুনিক যন্ত্রপাতিতে ভরা। বিশাল বিশাল স্ক্রিনে নক্ষত্রজাল আর পৃথিবীর ছবি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত লাগল সেই প্রাণীটির চোখ। সেই দুটো কালো গভীর চোখ যেন সোহমের মনের ভেতর পর্যন্ত দেখছে।

“ভয় পেওনা,” সেই প্রাণীটি মৃদু স্বরে বলল, “আমি তোমাকে কোনো ক্ষতি করব না।”

“আপনি কে?” সোহম সাবধানে জিজ্ঞাসা করল।

“আমি জ্যোতি,” অদ্ভুত প্রাণীটি জানাল, “আমি আরো অনেক দূর থেকে এসেছি। পৃথিবী সম্পর্কে জানতে।”

সোহম কিছুটা অবাক হয়ে গেল। এতদূর থেকে, এমন একটা অদ্ভুত যানে! কিন্তু জ্যোতির আচরণে কোনো শত্রুতা নেই। বরং একটা কৌতূহল।

“আপনি কীভাবে এলেন?” সোহম আবার জিজ্ঞাসা করল।

“আমরা মহাকাশের অনেক গভীর থেকে এসেছি,” জ্যোতি ব্যাখ্যা করল, “আমাদের গ্রহটা মারা যাচ্ছে। নতুন বাসস্থান খুঁজছি।”

এবার সোহমের বুকটা কেমন করে উৎকণ্ঠায় ভরে গেল। পৃথিবী কি তাদের নতুন বাসস্থান হবে?

“আপনি পৃথিবী নিতে পারবেন না,” সোহম দৃঢ় স্বরে বলল, “এটা আমাদের বাড়ি।”

জ্যোতি কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর আবার বলল, “তা ঠিক, কিন্তু তোমাদের পৃথিবীও ঠিক নিরাপদ নয়।” সে একটা স্ক্রিনের দিকে ইশারা করল, “আমরা দেখেছি, তোমরা নিজেরাই ধীরে ধীরে তোমাদের গ্রহটা ধ্বংস করে দিচ্ছ। যদি তোমরা নিজেরাই সচেত না হও, তাহলে হয়তো আমাদের মতোই পরিস্থিতিতে পড়বে।”

সোহম চুপ করে রইল। জ্যোতির কথাগুলো সত্যি। পৃথিবীর দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, এসব নিয়ে কথা হয় প্রতিনিয়ত। কিন্তু এতটা গুরুত্ব দিয়ে কেউ ভাবে না।

“আমরা তোমাদের সাহায্য করতে পারি,” জ্যোতি আবার বলল, “আমাদের বিজ্ঞান অনেক এগিয়ে।”

সোহম ভাবছিল, বিশ্বাস করা যায় কিনা। এই অদ্ভুত প্রাণীদের কথা কতটা সত্যি? কিন্তু জ্যোতির চোখে কোনো মিথ্যা নেই।

“আপনি আমাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারবেন?” শেষমে সোহম জিজ্ঞাসা করল।

“এটা পরে আলোচনা করা যাবে,” জ্যোতি উত্তর দিল, “এখন তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়া দরকার।

“কিন্তু আমার রানী…” সোহম মনে রাখল তার বিশ্বস্ত সঙ্গীকে।

জ্যোতি হাত বাড়িয়ে একটা বোতাম চাপল। একটা দরজা খোলা হলো। দরজার বাইরে লেকের ধার, ঠিক যেখান থেকে সোহম এসেছিল, সেই জায়গাটা দেখা যাচ্ছে। রানী সেখানে অস্থির হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

“চলো,” জ্যোতি বলল।

সোহম একবার জ্যোতির দিকে তাকাল, তারপর রানীর দিকে। এই অদ্ভুত অভিজ্ঞতাটা কি সত্যি, না কি তার কল্পনা? জ্যোতির কথাগুলো কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

কিন্তু এখন সময় ছিল না এসব নিয়ে ভাবার। রানীকে নিয়ে ফিরতে হবে। সে জ্যোতির পেছনে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো। গোলকের দরজাটা আবার ক্লিক করে বন্ধ হয়ে গেল।

রানী সোহমের কাছে ছুটে এলো এবং তার গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। সোহম তাকে আলতো করে স্পর্শ করল। এই অভিজ্ঞতাটা এতটাই অদ্ভুত লাগছিল যে, সে কিছুই বলতে পারছিল না।

“আপনি ঠিক আছেন?” জিজ্ঞাসা করল একটা কণ্ঠস্বর।

সোহম চমকে উঠে চারপাশে তাকাল। তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল একজন পুলিশ অফিসার।

“আপনি এখানে কী করছেন?” পুলিশ অফিসার জিজ্ঞাসা করল।

সোহম কিছুটা কষ্টে গলা খুলল, “আমি…আমি…”

কীভাবে সে এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটা ব্যাখ্যা করবে? কীভাবে সে জ্যোতির কথা, গোলকের কথা বলবে?

“আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে একটা লাল আলো দেখেছিলাম,” সে শেষমে বলল, “তাই বেরিয়ে দেখতে এসেছিলাম।”

পুলিশ অফিসার সন্দিগের চোখে তাকাল, “আচ্ছা,” সে বলল, “আপনি কিছু খেয়েছেন?”

“না, কিছু খাইনি,” সোহম জবাব দিল, “আমি শুধু দেখতে এসেছিলাম।”

অফিসার কিছু বলল না, শুধু টর্চ জ্বালিয়ে লেকের ধারের গাছপাড়াটা ঘুরে দেখল। কিন্তু কোনো অস্বাভাবিক চিহ্ন সে পেল না।

“ঠিক আছে,” সে ফিরে এসে বলল, “আপনি বাড়ি চলে যান। আমি এখানে একটু খোঁজ নিয়ে যাব।”

সোহম রানীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করল। এখনও তার মাথা ঘুরাচ্ছে। জ্যোতির সঙ্গে দেখা, তার কথা, সবকিছুই এতটা অদ্ভুত ছিল।

কিন্তু একটা জিনিস ছিল সত্যি। পৃথিবী নিরাপদ নয়। জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ, এসব নিয়ে ভাবা দরকার।

রাতের বাকিটা সময় সে জানালার কাছে বসে রাতের বাকিটা সময় সোহমের ঘুম আসল না। জ্যোতির কথা, সেই অদ্ভুত গোলক, সবকিছুই তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। সত্যিই কি এটা স্বপ্ন ছিল না? নাকি কোনো এক অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা? রানী তার পাশে ঘুমিয়ে পড়েছে, কিন্তু সোহমের মন অশান্ত।

পাখির ডাকে সকাল বেলা হলো। সোহম জানালার কাছে দাঁড়িয়ে দেখল লেকের ধারের গাছপাড়াটা স্বাভাবিক লাগছে। কোনো অদ্ভুত গোলকের চিহ্ন নেই। কিন্তু রাতের অভিজ্ঞতাটাও মুছে যায়নি। সে জানতো না কী বিশ্বাস করবে।

এমন সময় তার ফোনে একটা মিসড কল দেখাল। নম্বরটা অচেন। কৌতূহলে সে ফোনটা হাতে নিয়ে নম্বরে ফোন করল। ফোনটা কয়েকবার বাজার পর একটা মৃদু, পরিচিত স্বর এলো, “হ্যালো, সোহম?”

সোহম চমকে উঠল। “জ্যোতি?”

“হ্যাঁ,” জ্যোতির স্বরে কোনো অবাক নেই, “আমার মনে হয়েছিল আপনি ফোন করবেন।”

“আপনি…আপনি কীভাবে…” সোহম জড়িয়ে গেল।

“আমাদের কাছে কিছু কিছু ক্ষমতা আছে,” জ্যোতির উত্তর এলো, “আপনি যখন চাই আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।”

“কিন্তু কেন?” সোহম জিজ্ঞাসা করল।

“আমরা আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই,” জ্যোতি ব্যাখ্যা করল, “আমরা আপনাদের গ্রহ রক্ষা করতে চাই। কিন্তু তার আগে, আপনাদেরকে নিজেদের ভুল বুঝতে হবে।”

সোহম কিছুক্ষণ চুপ থাকল। সে জানতো না কীভাবে রাতের অভিজ্ঞতাটা ব্যাখ্যা করবে। কিন্তু জ্যোতির কথাগুলো তার মনে ছিল। পৃথিবীর দুরবস্থা, সেটাও সত্যি।

“আমি আপনাদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করব?” শেষমে সোহম জিজ্ঞাসা করল।

“আপনি যখনই রাতের আকাশে একটা সাদা তারা দেখবেন, জানবেন সেটা আমরা,” জ্যোতি জানাল, “তখন আপনার মনের কথা আমরা শুনতে পারব। এবং ঠিক সময়, ঠিক জায়গায়, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।”

ফোনের কলটা শেষ হলো। সোহম জানালার কাছে দাঁড়িয়ে রইল। আকাশে এখনও নীল, তারা দেখা যাবে না। কিন্তু সে জানতো, রাতে যখন তারা জ্বলে উঠবে, তখন হয়তো সে জানবে জ্যোতির কথাগুলোর সত্যতা। হয়তো সেদিনই পৃথিবী রক্ষার এই অবিশ্বাস্য যাত্রা শুরু হবে। সোহম জানালাটা বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়াল। তার সামনে নতুন এক দায়িত্ব, নতুন এক রহস্য। সেই রহস্যের সম্মুখীন হওয়ার জন্য সে প্রস্তুত ছিল।

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

About The Author

নতুন বাংলা ছোট গল্প

আত্মার মুক্তি

এক ভুতের গল্পে সোহিনী আত্মার মুক্তির সন্ধানে অন্ধকার শক্তির সাথে লড়াই করে। এই বাংলা ছোট গল্পটি ভয়ের ছায়া এবং সাহসিকতার একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।

এক ভুতের গল্পে সোহিনী আত্মার মুক্তির সন্ধানে অন্ধকার শক্তির সাথে লড়াই করে। এই বাংলা ছোট গল্পটি ভয়ের ছায়া এবং সাহসিকতার একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: আত্মার মুক্তি

অমীমাংসিত রহস্য

অমীমাংসিত রহস্য নিয়ে এক অনন্য বাংলা ছোট গল্প, যেখানে অতীতের গোপন সত্য উন্মোচনে শ্রেয়ার যাত্রা রহস্য ও রোমাঞ্চে ভরা। রহস্য রোমাঞ্চ প্রেমীদের জন্য আদর্শ পাঠ।

অমীমাংসিত রহস্য নিয়ে এক অনন্য বাংলা ছোট গল্প, যেখানে অতীতের গোপন সত্য উন্মোচনে শ্রেয়ার যাত্রা রহস্য ও রোমাঞ্চে ভরা। রহস্য রোমাঞ্চ প্রেমীদের জন্য আদর্শ পাঠ।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: অমীমাংসিত রহস্য

অনুভূতির ঢেউ

"অনুভূতির ঢেউ" একটি হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে নন্দিনী ও জয়ন্তের স্বপ্ন, সম্পর্ক এবং দূরত্বের মধ্যে গড়ে ওঠা ভালোবাসা সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় তাদের জীবন।

"অনুভূতির ঢেউ" একটি হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে নন্দিনী ও জয়ন্তের স্বপ্ন, সম্পর্ক এবং দূরত্বের মধ্যে গড়ে ওঠা ভালোবাসা সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় তাদের জীবন।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: অনুভূতির ঢেউ

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!