বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনটি আজ একটু বেশি ব্যস্ত। কলকাতাগামী ট্রেনের জন্য মানুষের ভিড় যেন জমে উঠেছে। গরম বাতাসে রেলস্টেশনটি যেন একটু অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, আর ভিড়ের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে, কেউ বা আবার ঝাঁকুনি দিয়ে ট্রলি টানছে, আর দূর থেকে ট্রেনের হুইসেল ভেসে আসছে। স্টেশনের চারপাশে ট্রেনের আওয়াজ, আর সিগন্যালে ঘুরে বেড়ানো ধোঁয়া, এক ধরনের স্নায়ুর টান সৃষ্টি করছে।
রিয়া, এক তরুণী সাংবাদিক, আজ কিছুটা আলাদা অনুভব করছিল। তার বড় সুটকেসের হাতল শক্ত করে ধরার মাঝেও চোখে ক্লান্তির ছাপ ছিল, কারণ কলকাতায় যেতে হবে, একটি বিশেষ কাজে। তবে, তার মধ্যে ছিল এক অজানা উত্তেজনা, মনে হচ্ছিল, আজকের এই সফর তার জীবনের বিশেষ কিছু মুহূর্ত হতে পারে। রিয়া তার কাজে বেশ ভালোই খ্যাতি অর্জন করেছে, কিন্তু আজকের এই ট্রিপটিতে কিছুটা অস্বাভাবিক অনুভব করছিল। সে জানতো, কলকাতা পৌঁছালে তার কাজের চাপ বাড়বে, কিন্তু কিছু একটা ছিল যা তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।
ঠিক তখনই, সে দেখতে পেল, একজন তরুণ ছেলেটি তার দিকে এগিয়ে আসছে। তার চোখের মধ্যে একটা অনাবিল আবেগ ছিল, এক ধরনের নীরব আকর্ষণ। ছেলেটির নাম অমিত। তিনি ছিলেন এক ট্রাভেল ব্লগার। অমিতকে দেখে রিয়া প্রথমে একটু অস্বস্তি অনুভব করলো, তবে তার চোখে ছিল এক ধরনের তাজা উন্মাদনা, যেন সারা পৃথিবী তার জন্য নতুন, যেমন এক বিস্ময়ে ভরা মনোভাব।
অমিত তার দিকে তাকিয়ে ছিল, একধরনের অবজ্ঞাহীন দৃষ্টিতে, যা রিয়া পুরোপুরি বুঝতে পারলো। তার চোখে যেন রিয়া’র সৌন্দর্য নিয়ে কোন প্রশ্ন ছিল। রিয়া নিজেও বুঝতে পারছিল, তার বাহ্যিক সৌন্দর্য কেবল বাইরের কোনো বৈশিষ্ট্য নয়; এটি যেন একটা বিশেষ গাম্ভীর্য নিয়ে আসে, যা অমিতকে আকর্ষণ করছিল। রিয়া তার চোখে লক্ষ্য করলো, অমিত একটু চমকে গিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
তারা একসাথে ট্রেনে উঠলো। আর ট্রেন যখন আস্তে আস্তে চলতে শুরু করল, রিয়া মনে মনে বুঝতে পারলো, আজকের এই সফর তার জীবনের প্রথম ধাপ হতে পারে, যেটি তাকে নতুন কোনো যাত্রার দিকে নিয়ে যাবে।
প্রথম কথোপকথন
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
রিয়া আর অমিত ট্রেনের সিটে মুখোমুখি বসে ছিল। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে চলে যাওয়ার পর, প্রথম কিছু সময় দুজনই একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিল, কিন্তু কোনো কথা বলছিল না। রিয়া বুঝতে পারছিল, তার সহযাত্রী অমিত একেবারে অস্বস্তিতে আছে। তার চোখে একটু চিন্তা, একটু অবস্থা বোঝানোর চেষ্টা ছিল। তবে তার চোখে কিছু একটা ছিল—এক ধরনের আগ্রহ, এক ধরনের তৃষ্ণা যেন রিয়া’কে আরও জানার জন্য। কিন্তু অমিত তার ভাবনা নিয়ে একটু চুপ ছিল, যেন কিছু একটা বলে ফেললে সম্পর্কটা আরও গোলমাল হতে পারে।
কিছুক্ষণ পর, রিয়া নিজে থেকে বলল, “আপনি কোথা থেকে আসছেন?”
অমিত একটু অবাক হয়ে রিয়া’র দিকে তাকাল, যেন এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিল না। তারপর কিছুটা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, “আমি শিলিগুড়ি থেকে আসছি। আপনিও কি কলকাতা যাচ্ছেন?”
রিয়া হালকা হাসি দিয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমি একজন সাংবাদিক, কলকাতায় কিছু কাজ আছে। আর আপনি?”
অমিত একটু গর্বিত হয়ে বলল, “আমি একজন ট্রাভেল ব্লগার। বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ব্লগ লিখি। এভাবে অনেক কিছু শিখি, আর অনেক নতুন জায়গা দেখে ব্লগে সেগুলি শেয়ার করি।”
রিয়া একটু আগ্রহ নিয়ে শুনল। সে জানত, ট্রাভেল ব্লগিং একটা খুবই স্বাধীন পেশা, যেখানে একজনের নিজের অভিজ্ঞতাই সবচেয়ে বড় জিনিস। “অ! সেটা তো বেশ মজার কাজ। আপনি নিশ্চয়ই অনেক জায়গা ঘুরে দেখেছেন, তাই না?”
অমিত একটু চোখ কুচকে বলল, “হ্যাঁ, চেষ্টা করি যত বেশি সম্ভব ঘুরে আসার। তবে কলকাতা এখনও পুরোপুরি দেখা হয়নি। আপনিই তো কলকাতায় কাজ করতে যাবেন, তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে কিছু ভালো জায়গার কথা বলবেন, যেখানে যেতে হবে!”
রিয়া হেসে বলল, “অবশ্যই! কলকাতা তো এমন এক শহর, প্রতিটি গলির মধ্যে একটা আলাদা ইতিহাস লুকিয়ে থাকে। তবে, সবার প্রথমে একটা জায়গা দেখতে হবে—বেলুর মঠ। যদি কখনো কলকাতা আসেন, তো সেখানে যাওয়া উচিত।”
অমিতের মুখে এক হাসি ফুটে উঠল। “বেলুর মঠ! শুনেছি সেখানে অনেক শান্তি থাকে। আপনারা সাংবাদিকরা তো সব কিছুতেই পুঙ্খানুপুঙ্খ খোঁজ করেন, তাই না? আর আপনার কাজটা তো নিশ্চয়ই খুব আকর্ষণীয়।”
রিয়া একটু উজ্জ্বল হয়ে বলল, “আসলে, সাংবাদিকতা এক ধরনের সংগ্রাম। প্রতিদিনই নতুন কিছু শিখতে হয়, নতুন কিছু দেখতে হয়। আমি একদম নতুন খবরের পিছনে ছুটতে ভালোবাসি। আমার কাছে মনে হয়, যারা নতুন কিছু জানে, তাদের জীবন সত্যিই পূর্ণ।”
অমিত শুনে মাথা ঝাঁকাল। “তা তো। তবে আমি তো আরও কিছু বড় কিছুর পিছনে ছুটছি। আমার সবথেকে বড় ইচ্ছা—একদিন বিশ্বের সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে যাওয়া। আমার ব্লগেও কিছু কিছু জায়গার ব্যাপারে লিখি, যা খুব কম মানুষ জানে।”
রিয়া মনে মনে ভাবল, অমিতের কথাগুলো খুবই আকর্ষণীয়। সে বুঝতে পারছিল যে, অমিত সত্যিই একজন আবেগী মানুষ, যাকে তার কাজের প্রতি ভালোবাসা খুবই গভীর। তবে তার চোখে কিছু একটা ছিল, কিছু এক ধরনের আকর্ষণ যা রিয়া’কে একটু বিব্রত করছিল। কিছুটা অস্বস্তি, কিছুটা শঙ্কা—রিয়া জানতো, অমিতের সঙ্গে কথোপকথনটা যদি আরও গভীর হয়, তবে কিছু অপ্রত্যাশিত বিষয় সামনে আসতে পারে।
তবে, রিয়া বুঝতে পারছিল না কেন, তার মনে অমিত সম্পর্কে একটা অদ্ভুত আকর্ষণ জন্ম নিচ্ছিল। কিছু একটা ছিল, যা তাকে বারবার তাকাতে বাধ্য করছিল। আর অমিতের মধ্যে যে একটু আলাদা রকমের ভাবনার ছাপ ছিল, সেটা রিয়া খুব সহজেই ধরতে পারছিল।
তারা কিছুক্ষণ চুপ থেকে একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিল, যেন দুই জনের মধ্যে এক ধরনের অদ্ভুত যোগাযোগ তৈরি হচ্ছিল, যা প্রকাশ পায়নি।
ছোট্ট গ্রামের দৃশ্য
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
ট্রেনটি ছোট্ট একটি গ্রামে থেমে গেল। জানালার বাইরে তাকালে যে দৃশ্যটি রিয়া দেখতে পেল, তা যেন একদম মধুর স্মৃতি থেকে উঠে এসেছে। গাছপালা আর মাঠের সবুজ দৃশ্য, গ্রামের হাওয়ার মাঝে ভেসে আসা এক শান্ত অনুভূতি তাকে কিছুটা অস্বাভাবিকভাবে ভরিয়ে দিল। তার চোখে চকচক করা একটি ছোট্ট স্মৃতি ভাসলো—সে ছোটবেলায় যখন মা-বাবার সঙ্গে এই ধরনের গ্রাম্য দৃশ্য দেখেছিল, পাঁকা ধানক্ষেতের মধ্যে হেঁটে বেড়ানো, খড়ের হাঁটুর সাথে মাতাল বাতাসে ভেসে যাওয়া। সে সময়গুলো যেন এক অন্য পৃথিবী ছিল, যেখানে সমস্ত কিছু ছিল সহজ, নিস্তব্ধ। মনটা হঠাৎ করেই একটু নরম হয়ে গেল।
গান্ধীঘাট গ্রামের ছোট্ট রাস্তাটা এখন খুব পরিচিত হয়ে উঠছিল রিয়ার কাছে, কিন্তু তখনো তার মধ্যে কিছু নতুনত্ব ছিল। হঠাৎ ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখা গেল একদল ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে খেলতে খেলতে পাঁকা ধানক্ষেতে বসে ছিল। তাদের খেলাগুলি খুবই সরল ছিল, ছোটো খেলার মতো ঘর-বাড়ি তৈরি করে তারা খেলছিল, যা রিয়ার মনে খুব গভীর একটা দাগ কাটলো। তাদের আনন্দ ছিল অল্পে তৃপ্ত, জীবনের কোনো জটিলতা ছিল না।
“বাহ! এই ছোট্ট মনের আনন্দগুলো অনেক বড় কিছু,” রিয়া মৃদু একটা কথা বলল, যেন নিজেকে মনে মনে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
অমিত পাশ থেকে রিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল, তার চোখে এক ধরনের মায়া আর অনুভূতি ছিল, যেন সে নিজেও এই ছোট ছোট আনন্দের অংশ হতে চায়। রিয়ার দিকে তাকিয়ে, অমিত বলল, “আমিও যখন ছোট ছিলাম, তখন ভাবতাম যে সবকিছু এত সহজ হতে পারে। বড় হওয়ার সাথে সাথে যেন সব কিছুই জটিল হয়ে ওঠে, কি জানি…”
রিয়া চোখ সরিয়ে দেখে, অমিতের মুখে কিছুটা অবাক করার মতো সত্যি অনুভূতি ফুটে উঠেছিল। তার কথাগুলো যেন রিয়ার কল্পনাকে আবার একটু অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। সে বুঝতে পারছিল, অমিত একদম সহজ একজন মানুষ, কিন্তু সেই সহজতাও কোনো একভাবে গভীর ছিল।
“আপনি আসলে কি বলতে চাইছেন, অমিত?” রিয়া একটু কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল।
অমিত একটু হেসে বলল, “বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমরা অনেক কিছু হারিয়ে ফেলি। শৈশবের সরলতা, জীবনটাকে সহজভাবে গ্রহণ করা… কিন্তু জানি না, কিছু কিছু মানুষ সেই শৈশবের অংশ থেকেই জীবনে এগিয়ে চলে।”
রিয়া তার কথাগুলো বুঝতে পারছিল না ঠিক, কিন্তু তার মাঝে এক অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি হচ্ছিল। অমিতের কথায় যেন একটা গভীরতা ছিল, যা সরলভাবে বলে ফেলা সম্ভব ছিল না। এই একবারের কথোপকথনে তারা যেন একে অপরকে একটু বেশি চিনতে শুরু করেছিল।
ট্রেনটি আবার চলতে শুরু করল, আর রিয়া আর অমিত একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকলো। কোনও শব্দ না বেরোল, কিন্তু তাদের মধ্যে এক অদ্ভুত সম্পর্কের সূচনা হচ্ছিল। রিয়ার মনে হচ্ছিল, কিছু একটা ঘটছে, কিছু একটা বদলাচ্ছে।
এখন ট্রেনটি কলকাতার দিকে এগোচ্ছিল, কিন্তু রিয়া জানত, এই ট্রেনের যাত্রা শেষ হওয়ার আগেই তাদের জীবনে কিছু বড় পরিবর্তন আসবে। সে অনুভব করছিল, এক দৃষ্টিতে, এক মুহূর্তে, তাদের দুজনের পথ হয়তো বদলে যাবে। তার চোখের সামনে এক অজানা ভবিষ্যতের ছবি ফুটে উঠছিল, যে ছবি কি সত্যিই দেখা যাবে, না কি তা কেবল একটা স্বপ্ন?
অমিত হঠাৎ ঘুরে বলল, “রিয়া, জানি না কেন, কিন্তু মনে হচ্ছে আজকের দিনের শেষে হয়তো কিছু এমন ঘটবে, যা আমাদের একসঙ্গে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
রিয়া তার কথায় মনোযোগ দিল। তার মনে হয়েছিল, সত্যি কি এমন কিছু ঘটতে চলেছে? তবে এটা ছিল এক রহস্য—এক অজানা ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সংকেত।
রাতের শান্তি
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
রাত হয়ে এল, এবং ট্রেনটি অবিরত কলকাতার দিকে চলছিল। জানালার বাইরে অন্ধকারে ডুবে যাওয়া গ্রাম, মাঠ আর নদী কেটে যাচ্ছিল। প্রতিটি সেকেন্ড যেন নতুন এক গল্পের জন্ম নিচ্ছিল। রিয়া আর অমিত এখন দুজনেই নিজেদের নিজস্ব জগতে বন্দী হয়ে ছিলেন। ট্রেনের মধ্যে হালকা আলো পড়ছিল তাদের মুখে, কিন্তু সেই আলোও যেন কিছুটা গোপনীয়তা ঢেকে দিচ্ছিল। দুজনের মধ্যে একটু দ্বিধা, কিছুটা উত্তেজনা, আর এক ধরনের অচেনা আকর্ষণ ভেসে উঠছিল।
রিয়া তার ল্যাপটপ খুলছিল, যেন কিছু কাজ করতে শুরু করবে, কিন্তু মনটাও কোথাও একটা ছিল, কোথাও অজানা জায়গায়। সে যেন জানতো, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে, কিছু একটা হতে চলেছে। অমিতও তার ফোনে কিছু কাজ করছিল, তবে তার মনেও কিছু অন্য রকম অনুভূতি ধীরে ধীরে চেপে বসছিল। মাঝে মাঝে সে চোখ তুলে রিয়ার দিকে তাকাত, যেন কিছু বলতে চায়, কিন্তু শব্দ বের হচ্ছিল না। তার মনে হচ্ছিল, এই মুহূর্তটুকু যেন কোনো এক রোমান্টিক নাটক বা কাব্য থেকে উঠে এসেছে।
রিয়ার চোখে ক্লান্তি ছিল, দিনভর ট্রেনের যাত্রা আর মনোযোগের মধ্যে, তবে তার চোখে কিছু একটা ছিল, যেন সে তার ভেতরের কোনো অজানা দুঃখ বা সুখের সঙ্গী খুঁজছিল। সে শুতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎ করে তার চোখে এক দীর্ঘ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে কিছু সময় কেটে গেল। সেই মুহূর্তে, ট্রেনের আলো আর অন্ধকারের মাঝে, এক অদ্ভুত স্নিগ্ধতা ছিল। যেন পৃথিবী থেমে গেছে, এবং সময় একসাথে তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।
অমিতের দিকে তাকিয়ে রিয়া কিছুটা অবাক হয়ে গিয়েছিল, কেন জানি না, তার মধ্যে যেন একটা অন্য ধরনের আকর্ষণ অনুভব হচ্ছিল। এটা ছিল না, যে শুধু প্রেমে পড়ার আকাঙ্ক্ষা, বরং একটা গভীর মনের টান। অমিতের শরীরী ভাষা, তার নিঃশব্দ ভাবনা, সব কিছু রিয়ার মনে অদ্ভুত এক তীব্রতা সৃষ্টি করছিল। সে জানতো, কিছু একটা হচ্ছিল, তবে সেটা কী ছিল, সেটা সে পুরোপুরি বুঝতে পারছিল না।
অমিতও রিয়ার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছিল, কিছু একটা বদলে যাচ্ছে। তিনি কোনো শব্দ না বলে রিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলেন, যেন তার চোখের মধ্যে কোনো এক গল্প লুকিয়ে আছে, যা শুধু দুইজনেরই বোঝা সম্ভব। দীর্ঘ কিছুক্ষণ পর অমিত ধীরে ধীরে তার ফোনটা রেখে দিয়েছিল। কিছু বলার মতো কিছু ছিল না, তবে মনে হচ্ছিল, তাদের দুজনের মধ্যে কিছু একটা কথায় প্রকাশ পাচ্ছিল, যা ভাষায় বলে প্রকাশ করা কঠিন।
রিয়া তার বুকের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি অনুভব করছিল, যেন তার অভ্যন্তরীণ একটা দ্বন্দ্ব চলছে। কী করা উচিত? কী না করা উচিত? সে জানতো, তাদের সম্পর্ক যেন এক অদৃশ্য সেতুতে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো দিকে যেতে হবে, তবে কোন দিকে? তার মধ্যে এক ধরনের আশঙ্কা, কিছুটা ভয়, কিন্তু তার পাশাপাশি এক ধরনের আশা ছিল। অমিতের পাশে থাকার এক অদ্ভুত অনুভূতি তাকে গাইড করছিল।
রাতের সেই নিরব মুহূর্তটি যেন আরও ঘন হয়ে উঠেছিল। ট্রেনের হালকা ঝাঁকুনি আর সাইরেনের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছিল না। দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ হয়ে রইল, যেন সবকিছু নতুন করে শুরু হতে চলেছে। তখনই রিয়া একটু ধীরে মাথা নীচে করে বলল, “আমিত, তোমার কি মনে হয়? আমরা কোথাও যাচ্ছি কি?”
অমিত দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস নিল, তারপর মৃদু হেসে বলল, “যতদূর মনে হয়, এই যাত্রা আমাদের কোথাও নিয়ে যাবে। আর হয়তো, হয়তো সেই জায়গাটা আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দেবে।”
তার কথা শুনে রিয়ার মনে হালকা এক শিহরণ কাজ করল। সত্যিই, তারা কোথাও যাচ্ছে। তবে সেটা কোথায়, সেটা জানি না। তাদের জন্য নতুন কিছু অপেক্ষা করছিল। নতুন অনুভূতি, নতুন বাস্তবতা, যা হয়তো তাদের সম্পর্কের গতি বদলে দেবে।
সকালে প্রথম দেখা
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
সকাল বেলা, ট্রেন কলকাতা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা দূরে চলে এসেছে। বাইরের দৃশ্যটা বদলে গেছে, রাতের অন্ধকার আলোকিত হয়ে উঠে এসেছে এক নতুন দিনের সূর্যোদয়ে। রিয়া তন্দ্রাচ্ছন্নভাবে জেগে উঠে, জানালার কাঁচে হাত রেখে হালকা ঠান্ডা বাতাসটা অনুভব করছিল। তার মনও এক অদ্ভুত অনুভূতির মধ্যে ডুবে ছিল। রাতের নিরবতা, অমিতের কাছে থাকা, এসব কিছু মিলিয়ে এক ভিন্ন ধরনের স্নিগ্ধতা তাকে গ্রাস করেছিল। কিন্তু সকালে, দিনের প্রথম আলো যেমন সব কিছু পরিষ্কার করে দেয়, তেমনি তার ভেতরের দ্বন্দ্বগুলোও উন্মোচিত হচ্ছিল।
ভোর তখন ৬ তা হবে, একটা নতুন স্টেশনে ট্রেনটি থামলো। রিয়া হাত মুখ ধুয়ে, চা নিতে বাইরে চলে গেল। রিয়া ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনের একটা দোকান থেকে সঙ্গে রাখা চা ফাল্কসে চা নিল। তার সাথে কিছু বিস্কুট ও পাউরুটি কিনল। চা হাতে নিয়ে সে আবার কামরার মধ্যে ফিরে এল। অমিত তখনো গভীর ঘুমে ছিল। রিয়া তার পাশের আসনে বসে, কিছুক্ষণের জন্য তাকে দেখছিল। তার চোখে এক অদ্ভুত শান্তি, এক ধরনের নির্ভরশীলতা ছিল, যা রিয়া কখনোই অনুভব করেনি।
অমিতের দেহের অদ্ভুত ছন্দে নিঃশব্দে তার শ্বাস নেওয়ার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। তার গা থেকে এমন এক ধরনের নীরব শক্তি বের হয়ে আসছিল যা রিয়াকে টেনে নিচ্ছিল। কিছু সময় পর, সে মৃদু হাসি দিয়ে অমিতের কাঁধে হাত রেখে বলল, “অমিত, উঠো। চা নিয়ে এলাম।”
অমিত হালকা ঘুমের মধ্যে চোখ মুছে উঠে বসে গেল। একটু তাকিয়ে রিয়ার দিকে, চোখের কোনে ক্ষীণ হাসি ফুটল। রিয়া তাকে দেখছিল, আর মনে মনে ভাবছিল, এই মানুষটার মধ্যে এমন কি আছে যা তাকে এতটা আকর্ষণ করে? কিন্তু তাও, সে কোনো প্রশ্ন বা সন্দেহ প্রকাশ করতে পারছিল না।
অমিত তার হাত থেকে চা নিয়ে ধীরে ধীরে পান করতে লাগল। চায়ের উষ্ণতা তার মনের গহীনে জমে থাকা চিন্তা গুলোকেও একটু হলেও গুলিয়ে দিল। “ধন্যবাদ, খুব প্রয়োজন ছিল,” অমিত বলল। রিয়ার মুখে এক ক্ষীণ হাসি ফুটল। সে একদম সোজাসুজি তার দিকে তাকিয়ে বলল, “এই ট্রেন যাত্রা তো বেশ দীর্ঘ, তাই না? এমন কিছু একটা দরকার ছিল।”
চা খেতে খেতে দুজনেই একে অপরকে কিছুক্ষণ নীরবে দেখছিল। সেই নীরবতা যেন তাদের মধ্যে কিছু নতুন শুরু করার ইঙ্গিত ছিল। রিয়া অনুভব করছিল, তার ভেতরকার কিছু গোপন অনুভূতি বের হয়ে আসছিল। অমিতের সঙ্গে তার কথা বলা, তার সঙ্গে সময় কাটানো—এগুলো সবই তার জীবনে নতুন এক রকমের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসছিল।
অমিতও রিয়ার মধ্যে এক ধরনের গভীরতা অনুভব করছিল, কিছু এমন, যা সে আগে কখনো কাউকে অনুভব করেনি। তাদের মধ্যে এক অদ্ভুত সম্পর্কের সূচনা হচ্ছিল, এবং এর মধ্যে এক তাজা অনুভূতি ছিল। হয়তো সেটা প্রেমের অনুভূতি নয়, কিন্তু এমন কিছু, যা তাদের সম্পর্ককে আরেক স্তরে নিয়ে যাচ্ছিল।
তাদের মধ্যে এই অদ্ভুত স্নিগ্ধ সম্পর্কের সূচনা হয়ে গেলেও, দুজনেই অনুভব করছিল, কিছু প্রশ্ন আর কিছু দ্বিধা ছিল। রিয়া এক দৃষ্টিতে অমিতকে দেখছিল, যেন তার মনের গভীরে অমিতের প্রতি কোন অনুভূতি আছে, যা সে নিজেই বুঝতে পারছিল না। আর অমিতও কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ভাবছিল, কিভাবে রিয়ার সাথে তার সম্পর্কটা আরও গভীর হতে পারে, যদিও সে এত দ্রুত এমন কিছু নিয়ে এগোতে চাইছিল না।
এমন অবস্থায়, ট্রেনের জানালা দিয়ে এক ঝলক বাহিরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে পেয়ে, অমিত কথার মাঝে বিরতি দিল। “তুমি কখনো ভাবেছো, রিয়া, আমাদের এই যাত্রা শেষ হলে কী হবে?” অমিত প্রশ্নটা করেছিল, কিন্তু তার সুরে কিছুটা আগ্রহের পাশাপাশি শঙ্কাও ছিল।
রিয়া কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকল, তারপর ধীরে ধীরে বলল, “কখনও না, আমি শুধু প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে চেয়েছি।”
অমিতের প্রস্তাব
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
ট্রেন কলকাতা পৌঁছানোর মাত্র তিন ঘণ্টা দূরে। বাইরে হালকা রোদ ঝলমলে আকাশে উঠে এসেছে, আর চারপাশের সব কিছু যেন একটু একটু করে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। রিয়া জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখতে দেখতে মনে মনে অনেক কিছু ভাবছিল। গত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা তার মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি সৃষ্টি করেছে। অমিতের সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত যেন তার জীবনে এক নতুন রঙের ছোঁয়া এনে দিয়েছে। কিন্তু এখনো কিছু প্রশ্ন ছিল, কিছু অজানা, যা তার হৃদয়কে উঁকি দিয়ে যাচ্ছিল।
অমিত তার পাশে বসে ছিল, কিন্তু তার মনটা অস্থির ছিল। মাঝে মাঝে রিয়ার দিকে তাকাচ্ছিল, কিন্তু চোখে কিছুটা দ্বিধা ছিল। আজকের দিনটা তার জন্য বিশেষ হতে পারে—এমন এক অনুভূতি তাকে ঘিরে রেখেছিল। কিন্তু সে কীভাবে রিয়ার কাছে তার অনুভূতিগুলি প্রকাশ করবে? কীভাবে তাকে বলবে যে, তার মনের গহীনে একটি সত্যিকারের প্রেম রয়েছে, যা সে আর সহ্য করতে পারছে না?
অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর, অমিত অবশেষে তার অনুভূতিগুলি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিল। সে একটু গভীর শ্বাস নিয়ে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “রিয়া, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই…”
রিয়া অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল। তার চোখে কিছুটা প্রশ্ন ছিল, কিছুটা কৌতূহলও ছিল। “কি বলবেন?” রিয়া মৃদু প্রশ্ন করল, যেন তার ভেতরের অজানা অনুভূতিগুলির সূত্র পেতে চাইছিল।
অমিত কিছুটা দ্বিধা নিয়ে তার কাঁধ সোজা করে শ্বাস নিল। তারপর সে ধীরে ধীরে বলল, “আমি অনুভব করি, আমাদের মধ্যে কিছু বিশেষ হচ্ছে। কিছু যা আমি আগে কখনো অনুভব করিনি। আমি তোমাকে ভালোবাসি, রিয়া।”
এই কথাগুলি শুনে রিয়া কিছু সময় চুপ থেকে অমিতের দিকে তাকিয়ে রইল। তার মনে একটা অদ্ভুত আবেগের ধারা বয়ে গেল। কিছু সময়ের জন্য সমস্ত শব্দ যেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রিয়ার মনের গভীরে একটা প্রশ্ন উঁকি দিয়েছিল—এমন অনুভূতি কি সত্যি? সে কি সত্যিই অমিতকে ভালোবাসে? সে তো কিছু দিন আগেও একাকী ছিল, কিন্তু অমিতের সঙ্গে কাটানো সময় তাকে কিছু নতুন পথ দেখিয়েছে।
রিয়া কিছুটা সময় নিয়ে, তার নিজের মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করল এবং হালকা হাসি দিয়ে বলল, “আমি তাও তোমাকে ভালোবাসি, অমিত।”
অমিতের মুখে এক চমৎকার হাসি ফুটে উঠল। তার চোখে আনন্দ আর শান্তির একটা মিশ্রণ ছিল, যেন পুরো পৃথিবীটা তার কাছে এখন পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রিয়া তার হাতে হাত রাখল, এবং স্নেহভরা চোখে একে অপরকে দেখছিল।
কিন্তু সে বুঝতে পারছিল, যে মুহূর্তটি এতটা বিশেষ হয়ে উঠেছিল, তার পরেও কিছু একটা ছিল, যা অমিতের মনে বিরক্তি তৈরি করছিল। কিছু না বলা কথাগুলো, কিছু অজানা ভবিষ্যৎ যা তাদের সম্পর্কের মধ্যে পড়তে পারে, তা তাকে চিন্তিত করে তুলছিল। তবে সে জানত, যে কোনো জটিলতা আসবে, তারা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে মোকাবেলা করবে।
চোখের আলোতেই, রিয়া অমিতকে দেখে বলল, “তুমি জানো, অমিত, আমাদের সম্পর্ক তো এখন শুরু হলো। আমাদের জীবনের অনেক পথ বাকি। আজকে আমি যেটা অনুভব করলাম, সেটা তোর সাথেই কাটাতে চাই, কিন্তু পরের দিনগুলোতে কী হবে, আমি জানি না। তবে আমি চাই, আমরা একসাথে একে অপরকে বুঝে নিতে পারি।”
অমিত কিছুক্ষণ চুপ থেকে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। তারপর মাথা নেড়ে বলল, “ঠিক বলেছো রিয়া। আমাদের সামনে অনেক পথ, অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। কিন্তু যদি আমরা একে অপরের পাশে থাকি, তবে সব কিছু সম্ভব হবে। তুমিই আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠেছো।”
রিয়া তার কথায় হালকা হেসে বলল, “তাহলে, আমরা একসাথে এই পথে হাঁটবো, অমিত।”
এই কথাগুলি শেষে, তারা দুজনে একে অপরকে একদৃষ্টিতে দেখে কিছু সময় চুপচাপ বসে রইল।
কলকাতা স্টেশনে বিদায়
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
ট্রেন কলকাতা স্টেশনে পৌঁছালো। বাইরে থেকে শহরের রুক্ষ আওয়াজ, গাড়ির হর্ন, মানুষের গন্তব্যস্থলে তাড়াহুড়া, সমস্ত কিছু মিলিয়ে একটা বিশাল কোলাহল ছিল। কিন্তু অমিত আর রিয়া যেন এই সবকিছুর বাইরে, এক অন্য পৃথিবীতে ছিল। দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিল, চোখে এক অদ্ভুত মাধুর্য আর বিশ্বাসের ঝিলিক। এতদিনের সম্পর্কের শুরু, অনুভূতির গভীরতা, সমস্ত কিছু যেন আজকের দিনেই পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।
অমিত ধীরে ধীরে রিয়ার দিকে এগিয়ে গেল। তার চোখে এক ধরনের কোমলতা ছিল, যেন জীবনের সবচেয়ে বড় এবং প্রিয় প্রস্তাব দেওয়ার মুহূর্ত এসেছে। সে রিয়াকে আস্তে আস্তে জড়িয়ে ধরল। তার মধ্যে কোনো দ্বিধা বা সংশয় ছিল না, শুধুমাত্র সুনিশ্চিত ভালোবাসার গন্ধ ছিল। অমিত বলল, “এটা শুধু শুরু। আমাদের পথ অনেক লম্বা, কিন্তু আমি জানি, আমরা একসঙ্গে থাকব, চিরকাল।”
রিয়া তার চোখের দিকে তাকিয়ে এক মিষ্টি হাসি দিল। তার মনে হয়েছিল, পৃথিবীর সমস্ত কষ্ট আর দ্বিধা যেন মুছে গেছে। কিছু দিন আগেও সে জীবনের কঠিন সিদ্ধান্তগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু আজকের এই মুহূর্তে, সব কিছু পরিষ্কার মনে হচ্ছিল। সে অনুভব করছিল, অমিতের সাথে তার ভবিষ্যৎ কেমন হতে চলেছে। তার প্রতিটি সেকেন্ড যেন এখন এক নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার হৃদয়ে এক অজানা আশার আলো দেখতে পাচ্ছিল, যা তার পুরো জীবনের গন্তব্য পরিবর্তন করতে সক্ষম।
কলকাতা স্টেশনের সেই ব্যস্ততা, লাখো মানুষের পদচারণা, তবুও এক মুহূর্তের জন্য যেন সব কিছু থেমে গিয়েছিল। অমিত আর রিয়া দুজনেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল, সেই ভালোবাসার বন্ধন যে, শুধুমাত্র তাদের দুজনের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল, সেটি সমস্ত পৃথিবী ভুলে গিয়েছিল।
রিয়া অমিতের কাঁধে মাথা রেখে বলল, “তুমি জানো, এতদিন আমি যেসব দ্বিধা আর আতঙ্ক নিয়ে ছিলাম, আজ আমি তা সব ছেড়ে দিয়েছি। তোমার পাশে থাকতে পারলে, আমি জানি সব কিছুর মানে বোঝা যাবে। তুমি আমার জীবনে এক নতুন সূর্যের মতো।”
অমিত তার কপালে এক চুমু দিয়ে বলল, “আমারও ঠিক তেমনটাই অনুভব হয়। আমরা একে অপরকে খুব ভালোভাবে বুঝতে পারি, আমাদের মধ্যে এমন কিছু রয়েছে যা হয়তো ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমি জানি, যেখানেই যাই, তোমার সঙ্গেই চাই। আজ থেকে একসঙ্গে, চিরকাল।”
এ কথা বলে অমিত রিয়ার হাতটা মৃদু করে ধরে, তাদের সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের শুরুতে পা রাখল। স্টেশনের মধ্যে মানুষদের চলাফেরা, গাড়ি, ট্যাক্সির ভিড়, সমস্ত কিছু তাদের কাছে যেন এক মুহূর্তের জন্য থেমে গিয়েছিল। তার আশেপাশে যতটুকু কোলাহল, যতটুকু সেলুলার জীবনের ঝাঁঝালো আওয়াজ ছিল, সব কিছু যেন আজ তাদের ভালোলাগা, ভালবাসা, এবং একে অপরকে পাশে পাওয়ার আনন্দে মিশে গিয়েছিল।
কিন্তু কিছু সময় পরে, যখন ট্রেনের ঘণ্টা বাজল এবং স্টেশনে ছুটে চলা মানুষের ভিড় আরও বেশি হলো, তাদের চোখে চোখ রেখে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। এই চুপটি অনেক কথা বলেছিল। ভবিষ্যতের পরিকল্পনা, জীবনসঙ্গী হিসেবে একে অপরকে পাওয়ার আনন্দ, এবং সব কিছুর সাথে সামঞ্জস্য রেখে এক নতুন জীবনের পথচলা। রিয়া অমিতকে আরও একবার শক্ত করে আঁকড়ে ধরল, যেন তাকে কখনো ছেড়ে না যেতে হয়।
অমিত হালকা এক হাসি দিয়ে বলল, “এই পৃথিবীকে জয় করব আমরা। আমাদের ভালোবাসা এমনভাবে বিস্তার লাভ করবে, যেন সারা শহর জানবে, আমাদের সম্পর্ক চিরকাল থাকবে।”
স্টেশনের সবার ব্যস্ততা, সকলের চেহারায় যেন কোনো এক অদ্ভুত শান্তি দেখে গেছে। কলকাতা স্টেশন, সেই চিরচেনা স্থানটি, যেন আজ তাদের প্রেমের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।