বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
রাতের আকাশটা ঝলমলে তারা জড়ানো কালো মখমলের কাপড়ের মতো লাগছিল। স্নেহা বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই আকাশের দিকে তাকিয়েছিল, যেন তারার আলোয় নিজেকে সান্ত্বনা দিতে চায়। কিন্তু তার মনের অন্ধকার অমাবস্যার রাতের মতোই নিথর রয়ে গিয়েছিল। বিদেশে কাটিয়ে আসা কয়েকটা বছর তাকে অনেক কিছু শিখিয়েছিল, কিন্তু সেই শিক্ষা যেন তার পুরনো পরিচিতি থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
কলকাতার রাস্তাগুলো আগের মতোই ব্যস্ত, কিন্তু সেই ভিড়ের মধ্যেও নিজেকে সে নিঃসঙ্গ বোধ করছিল। বন্ধুরা সবাই নিজেদের জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও, কথাগুলো যেন কৃত্রিম আর অর্থহীন মনে হচ্ছিল। পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো টুকরো টুকরো হয়ে ভেসে উঠছিল মনে, কিন্তু বাস্তবতা তাকে ক্রমাগত আঘাত করছিল।
বারান্দার রেলিং ধরে স্নেহা চোখ বন্ধ করল। একটা দীর্ঘশ্বাস বুক থেকে বেরিয়ে এলো। শহরটা এখনো আগের মতোই উচ্ছ্বাসে ভরা, কিন্তু সেই উচ্ছ্বাসের সুর যেন তার কাছে অপরিচিত। স্নেহা জানে, তাকে আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হবে। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবে, সেটাই বুঝতে পারছিল না।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - অব্যক্ত সুর: এই রোমান্টিক বাংলা গল্পে রিয়া ও আয়ানের প্রেমের গল্প, যেখানে গান ও আঁকার সুর তাদের জীবনকে এক অপূর্ব মাত্রা দেয়। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
দুর্গাপূজার আলোয় ঝলমলে শহরের পথে সেদিন স্নেহা পুজো দেখতে বেরিয়েছিল। শহরের প্রতিটি কোণ আলোয় মোড়া, মানুষের ভিড়, ঢাকের আওয়াজ—সব মিলিয়ে এক অভূতপূর্ব পরিবেশ। একটা প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখে যখন সে বেরোলো, তখনই আচমকা ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো। ভিজতে ভিজতে আশ্রয়ের খোঁজে দৌড়ে ঢুকল একটা ছোট্ট বইয়ের দোকানে।
দোকানটা ছিল যেন এক অন্য জগতের অংশ। পুরনো কাঠের আলমারিতে সাজানো অজস্র বই, তাদের ধূলিমাখা মলাটে লেখা ছিল শত শত গল্প। দোকানের কোণায় একটা দোদুল্যমান বাতি টিমটিম করে জ্বলছিল। কাচের কাউন্টারের পেছনে দাঁড়ানো ছেলেটি, যার চোখে একধরনের গভীরতা, মাথায় এলোমেলো চুল, আর মুখে এক শান্ত হাসি।
“কী নিবেন?” ছেলেটি জিজ্ঞেস করল মৃদু হেসে।
স্নেহা একটু ভিজে চুল গুছিয়ে বলল, “বৃষ্টি থামার জন্য একটু দাঁড়াবো। কোনো আপত্তি নেই তো?”
ছেলেটি হাসিমুখে মাথা নাড়ল, “আপত্তি? একদমই না। বইয়ের দোকানে এসে দাঁড়ানোর জন্য কোনো অনুমতির দরকার নেই। আমি অভিজিৎ। আপনি?”
স্নেহা নিজের নাম বলল। কথায় কথায় জানা গেল, অভিজিৎ এই পাড়াতেই থাকে। তার বাবা এই দোকানটা চালাতেন, এখন সেই দায়িত্ব অভিজিতের কাঁধে। ছোটবেলা থেকেই তার বই পড়ার প্রতি ভালোবাসা, নতুন লেখক, পুরনো সাহিত্য—সবকিছুই তার আগ্রহের কেন্দ্রে।
স্নেহা মুগ্ধ হয়ে অভিজিতের কথা শুনছিল। তাদের কথোপকথনে উঠে এলো রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে বিভূতিভূষণ, আর শহরের পুরনো দিনের গল্প। অভিজিৎ মাঝে মাঝে পুরনো বইয়ের পাতা উল্টে দেখাতো, যেন সেই বইগুলো জীবন্ত হয়ে উঠেছে। তার প্রতিটি শব্দে ছিল একধরনের উষ্ণতা, যা স্নেহার মনের শূন্যতা ভরিয়ে তুলছিল।
কখন বৃষ্টি থেমে গেছে, স্নেহা বুঝতেই পারেনি। বাইরে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে, কিন্তু স্নেহার মনে যেন অভিজিতের সঙ্গে কাটানো এই অদ্ভুত সন্ধ্যা আর আলো মিশে এক অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম দিয়েছে।
“বৃষ্টি থেমে গেছে, আমি আসি এখন।” স্নেহা আস্তে বলল।
অভিজিৎ তাকিয়ে হাসল, “ঠিক আছে, আবার আসবেন। দোকানটা কিন্তু আপনার অপেক্ষায় থাকবে।”
স্নেহা বেরিয়ে এল, কিন্তু বইয়ের গন্ধ, অভিজিতের শান্ত মুখ আর তাদের গল্পের প্রতিটি শব্দ তার মনে রয়ে গেল। শহরের আলোয় মোড়া সেই রাতটা স্নেহার জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে দিল।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - স্বর্গের চুম্বন: সূর্য, একজন সাধারণ মানুষ, জাদুঘরে ঘুরতে ঘুরতে এক অদ্ভুত মূর্তির স্পর্শে স্বর্গে চলে যান। সেখানে রিয়া নামের এক রহস্যময়ী নারীর সাথে দেখা হয় তার। রিয়া সূর্যকে দেখায় স্বর্গের অপার সৌন্দর্য, চিরকালের প্রেমের স্বপ্ন। কিন্তু কিছুদিন পর সূর্য বুঝতে পারে, স্বর্গের একঘেয়ে জীবন তার জন্য নয়। সে ফিরে চায় তার পৃথিবীতে, তার পরিবার, বন্ধুদের কাছে। রিয়া কি সূর্যকে ফিরে যেতে দেবে? জানতে হলে পড়ুন এই রোমান্টিক গল্প “স্বর্গের চুম্বন”। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
পরের দিন সকালে আবার দেখা হলো স্নেহা আর অভিজিতের। দুর্গাপূজার উচ্ছ্বাসে ভেসে বেড়ানো শহর যেন তাদের দুজনকেই আরও কাছে টেনে আনছিল। পুজো প্যান্ডেল থেকে প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়াতে লাগল তারা। প্রতিমার চোখের গভীরতা, আলো-ছায়ার খেলা, আর ঢাকের তালে নেচে ওঠা মনের ভেতর কোথাও যেন স্নেহা হারিয়ে যাচ্ছিল।
একসঙ্গে প্রসাদ খেতে খেতে অভিজিৎ বলল, “তোমার জীবনের গল্পটা বেশ অদ্ভুত। বিদেশের চাকরি, ঝকঝকে জীবন—সব ছেড়ে কেন ফিরলে এখানে?”
স্নেহা একটু থেমে, আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, “জানি না। হয়তো নিজের শহর আর নিজের মানুষদের মধ্যে কিছু সৃষ্টিশীল কাজ করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু কখনও সাহস পাইনি। সবসময় ভেবেছি, হয়তো আমি এখানে মানিয়ে নিতে পারব না।”
অভিজিৎ মৃদু হাসল, “জীবনে মানিয়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু নিজের স্বপ্নকে পিছু ডাকতে দিতে নেই। যদি মন চায়, তাহলে চেষ্টা করতেই হবে। অন্তত একবার।”
স্নেহা চুপ করে রইল। অভিজিৎ যেন তার ভেতরের সব দ্বিধাগুলো একেকটা করে তুলে আনছিল।
সন্ধ্যা হল। রাস্তার ধারে বসে ঢাকের তালে ছেলেমেয়েদের নাচ দেখল তারা। আকাশে ঝাঁ চকচকে আতশবাজি ফুটতে লাগল। সেই আলো দেখে মুগ্ধ হয়ে স্নেহা বলল, “জীবনটা এত রঙিন হতে পারে, সেটা বুঝতে পারিনি এতদিন।”
অভিজিৎ হেসে বলল, “জীবনের রং আমরা নিজেরাই তৈরি করি। তুমি চাইলেই নিজের রং ফিরিয়ে আনতে পার।”
দুর্গাপূজার শেষ দিন এসে পড়ল। আকাশে শেষ বিকেলের আলো। শহর জুড়ে মায়ের বিসর্জনের আয়োজন চলছে। গঙ্গার দিকে নামতে থাকা প্রতিমার মাথার দিকে তাকিয়ে স্নেহার বুকটা ভারী হয়ে উঠল। মা বিদায় নিচ্ছেন, আর তারও বিদায় নেওয়ার সময় এসেছে। আজ রাতেই তাকে ফিরে যেতে হবে বিদেশে।
অভিজিৎ তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, চুপচাপ। তার চোখের গভীরতা যেন স্নেহার মনের ভাঙচুর বুঝতে পারছিল। অনেকক্ষণ চুপ থেকে স্নেহা বলল, “তোমার সঙ্গে দেখা হওয়া আমার জীবনের এক অদ্ভুত মুহূর্ত। আমার সব কিছু পাল্টে দিয়েছে।”
অভিজিৎ শান্তভাবে বলল, “তাহলে আবার দেখা হবে। এখানে, এই শহরে। কারণ কিছু গল্প কখনও শেষ হয় না। তার নতুন অধ্যায়ে শুরু হয়।”
স্নেহা কিছু বলল না, শুধু মাথা নাড়ল। চোখে জল জমে উঠল, যা সে অনেক চেষ্টায় আটকে রেখেছিল।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
“কিন্তু কেন? এখানেই তো তোমার বাড়ি, তোমার শহর,” অভিজিৎ-এর গলায় একটা অদ্ভুত অস্থিরতা।
“জানি না,” স্নেহা বলল এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে। “হয়তো অভ্যাস হয়ে গেছে ওখানে থাকার। হয়তো ভয় পাই—নিজের শহরে নিজের মতো কিছু করতে পারব কিনা সেটা নিয়ে।”
“তাহলে কী করতে চাও তুমি?” অভিজিৎ-এর চোখে একধরনের জিজ্ঞাসা জ্বলছিল।
স্নেহা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “কলকাতার পুরনো এলাকাগুলোর পুনর্নির্মাণ করতে চাই। সেইসব জায়গায় নতুন জীবন দিতে চাই, যেখানে সময়ের সঙ্গে সবকিছু ফিকে হয়ে গেছে।”
অভিজিৎ হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল, “তাহলে থাকো না!” তার গলায় যেন আবেগের ঢেউ। তবে সঙ্গে সঙ্গেই নিজেকে সামলে নিয়ে নরম গলায় বলল, “এই শহরের, এই মানুষের খুব প্রয়োজন তোমার মতো মানুষের।”
স্নেহা তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। অভিজিৎ-এর চোখে যেন কোনো জবাব ছিল, যা সে খুঁজে বের করতে চাইছিল।
“তুমি কি চাও আমি থাকি?” স্নেহার গলাটা কাঁপছিল।
অভিজিৎ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “আমি চাই না, চায় এই শহর। তবে তুমি থাকলে আমার খুব ভালো লাগবে।”
এই স্বীকারোক্তি অভিজিৎ নিজেও হয়তো জানত না তার মুখ থেকে বেরিয়ে যাবে।
স্নেহা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। মনের মধ্যে এক তীব্র দ্বন্দ্ব শুরু হলো। বিদেশের চাকরি, নিশ্চিন্ত জীবন আর নিজের শহরের প্রতি দায়বদ্ধতা—সব একসঙ্গে মাথায় ঘুরতে লাগল। এই কয়েকটা দিনে অভিজিৎ তাকে যা দিয়েছে, সেই সাহচর্য, সেই নির্ভরতার অনুভূতি তার মধ্যে নতুন কিছু জাগিয়ে তুলেছে।
বিসর্জনের শোভাযাত্রার শব্দ ধীরে ধীরে কাছাকাছি আসছিল। ঢাকের তালে, সিঁদুরের লাল রঙে, আর মানুষের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে শহর মেতে উঠেছিল। স্নেহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমি যদি না পারি?”
অভিজিৎ মৃদু হাসল। “তুমি পারবেই। আমি জানি।”
স্নেহা অভিজিৎ-এর চোখে তাকাল। সেই গভীর চোখের মধ্যে কোথাও সে নিজের জন্য এক ধরনের সাহস খুঁজে পেল।
“ঠিক আছে,” বলল স্নেহা। “আমি থাকব। চেষ্টা করব।”
অভিজিৎ-এর মুখে একটা শান্ত হাসি ফুটে উঠল। “তাহলে এই শহরের গল্পটা আবার শুরু হবে।”
স্নেহা জানত, এই সিদ্ধান্ত তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। তার নিজের শহর, নিজের স্বপ্ন আর হয়তো… নিজের কোনো মানুষ।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - আমি যেখানে: এই বাংলা গল্পটি শ্রেয়ার জীবনের যাত্রা অনুসরণ করে, যেখানে সে ভালোবাসা, বিচ্ছেদ, এবং একাকীত্বের অভিজ্ঞতা লাভ করে। অতীতের সাথে মীমাংসা করে, শ্রেয়া বুঝতে পারে যে সে ঠিক জায়গায় আছে, তার স্বামী দেব এবং মেয়ে আনন্দিতার পাশে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
অপেক্ষা করো, – হঠাৎ বলে উঠল স্নেহা। অভিজিৎ অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল। স্নেহা তার ফোনে একটা নম্বরে কল দিল। সেটা ছিল একটা বড় নির্মাণ সংস্থার।
হ্যালো, মিস্টার সেন? – বলল স্নেহা, – আমি স্নেহা খান্না। আমি কলকাতায় ফিরে এসেছি। আমার কাছে কিছু আইডিয়া আছে, আপনি কি একবার আমার সাথে দেখা করতে পারবেন?
কলটা কাটালে স্নেহা অভিজিতের দিকে ফিরে তাকাল। তার চোখে একটা আশার আলো জ্বলে উঠল।
ঠিক আছে, – হাসিমুখে বলল স্নেহা, – এখানেই থাকছি, এই শহরেই, তোমার আর এই শহরের পাশেই।
অভিজিৎ হাত বাড়িয়ে স্নেহার হাত ধরল। ধীরে ধীরে আকাশটা পরিষ্কার হয়ে উঠল। মেঘ সরে গিয়ে তারাগুলো জলজলিয়ে উঠল। ঠিক যেন স্নেহার মনের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল সবকিছু। ভবিষ্যতের পথটা এখনো অস্পষ্ট, কিন্তু আশা জাগলো তার বুকে।
পরের কয়েকটা মাস কেটে গেল নিমেষের মতো। স্নেহার নির্মাণ সংস্থার সাথে দেখা হয়েছিল, তার পরিকল্পনাটা তাদের ভালো লেগেছিল। পুরনো এলাকাগুলোর পুনর্নির্মাণের প্রকল্পে তারা স্নেহাকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। কাজটা কঠিন, কিন্তু স্নেহা ছিলেন উদ্যমী। অভিজিৎ সবসময় তার পাশে ছিল, প্রেরণা জোগাতো। মাঝেমধ্যে রাতে দু’জনে বইয়ের দোকানের ছাদে বসে চা খেত, শহরের রাতের আলো দেখত। এই সময়গুলোয় স্নেহা বুঝতে পারল অভিজিতের মনের গভীরতা। বইয়ের মতোই ছিল অভিজিতের মন, ভরা কবিতা, গল্প, আর অপার স্নেহ দিয়ে।
একদিন কাজের ফাঁকে অভিজিৎ স্নেহাকে নিয়ে গেল শহরের বাইরে একটা জায়গায়। একটি পুরনো বাড়ি, ঝিমিয়ে পড়েছে, কিন্তু তার সৌন্দর্য এখনো ম্লান হয়নি।
এই বাড়িটা আমার দাদুর, – বলল অভিজিৎ, – অনেক বছর আগে ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু এটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা।
স্নেহা চারপাশে তাকাল। বাড়িটা ঠিক করার ইচ্ছা জাগলো তার মধ্যে। অভিজিতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, – ঠিক আছে, এই বাড়িটাই আমাদের প্রথম প্রকল্প হবে।
অভিজিৎ অবাক হয়ে গেল। স্নেহার চোখে সে দেখল ভালোবাসা, শুধু তার প্রতিই না, শহরের প্রতি, মানুষের প্রতি। সেই মুহূর্তে বুঝতে পারল অভিজিৎ, রায়ের সঙ্গে থাকতে পারাটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।
বাড়িটা ঠিক হতে অনেক সময় লাগল। কিন্তু যখন কাজ শেষ হলো, তখন সবাই মুগ্ধ হয়ে গেল। পুরনো সৌন্দর্য ফিরে পেল বাড়ি, আর তাতে যোগ হলো নতুনত্বের ছোঁয়া। বাড়ি উদ্বোধনের দিনটা ছিল উৎসবের মতো। অভিজিতের চোখে ছিল গর্ব আর খুশি। রাতে দোকানের ছাদে বসে থাকাকালীন অভিজিৎ স্নেহার হাত ধরে বলল, – ধন্যবাদ, স্নেহা। তুমি এ শহরকে, এই বাড়িকে আর আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছ।
স্নেহা হাসিমুখে বলল, – এখন তো আমি কোথাও যাচ্ছি না। এটাই আমার শহর, আমার বাড়ি, আর তুমিই আমার…
কথাটা শেষ করার আগেই অভিজিৎ তার ঠোঁটে একটা চুমু দেওয়ালো। চুমুটা ছিল হালকা, কিন্তু স্নেহার মনে জাগলো আনন্দের ঝড়। দুর্গাপূজার এক বৃষ্টির দিনে তাদের প্রেমের সূচনা হয়েছিল। এবারের পূজোয় তারা আর দু’জন নয়, তাদের সঙ্গে ছিল আরও কয়েকজন – তাদের সহকর্মীরা, কয়েকজন প্রতিবেশী। পুরনো বাড়িটা এখন ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে, এখানেই হচ্ছে সার্বজনীন পুজো।
আকাশে ঝলমলে তারা, চারপাশে পুজোর আলো, ঢাকের তালে মুখর রাস্তা – এই পরিচিত পরিবেশে দাঁড়িয়ে স্নেহা অভিজিতের হাত চেপে ধরল।
জানো, – হাসিমুখে বলল স্নেহা, – এই শহর, এই পুজো, এসব কিছু আগে আমার কাছে এতটা সুন্দর মনে হতো না।
অভিজিতের চোখে স্নেহের ঝিলিক। সে জানতো স্নেহার এই পরিবর্তনের কারণ।
তুমি আমাকে এই শহরটা নতুন করে চিনিয়েছ। – স্নেহার কথা শেষ হওয়ার আগেই অভিজিৎ বলে উঠল।