একটি হৃদয়স্পর্শী রূপকথার গল্প, যেখানে সত্যিকারের ভালোবাসার শক্তিতে শীতলপুরের অভিশাপ ভেঙে যায়। আকর্ষণীয় ছোটদের গল্প যা যাদু, প্রেম ও ত্যাগের এক অনন্য উপাখ্যান তুলে ধরে।

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » শীতলপুরের যাদুকরী রক্তগোলাপ

শীতলপুরের যাদুকরী রক্তগোলাপ

একটি হৃদয়স্পর্শী রূপকথার গল্প, যেখানে সত্যিকারের ভালোবাসার শক্তিতে শীতলপুরের অভিশাপ ভেঙে যায়। আকর্ষণীয় ছোটদের গল্প যা যাদু, প্রেম ও ত্যাগের এক অনন্য উপাখ্যান তুলে ধরে।

আমাদের WA চ্যানেল জয়েন করুন

এই মাসের সেরা ভুতের বাংলা ছোট গল্প পড়ুন ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন – অভিশপ্ত বাগানবাড়ি।

প্রথম অধ্যায়: রাজকন্যার অভিশাপ

ছোটদের রূপকথার বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

বহুকাল আগের কথা। শীতলপুর রাজ্যের সীমানায় বিস্তীর্ণ এক উপত্যকা ছিল, যেখানে অসংখ্য গোলাপ ফুটত। হেমন্তের হালকা শীতল বাতাসে সেই গোলাপের সুবাস মিশে এক অদ্ভুত মোহময় পরিবেশ সৃষ্টি করত। উপত্যকার ঠিক কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে ছিল একটি গাছ, যে গাছে ফুটত অদ্ভুত এক গোলাপ—রক্তগোলাপ।

এই রক্তগোলাপ সাধারণ গোলাপের মতো ছিল না। এর পাপড়ির রং ছিল গাঢ় লাল, যেন সদ্য প্রবাহিত উষ্ণ রক্ত। কেউ একবার এর সুবাস নিলে সহজে ভুলতে পারত না, কারণ সেই সুগন্ধ মনে এক রহস্যময় আকর্ষণ জাগিয়ে তুলত।

শীতলপুরের রাজা মহেন্দ্র সিংহ এবং রানি দিব্যলক্ষ্মীর একমাত্র কন্যা পদ্মিনী ছিলেন অপূর্ব সুন্দরী ও দয়ালু। তাঁর হাসিতে যেন সূর্যের সোনালি কিরণ খেলা করত, আর কণ্ঠস্বরে থাকত ঝর্ণার সঙ্গীত। ছোটোবেলা থেকেই তিনি প্রজাদের প্রতি দয়ালু ছিলেন, দরিদ্রদের সাহায্য করতেন, এবং সকলের ভালোবাসা অর্জন করেছিলেন।

কিন্তু তাঁর জন্মের দিনই এক অশুভ ছায়া নেমে এসেছিল।

পদ্মিনীর জন্মের পর রাজ্যের প্রধান পুরোহিত এবং জ্যোতিষীরা রাজপ্রাসাদে উপস্থিত হলেন। রাজকন্যাকে দেখে তাঁরা একে একে আশীর্বাদ করলেন। কিন্তু হঠাৎই এক বৃদ্ধ জ্যোতিষী থমকে গেলেন। তাঁর কপালে গভীর ভাঁজ পড়ল, চোখে আতঙ্কের ছাপ।

রাজা মহেন্দ্র সিংহ উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন, “কী হয়েছে, মহাশয়? আপনি চুপ করে গেলেন কেন?”

বৃদ্ধ জ্যোতিষী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “মহারাজ, দুঃখিত। আমি যা দেখছি তা বলা সহজ নয়।”

“বলুন! আমি সব শুনতে প্রস্তুত।”

জ্যোতিষী ধীরে ধীরে বললেন, “রাজকন্যার ভাগ্যে এক ভয়ংকর নিয়তি লেখা আছে। একদিন, যদি তিনি রক্তগোলাপের স্পর্শ করেন, তবে তাঁর হৃদয় বরফ হয়ে যাবে, আর এই রাজ্য চিরশীতল অভিশাপে আবদ্ধ হবে।”

এই কথা শুনে রাজপ্রাসাদ নিস্তব্ধ হয়ে গেল। রানী দিব্যলক্ষ্মী আতঙ্কে পদ্মিনীকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। রাজা মহেন্দ্র সিংহ ধমক দিয়ে বললেন, “এ কেমন ভবিষ্যদ্বাণী! আমার কন্যার এমন পরিণতি আমি কিছুতেই মেনে নেব না।”

জ্যোতিষী কাতর কণ্ঠে বললেন, “মহারাজ, ভবিষ্যৎ বদলানো কঠিন। তবে সাবধান! রক্তগোলাপের কাছেও যেন রাজকন্যা না যায়।”

পরদিনই রাজা মহেন্দ্র সিংহ আদেশ দিলেন—সারা রাজ্যের সমস্ত রক্তগোলাপ উপড়ে ফেলা হবে। সৈন্যরা রাজ্যের প্রতিটি বাগানে গিয়ে সেই অভিশপ্ত ফুল খুঁজে ধ্বংস করল।

কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, উপত্যকার কেন্দ্রে যে রক্তগোলাপ গাছটি ছিল, তাকে কেউ কাটতে পারল না।

যে-ই সেই গাছের ডাল কাটতে চাইত, সে-ই অদ্ভুত এক অদৃশ্য শক্তির কারণে দূরে ছিটকে পড়ত। গাছটি যেন নিজেই নিজেকে রক্ষা করছিল।

রাজা ক্রোধে ফুঁসতে লাগলেন, কিন্তু কিছুই করতে পারলেন না। অবশেষে রাজ্যের সমস্ত প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হলো, এবং কঠোর পাহারা বসানো হলো।

বছর কেটে গেল। পদ্মিনী ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলেন। তিনি প্রকৃতিকে ভালোবাসতেন, ফুলের বাগানে ঘুরে বেড়াতেন, ঝর্ণার ধারে বসে গল্পগাথা শুনতেন। কিন্তু একটি জায়গা ছিল, যেখানে যেতে তাঁকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছিল—উপত্যকা।

“সেখানে মৃত্যু লুকিয়ে আছে,” রাজা ও রানি বারবার তাঁকে সতর্ক করতেন।

তবে নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরকালীন।

একদিন পদ্মিনী তাঁর সখীদের জিজ্ঞাসা করলেন, “উপত্যকায় এমন কী আছে যে আমাকে যেতে দেওয়া হয় না?”

সখীরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল, “সেখানে এক রক্তগোলাপের গাছ আছে। শোনা যায়, সেটি যাদুকরী!”

পদ্মিনীর মনে কৌতূহল জন্মাল। কী এমন বিশেষত্ব সেই রক্তগোলাপে? কেন সেটি এত শক্তিশালী?

ভুতের বাংলা ছোট গল্প - অভিশপ্ত বাগানবাড়ি: নতুন শহর, নতুন জীবন—রৌনক যখন তার কোম্পানির বদলির চাকরি নিয়ে স্ত্রী ঝিমলিকে নিয়ে লখনউ আসে, তখন ওরা স্বপ্নেও ভাবেনি কী ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতা তাদের জন্য অপেক্ষা করছে! শহরের এক প্রান্তে পুরনো, অথচ অভিজাত এক হাভেলি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে তারা। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ঝিমলি টের পায়, এই বাড়ির দেয়ালের ফাঁকফোকরে লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর অতীত! রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কান পাতলে শোনা যায় চাপা কান্না, আয়নায় দেখা যায় অদ্ভুত ছায়ামূর্তি, আর বাগানের শতাব্দীপ্রাচীন গাছের ফাঁকে ফাঁকে যেন লুকিয়ে আছে কারও অভিশপ্ত আত্মা!  সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

দ্বিতীয় অধ্যায়: অচেনা যুবকের আবির্ভাব

ছোটদের রূপকথার বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

শীতলপুরের আকাশে তখন সন্ধ্যার আলোর ছোঁয়া লেগেছে। রাজপ্রাসাদের সুবিশাল বাগানে রঙিন ফুলেরা তাদের সুবাস বিলোচ্ছে, আর সরোবরের স্বচ্ছ জলে পড়ন্ত সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে ঝলমল করছে।

রাজকন্যা পদ্মিনী সখীদের সঙ্গে হাস্যরসে মত্ত ছিলেন। তাঁর গলায় মুক্তোর হার, পরনে হালকা নীল রঙের রেশমী বসন, আর খোলা চুলে রক্তগোলাপের একটি কুঁড়ি গুঁজে রাখা। তাঁর সৌন্দর্য এতটাই মোহময় ছিল যে, যেন দেবলোকের কোনো অপ্সরা পৃথিবীতে নেমে এসেছে।

ঠিক তখনই বাগানের ফটকে এক অপরিচিত যুবক প্রবেশ করল। তার পরনে ধূসর রঙের সাধারণ পোশাক, মাথায় একটি কাপড় জড়ানো, কিন্তু চোখ দু’টি যেন সমুদ্রের গভীর ঢেউয়ের মতো, রহস্যময় ও অন্তহীন। তার উপস্থিতি যেন বাগানের হাওয়ায় এক নতুন সুর এনে দিল।

পদ্মিনী তাকে লক্ষ্য করলেন এবং সখীদের কৌতূহলী দৃষ্টি এড়িয়ে যুবকের দিকে এগিয়ে গেলেন। তাঁর চোখে প্রশ্ন ফুটে উঠল।

“কে তুমি?” রাজকন্যার কণ্ঠস্বর ছিল কোমল কিন্তু দৃঢ়।

যুবক এক মুহূর্ত চুপ থেকে মৃদু হাসল, তারপর মাথা নিচু করে বলল, “আমি এক ভবঘুরে, নাম আমার আদিত্য। দূর রাজ্য থেকে এসেছি।”

“কিন্তু তুমি এখানে কেন?” পদ্মিনী প্রশ্ন করলেন, তাঁর দৃষ্টি তরুণের মুখে নিবদ্ধ।

আদিত্য এক মুহূর্ত দ্বিধাগ্রস্ত হলো, তারপর বলল, “আমি শুধু পথের খোঁজে চলি, রাজকন্যা। যেখানে বাতাস আমায় ডাকে, সেখানে আমি যাই।”

এই সময় রাজসেনারা বাগানে এসে দাঁড়াল। তারা সন্দেহের দৃষ্টিতে আদিত্যকে পর্যবেক্ষণ করছিল। রাজকন্যার সুরক্ষার জন্য তারা সদা সতর্ক ছিল।

“রাজকন্যা, আপনাকে বিরক্ত করছে কি?” এক সেনাপতি জিজ্ঞেস করল।

পদ্মিনী একটু হাসলেন। “না, সে কেবল একজন পথিক। তাকে এখানে আসতে দাও।”

রাজসেনারা আদেশ মেনে নিল, তবে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল।

এরপর কয়েকদিন কেটে গেল। আদিত্য রাজপ্রাসাদের আশেপাশে থাকত, কখনো বাগানে বসে থাকত, কখনো রাজ্যের অলিগলিতে ঘুরে বেড়াত। রাজকন্যা পদ্মিনীর কৌতূহল ধীরে ধীরে তার প্রতি আকর্ষণে পরিণত হচ্ছিল। আদিত্যর চোখের ভাষা, তার মৃদু হাসি, তার কথার গভীরতা—সবকিছুতেই এক অদ্ভুত মোহ ছিল।

একদিন বাগানের এক কোণে বসে পদ্মিনী চুপচাপ আদিত্যকে লক্ষ্য করছিলেন। আদিত্য তখন সরোবরের ধারে বসে ছিল, তার দৃষ্টি ছিল স্থির, মনে হচ্ছিল যেন সে কিছু গভীরভাবে চিন্তা করছে।

“তুমি কি কিছু লুকোচ্ছো?” পদ্মিনী আচমকা প্রশ্ন করলেন।

আদিত্য চমকে তাকাল, তারপর একটু মুচকি হাসল। “রাজকন্যা, আমি তোমাকে ভালোবাসি, কিন্তু তোমার রাজ্যে এক ভয়ানক রহস্য লুকিয়ে আছে, যা তোমার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।”

পদ্মিনীর হৃদস্পন্দন থমকে গেল। “কী বলছো তুমি?”

আদিত্য গভীরভাবে তাঁর চোখের দিকে তাকাল। “তুমি কি কখনো শুনেছো রক্তগোলাপের অভিশাপের কথা?”

পদ্মিনী শিউরে উঠলেন। “রক্তগোলাপ…! সে তো আমাদের রাজ্যের প্রতীক। কিন্তু অভিশাপ?”

আদিত্য দীর্ঘশ্বাস ফেলল। “তোমার পূর্বপুরুষরা এক ভয়ংকর ভুল করেছিল, আর তার ফল তোমার ওপর বর্তেছে। এই অভিশাপ তোমার ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করছে, আর আমি এখানে এসেছি সেটাকে বদলানোর জন্য।”

পদ্মিনীর মন দুর্বোধ্য এক আশঙ্কায় কেঁপে উঠল। “তাহলে কি তুমি কেবল এই অভিশাপ মুক্ত করতেই এখানে এসেছো?”

আদিত্য একটু থেমে বলল, “না, পদ্মিনী। আমি এখানে এসেছি কারণ ভাগ্য আমায় তোমার কাছে টেনে এনেছে। তুমি কি সত্য জানতে চাও?”

পদ্মিনী এক মুহূর্তের জন্য নীরব হয়ে রইলেন। তারপর ধীরে ধীরে বললেন, “হ্যাঁ, আমি সত্য জানতে চাই। আমাকে সব বলো।”

আদিত্য গভীরভাবে শ্বাস নিল। রাজপ্রাসাদের বাগানে তখন সন্ধ্যার বাতাস বয়ে যাচ্ছিল, আর দূর আকাশে একলা তারাটি জ্বলছিল—সেই দুই যুবক-যুবতীর ভবিষ্যৎ যেন সেই তারা দেখছিল।

বাংলা ছোট গল্প - শেষ আলো: "শেষ আলো" একটি রহস্যময় বাংলা ছোট গল্প যেখানে ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন, ধ্বংসের ছায়া ও জীবনের সংগ্রাম ফুটে উঠেছে। ভুতের গল্পের মিশ্রণে গল্পটি পাঠককে ভাবাবে জীবনের নতুন দিশা নিয়ে। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

তৃতীয় অধ্যায়: রক্তগোলাপের ডাক

ছোটদের রূপকথার বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

সেদিন ছিল পূর্ণিমা। আকাশে উজ্জ্বল চাঁদ, চারদিকে মৃদু বাতাস বইছিল, কিন্তু রাজকন্যা পদ্মিনীর মনে এক অজানা অস্থিরতা।

দিনের বেলায় রাজপ্রাসাদের দেয়ালের মধ্যে থাকলেও যেন কোথাও অদৃশ্য থেকে কেউ তাঁকে লক্ষ্য করছিল। আদিত্যর কথাগুলোও বারবার মনে পড়ছিল—

“তোমার রাজ্যে এক ভয়ানক রহস্য লুকিয়ে আছে, যা তোমার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে!”

কিন্তু কী সেই রহস্য?

সে রাতেও পদ্মিনীর ঠিকমতো ঘুম এল না। শোবার ঘরের জানালা দিয়ে চাঁদের আলো বিছানায় পড়ছিল। হঠাৎই যেন বাতাস থেমে গেল, আর শীতল একটা অনুভূতি তাঁকে ঘিরে ধরল।

তারপরই শুনতে পেল এক ফিসফিসে কণ্ঠস্বর—

“রাজকন্যা, এসো! তোমার নিয়তি তোমার অপেক্ষায়!”

সেই কণ্ঠস্বর এতটাই গভীর আর প্রভাবশালী ছিল যে পদ্মিনী ধড়মড়িয়ে উঠে বসল। চোখ বন্ধ করতেই এক দৃশ্য দেখতে পেল—

এক বৃদ্ধা দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর মুখাবয়ব রহস্যে মোড়া, হাতে একটি উজ্জ্বল রক্তগোলাপ!

গোলাপের রঙ ছিল এতটাই লাল যে দেখে মনে হচ্ছিল যেন তাজা রক্তের বিন্দু ফুটে উঠেছে তার প্রতিটি পাপড়িতে। বৃদ্ধার চোখদুটো শূন্য, কিন্তু তাতেই এক অমোঘ শক্তির আভাস।

“এসো! তোমার সময় হয়ে এসেছে…”

পদ্মিনী বিস্মিত হয়ে দেখতে লাগলেন সেই দৃশ্য। কে এই বৃদ্ধা? কেন তিনি তাঁকে ডাকছেন?

কিন্তু প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আগেই স্বপ্ন কেটে গেল।

পরদিন সকালে পদ্মিনীর মনে একটা অদ্ভুত টান অনুভূত হতে লাগল।

সারা রাত সেই স্বপ্নের ভাবনায় অস্থির ছিলেন, আর আজ যেন কোনও এক অদৃশ্য শক্তি তাঁকে টেনে নিয়ে চলেছে সেই রহস্যময় পথে।

কাউকে কিছু না বলে, কোনও দাসী বা রক্ষীকে সাথে না নিয়ে, একাই রাজপ্রাসাদ ছাড়লেন। প্রাসাদের চেনা পথগুলো আজ অজানা মনে হচ্ছিল, যেন সব কিছুই কুয়াশার আড়ালে ঢাকা।

উপত্যকার পথে তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে চললেন। সেই পথ, যা তাঁর শৈশবের খেলার মাঠ ছিল, আজ যেন তাকে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ডাকছে। চারপাশের গাছপালা স্তব্ধ, বাতাস নিস্তব্ধ, শুধুই তাঁর পায়ের শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল।

এটি কোনও সাধারণ গাছ ছিল না। এর গাঢ় সবুজ পাতা ও কালচে লাল কাণ্ড দেখে মনে হচ্ছিল, এটি শত শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে, কোনও অতিপ্রাকৃত শক্তির অধীনে।

গাছের শাখাগুলো যেন নীরবে দুলছিল, আর তার মাঝখানে একটি মাত্র রক্তগোলাপ ফুটে ছিল!

পদ্মিনী তাকিয়ে রইলেন গোলাপটির দিকে।

এটা কি তাঁর স্বপ্নের সেই ফুল?

হঠাৎই মনে হলো, গোলাপটি তাঁকে ডাকছে।

“এসো… আমাকে স্পর্শ করো…”

তিনি জানতেন, এটি বিপজ্জনক। রাজ্যের পুরনো ভবিষ্যদ্বাণী বলেছিল, রক্তগোলাপের স্পর্শে তাঁর হৃদয় বরফ হয়ে যাবে।

কিন্তু কেমন এক রহস্যময় আকর্ষণ তাঁকে তাতে হাত বাড়াতে বাধ্য করল।

ধীরে ধীরে তিনি হাত বাড়ালেন…

ঠিক যখন তাঁর আঙুল রক্তগোলাপের পাপড়ি ছুঁল, তখনই চারপাশে এক তীব্র আলো ছড়িয়ে পড়ল!

পদ্মিনী চিৎকার করে উঠলেন!

চারদিকের আলো এতটাই তীব্র ছিল যে চোখ বন্ধ করেও তিনি এর তীব্রতা অনুভব করতে পারছিলেন। বাতাসে যেন হাজারো গুঞ্জন ভেসে উঠল—

“অভিশাপ জাগ্রত হলো…”

পদ্মিনীর দেহ এক অদ্ভুত শীতল অনুভূতিতে গ্রাস হতে লাগল। তাঁর হাতজোড়া প্রথমে বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে গেল, তারপর সেই ঠাণ্ডা ধীরে ধীরে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তে লাগল।

শরীরে এতটাই ঠান্ডা অনুভব হচ্ছিল যে মনে হচ্ছিল, তাঁর ধমনীর ভেতরের রক্তও জমে যাচ্ছে!

তিনি পিছিয়ে আসতে চাইলেন, কিন্তু পা যেন জমে গিয়েছে মাটির সাথে। চোখের সামনে সব কেমন যেন ধোঁয়াটে হয়ে আসছিল, আর মনে হচ্ছিল, কোনও এক ভয়ংকর পরাবাস্তব জগতে তিনি প্রবেশ করছেন।

হঠাৎই চারপাশ বদলে গেল।

শীতলপুরের উপত্যকা উধাও হয়ে গেল, রাজ্যের পাহাড়, নদী, গাছ কিছুই আর নেই।

তিনি নিজেকে দেখতে পেলেন এক বিশাল বরফাচ্ছাদিত প্রাসাদের সামনে!

চারপাশের সব কিছু বরফে ঢাকা, নিস্তব্ধ, যেন কোনও প্রাণ নেই।

ঠিক সামনে সেই বৃদ্ধা দাঁড়িয়ে ছিলেন, যিনি স্বপ্নে তাঁকে ডেকেছিলেন।

“স্বাগতম, রাজকন্যা,” বৃদ্ধার কণ্ঠস্বর গভীর আর অমোঘ, “তুমি শেষ পর্যন্ত তোমার নিয়তির পথে পা রেখেছো।”

পদ্মিনী ভীত কণ্ঠে বললেন, “কে তুমি? আমি এখানে কেন?”

বৃদ্ধা ধীরে ধীরে তাঁর দিকে এগিয়ে এলেন।

“আমি সেই অভিশাপের রক্ষক, যা তোমার পূর্বপুরুষরা বহন করছে! আজ থেকে তুমিই হবে এই বরফাচ্ছাদিত প্রাসাদের নতুন রাণী।”

পদ্মিনীর বুক কেঁপে উঠল।

“না! এটা সম্ভব নয়! আমি ফিরে যেতে চাই!”

বৃদ্ধা ধীরে হেসে বললেন, “তুমি ফিরে যেতে পারবে না, রাজকন্যা! কারণ তুমি নিজেই অভিশাপ জাগিয়েছো।”

পদ্মিনী অনুভব করলেন, তাঁর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। শরীর যেন আরও জমে আসছে, গলার স্বর আটকে যাচ্ছে।

চারপাশের শীতল বাতাসে গুঞ্জন ভেসে এল—

“রাজ্যের অভিশাপ ফিরে এলো! রাজকন্যা বরফের বন্দী হলেন!”

হঠাৎই আকাশ থেকে এক বিকট বজ্রপাত হলো, আর চারপাশে বরফ ঝরতে শুরু করল।

বৃদ্ধা এক পা এগিয়ে এসে বললেন, “শুধুমাত্র সত্যিকারের ভালোবাসা পারে এই অভিশাপ ভাঙতে! কিন্তু তুমি কি জানো, তোমার সত্যিকারের প্রেম কে?”

পদ্মিনী অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।

এক দূর থেকে যেন কারও গলা ভেসে এল—

“পদ্মিনী!!!”

আদিত্যর কণ্ঠস্বর!

তিনি কি সত্যিই এসেছেন তাঁকে রক্ষা করতে?

কিন্তু তার আগেই, পদ্মিনীর চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে এল, আর তিনি এক গভীর বরফের ঘুমে তলিয়ে গেলেন…

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - শেষ পত্র: স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে হারিয়ে যাওয়া এক প্রেমের গল্প! পড়ুন এবং অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন এক হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প সাথে, যেখানে এক বিবাহিত পুরুষ স্বপ্নে দেখা নীহারিকার প্রেমে অমোঘ টানে জড়িয়ে পড়ে। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

চতুর্থ অধ্যায়: ভালোবাসার শক্তি

ছোটদের রূপকথার বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

পদ্মিনী জ্ঞান হারানোর আগে অনুভব করেছিলেন যেন তাঁর দেহ বরফ হয়ে যাচ্ছে, সমস্ত অনুভূতি ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। চারপাশে শুধুই অন্ধকার। কিন্তু অন্ধকারের মধ্যেও তিনি যেন এক আশ্চর্য উষ্ণতা টের পেলেন। সেই উষ্ণতা যেন তাঁকে ডেকে নিচ্ছিল আলোয় ফিরে আসার জন্য।

ধীরে ধীরে তাঁর চোখের পাতা কাঁপতে লাগল, আর যখন তিনি চোখ খুললেন, দেখলেন সামনে বসে আছে আদিত্য। তাঁর গভীর নীল চোখ দুটো উদ্বেগে ভরা। ঠোঁটের কোণে সামান্য হাসি, কিন্তু মুখের অভিব্যক্তিতে গভীর দুশ্চিন্তার ছায়া।

“তুমি এসেছো?” পদ্মিনী বিস্মিত কণ্ঠে ফিসফিস করে বললেন। তাঁর কণ্ঠ কাঁপছিল, যেন বহুদিন পর বরফের চাদরের নিচ থেকে গলা বেরিয়েছে।

আদিত্য মৃদু হাসলেন, কিন্তু তাঁর চোখের ভাষায় ছিল গভীর ভালোবাসা ও অঙ্গীকার। “তোমাকে ছাড়া আমি কিছুই নই, রাজকন্যা। আমি তোমাকে রক্ষা করব।”

পদ্মিনী বুঝতে পারলেন, আদিত্য শুধু তাঁর পাশে নেই, সে তাঁকে রক্ষা করতে এসেছে, তাঁকে ফিরিয়ে আনতে এসেছে। কিন্তু কীভাবে? তাঁর তো হৃদয় এখনো বরফের মতো ঠান্ডা, তাঁর দেহের শিরাগুলোতে রক্তের পরিবর্তে যেন জমে থাকা হিমশীতল বাতাস বইছে।

আদিত্য ধীরে ধীরে পদ্মিনীর হাত ধরলেন। তাঁর স্পর্শ উষ্ণ, মমতায় ভরা। সেই মুহূর্তেই যেন এক অদ্ভুত শক্তির ঢেউ ছড়িয়ে পড়ল চারপাশে।

পদ্মিনী অনুভব করলেন, তাঁর হৃৎপিণ্ড ধীরে ধীরে উষ্ণ হচ্ছে। যেন বরফ গলে গিয়ে উষ্ণ রক্ত প্রবাহিত হতে শুরু করেছে তাঁর দেহের প্রতিটি কোণায়। কিন্তু সে কি সত্যিই সম্ভব? পদ্মিনী বিভ্রান্ত হয়ে আদিত্যর চোখের দিকে তাকালেন।

“তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো, তবে ভয় পেও না।” আদিত্যর কণ্ঠ ছিল দৃঢ়, কিন্তু স্নেহময়।

পদ্মিনীর মনে ভেসে উঠল তাদের প্রথম দেখা হওয়ার মুহূর্ত, বাগানে কাটানো সুন্দর দিনগুলো, সেইসব সন্ধ্যা যখন তারা একসঙ্গে বসে চাঁদের আলোয় গল্প করেছিল। ভালোবাসা তো এমনই—কখনো তা ধীর নদীর মতো শান্ত, কখনো তা ঝড়ের মতো বিক্ষুব্ধ, কিন্তু সবসময় তা অন্তরের গভীরে প্রবাহিত হয়।

তিনি চোখ বন্ধ করলেন, অনুভব করলেন আদিত্যর হাতের উষ্ণতা। এই উষ্ণতা যেন তাঁকে শক্তি দিচ্ছে, সাহস দিচ্ছে।

সঙ্গে সঙ্গে এক উজ্জ্বল আলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল। সেই আলো এতটাই উজ্জ্বল যে শীতলপুরের বরফাচ্ছাদিত রাজ্য কেঁপে উঠল। চারদিকে এক শক্তিশালী বাতাস বইতে শুরু করল, যেন প্রকৃতি নিজেই তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে উঠেছে।

পদ্মিনী অনুভব করলেন, তাঁর শীতল হৃদয় ধীরে ধীরে উষ্ণ হয়ে উঠছে। যে অভিশাপ এতদিন তাঁকে বেঁধে রেখেছিল, তা যেন গলে যাচ্ছে। তাঁর চোখের কোণে জল জমে উঠল। কিন্তু এ অশ্রু সাধারণ নয়।

সেই জল জমে বরফ হয়ে মাটিতে ঝরে পড়ল, আর তার সঙ্গে সঙ্গে শীতলপুরের বরফও গলতে শুরু করল। শত শত বছর ধরে জমে থাকা বরফ, যা এই রাজ্যকে অভিশপ্ত করে রেখেছিল, তা ক্রমশ গলে যেতে লাগল।

দূরে দেখা গেল, সূর্যের প্রথম কিরণ পড়েছে রাজপ্রাসাদের চূড়ায়। দীর্ঘ শীতের রাত শেষ হলো।

রাজ্যের মানুষজন বিস্ময়ে দেখল, কীভাবে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তাদের রাজ্য আবার আগের মতো প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। নদীগুলো আবার বয়ে চলেছে, গাছে নতুন কুঁড়ি ফুটেছে, আর বাতাসে ফিরে এসেছে উষ্ণতার স্পর্শ।

রাজা মহেন্দ্র সিংহ এবং রানী দিব্যলক্ষ্মী দৌড়ে এসে তাঁদের কন্যাকে জড়িয়ে ধরলেন। “পদ্মিনী! তুমি ফিরে এসেছ, মা!”

পদ্মিনী হাসলেন, আর আদিত্যর হাত শক্ত করে ধরে রইলেন।

রাজ্যের বৃদ্ধারা বলল, “এ সত্যিকারের ভালোবাসার জয়।

শীতলপুরের অভিশাপ চিরতরে শেষ হয়ে গেছে।”

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

আমরা কারা

নতুন বাংলা ছোট গল্প

অগ্নিযুগের ছায়া

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া এক প্রেম ও প্রতিরোধের কাহিনি। যুদ্ধ, বেদনা ও সাহসের মাঝে গড়ে ওঠা সম্পর্কের গল্প। ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য গল্প | বাংলা ছোট গল্প

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া এক প্রেম ও প্রতিরোধের কাহিনি। যুদ্ধ, বেদনা ও সাহসের মাঝে গড়ে ওঠা সম্পর্কের গল্প। ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য গল্প | বাংলা ছোট গল্প

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: অগ্নিযুগের ছায়া

শেষ অধ্যায়

একটি রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান গল্প, যেখানে এক বিজ্ঞানীর গবেষণা মুহূর্তেই রূপ নেয় বিভীষিকায়। পড়ুন এই বাংলা ছোট গল্প যেখানে বিজ্ঞান, সংকট ও মানবিকতার টানাপোড়েন একসঙ্গে মিশে গেছে!

একটি রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান গল্প, যেখানে এক বিজ্ঞানীর গবেষণা মুহূর্তেই রূপ নেয় বিভীষিকায়। পড়ুন এই বাংলা ছোট গল্প যেখানে বিজ্ঞান, সংকট ও মানবিকতার টানাপোড়েন একসঙ্গে মিশে গেছে!

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: শেষ অধ্যায়

শীতলপুরের যাদুকরী রক্তগোলাপ

একটি হৃদয়স্পর্শী রূপকথার গল্প, যেখানে সত্যিকারের ভালোবাসার শক্তিতে শীতলপুরের অভিশাপ ভেঙে যায়। আকর্ষণীয় ছোটদের গল্প যা যাদু, প্রেম ও ত্যাগের এক অনন্য উপাখ্যান তুলে ধরে।

একটি হৃদয়স্পর্শী রূপকথার গল্প, যেখানে সত্যিকারের ভালোবাসার শক্তিতে শীতলপুরের অভিশাপ ভেঙে যায়। আকর্ষণীয় ছোটদের গল্প যা যাদু, প্রেম ও ত্যাগের এক অনন্য উপাখ্যান তুলে ধরে।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: শীতলপুরের যাদুকরী রক্তগোলাপ

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!